উনিশে মে: ভাষার সংকট/কথাকবিতা/বাংলার তৃতীয় ভুবন

বাংলার তৃতীয় ভুবন

মধুক্ষীরক বঙ্গের পশ্চিমে পূর্ববাহিনী গঙ্গা, হুগলি, অজয়, করতোয়া থেকে পূর্বে পুরবী মেঘনার তটবিধৌত বজ্রভূমি কল কানসোনা বরিন্দ পুণ্ড্র বঙ্গাল দণ্ডভুক্তির বাইরে ঈশানের শুকনো খাতে শুষ্ককৌশিকা কুশিয়ারা সুরমা বরাক কুলপ্লাবী হরিকেলি বাঙ্গলার মুখ নবম শতাব্দীর কর্পরমঞ্জরীর বিস্মৃতি থেকে ফেরানো বঙ্গের স্বীকৃত দুই ভুবনের কর্ম নয়। তাই বাংলার তৃতীয় ভুবন বরাক উপত্যকা সগর্বে বইছে তার বিদ্রোহের ধ্বজা, তার ভাষা সাহিত্যের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে নীরবে, দৃঢ় প্রত্যয়ে।

 এনজেপি-র পর কয়েকটা মাত্র রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে বঙ্গদেশের সীমা। তারপর লোহিত কিনারে ভাস্করবর্মার অজজ্জীবক দেশ কামরূপ। কামরূপ থেকে লৌহবর্ত্তবাহী অজগর হিড়িম্বদেশ-এর দুয়ার লামডিং থেকে দক্ষিণ মুখি। দক্ষিণ মুখি পাহাড়ের রূপ, রূপময় পথের কথা, রূপকথার দেশ বরাক ভূমিতে পৌঁছতে কথা উপকথা বিস্তর। পাহাড় ভাঙ্গা ৩৬ খানা এফোঁড় ওফোঁড় গুহাপথ, তার পাশে কাছাড়ি রাজার রাজধানী মাইবং, তার একপাথরের অবাক বাড়ি। ঝান্সির প্রচারে নিষ্প্রভ কার্বি আংলং এর রাণী গুইদালোর দেশ পেরিয়ে হাফলং জাটিংগা আর তার দুনিয়া অবাক করা আগুনের পাখিরা। দামছড়া, ডিটকছড়া, হারাঙ্গাজাও এর রবার বাগান, আর হিলারা বিহাড়ার চা বাগিচায় শেষ বড়াইলের অটবি অঞ্চল। সুকৃতিপুরে বরবক্র বরাক সেতুর উপর রেল কাম ঝমাঝম, মণি খুলে ফনীর বিশ্রাম বদরপুর জংশনে। হরিকেল সাম্রাজ্যের বিস্তৃত ভূমি বরাক উপত্যকার কেন্দ্র থেকে পেছন ফেরা ইশারার শহর হাইলাকান্দি, হাত বাড়ালেই বাঁ-হাতি জেলা শহর করিমগঞ্জ আর হ্যাণ্ডশেকের হাতে শিলচর। মিজো বড়াইল শ্রেণীর নিম্নভূমি, সুরমা বরাকের অববাহিকা ঘিরে আসামের সাবেক জিলা কাছাড় ভেঙ্গে এখন রাজনীতির বিষয় হয়েছে। স্থলপথে করিমগঞ্জ হয়ে আঠারোমুড়ার ঘুর পথে আগরতলা। আগরতলার পাশে বাংলাদেশের আখাউড়া। আবার করিমগঞ্জ থেকে ভিসাহীন কুশিয়ারা সাঁতরেও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শ্রীহট্ট, সিলেট, সুন্দরী শ্রীভূমি। বরাক উপত্যকার সাথে নাড়ির টানে আরও এগোনো যায়, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ঢাকা। ব্যস, বগুড়া যশোর বরিশাল পাবনা রংপুর সিলেটকে চিনলেও, বরাক-সে কোথায়। বিদেশ ভূমি ইণ্ডিয়া হতে পারে হয়তো। কলকাতা বাংলা ইণ্ডিয়া বাংলার কাছেও সমান ছায়াবৃতা এই দূরের স্বদেশ।

 ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক দূরত্ব কাটিয়ে ঘুমের দেশের রাজকন্যাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা যে হয়নি তাও নয়। আম ফাঁক জাম ফাঁক মন্ত্র আউড়ে, সোনার কাঠি রূপোর কাঠি পালটানোও হয়েছে। অনেক সম্মেলন হয়েছে শিলচর করিমগঞ্জ বদরপুর লালা হাইলাকান্দিতে, ভুল রাজপুত্রদের আসা যাওয়াই সার হলো। শিল্প সাহিত্যে বরাক উপত্যকার উষরতা উর্বরতার দিকে একটুও এগোল না তাদের পদপাতে। কেন, উপত্যকার বিদ্বৎ সমাজ কি সব সময়ই আল্লা মেঘ দে, পানি দে বলে বাইরের মেসাইয়ার প্রতীক্ষায় থেকেছেন! স্বদেশী ত্রাণকর্তাকে ডাল বরাবর ভেবে বিরূপের আইএনআরআই দেগে দিয়েছেন ক্রুশের উপর। বরাকের লেখক হয়ে কী হবে, বাইরে কে পড়বে আমার লেখা। বা, অভিমানের আত্মপ্রবঞ্চনায় লিখেটিকে কী হবে বলে দুম করে সাহিত্যের পার্টটাইম ছেড়ে চাকরি বাকরি ঘরকন্নায় নিবিষ্ট হয়ে গেলেন লিখিয়েরা। বা একটু লিখতে পারার মতো হওয়ার পরে কলকাতা যাব, কলকাতার কাগজে বাংলা ভাষায় লিখব বলে দেশে থেকেও দেশান্তরী। কেউ কেউ বলেন, আমরা নাকি ধর্মতলায় বৃষ্টি হলে প্রেমতলায় (শিলচর) ছাতা ধরি।

 আর, পাঠক। চাকরি বাকরি করে পনেরো দিনের 'দেশ' পড়ে সাহিত্য রুচি সম্পন্ন বাঙ্গালির খ্যাতি বজায় রাখেন। আনন্দ সম্ভার এত বেড়েছে যে গৃহিনীর নবকল্লোল আর কেনাই হয় না। যে ক-জন স্বদেশ বৎসল আছেন, তারাও আদ্যিকালের লেটার প্রেসের অপেশাদার প্রুফরিডার, আলংকারিক ও দপ্তরিদের হাত দিয়ে বেরিয়ে আসা ছোটো পত্রিকার গুণবিচারের অবকাশ কতটা পেয়ে থাকেন। প্রতিকূলতা সয়ে, অনেকটা কাটিয়ে ‘সাহিত্য' পত্রিকার ২৫ বৎসর পেরিয়ে যাওয়াই বরাক উপত্যকার ভাষা সাহিত্যের গর্বিত উত্তরাধিকার।

