হাস্যকৌতুক (১৯৪৬)/রসিক
রসিক
তিনকড়ি, নেপাল, ভোলা এবং নীলমণি হাসিয়া কুটিকুটি
ধীরাজের প্রবেশ
ধীরাজ। এত হাসছ কেন? খেপলে নাকি?
তিনকড়ি। (দূরে নির্দেশ করিয়া) দেখছেন না রসিকরাজ বাবু আসছেন?
ধীরাজ। তা তো দেখছি, কিন্তু হাস্যকর কিছু তো দেখা যাচ্ছে না।
নেপাল। উনি ভারি মজার লোক।
ভোলা। ভা-আ-রি মজার লোক।
নীলমণি। ব-ড্ড মজার লোক!
তিনকড়ি। ওঁর একটা গল্প বলি শুনুন। সেদিন আমরা ওই কজনে মিলে হাসতে হাসতে রসিকবাবুর সঙ্গে আসছি― চোরবাগানের মোড়ের কাছে― হা হা হা।
নীলমণি। হো হো হো।
ভোলা। হী হী হী।
তিনকড়ি। বুঝেছেন, চোরবাগানের— হা হা।
নেপাল। রোসো ভাই, কাপড় সামলে নিই। হাসতে হাসতে বিলকুল আলগা হয়ে এসেছে।
তিনকড়ি। বুঝেছেন ধীরাজবাবু, আমাদের এই মোড়টার কাছে সে কী আর বলব। ভারি মজা।
ধীরাজ। আচ্ছা পরে বোলো— আমি তবে চললুম।
ভোলা। না না, শুনে যান। সে ভারি মজা। বলো না ভাই, গল্পটা শেষ করো না।
তিনকড়ি। বুঝেছেন ধীরাজবাবু! মোড়ের কাছে এক বেটা গোরুর গাড়ির গাড়োয়ান― হা-হা হা― (ভোলার প্রতি) কী নিয়ে যাচ্ছিল হে?
ভোলা। পাথুরে কয়লা।
তিনকড়ি। হাঁ, পাথুরে কয়লাই বটে। রসিকবাবু তাকে দেখে হা হা হা হা―(সকলের হাস্য) রসিকবাবু তাকে দেখে―
নেপালের প্রতি
কী হে কী বললেন?
নেপাল। হা হা হা। সে ভারি মজার কথা।
ভোলার প্রতি
কিন্তু কথাটা কী বলো তো হে?
ভোলা। মনে পড়ছে না, কিন্তু সে ভারি মজা। বুঝেছেন ধীরাজবাবু, সে ভারি মজা।
নীলমণি। একটু একটু মনে পড়ছে এই পাথুরে কয়লা নিয়ে কী যেন একটা―
নেপাল। আহা বল কী হে। পাথুরে কয়লা নিয়ে আবার কী বলবেন। নিশ্চয় দেশের ভগ্নীদের লক্ষ্য করে কিছু বলেছিলেন, তা ছাড়া তিনি আর তো কিছু বলেন না।
ভোলা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে গোরুর লেজ মলা নিয়ে যেন কী একটা বলেছিলেন।
তিনকড়ি। তা হতে পারে। কিন্তু ভারি মজা।
সকলে মিলিয়া হাস্য
রসিকরাজের প্রবেশ
রসিক। কী হে, এখানে যে এত হস্ ধাতুর আমদানি।
নীলমণি। হস্ ধাতুই বটে। হা হা হা।
তিনকড়ি। (ধীরাজের প্রতি) একবার কথাটা শুনুন। হস ধাতু―হা হা হা।
ভোলা। ধীরাজবাবু শুনছেন? কী চমৎকার। হস্ ধাতু― আবার আমদানি।
নীলমণি। ধীরাজবাবু―
ধীরাজ। আমি বুঝেছি।
নেপাল। ধীরাজবাবু―
ধীরাজ। আর কষ্ট পেতে হবে না, একরকম বুঝেছি।
রসিক। ভেগ্নীদের কোনো নূতন খবর পেয়েছ?
নীলমণি প্রভৃতি। হী হী হো হো হা হা।
ধীরাজ। ভেগ্নী কী?
তিনকড়ি। আর সকলে ভগ্নী বলে, রসিকবাবু বলেন ভেগ্নী! হা হা হা।
ধীরাজ। কেন উনি কি বাংলা জানেন না?
