এখন যাঁদের দেখছি/দিলীপকুমার রায়
তেইশ
দিলীপকুমার রায়
দিলীপকুমারের পিতৃদেব প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারের কাহিনী মংলিখিত 'যাঁদের দেখেছি' পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে। সে বোধ হয় চুয়াল্লিশ কি পঁয়তাল্লিশ বৎসর আগেকার কথা—ঠিক তারিখ মনে নেই। সেই সময়েই আমি প্রথম দেখি দিলীপকুমারকে। আমি তখন তরুণ যুবক এবং দিলীপকুমার বালক।
তারিখের কথা ভুলেছি বটে, কিন্তু মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে সেদিনের ছবিটি।
একতলার বৈঠকখানা। উত্তর দিকের দেওয়াল ঘেঁষে একটি টেবিল, তার সামনে চেয়ারে আসীন দ্বিজেন্দ্রলাল। তাঁর দুই পাশে দণ্ডায়মান পুত্র দিলীপকুমার ও কন্যা মায়া দেবী। পূর্ব দিকে উপবিষ্ট আমরা—অর্থাৎ স্বর্গীয় কবিবর অক্ষয়কুমার বড়াল, 'অর্চনা' পত্রিকার সহকারী সম্পাদক স্বর্গীয় কৃষ্ণদাস চন্দ্র, সুকবি শ্রীফণীন্দ্রনাথ রায় ও আমি।
নট-নাট্যকার গিরিশচন্দ্র রাণা প্রতাপসিংহকে অবলম্বন ক’রে একখানি ঐতিহাসিক নাটক লিখতে সুর করেছিলেন। রচনাকার্য কিছুদূর অগ্রসর হবার পর তিনি খবর পান, দ্বিজেন্দ্রলালও রচনা করেছেন ‘রাণা প্রতাপ' নাটক। সঙ্গে সঙ্গে গিরিশচন্দ্র লেখনী ত্যাগ করেন। পরে সেই অসমাপ্ত নাটকখানি 'অর্চনা'র কয়েক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
কৃষ্ণদাসবাবু, 'অর্চনা'র সেই সংখ্যাগুলি দ্বিজেন্দ্রলালের সামনের টেবিলের উপরে স্থাপন করলেন। সাগ্রহে সেগুলিকে টেনে নিয়ে তৎক্ষণাৎ পাঠে নিযুক্ত হলেন বালক দিলীপকুমার।
দ্বিজেন্দ্রলাল আমাদের সঙ্গে বাক্যালাপ করতে লাগলেন। বাংলা দেশের ও বিলাতের অভিনয়কলা নিয়ে কিছু, কিছু, আলোচনা এবং স্যর হেনরি আর্ভিংয়ের সঙ্গে গিরিশচন্দ্রের তুলনাও করলেন। স্পষ্ট বললেন, আর্ভিংয়ের চেয়ে গিরিশচন্দ্র নিরেস অভিনয় করেন না।
পিতা যখন অভিনেতা হিসাবে গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে আর্ভিংয়ের তুলনায় নিযুক্ত, বালক দিলীপকুমারও তখন যে নাট্যকার হিসাবে গিরিশচন্দ্রের সঙ্গে নিজের পিতাকে তুলনা করতে ব্যস্ত হয়ে আছেন, সেটা টের পাওয়া গেল অবিলম্বেই।
হঠাৎ “অর্চনা” থেকে চোখ তুলে তিনি ব’লে উঠলেন, “বাবা, বাবা, গিরিশবাবর প্রতাপসিংহের চেয়ে তোমার ‘রাণা প্রতাপ' আরো ভালো বই হয়েছে!”
