গ্রাম্য উপাখ্যান/বহুদিবস পরে পৈতৃকবাটী দেখিয়া রামনারায়ণ বাবুর মনের ভাবোচ্ছ্বাস

বহুদিবস পরে পৈতৃকবাটী দেখিয়া রামনারায়ণ বাবুর মনের ভাবোচ্ছ্বাস।

 আমরা পাঠকবর্গের নিকট অঙ্গীকার করিয়াছিলাম যে অনেক দিন পরে মেলেরিয়া-গ্রস্ত স্বগ্রামের পৈতৃক বাটী দেখিয়া রামনারায়ণ বাবুর মনে যে সকল ভাব উপস্থিত হইয়াছিল তাহা তিনি যে ক্ষুদ্র প্রবন্ধে নিবন্ধ করেন তাহা আমরা তাঁহাদিগকে উপহার দিব। সে অঙ্গীকার আমরা পালন করিতে প্রবৃত্ত হইতেছি।

 “আমি বাটীতে আসিয়া প্রথম যখন আমার প্রাচীন সমবয়স্ক বৃক্ষগুলিকে (my old contemporary trees[]) দেখিলাম তখন মন কি পর্য্যন্ত উদ্বেলিত হইল তাহা কি বলিব? এই সকল বৃক্ষতলে কত ক্রীড়া কৌতুক করিয়াছি, কত প্রকার আমোদ প্রমোদে কাল যাপন করিয়াছি, এই সকল বৃক্ষতলে বসিয়া কত ভাবী সুখের ছবি আঁকিয়াছি, শূন্যে রামধনুর বর্ণে চিত্রিত কত শোভন অট্টালিকা নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহা কি বলিব? পৃথিবীর যে ভাগে আমি ভ্রমণ করি না কেন তাহার চিত্র আমাদিগের মন হইতে কখনই অন্তর্হিত হইবে না। জন্মেনী দেশীয় জ্ঞানী কেণ্ট (Kant) তাঁহার ঘরের যে জানালার নিকট বসিয়া গ্রন্থ রচনা করিতেন সে জানালার সম্মুখে অন্যের ভূমির উপর স্থিত একটী প্রকাণ্ড বৃক্ষ ছিল, যখন শুনিলেন ভূস্বামী সেই বৃক্ষটী ছেদন করিতে চাহেন তখন তাঁহার মহাবিপদ জ্ঞান হইল। তিনি ভূস্বামীকে অনেক অনুরোধ করিয়া সেই বৃক্ষ রক্ষা করিলেন। কেণ্ট কি জন্য ঐ বৃক্ষটির বিনাশ মহাবিপদ জ্ঞান করিয়াছিলেন তাহা আমি এখন বুঝিতে পারিতেছি। আমি বাটীতে আসিয়া সে কালের স্কুলমাষ্টার কৃষ্ণমোহন বসুর পুত্রের নিকট বাটীর চাবি চাহিয়া পাঠাইলাম। চাবি আনিবার পূর্ব্বে যখন গ্রামের বায়ু আমার গাত্র স্পর্শ করিতে লাগিল, তাহা মেলেরিয়া সংসৃষ্ট জানিয়াও আমি ইংরাজী কবি গ্রের (Gray) রচিত নিম্নলিখিত কয়েক পংক্তি আবৃত্তি করিতে লাগিলাম।

“Ah, happy groves it![] ah, pleasing shade!
Ah, fields beloved in vain
Where once my careless childhood strayed
A stranger yet to pain!
I feel the gales that from ye blow
A momentary bliss bestow,
As waving fresh their gladsome wing,
My weary soul they seem to soothe
And, redolent of joy and youth,
“To breathe a second Spring.”

