এখন যাঁদের দেখছি/চন্দ্রাবতী

পঁয়ত্রিশ

চন্দ্রাবতী

 বেশ কিছুকাল আগেকার কথা। সুকিয়া ষ্ট্রীট অঞ্চলের একটি গলিতে এক সাহিত্যিক বন্ধুর বাড়ীতে ব’সে গল্প করছিলুম। হঠাৎ সামনের বাড়ীতে দেখলুম দুটি সুন্দরী তরুণীকে। বন্ধুর কাছে মেয়ে দুটির পরিচয় জানতে চাইলুম।

 বন্ধু বললেন, “বড়টির নাম কঙ্কাবতী, ছোটটির নাম চন্দ্রাবতী। মেয়ে দুটি কেবল রূপসী নয়, বিদূষীও।”

 তার কিছু কাল পরে কঙ্কাবতীর দেখা পেলুম “নাট্যমন্দিরে। তাঁর সঙ্গে আলাপ পরিচয় হ’ল। দেখলুম, এম-এ পড়তে পড়তে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর জ্ঞানার্জনের স্পৃহা কিছুমাত্র কমে নি। অবসর পেলেই ইংরেজী ও বাংলা নানা শ্রেণীর পুস্তক নিয়ে নিযুক্ত হয়ে থাকেন।

 কঙ্কাবতী অল্পদিনের মধ্যেই অভিনেত্রী ও সুগায়িকা ব’লে নাট্যজগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। কিন্তু বহুকাল পর্যন্ত চন্দ্রাবতী থেকে যান লোকের চোখের আড়ালে, তাঁর মধ্যেও যে উপ্ত আছে নাট্যবীজ, কেউ করতে পারে নি এ সন্দেহ। বৃথাই নষ্ট করেছেন তিনি জীবনের কয়েকটি মূল্যবান বৎসর।

 রাধা ফিল্ম “দক্ষযজ্ঞ” ছবি তুলেছেন কত বৎসর আগে? ঠিক মনে পড়ছে না, ঊনিশ-কুড়ি বৎসর হবে হয়তো। আমার উপরে পড়েছিল গান রচনার, চিত্রনাট্য পরিবর্তন, পরিবর্জন ও পরিবর্ধনের এবং নৃত্য পরিকল্পনার ভার। দৃশ্য-সংস্থাপককেও সাহায্য করেছিলুম অল্পবিস্তর।

 চন্দ্রাবতী নির্বাচিত হ’লেন সতীর ভূমিকার জন্যে। স্টুডিয়োয় তাঁর সঙ্গে প্রথম মৌখিক আলাপ হ’ল। বেশ ধীর, স্থির, শান্ত, নম্র মেয়েটি। মহলা দেখে বুঝলুম, তাঁর মধ্যে আছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। গানের গলাও ভালো।

 মেয়েদের নাচ শেখাতে শুরু করেছি, এমন সময়ে চন্দ্রাবতী বললেন, “হেমেন্দ্রবাবু সতী কি নাচতে পারেন?”

 —“কেন পারবেন না?”

 -“তাহ’লে আমিও নাচতে চাই।”

 “বেশ তো, সে ব্যবস্থাও হবে।”

 কিন্তু সে যাত্রা চন্দ্রাবতীকেও নাচতে হয় নি, আমাকেও নৃত্য পরিকল্পনা সুরু ক’রেই ক্ষান্ত হ’তে হয়েছিল। কারণ বলি।

 তার আগে চন্দ্রাবতী কোন দিন নাচেন নি। কিন্তু সেজন্যে ছিল না আমার কিছুমাত্র দুশ্চিন্তা। কারণ একাধিক নৃত্যে অনভিজ্ঞা তরুণীকে অল্পদিনের ভিতরেই আমি নাচে পোক্ত (অন্ততঃ কাজ চালাবার উপযোগী) ক’রে তুলতে পেরেছি। কিন্তু গোল বাধল অন্য কারণে।

 আমার পরিল্পনা অনুসারে চন্দ্রাবতী নাচ অভ্যাস করলেন দুই কি তিন দিন। তার পরেই বেঁকে ব’সে বললেন, “ও নাচ-টাচ আমার দ্বারা হবে না।”

 আমি বললুম, “ব্যাপার কি?”

