আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী/১৪
১৪
অধ্যয়ন ও জ্ঞানলাভ
আমি এখন নিজেকে ছাত্র ব’লে গণ্য করি। ঐ জীবন ত্যাগ ক’রে একদিনও অন্য জীবনে পদার্পণ করেছি বলে মনে হয় না। “ছাত্রাণাং অধ্যয়নং তপঃ”—বাস্তবিক এই ঋষিবাক্য বড় সত্য—বড় সার কথা। আর আমাদের এই ছাত্রজীবন ও গার্হস্থ্যজীবনের পার্থক্যের প্রাচীর বড়ই অমঙ্গলকর।
ইউরোপীয় অবস্থাপন্ন লোকের একটি ষ্টাডী অর্থাৎ পাঠাগার থাকে। সেখানে প্রবেশ কর্বার অর্থ এই—আর যেন কেউ না দেখে বা ঢোকে। যেমন আমাদের দেশের ঠাকুর-ঘর। ভক্ত সেখানে আপন মনে সাধনা করেন, হৃদয়দেবতাকে ভক্তির অর্ঘ্য দান করেন—কিন্তু তা লোকচক্ষুর অন্তরালে—আর কেহ দেখে না। আমাদের পাঠাগারকে ঠাকুরঘরের পবিত্রতায় মণ্ডিত কর্তে হবে, তাকে নিভৃতে স্থাপন কর্তে হবে—যেন চপলতার গোলমাল সেখানে না পৌঁছায়।
আমাদের দেশে অনেক ছাত্র বাড়ীতে থাকেন, আবার অনেকে মেসে থাকেন। এখানে ছাত্রের প্রধান বিপদ এই যে তার কোন স্বতন্ত্র পাঠাগার থাকে না। বড় লোকে বড় বাড়ীতে থাকেন—নানাকার্য্যের বন্দোবস্তের জন্য তাঁদের অনেক ব্যয় কর্তে হয়। কিন্তু বাড়ীর ছেলে কিরূপে কোলাহলের বাইরে নির্জ্জনে ব’সে পড়্বে সাধারণতঃ কোন বাড়ীতেই তার বন্দোবস্ত থাকে না—এরূপ বন্দোবস্ত যে থাকা দর্কার তাও কেউ ভাল করে উপলব্ধি করেন না। আর মেসের ত কথাই নেই। আমাদের দেশে কথা আছে—‘একে উস্খুস্ দুয়ে পাঠ, তিনে গণ্ডগোল চারে হাট।’ মেসে অনেকে একত্র জোটে— কাজেই প্রত্যেকে হাটের মধ্যে গিয়ে পড়ে। হাটে হয় হট্টগোল, সরস্বতী সেখানে টিক্তে পারেন না; মন্দিরে যেরূপ ভক্তের জপতপ আরাধনা—পাঠাগারে সেইরূপ ছাত্রের অধ্যয়ন ও সাধনা। ছাত্রের প্রধান কর্ত্তব্য অধ্যয়ন; আর এই অধ্যয়ন তপস্যা ব্যতীত আর কিছু নয়। একাগ্রচিত্ততা এই তপস্যায় সিদ্ধি দান করে।
প্রথমে কথা এই যে—কি ক’রে পড়্তে হয়? ক ঘণ্টা পড় তার হিসাব রাখ্বার দরকার নেই, কিরূপ একাগ্রতার সহিত অধ্যয়ন কর সেইটাই সবার চেয়ে দর্কারী জিনিস। পড়াশুনার উদ্দেশ্য সফল কর্তে হ’লে—ঘণ্টার উপর নয়—একাগ্রতার উপর নির্ভর কর্তে হয়। আমি আজ সকালে ‘খুব’ পড়েছি—কিন্তু মোটে একঘণ্টা কি তার কিছু বেশী। এই ভাবে আমি রোজই পড়ি, তা রবিবার নেই, ছুটীও নেই, অবকাশও নেই। এই ভাবে সমানে (নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সহিত) পড়ে যেতে হবে। কিন্তু এদেশে ছাত্রদের প্রধান বিপদ গল্প, খেলা আর আড্ডা। একাগ্রতার ত সম্পূর্ণই অভাব; তার উপর খেয়াল ও হুজুগে, পড়্বার সব সময়টা কেটে যায়। পরে যখন পরীক্ষা কাছে এগিয়ে আসে তখন আহার, নিদ্রা ত্যাগ ক’রে, রাত্রি জাগরণে স্বাস্থ্য নষ্ট ক’রে তার জন্যে প্রস্তুত হবার বিপুল প্রয়াস। এ-কে লেখা পড়া বলে না, এ লেখা পড়া নয়, এ ইউনিভারসিটিকে ফাঁকি। কেবল মুখস্থ আর উদরস্থ; পেটুকের মিষ্টান্ন ভক্ষণের মত একমণ সন্দেশ টপাটপ্ করে গেলা, তারপর গলায় আঙুল দিয়ে বমি। সব