উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র/বিবিধ প্রবন্ধ/হাফ্‌টোন্‌-ছবি

হাফটোন্-ছবি

 ফটোগ্রাফীর সাহায্যে পুস্তকাদিতে ছাপিবার জন্য ছবি খোদাই হইবার কথা অনেকেই জানেন। হাঙ্গ্টোন্ নামক যে সকল ছবি আজকাল দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা এই প্রণালীতে খোদিত।

 কোন জিনিসের ছবি তুলিতে হইলে ফটোওয়ালারা তাহার সামনে ক্যামেরা স্থাপন করিয়া কত প্রকারের কসরৎ করে তাহা সকলেই দেখিয়াছে। ক্যামেরার ভিতরে যে তখনই বা করিয়া একটা জিনিসের ছবি আঁকা হইয়া যায়, তাহা কিন্তু নহে। ক্যামেরার ভিতরে একখানা মসলা মাখান কাচে সামনের জিনিসের একটা ছবি পড়ে। সেই ছবি পড়ার দরুন সেই কাচে মাখান মসলাটাতে কেমন একটা পরিবর্তন হয়। সে পরিবর্তন তখন দেখা যায় না, কিন্তু তারপর সেই কাচখণ্ডকে আর কতকগুলি প্রক্রিয়ার অধীন করিলে তাহার পৃষ্ঠে জিনিসের একটা উল্টা ছবি (negative) ফুটিয়া উঠে। উল্টা ছবি বলিবার অর্থ এ নয়, যে আপনার পদদ্বয় উদ্ধে উঠিবে, আর শিরোব্রজে গমনাগমনের ব্যবস্থা হইবে। কিন্তু ইহার অর্থ এই যে, ঐ কাচে অঙ্কিত ছবিতে আলোকের স্থানে অন্ধকার, এবং অন্ধকারের স্থানে আলোক দেখা যাইবে। প্রকৃত ছবির যে স্থান যত কাল হওয়ার দরকার নেগেটিভের সেই স্থানটি তুতই স্বচ্ছ হইবে, আর প্রকৃত ছবির যে স্থান যত ফরসা হওয়ার দরকার, নেগেটিভের সেই স্থান ততই কাল হইবে।

 এখন এই নেগেটিভকে একখণ্ড মসলা মাখান কাগজের অথবা অন্য কোন উপযোগী জিনিসের উপরে স্থাপন করিয়া আলোতে ধরিলে সেই কাগজে একখানি প্রকৃত (Positive) ছবি (অর্থাৎ যাহাতে আলো ও ছায়া যথাযথরুপে ব্যক্ত হইয়াছে সেইরূপ ছবি) পাওয়া যাইবে। ইহাকেই আমরা ফটোগ্রাফ বলি।

 কথাটাকে নিতান্তই মোটামুটি বলা হইল। কিন্তু যাহাবা এ সম্বন্ধে কিছু জানেন, তাহদের পক্ষে এ সকল কথা অনাবশ্যক এবং বিরক্তিকর হইতে পারে। আর যাহারা এ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না, তাহাদিগকে সাময়িক পত্রের প্রবন্ধে দুকথা বলিয়া ইহার চাইতে পরিষ্কার জ্ঞান দেওয়া খুব কঠিন বোধহয়। উপযুক্ত নেগেটিভ, আর উপযুক্ত মসলা মাখানো ধাতুর পাত হইলে সেই ধাতুর পাতে পজিটিভ ছবি মুদ্রিত করা যায়। আর সেই ছবির এমন গুণ হইতে পারে যে, যে আরকে ডুবাইলে ধাতুর পাত গলিয়া যায়, সে আরকে এই ছবিখানির কোন অনিষ্ট হয় না। ছবি অক্ষত থাকে, তদ্ভিন্ন অন্য স্থানের ধাতু গলিয়া গিয়া তাহা গর্ত হইয়া যায়। এরূপ হইলেই তো আপনারা যাহাকে ‘এনগ্রেভিং’ বলেন তাহা হইল। ফটো মানে আলোক। মূলতঃ আলোকের সাহায্যে এই এনগ্রেভিং নিম্পন্ন হয় বলিয়া ইহার নাম হইয়াছে ‘ফটো এনগ্রেভিং’।

