১৯০৫ সালে বাংলা/উপহার প্রদান
সুরেন্দ্র বাবু বক্তৃতা শেষ করিয়া লাঞ্ছিত মহোদয়গণকে একে একে আহ্বানপূর্বক পদক, বন্দেমাতরম পরিদোলক বা লকেট, বন্ধনী ব্রুচ এবং প্রশংসাসূচক রুমাল প্রদান করিলেন। পদকগুলি রৌপ্য নির্ম্মিত; পদকে এবং প্রশংসা পত্রে লাঞ্ছিত দিগের নাম লিখিত ছিল। সুরেন্দ্র বাবু নাম ধরিয়া একে একে সকলকে আহবান পূর্ব্বক পুষ্পমাল্যে সুশোভিত করিলেন এবং অবশেষে গাঢ় আলিঙ্গনে বদ্ধ করিয়া তাঁহাদিগকে পদকাদি ও প্রশংসা সূচক রুমাল উপহার দিলেন।
যাহারা পদক, লকেট প্রভূতি উপহার প্রাপ্ত হইয়াছেন, তাহাদের মধ্যে অনেকেই সভায় উপস্থিত থাকিয়া সুরেন্দ্র বাবুর নিকট হইতে উপহার গ্রহণ করিয়া ছিলেন। যাহারা সভাস্থলে উপস্থিত হইতে পারেন নাই, তাঁহাদিগের নিমিত্ত প্রস্তুত পদকাদি সুবিধাক্রমে প্রেরিত হইবে এই মীমাংসান্তে তখন তুলিয়া রাখা হইল। প্রথমে সভার অধিবেশনস্থল সম্বন্ধে গোলযোগ ঘটায় সংবাদ আদান প্রদানের অনেক ব্যতিক্রম ঘটিয়াছিল। এমন কি শেষে জানা গেল অনেক লাঞ্ছিত ব্যক্তি আদৌ সংবাদ পান নাই। সহৃদয় মহাত্মার ক্রটি মার্জন করিবেন।
এই সময়ে “আমার যায় যাবে জীবন চলে, শুধু তোমার কাজে, জগৎ মাঝে, বন্দেমাতরম্ ব’লে’, এই সঙ্গীতটি ভবানীপুরের স্বদেশ সেবক সম্প্রদায় দ্বারা গীত হইয়া শ্রোতৃবর্গকে বিমোহিত ও উত্তেজিত করিয়াছিল। এই সঙ্গীত ও জয়ধ্বনি শেষ হইলে শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ নিম্নলিখিত মহোদয়গণের ধন্যবাদ করেন।
১। শ্রীযুক্ত মতিলাল রাধাকিষণ, কাষ্ঠ বিক্রেতা। ইনি অসময়ে, প্রার্থনা পত্র প্রাপ্তি মাত্রেই এই রঙ্গমঞ্চে সভা করিবার অনুমতি প্রদান করেন।
২। বাবু দ্বিজেন্দ্রনাথ মল্লিক ১৬৪ নং বারাণসী ঘোষের ষ্ট্রীট। ইনি স্বহস্তে নির্ম্মিত ৭ খানি কারুকার্য্য সংবলিত কাষ্ঠফলক “বন্দে মাতরম” শব্দাঙ্কিত করিয়া সাতজনকে প্রদান করিবার জন্য সম্পাদকের হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলেন। তাহা ঐ সভায় প্রদত্ত হইয়াছে।
৩। এইচ, বসু, ইনি কুন্তলীন প্রেসের স্বত্বাধিকারী। প্রদত্ত রুমাল ছাপিবার জন্য অভ্যর্থনা সমিতির নিকট হইতে এক কপর্দ্দকও গ্রহণ করেন নাই।
৪। ভবানীপুরের বাবু প্রভাসচন্দ্র দাস। ইনি বিপিন বাবু ইন্দ্র বাবু এবং যতীন বাবুকে উপহার দিবার জন্য তিনটি বন্দে মাতরম্ অঙ্কিত নিকেল নির্ম্মিত সেফটি পিন ও তিনটি পুষ্পগুচ্ছ প্রদান করিয়াছিলেন।
২। জোড়াসাকো সেন কোম্পানির স্বত্বাধিকারী শ্রীযুক্ত অমরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী। ইনি সমুদয় পুষ্পগুচ্ছ ও মাল্য প্রভৃতি প্রদান করিয়াছিলেন।