উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/পুরাণের গল্প/পিপ্পলাদ

পিপ্পলাদ

 দধীচি মুনির নাম হয়তো তোমরা অনেকেই শুনিয়াছ। তাঁহার মতন তপস্যা অতি অল্পলোকেই করিয়াছে। মহর্ষি দধীচি অতিশয় শান্ত আর পরম দয়ালু ছিলেন। গঙ্গার ধারে নিজের আশ্রমে থাকিয়া পত্নী প্রাতিথেয়ীকে লইয়া ভগবানের নাম করা, গাছপালার প্রতি যত্ন, সকল জীবে দয়া আর অতিথি আসিলে তাহার সেবা করা, এ সকল ছাড়া তাঁহার আর কাজ ছিল না। কিন্তু এই নিরীহ লোকটির তপস্যার এমনি তেজ ছিল যে, তাহার ভয়ে অসুরেরা তাঁহার আশ্রমের কাছে আসিতেই থরথর করিয়া কাঁপিত। অথচ দেবতাদিগকে সেই অসুরেরা জ্বালাতনের একশেষ করিত। কতকাল ধরিয়া যে ইঁহাদের যুদ্ধ চলিয়াছিল, তাহার ঠিকানাই নাই। সেই যুদ্ধে কখনো দেবতারা জিততেন, কখনো বা অসুরদিগের নিকট হারিয়া বিধিমতে নাকাল হইতেন। যাহা হউক, একবার দেবতারা নানারকমের আশ্চর্য

আশ্চর্য অস্ত্র সংগ্রহ করিয়া অসুরদিগকে খুবই হারাইয়া দিলেন। তারপর তাঁহাদের এই চিন্তা হইল যে, এ সকল অস্ত্রের কাজ তো ফুরাইল, এখন এগুলোকে কোথায় রাখা যায়? যুদ্ধ করিয়া শরীব অত্যন্ত কাহিল হইয়াছে, এগুলোকে আর স্বর্গে বহিয়া নেওয়ার শক্তি নাই, সেখানে লইয়া গেলেও হয়তো আবার কোনদিন অসুরেরা আসিয়া কাড়িয়া নিবে।

 শেষে অনেক ভাবিয়া চিস্তিয়া তাঁহারা দধীচির নিকট আসিয়া বলিলেন, “মুনিঠাকুর, আমাদের এই অস্ত্রগুলি যদি দয়া করিয়া আপনার নিকট রাখেন, তবে আমাদের বড় উপকার হয়। আপনার কাছে থাকিলে আর দৈত্যেরা এগুলি চুরি করিতে পারিবে না।” এ কথায় দধীচি সবে বলিয়াছিলেন, “যে আজ্ঞা” অমনি প্রাতিথেয়ী তাঁহাকে বাধা দিয়া বলিলেন, “ওগো, তুমি এই ফ্যাঁসাদের ভিতরে যাইয়ো না। দেবতা মহাশয়েরা এখন মিষ্ট কথা কহিতেছেন, কিন্তু আমাদের এখানে থাকিয়া যদি জিনিসগুলি নষ্ট হয় বা চুরি যায়, তখন ইঁহারা বড়ই চটিবেন।” দধীচি বলিলেন, “তাই তো এখন আর কি করা যায়? “যে আজ্ঞা” বলিয়া ফেলিয়াছি, এখন তো আর ‘না’ বলা যাইতে পারে না।

 কাজেই অস্ত্রগুলি দধীচির আশ্রমেই রহিল, আর দেবতারা তাহাতে যারপরনাই তুষ্ট হইয়া নিজের নিজের ঘরে চলিয়া গেলেন। তারপর এক বৎসর যায়, দু বৎসর যায়, ক্রমে সাড়ে তিনলাখ বৎসর কাটিয়া গেল, তবুও দেবতাদের আর কোনো খোঁজ-খবর নাই। ততদিনে অস্ত্রে মরিচা তো ধরিয়াছেই, তাহা ছাড়া অসুরদের আবার বেজায় তেজ বাড়িয়া উঠিয়াছে। দিনরাত কেবল ঐ অস্ত্রগুলির উপর তাহাদের চোখ;না জানি কখন কোন ফাঁকে সেগুলিকে লইয়া যাইবে। তখন দধীচি ভাবিলেন যে, দেবতারা তো আসিলেনই না, এখন অস্ত্রগুলি যাহাতে অসুরদের হাতে না পড়ে, তাহার উপায় দেখিতে হয়।