 দেখা যাইতেছে যে ফটো এনগ্রেভিং-এর মূল প্রক্রিয়া তিনটিঃ ১) নেগেটিভ প্রস্তুত, ২) ধাতুর পাতে পজিটিভ ছবি মুদ্রণ এবং ৩) উপযুক্ত আরকের সাহায্যে সেই ধাতুকে খোদাই (etch) করা।

 এ স্থলে একটা কথার আলোচনা হওয়া দরকার হইতেছে। মনে করুন, একখানা ফটো অথবা পেনসিল কিম্বা তুলির আঁকা ছবি উড় এনগ্রেভারকে এনগ্রেভ করতে দিয়েছেন। আপনার প্রদত্ত ছবিতে যে উপায়ে আলো ও ছায়া ফলান হইয়াছে, সে উপায়ে কাঠের ব্লকে আলোছায়া ফলানো সম্ভব নহে। আপনার প্রদত্ত ছবিতে সাদা কাগজ হইতে আরম্ভ করিয়া মিশমিশে কালো পর্যন্ত অসংখ্য প্রকারের শেড় রহিয়াছে। এই অসংখ্য প্রকারের নয় সাদা নয় কাল শেড়কে ইংরাজি ভাষায় হাফটোন্ বলে। (উপেন্দ্রকিশোরের ফুট নোটুঃ ক্রমাগত ইংরেজী কথা ব্যবহারের ক্রটি মার্জনা করিবেন। এই সকল কথার এক একটা বাংলা প্রতিশব্দ ভাবিয়া স্থির করিয়াছিলাম। কিন্তু তাহদের অর্থ আর খানিক পরে স্বয়ং বুঝিতে পারিব কিনা, সে বিষয়েই গভীর সন্দেহ হওয়ায় তাহা পরিত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছি)

 যাহা বলিতে ছিলাম। তুলিতে ছবি আঁকিবার সময় চিত্রকর যে উপায়ে হাফটোন্ ফলান, এন্গ্রেভারের সে উপায় অবলম্বন করা অসম্ভব। তুলির কাজে কালো রঙে যথেচ্ছ জল মিশাইয়াতদ্বারা যেরূপ শেড ইচ্ছা প্রস্তুত করা যায়। এনগ্রেভার কি তাহা পারেন? এনগ্রেভারের ব্লক একই কাগজে একই কালিতে ছাপা হইবে—জল মিশাইয়া সেই কালিকে আবশ্যক মত এক স্থানে পাতলা অপর স্থানে গাঢ় করিবার ব্যবস্থা তাহাতে খাটিবে না। ব্লকের যে সকল স্থান গর্ত, তাহা একেবারে সাদাই থাকিবে, আর যে সকল স্থান উচু তাহা একেবারে কালোই হইবে। অথচ আপনার চাই যে, সাদা হইতে কালো পর্যন্ত যত প্রকারের মাঝামাঝি শেড মূল ছবিতে আছে, ব্লক হইতে ঠিক তেমনটি ছাপা হয়—নইলে সে জিনিসটি হইবে না। সুতরাং এনগ্রেভারকেও সকল প্রকার হাফটোন্ ফলাইবার ব্যবস্থা করিতে হয়। একখানি এনগ্রেভিংএর ছাপ পরীক্ষা করিয়া দেখুন সে ব্যবস্থা কিরূপ।

