উনিশে মে: ভাষার সংকট/ধ্রুবপদ উনিশ/মাতৃভাষা বাংলা
ভাষাভুবনে অপরিচয়ের অন্ধকার যেমন ছিল তেমনই আছে। ঘরের ভিতর যে ঘরগুলি আছে তাদেরও আছে সুয়ো দুয়ো। বাংলায় যে ত্রিশটিরও বেশি উপভাষা আছে তার মধ্যে সবচেয়ে অপরিচিত বরাক উপত্যকার প্রচলিত সিলেটি ভাঙা এবং সিলেটি। গল্প কিংবা উপন্যাসের সংলাপে হিন্দি বেশি বাংলা কম চা বাগানের কৃত্রিম ঔপনিবেশিক ভাষাটি কিন্তু পাঠকের কাছে বেশ পিঠেগরম। কাটোয়ার উপভাষা, মান বাজারের, গঙ্গার বদ্বীপের দখনো, কিংবা উত্তর বাংলার বাহে সবারই বেশ পাশপোর্ট আছে ভাষা দুনিয়া ভ্রমণের। শুধু আমাদের দুখিনি ইতা আর কিতা'র বর্ণমালাই আটকা পড়ে যায় ইমিগ্রেশনে। প্রকাশক সম্পাদকের সন্দেহের হাত থেকে রক্ষা নেই, সিলেটিতে ছাপা হয় না কোনো লেখার লেখি মানে সংলাপ। 'ডি' ভোটার তকমা পড়ে যায় লেখকের উর্দিতে। 'ডি' ভোটার কথাটাও অচেনা বাংলার এপারে-ওপারে। আসামে বাঙালির নাগরিকত্ব নিয়ে ছেলেখেলা চলছে স্বাধীনতার আগে থেকেই। যার পরিণতি ১৯৬১র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন এবং ১৯শে মের এগারোজন ভাষাসেনানীর মৃত্যুবরণ। দিল্লি কলকাতার মধ্যস্থতায় সমাধানের চেষ্টা হয়েছে, হয়তো ভাষা সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার অভাব ছিল বলেই কিছুদিন পরপরই ভাষার জন্য শহিদ হতে হয় বরাক উপত্যকায়, যা কিনা ভারত রাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপদ যার প্রধান জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা। কাছাড় নামের একটি জেলা ভেঙে এখন চারটি। কার্বি আংলং জেলার নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি রয়েছে, বাকি তিনটি জেলা কাছাড় হাইলাকান্দি করিমগঞ্জ এককালে মমতাহীন কালস্রোতে/ বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হতে/ নির্বাসিতা.../ সুন্দরী শ্রীভূমি'র সঙ্গে আত্মীয়তাসূত্রে গ্রস্থিত ছিল। নির্বাসনের বাঙালির কোথায় ঘর কোথায় ঘাট, যাবে কোথায়। স্বদেশ তাকে আপন বলে মানে না, নতুন অর্জিত দেশ এর অধিরাজ বলে বিদেশি। বলে তাড়াতে হবে'। তাই নতুন অভিধা 'ডি' মানে ডাউটফুল। সন্দেহজনক নির্বাচক হিসেবে চিহ্নিত করলেই ঘাড় ধাক্কা দেওয়া যাবে। খাদের পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে 'পুশব্যাক'। ওপারে যাওয়ার চেষ্টা করলে বলা হচ্ছে 'দেব গলা টিপে'।
এই অপরিচিতকে এপারের বড়ভাই বাঙালিরা চেনে না, বলে বাঃ, আপনারা তো বেশ বাংলা বলতে পারেন। বছর কয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গ কলকাতার এক স্বনাম খ্যাত ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার তার উপন্যাসে হেলা ভরে চিত্রিত করলেন বরাকবাসী বাঙালিকে। বাঙালি পরিচয়টাকে পর্যন্ত প্রশ্নচিহ্নে রেখে দিলেন, এত তাচ্ছিল্য। শিলচর হাইলাকান্দি করিমগঞ্জ কোথায় জানেন না।
