১৫১৩ সাল/ষোড়শ পরিচ্ছেদ
ষোড়শ পরিচ্ছেদ।
শ্রা্ন্তিদূর হইলে পর বন্ধুবর বলিলেন:—
“দেখ, রজনি, একটা বেশ কাণ্ড হইয়া গেল। আমাদিগের অবশ্য বিশেষ কিছু ক্ষতি হয় নাই; কিন্তু মন বড়ই খারাপ হইয়াছে। বোধ হইতেছে, যেন কোন অপরিহার্য্য বিপদ্ সম্মুখীন। তুমি হাসিয়া উড়াইয়া দিতে পার; কিন্তু তুমি জান যে আনি এরূপ ভাবের কথা কখনও পূর্ব্বে বলি নাই। ইহা উপেক্ষণীয় নহে।”
আমি সহাস্যে বলিলাম:—
“একটা ভয়ানক বিপদ্ হইতে রক্ষা পাইয়াছ। ফলে, তোমার শিরাগুলির উপর তাহা কার্য্য করিয়া নানারূপ বিভীষিকা উৎপাদন করাইতেছে। অবশ্য মানবের সর্ব্বদাই বিপদ্ ঘটিতে পারে; কিন্তু এখন আশঙ্কার আর কোন কারণ নাই। তুমি অযথা উত্তেজিত হইও না।”
“আমি জানি, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করিবে না। কিন্তু শীঘ্রই দেখিতে পাইবে যে আমার আশঙ্কা অমূলক নহে। যাহা হউক, এখন ডিপোতে চল। তাহার অবস্থা দেখা আবশ্যক।”
দেখিয়া সুখী হইলাম, উহার কোনরূপ ক্ষতি হয় নাই। সকল দ্রব্যই যথাস্থানে আছে। তৎপরে আমরা দ্বার বন্ধ করিবার উপক্রম করিতেছি, এখন সময় তারহীন বার্ত্তা প্রেরণ করিবার যন্ত্রের ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল। বন্ধুবর receiverএর নিকট গেলেন; কিন্তু যে সংবাদ পাইলাম, তাহাতে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত হইয়া পড়িলাম। তাহা এই:—
“এবার আর কোন রকমে নিস্তার নাই। সর্ব্বদাই সাবধানে থাকিবেন”। প্রেরক হরিশ!
বন্ধুবর বলিলেন:—
“খোলসা করিয়া বল।”
“শত্রুর এক বোট—”
আর সংবাদ আসিল না। আমরা প্রায় এক ঘণ্টা দণ্ডায়মান রছিলাম; কিন্তু ঘণ্টা আর বাজিল না। অগত্যা receiver তুলিয়া রাখিয়া চেয়ারে বসিয়া পড়িলাম।
বন্ধুবর বলিলেন:—
“দেখিলে? আমার কথা উড়াইয়া দিতে চাহিয়াছিলে না? যাহা হউক, এখন কি করা যায়? এ এক মহাসমস্যা উপস্থিত।”
আমি বলিলাম:—
“ব্যাপারটা বিস্তারিত শোনা গেল না। যাহা হউক, একটা বিপদ্ যে সম্মুখীন, তাহা বুঝা যাইতেছে। তাহাকে সর্ব্বতোভাবে এড়াইতে চেষ্টা করিতে হইবে।”
“তাহাতো আমি বুঝি; কিন্তু সকল কথা না জানিতে পারিলে কি উপায় অবলম্বন করিব, স্থির করিতে পারিতেছি না। যাহা হউক, এক কার্য্য করা যা’ক্। আমাদিগের কার্য্য বন্ধ করিতে আর পনেরো দিবস মাত্র বাকি আছে। ইহার পূর্ব্বেই—কল্যই, উহা বন্ধ করা যা’ক্। আমাদিগের বিপদ্ সমুদ্রের উপরই ঘটিবে, ভূপৃষ্ঠে নহে। অতএব যত সুবর্ণ পাওয়া গিয়াছে, তাহা জাহাজ হইতে নামাইয়া ডিপোতে জমা রাখা যা’ক্। উহা দুইজন বিশ্বাসী ব্যক্তির চার্জ্জে রাখিয়া, চল কলিকাতায় ফিরিয়া যাই। সেখানে ব্যাপার বিস্তারিত জানিয়া যাহা ভাল হয় করা যাইবে। তোমার মত কি?”
“আমিও তাহাই বলি। তবে আর বিলম্বের প্রয়োজন কি?”
আমরা জাহাজে সত্বরই ফিরিয়া আসিলাম। পরে সকলকে ডাকাইয়া বলিলাম যে, নানা কারণে আমরা অদ্য হইতে কার্য্য বন্ধ করিতে মনস্থ করিয়াছি এবং আগামী কল্যই কলিকাতাভিমুখে যাত্রা করিব। সেইদিনই জাহাজে যতটা সুবর্ণ ছিল, তাহা ডিপোজাত করিয়া এবং উপযুক্ত ও বিশ্বাসী দুইজন ভৃত্যের চার্জ্জে উহা রাখিরা জাহাজে প্রত্যাবর্ত্তন করিলাম। পরদিন প্রত্যূষেই কলিকাতাভিমুখে যাত্রা করিলাম। সবমেরীন্ বোম্বায়ে পাঠাইয়া দিলাম।