 খুব সরু সরু কতকগুলি রেখা খুব কাছাকাছি টানিলে, একটু দূর হইতে তাহাদিগকে পৃথক পৃথক রেখার ন্যায় দেখা যায় না; কিন্তু তাহাদের একটি “শেডের” মতন দেখায়। রেখাগুলি যত মোটা আর তাহদের পরস্পরের ব্যবধান যতখানি, তাহার উপর সেই শেড়টির গাঢ়তা নির্ভর করে। রেখার পরিবর্তে বিন্দু দ্বারাও ঐরূপ শেড প্রস্তুত করা যায়। বিন্দুগুলির পরস্পরের ব্যবধান (ব্যবধান বলিতে, এক বিন্দুর ঠিক মধ্যস্থল পর্যন্ত যে দূরত্ব তাহাই বুঝিতে হইবে। কেবলমাত্র দুই বিন্দুর মাঝখানের সাদা অংশটুকুকে বুঝিলে চলিবে না।) যদি ঠিক রাখা যায়, তবে খালি তাহাদের আয়তনের উপর শেডের গাঢ়তা নির্ভর করে। যে স্থান একেবারে সাদা, সেখানে বিন্দু থাকিবে না, তার চাইতে একটু ময়লা হইলেই অতিশয় সূক্ষ্ম বিন্দুর আবশ্যক হইবে। ক্রমে যতই ঘোর রঙের দিকে যাইবেন, ততই বড় বড় বিন্দু দিতে হইবে। বিন্দুগুলি বড় হইতেছে, কিন্তু তাহদের ব্যবধান ঠিক রহিয়াছে সুতরাং শেষে এমন হইবে যে, এক বিন্দু অপর বিন্দুর গায় আসিয়া ঠেকিবে। রিন্দুর আকৃতি ভেদে এরূপ অবস্থায়ও তাহদের মাঝখানে থাকিতে পারে, যেমন গোল বিন্দুর মাঝখানে থাকে। কিন্তু ইহার চাইতে বড় হইলে আবার সেই ফাঁকটুকুও চলিয়া যাইবে। তখন একেবারে কালো রঙে আসিয়া উপস্থিত হইবেন। এই উপায়ে এনগ্রেভার হাফটোনের ব্যবস্থা করেন। যে ছবি প্রেসে ছাপা হইবে, তাহার সম্বন্ধে অন্যরূপ ব্যবস্থা প্রযোজ্য নহে।

 এখন কথা এই যে, একখানি ফটো হইতে আগাগোড়া ফটোগ্রাফীর সাহায্যে যদি ব্লক করা দরকার হয়, তাহ হইলে হাফটোনের ব্যবস্থা কি করিয়া হইতে পারে? তার জন্য একটা

ব্যবস্থা না হইলে প্রেসে ছাপিবার উপযুক্ত ব্লক প্রস্তুত হইতেছে না।

 প্রস্তাবিত সমস্যার মীমাংসার জন্য অনেক প্রকার উপায় অবলম্বিত হইয়াছে কিন্তু তাহার সকলটার ফল সন্তোষজনক হয় নাই। আজকাল চৌদ্দ আনা হাফটোন এনগ্রেভার যে উপায়ে ব্লকের দানা (grain) উৎপাদন করেন, তাহা এই।

 পরিষ্কার কাচের ফলকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সরলরেখা সমান্তরালভাবে সমান সমান দূরে অঙ্কিত করিতে হয়। রেখাগুলি অতিশয় পরিষ্কার হওয়া চাই, আর তাহদের স্থূলতা এবং ব্যবধানের একটুও উনিশ বিশ না হওয়া চাই। এক ইঞ্চি পরিমাণ স্থানের ভিতর এইরূপ ৭৫ হইতে ১৭৫ অবধি রেখা সাধারণ কার্যের জন্য ব্যবহার হয়। বিশেষ বিশেষ স্থলে মোটার দিকে ৫০ এবং মিহির দিকে ২৪০ পর্যন্ত ব্যবহার হইতে পারে।

 এইরূপে দুইখণ্ড কাচে রুল কাটিয়া তাহার একখানিকে আর একখানির উপর স্থাপন করিতে হইবে। এরূপভাবে স্থাপন করিতে হইবে, যেন তাহদের রুলকাটা দিক ভিতরে থাকে, এবং একখানা কাচের রুল আর একখানার উপর আড়ভাবে পড়িয়া জাফ্রি বা জালের ন্যায় হয়। এইরূপ অবস্থায় কাচ দুখানিকে শক্ত করিয়া মুড়িতে পারিলেই ছবিতে দানা প্রস্তুত করিবার যন্ত্র নির্মিত হইল। এইরূপ কাচকে স্ট্রীন (screen) বলে।