 সে বড় আশ্চর্য উপায়। জলে মন্ত্র পড়িয়া অস্ত্রগুলিকে তাহা দ্বারা ধুইবামাত্র, তাহাদের সকল তেজ সেই জলে গুলিয়া গেল। সে জল দধীচি তখনই খাইয়া ফেলিলেন, কাজেই আর কোন চিন্তার কথাই রহিল না। তারপর দেখিতে দেখিতে অস্ত্রগুলি আপনা হইতেই ক্ষয় হইয়া গেল, তখন অসুরেরা আর কি নিবে?

 দধীচি সবে এই কাজটি করিয়া একটু নিশ্চিন্ত হইয়াছেন, আর ঠিক সেই সময়ে দেবতাদের অস্ত্রগুলির কথা মনে পড়িয়াছে। এতদিন বাদে, এত কাণ্ডকারখানার পরে, তাঁহারা আসিয়া দধীচিকে বলিলেন, “ঠাকুর, অসুরেরা তো আবার ভারি মুশকিল বাধাইয়াছে। শীঘ্র আমাদের অস্ত্রগুলি দিন।”

 দধীচি বলিলেন, “তাই তো আপনারা এতদিন আসেন নাই, তাই আমি দৈত্যদের ভয়ে সেগুলি খাইয়া ফেলিয়াছি। এখন কি করি বলুন?”

 তাহা শুনিয়া দেবতারা বলিলেন, “আমরা আর কি বলিব? আমরা বলি আমাদের অস্ত্রগুলি দিন। অস্ত্র না পাইলে আর আমাদের বিপদের সীমাই থাকিবে না!”

 দধীচি বলিলেন, “সে সকল অস্ত্র তো এখন আমার হাড়ের সহিত মিশিয়া গিয়াছে। আপনারা না হয় সেই হাড়গুলি নিন।”

 দেবতারা বলিলেন, “আমাদের অস্ত্রেরই দরকার, আপনার হাড় লইয়া আমরা কি করিব?”

 দধীচি বলিলেন, “আমার হাড় দিয়া অতি উত্তম অস্ত্র প্রস্তুত হইবে আমি এখনই দেহত্যাগ করিতেছি।”

 কাজেই তখন দেবতারা আর কি করেন? তাঁহারা বলিলেন, “আচ্ছা তবে একটু শীঘ্র শীঘ্র তাহই করুন।”

 দেবী প্রাথিতেয়ী তখন ঘরে ছিলেন না, স্নান করিতে গিয়াছিলেন দেবতারা সেই বুদ্ধিমতী, তেজস্বিনী মেয়েকে বড়ই ভয় করিতেন, তাই তাঁহারা ভাবিলেন যে, তিনি ফিরিয়া আসিবার পূর্বেই কাজ শেষ করিতে হইবে। দধীচি যোগাসনে বসিয়া একমনে ভগবানের চিন্তা করিতে লাগিলেন; দেখিতে দেখিতে তাঁহার পবিত্র আত্মা দেহ ছাড়িয়া চলিয়া গেল।

 তখন দেবতারা বিশ্বকর্মাকে বলিলেন, “এখন তুমি ইহার হাড় দিয়া অস্ত্রশস্ত্র তয়ের কর।”

 বিশ্বকর্মা বলিলেন, “আমি কি করিয়া অস্ত্র তয়ের করিব? ইহার দেহ কাটিলে তবে তো হাড় পাওয়া যাইবে। বাপ রে! সে কাজ আমা দ্বারা হইবে না! হাড়গুলি পাইলে আমি এখনই তাহা দিয়া অস্ত্র গড়িয়া দিতে পারি।”

