স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস/নবম পরিচ্ছেদ
ভারতবর্ষীয় জনগণ যে দুইটী প্রধান উপাদানের সমবায় সংঘটিত, সে উভয়েরই প্রকৃতিতে দান ধর্ম্ম প্রবল ছিল। ঐ উপাদানদ্বয় সম্মিলিত হওয়াতে ঐ ধর্ম্মের বিশেষ প্রাচুর্য্যই জন্মিয়াছে। গৃহী মাত্রেই বিশিষ্ট সমাদরপূর্ব্বক আতিথ্য করিয়া থাকে। তদ্ভিন্ন প্রতি গ্রামের দেবালয়ে একটী গ্রামিক অতিথি শালা আছে। তাহার কার্য্যভার গ্রাম্য যাজক এবং নাপিতের প্রতি অর্পিত। উহার ব্যয় গ্রামিকদিগের সাধারণ চাঁদা হইতে নির্ব্বাহিত হয়।
ভূম্যধিকারীরা, নিজ নিজ অধিকারের মধ্যে যত পান্থাবাস আছে, সমুদায়ের বিশেষ তত্ত্বাবধান করেন, এবং আপনাপন আলয়ে সদাব্রত দেন।
কেহ ইচ্ছা করিলে এক কপর্দ্দক মাত্র ব্যয় না করিয়াও যাবজ্জীবন ভারতবর্ষের সর্ব্বত্র বিচরণ করিতে পারেন। কাহারও আলাপ পরিচয় নাই বলিয়া কোথাও আহার পরিধেয়ের বা শয়নের ব্যাঘাত হইবে, তাহা হয় না।
দেশীয় জনসমূহের প্রকৃতি এরূপ উদার এবং বিশ্বস্ত হওয়াতে সমাজ মধ্যে যে দোষটী জন্মিবার সম্ভাবনা, রাজব্যবস্থা দ্বারা তাহার নিবারণের চেষ্টা হইতেছে। অনেক লোকেই কার্য্যবিরত হইয়া অপরের গলগ্রহ হইয়া পড়িতেছিল, তজ্জন্য এক্ষণে এই রাজ নিয়ম হইয়াছে—(১ম) বিশেষ বিদ্যাবত্তার পরিচয় দিতে না পারিলে কোন ব্যক্তি সন্ন্যাস ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া ফকিরী লইতে পারিবে না। (২য়) অবশ্যপোষ্য কেহ বিদ্যমান থাকিতে কোন ব্যক্তি সন্ন্যাস ধর্ম্ম গ্রহণ করিতে পারিবে না। (৩য়) কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণ ব্যতিরেকে এক স্থানের সদাব্রতে তিন দিনের অধিক অবস্থান করিতে পারিবে না। প্রদেশাধিকারিগণ স্ব স্ব অধিকার মধ্যে এইরূপ নিয়মের অনুযায়ী কার্য্য করাইতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। তাঁহাদিগেরই কয়েক জন প্রথমে প্রস্তাব করিয়া ঐ সকল ব্যবস্থা প্রচলিত করিয়া লইয়াছিলেন। কিন্তু গ্রামিকেরা এবং কোন কোন ভূম্যধিকারীও মনে মনে এই সকল ব্যবস্থার প্রতি তেমন অনুকূল বলিয়া বোধ হয় না। যাহা হউক ভিক্ষোপজীবিতার যে কতক দমন হইয়াছে, তাহার সন্দেহ নাই।
