উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/ছেলেদের মহাভারত/সৌপ্তিকপর্ব

সৌপ্তিকপর্ব

র্যোধনের এখন নিতান্তই দূরবস্থা৷ নিজে তো মরিতেই চলিয়াছেন; তাঁহার পক্ষের যোদ্ধাদের মধ্যেও তিনজনমাত্র জীবিত৷

 এই তিনটি লোকে কি করিতে পারে? তাহারা দুর্যোধনের দুর্দশা আর পাণ্ডবদের পরাক্রমের কথা চিত্তা করিতে করিতে রথে চড়িয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন, কিন্তু শক্রসংহারের কোনো উপায় দেখিতেছেন না৷ তাহারা চুপিচুপি শিবিরের কাছে গেলেন কিন্তু সেখানে পাণ্ডবদের সিংহনাদ শুনিয়া তাঁহাদের ভয় হইল৷ তারপর ঘুরিতে ঘুরিতে তাহারা একটা বনের ভিতরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

 সারাদিনের কঠিন পরিশ্রমের পর নিজেরাও অতিশয় ক্লান্ত, ঘোড়াগুলিও আর চলিতে পারে না। এখন একটু বিশ্রাম না করিলেই নয়। তাই সেই বনের ভিতরে একটা প্রকাণ্ড বটগাছ দেখিতে পাইয়া, তাঁহারা রথ হইতে নামিলেন। নিকটেই জলাশয় ছিল। ঘোড়াগুলিকে খুলিয়া দিয়া, তাঁহারা সেই জলাশয়ে মুখ হাত ধুইয়া, সন্ধ্যাপূজা সারিয়া, বটগাছের নীচে বিশ্রাম করিতে লাগিলেন। অল্পক্ষণের ভিতরে কৃপ আর কৃতবর্মার ঘুম আসিল। কিন্তু দুঃখে আর চিন্তায় অশ্বত্থামার ঘুম হইল না। তিনি চারিদিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিলেন।

 রাত্রি হইয়াছে গাছের ডালে কাকেরা তাদের বাসায় সুখে নিদ্রা যাইতেছে। এমন সময় কোথা হইতে একটা প্রকাণ্ড পেচক আসিয়া, ঘুমের ভিতরে, অসহায় অবস্থায়, সেই কাকগুলিকে বধ করিতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে পেচক কাকগুলিকে মারিয়া শেষ করিল, একটিও অবশিষ্ট রহিল না।

 এই ঘটনা দেখিয়া অশ্বত্থামার মনে হইল, ‘তাই তো আমিও তো এই উপায়ে শত্রুদিকে বধ করিতে পারি।’ ইহার পব আর অশ্বত্থামা চুপ করিয়া থাকিতে পারিলেন না। তিনি তখনই কৃপকে ডাকিয়া বলিলেন, “মামা! এইরূপ করিয়া আমরাও শত্রুদিগকে বধ করিব।”

 কৃপাচার্য প্রথমে কিছুতেই এমন কাজে মত দেন নাই, কিন্তু ভাগিনেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষটা তাহাকে সম্মত হইতে হইল। তখন তিনজনে মিলিয়া, সেই নিষ্ঠুব পাপকার্য সাধনের জন্য, পাণ্ডব শিবিরের দিকে যাত্রা করিলেন।

 পাণ্ডব শিবিরের কাছে আসিয়া অশ্বত্থামা দেখিলেন যে, একজন অতিশয় উজ্জ্বল পুরুষ শিবিরের দরজায় দাঁড়াইয়া আছেন। সেই উজ্জ্বল পুরুষ স্বয়ং মহাদেব; কিন্তু অশ্বথামা তাহাকে চিনিতে না পারিয়া, তাঁহাকে সেখান হইতে তাড়াইবাব জন্য, বাণ মারিতে লাগিলেন।

 অস্ত্রে মহাদেবের কি হইবে? অশ্বত্থামা বাণ, শক্তি, অসি, গদা, যাহা কিছু মারিলেন, সমস্তই সেই উজ্জ্বল পুরুষ গিলিয়া ফেলিলেন। অশ্বত্থামা সকল ক্ষমতা শেষ করিয়া, তারপর আর কি করবেন, ঠিক করিতে পারিলেন না।

