আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী/৭
৭
জাতিগঠনে বাধা—
ভিতরের ও বাহিরের
আজ এ নব-জাগরণের দিনে বাঙালীর হৃদয়তন্ত্রী কি এক অপূর্ব্বসুরে বেজে উঠেছে! আশায়, আনন্দে, উৎসাহে বাঙালী এখন একটা জাতি ব’লে পরিগণিত হ’য়ে জগতের সমক্ষে দাড়াতে চায়। শুধু বঙ্গে নয়, একটা প্রাণ-মাতানো নতুন হাওয়া সারা ভারতবর্ষের উপর দিয়ে প্রবাহিত হ’য়ে যাচ্ছে। ভারত দিনে দিনে উদ্বুদ্ধ হ’য়ে উঠ্ছে। কিন্তু এই উদ্বোধনে কি কি উপকরণ চাই? জাতিগঠনের উপাদান কি? সমষ্টির দেহে কোন্ শক্তি সঞ্চারিত হ’লে জাতি সুপুষ্ট ও মেরুদণ্ডবিশিষ্ট হ’য়ে গর্ব্বোন্নত-শিরে আপন দেশে দাঁড়াতে পার্বে? আমাদের এখন চাই কি? অভাব কোথায়?
আপনারা মান্দ্রাজের স্যর টি মাধব রাওএর নাম শুনেছেন। তিনি ত্রিবাঙ্কুর, বরোদা প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যে প্রধান মন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই বিজ্ঞ দূরদর্শী পুরুষপ্রবর স্যর সালার জঙ্গের পর ভারতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ রাজনীতিক। ইনি উচ্চশ্রেণীর ব্রাহ্মণ ছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব্বে এঁর খেদোক্তি ভারতবাসীমাত্রেরই প্রণিধানযোগ্য। আমরা নিম্নে তার কিয়দংশ উদ্ধৃত কর্ছি;—
“The longer one lives, observes and thinks, the more does one feel that there is no community on the face of the earth that suffers less from political evils and more from self-inflicted or self-accepted or self created and therefore avoidable evils than the Hindu.”
‘যত মানুষ বেশী দিন বাঁচে, দেখে, ভাবে, ততই সে অনুভব করে যে ধরণীপৃষ্ঠে হিন্দুজাতি ছাড়া আর এমন কোনো জাতি নেই যারা পলিটিক্যাল বা রাষ্ট্রনীতিক দুঃখের চেয়ে আত্ম-অর্জ্জিত বা আত্ম-সৃষ্ট সুতরাং প্রতিকারসম্ভব দুঃখ বেশী ভোগ করে।’
ভারতবাসী “স্বখাদ সলিলে” ডুবে মরছে, আপনার পায়ে আপনি কুড়ুল মারছে। কোথায় তার অভাব, কোথায় আর দোষ, সমাজের নিষ্ঠুর মুষ্টি কোথায় তার গলা টিপে ধ’রে শ্বাসরোধ করে দিচ্ছে,—এসকল কথা বিচার ক’রে বুঝে আপনার উদ্ধারের পথ আপনিই নির্দ্ধারণ করতে হবে। অন্তরের দেবতা না জাগলে শুধু উত্তেজনার জ্বালায় এ দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে পারা যাবে কি? ছট্ফটানির একটা গতি আছে, কিন্তু তার দৌড় বেশীদূর নয়”।
মানুষের উন্নতির পথে যে বাধা-তা হয় ভিতরের, নয় বাহিরের। আমাদের জাতীয় প্রতিভা বিকাশের পক্ষে ভিতর ও বাহির দুই দিকের বাধাই প্রবল-শক্তিতে পথ আগ্লে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু অন্তর যার বাধানির্ম্মুক্ত তার কাছে বাহিরের বাধা কখনও সাংঘাতিক হয় না। বাহির যে অন্তরেরই প্রতিচ্ছবি। অন্তরে সত্যের আলোকে যা গ’ড়ে ওঠে, বাহিরে তার প্রতিষ্ঠা হবেই,— সে কোন বাধা মান্বে না। তাই আজ কঠোর আত্ম-পরীক্ষার প্রয়োজন হয়েছে। অন্তরে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হ’লে বাহিরের অধীনতা ঘুচ্বেই।