 তখন দেবতাদের কথায় গোরুর দল আসিয়া গুঁতাইয়া মুনির দেহ হইতে হাড় বাহির করিয়া দিল, দেবতারাও মহানন্দে তাহা লইয়া প্রস্থান করিলেন। সেই হাড় দিয়া শেষে বিশ্বকর্মা বজ্র প্রভৃতি নানারূপ আশ্চর্য অস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছিলেন।

 এদিকে প্রাতিথেয়ী স্নান আহ্নিকের পর কলসী হতে আশ্রমে ফিরিয়া দেখেন, মহর্ষি নাই, তাঁহার মাংস, লোম আর চামড়া মাত্র পড়িয়া আছে। ঘরে অগ্নি ছিলেন, তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেবী সকল কথাই জানিতে পারিলেন। সেই দারুণ সংবাদ বজ্রাঘাতের ন্যায় তাঁহার চেতনা হরণ করিয়া লইল; তাঁহার দেহ ধূলায় লুটাইয়া পড়িল। জ্ঞান হইলে পর অনেক কষ্টে শোক সম্বরণপূর্বক তিনি দধীচির দেহের অবশিষ্টটুকু লইয়া আগুনে ঝাঁপ দিলেন। যাইবার সময়ে নিজের নিতান্ত শিশুপুত্রটিকে গঙ্গার নিকটে আর গাছপালার নিকটে সঁপিয়া দিয়া বলিয়া গেলেন, “এই পিতৃমাতৃহীন শিশুটিকে তোমরা দয়া করিয়া দেখিবে।”

 দধীচিও গেলেন প্রতিথেয়ীও গেলেন। আশ্রম অন্ধকার হইল। তপোবনের পশুপক্ষী আর বৃক্ষলতারা তখন কাঁদিয়া বলিল, “হায়! যাঁহারা আমাদের পিতা মাতার মতো ছিলেন, তাঁহাদের দুজনকেই হারাইলাম। আমাদের কি দুর্ভাগ্য! আর তো আমরা তাঁহাদের সেই পবিত্র মুখ দেখিতে পাইব না। এখন তাঁহাদের এই শিশুটিকে দেখিয়াই আমাদের মন শান্ত থাকিবে।”

 এখন হইতে এই শিশুটিকে পালন করাই হইল তাহাদের একমাত্র কাজ। চন্দ্রের নিকট হইতে অমৃত চাহিয়া আনিয়া তাহারা শিশুটিকে খাইতে দিল, সেই অমৃতের গুণে শিশু দেখিতে দেখিতে শুক্লপক্ষের চাঁদের মতো বাড়িয়া উঠিল। পিপুল (অশ্বত্থ) গাছেরা তাহার বড়ই যত্ন করিয়াছিল, তাই তাহার নাম হইল পিপ্পলাদ।

 পিপ্পলাদ জানিত, সে সেই সকল গাছপালারই ছানা। তারপর যখন তাহার বুদ্ধি একটু বাড়িয়াছে, তখন সে একদিন তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, “গাছের ছানা তো গাছের মতোই হয়, মানুষের ছানা মানুষের মতো হয়, পাখির ছানা হয় পাখির মতো আর জন্তুর ছানা জন্তুর মতো। কিন্তু আমি যে তোমাদের ছানা, আমার এমন হাত পা হইল কি করিয়া?”

 গাছেরা বলিল, “বাছা, তুমি তো আমাদের ছনা নও। তুমি মুনির পুত্র, তোমার পিতা মহর্ষি দধীচি, মাতা দেবী প্রাতিথেয়ী।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার বাবা আর মা তবে কোথায় গেলেন?” গাছেরা বলিল, “তোমার পিতা দেবতাদের উপকারের জন্য প্রাণত্যাগ করিয়াছেন, তোমার মাতা সেই দুঃখে আগুনে ঝাঁপ দিয়াছেন।”

 এমনি করিয়া গাছেরা সকল কথাই পিপ্পলাদকে বলিল। তাহা শুনিয়া সে আগে গড়াগড়ি দিয়া কাঁদিল, তারপর গাছেদের মিষ্ট কথায় একটু শান্ত হইয়া রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, “আমার পিতাকে যাহারা মারিয়াছে, তাহাদিগকে আমি মারিব।”