 এমন সময় তাঁহার মনে হইল, ‘শিবের পূজা করি, তাহা হইলে আমার কাজ হইবে।’

 এই মনে করিয়া তিনি শিবের স্তব করিতে করিতে, নিজ শরীর উপহার দিয়া তাঁহাকে তুষ্ট করিবার জন্য, আগুন জ্বালিয়া তাহাতে ঝাঁপ দিলেন। তখন শিব সন্তুষ্ট না হইয়া আর যান কোথায়? তিনি কেবল যে দরজা ছাড়িয়া দিলেন, তাহা নহে, তাঁহাকে একখানি ধারালো খড়্গও দিলেন, এবং নিজে তাহার শরীরে প্রবেশ করিয়া, তাঁহার বল বাড়াইতে ত্রুটি করিলেন না।

 তারপর যাহা ঘটিল, বলিতে বড়ই ক্লেশ বোধ হয়। অশ্বত্থামা সেই খড়্গ হাতে শিবিরে প্রবেশ করিলেন;কৃপ আর কৃতবর্মাকে দরজায় রাখিয়া গেলেন, যেন কেহ পলাইয়া যাইতে না পারে।

 শিবিরে প্রবেশ করিয়াই অশ্বত্থামা সকলের আগে ধৃষ্টদ্যুম্নের ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যে তাঁহার পিতাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে বধ করিয়াছিল, তাহার উপর রাগ হইয়াই স্বাভাবিক। সেই রাগেই তিনি সকলের আগে, ধৃষ্টদ্যুম্নকে মারিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছিলেন।

 সুন্দর কোমল শয্যার উপরে ধৃষ্টদ্যুম্ন নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাইতেছেন, এমন সময় অশ্বত্থামার পদাঘাতে তার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। তিনি চমকিয়া উঠিয়া বসিবামাত্র, অশ্বত্থামা তাঁহাকে চুলে ধরিয়া মাটিতে আছড়াইতে লাগিলেন। তারপর তাঁহার গলা টিপিয়া ধরিয়া, বুকে লাথি মারিতে আরম্ভ করিলে, ধৃষ্টদ্যুম্ন অনেক কষ্টে বলিলেন, “আমাকে অস্ত্রাঘাতে শীঘ্র সংহার কর।” কিন্তু অশ্বত্থামা তাহা না শুনিয়া পদাঘাতে তাঁহার প্রাণ শেষ করিলেন।

 ধৃষ্টদ্যুম্নের চীৎকারে সকলে জাগিয়া উঠিয়া কোলাহল করিতে লাগিল। স্ত্রীলোকেরা কাঁদিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু সেই ভীষণ রাত্রে ঘুমের ঘোরে, বিষম ত্রাসে কেহই বুঝিয়া উঠিতে পারিল না, কি হইয়াছে।

 এদিকে অশ্বত্থামা অস্ত্র হাতে সাক্ষাৎ শমনের ন্যায় সকলকে সংহার করিতেছেন। যোদ্ধারা যুদ্ধ করিবে কি? একে রাত্রিকাল, তাহাতে নিদ্রাকালে হঠাৎ আক্রমণ;হতভাগ্যেরা ভালোমতে প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই অশ্বত্থামা তাহাদিগকে আক্রমণপূর্বক বধ করিতে লাগিলেন।

 সে নিষ্ঠুর নীচ ভীষণ কার্যের আর বর্ণনা করিয়া কি হইবে? শিবিরে যত লোক ছিল, স্ত্রীলোক ভিন্ন আর তাহাদের একজনও রক্ষা পাইল না। পাণ্ডবদিগের পুত্রকয়টিকে অবধি অশ্বত্থামা নির্দয়ভাবে বিনাশ করিলেন। তিনি চুপিচুপি চোরের ন্যায় প্রবেশ করিবার সময় শিবির যেমন নিস্তব্ধ ছিল, দেখিতে দেখিতে আবার তাহা সেইরূপ নিস্তব্ধ হইয়া গেল। তখন তিনি দেখিলেন যে, তাঁহার কার্য সম্পন্ন হইয়াছে, রাত্রিও শেষ হইয়াছে।