ভারত আজ দুঃখের অতুলস্পর্শ সাগরে ডুবে আছে, উঠতে পারছে না। আমি রাজনৈতিক আন্দোলনের সপক্ষে বা বিপক্ষে কোন কথা বল্বার উদ্যোগ কর্ছি না; নরম বা গরম কোন দলেরই আমি নই; আবার নরমই হোক্ আর গরমই হোক্ যা-কিছু আমার দেশকে যথার্থ উন্নতির পথে অগ্রসর ক’রে দেয় তাই আমি পরম পবিত্র বস্তু ব’লে জ্ঞান করি।
১৯০৬ সালের স্বদেশী আন্দোলনের প্রবল বন্যায় যাঁরা ভেসেছিলেন, তাঁদের অনেকেই আবার ভাঁটার মুখে উণ্টাপথে ভেসে যাচ্ছেন। যাঁরা স্রোতের মুখে তৃণের মত, নূতনের প্রতিষ্ঠা কর্বার জন্য যাঁদের উৎকট পুরুষকার নেই, তাঁদের উদ্দীপনার অগ্নিশিখা শেষে গোলদীঘির ধারে বক্তৃতা ও হাঁকডাকের ধূমরাজিতে পরিণত হ’ল। ব্যবসানীতি ও অর্থশাস্ত্রের ক-খ-জ্ঞান নেই, তাই শুধু বক্তৃতার দ্বারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও অর্থসংস্থানের ব্যর্থ চেষ্টা আমাদের ভিতরে বাহিরে খুব একটা প্রবল ধাক্কা দিয়ে গেল। স্বদেশী আন্দোলনে বাঙলার শিল্প জাগ্ল না—কিন্তু জাগ্ল—বোম্বাই শিল্প। বোম্বাই প্রদেশে কাপড়ের কলকার্খানা স্বদেশীর হাওয়ায় বেশ শ্রীসম্পন্ন হ’য়ে উঠ্ল।
বাঙলায় স্বদেশীশিল্পের যে পুনরুখান হয় না তার প্রধান কারণ বাঙালী উদ্যমহীন, অলস ও আরামপ্রিয়। আবেগপূর্ণ ভাবপ্রবণতা দ্বারা আমরা হনুমানের মত এক লাফে সাগর পার হতে চাই। কিন্তু ভাবোচ্ছ্বাসের পশ্চাতে বিপুল কর্ম্মচেষ্টা না থাকায় আমাদের কেবল ভরাডুবি হতে হয়। আবার ভিতরের এই সাংঘাতিক বাধা-সকলকে আমরা কথার চটকে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করি। নীরব সাধনা ভিন্ন যে কোন কাজ সম্পন্ন হওয়া একেবারে অসম্ভব—এই খাঁটি কথাটি সত্যভারে স্বীকার কর্তে আমরা কুষ্ঠিত হই। কিন্তু অকুষ্ঠিত চিত্তে কেবল গলাবাজীর দাপটে আমরা দু’বেলা দেশোদ্ধার ক’রে থাকি।
বোম্বাই ও কল্কাতার মধ্যে তফাৎ অনেক। বোম্বাই সহরে মালাবার পাহাড়ের রমণীয় সৌন্দর্ঘ্যের মধ্যে এবং সমুদ্রসৈকতে যে সকল সুসজ্জিত প্রাসাদ, তার প্রায় সকলগুলি আমাদের দেশবাসীর। কিন্তু কল্কাতার চৌরঙ্গীতে কালা আদ্মীর স্থান নেই—তারা থাকে সেই “নেটিভ” কোয়ার্টারে যেখানে আলো ও বাতাস অন্ধকারের মলিনতায় প্রায় ডুবে যায়। বোম্বাই সহরে স্যর দোরাব তাতা, স্যর বিঠলদাস ঠাকারস্যে, স্যর ফজল্ভাই করিমভাই প্রভৃতি—এরাই হচ্ছেন ঐ সকল প্রাসাদের মালিক। এরা মহাধনী, শিক্ষিত, কৃতবিদ্য। স্যর বিঠলদাস স্ত্রীশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে একদিনে ১৫ লক্ষ টাকা দান করেছেন। বাঙলায় এমন মহাপ্রাণ বণিকরাজ আছে কি? স্যর ফজলভাই কয়েকটা কলের স্বত্ত্বাধিকারী। কোন কোন কলে ১০০ টাকায় ১০০০ টাকা পর্য্যন্ত মুনাফা দিয়েছে। আর আমরা ১৮ লক্ষ টাকা মূলধনের ভাঙা “বঙ্গলক্ষ্মী” নিয়ে, ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ পর্যন্ত হাবুডুবু খাচ্ছি। আমাদের অনুসন্ধিৎসা ও কর্ম্মকুশলতা এতই অল্প যে বাঙলায় ২/১টি ছোটখাট কল চালাবার জন্যে হয় ইংরেজ, নয় বোম্বাইবাসীকে ম্যানেজার নিয়ে আসতে হচ্ছে। এই ১৪ বছর কেবল চীৎকারে কাটালাম।
