গৌড়রাজমালা/গৌড় ও কাশ্মীর

 গৌড়ের মহাসামন্ত যেন কান্যকুব্জ-বিজয়ী ললিতাদিত্যকে করস্বরূপ এই সকল হস্তী প্রদান করিলেন। কহ্লণ-বর্ণিত ললিতাদিত্যের দক্ষিণাপথ-বিজয়-কাহিনী কিয়ৎ পরিমাণে কল্পনা-প্রসূত বলিয়া মনে হইতে পারে। যশোবর্ম্মার সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার গৌড়ীয় মহাসামন্তকেও সম্ভবতঃ ললিতাদিত্যের পদানত হইতে হইয়াছিল; এবং নবীন সম্রাটের মনস্তুষ্টির জন্য, হস্তী উপঢৌকন দিতে হইয়াছিল। তাহার পরে বোধ হয়, ললিতাদিত্যের আজ্ঞানুসারে গৌড়পতিকে কাশ্মীরে যাইতে হইয়াছিল। ললিতাদিত্য স্বনির্ম্মিত পরিহাস-পুর [বর্ত্তমান পরসপুরীড়ার] নামক নগরে প্রতিষ্ঠিত “পরিহাস-কেশব” নামক নারায়ণ-মূর্ত্তিকে মধ্যস্থ-[জামিন] রাখিয়া প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন—তিনি গৌড়পতির গাত্রে হস্তক্ষেপ করিবেন না। তথাপি কোন কারণ বশতঃ ঘাতুক নিযুক্ত করিয়া, পরিহাসপুরের অনতিদূরস্থিত ত্রিগ্রাম নামক স্থানে গৌড়রাজের বধ সাধন করাইয়াছিলেন। এই সংবাদ যখন গৌড়ে পঁহুছিল, তখন গৌড়পতির একদল ভৃত্য এই নৃশংসতার প্রতিশোধ লইবার জন্য, শারদাতীর্থ-দর্শনে যাইবার ভাণ করিয়া, কাশ্মীর প্রবেশ করিলেন; এবং পরিহাস-কেশবের মন্দির অবরোধ করিলেন। পূজকগণ তখন মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিলেন। গৌড়-যোদ্ধৃগণ প্রবল পরাক্রমের সহিত মন্দির আক্রমণ করিয়া, রামস্বামী নামক রজত-নির্ম্মিত আর একখানি নারায়ণ-মূর্ত্তি দেখিতে পাইলেন, এবং পরিহাস-কেশব-ভ্রমে তাহা ভাঙ্গিয়া ধূলিসাৎ করিলেন। ইতিমধ্যে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর হইতে সৈন্য আসিয়া, তাঁহাদিগকে বাধা দিতে প্রবৃত্ত হইল। গৌড়ীয়গণ যখন রামস্বামীর মূর্ত্তি ভাঙ্গিতে বিব্রত, তখন কাশ্মীর-সেনা তাঁহাদিগকে ঘিরিয়া ফেলিয়া, পশ্চাৎদিক হইতে তাঁহাদিগের শিরশ্ছেদ করিতে লাগিলেন। কিন্তু সেদিকে দৃক্‌পাত না করিয়া, গৌড়ীয়গণ মূর্ত্তি-ধ্বংসে নিবিষ্ট রহিলেন; এবং একে একে সকলেই শত্রুর তরবারির আঘাতে নিহত হইলেন। কহ্লণ লিখিয়াছেন,—“দীর্ঘকালে লঙ্ঘনীয় গৌড় হইতে কাশ্মীরের পথের কথাই বা কি বলিব, এবং মৃত প্রভুর প্রতি ভক্তির কথাই বা কি বলিব? গৌড়গণ তখন যাহা সম্পাদন করিয়াছিলেন, বিধাতার পক্ষেও তাহা সম্পাদন করা অসাধ্য।......অদ্যাপি রামস্বামীর মন্দির শূন্য দেখিতে পাওয়া যায়, এবং গৌড়-বীরগণের যশে পৃথিবী পরিপূর্ণ।”[১]

