আশা।

আশা! কিসে তোর আশা করিব পূরণ,
উপায় না পাই তার, ভ্রমিয়া ভুবন।
ওরে স্থূলদেহ! দেহ বলিয়া আমায়,
কিসে হয় তব তৃপ্তি, কি করি উপায়।
যত চাই তত পাই যদিও, তথাপি
লম্বোদর নাহি পূরে তোমার কদাপি।
ধন ধান্য রম্য হর্ম্ম্য আর হস্তী হয়,
যত হয়, কিছুতেই তৃপ্তি নাহি হয়।
সাগর রসনা পৃথ্বী পেলেও, বাসনা
পূরে না, উঠে না মন, ঘুচে না কামনা।
নব নব বিষয়েই লালসা তোমার,
পাও যদি স্বর্গপদ, জ্ঞান কর ছার।
কিন্তু এই দুঃখময় সংসার ভিতরে,
তোমা বিনা সাধ্য কার ক্ষণ বাস করে।
দুঃখঘনে হৃদাকাশ আবরে[] যখন,
বায়ুরূপে পরিষ্কার করে কে তখন?
পুত্ত্রনাশে জননীর দীপ্ত-শোকানল,
অমৃত হইয়া তাহা কে নিভায় বল।

পুত্ত্রবিনা বন্ধ্যানারী করয়ে রোদন,
তুমি তার নেত্রবারি করহ মোচন।
মুমূর্ষু যখন থাকে মরণশয়নে,
তখনও তারে তোষ আশ্বাসবচনে।
দুর্ভাগ্য-দলিত-জন বিরস-বদনে,
সহাস্য করিতে পারে কে আছে ভুবনে?
অতএব দুখরাশি নিবারিতে আর
তোমা বিনা আছে আশা! শকতি কাহার।
শোকতাপদুঃখময় সংসার দেখিয়া,
কে তোমারে ধরাধামে দিল পাঠাইয়া।
আহা মরি মরি, তিনি কিবা দয়াময়,
সদা যেন তাঁর প্রেমে মন মুগ্ধ রয়।
কভু সর্ব্বদুঃখহরা আশালতা! তুমি
সুখফলে সুশোভিত কর মনোভূমি।
দুর্ভাগ্য পবনে ভাঙ্গে তোমারে যখন,
কত দুখ দাও তুমি মানবে তখন;
অঙ্কুরিত হয়ে পুনঃ নবরূপ ধর,
আশ্বাসিয়া মানবের সেই দুঃখ হর।
কত যে শকতি তব বলা নাহি যায়,
কে রাখিতে পারে আশা! স্ববশে তোমায়।



দিনদিন এ সংসার হয় পুরাতন,
তুমি সদা নব ভাব করহ ধারণ।
যে পথে ধাইলে তুমি শান্ত রয় মন,
কেন সেই পথে আশা! কর না গমন?
হায় রে বিষয়-আশা কভু নাহি যায়,
নিবারিতে সে পিপাসা সাগর শুখায়।
রে আশা! আমার আসা সার হল ভবে,
তোরে দাস করে আর সুখী হব কবে।


  1. আবরে আবরণ করে।