এপিক্‌টেটসের উপদেশ/বিরহ বিচ্ছেদ

বিরহ বিচ্ছেদ।

 ১। আর একজনের দোষে তোমার অনিষ্ট হইবে, এরূপ মনে করিও না। অন্যের সঙ্গে থাকিয়া তুমি অসুখী হইবে এইজন্য তুমি জন্মাও নাই; প্রত্যুত, অন্যের সঙ্গে থাকিয়া সুখী হইবে—সৌভাগ্যবান হইবে এই জন্যই তুমি জন্মগ্রহণ করিয়াছ। যদি কেহ দুর্ভাগ্য ও অসুখী হয়, সে জানিবে তাহার স্বকৃত কর্ম্মের ফল। কারণ, ঈশ্বর সকল মনুষ্যকেই সুখী করিবার জন্যই সৃষ্টি করিয়াছেন—সকলকেই ভাল অবস্থায় স্থাপন করিয়াছেন। এই অভিপ্রায়ে, তিনি প্রত্যেক ব্যক্তিকে এমন কতকগুলি জিনিস দিয়াছেন যাহা তাহার নিজের; এবং আর কতকগুলি জিনিস দিয়াছেন যাহা তাহার নিজের নহে। যে সকল বস্তু প্রাকৃতিক বাধার অধীন, অনিবার্য্য শক্তির অধীন, বিনাশের অধীন, তাহা তাহার নিজস্ব নহে, ইহার বিপরীতই তাহার নিজস্ব বস্তু। যিনি নিয়ত আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ করিতেছেন, পিতার ন্যায় আমাদিগকে পালন করিতেছেন, সেই ঈশ্বর, এমন কতকগুলি জিনিস আমাদের নিজস্ব করিয়া দিয়াছেন, যাহার উপর আমাদের প্রকৃত মঙ্গল নির্ভর করে।

 ২। “কিন্তু আমি অমুককে ছাড়িয়া আসিয়াছি, সেই জন্য তিনি কষ্ট পাইতেছেন”। যে সকল বস্তু তাঁহার আপনার নহে, তাহাদিগকে আপনার বলিয়া কেন তিনি মনে করেন? তোমাকে দেখিয়া যখন তাঁর আনন্দ হয়, তখন কি তিনি ভাবেন না, তুমি মর্ত্যজীব—কোন্ দিন অন্য লোকে চলিয়া যাইবে? তাই তিনি এখন তাঁহার অবিবেচনার ফল ভোগ করিতেছেন। কিন্তু তুমি কেন ক্রন্দন করিতেছ? তোমার প্রিয় বস্তুর সহিত তুমি চিরকাল একত্র বাস করিতে পারিবে, অবোধ রমণীর ন্যায় তুমিও কি তাই ভাবিতেছ? সেই সব প্রিয়জনকে দেখিতে পাইতেছ না —সেই সব প্রিয় স্থানে যাইতে পারিভেছ না বলিয়া তুমি এখন কাঁদিতেছ? তুমি তবে কাক-বায়সাদি অপেক্ষাও হতভাগ্য। তাহারা যথাইচ্ছা উড়িয়া যায়, নীড় পরিবর্ত্তন করে, সমুদ্রপারে গমন করে;—যাহা কিছু পশ্চাতে ফেলিয়া যায়, তাহার জন্য বিলাপ করে না—তাহার জন্য লালায়িত হয় না।

 —“হাঁ, তাহারা এইরূপই বটে, কেন না তাহারা বুদ্ধিহীন জীব”। তবে কি দেবতারা এই জন্যই আমাদিগকে বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়াছেন যে আমরা চিরকালের জন্য অসুখী হই? এসো তবে আমরা সকলেই অমর হই, বিদেশে যেন আমরা কখন না যাই, বৃক্ষাদির ন্যায় একস্থানেই বদ্ধমূল হইয়া থাকি। যদি আমাদের কোন সঙ্গী আমাদের ছাড়িয়া চলিয়া যায়, তবে এসো আমরা তাহার জন্য কেবল বসিয়া বসিয়া কাঁদি; আবার সে ফিরিয়া আসিলে শিশুর ন্যায় হাত তালি দিয়া নৃত্য করি!