যুদ্ধের পূর্ব্বে ম্যাঞ্চেষ্টার হ’তে প্রতি বৎসর ৩০০ কোটি টাকার নানাপ্রকার কাপড় বিদেশে রপ্তানি হ’ত। তার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাপড় ভারতের বাজারে আস্ত। এই ১০০ কোটি টাকার কাপড় যাদের দরকার তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জন দরিদ্র কৃষক। কোন রকমে লজ্জা নিবারণে জন্যে আমাদের দেশে এই ১০০ কোটি টাকার কাপড়ের প্রয়োজন। তার মধ্যে কল্কাতা হ’তে ৪০/৫০ কোটি টাকার বিলাতী কাপড় বাঙলার বিভিন্ন জেলায়, বিহার ও আসামে চালান হয়। এই কোটি কোটি টাকার কাপড় একদিনে গোলদীঘির আন্দোলনে উৎপন্ন হবে কি? পাঁচ-ছয়টা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কলকারখানার সঙ্গে আমি বিশেষ ভাবে সংশ্লিষ্ট।[১]নানা-প্রকারের ব্যবহার্য্য জিনিষ যাতে দেশেই উৎপন্ন হয়, তার জন্য চেষ্টা করাই আমি জীবনের ব্রত করেছি। আমি নিজকে “স্বদেশী” ব’লে পরিচয় দিলে বোধ হয় কেউ ক্ষুণ্ণ হবেন না। অভিজ্ঞতার ফলে এই সহজ সত্যটি আমি উপলব্ধি কর্তে পেরেছি যে, ধর্ম্ম বা বিজ্ঞান বা ব্যবসা-বাণিজ্য যে কোন ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে কঠোর তপস্যা চাই। নীরব সাধনা ভিন্ন এক দিনে এক লাফে কোন কাজই হবে না।
কিন্তু আমরা লাফ দিয়েই কেল্লা মেরে ফতে কর্তে চাই। আমার কাছে অনেক ছাত্র-কি কর্বো?—এই প্রশ্ন নিয়ে এসে দাঁড়ালেন। কিন্তু তাঁদের চাল-চলন ও কথার ভাবে বেশ বুঝ্তে পারা যায় যে তাঁরা একটা কিছু ব্যবসা ফেঁদে একেবারে রাতারাতি বড়লোক হতে চান। স্কুল-কলেজের যুবকগণ যা গলাধঃকরণ করেন, পরীক্ষা-মন্দিরে তা উদিগরণ ক’রে ডিগ্রি লাভ হলেই ব্যস মা-সরস্বতীর সঙ্গে একবারে সেলাম-আলেকম্। তারপর উদ্যম-অধ্যবসায়ের ত কোন ধারই ধারি না—শুধু ব্যবসা-মন্ত্রটা মুখে উচ্চারণ করেই একেবারে লাট হবার স্বপ্ন দেখা। ব্যাপার মন্দ নয়।
সম্প্রতি দেখে এলাম বিলাতে প্রায় ২৫০০ ভারতীয় ছাত্র নানাপ্রকার বিদ্যা অর্জন কর্ছেন। তাদের অধিকাংশই তাড়াতাড়ি একটা বিলাতি ডিগ্রী নিয়ে দেশী ডিগ্রীর উপর টেক্কা দিয়ে মোটা মাহিনার চাক্রী জুটিয়ে নিতে চান। বাণিজ্য-ব্যবসার কেন্দ্রস্থানে শিক্ষালাভ কর্তে গিয়েও তাদের আড়ষ্ট বুদ্ধি সাড়া দেয় না; ঐ ডিগ্রী, আর চাকরী। বুদ্ধি খাটিয়ে আপন হাতের জোরে কিছু সৃজন ক’রে তোল্বার কল্পনা তাঁদের মনে কখনও জাগে না। এবার বিলাত থেকে প্রত্যাগমনের পথে জাহাজে দু’জন দেশীয় বণিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মধ্যে একজন কল্কাতার এক ধনী সওদাগরের পুত্র। লণ্ডন, নিউইয়র্ক প্রভৃতি স্থানে তাঁদের ব্যবসার কেন্দ্র আছে। আর-একজন গুজরাটী বেণিয়া—১৪ মাস বিলাতে ছিলেন-পশমী জিনিষের ব্যবসা করেন। এই দুটি যুবক শিক্ষিত, কিন্তু তাদের ডিগ্রী নেই, তাঁরা ছাপহীন। জাহাজে একজন ম্যাট্সিনির জীবনচরিত পাঠ কর্ছিলেন, আর একজন