 প্রচলিত জনশ্রুতি অবলম্বনেই কহ্লণ এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া থাকিবেন। সুতরাং ইহাকে অমূলক মনে করিবার কারণ নাই। কহ্লণ ললিতাদিত্যের অশেষ গুণগ্রামের এবং কীর্ত্তি-কলাপের বর্ণনা করিয়াও, তাঁহার দুইটি মাত্র দুষ্কার্য্যের উল্লেখ করিয়াছেন। প্রথম দুষ্কার্য্য,—সুরাপান-জনিত মত্ততা-বশে ললিতাদিত্য এক সময় প্রবরপুর (শ্রীনগর) দগ্ধ করিতে আদেশ দিয়াছিলেন। দ্বিতীয় দুষ্কার্য্য,—গৌড়পতি-বধ। অমুলক হইলে, অপ্রাকৃতের সম্পর্ক-বর্জ্জিত এই দুইটি ঘটনা, বিশেষতঃ বিদেশীর মাহাত্ম্য-সূচক গৌড়বধ-বৃত্তান্ত, চারিশত বৎসরকাল জনসাধারণের স্মৃতিপথারূঢ় থাকিত না। ললিতাদিত্য বা তাঁহার সেনা যে এক সময় গৌড়-সীমান্তে অবস্থিত মগধ পর্য্যন্ত পঁহুছিয়াছিল, কহ্লণ দিগ্বিজয়-বিবরণে তাহার স্পষ্ট উল্লেখ না করিয়া থাকিলেও, প্রসঙ্গান্তরে তাহার উল্লেখ করিয়াছেন। ললিতাদিত্যের মন্ত্রী চঙ্কুণ ললিতাদিত্যকে একস্থলে বলিতেছেন,—“মগধদেশ হইতে যে বুদ্ধ-মূর্ত্তি গজ-স্কন্ধে করিয়া আনা হইয়াছে, তাহা প্রদান করিয়া আমায় অনুগৃহীত করুন।”[২] অবান্তর প্রসঙ্গে উল্লিখিত মগধ হইতে এই বুদ্ধমূর্ত্তি আনয়ন-বিবরণ অবিশ্বাস করা যায় না; এই স্থানেই গৌড়-পতির সহিত ললিতাদিত্যের সম্বন্ধ সূচিত হইয়াছে।

 যশোবর্ম্মার সাম্রাজ্য-ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে গৌড়ের সহিত কান্যকুব্জের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল। সম্ভবতঃ এই সুযোগে, এবং গৌড়াধিপ কাশ্মীরে নিহত হইবার পর, ভগদত্ত-বংশীয় হর্ষদেব, গৌড়মণ্ডলকে কেন্দ্র করিয়া, এক বিস্তৃত রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। নেপালের রাজা জয়দেব-পরচক্রকামের ১৫৩ হৰ্ষ-সম্বতের [৭৫৮ খৃষ্টাব্দের] শিলালিপিতে এই হর্ষদেবের পরিচয় পাওয়া যায়। এই শিলালিপিতে উক্ত হইয়াছে,—জয়দেব ভগদত্ত-বংশীয় “গৌড়োড্রাদি-কলিঙ্গ-কোশল-পতি” হর্ষদেবের কন্যা রাজ্যমতীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন।[৩] বাণভট্টের “হর্ষচরিত” এবং আসাম প্রদেশে প্রাপ্ত তাম্রশাসন-নিচয় হইতে জানা যায়,—প্রাচীন কামরূপের নৃপতিগণ নরক এবং ভগদত্তের বংশধর বলিয়া আত্মপরিচয় দিতেন। হর্ষদেব সম্ভবতঃ কামরূপের প্রাচীন রাজবংশ-সমুদ্ভব ছিলেন; এবং কামরূপ ত্যাগ করিয়া, কামরূপের পূর্ব্ব সীমান্ত করতোয়া নদী পার হইয়া, গৌড়ে আসিয়া, যশোবর্ম্মার সাম্রাজ্যের অধঃপতনজনিত উত্তরাপথব্যাপী বিপ্লবের সময়, গৌড়, উৎকল, কলিঙ্গ এবং দক্ষিণ কোশল লইয়া, এক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করিবার অবসর পাইয়াছিলেন।