 ৩। এখনও কি তবে আমাদের স্তন্য ছাড়িবার বয়স যায় নাই? তত্ত্বজ্ঞানীদের কথা এখনও কি আমরা স্মরণ করিব না? এত দিন কি তবে কুহকীর মন্ত্রের ন্যায় তাহাদের কথাগুলা শুনিয়াছিলাম? তাঁহারা কি বলেন নাই?—এই জগৎ, একটি অখণ্ড শাসনতন্ত্রের অধীন, একই উপাদানে নির্ম্মিত; সুতরাং ইহার একটা নির্দ্দিষ্ট কালচক্র—একটা নির্দ্দিষ্ট কল্পকাল অবশ্যই থাকিবে; কতকগুলি পদার্থ চলিয়া যাইবে, আর কতকগুলি পদার্থ তাহার স্থান অধিকার করিবে;—কতকগুলির তিরোভাব ও কতকগুলির আবির্ভাব হইবে; কতকগুলি অচলভাবে ও কতকগুলি সচলভাবে অবস্থান করিবে। কিন্তু ইহা জানিবে, সকল পদার্থই দেবতা ও মনুষ্যের প্রেমে পরিপূর্ণ। প্রকৃতির নিয়মে সকলেই পরস্পরের সহিত স্নেহমমতার বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু চিরকাল একত্র থাকাও প্রকৃতির নিয়ম নহে। যত দিন একত্র থাকিতে পার,—আনন্দ কর, কিন্তু কেহ তোমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গেলে পরিতাপ করিও না।

 ৪। হার্কুলিস্ সমস্ত পৃথিবী পরিভ্রমণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তখন তাঁহার কয়জন বন্ধু ছিল? তিনি তাঁহার পুত্রদিগকে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, কিন্তু তজ্জন্য তিনি বিলাপও করেন নাই—পরিতাপও করেন নাই। তিনি তাহাদিগকে অনাথ করিয়াও যান নাই। কারণ, তিনি জানিতেন, কোন মনুষ্যই অনাথ নহে; একজন পরম পিতা আছেন যিনি অবিরত সকলেরই রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করিতেছেন। হার্কুলিস ঈশ্বরকে সকলের পিতা বলিয়া শুধু জানিতেন না, তিনি তাঁহাকে বিশেষরূপে আপনার পিতা বলিয়া জানিতেন। এই তিনি সকল স্থানেই সুখে কালযাপন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

 ৫। সুখ এবং যাহা তোমার নাই তাহার জন্য আকাঙ্ক্ষা—এই দুই জিনিস একসঙ্গে কখনই থাকিতে পারে না। সুখ, সমস্ত বাসনার চরিতার্থতা চাহে,—পূর্ণ পরিতৃপ্তি চাহে;—তাহার সহিত ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকা চলে না। এমন কোন্ সাধু ব্যক্তি আছে যে আপনাকে জানে না? যে আপনাকে জানে, সে কি একথাও জানে না যে, দুই জন কখনই একত্র চিরকাল থাকিতে পারে না? সে কি জানে না—“যারই জন্ম তারই মৃত্যু”? যাহা পাওয়া অসম্ভব, তাহার জন্য আকাঙ্ক্ষা করা কি বাতুলতা নহে? যে এরূপ আকাঙ্ক্ষা করে সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। সে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে না, সে আপনার ভ্রান্ত প্রতীতি অনুসারেই কাজ করে।