 কলকাতার কবি বরাক উপত্যকার ছোটো পত্রিকা সম্পাদককে লিখে জানান ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়নি, বোধ হয় সেজন্যই ওই অঞ্চলের প্রতি আমার ঔৎসুক্য ও আকর্ষণ বেশি।’ কবির ঔৎসুক্যের কারণ অজানাকে জানা, ভাষা সাহিত্যের সৌভ্রাতৃত্ব নয়। আত্মপ্রবঞ্চনার পরবর্তী বাস্তব ক্রিয়াই আত্মবিশ্বাস। তাই, মেসাইয়া তত্ত্বে অবিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাসে স্থিত হওয়ার প্রক্রিয়াই এখন উপত্যকার স্থায়ী প্রত্যয়। বিশ্বাসের সঠিক রূপ নিয়ে ভেবেছেন বরাক উপত্যকার এক সম্পাদক ‘ভৌগোলিক অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা কারণেই এ অঞ্চলের বাঙালি সমাজ মূল সমাজ থেকে অনেক দূরে। দেশ বিভাগের পর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এ অঞ্চলে যে মুখের ভাষা ব্যবহৃত হয় সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের ভাষা থেকেও তার দূরত্ব অনেকখানি। এই বলয়ের বাঙলা উপভাষা সাহিত্যে তেমনভাবে গৃহীত হয় নি। জীবনের নিরাপত্তাহীনতা বিরাট অংশের মধ্যে জন্ম দিচ্ছে প্রবাসী মানসিকতার। নিজেদের রেখেছে আত্মবিস্মৃত করে। এই অবস্থায় যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা চলেছে জোরকদমে তাকে প্রকাশ করার নেই কোনো বড়ো কাগজ, কোনো বড়ো প্রকাশক সংস্থা। কিন্তু বাইরের জগতে ঠিকঠাক প্রকাশিত না হলেও এর একটা আলাদা চরিত্র বর্তমান।’ এসব কারণের অনিবার্যতা নিয়েই চলেছে বরাক পারের রেনেশাঁ। বরাক উপত্যকা তার ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণে নিরত নীরবে, দৃঢ়প্রত্যয়ে।

 বড়ো কাগজ, বড়ো প্রকাশক সংস্থা নেই সত্য। যেখানে ভালো, বড়ো প্রকাশনা আছে, বাংলারই হোক তুলনামূলক সাহিত্যেরই হোক, বই কাগজ কিনে পড়তে তো বাধা নেই। গ্রন্থাগার তৈরি করার উদ্যম তো থাকতে পারে। সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার কথা কোনো সংস্কারকের ভাবনায় আসেনি। অঙ্গুলিমেয় পণ্ডিত পাঠক আছেন ক-জন, যাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ ঈর্যাজনক ভাবে সমৃদ্ধ। বরাক পারে সাহিত্য ‘উহিত্য’ যারা করেন তারা শুধু লেখেন, পড়ার জানার দায়িত্ব যে তাদের আছে সে খবরের বোঝা তাদের পিঠ থেকে খোয়া গেছে হারাঙ্গাজাওয়ের অরণ্যে।

 বিষ্ণুশর্মার গল্পে বোকা ব্রাহ্মণের কথা আছে বিস্তর। পণ্ডিত ব্রাহ্মণ নিজেকে নিয়েই মজা করেছেন। এ মজা কোনো অবরোহী ভাবনা প্রসূত নয়। বরাক পারের ঐতিহ্যে গর্বিত লেখক তাকে আরও উচ্চাসনে বসাতে গিয়ে কিছু অভিমানের বিরূপতা হয়তো নিয়ে এসেছেন রচনায়। 'আমিই শ্রেষ্ঠ' বলা সহজ, মান্য হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এই রচনা-প্রয়াস এক বৃহৎ আলোচনার উপক্রমণিকা মাত্র। এর একটি ঐতিহাসিক কারণও আছে, বরাক উপত্যকার ভাষা সংস্কৃতির ইতিহাসকে অর্বাচীন ভাবার প্রবণতা বাংলার প্রধান ভুবনে বিদ্যমান বলে এক এবং দ্বিতীয়ত ঐতিহ্যের পুননির্মাণে নিরত আমাদের তৃতীয় ভুবনকে অভিনন্দন জানাতেই এই কথা, কথামুখ।

