আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/মিংগালাদনে সেনা সমাবেশ ও বৃটিশের বোমাবর্ষণ
২০শে অক্টোবর ১৯৪৪: তাদাগালে:
আজ রেঙ্গুন হইতে মিংগালাদন্ যাইতে হইবে। দুই ঘণ্টার ছুটি লইলাম। রেঙ্গুন হইতে মিংগালাদন্ মাত্র ১২ মাইল। পথে পড়ে তাদাগালে। একবার তাদাগালে যাইব; অং ফয়ার খবর অনেক দিন পাই নাই। আজ তাহার কথা অনবরত মনে পড়িতেছে।
তাদাগালে পৌছিয়া ফয়ার দিদিমার কুটীরের দিকে চলিলাম। ফয়া আমাকে দেখিয়া বিস্মিত হইবে; তাহার নিশ্চয়ই অভিমান হইবে এতদিন কোন খবর না লওয়ার জন্য। মনে মনে ঠিক করিয়া লইলাম, কি উত্তর দিব।
কুটীরের সম্মুখে আসিয়া পড়িয়াছি। কুটীরের দেওয়াল ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে—উপরে চাল নাই। চারিধার নির্জ্জন—জন মানবের চিহ্ন নাই। পাশাপাশি সব বাড়ীগুলিরই অবস্থা এইরূপ। ইহাদের কি হইল—কোথায় গেল—কোন খবর পাইলাম না।
বিষণ্ণ মনে তাদাগালে ত্যাগ করিয়া মিংগালাদনের দিকে চলিলাম।
২১শে অক্টোবর ১৯৪৪: মিং গালাদন্:
অজাদ হিন্দ্ ফৌজের এক বিরাট সমাবেশ হইয়াছে। সারি সারি তাঁবু পড়িয়াছে। নেতাজী আসিয়াছেন।
প্রথম পদাতিক বাহিনীর প্যারেড্ হইল। নেতাজী স্যালিউট্ গ্রহণ করিলেন। এমন সময় সাইরেন্ বাজিয়া উঠিল! শত্রুবিমান আসিয়া পড়িয়াছে।
আকাশে বিমানগুলি দেখা গেল অনেক উপরে। বিমান হইতে আমাদের তাঁবুর উপর মেসিন্ গানের গুলি বর্ষণ আরম্ভ হইল। সৌভাগ্যক্রমে তাঁবুগুলিতে কেহ ছিল না।
জাপানী জঙ্গী বিমানগুলি সঙ্গে সঙ্গেই আকাশে উঠিয়াছে। ইহারা শত্রু বিমানকে আক্রমণ করিল। আত্মরক্ষারত শত্রু বিমান হইতে গুলিবর্ষণ বন্ধ হইয়া গেল।
আযাদের সৈন্যেরা নীরবে ট্রেঞ্চে গিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিল।
সাইরেন বাজিতেই সেনানায়ক নেতাজীকে ট্রেঞ্চে আশ্রয় গ্রহণের জন্য অনুরোধ করিলেন।
তিনি বলিলেন—‘সমস্ত সৈনিক যতক্ষণ না ট্রেঞ্চে আশ্রয় গ্রহণ করে, আমি এইস্থান হইতে নড়িব না।’
শেষ সৈনিকটি ট্রেঞ্চে নামিবার পর নেতাজী নিজেও তাহাদের সহিত একই ট্রেঞ্চের মধ্যে গিয়া বসিলেন।
আকাশে শত্রু ও জাপানী এরোপ্লেনে যুদ্ধ চলিতেছিল। কয়েক মিনিটের মধেই আক্রমণকারী এরোপ্লেনগুলি পলাইয়া গেল। জাপানীদের দুইখানি এরোপ্লেন নষ্ট হইল।
আমাদের কেহই হতাহত হয় নাই। কেবল দুটি তাঁবু নষ্ট হইয়াছে।