 ৬। “কিন্তু আমার মা যে আমাকে না দেখিলে কাঁদেন”। এই সকল উপদেশ-বাক্য তিনি কি তবে কখন শুনেন নাই? তুমি তবে তাঁহাকে বুঝাইতে চেষ্টা কর। তা ছাড়া তুমি আর কি করিতে পার। পরের দুঃখ নিবারণ করা সম্পূর্ণরূপে আমাদের আয়ত্তাধীন নহে। কিন্তু আমার নিজের দুঃখ নিবারণ করা সম্পূর্ণরূপে আমার সাধ্যায়ত্ত। কোন অনিবার্য্য প্রাকৃতিক ঘটনার জন্য বিলাপ করিলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা হইবে; তাহা হইলে দিবা রাত্রে আমার মনের শান্তি থাকিবে না। গভীর রজনীতে, যদি কোন সংবাদ আইসে, যদি কাহারও নিকট হইতে পত্র আইসে, অমনি আমি শয্যা হইতে লাফাইয়া উঠি এবং না জানি কি সংবাদ এই মনে করিয়া কাঁপিতে থাকি। “রোম হইতে একজন পত্রবাহক আসিয়াছে”—“যদি কোন অশুভ সংবাদ হয়।” তোমার কি অশুভ হইতে পারে যখন তুমি সেখানে নাই। “গ্রীস হইতে একটা পত্র আসিয়াছে,”—“কোন অশুভ সংবাদ নহে ত?”—এইরূপ সকল স্থানই তোমার পক্ষে অমঙ্গলের প্রস্রবণ হইয়া উঠে। যেখানে তুমি রহিয়াছ, সেখানকার অশুভই কি তোমার পক্ষে যথেষ্ট নহে? সমুদ্রপারেও কি তোমার নিস্তার নাই?—পত্রাদিতেও কি তোমার নিস্তার নাই? তুমি তবে কোথায় গিয়া নিরাপদ হইবে? “আমার যে সকল আত্মীর বন্ধু বিদেশে আছেন, তাঁহাদের যদি মৃত্যু হয়, তাহা হইলে কি হইবে?”—বিধাতার অখণ্ডনীয় নিয়মে যে সকল জীব মৃত্যুর অধীন—তাহাদের মৃত্যু এক সময়ে অবশ্যই হইবে। তুমি তাহাতে কি করিবে? তুমি তবে দীর্ঘজীবি হইতে কেন ইচ্ছা কর? অধিক দিন বাঁচিলে কোন-না-কোন প্রিয়জনের মৃত্যু কি তোমায় দেখিতে হইবে না? তুমি কি জান না, দীর্ঘকালের মধ্যে কত কি ঘটিতে পারে?—কেহ বা জ্বর রোগে, কেহ বা দসুর হস্তে, কেহ বা রাজার উৎপীড়নে ধরাশায়ী হইবে। ইহারাই আমাদের পরিবেষ্টন—ইহারাই আমাদের সঙ্গী। শীত, গ্রীষ্ম, অযথারূপে জীবনযাপন, জলে স্থলে ভ্রমণ, ঝঞ্ঝাবাত,—এইরূপ কত অবস্থায় পড়িয়া মনুষ্য মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কেহ বা নির্ব্বাসনে, কেহ বা দৌত্যকার্য্যে, কেহ বা রণক্ষেত্রে গিয়া প্রাণ বিসর্জ্জন করে। তুমি তবে এই-সবে ত্রস্ত হইয়া চুপ্ করিয়া ঘরে বসিয়া থাক, কেবলি বিলাপ কর, ক্রন্দন কর, অসুখী হও, পরের উপর নির্ভর করিয়া থাক;—একটি নহে—দুইটী নহে—সহস্র বাহ্য ঘটনার উপর নির্ভর করিয়া থাক।