 রাজতরঙ্গিণীতে, খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর চতুর্থপাদের আরম্ভে, বাঙ্গলায় আর একটি অভিনব রাজবংশ-প্রতিষ্ঠার বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে। কহ্লণ লিখিয়াছেন—ললিতাদিত্যের পৌত্র জয়াপীড় কাশ্মীরের সিংহাসনে আরোহন করিয়াই,[৪] বৃহৎ একদল সেনা লইয়া, পিতামহের ন্যায় দিগ্বিজয়ে বহির্গত হইয়াছিলেন। জয়াপীড় কাশ্মীর হইতে সরিয়া গেলে, তদীয় শ্যালক জজ্জ বলপূর্ব্বক সিংহাসন অধিকার করিয়ছিলেন। তৎপর সৈন্যগণও জয়াপীড়কে পরিত্যাগ করিয়া, ক্রমে ক্রমে স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়াছিল। তখন তিনি সঙ্গী সামন্তরাজগণকে বিদায় দিয়া, অল্প কিছু সৈন্য লইয়া, প্রয়াগ গমন করিয়াছিলেন; এবং তথা হইতে একাকী ছদ্মবেশে বহির্গত হইয়া, ক্রমে পৌণ্ড্রবর্দ্ধন-নগরে উপনীত হইয়াছিলেন। পৌণ্ড্রবর্দ্ধন তখন “গৌড়রাজাশ্রিত” এবং জয়ন্ত-নামক সামন্ত নৃপতির রক্ষণাধীনে ছিল।[৫] জয়াপীড় “সৌরাজ্য” (সুশাসিত) এবং “পৌরবিভূতি”-ভূষিত পৌণ্ড্রবর্দ্ধনে এক নর্ত্তকীর গৃহে আশ্রয় লইলেন; এবং একটি সিংহ-হত্যা করিয়া, আত্মপ্রকাশ করিতে বাধ্য হইলেন। তখন রাজা জয়ন্ত জয়াপীড়ের সহিত স্বীয় দুহিতা কল্যাণদেবীর বিবাহ দিলেন। “জয়াপীড় বিনা আয়োজনে গৌড়ের পাঁচজন নরপালকে পরাজিত করিয়া, শ্বশুরকে গৌড়াধীশের আসনে প্রতিষ্ঠাপিত করিয়া, পরাক্রম প্রকাশ করিয়াছিলেন।”[৬] যতদিন না সমসাময়িক লিপিতে বা সাহিত্যে জয়ন্তের নামোল্লেখ দৃষ্ট হয়, ততদিন জয়ন্ত প্রকৃত ঐতিহাসিক-ব্যক্তি, কিম্বা জয়াপীড়ের অজ্ঞাতবাস-উপন্যাসের উপনায়ক মাত্র, তাহা বলা কঠিন।[৭]

 ঢাকা জেলার রায়পুরা থানার অন্তর্গত আশরফপুর নামক গ্রামে প্রাপ্ত দুইখানি তাম্রশাসনে সম্ভবতঃ বঙ্গের এই যুগের রাজকীয় ইতিহাসের কিঞ্চিৎ আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই দুইখানি তাম্রশাসনে এক অভিনব রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়।[৮] সুগতে, তদীয় সংঘে, এবং তদীয় ধর্ম্মে দৃঢ়ভক্তিমান্ “সমগ্র পৃথিবী-বিজেতা [ক্ষিতিরিয়মভিতোনির্জ্জিতা]” শ্রীমৎ খড়্গোদ্যম এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। খড়্গোদ্যমের উত্তরাধিকারী [তদীয় পুত্র] “ক্ষিতিপতি” জাতখড়্গ। জাতখড়্গ সম্বন্ধে প্রশস্তিকার লিখিয়াছেন,—“বায়ু যেমন তৃণকে এবং করী যেমন অশ্ববৃন্দকে বিধ্বস্ত করে, তিনিও সেইরূপ স্বীয় শৌর্য্য-প্রভাবে সমস্ত শত্রুকুল বিধ্বস্ত করিয়াছিলেন।” জাতখড়্গের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী “অশেষক্ষিতিপাল-মৌলিমালা-মণিদ্যোতিত-পাদপীঠ,” “নির্জ্জিত শক্র” শ্রীদেবখড়্গ। দ্বিতীয় তাম্রশাসনে দেবখড়্গের পুত্র রাজরাজের নাম উল্লিখিত হইয়াছে। এই রাজবংশ সম্বন্ধে ইহার অধিক আর কিছুই এযাবৎ জানা যায় নাই।

  1. क्व दीर्घकाल-लङ्घोध्वा शान्ते भक्तिः क्व च प्रभौ।
    विधातु रप्यसाध्यं तद्यद्गौड़ै र्विहितं तदा॥

    * * * * *

    अद्यापि दृश्यते शून्यं रामस्वामि-पुरास्पदं।”
    ब्रह्माण्डं गौड़-वीराणां सनाथं यशसा पुनः॥ (४৷३३२-५)

  2. “गजस्कन्धे धिरोप्येतम्मागधेभ्यो यदाहृतं।
    दत्वा सुगत-बिम्बं तज्जनीय मनुगृह्यताम्॥” (४৷२५८)”