আমাদের মুখের ভাষা শুনে অনেকের সিদ্ধান্ত এ নিশ্চয় অসমিয়া। পরিতাপের কথা অসমিয়ার মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষার সঙ্গে পরিচয় নাই থাকতে পারে, কিন্তু নিজের মাতৃভাষার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা কেন শিক্ষাগবী বাঙালির।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির ও বাংলা ভাষার গর্বের দিন, সারা পৃথিবী তাকে মান্যতা দিয়েছে। উনিশে মে ও একুশের মশাল বহন করে ভারত নামের উপমহাদেশের এক রাজ্যের ভাষিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করতে চেয়েছে মাতৃভাষাকে। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য লড়ছে বাঙালি এবং অন্যান্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। এ শুধু তথ্য নয়, বাঙালি পরিচয়ে নিজের দেশে বেঁচে থাকার প্রতিজ্ঞা।
আঁকাবাঁকা এক আদুরে নদীর নাম এই দেশে বড়বেকা, পোষাকি নাম বড় বক্র, বরাক। নৃত্যপরা এই নদীর জন্ম মণিপুর রাজ্যের এক পাহাড় থেকে। এই নদীর কত শাখা বেরিয়েছে, মিশেছে এসে কত উপনদী, কী মধুর সব নাম তাদের অম্বুবাহী গতিপথের। এপার বরাকে আছে মধুরা ঘাঘরা ধলেশ্বরী লঙ্গাই কুশিয়ারা, আন্তর্জাতিক সীমার ওপারে বিবিয়ানা সুরমা ব্রহ্মপুত্র মেঘনা হয়ে বাঙালির প্রাণগঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। একই নদীর অনেক রূপ, বরাক নদীর উপত্যকায় এপার বাংলা থেকে ভাটির টানে ওপারে গিয়ে সুরমা নদীর অববাহিকায় বাস এই বাঙালিরই, উপভাষাসূত্রে যারা পরিচিত শ্রীভূমি, শ্রীহট্ট, সিলেটের সঙ্গে। স্থানীয় বাঙালি আর দেশভাগ অঘটনের পর আগত ছিন্নমূল সিলেটিরা মিলেমিশে সাজায় নতুন ভাষাভুবন।
ঐতিহ্যের দিক থেকেও কিন্তু অর্বাচীন নয় সিলেটি বাঙালি। বিখ্যাত স্মার্ত পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমণির জন্মভূমি শ্রীহট্টের পঞ্চখণ্ড জনপদে। ঢাকা দক্ষিণ গ্রামটির সঙ্গে যে মহাপুরুষ বাঙালির নাম জড়িয়ে আছে তিনি বাঙালির নবজাগরণের প্রধান পুরুষ বিশ্বম্ভর মিশ্র। শ্রীচৈতন্য নামে বাঙালির প্রাণের ঠাকুরের পিতৃভূমি সিলেট। বাংলা সাহিত্যকে বুদ্ধিজীবীর সহজিয়ানার শরিক করেছেন যে রবীন্দ্রশিষ্য সৈয়দ মুজতবা আলী, তার জন্মও সিলেটে। লাল বাল পাল খ্যাত বিপিনচন্দ্র পালের উত্তরাধিকার বহন করে বাংলার সিলেটি উপভাষাভাষীজন। অগ্নিযুগের বীর বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িও শিলচর শহরে। আন্দামানে তিনি ছিলেন 'ডি' টিকিট ধারী ‘ডি’এখানে ডেঞ্জারাস ছন্দোগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রণেতা প্রবোধ চন্দ্র সেন ও তার সখা সহচর বাঙালির ইতিহাস এর নীহাররঞ্জন রায় সিলেটের এম সি কলেজের ছাত্র। ব্রতচারী আন্দোলনের প্রবর্তক গুরুসদয় দত্তর মাতৃভূমি সিলেট। ধামাইল নাচের সঙ্গে রাধাকৃষ্ণ প্রেমের গান গেয়ে বিখ্যাত পদকর্তা রাধারমন দত্ত এখনও সিলেটের আউল বাউল ফকিরের প্রাণের মানুষ। বাউল ফকিরের দেশ সিলেটের রাজার রাজা সুনামগঞ্জ লক্ষণশ্রীর হাসন রাজার পরিচয় তার গানে,
‘লোকে বলে বলে রে, ঘর বাড়ি বালা নায় আমার।
কি ঘর বানাইলাম আমি শূন্যের মাঝার
... ... ... ... ... ...
