হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/মহিলাগণের মধ্যমাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক কার্য্যাদির বিবরণ
মহিলাগণের মধ্যমাবস্থায় শারীরিক ও মানসিক কার্য্যাদির বিবরণ।
মহিলাগণ বাল্যাবস্থার ন্যায় মধ্যমাবস্থাতেও বহুবিধ ব্রতাচরণ করিয়া থাকে। ইহারা রূপ কামনায় রূপহরিদ্রা, পুত্র কামনায় ফলদান, বৈকুণ্ঠধামে গমন করিবার নিমিত্ত গাভি পূজা, সন্তান সন্ততিগণকে আয়ুষ্মান্ করিবার নিমিত্ত শীল পূজা, সর্প ভয়ে উনুন পূজা, ধন ধান্য বৃদ্ধি নিমিত্ত ধান্য পূজা প্রভৃতি, এবং আরও বহুবিধ কামনা করিয়া অনেকানেক পূজা ও ব্রতানুষ্ঠান করিয়া থাকেন; তৎসমুদয় অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করিতে হইলেও এক খানি পুস্তকাকারে পরিণত হয়, এই নিমিত্ত তাহাতে নিরস্ত হইলাম। বিদ্যাহীনতা প্রযুক্ত ইহারা প্রায় চির কালই বাল্যাবস্থার তুল্য অতি অজ্ঞানাবস্থায় থাকে, সুতরাং কোন বিষয়েরই যথার্থ বিবেচনা করিতে সমর্থ হয় না। এই নিমিত্ত তাহারা যাহা শ্রবণ করে তাহা সম্ভব কি অসম্ভব, সত্য কি মিথ্যা বিবেচনা না করিয়াই সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে, এবং এই বিশ্বাসেই কখন কখন বিষম ঘটনাও উপস্থিত হইয়া থাকে। ইহারা আত্মীয় গণকে বাধ্য করণাশয়ে নানাবিধ তুক্ তাক্ তন্ত্র মন্ত্র ব্যবহার করিয়া থাকে, এবং পুত্র কামনায় বহুবিধ ব্রতাচরণ ঔষধ গ্রহণ দেবালয়ে ধন্না ও দেব বৃক্ষের ফল ধারণ এবং নানা তীর্থে পর্য্যটন ও দেব পুষ্করিণীতে স্নান ও জল মগ্ন হইয়া মৎস্য ধারণ, পুত্রগণের পীড়া হইলে ঝাড়ান কাড়ান মন্ত্র তন্ত্রাদি দ্বারা তাহার প্রতিকার চেষ্টা এবং আরোগ্যাশয়ে তাহাদিগের অঙ্গে নানাবিধ পশু পক্ষ্যাদির নখ দন্ত ও ঔষধাদি প্রদান করিয়া থাকে। আহা! এই অবলাগণ যদ্যপি বিদ্যাবতী হইত তাহা হইলে আর এরূপ অসঙ্গত ব্যাপারে রত হইত না। পূর্ব্বেই লিখিত হইয়াছে ইহারা দিবা নিশি পরিচারিকার ন্যায় গৃহকার্য্য নির্ব্বাহ করে, এক্ষণে তাহা বিস্তারিত রূপে বর্ণিত হইতেছে! সামান্য ও মধ্যবিধ গৃহস্থগণ এক বধূ দ্বারা প্রায় সকল কর্ম্মই নিষ্পন্ন করেন, ইহাঁরা বিবাহার্থে গমন করিবার সময় মাতৃ সকাশে যে প্রতিশ্রুত সুত্রে বদ্ধ হয়েন তাহা যাবজ্জীবন অতি যত্ন সহকারে প্রতিপালন করিয়া থাকেন; মাতাগণও সেই অঙ্গীকার স্মরণ করিয়া পূর্ব্বোল্লিখিত ব্যবহার গুলি করিয়া থাকেন। বধূগণ তৎসমূদয় তাহাদিগের কর্ত্তব্য কর্ম্ম বলিয়া নির্বাহ করে। ইহারা পাচিকা, পরিচারিকা, ধাত্রী এবং কখন কখন পরিচারকের কর্ম্মও করিয়া থাকে।