প্রথমে ওমর খৈয়াম্ এবং পরে Light of Asia পাঠ কর্ছিলেন। তাই বলি ব্যবসা ও শিক্ষায় বিরোধ নেই—একেবারেই নেই। কার্ণেগী ও রক্ফেলারের নাম কে না শুনেছেন? এদের শিক্ষা যেরূপ গভীর, ব্যবসার বিস্তার সেইরূপ অদ্ভুত। জনসাধারণের হিতার্থে কার্ণেগী ১০০ কোটি টাকা ও রক্ফেলার বিদ্যাশিক্ষার ও নরহিতের জন্য ১৫০ কোটি টাকা দান করেছেন। এদের জীবন যেন উদ্যম, অধ্যবসায়, শিক্ষা, দীক্ষা, ব্যবসা, বাণিজ্য এবং করুণা ও মহাপ্রাণতার অপূর্ব্ব সঙ্গম। আর আমাদের এমনি দুর্ভাগ্য যে অন্য দেশে বহু চেষ্টায় যা সম্ভব হয়েছে আমরা একপ্রকার বিনা চেষ্টায় শুধু গলাবাজীর দ্বারা তা সার্তে চাই। কিন্তু গলাবাজীর কস্রতে গলাই ভেঙ্গে যায়, আসল কাজ এতটুকুও হয় না। তবু আমরা নিজের আলস্য ও উদ্যমহীনতার দোষ দিই না-দোষ দিই পারিপার্থিক অবস্থার। কেউ বলেন—আঃ বড় গরম, কাজ কর্তে পারি না; আবার কেউ বা বলেন— উঃ কি শীত, কাজে হাত পা ওঠে না।
তারপর সুপ্রচলিত ‘নেশন’ শব্দটির (আমাদের দেশের অবস্থা বিবেচনা ক’রে) বিচার করা যাক্। বাঙ্লা হিন্দু-মুসলমানের দেশ— উভয়ের মাতৃভাষা এক—বাঙ্লার হাওয়ায়, সুজন্মা-অজন্মায়, সুখে দুঃখে, আমরা অনেকটা এক বটে। কিন্তু ধর্ম্মে আমরা পরস্পর থেকে পৃথক। হিন্দুর মধ্যে আবার নানা-প্রকার উপজাতি সব আছেন। এখন একটা ক্ষণিক আবেগের বশে আমরা হিন্দুমুসলমান এক হয়েছি বটে, কিন্তু এই একত্ব কি দৃঢ়ভিত্তির উপর স্থাপিত হয়েছে? একদিনেই বনিয়াদ পাকা হ’য়ে যাবে এমন আশা অবশ্য আমি করি না। তবু আপনাদের এই মিলনকে সত্যবস্তু ক’রে তোল্বার জন্যে আমরা বাস্তবিক কি কোন সত্য চেষ্টা কর্ছি? দিল্লীর জুম্মা মস্জিদে হিন্দু সন্ন্যাসী আপন মর্ম্মকথা ব্যক্ত করেছেন। হিন্দু মুসলমান তা শুনেছে—মহামতি তিলকের শবদেহ হিন্দু মুসলমান মিলে বহন করেছে। সকলে সে অপূর্ব্ব দৃশ্য দেখেছে। এ-সকলই আশার কথা। কিন্তু এ সম্মিলন স্থায়ী হবে কি? এখনই ভেদনীতির কার্য্য আরম্ভ হয়েছে। আলিগড়ে মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয়, বারাণসীতে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, আবার লক্ষ্নৌ সহরে শিয়া মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। কেন এই স্বাতন্ত্র্য? সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি মানুষের অবশ্যশিক্ষণীয় বিষয়ে এমন কি বস্তু আছে যা হিন্দু মুসলমান আপন আপন ভাইএর মত পাশাপাশি ব’সে শিখতে পারে না?, হিন্দু মন্দিরে পূজা করেন, মুসলমান মস্জিদে উপাসনা করেন। কিন্তু শিক্ষামন্দিরে যদি আমরা হিন্দুমুসলমান এক আসনে বস্তে না পারি, তবে কি ক’রে বলি যে আমরা ভাই ভাই হয়ে মিল্তে চেষ্টা কর্ছি। আমরা যে ইচ্ছা ক’রে বুদ্ধির দোষে পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি। কোথায় সার্ব্বভৌমিকতা ও উদারতার প্রতিষ্ঠা কর্ব—তা না ক’রে সঙ্কীর্ণতার গণ্ডিতে আমরা নিজেকে আবদ্ধ কর্বার চেষ্টা করছি। এই কি হিন্দুমুসলমান-সম্প্রীতির লক্ষণ? এই কি জাতি গঠনের সূচনা?
