একাধিক লেখক
মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন সম্পাদিত
(পৃ. ৭৮-৮০)
◄  ৬২
৬৪  ►

৬৩

জপ্‌রে তার নামের মালা হয় না যেন ভুল
গাঁথ ঐ নাম আপন গলায়।
দূরে যাবে দুঃখ জ্বালা,
অন্ধকার হবে উজালা;
এই দুনিয়ার মূল।
তুমি লা এলাহা ইল্লাল্লা[১] বল,

এই আঁধার কাটে চক্ষু মেল;
অই ভবের হাট ভু’লোনারে মহম্মদ রছুল। 
নুহ্অল্ এছ্‌বাৎ[২] নফুয়াল্ নবি[৩]
ও তোমার ফানাফাল্লা[৪] যখন হবি

মেছের শা কয় তবে হবি
আল্লার মকবুল।[৫]

  1. আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য নাই। সাধনাকালে হিন্দু গুরু যেমন শিষ্যকে বিশ্বের সর্ব্বত্র “ওঁ” ধ্যান করিতে উপদেশ দেন, পীর সাহেবেরাও তেমনই ভিতরে বাহিরে এই কলমা জপ ও ধ্যান করিতে বলেন। প্রথমেই অবশ্য এই কলমা জপ করা হয় না। প্রথম শুধু “আল্লাহ”—এই কথাটি মাত্র মনে মুখে জপ করিতে হয়। যে নিয়মে এই সব ধ্যান ধারণা করিতে হয়, তাহা অন্যের নিকট প্রকাশ নিষিদ্ধ।
  2. নুহ্অল্ এছ্‌বাৎ “নফি এছ্‌বাৎ” কথার অপভ্রংশ। ইহার ভাবার্থ ‘লাএলাহা ইল্লাল্লা’ দ্বারা নিজের নাস্তিত্ব প্রমাণ করা এবং কল্পনায় সর্ব্বত্র সেই অনাদি অনন্ত পরব্রহ্মের অসীম সৌন্দর্য্যময় অস্তিত্ব অনুভব করা।
  3. নফুয়াল্ নবি “নফিয়ন্নবি”র অপভ্রংশ—আর এক নাম “ফানাফির্‌রছুল” অর্থাৎ রছুলোল্লার (হজরত মোহাম্মদ দঃ) ধ্যান করিতে করিতে আত্মবিশ্বত হইয়া সমগ্র জগতে শুধু তাঁহারই বিকাশ উপলব্ধি করা।
  4. এসলাম ধর্ম্মমতে আধ্যাত্মিক জগতের পূর্ণ জ্ঞানলাভ করিতে হইলে, ভক্তকে সাধনার তিনটি সিঁড়ি অতিক্রম করিতে হইবে। প্রথমত: “ফানাফিশ্বেখ্” বা আপনপীরের সহিত লয় প্রাপ্তি। সত্য সনাতন নিরাকার মহাপ্রভুর দর্শন লাভাকাঙ্ক্ষায় অবশ্য পীরের ধ্যান করিতে হয়। পীর ভক্তের উদ্দেশ্য নয় – উদ্দেশ্য লাভের সহায় মাত্র। প্রথম স্তর অতিবাহিত হইলে, ঐ উদ্দেশ্য লইয়াই সিদ্ধিলাভের অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট সহায় রছুলোল্লার ধ্যান করিতে হয়। ইহার নাম “ফানাফিরসুল”। সাধনার সর্ব্বশেষক্রম ফানাফিল্লা অর্থাৎ আল্লাতে মিশিয়া যাওয়া। বহির্জগতে আত্মিকজগতে যাহা কিছু—সবই আল্লার—সবই তাঁহার নাম-গানে বিভোর। এই স্তরে উপস্থিত হইলে, সাধক আত্মজ্ঞানহীন হইয়া মহর্ষি মনসুরের মত “আনাল্ হক" বা “অহং ব্রহ্ম” বলিতে থাকেন। অনন্ত জ্ঞানময়ের সহিত মিশিয়া গেলে লোকের বাহ্যজ্ঞান বিলুপ্ত হয়। কি করেন, কি বলেন, সে জ্ঞান তখন তাঁহার থাকে না। কেহ পাগল বলে, কেহ ভণ্ড বলে, কোন দিকেই দৃক্‌পাত করেন না। শাহজাদী জেব্‌উন্নিছা বলেন—

    ছারে জং আস্‌ত বা মাজ্‌নুনে আজাঁ আহ্‌লে শরিয়াৎরা।
    কে দর্ দর্‌ছে মহব্বৎ নোক্‌তায়ে বাহার ছোখন্ গিরাদ্॥

    আল্লাহ্‌র-প্রেমপথের পথিকেরা প্রেমাতিশয্যে জ্ঞানহীন। সাধারণ লোকেরা কিছু না বুঝিয়া তাঁহাদের সহিত অযথা তর্ক করিতে যায়, অন্যায়রূপে গালি দেয়। মৌলবী রজব আলী, বি-এ।

  5. মকবুল=বন্ধু, প্রিয় ব্যক্তি।