হাসন রাজায় বুঝত যদি বাঁচব কতদিন
দালান কোঠা বানাইত করিয়া রঙিন।’
শাহ আব্দুল করিমের 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান।’ গানের আক্ষেপ প্রাণের বেদনায় ভরপুর। দেশভাগের অনিবার্যতা আর বিভাজনের শক্তিমত্ততা গণভোটের আকারে খণ্ডখণ্ড করে দেয় সিলেটি উপভাষার মিলিত সুর। শান্তিপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করে ধর্মীয় প্ররোচনা। রাজা গৌড় গোবিন্দের হাত থেকে শাসনক্ষমতা তুলে নেওয়ার পর হয়তো নবীন ধর্মপ্রচারের প্রবণতা ছিল। কিন্তু তারপর থেকে সহাবস্থানের এক অননুকরণীয় অপরূপ রূপে সেজেছিল সিলেট। ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আবদ্ধ ছিলেন না বলেই ভাষার চিত্ররূপ ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলেন স্বরূপে, আবহমানের বাংলা বর্ণমালায়। সিলেটি নাগরিতে লিখিত দইখুরা ফকিরের ‘পহেলা কিতাব’ এ সাধক নিজের ধর্মে অনুগত থেকে লিখেছেন আল্লা খোদার গুণগান কথা, আবার বৃন্দাবন চন্দ্র ও কৃষ্ণ বিলাসিনীর প্রেমকথাও লিখে গেছেন পরম শ্রদ্ধায়। হিন্দু লেখক ভাই গিরিশচন্দ্র লিখিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কোরাণ শরিফ' এর অনুবাদটি এখনও প্রামাণ্য।
ঐতিহ্যের খণ্ডাংশ দিয়ে হয়তো পরিচিতি গড়ে ওঠে না। আরও অনেক বিখ্যাতজনের দাপটে সমৃদ্ধ হয়েছে বরাক উপত্যকা তথা সিলেটের উপভাষামণ্ডল। সিলেট সবসময়ই রত্নগর্ভা, হয় উত্তম নইলে কিছুই না, কথায় আছে ‘শ্রীহট্টে মধ্যমো নাস্তি।’
সুরমা গাঙের গাঙচিল উত্তম সিলেটি হেমাঙ্গ বিশ্বাস হারাধন আর জন হেনরির কণ্ঠে বিশ্বাস আর অধিকারের গান শুনিয়েছেন। বাংলা লোকগানের প্রবাদ গায়ক নির্মলেন্দু চৌধুরি আর হেমাঙ্গ বিশ্বাসের ঐতিহ্য বহন করে শিলচরে কালিকাপ্রসাদও ওই উপভাষার উত্তরাধিকারী। দোহারের কালিকা কিংবা গণসংগীত ও রবীন্দ্রগানের শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার গানের সঙ্গে সাহিত্যচর্চায় সমান মনোযোগী। শ্রীহট্ট কাছাড়ের প্রাচীন ইতিহাস প্রণেতা সুজিৎ চৌধুরি ২০০২ এর ৩০ মে 'আজকাল' পত্রিকায় ১৯শে মে নিয়ে একটি প্রতিবেদনে ভাষা আন্দোলনের নির্যাস কম কথায় শুনিয়েছিলেন পাঠককে ‘১৯মে শহিদ দিবস হিসেবে যারা পালন করেন, তাদের কাছে অবশ্যই গুরুত্ব পায় মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার ব্যাপারটা—কারণ বরাক উপত্যকার ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ এখনও চলছে। তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক উত্তরণ এবং জাতিসত্তার বিকাশের প্রশ্নটাও গুরুত্ব পাচ্ছে এখন—২১ ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সাফল্য এক্ষেত্রে ১৯শে মে-র দিশারী।’ কালিকাপ্রসাদও আনন্দবাজারে লেখেন ‘—উনিশ মে অসম বা উত্তর-পূর্ব ভারতের বহুভাষিক চরিত্রকে রক্ষা করার লড়াই। এক স্বরের সঙ্গে বহুস্বরের বিরোধ।’ ‘বাংলা আমার মাতৃভাষা, ঈশান বাংলা মা।’ কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর এই অবিনশ্বর পদ আমাদের উপত্যকাকে করেছে ‘ঈশান বাংলা’ ‘সাহিত্য’ সম্পাদক কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য বলেছেন ‘বাংলার তৃতীয় ভুবন’। যদি ঢাকা কলকাতাকে দুই ভুবন ধরা হয়।
নামের তালিকায় সিলেট কিংবা বরাক উপত্যকা কম পড়বে না। ‘মাধব মালঞ্চী কন্যা’, ‘শোয়াইক গেল যুদ্ধে’র নাট্যকার প্রথিতযশা বিভাস চক্রবর্তীরও যৌবন কেটেছে সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায়। বহুমুখী প্রতিভাধর নাট্যস্বজন খালেদ চৌধুরির আত্মজীবনীর পরতে পরতে সিলেটিভাষা আর সিলেটস্মৃতির সুবাসে ভরপুর। সদ্য একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত কবি রণজিৎ দাশ এর প্রথম যৌবনের দিনগুলি শিলচর শহরের স্মৃতি ভরপুর। সীমান্তহীন মাসিক ‘আরম্ভ’ সম্পাদক বাহারউদ্দিন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থেকেও উনিশে মে উদযাপনের এক উজ্জ্বল পথিকৃৎ তিনি কলকাতায়। বিস্মৃত এক চিত্র