 তারপর বাহিরে আসিয়া, অশ্বত্থামা কৃপ এবং কৃতবর্মাকে নিজ কীর্তি শুনাইলেন, আর জানিতে পারিলেন যে, তাঁহারা উভয়ে মিলিয়া একটি প্রাণীকেও পলায়ন করিতে দেন নাই। তখন তিনজনে মনের আনন্দে করতালি দিয়া কোলাহল করিতে লাগিলেন। এমন কাজের সংবাদটা দুর্যোধনকে তখন জানানো চাই:সুতরাং তাঁহারা তাঁহার নিকট আসিতে আর তিলমাত্র বিলম্ব করিলেন না।

 হায় মহারাজ দুর্যোধন! এখন তিনি কি করিতেছেন? এখনো তিনি মৃত্যুর অপেক্ষায় রণস্থলে শয়ান। প্রাণ বাহির হইতে বিলম্ব নাই, জ্ঞান লোপ হইয়া আসিতেছে, মুখ দিয়া ক্রমাগত রক্ত বাহির হইতেছে! বৃক প্রভৃতি ভয়ানক জন্তুগণ আসিয়া তাঁহার মাংসের লোভে তাঁহাকে ঘেরিয়াছে তিনি দারুণ যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতে করিতে, অতি কষ্টে তাহাদিগকে বারণ করিতেছেন।

 তাঁহার এইরূপ অবস্থা দেখিয়া সেই তিন বীর আর চোখের জল থামাইয়া রাখিতে পারিলেন না। একাদশ অক্ষৌহিণীর যিনি অধিপতি ছিলেন, তাঁহার কিনা এই দশা! আর সেই বীরের মাংস খাইবার জন্য, বন্যজন্তুরা তাঁকে ঘেরিয়াছে! যাহা হউক, এসব কথা ভাবিয়া আর কি হইবে? এখন যে সংবাদ লইয়া তিনজন আসিয়াছিলেন তাহা তাঁহাকে শোনানো হউক। এই ভাবিয়া অশ্বথামা তাহাকে বলিলেন, “হে কুরুরাজ! যদি জীবিত থাকেন, তবে এই আনন্দের সংবাদ শ্রবণ করুন। এখন পাণ্ডব পক্ষে পাঁচ পাণ্ডব, কৃষ্ণ আর সাত্যকি এই সাতজনমাত্র জীবিত। আজ রাত্রে আমি তাহাদের শিবিরে প্রবেশ করিয়া, আর সকলকে বধ করিয়াছি।”

 এ কথায় দুর্যোধন চক্ষু মেলিয়া বলিলেন, “হে বীর! ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ যাহা করিতে পারেন নাই, আজ তুমি তাহা করিলে। তোমাদের কথা শুনিয়া নিজেকে ইন্দ্রের ন্যায় সুখী মনে করিতেছি। এখন তোমাদের মঙ্গল হউক; আবার স্বর্গে দেখা হইবে।” এই বলিয়া দুর্যোধন সেই তিনজনকে আলিঙ্গন করিলে, তাঁহার আত্মা দেহ ছাড়িয়া স্বর্গে চলিয়া গেল।

 ইহার কিঞ্চিৎ পরে সঞ্জয় কাদিতে কাদিতে এই সংবাদ লইয়া হস্তিনার উপস্থিত হইলেন।

সেদিন আর তিনি অন্যদিনের মতো স্থিরভাবে তাঁহার কথা বলিতে পারিলেন না। ধৃতরাষ্ট্রের পুরীতে প্রবেশমাত্রই তিনি দুহাত তুলিয়া, ‘হা মহারাজ! হ মহারাজ!’ বলিয়া চীৎকার করিতে লাগিলেন। তারপর তাঁহার মুখে সেই দারুণ সংবাদ শুনিয়া, সকলের, বিশেষত ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর, যে অবস্থা হইল, তাহা বর্ণনাতীত। সে সংবাদে কেহ অজ্ঞান কেহ বা হতবুদ্ধি হইয়া গেল। অনেকে পাগলের ন্যায় ছুটাছুটি করিতে লাগিল। তারপর এমন কান্না আরম্ভ হইল যে, তাহা শুনিলে বুঝি পাথরও গলিয়া যায়।