আমরা এখন “জাতীয়” শিক্ষা চাই। কিন্তু জাতীয় শিক্ষা কি? জাতীয় শিক্ষা অর্থে কি বটতলার বই পড়া? আর্য্যসমাজের লোকে জাতীয় শিক্ষার অর্থ কর্চেন বেদপাঠ করা; কেননা তাঁদের মতে বেদ অভ্রান্ত। বিবেকানন্দের ভক্ত বল্বেন—বেদান্ত পাঠ কর— দ্বৈত, অদ্বৈত ও বিশিষ্ট-দ্বৈত-বাদ বিচার কর। আবার কেহ বা বল্বেন—রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ পাঠ কর। কিন্তু হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি নানাধর্ম্মাবলম্বী ভারতবাসীগণ সকলে এই ব্যবস্থায় সম্মত হবেন কি? মুসলমান জাতীয় শিক্ষা অর্থে বল্বেন—কোরান পড়। খৃষ্টান বল্বেন—বাইবেল পড়। এত মতের অনৈক্য হ’লে আসল কাজে যে বাধা পড়বেই। পরমধার্ম্মিক হিন্দু রাজার রাজত্ব কালে শূদ্র তপস্যা করেছে ব’লে তার শিরশ্ছেদনের ব্যবস্থা হল; মনুমহাশয় ব্যবস্থা করেন যে শূত্রের কর্ণে বেদোচ্চারণ-শব্দ প্রবেশ কর্লে উত্তপ্ত তরল সীসক সেই কর্ণে ঢেলে দিতে হয়। এই মনুস্মৃতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষার ব্যবস্থা হয় কি? বেদ, বেদান্ত পাঠ্য হ’লে বাঙলার শতকরা ৫২ জন মুসলমান কি কর্বে? দয়ানন্দ বা বিবেকানন্দ—কোন্ পন্থী হলে মুসলমান ভ্রাতাদের টেনে নেওয়া যেতে পারে? আমরা হিন্দু মুসলমান এক ব’লে আহ্লাদে নৃত্য কর্ছি, কিন্তু মুসলমান আমাদের জল ছুঁলেই সর্ব্বনাশ। জল খেতে হ’লে পানিপাঁড়ে, আর চা খেতে হ’লে কেল্নার। কি চমৎকার! বক্তৃতার স্রোতে গা ঢেলে দিয়ে অনেক যুবক দেশোদ্ধার-ব্রতে জীবন উৎসর্গ কর্বেন প্রতিজ্ঞা কর্লেন। কিন্তু আবেগ ও উত্তেজনা কতদিন স্থায়ী হয়? বি-এ বা এম্-এ পাশ করে যে-সব শিক্ষিত যুবক দেশের কাজ কর্তে অগ্রসর হচ্ছেন, তাঁরা কতদূর ত্যাগস্বীকার কর্তে প্রস্তুত আছেন জান্তে চাই। কল্কাতার অনেক ছাত্রাবাসে বামুন, কায়েত, নবশাখের আলাদা আলাদা ঘর; এদিকে বাবুর্চ্চির হাতের অমৃত আস্বাদনে কারও বাধে না। সমাজে বামুনের কাছে সব জাতিই অপাংক্তেয়। শিক্ষিত যুবক! নমঃশূদ্রকে দেশবাসী ভাই ব’লে তার সঙ্গে একসাথে খেতে দাঁড়াতে পার? বিবাহের সময় বরপণ গ্রহণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পার? তোমাদের বিবাহের বিজ্ঞাপন দেখে হতভম্ব লেগে যায়; এত বিচিত্র কুলশীলের তালিকাও তোমাদের আছে! তোমার বিয়ের যৌতুকের চাপে কত স্নেহলতা আত্মহত্যা কর্ছে তার সংবাদ রাখ? না ঠিক ঐ সময়ে তোমার পিতৃভক্তির উৎস উথ্লে ওঠে—“কি কর্ব, আমার ত পণগ্রহণে অনিচ্ছা, কিন্তু বাবা বল্ছেন! ও বাবা! তিনি যে বুকে ধরে মানুষ করেছেন, সেই বুকে কি ক’রে শেলবিদ্ধ কর্বো?” হায়রে “বাবার” দোহাই! হে উপাধিধারী যুবক, তুমি ঘোড়া, গরু ও ছাগলের মত নিজকে সর্ব্বোচ্চ দরে বিক্রীত হতে দেও— ধিক্ তোমার শিক্ষা, ধিক্ তোমার দীক্ষা। তুমি আবার স্বদেশ উদ্ধারের জন্য আগুয়ান! তুমি মানসিক-দাসত্বের নিগড় আপন চরণে এমন ক’রে পরিয়েছ, যে, এক পাও অগ্রসর হতে পার না। তুমি দেশাচার-জুজুর ভয়ে এত ব্যতিব্যস্ত যে কোনও প্রকার সমাজ সংস্কারে হাত দিতেও ভীত হও। তুমি বারেন্দ্র হয়ে ‘কাপের’, বঙ্গজ হয়ে দক্ষিণরাঢী র কন্যার পাণিগ্রহণ কর্তে বললে, ভয়ে আড়ষ্ট হও।[২]
