ঋষি রবীন্দ্রনাথ/১৮
(১৮)
এতাবৎ রবীন্দ্রনাথের যে কয়টি আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বিচার ও বিশ্লেষণ করা হইয়াছে, তাহা হইতে গীতাঞ্জলি একেবারে স্বতন্ত্র ও বিশেষ। রবীন্দ্রনাথের ভাষণ, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র ইত্যাদি হইতেই তাঁহার উপলব্ধিসমূহের বিবরণ পাওয়া যায়। পাঠক, শ্রোতা, পত্রপ্রাপক প্রভৃতিকেই তিনি এই বিবরণ পরিবেষণ করিয়াছেন। তাঁহার আত্মোপলব্ধি সম্বন্ধে ইহাকে বলা যাইতে পারে অপরের সঙ্গে আলাপ। এই আলাপের আসরে সকলেরই অবারিত দ্বার।
কিন্তু গীতাঞ্জলি ইহা হইতে স্বতন্ত্র। গীতাঞ্জলি জনসভার ভাষণ, সাধারণ্যে প্রকাশিত প্রবন্ধ, বন্ধু বা আত্মীয়ের নিকট লিখিত পত্র ইত্যাদি কিছুই নহে। এক কথায়, গীতাঞ্জলি রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বিবরণ নহে, ইহা তাহারও অধিক অন্য কিছু।
গীতাঞ্জলিকে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন,—‘এ আমার সত্যকার আত্মনিবেদন।’ ইহা আত্মনিবেদন, কিন্তু আত্মনিবেদনের বা আত্মোপলব্ধির বিবরণ নহে। কাহার নিকট রবীন্দ্রনাথের আত্মনিবেদন? সে প্রশ্নের উত্তর গীতাঞ্জলিতেই আমরা পাইব।
সত্তর বৎসর বয়সে জন্মজয়ন্তীতে প্রদত্ত তাঁহার ভাষণে রবীন্দ্রনাথ একস্থানে এই ‘আত্মনিবেদন’-এর কথা বলিয়াছেন, তাহা প্রসঙ্গত এখানে স্মরণ করা যাইতে পারে। সেখানে তিনি বলিয়াছেন যে, তাঁহার যাবতীয় কর্মে এবং কাব্যসৃষ্টিতে এই ঘোষণাটিই স্পষ্ট— “আমি কামনা করেছি মুক্তিকে, যে-মুক্তি পরম পুরুষের নিকট আত্মনিবেদনে।”
কে এই পরমপুরুষ? তিনিই এই পরমপুরুষ, যাঁহার নিকট আত্মনিবেদনেই কেবল মুক্তি সম্ভব হয়। ব্রহ্ম ভিন্ন মুক্তিদাতা দ্বিতীয় কেহ নাই, আর ‘পরমপুরুষ’ শব্দটিও ব্রহ্মবাচক। কাজেই, গীতাঞ্জলিকে ‘এ আমার সত্যকার আত্মনিবেদন’ বলার অর্থ মোটেই অস্পষ্ট নহে, এক কথায়, ভগবানের নিকট রবীন্দ্রনাথের আত্মনিবেদনেরই অপর নাম গীতাঞ্জলি।
রবীন্দ্রনাথের পূর্বোক্ত উপলব্ধিসমূহের বিবরণ আর যাহাই হউক, তাহা ভগবানের নিকট আত্মনিবেদন নহে তাহা দশজনের নিকট সংবাদ নিবেদন মাত্র। কাজেই উপলব্ধির বিবরণ এবং ‘আত্মনিবেদন’ তথা ‘গীতাঞ্জলি’ যে এক শ্রেণীর ব্যাপার নহে, ইহা বিনা তর্কেই আমরা মানিয়া লইতে পারি। উপলব্ধির বিবরণের শ্রোতা বা লক্ষ্য হইলাম আমরা দশজন, আর গীতাঞ্জলির শ্রোতা হইলেন মাত্র ‘সেই একজন’। ইহাই হইল সংক্ষেপে উভয়ের মধ্যেকার উল্লিখিত পার্থক্য।