  3. Indian Antiquary, Vol. IX, P. 178.
  4. কহ্লণের মতানুসারে ৭৫১ খৃষ্টাব্দে জয়াপীড়ের রাজ্যলাভ নির্দ্ধারণ করিতে হয়। কিন্তু ষ্টিন দেখাইয়াছেন, ইহার প্রায় ২৫ বৎসর পরে জয়াপীড় প্রকৃত প্রস্তাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
  5. गौड़राजाश्रयं गुप्तं जयन्ताख्येन भूभूजा।
    प्रविवेश क्रमेणाथ नगरं पौण्ड्रवर्द्धनं॥ (४।४२१)।”
  6. “व्यधाद्विनापि सामग्रीं तत्र शक्तिं प्रकाशयन्।
    पञ्च गौड़ाधिपाञ्जित्वा श्वशुरं तदधीश्वरम्॥ (४।४६५)॥”
  7. শ্রীযুত নগেন্দ্রনাথ বসু প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব মহাশয় “ব্রাহ্মণ-কাণ্ড” নামক গ্রন্থের প্রথমাংশে কহ্লণোক্ত “জয়ন্ত” এবং কুলপঞ্জিকা-সমূহে উল্লিখিত পঞ্চব্রাহ্মণ-আনয়নকারী “আদিশূর”কে অভিন্ন বলিয়া প্রতিপাদন করিতে যত্ন করিয়াছেন। তাঁহার প্রথম যুক্তি—“ধর্ম্মপালের পূর্ব্বে এখানে জয়ন্ত ব্যতীত আর কোনও হিন্দু রাজাকে ঐরূপ উচ্চ সম্মানে অলঙ্কৃত দেখি না। ইত্যাদি কারণে সহজেই বোধ হইতেছে, গৌড়াধিপ জয়ন্ত জামাতা কর্ত্তৃক পঞ্চগৌড়ের অধীশ্বর হইলে, ‘আদিশূর’ উপাধি গ্রহণ করেন (১০১ পৃঃ)।” কুলপঞ্জিকার আদিশূর ভিন্ন “পঞ্চগৌড়াধিপ” উপাধিধারী বাঙ্গালার আর কোন স্বাধীন হিন্দু রাজার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় নাই। শিলালিপি, তাম্রশাসন, এবং তৎকালীন সংস্কৃত গ্রন্থে দেখা যায়,—বাঙ্গালার স্বাধীন হিন্দুনৃপতিগণ “গৌড়াধিপ” বা “গৌড়েশ্বর” উপাধি লইয়াই তৃপ্ত ছিলেন। আর কহ্লণই বা জয়ন্তকে “পঞ্চগৌড়াধিপ” বলিলেন কোথায়? কহ্লণ বহুবচনান্ত “পঞ্চগৌড়াধিপান্” [গৌড়ের পাঁচ জন নৃপতির] উল্লেখ করিয়াছেন; একবচনান্ত “পঞ্চগৌড়াধিপম্” লিখিয়া যান নাই। উক্ত গ্রন্থের ১১৪ পৃষ্ঠার ২নং টীকায় বসু মহাশয় ব্রাক্ষণডাঙ্গা নিবাসী ৺বংশীবিদ্যারত্ন ঘটকের সংগৃহীত কুলপঞ্জিকা হইতে উদ্ধৃত করিয়াছেন,—“भृशूरेण च राज्ञापि श्रीजयन्त सूतेन च। नाम्नापि देशभेदैस्तु राढ़ी बारेन्द्र सात्‌सती॥” এই টীকার টীকায় আবার লিখিয়াছেন, “आदिशूर सूतेन च।” এইরূপ পাঠান্তর লক্ষিত হয়।” অন্য কোন পুস্তকে এই পাঠান্তর লক্ষিত হয়, না একই পুস্তকের টীকায় পাঠান্তর প্রদত্ত হইয়াছে, এ বিষয়ে বসু মহাশয় কিছুই বলেন নাই। জয়ন্ত ঐতিহাসিক ব্যক্তি হইলে, ১১০০ বৎসর পূর্ব্বে জীবিত ছিলেন। আর ৺বংশীবিদ্যারত্নঘটক ঊনবিংশ শতাব্দীর লোক। বংশীবিদ্যারত্ন কোন্ মূলগ্রন্থ হইতে এই তথ্য সংগ্রহ করিয়াছিলেন, সেই মূলগ্রন্থ কোন্ সময়ে রচিত হইয়াছিল, এবং উহার ঐতিহাসিক মূল্যই বা কত, ইত্যাদি বিষয়ের সম্যক্ বিচার না করিয়া, এত বড় একটা কথা স্বীকার করা যায় না।
  8. Memoirs A. S. B. Vol. I, No. 6.