তিনকড়ি। মজাটা বুঝছেন না? ভগ্নী তো সবাই বলে, কিন্তু ভেগ্নী!
রসিক। বুঝেছ ভোলা, আজ এক কাণ্ডই হয়ে গেছে। ভেগ্নীসভার সত্যি আর সভাপেত্নী―
তিনকড়ি প্রভৃতি। হো হো হী হী হা হা।
দামোদর ও চিন্তামণির প্রবেশ
উভয়ে। কী হে, কী হে, কী হল। কী কথাটা হল।
তিনকড়ি। রসিকবাবু বলছিলেন “ভেগ্নী সভার সভ্যি ও সভাপেত্নী”—হা হা হো হো।
দামোদর। এ ভারি মজা। এটা আপনাকে লিখতে হচ্ছে। আমাদের কাগজে লিখুন।
চিন্তামণি। রসিকবাবু এটা লিখে ফেলুন।
তিনকড়ি। ধীরাজবাবু বুঝেছেন?
ভোলা। পেত্নী কেন বললেন বুঝেছেন? যেমন ভেগ্নী তেমনি পেত্নী। হা হা হা।
নেপাল। ওর মজাটা বোঝেন নি ধীরাজবাবু! আসল কথাটা পত্নী। কিন্তু রসিকবাবু―
ধীরাজ। দোহাই, আমাকে আর বেশি বুঝিয়ো না।
ভোলা। কোন্ ভদ্রলোকের ঘর লক্ষ্য করে বলা হয়েছে বোঝেন নি বলে ধীরাজবাবু হাসছেন না।
ধীরাজ। বুঝতে পেরেছি বলেই হাসছি নে। আমিও যে ভদ্রলোক, আমারও স্ত্রী কন্যা ভগ্নী আছে।
রসিক। তোমরা যখন বলছ তখন অবশ্যই লিখব। কিন্তু এ সব চণ্ডমুণ্ডবধের পালা, একেবারে সারেগামাপাধানি; তেরেকেটে মেরেকেটে ছাড়া কথা নেই। ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া আর কি। বুঝেছ?
সকলে। বুঝেছি বই কি। হা হা হো হো!
তিনকড়ি। বুঝেছেন ধীরাজবাবু?
ধীরাজ। কিচ্ছু বুঝি নি।
নেপাল। ধীরাজবাবু বুঝেছেন তো?
ধীরাজ। না বাপু, কথাগুলো কী বলে গেলেন বুঝলুম না।
তিনকড়ি। কথা নেই বুঝলেন, ওর মজাটা তো বুঝেছেন? কথা তো আমরাও বুঝি নি।
দামােদর। রসিকবাবু, এই কথাগুলােও লিখতে হবে।
রসিক। (ধীরাজের প্রতি) আপনার মুখে হাসি নেই যে? হাসলে কোনাে লােকসান আছে?
ধীরাজ। রাগ করবেন না মশায়, হাসবার চেষ্টা করছি।
চিন্তামণি। আপনি বুঝি ভ্রাতাদের কেউ হবেন?
রসিক। ভ্রাতাও হতে পারেন ভর্তাও হতে পারেন।
দামােদর প্রভৃতি। (হাততালি দিয়া) বাহবা, বাহবা, কী মজা। হাে হাে হা হা।
দামােদর। এটাও লিখবেন। ভারী মজা হবে।
নীলমণি। (ধীরাজকে ধরিয়া) মশায় যান কোথায়?
ধীরাজ। বুকে টার্পিন মালিশ করতে যাচ্ছি, রসিকবাবু বড্ড বলেছেন।
প্রস্থান
চিন্তামণি। লােকটা জব্দ হয়ে গেছে। পাঁচ কথা যা শােনালেন ওর বাপের বয়সে―
রসিক। পাঁচ কথা আর হতে দিলে কই। আড়াইখানার বেশি কথা কই নি।
রসিককে ঘিবিয়া সকলের অবিশ্রাম হাস্য
দামােদর। দুখানা নয়, দশখানা নয়, আড়াইখানা—কী চমৎকার। ও-কথাটাও লিখতে হবে। টুকে রাখুন, বুঝেছেন রসিকবাবু।