উপলব্ধির প্রসঙ্গ বাদ দিয়া এখন ‘গীতাঞ্জলি’র প্রসঙ্গে আসা যাইতেছে এবং ‘গীতাঞ্জলি’ সম্বন্ধে বক্তব্য একটু পরিষ্কার ও বিশদ করা যাইতেছে।
গীতাঞ্জলি সম্পর্কে প্রারম্ভেই আলোচনায় এইরূপ একটি অভিমত আমরা ব্যক্ত করিয়াছি যে, গীতা যদি ভগবানের ‘মে হৃদয়ং পার্থ’ হয়, তবে গীতাঞ্জলিকেও তেমনি রবীন্দ্রনাথের ‘মে হৃদয়ং’ বলা যাইতে পারে। ‘গীতা ও গীতাঞ্জলি’—নামক একটি প্রবন্ধে পূর্বে এই বিষয়ে যে-আলোচনা করিয়াছি, এই প্রসঙ্গে তাহা হইতে কিছুটা উদ্ধৃতি অসঙ্গত হইবে না। সেখানে এক স্থানে এই কথা বলা হইয়াছে—
“গীতা ও গীতাঞ্জলির মধ্যে নামসাদৃশ্যের ন্যায় একটি রূপ-সাদৃশ্যও বর্তমান। গীতাকে ভগবান বলিয়াছেন তাঁহার বাঙ্ময়ী রূপ, গীতাঞ্জলিকে বলা চলে ভক্তের সুরময়ী রূপে। গীতাকে বলা হইয়াছে ভগবানের হৃদয়-রস, গীতাঞ্জলিও তেমনি ভক্তের হৃদয়-রস। গীতার বক্তা ভগবান—শ্রোতা ভক্ত। আর গীতাঞ্জলির গায়ক ভক্ত—শ্রোতা ভগবান। ভগবান শুনাইয়াছেন—গীতা, ভক্ত শুনাইয়াছেন—গান। ভক্ত না থাকিলে গীতা ব্যর্থ, ভগবান না থাকিলে গীতাঞ্জলি মিথ্যা।”
ইহার সঙ্গে এখন সামান্য আর একটু যোগ করা যাইতেছে। আঠারো অধ্যায়ের গীতা শুনাইয়া শেষে আসিয়া সমস্ত গীতার সারমর্ম শ্রীভগবান তাঁহার ‘পরমগুহ্যতম বচনং মে’ বলিয়া জানাইয়াছেন,—‘সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ’— একমাত্র আমার শরণ লও। তাহারই প্রত্যুত্তরে রবীন্দ্রনাথের যে- আত্মনিবেদন তাহাই গীতাঞ্জলি।
গীতাঞ্জলিকে সাক্ষ্য হিসাবে বিচার্য ক্ষেত্রে উপস্থিত করিবার পটভূমিকাটাকু যথাসাধ্য সংক্ষেপে প্রস্তুত করা হইল।
রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞানের বা আত্মোপলব্ধির বিচারক্ষেত্রে একমাত্র উপনিষদেরই আশ্রয় বা সাহায্য আমরা গ্রহণ করিয়া আসিয়াছি। অর্থাৎ ‘ব্রহ্ম’- প্রসঙ্গে উপনিষদকেই একমাত্র প্রমাণ বলিয়া প্রধানত আমরা মান্য করিয়া আসিয়াছি। কিন্তু গীতাঞ্জলির ক্ষেত্রে উপনিষদ প্রকৃতই কোন কাজে আসিবে কিনা, এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ও সঙ্গত বলিয়াই অনেকের মনে হইবে। কারণ, গীতাঞ্জলিকে আমরা বলিয়াছি ভক্তের গান, যে-গানের শ্রোতা স্বয়ং ভগবান।
কাজেই দেখা যাইতেছে যে, গীতাঞ্জলির প্রসঙ্গে আমরা ‘ভক্তি’-র সম্মুখীন হইয়াছি। আমাদের বিচার্য হইল রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞান, আর রবীন্দ্রনাথের ভগবানে ভক্তি তথা ব্রহ্ম-ভক্তিকেই গীতাঞ্জলির মাধ্যমে আলোচ্যক্ষেত্রে আমরা আনিয়া ফেলিয়াছি।