এই সকল ব্যবস্থা প্রণয়ন করাইবার সময় ব্যবস্থাপক সভায় এক জন রাজমন্ত্রী যে বক্তৃতা করেন, তাহার কিয়দংশ এ স্থলে উদ্ধৃত করা যাইতেছে। “প্রকৃতরূপে দান ধর্ম্ম পালন বড় কঠিন কর্ম্ম। দান যেমন দাতার পক্ষে পুণ্যবৰ্দ্ধক, তেমনি গ্রহীতারপক্ষে পাপজনক। তুমি দান করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিলে, আমি তোমার দান গ্রহণ করিয়া আত্মগ্লানি প্রাপ্ত হইলাম। অতএব একবারে উভয় দিক হইতে দেখিলে দানের দ্বারা যে দেশমধ্যে ধর্ম্মের বৃদ্ধি হইল, একথা বলা যাইতে পারে না। কিন্তু দানের অধিকও ত ধর্ম্ম নাই—সুতরাং উহার পালন না হইলে ধর্ম্মবৃদ্ধির পথই লুপ্ত হয়। অতএব এমত কোন উপায় করা আবশ্যক, যাহাতে দান গ্রহীতার আত্মগ্লানি জন্মিতে না পারে। তাহা হইলেই দাতার ধর্ম্মবৃদ্ধি হইল, অথচ গ্রহীতার গ্লানি হইল না। সে উপায় কি? সে উপায় এই—দেশের মধ্যে ধর্ম্মবৃদ্ধি এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করিবার নিমিত্ত যে সকল লোক নিযুক্ত আছেন, তাঁহারা বাস্তবিক অন্যের উপকারার্থে আপনাদিগের সাংসারিক সুখচিন্তা পরিহার করিয়াছেন। তাঁহারাই দানের সর্ব্ব প্রধান পাত্র। যাহাকে তাহাকে দান না করিয়া ঐ সকল লোককেই দান করা বিধেয়। উঁহারা যেরূপ উচ্চপদস্থ ও যেরূপ উন্নতকার্য্যে চিরব্রতী, তাহাতে অন্যের স্থানে দান গ্রহণ করা তাহাদিগের অন্তঃকরণে গ্লানিজনক হইতে পারিবে না। তাঁহারা যে দান গ্রহণ করিবেন, তাহা দাতার কৃতজ্ঞতা সূচক বলিয়াই মনে করিবেন; আপনাদিগের অধীনতা ব্যঞ্জক মনে করিবেন না। অতএব দান ধর্ম্ম পালনের প্রকৃত স্থল দেশের শিক্ষাদাতা ব্রাহ্মণগণ। অন্ধ, অথর্ব্ব, অক্ষম লোকেরা যে দয়ার একান্ত পাত্র, তাহা বলিবার আবশ্যকতা নাই। কারণ উহারা অবশ্য পোষ্যের মধ্যেই গণ্য। সুতরাং তাহারা অন্যদীয় সাহায্য গ্রহণ করিলে কখনই আত্মগ্লানির ভাজন হয় না। অতএব দান ধর্ম্ম পালনের মূল নিয়ম এই—‘যাহারা অন্যদীয় সাহায্য গ্রহণে নীচতানুভব করিতে না পারে, তাহারাই দানের পাত্র, অপরে দানের পাত্র নহে।’ যিনি এই মূল সূত্র স্মরণ পূর্ব্বক আত্ম-সংযম সহকারে দান করিতে না পারেন, তাঁহার দান ক্রীড়ার ন্যায় সুখজনক হইতে পারে, কখনই ধর্ম্ম বৰ্দ্ধক হইতে পারে না।”
মন্ত্রি-মহাশয়ের মূল নিয়ম ভারতবর্ষীয় দিগের সরল উদার এবং বিশ্বাস-প্রবণ হৃদয়ে কি পরিমাণে স্থান গ্রহণ করিবে, কতদূরই বা কার্য্যকালে স্মৃতি পথে আসিবে, তাহা বলা যায় না।