আর জাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে আর-একটি প্রয়োজনীয় কথা আছে। On national lines এর মানে কি? ইংরেজী ভাষা একেবারে বাদ দেওয়া চলতে পারে কি? শিবনাথ শাস্ত্রী প্রণীত “রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ” নামক পুস্তকে যাঁরা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত পাঠ করেছেন তাঁরা জানেন কারও স্বার্থ-সিদ্ধির জন্যে ইংরেজী শিক্ষার প্রচলন এদেশে হয়নি। বরং আমাদেরই একটা গর্ব্বের বিষয় এই ষে রামযোহন রায়, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি তৎকালীন হিন্দু সমাজের নেতৃবৃন্দ ঐ কলেজ স্থাপিত করেছিলেন। ইংরেজী শিক্ষা প্রচলনের যৌক্তিকতা প্রদর্শন ক’রে রামমোহন রায় লর্ড আম্হার্ষ্ট যে পত্র লিখেছিলেন তা শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রেরই পাঠ ক’রে দেখা উচিত। তিনিই প্রথম প্রণিধান করেছিলেন যে পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র প্রভৃতি, স্বাধীনচিন্তা-প্রসূত জ্ঞানরাশি এবং পাশ্চাত্য সাহিত্য দর্শন আয়ত্ত না করলে, দেশের চিন্তাস্রোতে জোয়ার আসবে না; শুধু সংস্কৃত ও পারসী ভাষা অধ্যয়ন করলে দেশকে মধ্যযুগের অন্ধকারেই প’ড়ে থাক্তে হবে। তাই তিনি ইংরেজী শিক্ষা প্রচলনের প্রধান উৎসাহী ও উদ্যোগী ছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতার ফল আজ ফলেছে। বঙ্কিমচন্দ্র কোন স্থানে যথার্থই বলেছেন যে কিছুকাল আগে জন্মগ্রহণ কর্লে কলম ধ’রে “বঙ্গ দেশের কৃষক” বা অন্য উৎকৃষ্ট সন্দর্ভ বা উপন্যাস না লিখে, তিনি পাঁজী হাতে করে নবমীতে লাউ খেতে আছে কি না তার বিচার কর্তেন। ইংরেজী ভাষার সাহায্যে আমাদের শিক্ষা কর্বার অনেক জিনিষ এখনও আছে। নূতন কোন বিষয় শিখ্তে হলে পাঠাগার থেকে আপনারা ইংরেজী বা বাঙলা কোন্ পুস্তক নিয়ে আসেন সে কথা ভেবে দেখলে আমার উক্তির যাথার্থ্যই উপলব্ধি করিতে পারিবেন। আমি মাতৃভাষার নিন্দা করছি না। কিন্তু গায়ের জোরে ভাষার দৈন্য চাপা দিতে আমি একেবারেই প্রস্তুত নই। বরং পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান সঞ্চয় করে সর্ব্ববিষয়ে মাতৃভাষাকে সৌষ্ঠব ও সমৃদ্ধিশালিনী করবার জন্যে আমাদের ও মধুসূদনের মত বলতে হবে।—
“রচিব এ মধুচক্র, গৌড়জন যাহে
আনন্দে করিবে পান সুধা নিরবধি।”