 ৭। তুমি কি তবে ইহাই শুনিয়াছ? ইহাই কি তত্ত্বজ্ঞানীদের নিকট উপদেশ পাইয়াছ? তুমি কি জান না, এখানে সংগ্রামই জীবনের একমাত্র কাজ? তোমার প্রতি সেনাপতির কোন কঠিন আদেশ হইলে, তুমি যদি দুঃখ প্রকাশ কর—যদি তুমি তাহা পালন না কর, তাহা হইলে সমস্ত সৈন্যমণ্ডলীকে কু-দৃষ্টান্ত দেখানো হইবে, তাহা কি তুমি জান না? তাহা হইলে তোমার দৃষ্টান্তে কেহই আর খাত খনন করিবে না, প্রাকার নির্ম্মাণ করিবে না, পাহারা দিবে না—কেহই বিপদের মুখে অগ্রসর হইবে না, সকলেই অকর্ম্মণ্য হইয়া পড়িবে। আবার যদি জাহাজের নাবিক হইয়া একস্থানেই তুমি বসিয়া থাক, কোথাও নড়িতে না চাহ, যদি মাস্তুলে উঠিতে বলিলে না ওঠো, গলুইয়ের মুখে বাইতে বলিলে না যাও, তাহা হইলে কোন্ জাহাজের কাপ্তেন তোমার সম্বন্ধে ধৈর্য্য ধারণ করিতে পারেন?—তিনি কি আবর্জ্জনা মনে করিয়া, কাজের প্রতিবন্ধক মনে করিয়া, অন্য নাবিকের পক্ষে কুদৃষ্টান্ত মনে করিয়া, তোমাকে জাহাজ হইতে বাহির করিয়া দেন না?

 ৮। সেই প্রকার এখানেও প্রত্যেক মনুষ্যের জীবন, দীর্ঘকালব্যাপী একপ্রকার সংগ্রাম বলিয়াই জানিবে;—উহা বিচিত্র ঘটনায় পূর্ণ। এখানে সকলকে সৈনিক হইতে হইবে, সেনাপতির ইঙ্গিত মাত্রে সমস্ত আদেশ অকাতরে পালন করিতে হইবে। এমন কি, তাঁহার মনোগত অভিপ্রায় কি, তাহাও কখন কখন অনুমান করিয়া লইতে হইবে। সেনাপতি যেখানে যাইতে বলিবেন সেইখানেই যাইতে হইবে। তুমি কি উদ্ভিজ্জের ন্যায় এক স্থানে বদ্ধমূল হইয়া থাকিতে চাহ? হাঁ, তাহাতে আরাম আছে, সুখ আছে। কে তাহা অস্বীকার করিতেছে? মুখরোচক খাদ্য কি সুখের সামগ্রী নহে? সুন্দরী স্ত্রী কি সুখের সামগ্রী নহে? যাহারা নীচ পাশবসুখে আসক্ত, তাহাদের মুখেই এ কথা শোভা পায়।

 ৯। এই সকল নীচ বাসনা পরিত্যাগ কর। এই সকল বিলাসীদিগের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিও না। অবাধে পূর্ণমাত্রায় নিদ্রা যাইব, শয্যা হইতে উঠিয়া অলসভাবে জৃম্ভন করিব, মুখ প্রক্ষালন করিব, ইচ্ছামত লিখিব পড়িব, তার পর তুচ্ছ কথাবার্ত্তায় কিয়ৎকাল অতিবাহিত করিব, যাহা আমি বলিব তাহাতেই বন্ধুগণ আমার প্রশংসা করিবে, তার পর একটু বেড়াইতে বাহির হইব, তাহার পর স্নান, তাহার পর আহার, তাহার পর আবার বিশ্রাম করিব—ইহা ভিন্ন তাহাদের কি আর কোন আকাঙ্ক্ষা আছে? সক্রেটিস্ ও ডায়োজিনিসের শিষ্য হে সত্যের সেবকগণ! তোমরা কি এইরূপ জীবন প্রার্থনীয় বলিয়া মনে কর?