নিরর্থক প্রেম করিয়াছি তোরে
হে সুখদা কুঞ্জ? সুখদ প্রান্তর!
যথা যাপিয়াছি প্রমাদী কৈশোর
যখন দুঃখ দুঃখ দিত না মোরে।
বায়ু যে বহিছে স্পর্শিয়া তোমায়
ক্ষণস্থায়ী সুখ দিতেছে আমায়।

নাড়িয়া নিজের নবীন প্রফুল্ল পক্ষ
যৌবন ও হর্ষ ভাবে পূর্ণ সুরভিত
শান্তি ভাণে ভুলাইছে মম ক্ষিন্ন বক্ষ
হানিয়া বসন্ত যেন করিছে হ্লাদিত॥

 তৎপরে চাবি আনিয়া সদরবাটীর ঘরগুলি খুলিয়া দেখিতে আরম্ভ করিলাম। ইহা দেখিবার সময় পূর্ব্বের যে কত কথা স্মৃতিপথে উদিত হইল তাহা কি বলিব? বাহিরের দুইটী ঘর পাকা হইবার পূর্ব্বে আমার বাল্যকালে তথায় আটচালা ছিল। সেই আটচালার কথা মনে পড়িল। সেই আটচালার উত্তর বিভাগের উত্তর পশ্চিম কোণে রাধামোহন ঘোষ একটী টুলের উপর বসিয়া থাকিতেন। রাধামোহন ঘোষজা মহাশয় অতি সদাশয় অমায়িক উদার স্বভাব লোক ছিলেন, দোষের মধ্যে এই যে পাশা খেলিবার সময় তিনি এক এক বার অত্যন্ত রাগিয়া উঠিতেন। এমনি রাগিয়া উঠিতেন যে একবার তাঁহার প্রতিদ্বন্দীকে এমনি জোরে চড় মারিয়াছিলেন, যে তাহাতে তাহার মৃত্যু হয়। এইরূপ এক চড়ে লোকের মৃত্যু হয় ইহা অভাবনীয় কিন্তু এইরূপ ঘটিয়াছিল। ইহাতে যে মোকদ্দমা উপস্থিত হয় তাহাতে ঘোষজা মহাশয় সর্ব্বস্বান্ত হইয়া আমাদিগের বাটীতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। আমরা ছেলেবেলা তাঁহার তেফুকুরে দালানওয়ালা বাটী জঙ্গলপরিপূর্ণ অবস্থায় দেখিয়াছি, এক্ষণে তাহার চিহ্ন মাত্র নাই। উল্লিখিত আটচালায় আমার জেঠা মহাশয় আমাকে আপনার হাঁটুর উপর বসাইয়া চাণক্য শ্লোক ও “গাড ঈশ্বর” “লাড ঈশ্বর” পড়াইতেন। যখন উক্ত প্রকাণ্ড আটচালা ভাঙ্গিয়া বৈঠকখানা ঘর তৈয়ারী হইতেছিল তখন তাহার সম্মুখে যে একটা ক্ষুদ্র আটচালা ছিল তথায় মাদুরের উপর শুইয়া মেকলে পড়িতাম। ঐ প্রকাণ্ড আটচালা ভাঙ্গিয়া বাটীতে প্রবেশ পথের দুইদিকে দুইটা বৈঠকখানা ঘর তৈয়ারী হয়, উক্ত পথ ও উক্ত দুইটী বৈঠকখানা এক ছাদের নিম্নে স্থিত। ঐ দুই ঘরের মধ্যে যে ঘরে আমি বসিতাম তাহাতে প্রবেশ করিবামাত্র পূর্ব্বকালের কত কথা যে মনে হইল তাহা কি বলিব? এই ঘরে বসিয়া আমি গোলিবাটীর অভয় চরণ নামক যুবক ভট্টাচার্য্যের সহিত কথোপকথন করিতাম। তিনি সে সময়ে নবদ্বীপে ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করিতেন। তাঁহার নিকট আমি প্রথম জানিলাম যে নবদ্বীপ আমাদের বঙ্গদেশের অক্সফোর্ড, তথায় কর্ণাট, বিষ্ণু, কাঞ্চী ও পঞ্জাবের ছাত্র আসিয়া অধ্যয়ন করে এবং তাহারা বঙ্গদেশের ছাত্রদিগের সহিত সংস্কৃতে কথোপকথন করে। এই ঘরে বসিয়া সঙ্গীতশাস্ত্রনৈপুণ্যাভিমানী সুসভ্য ভরত মালী, যাঁহাকে আমি মালীপো বলিয়া ডাকিতাম। কিন্তু গ্রামস্থ লোক মালীদাদা বলিয়া ডাকিত তিনি আমার পিতা আনন্দকিশোর বাবুকে রামমোহন রায়ের “ভুলনা ভুলনা মন নিত্য সত্য সদাত্মাকে” প্রভৃতি গান শুনাইতেন। এই ঘরে শ্রীপতি ঠাকুর কথক, যিনি মহারাজা সর যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের পারিষদ ছিলেন এবং সম্প্রতি পরলোক গমন করিয়াছেন, তিনি তানপুরা বাজাইয়া আপনার রচিত ঠাকুর ও ঠাকুরাণী বিষয়ক গান আমাদিগকে শুনাইতেন। মেলেরিয়া নিবন্ধন বাটী পরিত্যাগ করিবার অবব্যহিত পূর্ব্বে এই ঘরে আমরা গ্রামের কয়জন বসিয়া “বঙ্গের পূর্ব্বমহিমা” বিষয়ক একটী কবিতা লিখিয়া উপরে “বাদল কবিবৃন্দ কর্ত্তৃক বিরচিত” এই শিরোনাম দিয়া কলিকাতায় একটী মহাসভায় প্রেরণ করি। উক্ত কবিতা হইতে বঙ্গের যুবকদিগের শারীরিক অবনতি বিষয়ক কয়েক পংক্তি নিম্নে উদ্ধৃত হইল;

পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে ছিল প্রচলিত।
বাঙ্গালার প্রতিগ্রামে ব্যায়ামের রীত॥
প্রত্যেক উৎসবে যত মল্লগণ আসি।
তুষিত দর্শক মন নৈপুণ্য প্রকাশি॥
রায়বাস বর্ষা অসি আপন আপন।
লইয়া করিত ক্রীড়া জিনিবারে পণ॥
মুদ্গর লইয়া হস্তে ভদ্র যুবজন।
ভাঁজিতেন প্রতিদিন করিতেন ডন॥
এখন সে সব চর্চ্চা দেখা নাহি যায়।
গ্রন্থের চর্চ্চায় শুধু সময় কাটায়॥

* * *

অর্থলোভী পিতামাতা অর্থের কারণ।
পুস্তক পেষণী যন্ত্রে করিয়া পেষণ॥ 
সুকুমার শিশু বৃন্দে কি বলিব হায়!
কেবল অর্থের জন্য পরকাল যায়॥

 তৎপরে যে বৈঠকখানা ঘরে আমার খুড়া মহাশয় হরিহর বসু বসিতেন সে ঘরে আসিলাম। পূর্ব্বে এই ঘরে ঢুকিবামাত্র মধ্যম নারায়ণ তৈল ও আয়ুর্বেদোক্ত ঔষধের কত বিচিত্র গন্ধ অনুভব করা যাইত; তিনি এই ঘরে বসিয়া শাস্ত্রের কত শ্লোক আবৃত্তি করিতেন ও সে কালের গল্প করিতেন। এই ঘরে প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্য্যন্ত কত লোকের সমাগম হইত। এই ঘরে কত শাস্ত্রালাপ কত ক্রীড়া কৌতুক হইত। ইহা গ্রামের ক্লব স্বরূপ ছিল। কেবল প্রত্যহ দুই তাল তামাক খরচ করিতে হইত মাত্র তাহাতেই গ্রামের সকল লোক বশীভূত। তাহাদিগের সরলাত্মাকে বশ করিবার জন্য বেশী কিছু আবশ্যক হইত না। সদর বাটী পরিত্যাগ করিয়া বাটীর ভিতর প্রবেশ করিলাম। এই বাটীর ভিতরের পূবের ঘর খড়ো ও দক্ষিণের দীর্ঘ ঘর পাকা, তাহাতে অনেক কুঠরী আছে। এই পূবের ঘরের দাওয়াতে গ্রামের ভঞ্জ বংশের কন্যা আমার বৃদ্ধ অন্ধ পিতামহী (আমার ঠাকুরের জেঠাই) বসিয়া আমাদিগের নিকট সিংহির মামা ভম্বোল দাসের গল্প করিতেন এবং আমরা তাহা হাঁ করিয়া শুনিতাম। তিনি এই পূবের ঘরে শেষ রাত্রিতে জাগিয়া বিছানায় শুইয়া শুইয়া আমাদিগকে