ব্রহ্মজ্ঞানের সঙ্গে আমরা পরিচিত। কিন্তু ব্রহ্ম ভক্তির কোন প্রকাশ বা উল্লেখ উপনিষদে আছে কিনা, তাহাই এখন আমাদের অবশ্য বিচার্য এবং সেই বিষয়ে একটু অনুসন্ধান কর্তব্য। নতুবা গীতাঞ্জলিকে রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মজ্ঞানের প্রসঙ্গে বা বিচারে উপস্থিত করিবার কোন সযোগই আমাদের থাকে না। যথাসাধ্য সংক্ষেপেই আলোচনাটুকু শেষ করিবার চেষ্টা করা যাইতেছে।
উপনিষদকে ভগবান বেদব্যাস বলিয়াছেন ‘ব্রহ্মজিজ্ঞাসা’। জিজ্ঞাসা বলিতে জানা বা জ্ঞানের কথাই বুঝাইয়া থাকে। তাই দার্শনিকগণ উপনিষদকে জ্ঞানশাস্ত্র বলেন। আর ভক্তি বলিতে ভগবানের সঙ্গে হৃদয়ের বিশেষ একটি সম্পর্ককে বুঝাইয়া থাকে। কিম্বা ভক্তি বলিতে মনের একটি বিশেষ অবস্থাকেই বুঝাইয়া থাকে। সাধারণত ভক্তিশাস্ত্র বলিতে উপনিষদকে বাঝায় না, বুঝায় মহাভারত, গীতা, ভাগবত, বিষ্ণুপুরাণ প্রভৃতিকে
কাজেই ভক্তির প্রসঙ্গে উপনিষদকে প্রমাণরূপে গ্রহণের প্রচেষ্টা অসঙ্গত ও ব্যর্থ বলিয়াই অনেকে মনে করেন। ইহার উত্তরে আমাদের বক্তব্য এই যে, উপনিষদই ভক্তির মূল উৎস এবং ঔপনিষদিক প্রেমতত্ত্বই পূর্বোক্ত ভক্তিশাস্ত্রসমূহে বিশদ করা হইয়াছে মাত্র। এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে এখন কয়েকটি দৃষ্টান্ত বা প্রমাণ উপনিষদ হইতে উদ্ধৃত হইতেছে।
বৃহদারণ্যক নামক প্রাচীনতম উপনিষদে বলা হইয়াছে—“তদেতৎ প্রেয়ঃ পত্রাৎ প্রেয়ো বিত্তাৎ প্রেয়োঽন্যস্মাৎ সর্বস্মাদ্ অন্তরতরং যদয়ম।ত্ম”—যেহেতু এই আত্মা অন্তরতর, অন্য সমস্ত বস্তু অপেক্ষা নিকটতর, সেই হেতু ইহা পুত্র হইতে প্রিয়, বিত্ত হইতে প্রিয়, অন্য সমুদয় হইতে প্রিয়।”
আত্মা বা ব্রহ্মকে সর্ব কিছু হইতে প্রিয় বলার অর্থ, ইনিই “প্রিয়তম”। ব্রহ্মই প্রিয়তম—ইহাই হইল বৃহদারণ্যক উপনিষদের উপদেশ এবং প্রিয়তমের সঙ্গে জীবের যে সম্পর্ক, তাহারই নাম প্রেম। ব্রহ্ম বা ভগবানই যে প্রিয়তম এবং প্রিয়তমের জন্য জীবহৃদয়ের প্রেম যে কি বস্তু বা রস, তাঁহারই পরিচয় গীতাঞ্জলি বহন করিয়া থাকে।
ইহার পরেই পূর্বোক্ত উপনিষদের এই উপদেশ প্রদত্ত হইয়াছে, ‘আত্মানমেব প্রিয়মুপাসীত’—আত্মাকেই প্রিয়রূপে উপাসনা করিবে।
