ঋষি রবীন্দ্রনাথ

ঋষি রবীন্দ্রনাথ

অমলেন্দু দাশগুপ্ত

জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেড
১১৯, ধর্মতলা স্ট্রীট, কলিকাতা

প্র কা শ ক: শ্রীসুরেশচন্দ্র দাস, এম-এ
জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিঃ
১১৯, ধ র্ম ত লা স্ট্রী ট, ক লি কা তা

প্রথম সংস্করণ

শ্রীঅক্ষয় তৃতীয়া, ১৩৬১

মূল্য তিন টাকা

জেনারেল প্রিণ্টার্স য়্যাণ্ড পাব্লিশার্স লিমিটেডের
মুদ্রণ বিভাগে [ অবিনাশ প্রেস—১১৯, ধর্মতলা স্ট্রীট,
কলিকাতা ] শ্রীসুরেশচন্দ্র দাস, এম-এ কর্তৃক মুদ্রিত

রচনাটি ‘দেশ’ পত্রিকায় ১৩৬০ সালের ২৩শে শ্রাবণ হইতে ২৩শে আশ্বিন ধারাবাহিক প্রকাশিত হইয়াছিল।

 শ্রীঅক্ষয় তৃতীয়া, ১৩৬১ সাল

 ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস আজ জাতীয় উৎসবের পর্যায়ে উন্নীত হইয়াছে। লক্ষ্য করিলে দেখা যাইবে যে, রবীন্দ্রনাথের বিশেষ একটি পরিচয়ই প্রাধান্য লইয়া উত্তরোত্তর পুরোভাগে আগমন করিতেছে, সে-পরিচয়টি হইল— রবীন্দ্রনাথ এ-যুগে উপনিষদের ঋষি। ঋষি শব্দটি বিশেষ অর্থ বহন করিয়া থাকে। ঋষি অর্থে সত্যদ্রষ্টাকে বুঝাইয়া থাকে। যিনি ব্রহ্মকে জানিয়াছেন, তিনিই ঋষি। রবীন্দ্রনাথকে এই অর্থেই ঋষি বলা হইয়া থাকে।

 অনেকেই প্রশ্ন করিয়া থাকেন, রবীন্দ্রনাথ কি ব্রহ্মজ্ঞ? প্রশ্নটি জিজ্ঞাসার মধ্যে কোন অবিশ্বাস, সন্দেহ, প্রতিবাদ ইত্যাদি সূচিত হয় না। রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়িয়া, গান শুনিয়া সকলের মনেই এই ধারণা হইয়া থাকে যে, তিনি সত্যদ্রষ্টা ঋষি এবং তাঁহাকে ব্রহ্মজ্ঞ বলিয়াই সকলে বিশ্বাস করিয়া থাকেন। কিন্তু বিশ্বাস তো প্রমাণ নহে, তাই তাঁহাদের এই বিশ্বাসের সমর্থনে কোন প্রমাণ আছে কি না, ইহা জানিবার জন্যই উক্ত প্রশ্নটি জিজ্ঞাসিত হইয়া থাকে।

 রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি সম্পর্কে বহু পুস্তক রচিত হইয়াছে। রবীন্দ্রদর্শন সম্বন্ধে বিশ্ববিখ্যাত মনীষী ডাঃ রাধাকৃষ্ণণ এবং ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তও পুস্তক রচনা করিয়াছেন। উভয়েই তাঁহাকে ঋষি বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের এই স্বীকৃতি রবীন্দ্রনাথের মতবাদ, রবীন্দ্রনাথের রচনা ইত্যাদির ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ, ইহা প্রমাণের চেষ্টা উভয়ের কেহই করেন নাই, ঋষিরূপে তাঁহাকে স্বীকার করিয়া লইয়া তাঁহারা রবীন্দ্রদর্শন ও বাণীরই ব্যাখ্যা বা ভাষ্য করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আরও অনেকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রহিয়াছে, কিন্তু কোন গ্রন্থেই বিশেষভাবে এই প্রশ্নটিকে গ্রহণ করিয়া ইহার মীমাংসার চেষ্টা করা হয় নাই। রবীন্দ্র-জীবনীও কয়েকখানা রহিয়াছে, তাহাতেও পূর্বোক্ত প্রশ্নের কোন আলোচনা পরিদৃষ্ট হয় না।

 বলা বাহুল্য, প্রশ্নটি বস্তুতই কঠিন প্রশ্ন। কেহ ব্রহ্মজ্ঞ কি না, এ-প্রমাণ কে দিবে? তাহা ছাড়া ব্রহ্মজ্ঞ প্রমাণ-নির্ভর, এমন কথাও বলা চলে না। ব্রহ্ম আছেন, ইহাই কেহ প্রমাণ করিতে পারেন না, কারণ ব্রহ্ম প্রমাণের অতীত। যাঁহাকে প্রমাণ করা যায় না, সেই ব্রহ্মকে কেহ জানিয়াছেন কি না, ইহাও প্রমাণ করা স্বভাবতই সমান সাধ্যাতীত। সাধকগণ বড়জোর এই কথাই বলিতে পারেন এবং বলিয়া থাকেন যে, ব্রহ্মকে জানা যায়, তাঁহাকে পাওয়া যায় এবং অনেকেই বলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহারা তাঁহাকে জানিয়াছেন। তাঁহাদের আত্মোপলব্ধিই এই বিষয়ে একমাত্র প্রমাণ।