“সুমেরু সমতুল্য হিরণ্য দানে।
নহি তুল্য নহি তুল্য গোবিন্দ নামে৷॥”

 এই প্রকার কত পদ্য অভ্যাস করাইতেন। বুড়ীর পার্শ্বে একটী নেকড়োতে কতকগুলি কাটা সুপারি বাঁধা থাকিত ও সম্মুখে একটী জলের ঘটি থাকিত। সেই সুপারি বাঁধা নেকড়া ও জলের ঘটি তাঁহার প্রাণ ছিল। বুড়ি এমন রাশভারি ব্যক্তি ছিলেন যে যখন নিকটস্থ উদ্যানে দিনের বেলা সদরের লোকের অনুমতি লইয়া গ্রামের কোন ব্যক্তি নারিকেল পাড়িতে উঠিত সে তাঁহার জ্বালায় নারিকেল পাড়িতে পারিত না। প্রথম নারিকেলটী ভূমিতে পাড়িবার শব্দ তাঁহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিলে তিনি এমনি এমন এক “কেও” ঝাড়িতেন যে তাহাতে বৃক্ষারোহীর শরীর অবশ হইয়া গাছ হইতে তাহা তৎক্ষণাৎ একেবারে নীচে পড়িবার সম্ভাবনা হইত। বুড়ী আপনার শরীরের লোলচর্ম্মের সহিত নাতি নাতিনী ও ছোট ছোট নাত বউএর গায়ের আঁটাসোটা অথচ কোমল চর্ম্মের বৈপরীত্য অনুভব করিতে বড় ভালবাসিতেন, সে জন্য তিনি সর্ব্বদা তাহাদিগের গা টিপিয়া টিপিয়া দেখিতেন। এই পুবের ঘরের দাওয়ায় তাঁহার কন্যা আমার বিধবা পিসিঠাকুরাণী তাঁহার মাতার পাশ্বে সর্ব্বদা বসিয়া থাকিতেন। পিসিঠাকুরাণী অতিশয় বুদ্ধিমতী ছিলেন। তিনি বলিতেন যে মন বেলোয়ারি গ্লাসের ন্যায়, একবার মন ভাঙ্গাভাঙ্গি হইলে, তাহা আর ঠিক যোড়া লাগে না! অতএব বন্ধুতাতে অত্যন্ত সতর্কতা আবশ্যক। ইহার এক নাতনী ছিল, সে ষোড়শবর্ষ বয়ঃক্রমের সময় অপস্মার রোগে আক্রান্ত হইয়া মরে। সে পাড়ার একটী বালিকার সহিত “গঙ্গাজল” পাতাইয়াছিল। সেই বালিকা একবার আমাদিগের বাটিতে আসিয়াছিল, কোন প্রয়োজন বশতঃ ঘরের বাহিরে যাইবে এমন সময়ে বৃষ্টি পড়িতেছিল, নাতিনী বলিল “যাইওনা যাইওনা, গঙ্গাজলে কুব্‌জল পড়িয়া সব কুব্‌জল হইয়া যাইবে।” আমার পিসিঠাকুরাণীর উক্ত নাতিনী অশিক্ষিতা কিন্তু আশিক্ষিতা হইয়াও এই বাক্যে কি অসাধারণ কবিত্বশক্তি প্রকাশ করিয়াছিল। এইরূপ পূর্ব্বের কত কথা স্মরণ হইতে লাগিল তাহা আর কি বলিব? পূর্ব্বের সে কথা সকল স্মরণ হইয়া মন কিরূপ আকুল হইতেছে তাহা বলিতে পারি না। আমি মনে করিয়াছিলাম যে আমার এই বৃদ্ধ অবস্থাতে আমার জন্মস্থানে জীবনের অবশিষ্ট কাল যাপন করিব, কবির “Oh blest Retirement! friend to life’s decline” “হে বার্দ্ধক্যসুহৃৎ! মঙ্গল নিভৃত বাস” এই বাক্যের যাথার্থ্য অন্য কবির কিন্তু বিধাতা সেরূপ লিখেন নাই, হা মেলেরিয়া! তুই দেশের কি সর্ব্বনাশ না করিতেছিস! তুই গ্রামকে গ্রাম বিজন ও বন্যাশূকরাদি হিংস্রক জন্তুর আবাস করিতেছিস্। তুই কত বাস্তুভূমি নির্জ্জন করিয়াছিস্ তাহার সংখ্যা নাই। তুই অনেক বাটীতে প্রদীপ দিবার একটা লোক পর্য্যন্ত রাখিতেছিস্ না। তুই বৃদ্ধ পিতামাতার সমস্ত আশা ভরশা একটী পুত্রকে তাঁহাদিগের বক্ষ হইতে অপহরণ করিতেছিস্। দুই নবদম্পতির একটীকে আর একটীর আলিঙ্গন হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া তাহাকে অপার শোকার্ণবে মগ্ন করিতেছিস; যে সকল যুবকদিগকে তুই একেবারে প্রাণে না মারিতেছিস তাহাদিগের শরীরের গ্রন্থি হইতে বল ও তাহাদিগের মন হইতে যৌবনসুলভ স্ফুর্ত্তি একেবারে চিরদিনের মতন হরণ করিতেছিস্! তোর নিরাকরণের জন্য রাজাও মনোযোগ দেন না, সাধারণবর্গেরও মনোযোগ নাই। রাজা বিদেশীয়, আমাদিগের দেশের প্রতি তাঁহার কেন আন্তরিক মমতা হইবে? তিনি এক একবার টাকার শ্রাদ্ধ করিয়া কমিসন বসাইয়া ও কলেক্টরের প্রতি এক একটী শূন্যগর্ভ আদেশ প্রচার করিয়া নিশ্চিন্ত থাকেন। আমাদিগের প্রধান প্রধান দেশহিতৈষী ব্যক্তিরা কেবল রাজনৈতিক আন্দোলনে ব্যস্ত, কিন্তু তাঁহারা বিবেচনা করেন না যে লোকের অগ্রে বাঁচা চাই, তাহা না হইলে রাজনৈতিক আন্দোলন কে করিবে? আমাদিগের অরণ্যে রোদন মাত্র। কে আমাদিগের কথা শুনে? মাতর্বঙ্গভূমি! তুমি ছারখার হইতেছ, তোমার কেহ সম্বাদ লয় না। আরঙ্গজেব বাদসাহ তোমাকে “জেন্নতল বোলাদ” অর্থাৎ দেশ সকলের মধ্যে স্বর্গভূমি বলিয়াছিলেন। কোন ইংরাজ কবি বলিয়াছেন