ভারতবর্ষবাসীদিগের এই অসীম দানশীলতাই তাহাদিগের উৎসবোপলক্ষে ব্যয় বাহুল্যের মুখ্য কারণ। তাঁহারা কিছু স্বভাবতঃ তেমন আমোদ প্রিয় নহেন। প্রত্যুত আমোদপ্রিয়তা অপেক্ষা তাঁহাদিগের পরিণামদর্শিতা এবং মিতাচারিতা পরিমাণে অধিক। কিন্তু তাহা হইলেও উৎসব উপলক্ষে অজস্র দান করিবার সুবিধা হয় বলিয়া ভারতবর্ষীয়েরা একান্তই উৎসবভক্ত। হিন্দুদিগের এবং মুসলমানদিগের যতগুলি পূর্ব্ব উৎসব ছিল, সকল গুলিই এখনও জাগ্রৎ আছে, তদ্ভিন্ন অপর কএকটী নূতন উৎসব দেশে প্রচলিত হইয়া গিয়াছে। সাম্রাজ্য সংস্থাপনের দিন এবং সম্রাটের জন্মদিন, এই দুইটী দিন নূতন পর্ব্বাহ হইয়াছে। তদ্ভিন্ন প্রধান প্রধান কবি, দার্শনিক, রাজনীতিজ্ঞ এবং আবিষ্কর্ত্তাদিগের নামে, তাঁহারা যে যে প্রদেশে জন্মিয়াছিলেন, সেই সেই প্রদেশে, এক একটী মেলা হইয়া থাকে। কোথাও কোথাও ঐরূপ মেলা এবং প্রাচীন হিন্দু ও মুসলমান পর্ব্ব একদিবসে পড়িয়া তিনটীতে মিলিয়া একটী অপূর্ব্ব পদার্থ হইয়া উঠিয়াছে। শ্রীরামনবমী, মহরম ও বাল্মীকি পর্ব্ব ঐরূপে একত্রিত হইয়া গিয়াছে। অনেকের স্থির সিদ্ধান্ত হইয়াছে যে, যে রাবণ, সেই এজিদ্, যে হোসেন, সেই লক্ষ্মণ, যে হনুমান, সেই জেব্রিল, রামচন্দ্রে এবং পাইগম্বরে অভেদ। কেমন করিয়া এরূপ সিদ্ধান্ত হইয়া দাঁড়াইল, তাহা নিরূপণ করা যায় না। কিন্তু যখন প্রাচীন আর্য্যজাতীয়দিগের মদনোৎসব, রোমীয় দিগের কার্ণিবল্, এবং টিউটন্ জাতীয় দিগের মেপোল নিত্য সম্মিলিত হইয়া নব্য ইটালীয় দিগের কার্ণিবল জন্মিতে পারিয়াছে, তখন এক দেশ নিবাসী হিন্দু মুসলমানদিগের পর্ব্ব যে সম্মিলিত হইয়া যাইবে, তাহাতে বৈচিত্র্য কি? ইটালী দেশীয় কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি ভারতবর্ষে ভ্রমণ করিতে আসিয়া এখানকার একটী উৎসব উপলক্ষে তাঁহার স্বদেশীয় বন্ধুকে যেরূপ লিখিয়াছিলেন, তাহা নিম্নে উদ্ধৃত হইল।
“আজি সরস্বতী পূজা—প্রতিগ্রামে প্রতিগৃহে সরস্বতী দেবী-প্রতিমা অর্চ্চিত হইতেছে। মনে করিও না যে, ভারতবর্ষীয়গণ ঐ মৃন্ময়ী প্রতিমাকেই ঈশ্বরবুদ্ধি করিয়া তাহার পূজা করে। প্রতিমার যেরূপ রূপ তাহা বিবেচনা করিলেই বিজ্ঞব্যক্তি মাত্রেই বুঝিতে পারেন যে, সরস্বতী দেবী মূর্ত্তিমতী বিদ্যা বই আর কিছুই নহে। মূর্খেরা এবং নাস্তিকেরাই ওরূপ অর্চ্চনাকে পৌত্তলিকতা বলিয়া গালি দেয় কিন্তু ঐ সকল লোক আমাদিগকেও ত পোতুলিক বলিয়া থাকে। অতএব উহাদিগের কথায় প্রয়োজন নাই।