 এদিকে রাত্রির সেই ভীষণ ব্যাপারের সংবাদ পাইয়া, পাণ্ডবগণের কিরূপ কষ্ট হইল, তাহা আর বলিয়া কি হইবে? নকুল তখনই দ্রৌপদীকে আনিতে পাঞ্চাল দেশে চলিয়া গেলেন। দ্রৌপদী আসিলে পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত এমনভাবে কাটিল যে, সে দুঃখের আর তুলনা নাই। দ্রৌপদী কাঁদিতে কাঁদিতে রাগে অস্থির হইয়া বলিলেন, “আজ যদি সেই পামরকে সংহার করা না হয়, তবে অনাহারে প্রাণত্যাগ করিব।”

 যুধিষ্ঠির তখন তাঁহাকে বুঝাইতে অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তিনি তাহাতে শান্ত না হইয়া বলিলেন, “শুনিয়াছি অশ্বত্থামার জন্মাবধি তাহার মাথায় একটা মণি আছে। ঐ দুরাত্মার প্রাণ বধপূর্বক সেই মণি আনিয়া দিতে পারিলে, আমি তাহা তোমাকে পরাইয়া কিঞ্চিৎ শান্ত হইতে পারি।”

  তিনি ভীমকেও বলিলেন, “অশ্বত্থামাকে মারিয়া এই মণি আনিয়া দিতে হইবে।” একথা বলামাত্রই ভীম নকুলকে সারথি করিয়া অশ্বত্থামার খোঁজে বাহির হইলেন। অশ্বথামার রথের চাকার দাগ স্পষ্টই দেখা যাইতেছিল, সুতরাং তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করা তেমন কঠিন কাজ বলিয়াও বোধ হইল না।

 কিন্তু ভীমকে অশ্বথামার খোঁজে যাইতে দেখিয়া কৃষ্ণের বড়ই চিন্তা হইল। তিনি জানতেন যে অশ্বত্থামাকে দ্রোণ ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র দিয়াছিলেন। উহা এমনই ভয়ংকর যে, তাহার বদলে অশ্বথামা কৃষ্ণের চক্র চাহিতেও লজ্জ্বাবোধ করেন নাই। অশ্বত্থামা রাগের ভরে ভীমের উপরে এই অস্ত্র মারিয়া বসিলে, তাঁহার রক্ষা থাকিবে না। সুতরাং কৃষ্ণ তখনই যুধিষ্ঠির আর অর্জুনকে লইয়া রথারোহণে ভীমের অনুগামী হইলেন। ভীমকে পাইতেও তাঁহাদের বিলম্ব হইল না। কিন্তু তিনি কি নিষেধ শুনিবার লোক? তিনি তাঁহাদের কথা না শুনিয়াই ছুটিয়া চলিলেন। তারপর গঙ্গার ধারে আসিয়া অশ্বত্থামাকে ব্যাসদেবের নিকট দেখিবামাত্র তিনি, “দাঁড়া বামুন, দাঁড়া!” বলিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিতে গেলেন।

 অশ্বথামা দেখিলেন বড়ই বিপদ। একা ভীম হইতেই রক্ষা নাই, তাহাতে আবার ভীমের পশ্চাতে কৃষ্ণ, অর্জুন আর যুধিষ্ঠিরকেও দেখা যাইতেছে কাজেই তিনি তখন প্রাণভয়ে তাড়াতাড়ি “পাণ্ডব বংশ নষ্ট হউক।” বলিয়া, সেই ব্রহ্মশির অস্ত্র ছুঁড়িয়া বসিলেন। তখন সর্বনাশ উপস্থিত দেখিয়া, কৃষ্ণ অর্জুনকে বলিলেন, “শীঘ্র তোমার দ্রোণদত্ত সেই মহাঅস্ত্র ছাড়।”

