হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/রাঢ়ীয় শ্রেণীস্থ কুলীনদিগের বিষয়
রাঢ়ীয় শ্রেণীস্থ কুলীনদিগের বিষয়।
এই শ্রেণীস্থ কুলীন সন্তানগণেরা স্ব স্ব পূর্ব্ব পুরুষদিগের নাম ও মান লইয়া সকলের নিকট পরিচয় দেন ও অতিশয় গর্ব্ব প্রকাশ করিয়া থাকেন এবং ইহাদিগের মধ্যে কেহ মুখোপাধ্যায় কেহ বন্দ্যোপাধ্যায় কেহ গঙ্গোপাধ্যায় কেহ বা চট্টোপাধ্যায় নামে বিখ্যাত হইয়াছেন। ইঁহারা এই সকল মান ও উপাধি লইয়া পরস্পর পরস্পরকে গুরু লঘু বোধে অতিশয় গর্ব্ব করিয়া থাকেন এবং ইঁহারা প্রান্তেও আত্মপক্ষা ক্ষুদ্র বংশীয়দিগের জল গ্রহণ করেন না। যদ্যপি ইঁহারা কোন কার্য্য উপলক্ষে স্থানান্তরে গমন করেন এবং দৈব বশতঃ অন্ন পানীয়ের অপ্রাপ্তি হেতু অতিশয় ক্লান্ত হয়েন, আর সেই স্থানে যদ্যপি তাঁহাপেক্ষা কোন ক্ষুদ্র বংশীয় ব্রাহ্মণ তাঁহার সেই ক্লেশ নিবারণের নিমিত্ত বারম্বার অনুরোধ করেন, তবে তিনি তাহার সৌজন্যেতে সন্তুষ্ট না হইয়া বরং অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া কহেন, কি আমি তোমার বাটীতে জল গ্রহণ করিব? এমন কথা মুখে আনিও না, আমরা যে স্থানে পদ প্রক্ষালন করিয়া থাকি তোমাদিগের পিতৃ পুরুষেরা সেই স্থানে মন্তক স্থাপন করিতে পারেন কি না সন্দেহ। আরও তাঁহারা কহেন প্রাণ হইতে মানই বড় “যাক প্রাণ থাক মান” আহা কি অজ্ঞানতার বিষয়! যদ্যপি আমাদিগের দেশে এই অহিতকর কৌলীন্য মর্য্যাদা না থাকিত, তবে আমাদিগের দেশের আর এরূপ দুর্দশা ঘটিত না, এবং ইঁহারাও এরূপ অজ্ঞানাবস্থায় থাকিতেন না, ইঁহারা অবশ্যই স্ব স্ব জীবিকা নির্ব্বাহার্থে ও মান সম্ম্রম বৃদ্ধি করণার্থে বিদ্যাভ্যাসে রত হইতেন, এবং সেই বিদ্যা প্রভাবেই ইঁহাদিগের ঐ অজ্ঞান ভাবেরও অভাব হইত।