এখানেও পূর্বের ন্যায় বলিয়া রাখা যাইতেছে যে, আত্মাকে বা ভগবানকে প্রিয়রূপে পূজা, ভজন, বন্দনা, আস্বাদন ইত্যাদিরই প্রকাশরূপ গীতাঞ্জলি।
অতঃপর বৃহদারণ্যক উপনিষদের উপদিষ্ট প্রেমতত্ত্ব সম্বন্ধে চরম কথাটি উদ্ধৃত করা যাইতেছে। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য আপন স্ত্রী মৈত্রেয়ীকে বলিয়াছেন—
জগতে পতি, পত্নী, পুত্র, ধনসম্পত্তি ইত্যাদি আমাদের প্রিয় হয় কেন? কেনই বা জগৎ এবং তাহার বস্তুসমূহ প্রিয় বোধ হয়? ইহারা কেহই ইহাদের নিজেদের গুণে বা ধর্মে আমাদের প্রিয় হয় না। সর্ব প্রিয়তম যে আত্মা তিনিই ইহাদের সকলের অভ্যন্তরে বা অন্তরে রহিয়াছেন, তাই ইহারা প্রিয় হইয়া থাকে, “আত্মনস্তু কামায় সর্বং প্রিয়ং ভবতি”—আত্মারই কামনায় এই সবকিছু প্রিয় হইয়া থাকে।
প্রিয়তম এই আত্মা সর্ববস্তুতে সর্বরূপে কিভাবে প্রিয়-প্রকাশ গ্রহণ করিয়াছেন, তাহারই প্রিয় রসাস্বাদন গীতাঞ্জলি, পূর্বের ন্যায় এখানেও উল্লেখ করা যাইতেছে।
অন্যভাবেও ঔপনিষদিক ভক্তি বা প্রেমতত্ত্বকে দেখা যাইতে পারে। জীবের মুক্তি কামনা রহিয়াছে, মোক্ষের প্রয়াস রহিয়াছে; অপরদিকে এই মুক্তি, মোক্ষ ইত্যাদির জন্য জীবের প্রতি ব্রহ্মের আকর্ষণও রহিয়াছে। নতুবা মুক্তি, মোক্ষ, যোগ ইত্যাদি অর্থহীন হইয়া পড়ে। জীবের প্রতি ব্রহ্মের প্রেম এবং ব্রহ্মের প্রতি জীবের প্রেম, ইহা সত্য বলিয়াই মুক্তি, মোক্ষ ইত্যাদিও সত্য ও সম্ভবপর হইয়া থাকে। এইজন্যই উপনিষদে ঋষির প্রার্থনা—
অসতো মা সদ্গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মামৃতং গময়; রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্ ইতাদি॥
প্রশ্নোপনিষদে ব্রহ্মকে পিতা ও মাতা বলিয়া সম্বোধন রহিয়াছে। মুণ্ডকোপনিষদে একই দেহবৃক্ষে ব্রহ্ম এবং জীবকে সখ্য সম্পর্কে যুক্ত দুইটি পক্ষী বলা হইয়াছে। ব্রহ্মকে পিতা, মাতা, সখা, প্রিয়তম ইত্যাদি উপদেশে ভক্তি এবং প্রেমতত্ত্বই বিবৃত হইয়াছে। ব্রহ্মকে বলা হইয়াছে, ‘রসস্বরূপ, এই রসস্বরূপকে পাইয়াই তবে জীব আনন্দিত হয়।’
এই রস-স্বরূপ, এই প্রিয়তম ব্রহ্ম বা ভগবানের সঙ্গে জীবের যে প্রেমসম্পর্ক, তাহারই অত্যুজ্জল রসমূর্তি গীতাঞ্জলি, একথাও শুধু উল্লেখ করিয়া রাখা গেল।