“Nature’s chiefest bounties fall
To thy productive fields, Bengal.”

“প্রধানতঃ বঙ্গ! তব ক্ষেত্রোপরে
প্রকৃতি দানিছে দান অকাতরে।”

 তুমি এত উর্ব্বরা কিন্তু তোমাতে লোক না থাকিলে কে তোমায় কর্ষণ করিয়া শস্য ও ফল উৎপাদন করিবে।”

 এই খানেই রামনারায়ণ বাবুর প্রবন্ধ শেষ হইল, এবং বাদলগ্রামের মাঝের পাড়ার বসু দিগের বৃত্তান্ত শেষ হইল। আমরা ইহার পরে গ্রামের ব্রাহ্মণ কায়স্থাদিগের মধ্যে যাহাদিগের চরিত্রে একটু বিশেষত্ব অথবা কিছু অদ্ভুতত্ব ছিল তাহাদিগের বৃত্তান্ত লিখিয়া গ্রামের পুরোহিত, ডাক্তার, বৈদ্য, স্কুলমাষ্টার, গুরুমহাশয়, মালী, গোয়ালা প্রভৃতির ক্রমান্বয়ে বর্ণনা করিব।

  1. Cowley.
  2. “Hills” শব্দের পরিবর্ত্তে “groves” শব্দ বসাইয়া দেওয়া গিয়াছে। বিধাতা বঙ্গদেশের অধিকাংশে পর্ব্বত দেন নাই।