 বিগত বঙ্গীয় শতাব্দীর সূচনায় প্রাপ্ত তাম্রশাসন থেকে চতুর্দশ শতকের সুচনাকাল পর্যন্ত, অস্যার্থে বহমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত সুরমা বরাকের ঐতিহ্য। ভাষা সংস্কৃতির সাথে চর্চার যোগ যদিও অঙ্গাঙ্গি তবু দুইকে একটু আলাদা করার প্রয়োজন আছে। আছে একারণেই জীবন তার প্রয়োজনে ভাষাকে তৈরি করে সংস্কৃতির সাথে তাকে চালিতও করে। একটি সচল পথ ধরে এগোয়। সময় যেমন চায়, তার রূপও পাল্টায়। তাত্ত্বিকতা ভাষাকে চলমান রাখে না, তাতে অন্য উপকরণও যোগ করে। ভাষা তার বহুমুখী প্রকাশ ভঙ্গি পায়। বললেই হলো না, থামা, চলা, বাঁক ফেরা, পরীক্ষা নিরীক্ষার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। বরাকেও তার ভাষা সংস্কৃতি নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে গেছে আধুনিকতার ব্রেক ইভন পয়েণ্টে যেখানে সাহিত্য নিন্দনীয় যান্ত্রিকতার অবক্ষয়ে নিমজ্জিত হয়নি। বরাক উপত্যকা গর্ব ভরে জানিয়েছে তার সাহিত্যও বাংলার মূলধারার ব্যতিক্রম নয়। এখানে বাংলা ভাষা কথ্য রূপে যেমন লিখিত রূপেও বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে চলেছিল, বঙ্গাব্দের দ্বাদশ শতক পর্যন্ত। তারপরের পর্বেও, বিশেষ করে স্বাধীনতার পূর্ব ও উত্তর-পর্বে, ভৌগোলিক কারণে, বরাক উপত্যকার সমাজ বহির্বিশ্বের আলোড়নের সাথে সম সময়ে আলোড়িত হয়নি বলেই, বাঁক ফেরা সহজ হয়নি। মেট্রোপলিটন মানসিকতা থেকে দূরে ব্যক্তিগত ভাববিশ্বে বিচরণ করেছেন কবি সাহিত্যিকেরা। ভোগবিশ্বের বিবর্তনও অতি ধীরে তার সংক্রমণের দাঁত নখ নিয়ে এগিয়েছে বলে অবক্ষয়ের স্বরূপ অধরা থেকেছে। গ্রাম্যতা কিছু তো ছিল। প্রথম উজ্জ্বল কাব্য সংকলন ‘অরণ্য পুষ্প' নামেও তেমন ইঙ্গিত ছিল। এরপর আর তেমন নামের ঈশারা হয়নি বরাক উপত্যকায়। উপত্যকার বাংলা সাহিত্যের ভাবজগত আলোড়িত করে বেরোল ‘অতন্দ্র’। চোখ-কান খোলা রেখে পুরব ঐতিহ্য আর পশ্চিমের তত্ত্বগত মননকে স্বীকার করে বরাকের এই প্রথম প্রমত্ততা। 'কবির শহর শিলচর' অভিধা অতন্ত্রের গোষ্ঠী ইতিহাসের এক অনতিক্রম্য ধাপ। একক রচনার অগ্নি বরাক উপত্যকাকে সব সময় উত্তাপে জারিত করেছে। ইতিহাসের উপাদান হয়ে সময় বয়ে গেছে। অতন্দ্রও এক সময় অনন্ত যাত্রায় গেল। আর কবিরা জোট বাঁধলেন না। তাই, আবার ব্যক্তিগত ধার করা মুখ্য ধারায় কবিতা লেখা শুরু হলো। ব্যতিক্রমী আগুন জ্বেলে রাখার দায় কাউকে তো নিতেই হয়, নইলে যে প্রত্যয় মার খায়।

 ঐতিহ্যের ধারাবাহিক ইতিহাস রচনার প্রধান পুরোহিত গদ্যকার। প্রধান দুই গদ্যকারের একজন 'শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস' প্রণেতা আর অন্যজন তরুণ রচনার অগ্নি' লিখে বিতর্কের শীর্ষে। বিজ্ঞানসম্মত রচনা পদ্ধতি আর গবেষণা লব্ধ জ্ঞান পরিবেশনে এদের সমকক্ষ কেউ নেই বরাক ভূমিতে। পুনর্নির্মাণে আরও অনেকেই নিরত আছেন। গবেষক ডক্টরেটের সংখ্যা যেখানে অগণ্য, দু-জনকে আলাদা করে বিশিষ্ঠতা দিতেই হয়।