পুত্রের কাছ থেকে এই অযাচিত ও অলিখিত “সার্টিফিকেট” লাভ ক’রে দ্বিজেন্দ্রলাল সহাস্যে মুখ ফিরিয়ে করলেন দিলীপকুমারের দিকে সম্মেহ দৃষ্টিপাত। আমাদের সকলেরই মুখে ফুটল কৌতুকহাসি।
দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি কয়েকবার, কিন্তু আর কোনদিন পিতা ও পুত্রকে একসঙ্গে দেখিনি। দ্বিজেন্দ্রলালের পরলোকগমনের পরেও বহুকাল পর্যন্ত দিলীপকুমারের সঙ্গে আমার চোখোচোখি হয়নি। আবার যখন দেখা হ’ল, আমি তখন প্রৌঢ় ও দিলীপকুমার এসে দাঁড়িয়েছেন যৌবনের প্রান্তভাগে।
ইতিমধ্যে তাঁর খবর পেয়েছি মাঝে মাঝে। মন দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছেন। এঁর-ওঁর-তাঁর কাছে গান শিখছেন। গোড়ার দিকে তাঁর একজন সঙ্গীতশিক্ষক ছিলেন বকুবাবু, (তাঁর ভালো নামটি ঠিক মনে পড়ছে না, তিনি ছিলেন সুগায়ক এবং সাধারণ রঙ্গালয়ে অভিনেতারূপেও অল্পবিস্তর নাম কিনেছিলেন)। তারপর শুনলুম, দিলীপকুমার য়ুরোপে যাত্রা করেছেন।
য়ুরোপ প্রত্যাগত দিলীপকুমারকে অভিনন্দন দেবার জন্যে রামমোহন লাইব্রেরীতে এক সভার আয়োজন করা হয়। সেইখানে আবার তাঁর দেখা পাই এবং প্রথম তাঁর গান শুনি। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁর গানের ভক্ত হয়ে পড়ি। সেইদিনই বুঝতে পারি, সঙ্গীতসাধনায় তিনি সিদ্ধির পথে এগিয়ে গিয়েছেন কতখানি! তাঁর একটিমাত্র গানই তাঁকে উচুদরের শিল্পী ব’লে চিনিয়ে দিতে পারে।
তারপর এখানে ওখানে দিলীপকুমারের সঙ্গে দেখা হয়। আলাপ জমে। ক্রমে পরিচয় ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিজের গানের আসর বসলেই তিনি পত্র লিখে আমাকে আমন্ত্রণ করতে ভোলেন না। আমিও “সঙ্গীতসুধা তরে পিপাসিত চিত্ত” নিয়ে যথাস্থানে হাজিরা দিতে ভুলি না—কখনো একাকী এবং কখনো সপরিবারে। এই ভাবে তিনি যে কতদিন আমাদের আনন্দবিধান করেছেন, তার আর সংখ্যা হয় না।
দিলীপকুমারের সঙ্গীতশিক্ষা সুদৃঢ় ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত। তিনি কেবল সুবিখ্যাত সঙ্গীতাচার্যদের কাছে তালিম নিয়ে এলেম লাভ করেননি, গোটা ভারতবর্ষ ঘুরে এখানকার অধিকাংশ প্রথম শ্রেণীর ধুরন্ধর গায়ক-গায়িকার সঙ্গেও সম্বন্ধ স্থাপন করতে পেরেছেন। আমি যখন সাপ্তাহিক “বিজলী”র নিয়মিত লেখক, সেই সময়ে ঐ পত্রিকায় দিলীপকুমারের দেশে দেশে সফরের কাহিনী ও গায়ক-গায়িকাদের বিবরণী প্রকাশিত হ’ত। সেই পরম উপাদেয় রচনাগুলি আমি সাগ্রহে পাঠ করতুম। সেগুলি কেবল সুখপাঠ্য নয়, শিক্ষাপ্রদও বটে। উচ্চাঙ্গের ভারতীয় সঙ্গীত সম্বন্ধে দিলীপকুমার যে ধারণা পোষণ করেন, ঐ নিবন্ধগুলির মধ্যে তার বিশদ পরিচয় আছে। অধিকাংশ স্থলেই তাঁর ধারণার সঙ্গে আমার ধারণা মিলে যায় অবিকল।