 কিন্তু সে-প্রমাণও একান্তভাবে তাঁহাদের ব্যক্তিগত উপলব্ধিতেই আবদ্ধ, তাঁহারাও সে-প্রমাণকে বাহিরে আনিতে পারেন নাই। কাজেই রবীন্দ্রনাথ ঋষি, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ, ইহা প্রমাণ করা কাহারও পক্ষে সম্ভবপর নহে। শুধু ব্রহ্মজ্ঞ ব্যক্তিই জানিতে পারেন যে, রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মজ্ঞ কি না। কিন্তু তাঁহাদের সে-জানাটাও প্রমাণ করা অসাধ্য ও অসম্ভব।

 রবীন্দ্রনাথ ঋষি, তিনি ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ, আমাদের এই বিশ্বাসের তবে কি কোন প্রমাণই পাওয়া সম্ভবপর নহে? সে-প্রমাণ পাওয়া একেবারে অসম্ভব ব্যাপার বলিয়া আমি মনে করি না। কেন, তাহাই প্রথমে সংক্ষেপে একটু আলোচনা করা যাইতেছে।

 ব্রহ্মসূত্রে ব্রহ্মের পরিচয়ে বলা হইয়াছে—“জন্মাদ্যস্য যতঃ”, এই অচিন্ত্য বিচিত্র বিশ্বের সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় যাঁহা হইতে, তিনিই সেই জিজ্ঞাসিত ব্রহ্ম। কিন্তু ইহা ব্রহ্ম সম্বন্ধে প্রমাণ নহে, শুধু লক্ষণ বা চিহ্ন। তেমনি ব্রহ্মজ্ঞ সম্বন্ধেও লক্ষণ বা চিহ্ন থাকে, তাহাই ব্রহ্মজ্ঞ সম্বন্ধে প্রমাণ বলিয়া স্বীকৃত হইয়া আসিয়াছে। ব্রহ্মজ্ঞের সে লক্ষণ বা চিহ্ন কি? ব্রহ্মোপলব্ধি বা আত্মোপলব্ধিই সেই লক্ষণ। দক্ষিণেশ্বরের পরমহংসদেব বলিয়াছেন যে, যখন নিজের উপলব্ধি এবং শাস্ত্রের বাক্য মিলিয়া যায়, তখনই সাধক সিদ্ধ হইয়াছে জানিবে। উপলব্ধি এবং শাস্ত্রবাক্য এই সঙ্কেতনির্দেশ গ্রহণ করিয়া অগ্রসর হইলেই রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত সেই প্রমাণ পাওয়া যাইতে পারে।

 কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, নিজের ব্যক্তিগত উপলব্ধি সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ অতি অল্প কথাই লিখিয়াছেন। তাঁহার আত্মজীবনীর পাঠকমাত্রেই লক্ষ্য করিয়া থাকিবেন যে, নিজের জীবনস্মৃতি রচনাতে তিনি নিজেকেই যথাসাধ্য আড়ালে রাখিয়াছেন, শুধু জীবনকেই গ্রহণ করিয়াছেন। নিজের সম্বন্ধে বলিতে তাঁহার ভদ্রমন এতই সঙ্কোচ ও দ্বিধাবোধ করিয়াছে যে, নিজের জীবনের ঘটনারও খুব কম উল্লেখই তিনি আপন জীবনস্মৃতিতে করিয়াছেন। সংযত ভদ্রমনের এতবড় পরিচয় আজ পর্যন্ত কোন আত্মজীবনীতেই দেখা যায় না এবং মনের এইরূপ আভিজাত্য লইয়া কম মানুষই পৃথিবীতে আসিয়াছেন।

 ধর্মগুরু, বা ধর্মপ্রচারকের ভূমিকা লইয়া রবীন্দ্রনাথ আসেন নাই, আসিয়াছেন কবিরূপে, তাই আপন জীবনের এই গভীরতম দিকটি তিনি নিকটতম জনের নিকট হইতেও একান্তভাবে গোপন রাখিয়াছেন। তথাপি শ্রম ও অধ্যবসায় লইয়া অগ্রসর হইলে তাঁহার ব্যক্তিগত উপলব্ধির বিবরণ কিছু কিছু সংগ্রহ যে না করা যায়, এমন নহে। কোন অধিকারী পুরুষ যদি এই বিষয়ে অগ্রসর হন, তবে রবীন্দ্রনাথের ঋষি-জীবনী এক পরম সম্পদরূপেই তিনি দেশবাসীকে দিয়া যাইতে পারেন। রবীন্দ্রনাথের ঋষি-জীবনের সামান্য একটু দিগদর্শনের চেষ্টা মাত্র এখানে করা যাইতেছে।

পরিচ্ছেদসমূহ (মূল গ্রন্থে নেই)

সূচীপত্র

পরিচ্ছেদ 
 পৃষ্ঠা
 
 
 
 
 
 ১৩
 
 ২০
 
 ২৪
 
 ২৮
 
 ৩৩
 
 ৪০
 
 ৪৫
 ৫২
 ৫৭
 ৬১
 ৬৪
 ৭০
 ৭৪
 ৮০
 ৮৫
 ৯০
 ৯৬
 ১০৩

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।