 সহজেই বুঝা যায যে, একপ স্ট্রান ইচ্ছা করিলেই প্রস্তুত করা যায় না। অতিশয় সতর্ক এবং বুদ্ধিমান লোক বহুমূল্য যন্ত্রাদির সাহায্যে হীরের দ্বারা কাচের উপরে ঐরূপ লাইন কাটিতে পারেন। কিন্তু এ কার্য এত কঠিন যে, পৃথিবীতে তিনটি মাত্র লোক সম্প্রতি ইহা কবিতেছেন। তন্মধ্যে আমেরিকার ম্যাক্স লেভিই প্রধান।

 ক্যামেরার ভিতরে মসলা মাখান কাচের উপর যে ছবি পড়ে, সেই সময়ে একখানা স্ট্রীন তাহার সামনে ধরিতে হয়। তাহা হইলেই নেগেটিভ খানা সাধারণ ফটোগ্রাফীর নেগেটিভের মতন না হইয়া দানাযুক্ত হইয়া পড়ে। এই দানাযুক্ত নেগেটিভ হইতে ধাতুর পাতে ছবি মুদ্রিত করিলে তাহাও দানাযুক্ত হয়। দূর হইতে তাহাকে মোটামুটি ফটোর মতন দেখায়, কিন্তু নিকট দৃষ্টিতে দেখা যায় যে, তাহা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিন্দুর সমষ্টি। এখন এই দানাযুক্ত ছবি বিশিষ্ট ধাতু ফলককে এচ্‌ করিলে বিন্দুগুলি ভিন্ন অন্য স্থল গর্ত হইয়া যায়। তাহা হইলেই হাফটোন রক প্রস্তুত হয়।

 হাফটোন্ ছবি খুব বেশি দিন প্রচারিত হয় নাই; কিন্তু ইহার মধ্যেই এতদ্বারা সচিত্র পুস্তকাদির ব্যবসায়ে যুগান্তর উপস্থিত হইয়াছে। যে সকল গুণে এই শ্রেণীর ছবি লোকের এত প্রিয় হইয়াছে, তাহা এই—

 ১। ইহাতে অবিকল আদর্শের অনুরূপ ফল পাওয়া যায়। উড় এনগ্রেভারের নিকট এ বিষয়ে সকল সময়ে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় না।

 ২। আল্পসময়ে কাজ হয়।

 ৩। সস্তায় কাজ হয়।

 ৪। ভাল হাফটোন ছবি দেখিতে যারপরনাই মোলায়েম হয়।

 পক্ষান্তরে হাফটোন ছবির কতগুলি ক্রটি আছে যথা—

 ১। হাফটোন ছবির দানা ঐরূপ শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়াতে দেখিতে একটু অস্বাভাবিক দেখায়। খুব সরু স্ক্রীন ব্যবহার করিয়া এই দোষ নিবারণ করা যায়, কারণ দানা খুব সরু হইলে তাহা

মালুম হয় না। কিন্তু ইহাতে ছাপিবার হাঙ্গামা ও খরচা বাড়িয়া যায়।

 ২। ছবিখানি আদর্শের চাইতে ঝাপসা হয়। যত মোটা স্ত্রীন ব্যবহার করা যায়, এ দোষ ততই অধিক পরিমাণে দেখা যায়। খুব সরু স্ত্রীনে ইহা প্রায় দেখা যায় না।

 ৩। ছবির উজ্জ্বল স্থানগুলিতে আলো ও ছায়ার তারতম্য তেমনভাবে রাখা যায় না। হাতে কাজ করিয়া ইহার আংশিক প্রতিকার হইতে পারে,কিন্তু তাহা সকল সময় বাঞ্ছনীয় নহে। কারণ তাহাতে চেহারা বদলাইয়া যাওয়ায় আশঙ্কা আছে।

 ৪। হাফটোন ছবি মাত্রেরই কাজ খুব সূক্ষ্ম:সুতরাং তাহা ছাপিতে পরিশ্রম ও ব্যয় বেশী পড়ে। ভাল কাগজ, ভাল কালি, ভাল ছাপা না হইলে ভাল হাফটোন্ ছবি হয় না।