কিন্তু কেবল ভারতীয় সঙ্গীতেই দিলীপকুমার প্রভূত অভিজ্ঞতা অর্জন করেননি, য়ুরোপে থাকতে যথেষ্ট জ্ঞান সঞ্চয় করেছেন পাশ্চাত্য সঙ্গীত সম্বন্ধেও। সেখানেও তিনি শুনেছেন অনেক ভালো ভালো শিল্পীর গান এবং তাঁদের কাছ থেকে শিখেছেনও যে অনেক কিছুই, এটকু অনুমান করাও কঠিন নয়।
তিনি হচ্ছেন বিখ্যাত পিতার বিখ্যাত পুত্র—চলতি কথায় যাকে বলে “বাপ কো বেটা”। তাঁর বাবা নাটক, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন, গান গেয়েছেন ও সুরসৃষ্টি করেছেন। দিলীপকুমারও ঔপন্যাসিক, কবি, প্রবন্ধকার, সুরকার ও গায়ক। নাটকও রচনা করেছেন একাধিক। এদেশে বহু পরিবারেই বংশানুক্রমে সঙ্গীতের অনুশীলন চলে। এ-সব পরিবারের শিল্পীদের বলা হয় “ঘরানা গায়ক”। দিলীপকুমারও তাই। কেবল তিনি ও তাঁর পিতা নন্, তাঁর পিতামহ কার্তিকেয়চন্দ্র রায়ও ছিলেন খ্যাতিমান সঙ্গীতবিদ্।
তাঁর উপন্যাস পেয়েছে শরৎচন্দ্রের কাছ থেকে প্রশংসা। তাঁর কবিতাও লাভ করেছে রবীন্দ্রনাথের প্রশস্তি। কিন্তু আমি হচ্ছি ক্ষুদ্র ব্যক্তি, ওঁদের কাছে আমার মতামত তুচ্ছ। তবু এইটুকুই খালি বলতে পারি, দিলীপকুমারকে আমিও সুলেখক ব’লে গণ্য করি বটে, কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশী আকৃষ্ট হই তাঁর গানের দিকেই। তাঁর আসল কৃতিত্ব সঙ্গীতক্ষেত্রেই। বড়ই দঃখের বিষয় যে, কাব্য ও চিত্র প্রভৃতিকে যেমন ধ’রে রাখা যায়, গান, নাচ ও অভিনয়-কলাকে তেমন চিরস্থায়ী করা যায় না। গায়কের, নর্তকের ও অভিনেতার জীবনদীপ নেবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ব্যক্তিগত আর্ট চ’লে যায় মানুষের দেখাশোনার বাইরে। তবু লোক পরম্পরায় মুখে মুখে ফেরে তাঁদের নাম। তানসেন আজও মরেন নি। গ্যারিক আজও অমর। পাবলোভা আজও বেঁচে আছেন। দিলীপকুমারকেও বাঁচতে হবে ঐ সঙ্গীতস্মৃতির জগতেই।
বাংলা গানে তিনি এনেছেন একটি অভিনব ঢঙ বা ভঙ্গি, যা সম্পূর্ণরূপেই তাঁর নিজস্ব। যেমন রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের রচনাপদ্ধতি, অবনীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্কনপদ্ধতি, শিশিরকুমারের অভিনয়পদ্ধতি ও উদয়শঙ্করের নৃত্যপদ্ধতি সম্যকভাবেই তাঁদের ব্যক্তিগত, অগণ্য পদ্ধতির মধ্যেও তারা স্বয়ংপ্রধান হয়ে বিরাজ করে, দিলীপকুমারের গান গাইবার পদ্ধতিও সেই রকম অপূর্ব। ওস্তাদী “ব্যাকরণে”র দ্বারা কণ্টকিত ও উৎপীড়িত না ক’রেও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের দ্বারা যে সর্বশ্রেণীর শ্রোতার শ্রবণেই মধুবর্ষণ করা যায়, দিলীপকুমারের আসরে আসীন হ’লেই পাওয়া যায় সে প্রমাণ। কি উন্মাদনা আছে তাঁর গানে, কি রসের ব্যঞ্জনা আছে তাঁর সূরে, আর কি কলকণ্ঠের অধিকারী ও দরদী গায়ক তিনি! চিত্তও তাঁর নির্মুক্ত, কোন গানই তাঁর কাছে উপেক্ষিত নয়। থিয়েটারি গান ও থিয়েটারি সুর ওস্তাদদের আসরে অচ্ছুৎ হয়ে থাকে, দিলীপকুমার তাকেও আদর ক’রে নিজের কণ্ঠে টেনে নেন। বাংলা রঙ্গালয়ে থিয়েটারি সুরে গেয় গিরিশচন্দ্রের একটি সেকেলে গান আছে—“রাঙা জবা কে দিল তোর পায়ে মুঠো মুঠো”। ঐ গান আর ঐ সুর দিলীপকুমারের কণ্ঠগত হয়ে কি সুধাসুমধুর হয়ে উঠেছে, গ্রামোফোনের রেকর্ডে সে প্রমাণ পাকা হয়ে আছে।
ভালো গায়কের গান শোনবার জন্যে দিলীপকুমারের আগ্রহ সর্বদাই সজাগ। আমার জ্যেষ্ঠতাতপুত্র সতীশচন্দ্র রায় বহু কাল সঙ্গীতসাধনা ক’রে এখন পরলোকগমন করেছেন। এক সময়ে ভালো গায়ক ব’লে তাঁর প্রচুর পসার ছিল। গ্রামোফোনের রেকর্ডেও প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর অনেকগুলি গান। একদিন তাঁর গান শোনবার জন্যে দিলীপকুমার এলেন আমাদের বাড়িতে। তারপরও একাধিকবার তিনি আমাদের বাড়িতে পদার্পণ করেছেন, তবে পরের গান শুনতে নয়, নিজের গান শোনাতে।
তারপর দিলীপকুমার করলেন সন্ন্যাস গ্রহণ, চ’লে গেলেন পণ্ডিচারীর অরবিন্দাশ্রমে। সেখানকার জন্যে দান করলেন নিজের সর্বস্ব। বোধ করি তাঁর দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়েই আর একজন অতুলনীয় সঙ্গীতশিল্পীও পণ্ডিচেরী যাত্রা ক’রে একেবারেই ভেস্তে গিয়েছেন, তাঁর নাম শ্রীভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সুখের বিষয় যে দিলীপকুমার সন্ন্যাসী হয়েও সঙ্গীত ও সাহিত্যকে ত্যাগ করেননি।
পণ্ডিচেরীতে গিয়েও আমার সঙ্গে তিনি সম্পর্ক তুলে দেননি। একাধিক পত্রিকার সম্পাদকরূপে যখনই তাঁর রচনা প্রার্থনা করেছি, তখনই তা পেয়েছি। তাছাড়া আমাকে তিনি পত্র লিখতেন প্রায়ই এবং আমাকেও পত্র লেখবার জন্যে অনুরোধ করতেন। তাঁর বহু পত্রই আমি রক্ষা করেছি, সেগুলির মধ্যে আছে সাহিত্য ও সঙ্গীতের কথা। নিজের কথাও আছে। তাঁর একখানি সুদীর্ঘ পত্রের অংশবিশেষ এখানে তুলে দিলাম—পত্রের তারিখ হচ্ছে ঊনত্রিশে নভেম্বর, ১৯৩১ খৃষ্টাব্দঃ “প্রিয়বরেষু