 অর্জুন তৎক্ষণাৎ, “এই অস্ত্রে অশ্বথামার অস্ত্র বারণ হউক।” বলিয়া তাঁহার অস্ত্র ছড়িলেন। অমনি সেই দুই অস্ত্রের তেজে এমন ভয়ংকর গর্জন উল্কাবৃষ্টি আর বজ্রপাত আরম্ভ হইল যে, সকলে ভাবিল, বুঝি সৃষ্টি নষ্ট হয়।

 তখন নারদ আর ব্যাসদেব, সৃষ্টি রক্ষার জন্য, সেই দুই অস্ত্রের মাঝখানে দাঁড়াইয়া অর্জুন ও অশ্বথামাকে শীঘ্র তাঁহাদের অস্ত্র থামাইতে বলিলেন। অর্জুন বলিলেন, “অশ্বথামার অস্ত্র বারণের জন্য আমি অস্ত্র ছুঁড়িয়াছিলাম। আমার অস্ত্র থামাইলেই উহার অস্ত্র আমাদিগকে ভস্ম করিবে। অতএব যাহাতে সকলে রক্ষা পাই আপনারা তাহা করুন৷”

 এ কথা বলিয়াই অৰ্জুন তাঁহার অস্ত্র থামাইয়া দিলেন। অতিশয় সত্যবাদী সাধুপুরুষ না হইলে সে অস্ত্র থামাইতে পারে না। মনের ভিতরে কিছুমাত্র মন্দভাব লইয়া উহা থামাইতে গেলে, উহাতে তৎক্ষণাৎ নিজেরই মাথা কাটা যায়। অর্জুন অসাধারণ সাধুপুরুষ ছিলেন, তাই তিনি ইচ্ছামাত্রই তাঁহার অস্ত্র থামাইয়া দিলেন।

 কিন্তু অশ্বত্থামা তাঁহার অস্ত্র থামাইতে না পারিয়া, মুনিদিগকে বলিলেন, “আমি ভীমের ভয়ে অস্ত্র ছাড়িয়াছিলাম, এখন তো আর থামাইতে পারিতেছি না; বড় অন্যায় কাজ করিয়াছি; এ অস্ত্র নিশ্চয়ই পাণ্ডবদিগকে বিনাশ করিবে৷”

 কিন্তু মুনিরা এরূপ অন্যায় কথায় কিছুতেই সম্মত হইলেন না। তাঁহারা বলিলেন, “অৰ্জুন যখন তাঁহার অস্ত্র ফিরাইয়া লইয়াছেন, অশ্বথামারও পাণ্ডবদিগকে রক্ষা করা নিতান্ত উচিত৷”

 বাস্তবিকই কেবল পাণ্ডবদেরই ক্ষতি হইবে, অশ্বত্থামার কিছুই হইবে না এমন হইলে অর্জুন তাঁহার অস্ত্র থামাইতে রাজি হইবেন কেন? অথচ এদিকে অশ্বত্থামার নিজের অস্ত্র থামাইবার শক্তি না থাকায় পাণ্ডবদিগের কিছু ক্ষতি না হইয়া যাইতেছে না। এ অবস্থায় অশ্বত্থামার অস্ত্রে অভিমন্যুর শিশুপুত্রটি মারা যাইবে; আর অশ্বত্থামা তাহার মাথার মণি পাণ্ডবদিগকে দিবেন।

 এইরূপে পাণ্ডবেরা অশ্বথামার মাথার মণি আনিয়া দ্রৌপদীকে দিলে, সেই মণি যুধিষ্ঠিরের মাথায় পরাইয়া, এত দুঃখের ভিতরেও তিনি কিঞ্চিৎ সুখ পাইলেন।

 আর অভিমন্যুর সেই পুত্রটির কি হইল? শিশুটি তখনো জন্মে নাই, সেই অবস্থায়ই সে মারা গেল। তাহার জন্মের পর মরা ছেলে দেখিয়া সকলে কাঁদিতে আরম্ভ করিলে, কৃষ্ণ আসিয়া তাহাকে বাঁচাইয়া দিলেন। ছেলেটির নাম হইল পরীক্ষিৎ। যুধিষ্ঠিরের পরে এই পরীক্ষিৎ হস্তিনায় ষাটস হাজার বৎসর রাজত্ব করিয়াছিল।