হারামণি/৭০
(পৃ. ৯১-৯২)
ফরিদপুর জেলার মেয়েলী গান
বাঙালীর সহজ সরল ও সরস জীবন গতির এক অধ্যায় আমরা এই সব মেয়েলী গানের মাঝে পাই। গানগুলি এত সুন্দর, এত কবিত্বময় এবং এত অনাড়ম্বর যে ইহা আমাদিগকে অতি অল্পেই মুগ্ধ করিয়া ফেলে।
এই গানগুলি কোন্ সময়কার রচনা তা ঠিক্ করা মুস্কিল। তবে এটা সত্য যে, ইহা মুসলমান প্রভাবের বা তার পরের সময়কার। গানগুলির ভাষা অতি সহজ ও সরল লীলাভঙ্গী অতি মনোহর ও চমৎকার, ব্যঞ্জন বেশ সুন্দর। পদাবলী-রচয়িতা কবি শশিশেখরের ভাষার সাথে এবং রচনা প্রণালীর সাথে বেশ খাপ খায়, মনে হয় যেন একই ছাঁচে ঢালা ও একই যুগের তৈরী।
এই সব গানে কতকগুলি স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। এগুলি মুসলমান কি হিন্দু কবির রচনা তা নির্দ্ধারণ করা সহজসাধ্য নহে। গানের সাধারণ পোষাক দেখিয়া মনে হয় হিন্দু কবির রচনা; কিন্তু সে ভ্রান্তি ভাষা দেখিয়া অপনোদিত হয়। যাহোক্ বিশেষজ্ঞগণের হাতে এর ঠিকুজী আর গোত্র নিরূপণ, করবার ভার দিয়া খালাস পাওয়া যাক।
(১) “কোলের ব্যাসাদ”: —“গঙ্গা মাকে” পার করার জন্য অনুনয় বিনয় করা হইতেছে; আর মানত করা হইতেছে “ঝাঁপির ব্যাসাদ ও “কোলের ব্যাসাদ” অর্থ—সন্তান। গঙ্গাসাগরে সন্তান নিক্ষেপ প্রথার প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত রহিয়াছে।
(২) “ঝাপির ব্যাসাদ”—অর্থ গহনা-পত্র, টাকাকড়ি।
(৩) “মহীফল রাজা কেটেছে দীঘি, আমি সেই দীঘিতে যাবো।” মহীফল শব্দ মহীপাল শব্দের উচ্চারণ বিভ্রাট। মইপল বা মহীফল উভয় শব্দই গানে শ্রুত হওয়া যায়।
c.f “The founder of this family (Pal) has left a great monument of his reign to the vast pond of Muhee-pall-diggy, in the Dinagepore district.”
Vide History of Bengal by J. C. Marshman, Serampore, 1838 Page 2.