 চন্দ্রাবতী বললেন, “নাচলে যে গায়ে এত ব্যথা হয়, আমি তা জানতুম না। উঃ, আমার সর্বাঙ্গ ফোড়ার মত টাটিয়ে উঠেছে। বাবা, আমার আর নাচ শিখে কাজ নেই।”।

 চন্দ্রাবতী পৃষ্ঠভঙ্গ দিলেন, আমাকেও দিতে হ’ল অন্য কারণে।

 প্রাচীন ভাস্কর্য থেকে আদর্শ সংগ্রহ ক’রে আমি সতীর কবরীর জন্যে করেছিলুম একটি বিশেষ পরিকল্পনা। কিন্তু স্টুডিয়োর বেশকার সে রকম কেশবিন্যাসে অভ্যস্ত ছিল না, সে চেষ্টা ক’রেও শেষটা নিজের অক্ষমতা জানাতে বাধ্য হ’ল। অগত্যা আমাকেই উপস্থিত থাকতে হ’ল সাজঘরে এবং আমার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে বেশকার অবশেষে বহুক্ষণের পর সেই বিশেষ ধরণের কবরীটি রচনা করতে পারলে। সে ধাঁজে খোঁপা বেঁধে চন্দ্রাবতীকে দেখাচ্ছিল চমৎকার।

 ছবি তোলার সময়ে ‘সেটে’ গিয়ে দেখি, সতীর মাথায় ঘোমটা, আমাদের এত যত্নশ্রমে বাঁধা কবরী অদৃশ্য!

 বিস্মিত হ’য়ে জিজ্ঞাসা করলুম, “সতীর মাথায় কাপড় কেন?”

 স্টুডিয়োর অধ্যক্ষ মুরুব্বির মত বললেন, “হিন্দুর মেয়ে, মাথায় ঘোমটা থাকবে না?”

 আমি বললুম, “সতী হচ্ছেন হিমালয়কন্যা, সেখানকার মেয়েরা আজও মাথায় ঘোমটা দেয় না।”

 ভদ্রলোক তবু নিজের গোঁ ছাড়তে নারাজ। তাঁর অজ্ঞতা দেখে আমারও মেজাজ গেল বিগড়ে। তৎক্ষণাৎ স্টুডিয়ো ছেড়ে চলে এলুম। আর ওদিক মাড়াই নি।

 “দক্ষযজ্ঞ” পালাটি অত্যন্ত লোকপ্রিয় হয়ে ছবির মালিকের ঘরে আনলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা এবং সেই সময় থেকেই চিত্রাভিনেত্রীরূপে চন্দ্রাবতীর আসন হয়ে গেল সুপ্রতিষ্ঠিত।

 কিছুকাল পরে আবার চন্দ্রাবতীর সংস্রবে আসতে হ’ল। এক ভদ্রলোক খুব ফলাও করে নূতন একটি চিত্রপ্রতিষ্ঠান গ’ড়ে তুলবেন বলে ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডে প্রকাণ্ড এক বাগান ভাড়া নিয়ে বসলেন, আজ পর্যন্ত আর কোন চিত্র-সম্প্রদায় অত বড় বাগান বা জমির অধিকারী হ’তে পারেন নি। স্টুডিয়ো নির্মাণের কাজও সুরু হয়ে গেল। ছবির জন্যে নির্বাচিত হ’ল মৎপ্রণীত “ঝড়ের যাত্রী” উপন্যাস। চন্দ্রাবতীকে দেওয়া হ’ল নায়িকার ভূমিকা এবং পরিচালনার ভার গ্রহণ করলেন শ্রীহেমচন্দ্র চন্দ্র। একে একে অন্যান্য শিল্পীরাও নির্বাচিত হ’তে লাগলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা স্বর্গীয় রাধিকানন্দ মুখোপাধ্যায়ও। আমরা প্রায়ই সবাই মিলে সেখানে গিয়ে করতুম প্রভূত জল্পনা-কল্পনা। নিমন্ত্রিতদের এনে ভূরিভোজনের ব্যবস্থাও যে হয় নি, এমন মনে ক’রবেন না। কিন্তু গর্জন হ’ল বিস্তর, বর্ষণ হ’ল সামান্য। মালিক ছিলেন ভিতর-ফোঁপরা, দুদিনেই কাবু হয়ে পড়লেন। নিজস্ব স্টুডিয়ো নির্মাণের কাজ বন্ধ হ’য়ে গেল। শেষ পর্যন্ত অরোরা ফিল্ম স্টুডিয়োতে ছবি তোলা হ’তে লাগল বটে, কিন্তু ছবির কাজ শেষ হবার আগেই মালিক হ’লেন একেবারে ফতুর। সেই অসমাপ্ত ছবিখানি আজও অরোরা ফিল্মের গুদামঘরে বন্দী হয়ে আছে। “অরোরা”র স্বত্বাধিকারী স্বর্গীয় বন্ধুবর অনাদিনাথ বসু আমাকে ছবিখানার জন্যে একটা ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন, কিন্তু কোন ব্যবস্থাই হয় নি। তাকে আজ আর কেউ কাজে লাগাতেও পারবেন না। কারণ নায়িকার ভূমিকায় চন্দ্রাবতীকে আর নামানো চলবে না, আজকের চন্দ্রাবতীর সঙ্গে আগেকার চন্দ্রাবতীর দৈহিক পার্থক্য আছে যথেষ্ট। অন্যান্য নট-নটীদের সম্বন্ধেও ঐ কথা। কেউ কেউ গিয়েছেন পরলোকে। ছবি শেষ করতে হ’লে প্রেততত্ত্ববিদদের সাহায্যে তাঁদের পরলোক থেকে টেনে আনতে হয়।

