ধন।

ধনের ত্রিবিধ-গতি আছে নিরূপিত,
দান, ভোগ, নাশ নামে ভুবনে বিদিত।
আদিমে ধরম হয়, দ্বিতীয়েতে সুখ,
অন্তিমে নিয়ত ঘটে অতিশয় দুখ।
এ হেতু সুজন করে ধন বিতরণ,
বিলাসী দ্বিতীয় পথে করয়ে গমন,
কিন্তু হায়, কৃপণের ভাগ্য দুখময়
অবশ্য অন্তিম তীরে ধরিবারে হয়।
ধনের গুণের কথা কি বলিব হায়,
ধনে অসুলভ কিছু না হেরি ধরায়

ধন্য, ধন! তব গুণ বর্ণিবারে নয়,
তব গুণে সব জনে সদা সুখে রয়।
কি ভবন, কি শয়ন, কি ভোজন পান,
তব তরে ঘটে সদা, সুখের সোপান।
তোমার অভাবে শীতে কত দুখ হয়,
নিদাঘে নিয়ত দাহে সহে জীবচয়।
বিজ্ঞানী অজ্ঞান হয় তোমার অভাবে,
অজ্ঞান বিজ্ঞানবিদ্‌ তোমার প্রভাবে।
তোমার করুণা কণা লভে যেই নর,
তার সম অনুপম কেবা ভাগ্যধর?
অজ্ঞান হইয়া সেই জ্ঞানীর আশ্রয়,
সে নির্গুণে গুণী বলি গুণীজন কয়।
নিদাঘে সে শীত সুখে, শীতে লভে তাপ,
প্রকৃতি-বিকৃতি করে তাহার প্রতাপ।
ঘোষিত তাহার যশঃ দেশে দেশে হয়,
নিরবধি উপাধিতে ভূষিত সে রয়।
চর্ব্ব্য, চূষ্য, লেহ্য পেয়, যত সুভোজন,
নিয়ত তাঁহার করে তৃপিতি সাধন।
দুগ্ধফেণ-নিভ চারু সুশীত শয়নে
রচিত দ্বিরদ রদে, সুরভি ভবনে
শয়নেও তার হয় ক্লেশ-অনুভব,
ধন্য ধন্য বলি তোমা মানি রে বিভব!

হে ধন! বাহন, ষান সুখ-উপাদান,
তোমার করুণা বিনা কে করে বিধান?
কে করে সু-মনোহর চারু উপবনে,
শয়নে নিরত মরি কুসুম-শয়নে?
নিন্দনীয় কাজে কে বা প্রশংসা বিতরে?
আবৃত কলুষরাশি হয় কার তরে?
কে করে সামান্য গুণ প্রবীণ-আকার?
অণুবীণ গুণ মরি ভবে আছে কার?
পরমুখে অম্লচাকে সদা যেই নরে
সেও হয় গুণগ্রাহী বল কার তরে?
কু-কুল-সম্ভব জন কার কৃপাবলে
সু-কুলীন হতে মান্য হয় মহীতলে?
হে ধন! কেবল তব মহিমার তরে
হেন ভাব ঘটে সদা ভুবন-ভিতরে।
তাই তোমা শত শত ধন্যবাদ-দান
করেছি, করিব, করি সুখের নিধান!
কিন্তু, অর্থ! পরমার্থ তুলনায় তুমি,
অণুমিত প্রশংসিত নহ সুখভূমি।
সুখপ্রদ তুমি হও ক্ষণেকের তরে,
অনন্ত কালের সুখ সে ধন বিতরে।
হে ধন! নিধন ভয় আবাসে তোমার,
সে ধন নিধন ভয় বিদূরে সবার।

তোমার পরশে হয় গরব সবার,
সে ধনে গরব-রব নাহি রহে কার।
ক্ষণ-স্থায়ী পরিজন তোষে তোমা তরে
কিন্তু, চির-সুখ-দাতা সে ধন বিতরে,
ধৈর্য্য-পিতা, ক্ষমা-মাত, শান্তি-প্রণয়িনী,
শম দম সহোদর, করুণা ভগিনী,
সত্য সুত, পূত তিন তনয়া—ভকতি,
জগদীশ-রতি আর কুপথে-অগতি।
তোমার চরম ফল বিষম ভীষণ,—
শোক, তাপ, হত্যা, দাহ, প্রণয়-ভঞ্জন,
কিন্তু, সে পরম ধনে যে করে সেবন,
চরমে পরম পদ লভে সেই জন।