 বাংলা গদ্যের শক্তিশালী চলমান জীবন ও ইতিহাসমুখি প্রধান ধারাই এখন ছোটোগল্প। ছোটোগল্পের প্রধান উপাদান সময়। এই সময়কে সব সময়ে মহাসময়ে নিয়ে যেতে পারে ছোটোগল্প, সময়ের সময়চিহ্ন মুছে দিতে পারে সাহিত্যের এই একমাত্র মাধ্যম। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধতম শাখা গল্পের ভুবনেও বরাক উপত্যকা অনেক এগিয়ে। বাংলা ছোটোগল্পের আলোচনায় ‘শতক্রতু' ‘অনিশ’ এই দুই পত্রিকার ভূমিকাই প্রধান এবং একমাত্র। ছোটোগল্পের হয়ে ওঠার সময়কে ধাত্রীর মমতায় লালন করেছে এই দুই ছোটো পত্রিকা। এখন তো 'সাহিত্য' বরাক উপত্যকায় অল ইন ওয়ান। ‘ফেরারী' গল্প দিয়েই উপত্যকায় ছোটোগল্পের বাঁক ফেরার ইতিহাস। ‘গোপাল যখন বিচারক’, ‘আসরাফ আলির স্বদেশ”, ‘কাক’ আর বড়ো গল্পে 'পু ঘোষ' নামে আসবেই। বিন্যাস ও কনটেণ্ট পাশাপাশি না চলায়, মূল ভাষা এরিনায় ঢুকতে দেরী হচ্ছে। 'এ অঞ্চলের বাংলা উপভাষা সাহিত্যে তেমন ভাবে গৃহীত হয়নি' গল্পকারের কাছে এ এক মৌলিক প্রতিবন্ধকতা হয়তো। হতে পারে, গ্রাম জীবনের একঘেয়েমি থেকে গল্প উঠে আসছে না, বা কলকাতা নেই শিলচর হাইলাকান্দি করিমগঞ্জে। এই রচনাকারের একাশি সালের এক রচনার কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার প্রয়োজনে 'কলকাতা যে কলকাতাই—কলকাতার পার্ক আছে ট্রাম আছে, ইষ্টবেঙ্গল, মেট্রো আছে, নক্সাল আছে ময়দান ভিক্টোরিয়া, ঘোড়ার প্যাডক ফ্রি স্কুল এটা সেটা এবং বেড়াবার গিরিডি, ধানবাদ, তোপচাঁচি আছে।’ আছে তো আছে। বরাকও তার স্বকীয়তা নিয়ে আছে অবিকল প্রেমতলা, রাঙ্গিরঘাড়ি, টিকরবস্তিতে। মোক্ষম কথাটি বলেছেন কথাকার শেখর দাশ, 'কাশ্মীরি কাঠ দিয়ে কাজিরাঙ্গার গণ্ডার তৈরি করছে ভারত বা পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলের শিল্পী'। বরাক উপত্যকাও অফুরন্ত সম্পদ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার যোগদান নিশ্চিত করেছে গৌরবে। ঢাকা বা কলকাতাগন্ধী ছুৎমার্গ ছাড়িয়ে একাশির ভাবনা থেকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে বরাক উপত্যকার সাহিত্য। গ্রহণ বর্জনের প্রক্রিয়ায় এখন ঐতিহ্য তথা সাহিত্যর নবায়নে নিরত বাংলার তৃতীয় ভুবন। বলা বাহুল্য—নীরবে, দৃঢ় প্রত্যয়ে।

জনপদ প্রয়াস ১৪০০ বঙ্গাব্দ। ১৯৯৪।