“সরস্বতী বিশুদ্ধা, অতএব শুভ্রবর্ণা, সরস্বতী-হৃৎপদ্মে বিরাজ করেন, অতএব পদ্মাসনা,—সরস্বতী একান্ত কমনীয়া, অতএব কামিনীরূপা, সরস্বতী গ্রন্থ এবং সংগীতময়ী, অতএব পুস্তকহস্তা এবং বীণা পাণি। আমি যখন ঐ দেবীমূর্ত্তির প্রতি অনিমিষ নয়নে দৃষ্টি করিয়া এই সমস্ত সাদৃশ্য উপলব্ধ করিতেছিলাম, চতুর্দ্দিকে ধূপ, ধুনা ও গন্ধরসের ধূম উত্থিত হইয়া দৃষ্টি অস্ফুট এবং ঘ্রাণেন্দ্রিয় পূর্ণ করিতেছিল। বামাকণ্ঠ বিনিঃসৃত সংগীত রবে কর্ণকূহর অমৃতায়মান হইতেছিল, তখন সেণ্ট পীটরের গির্জ্জার মধ্যে গমন করিলে যে ভাব হয়, অবিকল সেই ভাব মনোমধ্যে উদিত হইল। তথায় ভগবতী মেরি মূর্ত্তি—এখানে সরস্বতী মূর্ত্তি, সেখানেও সুগন্ধি ধূমোদ্গম সহ সুমধুর বাদন, এখানেও তাই; সেখানেও চিরকুমারী গণের সংগীত, এখানেও রূপ লাবণ্যবতী কামিনী কুলের কলস্বর; সেখানেও লাটিন ভাষায় সুগভীর স্বরে সমুচ্চরিত ভজনার আবৃত্তি, এখানেও সংস্কৃত ভাষায় সুললিত স্তুতিপাঠ। ভারতবর্ষীয়দিগের সহিত আমাদিগের উৎসব প্রকৃতির সর্ব্বথা সাদৃশ্য আছে। যখন ভারতবর্ষীয়েরা স্বাধীনতা লাভ করিয়া এমন প্রধান হইয়া উঠিয়াছে, তখন কি ইটালীর ভাগ্যবৃক্ষেও কোন কালে ঐ অমৃত ফল ফলিবে না! আমার জানা আছে, কেহ কেহ বলেন যে, কাথলিক মতবাদ এবং তদনুযায়ি ধর্ম্মানুষ্ঠান পরিত্যাগ না করিলে ইটালীয়েরা কখনই স্বাধীনতা লাভ করিতে পারিবে না। কিন্তু ভারতবর্ষীয়দিগের সহিত আমাদিগের ধর্ম্মানুষ্ঠানের সম্যক সাদৃশ্য সত্ত্বেও ত ভারতবর্ষীয়েরা পৃথিবীর মধ্যে সর্ব্ব প্রধান পদারূঢ় হইয়াছে। অতএব যাঁহারা স্বাধীনতা প্রাপ্তি পক্ষে ধর্ম্ম পরিবর্ত্তের প্রয়োজন প্রদর্শন করেন, তাঁহাদিগের কথা একান্ত হেয়, কিন্তু এ পত্রে তোমার নিকট বিচারের কথা লিখিয়া পাঠাইব মনে ছিল না। অনুচিকীর্ষা পরায়ণ মূর্খদিগের আস্ফালন বাক্যে নিতান্ত প্রাণ জ্বলে বলিয়া আমার সময় অসময় বোধ থাকে না, সর্ব্বদা ঐ কথাই বাহির হইয়া পড়ে।
“সরস্বতী দেবীর পূজা এবং স্তব পাঠ সমাপন হইলে সকলে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিলেন। ভারতবর্ষীয়েরা সর্ব্ব বিষয়েই বয়োধিক দিগের সম্মান রক্ষা করে। পুষ্পাঞ্জলি দানেও দেখিলাম, আগে বড়, তার পরে ছোট এইরূপ পর্য্যায়ক্রমে একে একে আসিয়া সকলে পুষ্পাঞ্জলি দিল। যে কুলবধূগণ সম্মিলিত হইয়া সুমধুর স্বরে দেবীর স্তবপাঠ করিয়াছিল, তাহাদিগেরও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হইল। অনন্তর অতি সুন্দর বেশ ধারণ পূর্ব্বক কতকগুলি বালক এবং বালিকা আসিয়া দেবীর সমক্ষে কৃতাঞ্জলি হইয়া দাঁড়াইল, এবং মৃদু মধুর স্বরে কএকটী গান গাইল। শুনিলাম ঐ গান গুলি ঐ সময়ের নিমিত্ত প্রস্তুত হইয়াছিল।