মিল্টন, দাঁতে, হোমার, ভার্জ্জিল প্রভৃতি নানা দেশের মধুচক্র হতে মধুসূদন মধুসংগ্রহ করেছিলেন। একি কোন লজ্জার কথা? ইংরেজী সাহিত্যের প্রভাব কি রবীন্দ্রনাথের কাব্যে দেখা যায় না? On national lines মানে কি নবদ্বীপের টোল বা মুসলমানদের মোক্তার? কোন্ সাহিত্যচর্চ্চার ফলে দেশে রাজনীতিচর্চ্চা আরম্ভ হয়েছে? No taxation without representation কোন্ সাহিত্যের কথা? মনুর মতে রাজা দেবতা; তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের স্থান নেই—যা বল্বেন তাই মান্তে হবে। কিন্তু আজ যে আমরা মামুষের জন্মগত অধিকার ও স্বত্ব বুঝে নেবার জন্যে আন্দোলন আরম্ভ করেছি, তার প্রেরণা কোন্ শিক্ষা হ’তে? হাম্ডেন, পিম্ প্রভৃতি স্বাধীনতার আন্দোলনের পুরোহিত জননায়ককে ভুল্তে গেলে যে বিষম ভুল হবে।
বর্ত্তমান সময়ে জাতিগঠনের আন্দোলনে লোকশিক্ষা ও স্ত্রীশিক্ষার স্থান আমরা কোথায় দিয়েছি? বাঙলার নব জাগরণের দিনে যখন জাতীয় শিক্ষা-পরিষৎ প্রতিষ্ঠিত হ’ল তখন ব্রজেন্দ্রকিশোর পাঁচ লক্ষ টাকা দিলেন, সুবোধচন্দ্র এক লক্ষ টাকা দিলেন, সূর্য্যকান্ত আড়াই লক্ষ দিলেন। আরও অনেকে মাসিক সাহায্য দিলেন। কিন্তু সে সময়ে পৃথিবীতে স্ত্রীজাতি ব’লে যে কেউ আছেন একথা তারা একেবারেই ভুলে গেলেন। মা, ভগ্নী, সহধর্ম্মিণীকে মূর্খ ক’রে রাখলে কি লাঞ্ছনা হয় তা ত আমরা প্রতিপদে বুঝতে পারছি। তবু ত আমাদের চেতনা হয় না! ইয়ুরোপীয় যুদ্ধে স্ত্রীলোক কত কাজ ক’রে দিয়েছেন তা আজ সকলেই জানেন। আমাদের ঐ সময়ে স্ত্রীলোকের কাছ থেকে সাহায্য পাবার আশা কতটুকু? তাঁদের গণ্ডমূর্খ ও অকেজো পুতুল ক’রে রেখে আমরা সমাজের আধখানা অঙ্গকে পক্ষাঘাতে পঙ্গু ক’রে রেখেছি। স্ত্রীশিক্ষার স্থান ত কোথাও দেখছি না। আর পুরুষের যা শিক্ষা সে ত ডিগ্রী ও চাকরীর লোভে।
আবার লোকশিক্ষার কথা যদি ধরা যায় তাহলে ত বুক শুকিয়ে ওঠে। দেশের শতকরা ৯৫ জন নিরক্ষর। আপনাদের শিক্ষার জন্য আমরা স্কুল কলেজ স্থাপন কর্ছি; কিন্তু কোটি কোটি লোক যে অজ্ঞতার স্তূপের নীচে চাপা প’ড়ে মারা যাচ্ছে। তাদের বাঁচাবার জন্যে আমাদের ক’জনের প্রাণ কেঁদেছে? লোক-শিক্ষার জন্যে সুদীর্ঘ বক্তৃতা হ’তে শুনেছি, কিন্তু খুব অল্প কর্ম্মেরও প্রতিষ্ঠা হ’তে ত দেখিনি। কিন্তু এই বিপুল জনসঙ্ঘ যদি চিরকালই শিক্ষার আলোক থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকে, তবে কি আমরা আকাশ থেকে জাতিগঠনের উপকরণ সংগ্রহ করবো? জনসাধারণকে নিয়ে জাতি। জনসাধারণকে বাদ দিয়ে যা থাকে তা অন্য কিছু হ’তে পারে, কিন্তু জাতি কোন কালেই নয়। জাগরণের ঢেউ জনসঙ্ঘের কাছে পৌঁছান চাই। যদি জিজ্ঞাসা করি—কলিকাতার দোকান-পাট বন্ধ হয়েছিল কেন? উত্তর হবে—মহাত্মার হুকুম। “কেন?” “ত জানি না।”[৩] কিন্তু জাপানে ও ইংলণ্ডে এরকম অজ্ঞতা দেখা যায় না। শতকরা ৯৫ জন পক্ষাঘাতগ্রস্থ হ’লে জাতির দেহে বলসঞ্চারের সম্ভাবনা কোথায়? প্রজাশক্তি যদি জাগিয়ে তুল্তে হয় তবে এখন শিক্ষার দীপ গ্রামে গ্রামে জ্বেলে দিতে হবে। তবেই ত রাজনৈতিক আন্দোলন জনসাধারণের ইচ্ছা, শক্তি, ও সহানুভূতির উপর দাঁড়াতে পারবে। এই সত্যটুকু উপলব্ধি করেই পুণ্যশ্লোক গোখ্লে জীবনের শেষভাগে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের জন্যে কি পরিশ্রমই না করেছিলেন!