 প্রসঙ্গক্রমে ব’লে রাখি, “ঝড়ের যাত্রী”র দুর্ভাগ্য ঐখানেই ফুরিয়ে যায় নি। আর একজন প্রয়োজক নূতন নূতন নট-নটীর সাহায্যে আবার ঐ উপন্যাসখানির চিত্ররূপ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যাঁর অর্থানুকূল্যে ছবি তোলবার কথা, কয়েক হাজার টাকা উড়ে যাবার পর তাঁরও মন থেকে ছবি তৈরি করবার উৎসাহ উপে যায় কর্পূরের মত।

 তারপর চন্দ্রাবতী দেখা দিয়েছেন ছবির পর ছবিতে, সেগুলির সংখ্যার হিসাব রাখি নি। কখনো নবীনা এবং কখনো প্রবীণার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তাঁর প্রত্যেক ভূমিকা দেখবার অবসর আমার হয়নি বটে, কিন্তু যতগুলি দেখেছি তার উপরে নির্ভর ক’রেই চন্দ্রাবতীর কলানৈপুণ্য সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট ধারণা করতে পেরেছি। তিনি সুন্দরী। কিন্তু কি সাধারণ রঙ্গালয়ে আর কি চিত্রজগতে কেবল দৈহিক সৌন্দর্যকে কোন দিনই অভিনয়ের মানদণ্ডরূপে গ্রহণ করা হয় নি। সুগঠিত তনু, সুশ্রী চেহারা ও মিষ্ট মুখ নিয়ে বহু তরুণীই পাদপ্রদীপের আলোকে বা ছবির পর্দায় দেখা দিয়েছেন, কিন্তু দর্শকদের চোখ ভুলিয়েও তাঁরা তাদের মনের উপর কিছুমাত্র রেখাপাত করতে পারেন নি। বিশ্ববিখ্যাত ফরাসী অভিনেত্রী সারা বার্নার্ড এবং এ দেশের তারাসুন্দরী ও সুশীলাবালা সুন্দরী ছিলেন না মোটেই। পাশ্চাত্য দেশের খ্যাতনামা চিত্রতারকাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কুরূপা না হ’লেও সুরূপা নন। তবে অভিনেত্রীরা যদি হন একসঙ্গে রূপসুন্দর ও গুণসুন্দর, তাহ’লে বেশী তাড়াতাড়ি তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন দর্শকদের হৃদয়ের উপরে। এ শ্রেণীর অভিনেত্রী সুলভ নন। চন্দ্রাবতী হচ্ছেন এই শ্রেণীর অভিনেত্রী। ভাবের অভিব্যক্তি দেখাবার বিস্ময়কর দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি। দিনে দিনে উন্নত হয়ে উঠেছে তাঁর কলানৈপুণ্য। বাংলা দেশের চিত্রাভিনেত্রীদের মধ্যে তাঁকে অতুলনীয়া বললেও অত্যুক্তি করা হবে না।

 আমার নিজস্ব একটি মত আছে। এর সঙ্গে সকলেরই ঐকমত হবে, এমন আশা করি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সাধারণ রঙ্গালয়ের অভিনয়ের চেয়ে চিত্রাভিনয় উচ্চশ্রেণীর নয় এবং তার প্রধান কারণ হচ্ছে, ছবির অভিনয়ে নেই সেই ধারাবাহিকতা, যার প্রসাদে আর্ট হ’য়ে ওঠে পূর্ণাঙ্গ। রঙ্গালয়ের অভিনয়কলা প্রথমে মুকুলিত হয়ে তারপর ধীরে ধীরে পাপড়ি ছড়িয়ে একটি গোটা ফুল হয়ে ফুটে ওঠে অবশেষে। নিজেদের আর্টের সূচনা থেকে ধারাবাহিকভাবে চরম পরিণতি দেখাবার ভার গ্রহণ করতে হয় মঞ্চাভিনেতাদের, তার মধ্যে আকস্মিকতা বা খাপছাড়া কোন কিছুই থাকতে পারে না।