 তখন গাছেরা সেই ছেলেটিকে চন্দ্রের নিকট লইয়া গিয়া সকল কথা বলিল।

 তাহা শুনিয়া চন্দ্র বলিলেন, “বৎস পিপ্পলাদ! বল, বুদ্ধি, বিদ্যা, ধন, রূপ, গুণ, সুখ, মান, যশ, পুণ্য সকলই আমি তোমাকে দিতেছি, তুমি গ্রহণ কর।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার পিতাকে যাহারা মারিয়াছে, তাহাদিগকে যদি না মারিতে পারিলাম, তবে এ সব লইয়া আমার কি হইবে? আগে বলুন, কোথায়, কোন দেশে, কোন তীর্থে গিয়া, কি মন্ত্র বলিয়া, কোন দেবতাকে ডাকিয়া আমি এ কাজ করিতে পারিব?”

 চন্দ্র বলিলেন, “শিবকে ডাক, তোমার কাজ হইবে।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমি যে ছেলেমানুষ, আমি তো কিছুই জানি শুনি না আমি কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিব?”

 চন্দ্র বলিলেন, “তুমি চক্রেশ্বর তীর্থে গিয়া ভক্তিভরে তাঁহার কথা ভাব, আর তাঁহাকে ডাক, তবেই তিনি আসিবেন।”

 পিপ্পলাদ তখনই সেই তীর্থে গিয়া প্রাণপণে শিবকে ডাকিতে লাগিল সেই ডাকে শিব তাহার সম্মুখে আসিয়া বলিলেন, “পিপ্পলাদ, কি চাহ?”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার দেবতুল্য ধার্মিক পিতামাতাকে যাহারা মারিয়াছে, আমি তাহাদিগকে মারিতে পারি, এমন ক্ষমতা আমাকে দিন।”

 শিব কহিলেন, “আচ্ছা, তুমি যদি আমার তিনটা চোখই দেখিতে পার, তাহা হইলে দেবতাদিগকে মারিতে পারিবে।”

 কিন্তু পিপ্পলাদ অনেক চেষ্টা করিয়াও তাঁহার দুইটা বৈ চোখ দেখিতে পাইল না।

 তখন শিব বলিলেন, “আর কিছুদিন তপস্যা কর, দেখিতে পাইবে।”

 এ কথায় পিপ্পলাদ এমনি ভয়ংকর তপস্যা আরম্ভ করিল যে, অল্পদিনের ভিতরেই সে দেখিল, শিবের কপালে আর একটি চোখ আছে। তখন শিবের সেই চোখ হইতে আগুনের ঘোড়ার মতন একটা ভয়ংকর ‘কৃত্যা’ (ভূত) বাহির হইয়া ঘোরতর শব্দে পিপ্পলাদকে বলিল, “কি করিব?”

 পিপ্পলাদ বলিল, “দেবতাদিগকে ধরিয়া খাও!”

 বলিতে বলিতেই সেটা খপ্‌ করিয়া পিপ্পলাদকে ধরিয়া মুখে দিতে গিয়াছে!

 পিলাদ ভয়ানক থতমত খাইয়া চ্যাঁচাইয়া বলিল, “আরে, আরে, ও কি কর?”

 সেটা বলিল,“দেবতাদিগকে খাইতে হইলে, তাহারা যে তোমার শরীর গড়িয়াছে তাহাও খাইব।”

 একথায় পিপ্পলাদ আবার শিবের স্তব করিলে, শিব সেই ভয়ংকর জিনিসটাকে বলিলেন, “এ স্থানের এক যোজনের মধ্যে তুমি কাহাকেও খাইতে পারিবে না!” তখন সেই ভূতটা সেখান হইতে দূরে গিয়া এমনই সর্বনেশে আগুন জ্বালাইয়া বসিল যে, আর একটু হইলেই সে দেবতার দলকে পোড়াইয়া শেষ করিত! দেবতারা প্রাণের ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে শিবের নিকট আসিয়া বলিলেন, “রক্ষা করুন প্রভু! আপনার ভূত আমাদিগকে পোড়াইয়া মারিল। আপনি রক্ষা না করিলে এ যাত্রা আর আমাদের উপায় নাই।”