“এই রীতিটি আমাকে বড়ই ভাল লাগিয়াছে। ভারতবর্ষীয়েরা ছেলে বেলা অবধি যেমন ভক্তির শিক্ষা দেয়, আমরা কি অন্য ইউরোপীয়েরা তাহার শতাংশও দিই না। এই জন্যই ইউরোপের লোক সকল এত উচ্ছৃঙ্খল এবং স্বার্থপর হইয়াছে।
“আবার বিচার আসিয়া পড়িল। কি করি নিজের দেশটী এমন হয়না কেন? এই ভাবটী মনোমধ্যে চির জাগরূক হইয়া উঠিয়াছে, আর নিবৃত্ত করিবার নহে।
“পরদিন প্রতিমার বিসর্জ্জন। বিসর্জ্জন? তবে আর কে কোন্ মুখে বলিবে যে, ভারতবর্ষীয়েরা মৃন্ময় দেব মূর্ত্তিকেই ঈশ্বর মনে করে? তাহা করিলে কি বিসর্জ্জন করা সঙ্গত হইত? কিন্তু অমন সুন্দর মূর্ত্তির কিরূপে বিসর্জ্জন করিবে? তাহাই আশ্চর্য্যের বিষয়। উহা মাটীর, পাথরের নয়। পাথরের হইলে আমাদের মাইকেল এঞ্জিলোর ভাস্করীয় মূর্ত্তির সহিত তুলিত হইতে পারিত, প্রতিমাটীর এমনি দিব্য গঠন।
“কিন্তু ভারতবর্ষীয় দিগের সর্ব্ব প্রকার ঐশ্বর্য্যই পৃথিবীতে তুলনা রহিত। উহারা যেমন অজস্র অর্থ ব্যয় করিয়াও দরিদ্র হয় না, তেমনি এমন সকল প্রতিমাকে জলে ফেলিয়া দিয়াও শিল্প নৈপুণ্যের অভাব হইবে মনে করে না। যাহাদিগের অধিক থাকে তাহারা অধিক ব্যয় করিতে পারে। ভারতবর্ষীয় দিগের সকলই অধিক। ধন ও যেমন, বিদ্যা ও তেমন, শিল্পচাতুর্য্য ও । উহারা সকলই ফেলিয়া ছড়িয়া খরচ করিতে পারে। আমাদিগের মত কিছুই পুতু পুতু করিয়া তুলিয়া রাখে না।
“আর একটী কথা বাকী আছে। সরস্বতী দেবীর পরিধেয় একখানি শাটী মাত্র। পূর্ব্বে এদেশের স্ত্রীলোকেরা ঐরূপ পরিধান মাত্র ব্যবহার করিত। এখনও যতক্ষণ বাটীর ভিতরে থাকে, শাটীই পরে। শাটী পরিলে এদেশে স্ত্রীলোকদিগকে মন্দ দেখায় না। কিন্তু এখন ইহারা বাহিরে অসিতে আরম্ভ করিয়াছে। অতএব পরিধানের ও পরিবর্ত্ত করিয়াছে। ঢিলে পা-জামা এবং কাঁচুলি পরিয়া তাহার উপর একটী সুদীর্ঘ অঙ্গরক্ষিণী দেয়, এবং সর্ব্বোপরি মাথার উপর বেড় দিয়া ধারণ করে।
“পুরুষেরা পূর্ব্বে কেবল মাত্র ধুতি পরিত। বাটীর মধ্যে এখনও তাহাই পরে। কিন্তু বাহিরে ইজের চাপকান গলাবন্ধ এবং উষ্ণীশ ব্যবহার করিয়া থাকে।
“এদেশ গ্রীষ্ম প্রধান, এখানে অধিক কাপড় অথবা নিতান্ত মোটা কাপড় সর্ব্বদা ব্যবহার করিতে হইলে বড় যন্ত্রণা সহ্য করিতে হয়। ভারতবর্ষীয়দিগের পরিচ্ছদ তাহাদিগের দেশের যোগ্য এবং আকারের যথা যোগ্যই হইয়াছে।”