সময়টা ফাঁকি দিয়ে পরীক্ষা কাছে এলেই টপাটপ্ মুখস্থ ও উদরস্থ করবার প্রয়াস; তারপর পরীক্ষামন্দিরে গিয়ে একেবারে বমি। পরীক্ষার পরই সরস্বতীর সঙ্গে সকল সম্বন্ধ লোপ আর পাশ হ’লে ‘হকার’ চাচার দোকানে পুস্তক বিসর্জ্জন। মনে পড়ে ছেলে-বেলায় জ্বর হ’ত, আর কেবল মিছরী, বেদানা ও কুইনীন্ খেতে হ’ত। বাল্যজ্বর মনে করিয়ে দেয় ব’লে ঐজিনিসগুলোয় আমায় একটা ভয়ানক বিতৃষ্ণা আছে—ও-গুলো আমার কাছে বিভীষিকা! পাশকর্বার পর এদেশের ছাত্রদের পুস্তকের উপর ঠিক্ ঐ রকমই তীব্র বিতৃষ্ণা হয়—বইগুলো তাদের কাছে আতঙ্ক উপস্থিত করে। পুস্তককে আজীবন সঙ্গী কর্তে হবে, কিন্তু আশ্চর্য্য এই যে পরীক্ষার পর বই আর পাবার জো নাই! শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয় একবার কোন ছাত্রকে বলেছিলেন ‘ব্ল্যাকীর “সেল্ফ্ কাল্চ্যর” বইখানা দাও ত।’ সে জবাব দিলে ‘সে বই তালা বন্ধ, দেখ্লে ভয় হয়।’ এ বড় দুঃখের কথা। সৎপুস্তককে আজীবন সহচর কর্তে হবে, আজীবন ধ’রে সৎপুস্তক পাঠে ভাব সংগ্রহ কর্তে হবে, হৃদয়ে উদ্দীপনা জাগিয়ে রাখতে হবে এবং প্রকৃত জ্ঞানের অনুশীলন কর্তে হবে। ইংরেজ কবি সাদি পুস্তককে লক্ষ্য করে যথার্থ ই বলেছেন—
“The mighty minds of old”
“My never-failing friends are they.”
পুস্তক পাঠের উদ্দেশ্য সফল কর্তে হ’লে খুব বেশী বই পড়্বার দরকার হয় না। অনেকে যা পায় তাই পড়ে, পরিণত বয়সেও তাদের এই অভ্যাস থেকে যায়। তারা কখনও পুস্তক নির্ব্বাচন করে পড়ে না। ছুটী পেলে তারা অনেক রকমে অনেক পয়সা ব্যয় কর্বে। বেড়াবার সখ মেটাবার জন্যে দামী পোষাক, ট্রাঙ্ক, গ্লাড্ষ্টোন্-ব্যাগ কিন্বে, কিন্তু ছুটীতে পড়্বার জন্যে কি বই সঙ্গে নিয়ে যাবে কখনই তার কিছু স্থির কর্বে না। হাতে যা পাবে তাই পড়বে, কিছু বিচার করবে না। রায়রনের পদ্য থেকে এমার্সন বলেন “He knew not what to say, and so he swore”। প্রথম মনে হ’ল কি পড়্ব? খবরের কাগজখানা তুলে নিলাম, আগে খবর পড়্লাম, তার পর অন্য কথা পড়া হ’ল, শেষ বিজ্ঞাপনস্তম্ভ পর্য্যন্ত নিঃশেষ করা গেল। কি পাওয়া গেল, কি বোঝা গেল, তার কোন চিন্তাই করলাম না। কিন্তু এরকম ঠিক্ নয়, উদ্দেশ্যবিহীন পাঠ কোনমতেই ঠিক নয়। সবার আগে পড়্বার উদ্দেশ্য খুব ভাল ক’রে বুঝ্তে হবে, তারপর রুচি অনুসারে পুস্তক নির্ব্বাচন কর্তে হবে, কারণ সকলের সব বই ভাল লাগে না, কিন্তু একটা উদ্দেশ্য মনে রেখে তারই উপযোগী পুস্তক নির্ব্বাচন করা এদেশের ছাত্রদের মধ্যে নেই বল্লেই চলে। যে-কোনো লাইব্রেরীর কর্ত্তৃপক্ষগণকে যদি জিজ্ঞাসা করে দেখেন “পাঠকগণ নভেল নাটকই বা কত পড়েন আর ইতিহাস ও জীবনীই বা কখানা পড়েন,” দেখ্বেন তৃপ্তিকর উত্তর পাওয়া যাবে না।