পরিচালক ছিলেন বিমল রায় এর সহকারী, প্রথম ছবি পরিচালনা করেই করেন বাজিমাত ‘উসনে কহা থা’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির মনোনয়ন পায়। ‘মুঝে জিনে দো’, তাঁর সফল ছবি। তাঁর নাম মণি ভট্টাচার্য। শিলচরের চন্দ পরিবারের অনেক বিখ্যাতদের একজন অনিল কুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সচিব। বিশ্বভারতীর স্বর্ণযুগের বাংলার অধ্যাপক ছিলেন সিলেটের ভূদেব চৌধুরি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপকার ত্রিগুণা সেনও সিলেট সন্তান। ‘আধখানা চাঁদ আটকে আছে টেলিগ্রাফের তারে’র কবি সিলেটের অশোক বিজয় রাহার জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে গেল ২০১১য়।
মেনে নেওয়া যাক বাংলার মূল ভাষাভুবন থেকে বরাক উপত্যকার ভৌগোলিক দূরত্ব অনেক। সিলেট তো এখন বিদেশবাড়ি। অপরিচয় হতেই পারে। অপরিচয়কে অসম্মানের দুরভিসন্ধিতে বদলে ফেললে অসহায়তা ক্রোধে পর্যবসিত হয়। মা শব্দের অপমান কে-ই বা মেনে নিতে পারে, মাতৃভাষা যে মায়ের ভাষা। বহুল প্রচারিত প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকার ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় ভাষাদিবস একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে প্রবন্ধ লেখেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী শ্রীকান্তি বিশ্বাস মহাশয়। অবাক করে দিয়ে সেই প্রবন্ধে একুশের সঙ্গে উল্লিখিত হয় উনিশেরও নাম। বরাক উপত্যকা তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের নয়নের মণি একাদশ শহিদের নামও ছাপা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির সঙ্গে বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনকে জুড়ে দেওয়ার জন্য শহিদের পুণ্যভূমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে পারত, ধন্যবাদ জানাতে পারত যদি তিনি হেলাভরে কিছু মারাত্মক তথ্যগত ত্রুটি না করতেন। শহিদের রক্ত যারা আজো ভোলেনি তারা কী করে মেনে নেবে নামের ভুল। এগারোজনের নামে চারটে ভুল। (১) চণ্ডীচরণ সূত্রধর হয়েছে চন্ডীচরণ সূত্রধর (২) কুমুদ দাশ হয়েছে কুমুদরঞ্জন দাশ (৩) বীরেন্দ্র সূত্রধর হয়েছে নীরেন্দ্র সূত্রধর (৪) হীতেশ বিশ্বাস হয়েছে জীতেন বিশ্বাস। বরাক উপত্যকার কিন্তু বারবার মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় আত্মাহুতি দিতে হয়েছে শহিদের। তারও কোনো উল্লেখ নেই। ১৯৭২ এর ১৭ আগস্ট বিজন চক্রবর্তী শহিদ হন করিমগঞ্জে, ১৯৮৬র ২১ জুলাই করিমগঞ্জে আবার পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন দিব্যেন্দু দাস ও জগন্ময় দেব। ১৯৯৬ এ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার মর্যাদা আদায়ের জন্য ষোলো বছরের কিশোরী সুদেষ্ণা সিন্হা শহিদ হন পাথারকান্দিতে।
অনিচ্ছাকৃত ভুলকে ভুল বলে মানা যায়। অবহেলার এতবড় ত্রুটিকে মানা যায় না।বরং সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ‘একলা চলো' লড়াই এর। কারণ ইতিহাসের কাছে বাংলা মূল ভাষাভুবনের বিন্দুমাত্র দায় নেই উত্তর-পূর্বের বাংলা ভাষাভাষীজনের প্রতি।প্রাসঙ্গিকভাবেই তাই ভাষাতাত্ত্বিক তপোধীর ভট্টাচার্যর উচ্চারণকে মান্য বলে এগিয়ে যেতে হবে। ‘বহির্জগতের নিষ্ঠুর নির্লিপ্তি সত্ত্বেও আমরা উত্তর-পূর্বের ব্রাত্য বাঙালিরা বাঁচি, বাঁচব আমাদের নিজস্ব আলোয়, প্রত্যয়ে, উত্তাপে।’
উনিশে মে র একাদশ শহিদ:
১। কমলা ভট্টাচার্য।
২। শচীন্দ্র পাল।
৩। চণ্ডীচরণ সূত্রধর।
৪। সুনীল সরকার।
৫। সুকোমল পুরকায়স্থ।
৬। কানাইলাল নিয়োগী।
৭। সত্যেন্দ্র দেব।
৮। বীরেন্দ্র সূত্রধর।
৯। তরণী দেবনাথ।
১০। কুমুদ দাস।
১১। হীতেশ বিশ্বাস।
১৭ আগস্ট ১৯৭২র শহিদ
বিজন চক্রবর্তী ২১ জুলাই ১৯৮৬র শহিদ
১। দিব্যেন্দু দাস।
২। জগন্ময় দেব।
১৯৯৬ এ বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার মর্যাদা রক্ষায় পাথারকান্দিতে শহিদ হন এক কিশোরী সুদেষ্ণা সিন্হা।
উনিশে মে ২০১৪