 শিব তাঁহাদিগকে বলিলেন, “তোমরা এইখানে আসিয়া বাস কর। এখানে ওটা তোমাদের কিছু করিতে পারিবে না।”

 দেবতারা বলিলেন, “স্বর্গ আমাদের বাসস্থান, তাহা ছাড়িয়া এখানে কি করিয়া থাকি?”

 শিব কহিলেন, “তবে এক কাজ কর;সূর্যই হইতেছেন এই সংসারের পিতা। তিনি আসিয়া এখানে বাস করুন, তাহাতেই সকল দেবতার বাস করা হইবে।” এইরূপে তখনকার মতো বিপদ কাটিয়া গেল।

 তারপর শিবের উপদেশে পিপ্পলাদের রাগও দূর হইল। তখন শিব অনেকবার পিপ্পলাদকে বর লইতে বলিলেন। পিপ্পলাদ এমন সব বর প্রার্থনা করিল, যাহাতে জগতের উপকার হয়। নিজের জন্য সে কিছুই চাহিল না।

 ইহাতে দেবতাগণ যারপরনাই তুষ্ট হইয়া তাহাকে বলিলেন, “বাছা, তুমি তো তোমার নিজের জন্য কিছুই চাহিলে না। আমরা তোমাকে বর দিব, তুমি তোমার নিজের জন্য কিছু চাহিয়া লও।”

 তখন পিপ্পলাদ জোড়হাতে দেবতাদিগকে নমস্কার করিয়া বলিল, “আমার পিতামাতার পবিত্র নাম কানে শুনিয়াছি মাত্র, তাঁহাদিগকে দেখিবার সুখ এই অভাগার ভাগ্যে ঘটে নাই, ইহাতে আমার মন বড় অস্থির থাকে।”

 দেবতারা বলিলেন, “সেজন্য তুমি কিছুমাত্র দুঃখিত হইয়ো না, এখনই তোমার পিতামাতাকে দেখিতে পাইবে।”

 এ কথা শেষ হইতে না হইতেই পিপ্পলাদের পিতামাতা দিব্য কেশ পরিয়া, সোনার রথে চড়িয়া স্বর্গ হইতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পিপ্পলাদ অমনি তাঁহাদের পায়ে লুটাইয়া পড়িল, কিন্তু তাঁহাদের মুখের দিকে চাহিয়া ক্রমাগত চোখের জল ফেলা ভিন্ন আর একটিও কথা কহিতে পারিল না।

 দধীচি ও প্রাতিথেয়ী তাহাকে অনেক আদর, অনেক আশীর্বাদ করিয়া, তাহার মনের সকল দুঃখ দূর করিয়া, আবার স্বর্গে চলিয়া গেলেন।

 এইভাবে সকল দিকেই সুখ হইল, এখন পিপ্পলাদের সেই ভয়ংকর ভূতটা থামিলেই আর কোনো কথা ছিল না।

 দেবতারা বলিলেন, “পিপ্পলাদ, তোমার এটাকে থামাও।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “সে সাধ্য তো আমার নাই। আপনারা গিয়া উহাকে থামিতে বলুন; আমাকে দেখিলে আবার কি না জানি করিতে চাহিবে।”

 সে কথায় দেবতারা সেই ভয়ংকর জিনিসটার কাছে গিয়া তাহাকে থামিতে বলিলেন।

 সে তাহাতে খেঁকাইয়া বলিল, “তাহা হইবে না! সকলকে খাইব, তবে তো থামিব। তাহার আগে আমার এ আগুন কিছুতেই নিভিবার নয়। বাস্তবিক, ইহাকে থামাইতে দেবতাদের বড়ই বেগ পাইতে হইয়াছিল। সে অনেক কথা, এখন আমার তাহা বলিবার অবসর নাই।