আমাদের ছাত্রদের মধ্যে নভেলের প্রতি একটা ভয়ঙ্কর আগ্রহ দেখা যায়। ভাল-পাশ-করা শিক্ষিতছেলে ছুটীতে যদি নভেল পেলে ত স্নানাহার বন্ধ—যতক্ষণ না বইখানা শেষ হয়। কিন্তু একখানা বড় নভেল পড়তে আমার ছ মাস লাগে, কারণ আমাকে ঠিক সময় মত কাজ কর্তে হয়, ল্যাবরেটরীতে কাজ করার পর আধ ঘণ্টা সময় পেলে পড়ি, নইলে নয়। সব কাজেরই একটা নির্দ্দিষ্ট সময় থাকা চাই—সকলেরই এই প্রণালী অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ আমাদের দেশে, যেখানে স্বাস্থ্যের একান্ত অভাব। ম্যালেরিয়ার প্রকোপে লোকে আজীবন ব্যাধিগ্রস্ত; ট্রেশে খাবার নেই, শরীরে পুষ্টি নেই। সকলেই দীন দরিদ্র, অন্নসংস্থানের ভাবনায় সবাই অস্থির। বাঙ্গালীর প্রধান পুষ্টিকর খাদ্য মাছ ও দুধ সর্ব্বত্রই দুষ্প্রাপ্য হ’য়ে উঠেছে। একে অস্বাস্থ্যের এইসব কারণ উপস্থিত রয়েছে, তার উপর ছাত্রের অতিরিক্ত পাঠ, কাজেই অল্প বয়সে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয় এবং সে কাজের বার হ’য়ে পড়ে। ২৪ ঘণ্টায় একদিন। ছেলেমানুষের আট ঘণ্টা ঘুমুলেই যথেষ্ট হয়। ১৬ ঘণ্টা হাতে থাকে। তার মধ্যে রোজ ৪ ঘণ্টা পড়্লেই প্রচুর। কিন্তু পড়্তে হবে পরিপূর্ণ একাগ্রতার সহিত, নইলে কোন কাজ হবে না। বাঙ্গালী ছাত্রের প্রধান শত্রু—পড়্বার সময় অনেকের একত্র অবস্থান। এরূপ কর্লে গল্প আস্বেই— অন্ততঃ অতর্কিতভাবে আসবে। আর বাঙ্গালীর প্রধান বিপদ হচ্ছে আড্ডা। বেশী বয়সে আমরা সবাই বসে কাটাই, বাহিরে উঠে হেঁটে বেড়াতে উৎসাহ আসে না, প্রবৃত্তিও হয় না; তাস-পাশাতেই কত সময় কেটে যায়। আবার এই তাসপাশার আড্ডার পাশে অনেক সময় ছেলেরা পড়াশুনা করে। বিপদ্ কি ভয়ানক! ইউরোপীয়ান যখন পাঠাগারে একমনে অধ্যয়ন করে তখন তার স্ত্রীকেও (“May I come in”) “আমি কি ভিতরে যেতে পারি” এই ব’লে দরজায় (knock) ঠোকা দিতে হয়। যেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঘরে যেতে হচ্ছে, যেন শুধু বিরক্ত কর্তে। কারণ পাঠাগার ঠাকুরঘরের মত পরিত্র স্থান, সেখানে কথা কওয়া পাপ। তার পরের কথা—
“Work while you work, play while you play,
This is the way to be cheerful and gay”—
কাজের সময় কাজ কর্তে হয়, খেলার সময় খেলা; তা হলেই মনে আনন্দ ও উৎসাহ থাকে। আমি সর্ব্বদাই কাজ করি, আবার অবসরমত করি না। একজন বড় ইংরেজ দোকানদার আফিসে একমনে পাঁচ ছয় ঘণ্টা কঠিন পরিশ্রম ক’রে কাজ করে, কিন্তু যেমনি কাজ শেষ হয় অমনি গঙ্গার ধারে—খোলা মাঠে মুক্ত বাতাসে বেড়াতে যায়। তারা সে সময়ে বসে থাকে না—কুড়েমি করে না, আড্ডা বা মজ্লিসে জমে না। কিন্তু আমরা স্বাস্থ্য রাখ্তে জানি না, সময়ে কাজ করি না, তাই শরীর ও সময় দুইএরই অপব্যবহার হয়; স্বাস্থ্যও থাকে না, কাজও ওঠে না।