 ১০। “তাহা হইলে আমি কি মায়ামমতা পরিত্যাগ করিব?” মানুষ দীনভাবে বিলাপ করিবে, পরের উপর একান্ত নির্ভর করিবে, কোন দুর্ঘটনা উপস্থিত হইলেই ঈশ্বরের প্রতি দোষারোপ করিবে ইহা বিবেকসম্মত কাজ নহে। বিবেকের অধীন হইয়া স্নেহ মমতা কর।

 কিন্তু যদি এইরূপ স্নেহমমতা করিতে গিয়া দাসত্ব-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়া পড়, তাহা হইলে উহা তোমার পক্ষে হিতকর হইবে না। কোন মরণশীল মর্ত্ত্যজীবকে যে ভাবে ভালবাসা যাইতে পারে, কোন বিদেশযাত্রীকে যেভাবে ভালবাসা যাইতে পারে, সেইরূপ ভাবে ভালবাসোনা কেন—তাহাতে বাধা কি? সক্রেটিস্ কি তাঁহার সন্তানগণকে ভালবাসিতেন না? হাঁ ভালবাসিতেন, কিন্তু তিনি স্বাধীনপুরুষের ন্যায় ভালবাসিতেন; সর্ব্বাগ্রে দেবতাদিগকে ভালবাসিতে হইবে—ইহাই তিনি মনে করিতেন। তাই তিনি জীবনে মরণে—সকল অবস্থাতেই স্বকীয় কর্ত্তব্য সর্ব্বতোভাবে পালন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। নীচ কার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়া আমরা নানা প্রকার ওজর করিয়া থাকি। কেহ সন্তানের ওজর—কেহ মাতার ওজর—কেহ বা ভ্রাতার ওজর করিয়া থাকে। কিন্তু এরূপ ওজর করা উচিত নহে। সকলের সঙ্গে থাকিয়া বিশেষতঃ ঈশ্বরের সঙ্গে থাকিয়া আমরা সুখী হই—ইহাই ঈশ্বরের অভিপ্রেত। কাহারও জন্য আমরা অসুখী হই, ইহা তাঁহার অভিপ্রেত নহে।

 ১১। তাছাড়া, যাহা কিছু তোমার প্রিয়—তাহার সম্বন্ধে কি কি প্রতিবন্ধক আছে, একবার কল্পনা করিয়া দেখিবে। যখন তোমার শিশুন্তানটিকে তুমি চুম্বন কর, তখন তাহার কানে কানে এই কথাটি বলিতে হানি কি?—“বাছা! কাল যে তুই চলিয়া যাইবি।” সেইরূপ তোমার বন্ধুর প্রতি এই কথাটি বলিতেই বা দোষ কি?—“হয় তুমি, নয় আমি—দুজনের মধ্যে কেহ কাল প্রস্থান করিব, আর বোধ হয় আমদের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ ঘটিবে না।” কিন্তু এ সব যে ‘অলক্ষণে’ কথা।” তুমি কি তবে বলিতে চাহ, যাহা কিছু স্বাভাবিক তাহাই ‘অলক্ষণে?’ তবে বল না কেন—ধান কাটাও “অলক্ষণে”, কেননা তাহাতে ধান মরিয়া যায়। তবে বল না কেন,—পাতা ঝরা, কাচা ডুমুর শুকাইয়া যাওয়া, আঙ্গুর শুকাইয়া কিচ্‌মিচ্ হওয়া—এ সমস্তই ‘অলক্ষণে।’ কিন্তু উহাদের এইরূপ অবস্থান্তর ঘটিয়াছে মাত্র, উহাদের ত বিনাশ হয় নাই। উহা শুধু একটা পরিবর্ত্তন। সেইরূপ, বিদেশযাত্রাও একটা পরিবর্ত্তন। আর মৃত্যু—সে আরো একটু বেশি পরিবর্ত্তন। কিন্তু ইহা অস্তি হইতে নাস্তিতে পরিবর্ত্তন নহে,—এক অবস্থা হইতে আর এক অবস্থার পরিবর্ত্তন এই মাত্র।