আপনার পত্র পেয়ে খুব হাসলাম। আপনার কবিতা ("ছন্দা”র) বেশ লেগেছিল। আপনার গানগুলি পেয়ে সুখী হলাম। দেখব কি করা যায়। সুর মাথায় না এলে মুস্কিল। কিন্তু আপনার আরো কয়েকটা গান পাঠাবেন। প্রেমের গানও একটা পাঠাবেন কিন্তু— আমি প্রেমের গান যে একেবারেই গাই না বললে সত্যের অপলাপ করা হয়। সেদিন Chopin-এর একটি জর্মন গানের অনুবাদ করেছি, আপনাকে পাঠাচ্ছি—ঐ ছন্দে মিলে সুরে। যদি ভালো লাগে “ছন্দা”য় ছাপাবেন। কিন্তু ভালো না লাগলে দোহাই ধর্ম, ছাপাবেন না—আমি কিছু মনে করব না।
দেখুন প্রিয়বর, একটা কথা ব’লে রাখি অত্যন্ত সরল বিনয়ে। কাব্যজগতেও আমি সাধ্যমত সত্যপন্থী হ’তে চেষ্টা করি। কিন্তু ফলে অনেক বন্ধু হারিয়েছি—কারুর কারুর কাব্যকে ভালো বলতে না পারার দরুণ। আপনার বন্ধুত্ব আমার কাছে সত্যই কাম্য বলেই ভয় হয়, পাছে আপনার সব গানকে ভালো বলতে না পারলে আপনিও আমাকে বিসর্জন দেন। আপনার একজন প্রিয় কবির কবিতা আমার ভালো লাগে না। তিনি আমাকে বহু উপরোধ করেছেন তাঁর কাব্য সমালোচনা করতে- আমি করতে পারিনি—যদিও তাঁর কাজের কোথাও নিন্দা করিনি-কিন্তু তিনি চ’টে গেলেন মোক্ষম। ... আমার গান কবিতা কিছুও যদি আপনার ভালো না লাগে তবু আপনার প্রীতিকে আমি সমানই চাইব, কেননা আমি সার বুঝি ভালোবাসার অহেতুক স্নেহকে। আপনি আমাকে স্নেহ করেন এইটুকুই আমি চাই- আর কিছু, না।...... প্রগলভতা মার্জনা করবেনঃ তবে আপনি প্রবীণ লোক, অনেক দেখেছেন শুনেছেন, কাজেই মনে হয় বুঝবেন আমার সঙ্কোচ ও আক্ষেপ। পূজোর সংখ্যা “ছন্দা” একখানা আমাকে পাঠাবেন? যেখানা পাঠিয়েছিলেন সেটি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন, তাঁর কাছেই আছে” প্রভৃতি।
কিন্তু আমার ভাগ্যে সে দিলীপকুমার আজ একেবারেই বদলে গেছেন। পত্রালাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। কলকাতায় এলেও খবর নেন না বা গানের আসরে আমন্ত্রণ করেন না। কারণ ঠিক জানি না। তবে একটা কারণ হয়তো এইঃ কয়েক বৎসর আগে তাঁর রচিত “উদাসী দ্বিজেন্দ্রলাল” পুস্তকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত সম্বন্ধে যথেষ্ট অন্যায্য মতামত প্রকাশ করা হয়েছিল। গুরুস্থানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে সে সব উক্তি আমি মেনে নিতে পারিনি, আমিও কয়েক সপ্তাহ ধ’রে “দৈনিক বসুমতী”তে তার প্রতিকূল আলোচনা করেছিলুম। দিলীপকুমারের অভিমানের কারণ হয়তো তাই। উপরের পত্রে লিখেছেন, সত্যপন্থী হয়ে তিনি অনেক বন্ধুকে হারিয়েছেন। ঠিক অনুরূপ কারণেই আমিও হারিয়েছি তাঁর বন্ধুত্ব। কিন্তু তবু আমি তাঁর অসাধারণ সঙ্গীত-প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করি। আজও তাঁকে আমি আগেকার মতই ভালোবাসি। সাহিত্যিক বাদপ্রতিবাদকে ব্যক্তিগত জীবনে টেনে আনতে আমি অভ্যস্ত নই।