এদেশে শুধু বই পড়িয়ে বিদ্যা শেখানো হয়। কিন্তু ইউরোপে সাধারণ পুস্তক পাঠের সঙ্গে প্রকৃতির উন্মুক্ত বিশাল গ্রন্থ পাঠ ক’রে জ্ঞানার্জ্জন কর্বার প্রবৃত্তি জাগিয়ে দেওয়া হয়। শুধু বই প’ড়ে, কত শেখা যায়? নিজের চেষ্টায় বিশ্বরাজ্যের নানাপ্রকার অদ্ভুত ঘটনা নিপুণচক্ষে পর্য্যবেক্ষণ কর্তে হয়; তবেই প্রকৃত জ্ঞানার্জ্জন হয়। পুঁথিগত বিদ্যার দৌড় কখনই বেশী হয় না। বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ডিকেন্স সময়ে সময়ে ছদ্মবেশে মদের দোকানে গিয়ে বসে থাক্তেন। উদ্দেশ্য মাতালের কথাবার্ত্তা শুনে তার প্রকৃতি বুঝে দেখা। এই ভাবে নানা রকমে বিখ্যাত ইউরোপীয়েরা মানবপ্রকৃতি নিখুঁত করে জান্বার চেষ্টা করেন। এ-ই প্রকৃত অধ্যয়ন। মানবপ্রকৃতির পর জড়প্রকৃতি। পর্য্যবেক্ষণের দ্বারা তাও বুঝ্তে হবে। লণ্ডনের কাছে এক বটানিকেল গার্ডেন আছে, তার নাম কিউ গার্ডেন্স্ (Kew Gardens), পৃথিবীতে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ। উদ্ভিদ্বিদ্যা আহরণ করবার জন্যে শত সহস্র বিদ্যার্থী সেখানে যান। নানা রকমের গাছ, তাদের উৎপত্তি ও বৃদ্ধির নিয়ম—নিজের চক্ষে সুকৌশলে পর্যবেক্ষণ ক’রে উদ্ভিদ্ সম্বন্ধে তাঁরা অনেক তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। আর আমাদের এই সুজলা সুফলা দেশে, এই ভারতবর্ষে গাছের ত অভাব নেই। কিন্তু উদ্ভিদ্ সম্বন্ধে কি তত্ত্ব জান্তে পেরেছি আমরা? বিলাতে তিন মাস কি তার কিছু বেশী দিন ধ’রে গাছপালার সবুজ পাতা থাকে। অন্য সময়ে কাঁচের ঘরের মধ্যে কলাগাছ প্রভৃতি বাঁচিয়ে রাখ্তে হয়। কিন্তু সে দেশের লোকেরা এই কয়মাসের সুবিধায় উদ্ভিদ্বিদ্যা অধ্যয়ন ক’রে সেই সম্বন্ধে নানা সত্য আবিষ্কার করে। আর আমরা এই চিরসবুজ দেশে চিরকালই চুপ ক’রে বসে থাকি। চক্ষুষ্মান কারা? ১৮৪৫ সালে হূকার নামে এক ইউরোপীয়ান্ এদেশে উদ্ভিদ্বিদ্যা আহরণ কর্তে এসেছিলেন। তখন দার্জিলিঙ্গের রেল হয়নি। কিন্তু তিনি অশেষ ক্লেশ স্বীকার ক’রে গাছগাছড়া দেখ্বার জন্যে সিকিম গেলেন। তারপর সে দেশে বন্দী হলেন; সেই কারণে সিকিমের সঙ্গে যুদ্ধই বেধে গেল। যা হোক্, অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তিনি ১০০০০ (দশ হাজার) রকম আবশ্যকীয় গাছগাছড়া সংগ্রহ ক’রে বিলাতে ফিরে গেলেন; সে-সব এখনও কিউ গার্ডেন্সে (Kew Gardens) আছে। আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য যে ভারতের উদ্ভিদ্জ্ঞান ইংরেজের বই প’ড়ে শিখতে হয়।
রক্স্বর্গের Flora Indica নামে এক অমূল্য গ্রন্থ আছে। শতাধিক বৎসর পূর্ব্বে তিনি সমস্ত ভারত পদব্রজে ভ্রমণ করে নানা রকম গাছ সংগ্রহ করেছিলেন। এবং প্রত্যেকটির বাঙ্গালা, হিন্দি, তামিল নাম জোগাড় করেছিলেন। তাঁর বই সকলে পড়ে। এঁরা ইউরোপীয়ান্ ম্লেচ্ছ, কিন্তু আমাদের চিরস্মরণীয়।
জুঅলজিক্যাল গার্ডেনে ইউরোপীয়েরা নানা রকম পশুপক্ষী কীটপতঙ্গ প্রভৃতির জীবন-যাপন-প্রণালী অধ্যয়ন করেন। ফরাসী দেশের একজন উকিল কুড়ি বৎসর ধরে শুয়াপোকা ও প্রজাপতি কেমন ক’রে এক থেকে অপরে পরিণত হয় তা পর্য্যবেক্ষণ করেছেন, আর তার একটি কৌতূহলপ্রদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ছাড়া তিনি নিজের চোখে গুটি ও তুঁত-পোকার জীবনযাত্রা দেখে ঐ-সকল কীট থেকে রেশম উৎপন্ন