১৯০৫ সালে বাংলা/স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনের প্রস্তাব
স্মৃতিচিহ্ন স্থাপনের প্রস্তাব।
তৎপরে অশ্বিনী বাবু একখানি পত্র অবলম্বন করিয়া প্রস্তাব করিলেন যে, গত কল্য যে স্থানে বালকদিগের রক্তপাত হইয়াছে ও সুরেন্দ্র বাবু বন্দি হইয়াছে, সেই স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হউক। এই প্রস্তাব উপস্থিত হইবা মাত্র চাঁদা সংগৃহীত হইতে আরম্ভ হইল। অবশ্য নগদ টাকা লইয়া অতি অল্প লোকেই সমিতিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। সুতরাং সকলে সভাস্থলে অর্থদান করিতে পারেন নাই, তথাপি অনেকে হস্তের অঙ্গুরীয়ক প্রভৃতি খুলিয়া স্মৃতিস্তম্ভের সহায়তাকল্পে দান করিয়াছিলেন। বাবু তারাপ্রসন্ন বসুর পত্নী শ্রীমতী সরোজিনী বসু তাঁহার সোণার বালা খুলিয়া দান করিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করিলেন, যতদিন বঙ্গদেশে “বন্দেমাতরম” রহিত করিবার অবৈধ আদেশ রহিত না হয় ততদিন তিনি আর হস্তে বালা পরিবেন না। এই প্রতিজ্ঞা শ্রবণ করিয়া সকলে “বন্দেমাতরম্” ধ্বনি করিলেন। উপস্থিত ক্ষেত্রে যাহারা এই স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠার জন্য নগদ টাকা দান করিয়াছিলেন তাঁহাদিগের মধ্যে কলিকাতার জনৈক দরিদ্র ব্রাহ্মণের দানের মাত্রাই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক হইয়াছিল; তিনি সভাস্থলে নগদ একশত মুদ্রা দান করিয়াছিলেন। শ্রীমতী সরোজিনী বসুর পত্র প্রকিশিত হইল।
দ্বিতীয় প্রস্তাব।
ইহার পর দ্বিতীয় প্রস্তাবে বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ নিবারণের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। এই প্রস্তাব ফরিদপুরের বাবু কামিনী কুমার মুখোপাধ্যায়, চট্টগ্রামের বাবু যাত্রামোহন সেন, শ্রীহট্টের বাবু শশীন্দ্র সিংহ, কাছাড়ের বাবু ইন্দুভূষণ মজুমদার, বৰ্দ্ধমানের মৌলবী আবুল হোসেন, কৃষ্ণনগরের বাবু বেচারাম লাহিড়ী, হুগলীর বাবু মথুরানাথ গাঙ্গুলী, ২৪ পরগণার ডাক্তার গফুর প্রভৃতি উত্থাপন, অনুমোদন ও সমর্থন করেন। সর্ব্বসম্মতিক্রমে “বন্দেমাতরম্” ধ্বনি সহকারে এই প্রস্তাব পরিগৃহীত হয়।
তৃতীয় প্রস্তাব।
রায় যতীন্দ্রনাথ চৌধুরী মহাশয় তৃতীয় প্রস্তাব উত্থাপিত করেন। এই প্রস্তাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় অলোচিত হইয়াছিল। বাবু হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বাবু ব্রজসুন্দর রায়, বাবু সুরেন্দ্রনাথ সেন, মৌলবী হেদায়ৎ বক্স এই প্রস্তাবের অনুমোদন ও সমর্থন করেন। এই সময়ে সেই প্রসিদ্ধ বীর বালক রাজেন্দ্র লাল সাহাকে সকলের সম্মুখে উপস্থিত করা হইল। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে যে, এই বালক আসামীর কাঠগড়ায় থাকিয়া ও বিলাতী কলমে নাম স্বাক্ষর করিতে অসম্মতি প্রকাশ করিয়াছিল; এবং কারাগারে বিলাতী কম্বল ব্যবহার করিতে চাহে নাই। তাহাকে দেখিয়া সকলে উচ্চরবে “বন্দে মাতরম্” ধ্বনি করিলেন। অতঃপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি-কল্পে গৌরীপুরের ভূম্যাধিকারিণী শ্রীমতি বিশ্বেশ্বরী দেবী এক লক্ষ টাকা, বাবু সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী তিন হাজার, বাবু অনাথবন্ধু গুহ দুই হাজার, ডুমহারের বাবু বরেন্দ্র কুণ্ডু মহাশয় পাঁচশত টাকা নগদ দান করিতে স্বীকার করেন।
চতুর্থ প্রস্তাব।
এই প্রস্তাবে স্বয়ং সভাপতি মহাশয় বিলাতী পণ্য বর্জ্জনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত করিয়াছিলেন। বাবু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌলবী আবুল হোসেন, মাননীয় ভূপেন্দ্রনাথ বসু, বাবু শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু, শ্রীযুক্ত কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ এই প্রস্তাবের সমর্থন করিয়া বক্তৃতা করিয়াছিলেন। সুরেন্দ্রবাবু মহিলাগণকে সম্বোধন করিয়া বিলাতী দ্রব্য বর্জ্জনে দৃঢসংকল্প হইতে অনুরোধ করেন। মাঙ্গলিক হুলুধ্বনি সহকারে রমণী সমাজ সে প্রস্তাবে সম্মতিজ্ঞাপন করেন।