 এই সকল দোষগুণের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া সহজেই বোঝা যাইতে পারে যে উড্কাট্‌ অপেক্ষা হাফটোন ছবি কোন বিষয়ে শ্রেষ্ঠ, আর কোন বিষয়ে নিকৃষ্ট। উড্কাট্‌ ছাপিতে মুশকিল নাই, আর তাহাতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম খুঁটিনাটি সহজেই দেখান যায়। সুতরাং ছোট ছোট জিনিসের পরিষ্কার আভাস দিতে হইলে, আর অল্প ব্যয়ে ছাপিবার দরকার হইলে, উড্কাট্‌ ব্যবহার করাই প্রশস্ত। সাধারণতঃ দোকানদারের ক্যাটালগে, অল্প মূল্যের স্কুলপাঠ্য বহি, ইত্যাদিতে উড্কাটই বেশী ফল দেয়। (এ স্থলে একটা কথা বলা আবশ্যক। ফটোগ্রাফীর সাহায্যে হাফটোন ভিন্ন অন্য এক প্রকারের ব্লক প্রস্তুত হইতে পারে। আদর্শটি এইরূপভাবে অঙ্কিত করা যাইতে পারে যে, তাহাতে ব্লক করিতে আর স্ত্রীনের সাহায্যে দানা ফলাইবার প্রয়োজন হয় না। সাদা কাগজে, গাঢ় কৃষ্ণ কালিতে কলমের দ্বারা ছবি আঁকিলে, সে ছবি এই শ্রেণীর হয়। ফটো এনগ্রেভিং প্রণালীতে এইরূপ ছবি হইতে অবিকল আদর্শের অনুরূপ ব্লক প্রস্তুত হয়; তেমন ব্লক উড এনগ্রেভিং দ্বারা হওয়া সম্ভব নহে। অবশ্য, ইহাকে হাফটোন ব্লক বলে না, ইহার নাম লাইন ব্লক’। ভাল কালি কলমের’ ছবি আদর্শ হইলে তাহ হইতে উড়কাট্‌ না করাইয়া লাইন ব্লক করাইলে অধিকতর সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়।)

 কিন্তু যেখানে সুন্দর মোলায়েম ছবি চাই, চেহারা অক্ষুণ্ণ থাকা চাই, খরচপত্র পরিশ্রমে আপত্তি নাই, একটু ঝাপসা হইলেও ক্ষতি নাই, সেখানে হাফটোনের দরকার।

 অবশেষে, যদি বেয়াদবি না হয়, তবে হাফটোন্ ব্লকের ভাল মন্দ কিসে হয়, তৎসম্বন্ধে কিঞ্চিৎ নিবেদন করি। আদর্শের শেড়লাইট—বিশেষতঃ উজ্জ্বল স্থানগুলিতে—যে পরিমাণে রক্ষিত হইবে, সেই পরিমাণে ব্লকটিকে ভাল বলিব। ইহার উপরে ছবিখানি দেখিতে যত মোলায়েম হইবে, ততই তাহ আরও উঁচুদরের হইবে। অতঃপর (মুদ্রাকরের দিক হইতে) ছাপিবার সময় যে ব্লকখানি যত কম নাকাল করিবে, অবশ্য তাহা এক হিসাবে ততই প্রশংসনীয় হইবে। কিন্তু এই শেষ কথাটার সম্বন্ধে একটু বক্তব্য এই যে, ছবি খুব মোলায়েম রাখা, আর মুদ্রাকরকে ষোল আনা সস্তুষ্ট করা, এ দুটি ব্যাপার এক সময়ে ঘটান সুকঠিন। মুদ্রাকরের যন্ত্র, মালমসলা এবং যোগ্যতা যথোচিত হইলে এ বিষয়ে চিন্তার কারণ থাকে না বটে, কিন্তু এ দেশকালে তাহ সচরাচর ঘটে কই?

 যেমন তেমন একটা হাফটেন ব্লক প্রস্তুত করা অতি সহজ কাজ কিন্তু আদর্শের মর্যাদা রক্ষা করিয়া ছবিখানিকে মোলায়েম করা একটু বেশী রকমের কঠিন।