করা সম্বন্ধে অনেক আবশ্যকীয় নূতন কথা সভ্যজগৎকে জানিয়েছেন। আর একজন অন্ধ, মধুমক্ষিকার ইতিহাস লিখেছেন। তিনি যৌবনে অন্ধ হয়েছিলেন। তাই তাঁর স্ত্রী ও ভৃত্য মধুমক্ষিকার জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ ক’রে সেই-সব কথা তাঁর কাছে বল্তেন এবং তিনি বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে তা লিপিবদ্ধ কর্তেন। এই প্রকারে হিউবার (Huber) তাঁর বিখ্যাত পুস্তক মৌমাছির ইতিবৃত্ত (History of the Bees) লিখেছেন।
ইংরেজ ও আমেরিকানের এক-একটা Hobby অর্থাৎ খেয়াল আছে। কেউ গার্ডেনিং করেন, বাগানে নানারকম ফলফুল উৎপন্ন করেন। এ একটা সুন্দর খেয়াল। কেউ বা প্রাণীতত্ত্ব অধ্যয়ন করেন, আবার কেউ বা পতঙ্গবিজ্ঞান (Entomology) সম্বন্ধে আলোচনা করেন। আমাদের ভূতপূর্ব্ব গবর্ণর লর্ড কারমাইকেল নিজে পতঙ্গ সম্বন্ধে আলোচনা করিতেন। ইংরেজ কখনো ব’সে থাকে না। এই রকম একটা খেয়াল থাকে। এইসকল ব্যাপার অধ্যয়ন করে তাদের সকলেই যে কলেজের অধ্যাপক হয় তা নয়, কিন্তু এইসব কথা পুস্তকে প্রকাশ ক’রে তাঁরা জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করেন, তাঁদের বিলক্ষণ আয়ও হয়।
এদেশে গবর্ণমেণ্ট পুনা কৃষিকলেজে লেফ্রয় (Lefroy) নামক একজন মস্ত পতঙ্গবিজ্ঞানবিৎ (Entomologist) কে আনিয়াছেন। তিনি কোন্ কোন্ পতঙ্গ শস্য নষ্ট করে সে সম্বন্ধে আলোচনা কর্ছেন। আমরা জানি শুধু পঙ্গপালই ফসল নষ্ট করে দেয়; কিন্তু আরও অনেক রকম পতঙ্গ আছে যারা ফসলের বড় কম ক্ষতি করে না। ইনি তাদেরই জীবনচরিত আলোচনা কর্ছেন আর কিসে তাদের নষ্ট করে শস্য বাঁচানো যায় তার উপায় আবিষ্কার কর্বার চেষ্টা করছেন। এই সকল ব্যাপারের আলোচনা ও অধ্যয়ন আমাদের ব্যবসা ও ধনাগম সম্বন্ধে অনেক সাহায্য করে। যাঁরা পতঙ্গবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন, তাঁরা কি করে তুঁতপোকাকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে বর্দ্ধিত কর্তে হয় তা জানেন। গুটিপোকার রোগ হলে তা থেকে ভাল রেশম হয় না। ফ্রান্সে “Disease of Silkworm” অর্থাৎ গুটিপোকার রোগ সম্বন্ধে পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। সেই বই পড়ে যাঁরা রেশমের চাষ করেন, তাঁরা গুটিপোকাকে বর্দ্ধিত কর্বার নানারকম উপায় জানতে পেরেছেন, আর সেই কারণে রেশমের চাষে খুব লাভবান হয়েছেন। আর আমাদের দেশে মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুরে—যেখানকার উৎকৃষ্ট রেশম এক সময়ে সব দেশে আদৃত হ’ত—সেখানে রেশমের চাষ দিন দিন উঠে যাচ্ছে; কারণ আমরা ঐ কাজ অজ্ঞ চাষাদের হাতে ফেলে রেখে দিয়েছি, যাদের গুটিপোকা সম্বন্ধে খুব বেশী কিছু জ্ঞান নেই।
