স্বপ্নলব্ধ ভারতবর্ষের ইতিহাস/সপ্তম পরিচ্ছেদ

সপ্তম পরিচ্ছেদ। বারাণসীর বিদ্যালয়।

 বর্ষা কালে যখন গঙ্গার দুইটি করপ্রদা নদী বরণা এবং অসি পরস্পর মিলিত হইয়া যায়, তখন আরঞ্জেব বাদসাহের প্রতিষ্ঠিত মসজিদের ঊর্দ্ধ হইতে দেখিলে মৎস্যোদরী কাশীর কি অপরূপ সৌন্দর্য্যই অনুভূত হইতে থাকে। উত্তরবাহিনী গঙ্গার পূর্ব্বপার হইতে বারাণসীর সৌধশ্রেণী অবলোকন করিতে করিতে মনে হয়, ইহাই বুঝি চন্দ্রচূড়ের ললাট নিহিত চন্দ্রকলা। মৎস্যোদরী দেখিলে বোধ হয় এই স্থানটী সত্য সত্যই ত্রিশূলীর ত্রিশূলোপরি সংরক্ষিত। পৃথিবী প্রলয়জলে প্লাবিত হইয়া গেলেও এই পুরী মগ্ন হইবে না।

 মৎস্যোদররূপা বারাণসীর সম্মুখপুচ্ছের সে স্থান যে পল্লী সেই পল্লীর নাম ত্রিপুরা ভৈরবী। উহা উত্তরে বিশ্বের এবং দক্ষিণে কেদার, এই উভয় স্থানের মধ্যবর্ত্তী। ঐ পল্লীতে একটী প্রধান চতুষ্পাঠী সংস্থাপিত হইয়াছে। সেই চতুষ্পাঠীতে বহু শাস্ত্রের চর্চ্চা হইয়া থাকে। বিশেষতঃ, যাবতীয় নব্য ভাষা ঐ স্থানে শিক্ষিত হয়। ফরাসী, জর্ম্মণ, ইটালীয়, ইংরাজী, ফরাসী, হিন্দী—এই কয়েকটী ভাষা শিক্ষা দিবার নিমিত্ত স্বতন্ত্র অধ্যাপকবর্গ নিযুক্ত হইয়া আছেন। অধ্যাপক এবং ছাত্রবর্গের নিমিত্ত বৃত্তি নিৰ্দ্ধারিত আছে। ঐ সকল এবং অপরাপর চলিত ভাষার যাবতীয় পুস্তক ভিন্ন ভিন্ন পুস্তকাগারে সংরক্ষিত হইতেছে। ঐ চতুষ্পাঠীর দক্ষিণ পশ্চিমদিকে আর একটী স্বতন্ত্র বিদ্যালয় আছে। তাহাতে জ্যোতিষ, গণিত, পদার্থতত্ত্বাদি শাস্ত্রের অধ্যাপনা হইয়া থাকে। রাজা জয়সিংহের প্রতিষ্ঠিত মানমন্দির ঐ চতুষ্পাঠীর মধ্যেই পড়িয়াছে। এক্ষণে সেই মন্দিরের জীর্ণ সংস্কার এবং আয়তন বৃদ্ধি হইয়া এরূপ হইয়া দাঁড়াইয়াছে যে, তাহা পূর্ব্বে কিরূপ ছিল আর নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারা যায় না। জ্যোতিষ্ক দর্শনের নিমিত্ত একটী সুপ্রশস্ত যন্ত্রাগারও ঐ স্থানে নির্ম্মিত হইয়াছে। ঐ যন্ত্রাগারে অন্যান্য বহুবিধ যন্ত্রের মধ্যে এত বৃহৎ একটী দূরবীক্ষণ যন্ত্র আছে যে, তাহা দ্বারা আর্দ্রা নক্ষত্রের পারিপার্শ্বিক গ্রহ পর্য্যন্ত দৃষ্ট হইয়াছে। অধ্যাপক মহাশয় এক্ষণে গণনা দ্বারা সেই গ্রহ দিগের কক্ষা নিরূপণ করিতেছেন।

 এখানকার পদার্থ তত্ত্বাধ্যাপক মহাশয় সম্প্রতি একটী আবিষ্ক্রিয়া করিয়া প্রধান রাজমন্ত্রীর নিকট লিখিয়া পাঠাইয়াছেন। তাহার স্থূল তাৎপর্য্য এই যে, জলে স্থলে আকাশে সর্ব্বত্র ইচ্ছানুসারে যান চালাইতে পারা যায়। ঐ কার্য্য অগ্নিতেজেও নির্ব্বাহিত হইতে পারে এবং তাড়িত প্রবাহেও সম্পন্ন হইতে পারে। কিন্তু এখনও কোন বিশেষ পরীক্ষা বিধান দ্বারা তাহার সম্যক্‌ কার্য্যকারিতা প্রমাণিত হয় নাই—না হইবার কারণ এই যে, রাজমন্ত্রী অপর একটী সুবৃহৎ ব্যাপার সম্বন্ধে পরীক্ষাবিধান করিতেছেন। প্রসঙ্গাধীন এই স্থলেই তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে। কাঞ্চীপুর নিবাসী পশুপতি নামক একজন মহামহোপাধ্যায় এক প্রকার অস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছেন, তাহা হইতে এমনি মারাত্মক বাস্প নির্গত হয় যে, উহা আঘ্রাত হইবামাত্র প্রাণ বিনাশ করে। ঐ বাস্পের এরূপ ভয়ানক তেজঃ যে কাচের গাত্রে লাগিলে অমনি কাচ গলিয়া যায়।

 মন্ত্রিবর এক্ষণে ঐ অস্ত্রের গুণ পরীক্ষা করিতেছেন। অস্ত্রের যেরূপ ক্ষমতা, তাহাতে বোধ হয়, উহার প্রভাবে পৃথিবী হইতে সংগ্রাম কার্য্য একেবারেই উঠিয়া যাইবে। আবিষ্কর্ত্তার নামানুসারে অস্ত্রের নাম “পাশুপত অস্ত্র” রাখা হইয়াছে।