 কিন্তু চিত্রাভিনেতাদের কর্তব্য হচ্ছে অন্যরকম। আদ্য-মধ্য–অন্ত নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না তাঁদের। গোড়াতেই তাঁরা হয়তো করেন শেষদিককার অভিনয়, আবার প্রথম অংশ দেখান হয়তো একেবারে সর্বশেষে এবং সবটাই তাঁদের দেখাতে হয় টুকরো টুকরো ক’রে। হঠাৎ হাসবার বা কাঁদবার বা চলবার ফেরবার নির্দেশ পেলে তাঁরা হাসেন বা কাঁদেন বা চলেন-ফেরেন। নিজেদের স্বাভাবিক ভাবের আবেগে বা অনুভূতি অনুসারে তাঁরা বেশী কিছু করতে পারেন না। অভিনেতাদের পক্ষে ছবির অভিনয় অনেকটা যেন পরের মুখে ঝাল খাওয়ার মত। তাঁরা যেন পরিচালকের হাতে কলের পাতুল। দর্শকরা ছবির মধ্যে যে ধারাবাহিকতার রস পায়, তার ভালো-মন্দ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কেবল পরিচালকের ও সম্পাদকের কৃতিত্বের উপরে। চিত্রাভিনয়ের ভুলত্রুটি শিল্পীরা অনায়াসে সুধরে নিতে পারেন, খারাপ অংশ বাতিল করে দ্বিতীয়বার বা তৃতীয়বার বা যতবার খুসি ছবি তোলা যায়, নটনটীদের ভুলচুক দর্শকদের চোখে পড়ে না, এ সুবিধা মঞ্চাভিনেতার নেই। এমনি সব নানা কারণে নিছক চিত্রনটরা মঞ্চের উপরে গিয়ে দাঁড়ালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের অত্যন্ত অসহায় ব’লে মনে করেন এবং অনেকেই হয়তো অভিনয়ই করতে পারবেন না।

 আমার বিশ্বাস, চন্দ্রাবতী এই শ্রেণীর অভিনেত্রী নন, মঞ্চে নামলেও দিতে পারবেন নিজের গুণের পরিচয়। এবং এই ধারণা পোষণ করতেন অধুনালুপ্ত “নাট্যভারতী”র সুযোগ্য কর্ণধার, বন্ধুবর শ্রীশিশিরকুমার মল্লিকও। শিশিরবাবু একদিন আমাকে একখানি নাটক লেখবার জন্যে অনুরোধ ক’রে বললেন, প্রধান ভূমিকায় তিনি হয়তো চন্দ্রাবতীকে নামাতে পারবেন। শুনে আমি উৎসাহিত হয়ে একখানি গীতিবহুল নাটক রচনা করেছিলুম, নাম তার “চোখের জল।” কিন্তু আমার চিত্রে রূপায়িত উপন্যাসের নায়িকার ভূমিকার মত আমার নাটকের নায়িকার ভূমিকাতেও মঞ্চের উপরে তাঁকে দেখবার সুযোগ আর হ’ল না। “নাট্যভারতী” ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু বাড়ীর মালিক রঙ্গালয়টিকে চিত্রগৃহে পরিণত করবেন ব’লে চলতি “নাট্যভারতী”র অস্তিত্ব হ’ল বিলুপ্ত, সেখানে আর আমার রচিত পালা খোলাও সম্ভব হ’ল না। সেই অনভিনীত নাটকের পাণ্ডুলিপি শিশিরবাবুর কাছেই গচ্ছিত আছে। আমার হয়েছে পণ্ডশ্রম।

 ব্যক্তিগত জীবনে চন্দ্রাবতী আমার কন্যার মত। আমার বাড়ীতে এসেছেন বহুবার। তাঁর সঙ্গে বাক্যালাপ ক’রে আনন্দ পেয়েছি, উপভোগ্য তাঁর আচরণ। আগে পূর্ণিমার চাঁদনি রাতে মাঝে মাঝে তিনি আমার কাছে আসতেন, গঙ্গাজলে জ্যোৎস্নার খেলা দেখবার জন্যে। তাঁকে নিয়ে ত্রিতলের ছাদে গিয়ে বসতুম, তিনি খুসি কণ্ঠে বলতেন, “কি চমৎকার জায়গায় আপনার বাড়ী!”

 আমি বলতুম, “চন্দ্রা, গান শোনাও।”

 চন্দ্রাবতী গাইতেন—

“সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।”

 তটিনীর কলতানের সঙ্গে চন্দ্রাবতীর কলকণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের কাব্যবাণী শুনতে শুনতে তাকিয়ে থাকতুম গঙ্গার বুকে উচ্ছলিত চন্দ্রাবলীর দিকে।