গীতাঞ্জলিকে রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন ভগবানের নিকট আত্মনিবেদন। এই আত্মনিবেদন যে উপনিষদেরই উপদিষ্ট ব্রহ্ম সম্পর্কে, তাহার প্রমাণ পূর্বোক্ত উদ্ধৃতিসমূহেই পাওয়া গিয়াছে। অর্থাৎ ভক্তি, প্রেম ইত্যাদি উপনিষদেরই উপদেশ, ইহা আমরা দেখিয়াছি এবং গীতাঞ্জলিকে এই ভক্তি, প্রেম ইত্যাদিরই উজ্জ্বল রসরূপ বলিয়া আমরা অভিহিত করিয়াছি। কাজেই গীতাঞ্জলিকে আলোচ্য ক্ষেত্রে সাক্ষ্যরূপে উপস্থিত করিবার আদেশ উপনিষদের উপদেশেই আমরা পাইতেছি।
অপর একটি অসুবিধার কথা এখন উল্লেখ করা যাইতেছে—
উপনিষদে ব্রহ্ম সম্বন্ধে উপদেশ পাওয়া যায়, ব্রহ্মপ্রাপ্তির ফলও জানা যায়, কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের জীবনযাত্রার কোন চিত্র পাওয়া যায় না। ব্রহ্মকে জানার পর ব্রহ্মজ্ঞ পুরষের চরিত্রচিত্র কিরপ হইয়া থাকে, সে-বিবরণ মহাভারত, ভাগবত, পুরাণাদি শাস্ত্রেই বিশদভাবে পাওয়া যায়, উপনিষদে তাহার সন্ধান পাওয়া যায় না।
অবশ্য, ব্রহ্মজ্ঞের জীবনের মূল সূত্রগুলি উপনিষদেই পাওয়া যায়। কিন্তু তাহা বড় জোর তাঁহাদের জীবনের স্বরলিপি মাত্র, তাহা তাঁহাদের জীবন-সঙ্গীত নহে। বাড়ির নক্সা হইতে একটা বাড়ি যে নির্মাণ না করা যাইতে পারে, এমন নহে। কিন্তু উপনিষদ হইতে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের জীবনসূত্র লইয়া রক্তমাংসের জীবন্ত মানুষ গড়িতে পারে, এমন স্রষ্টা বিশ্বকর্মা সুদুর্লভ। এই বিষয়ে মহাভারত, ভাগবত, পুরাণাদিতে যে-চিত্র পাওয়া যায়, তাহাই আমাদের একমাত্র সম্বল ও আশ্রয়।
গীতার উপদেশ হইতে যেমন ভগবানের জীবন-চরিত্র অঙ্কিত করা চলে না, উপনিষদের ব্রহ্ম উপদেশ বা ব্রহ্ম সূত্র হইতেও তেমনি ব্রহ্মজ্ঞ ঋষির জীবনকাহিনী অঙ্কিত করা সম্ভব নহে, ইহাই আমরা বলিতে চাহিয়াছি।
প্রামাণ্য উপনিষদ কয়খানির মধ্যে একমাত্র তৈত্তিরীয় উপনিষদে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের একটি রেখাচিত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের সেই চিত্রটি এই— “ইমাল্লোকান কামান্নী কামরূপ্যনুসঞ্চরন্। এতৎ সামগায়ন্নাস্তে হা৩ বু, হা৩ বু, হা৩ বু॥—পরিশেষে যথেচ্ছ অন্ন ও রূপ প্রাপ্ত হইয়া এই পৃথিব্যাদি লোকে পর্যটন করেন এবং ব্রহ্মসাম্য কীর্তন করত আহা-আহা-আহা এই শব্দ উচ্চারণ দ্বারা বিস্ময় প্রকাশপূর্বক অবস্থান করেন॥”
বিশেষভাবে এই পরম বিস্ময়ের ও ব্রহ্মবন্দনারই বাস্তব প্রকাশ রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। অতীতের ঋষির এই ঔপনিষদিক চিত্রখানিই বর্তমানকালে গীতাঞ্জলির রবীন্দ্রনাথ।