গ্রাম্য উপাখ্যান/বৈদ্যনাথ সার্ব্বভৌম
বৈদ্যনাথ সার্ব্বভৌম।
ইনি একজন কবি ও নৈয়ায়িক ছিলেন। ইনি এরূপ কবিত্বশক্তিসম্পন্ন ছিলেন যে একদা কোন রাজার রাজসভায় রাজার প্রতি প্রদক্ষিণে তৎক্ষণাৎ একটী একটী নূতন কবিতা রচনা করিয়া স্তব করিতে লাগিলেন। ইহাতে রাজা ও তাঁহার সঙ্গে সমাগত পণ্ডিতমণ্ডলী সকলেই আশ্চর্য্য হইলেন। সার্ব্বভৌম-মহাশয় এক খানি সংস্কৃত গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। এক সময় তাঁহার কোন ছাত্র তাঁহার অজ্ঞাতে পুস্তক খানি লইয়া বিখ্যাত রামদুলাল সরকারের নিকট বিক্রয় করিতে যান। তথায় দুই এক জন পণ্ডিত উহাতে ব্যাকরণ ভুল ধরিয়া রামদুলাল সরকারকে পুস্তক খানি ক্রয় করিতে নিষেধ করেন। তাহাতে উক্ত শিষ্য বিফলমনোরথ হইয়া ক্ষুন্ন মনে বাটী ফিরিয়া আসিতেছিলেন, পথিমধ্যে গুরুর সহিত সাক্ষাৎ হয় তাহাতে শিষ্য সমুদায় বিবরণ ব্যক্ত করিলে পর সার্ব্বভৌম মহাশয় আপনার গন্তব্য পথে গমন না করিয়া একেবারে সশিষ্যে উক্ত সরকার মহাশয়ের বাটীতে উপস্থিত হয়েন। উক্ত সরকার মহাশয় তাঁহার আগমনের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধিৎসু হইলে তিনি বলেন “তোমার সভাপণ্ডিতেরা আমার পুস্তকখানিতে ব্যাকরণদোষ ধরিয়াছেন, অতএব সেই সকল পণ্ডিতের সহিত এ বিষয়ে বিচার করিতে চাহি।” অনন্তর সার্ব্বভৌম মহাশয় উক্ত সরকার মহাশয়ের আশ্রিত পণ্ডিতমণ্ডলীর সহিত অনেক তর্ক বিতর্ক করিয়া স্বপ্রণীত পুস্তকখানি নির্ভুল প্রমাণ করিয়া লন। পরে উক্ত সরকার মহাশয় যথোচিত মূল্যে পুস্তক খানি ক্রয় করেন। একবার বৈদ্যনাথ সার্ব্বভৌম মহাশয় শ্রীরামপুরে পাদ্রী কেরী সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলেন যে বেদব্যাস যেমন এক লক্ষ শ্লোকে মহাভারত রচনা করিয়াছেন, আমাকে অনুমতি দেও আমি এক লক্ষ শ্লোকে ইংরাজ রাজত্ব বর্ণনা করি, কিন্তু একথার উত্তর প্রাপ্তির পূর্ব্বে সার্ব্বভৌম মহাশয় কালের করাল গ্রাসে পতিত হয়েন। সার্ব্বভৌম মহাশয় ঐ গ্রন্থ রচনা করিলে তাহা একটি পরমাদ্ভুত মহাভারত হইত তাহার সন্দেহ নাই। কোন তন্ত্রে আছে “ইংরেজা লণ্ড্রেজা সর্ব্বসংগ্রামেষ্বপরাজিতা।” সার রাজা রাধাকান্ত দেবের শব্দকল্পদ্রুমের পরিশিষ্টের প্রথমে তাঁহার একটা সংস্কৃত জীবনচরিত আছে তাহাতে এক স্থানে লিখিত আছে, “লর্ডনেচ তথা লেডীং[১] ক্যানিঙ্গেন বিশেষতঃ” আর এক স্থানে লিখিত আছে, “ততঃ সর হবর্টমেডাক ডেপিউটী গবর্ণর।”[২] সার্ব্বভৌম মহাশয় যদি সংস্কৃতে ইংরাজমাহাত্ম্য লিখিতেন তাহা হইলে তাহা এইরূপ শ্লোকে পরিপূর্ণ হইত সন্দেহ নাই। যদি ভট্টাচার্য্য মহাশয় উক্ত গ্রন্থ রচনা করিতেন তাহা হইলে তাহা হইতে প্রকৃত ইংরাজমাহাত্ম্য আমরা জানিতে পারিতাম না। যদি আমাদিগের পাঠক বর্গ প্রকৃত ইংরাজমাহাত্ম্য জানিতে চান তাহা হইলে “Torren’s Indian Empire, how we come by it” দেখুন। তাহাতে যেমন ইংরাজমাহাত্ম্য বর্ণিত আছে এমন অন্য কোন গ্রন্থে নাই। উহাতে ইংরাজেরা কি উপায়ে ভারতবর্ষ করায়ত্ত করেন, তাহা বিলক্ষণরূপে বিবৃত আছে। উঠা পাঠ করিলে পাঠকবর্গ ইংরাজমাহাত্ম্য যেরূপ জানিতে পারিবেন এমন অন্য কোন গ্রন্থ পাঠ করিলে পারিবেন না।