জনসাধারণের শক্তির উপর ভিত্তি নেই ব’লে ভারতবর্ষে অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হ’য়ে গেছে। ইতিহাসে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ পাওয়া যায়। রণজিৎ সিংহ বা হায়দার আলির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সৈন্যদল বিধ্বস্ত হ’য়ে গেল। দেখা গিয়েছে সেনাপতি যেমনই হত হলেন, অমনি সৈন্যদল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খরগোশের মত পালিয়ে গেল। তাই বলি কোন আন্দোলনই শুধু মুষ্টিমেয় শিক্ষিতদের নিয়ে সফল হয় না। জনসাধারণের উপর ভিত্তি না থাকলে সব ইমারত তাসের ঘরের মত ভূমিসাৎ হ’য়ে যায়। আমি কোন ধর্ম্মসম্প্রদায় বা রাজনীতিক দলের উপর কটাক্ষ কর্ছি না। আমি দূর থেকে ঘটনাবলি পর্য্যবেক্ষণ ক’রে অভিজ্ঞতার দ্বারা যেটুকু বুঝেছি তাই দেশবাসীকে জানাচ্ছি। আমাদের অনেক গলদ আছে। দেহের মধ্যে যদি দূষিত ক্ষত থাকে তবে অস্ত্রচিকিৎসা চাইই চাই। পুঁজ রক্ত বাহির করে দিতেই হবে, চাপা দিলে শুধু মৃত্যুকে ডেকে আনা হবে।
আজ দেশই আমাদের একমাত্র আরাধ্য দেবতা। তাঁর পূজার নৈবেদ্য সকলকেই সাজিয়ে আন্তে হবে। কারও মুখ চেয়ে নিশ্চেষ্ট হ’য়ে থাক্লে রাজার পুকুরে দুধ ঢাল্বার মত দুধ আর এসে পৌঁছবে না,—আস্বে শুধু জল। তাই আজ মনের ভক্তি ও দেহের শক্তি দিয়ে মায়ের সিংহাসন সাজিয়ে দিতে হবে। এ পূজায় সবারই সমান অধিকার। সকলকেই এ পূজার উপকরণ জোগাড় ক’রে আন্তে হবে। হিন্দু মুসলমান হৃদয়ে হৃদয় মিলিয়ে সত্যধর্ম্মকে প্রতিষ্ঠা করবে।[৪]
- ↑ ১। Bengal Chemical and Pharmaceutical Works. ২। Calcutta Pottery Works. ৩। Calcutta Soap Works, ৪। Bengal Canning and Condiments Works. ৫। Béngal Miscellany. আরও ২/১ টি আছে।
- ↑ Wanted Rarhi Savab Brahmin bride for (1) Bharadwaj M, A., (2) Sandilya M. A., Bhanga brides for (1) Sandilya Dy. Magte, Ca), house; (2) Sandilya B, Sc., B. E., (3) Kashyap M. A., B. L., Cal, house, (4) Bharadwaj M. A, Cal. house. Bangaj Kayastha Brides for (I) Basu M. A., (?) Ghose M.A., (3) Roy, pay Rs. 750. Bangaj Baidya bride for (I) Dhanantari Dy. Magte, (2) Saktri M. Sc.[ Bengalee হইতে গৃহীত ]
- ↑ হরতাল কেন?—একথার উত্তর অনেক বেহারা ও “সাধারণ” শ্রেণীর লোক প্রকৃতই দিতে পারেনি। কেবল উত্তর পেলাম—“গান্ধী মহারাজের হুকুম।”
- ↑ বালিনিবাসী শ্রীমান রতনমণি চট্টোপাধ্যায় আমার বক্তৃতার সারাংশ বিবৃত করিয়া বক্তাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করিয়াছেন।