এই-সমস্ত কারণেই বল্ছি যে শেখবার অনেক আছে, শুধু কেতাব পড়্লেই হয় না। আমি এলবার্ট স্কুলে পড়তাম। সেখানে প্রত্যেক শনিবার কেশবসেনের বক্তৃতা হত। তিনি এক সময়ে বলেছিলেন, “বাঙ্গালীর ছেলের লেখাপড়া শেখা যেন বালিসের খোলে তূলো পুরে দেওয়া; কেবল ঠাসো আর গাদো।” তার উপর অভিভাবক সর্ব্বনাশ কর্ছেন—স্কুলের ছুটি হলেই মাষ্টারবাবুকে ছেলের পিছনে লেলিয়ে দেবেন, ছেলে বিদ্যে শিখ্বে। এঁরা হচ্ছেন murderer of boys অর্থাৎ বালকহন্তা; কারণ স্কুলের ছুটির পর অন্ততঃ দুই বা আড়াই ঘণ্টা খেলা চাই। সে সময়টা খোলা মাঠে ছোটো, দৌড়াও, লাফাও, নদীতে নৌকা বাও। তবে ত স্বাস্থ্য থাকবে, মনে প্রফুল্লতা আসবে। তা নয়, বাড়ী এসেই কেতাব নিয়ে বসো। তার পর কোন্ ছেলে কোন্ বিষয়ে backward অর্থাৎ কাঁচা, অমনি প্রাইভেট টিউটর লাগাও,—ইংলিশে একটী, সংস্কৃতে একটি, সর্ববিষয়ে একটি একটি। টিউটরের ঠেলায় বেচারি ছাত্র একেবারে dull অর্থাৎ গাধা হয়ে ওঠে, নিজে ভাব্বার বা নিজের উপর নির্ভর কর্বার শক্তি তার একেবারে লোপ পায়। তাই বলি এ প্রথার অনেক দোষ! এমার্সন বলেন, “Guardians’ are benefactors but sometimes they act like the worst malefactors,”—অভিভাবকগণ ছেলের উপকার করেন বটে, কিন্তু সময়ে সময়ে ভয়ঙ্কর অপকার সাধন করে থাকেন। বেশী পড়্লেই বিদ্যে হয় না, আমি আজীবন ধরে সামান্য একটি বিদ্যা আয়ত্ত করবার চেষ্টা কর্ছি, কিন্তু পাঠ ঐ একঘণ্টা।
আমাদের বাঙ্গালীর ছেলের জীবন যেন একটা ভার বওয়া। বেদান্ত-মতে জীবন কিছুই নয়, দুহাজার বছর ধরে আমরা চিরকাল শুনে আস্ছি, জীবন মানে কিছুই নয়—নলিনীদলগতজলমিব—এর একটা প্রভাব জাতীয় চরিত্রে ত আছেই। আমরা সকলেই খানিকটা স্বীকার করে নিই যে জীবন একটা দুর্ব্বহ ভার। তার উপর আবার এই ভয়ঙ্কর জীবনসংগ্রাম। সকালে আটটার সময়, বাড়ী থেকে দৌড়োদৌড়ি করে ম্যালেরিয়া-জীর্ণ শরীরখানি নিয়ে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করা অর্থাৎ কলম-পিষে জীবিকা-অর্জনের জন্য সহরের দিকে ছুটোছুটি করা। দিন যে কোথা দিয়ে চলে যায়, দুর্ভাগ্য বাঙ্গালী তা জানতে পারে না— পৃথিবীর কোন আনন্দই সে উপভোগ করে না। আকাশের উন্মুক্ততা, আলোকের হাসি বা বাতাসের সুখময় স্পর্শ কিছুই তার প্রাণে সজীবতা ও নবীনতা আনয়ন করে না। লাবকের ‘জীবনের সুখ’ নামে একখানি পুস্তক আছে। ঐ পুস্তকে তিনি বলছেন—জীবন কি শুধু ঔষধ গেলা? জীবনে আনন্দ উপভোগই বিধাতার উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা কর্ম্মদোষে সেই উদ্দেশ্য বিফল করি। পাখী গায় কেন, প্রজাপতি মধু আহরণ করে কেন, যদি বিধাতার সৃষ্টিতে আনন্দ না থাকে।
লাবক একজন ধনী, মহাজন (broker) ছিলেন। অতুল তাঁহার ধন ঐশ্বর্য্য, কিন্তু তিনি লেখাপড়া যথেষ্ট জান্তেন। তিনি আজীবন ছাত্র (“student”)। অনেক ইউরোপীয় ধনী মৌমাছি পিঁপ্ড়া প্রভৃতি সম্বন্ধে অনেক নূতন কথা আবিষ্কার করেছেন। আমরা তা বই পড়ে জানি, কিন্তু তাঁরা নিজের চোখে দেখে ঐসব কথা লিখে গেছেন। আমরা চোখ থাক্তেও অন্ধ। শুধু চোখ থাক্লেই হয় না, সূক্ষ্ম দর্শন চাই। ইউরোপীয়ান লেখক লাবক মৌমাছিদের সাধারণতন্ত্র (Republic) সম্বন্ধে এক চমৎকার বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। মৌচাকে কেমন করে সকলে কাজ করে সে অদ্ভূত বিবরণ পড়্লে মাতোয়ারা হয়ে উঠ্তে হয়। লর্ড এভ্বেরী (Sir John Lubbock) যে শুধু ধনী ছিলেন তা নয়, কিন্তু তিনি একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ও চিন্তাশীল লেখক। আমাদের দেশের ধনী সাধারণতঃ জবড়্জং জানোয়ার হয়। তার নাকের ডগা থেকে ওলন- দড়ি ঝুলিয়ে দিলে ভুঁড়ির দরুণ Perpendicular অর্থাৎ লম্ব রেখার যে বিচ্যুতি হয় তাই তাঁর ধনশালিতার মাপ। ধনী জুড়ি চড়েন আর আয়েসে বিলাসে ডুবে থাকেন। কিন্তু ইউরোপে অনেক স্থলে এরূপ হয় না। বিলাতে মাটির তলায় রেল (under-ground railway) আছে। তাতে প্রথম দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণী নেই। লাখ্পতি ও সাধারণ লোক সব এক সঙ্গে এক জায়গায় বসে। এণ্ড্রুকার্ণেগী একজন ক্রোড়পতি; পৃথিবীতে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ লৌহের মালিক। আমেরিকার পিট্স্বর্গে তাঁর লোহার কারখানা ছিল। প্রথম বয়সে তিনি খবরের কাগজ রাস্তায় বেচ্তেন। তারপর অসাধারণ অধ্যবসায়ের বলে আমেরিকায় অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী হন। পরে টাকা রোজ্গার ত্যাগ করে অধ্যয়নে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করেন। তাঁর ব্যবসা এত বড় ছিল যে একজনে নয়—অনেকে প’ড়ে ৯০ কোটি টাকা দিয়ে সেই ব্যবসাটি কিনেছেন; তাঁর বাৎসরিক আয় হচ্চে সাড়ে চারকোটি টাকা। তিনি শ্রমজীবীদের জন্যে আমেরিকা ও স্কটল্যাণ্ডের অনেক সহরে বিনাব্যয়ে অধিগম্য পাঠাগার স্থাপন করেছেন। মজুরগণ সন্ধ্যার পর যখন অবসর পায় তখন ঐ সমস্ত লাইব্রেরীতে নানাপ্রকার উৎকৃষ্ট পুস্তক পাঠ ক’রে আত্মোন্নতি সাধন করে। কার্ণেগী এখনও (এই বছর দু তিন হয়) অনেক বই লিখ্ছেন। নাইণ্টিন্থ্ সেঞ্চুরী পত্রিকায় তিনি শ্রমজীবীদের উন্নতি সম্বন্ধে অনেক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। আগেই বলেছি তাঁর আয় ছিল সাড়ে চারকোটি টাকা। আমাদের এই বাঙ্গালা বেহার ও অন্য জায়গার সকল জমিদারের বাৎসরিক আয় জড়িয়ে সাড়ে চারকোটি নয়। এখানকার সকল জমিদারকে একদিকে আর কার্ণেগীকে একদিকে রেখে ওজন কর্লে টাকায় তিনিই ভারী হবেন। কিন্তু বিচিত্র কথা এই যে তিনি এখনও পড়েন। ছিলেন “স্ট্রীটবয়”, রাস্তায় কাগজ বেচতেন, কেবল স্বাবলম্বনের জোরে লক্ষ্মীসরস্বতীর বরপুত্র হয়েছেন।
তোমরা অনেকেই ইউনিভারসিটির ফার্স্ট সেকেণ্ড হও; সেটা ভাল; কিন্তু আমাদের দেশের অপযশ। কারণ পাশের পর তোমরা নষ্টস্বাস্থ্য, ম্যালেরিয়াজীর্ণ, রুগ্ন, ক্লিষ্ট, ক্ষীণদৃষ্টি। এ রকম ভাল-পাশকরা ছেলের যজ্জীবনম্ তন্মরণম্। ইংলণ্ডে কিন্তু তা নয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেরা খুব বেশী পড়ে না, অকালপক্ক হয় না, এঁচোড়ে পাকে না। ১৮৭৫ সালে ফার্স্ট ক্লাশ পাশ করে আমরা আজীবন তার দোহাই দিয়ে থাকি, যদিও এই পাশ করার পর লেখা-পড়ার সঙ্গে আর কোন সম্পর্কই আমাদের থাকে না। তারপর এই ফার্ষ্ট ক্লাশ পাশ করাটাই বা কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের যা Academic year তাতে ত দুবছরে দশমাস মাত্র পড়া হয়। এই দশমাস পড়ে সব বিদ্যা আয়ত্ত হয়ে যায় কি? আজীবন না পড়লে শেখা যায় না। প্রত্যেক দিন নূতন নূতন তত্ত্ব প্রকাশিত হচ্ছে, সে-সকলের খবর রাখ্তে হবে। ফার্ষ্ট হও আর না হও, আজীবন পড়বে, পাশ হবার পরেই কেতাবের সঙ্গে সেলাম আলেকম্ ক’রে তার নিকট চিরবিদায় গ্রহণ কি ভয়ঙ্কর! কি সর্ব্বনাশ! এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধিধারী দেখলে আতঙ্কে আমার প্রাণ শিউরে ওঠে। তারা ছদ্মবেশী মূর্খ।
এমার্সন বলেন “কোন ছেলে backward অর্থাৎ পড়াশুনায় কাঁচা হলে তিরস্কার কর্বে না। সাধারণতঃ ছেলেরা সব বিষয়ে ভাল বা চৌকস হয় না। যে সববিষয়ে ভাল, সে ত একটা miracle—একটা অদ্ভুত কিছু, যা ভূতলে অতুল।” এমার্সন আরও বলেন “কোন ছেলে যদি চুরি করে ক্লাসের বই ছাড়া অন্য বই পড়ে, মাষ্টার তাকে বেত মারেন; আমি হলে পুরস্কার দিই।” ছাত্র হয়ত নেপোলিয়নের জীবনী বা গোল্ডস্মিথের ইতিহাস বা যা তার স্কুলপাঠ্য নয় এমন কিছু পড়ছে, তাতে বাধা দেওয়া অন্যায়, উৎসাহ দেওয়া যুক্তিসঙ্গত, কারণ সে অনেক নূতন বিষয় শিখতে পার্বে। ছাত্রের প্রতি চাপ দেওয়া উচিত নয়, তার প্রতিভার যাতে বিকাশ হয় শিক্ষকদের তাই করা চাই। ইউনিভারসিটির বাঁধা বই পড়লে বা গোটাকতক পাশ কর্লে প্রতিভার বিকাশ হয় না। হালিসহরে রামপ্রসাদ জন্মেছিলেন, তাঁর কথা সবাই জান। তিনি হিসাব লেখার এক চাক্রি পেয়েছিলেন, কিন্তু খাতার পিঠে পিঠে কালী-সংকীর্ত্তন লিখতেন। এমন কি ভারতের যে দুজন জগতে অসাধারণ কীর্ত্তি অর্জ্জন করছেন, রবীন্দ্রনাথ ও রামানুজম্ (ইনি সম্প্রতি রয়েল সোসাইটির সভ্য হয়েছেন) তাঁদের কেহই ইউনিভার্সিটির এডুকেশনের ধার ধারেন না, তাঁরা পাশ-করা নন। কিন্তু এই পাশ না কর্তে পার্লেই আমাদের ছেলেদের মুখ আঁধার। মা বলেন— পোড়াকপাল আমার, ছেলে পাশ হলো না!) আবার সময় সময় ছেলে আত্মহত্যা ক’রে বসে। আমি বলি—তোমার যা ভাল লাগে তাই কর। উৎসাহের সহিত একটা নূতন কিছু আরম্ভ করে দাও। কারণ উকিল ডাক্তার ও কেরাণী এই নিয়ে জাতি টেঁকে না। আমাদের চরম দুর্গতি হয়েছে। এখন আমাদের নানা বিষয়ে, অর্থকর বিষয়ে, ব্যবসাবাণিজ্যে মন দিতে হবে। এ সম্বন্ধে আমি আমার লিখিত “বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার” নামক পুস্তিকায় কয়েকটা কথা লিখেছি, তোমরা সেটা পড়ে দেখো। আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয় বিধাতা যেন বলেন, “বাঙ্গালীর ছেলে, শরীর নষ্ট কর্বি আর কেরাণীগিরি কর্বি; তার বেশী কিছুই নয়।” এ অবস্থায় থাকলে চল্বে না, এ জীবনের পথ নয়, মৃত্যুর পথ; এ পথ থেকে ফির্তেই হবে।