চণ্ডিকা-মঙ্গল/একাদশ অধ্যায়

একাদশ অধ্যায়।

দেবস্তুতি।

যুদ্ধেতে পড়িল যদি দানবের পতি।
ইন্দ্র অগ্নি আদি দেব স্তবয়ে পার্ব্বতী॥
প্রসন্ন বদন হ’য়া যত দেবগণ।
বিবিধ প্রকারে করে দুর্গারে স্তবন॥
ব্যাধি হরা দুঃখ হরা দেবী ভগবতী।
প্রসন্ন হইয়া রক্ষা করিয়াছ ক্ষিতি॥
চরাচর যত ইতি সকল ঈশ্বরী।
জগত আধার তুমি একা মহেশ্বরী॥
মহীরূপে পৃথিবীতে করিয়াছ স্থিতি।
জল রূপে পৃথিবীতে তুমি ভগবতী॥
তুমি সে বৈষ্ণবী শক্তি প্রভাব অতুল।
তুমি সে পরম মায়া সংসারের মূল॥
তোমার মায়াতে মোহ এ তিন সংসার।
তুমি সুপ্রসন্ন হ’লে সবার উদ্ধার॥
বুদ্ধি রূপে সকলের হৃদয়েতে স্থিতি।
স্বর্গ, মুক্তি পদ, দাত্রী তুমি ভগবতী॥
কলা কাষ্ঠা রূপে দুই বিনাশ কারিণী।

সংসারের শেষ শক্তি তুমি নারায়ণী॥
সবার মঙ্গল তুমি মঙ্গল কারিণী।
সর্ব্বার্থ সাধিকা দেবী শিবের স্বরিণী॥
তুমি ত্রিনয়নী দেবী গণেশ জননী।
নম নম নম দেবী নম নারায়ণী॥
তুমি দেবী সৃষ্টি স্থিতি বিনাশ কারিণী।
তুমি শক্তি তুমি স্মৃতি তুমি সনাতনী॥
গুণাশ্রয় গুণময় তুমি সে আপনি।
করুণা করিয়া দৃষ্টি কর ত্রিনয়নী॥
শরণাগতের তুমি তারণ কারিণী।
দুঃখ পীড়া হরা তুমি জগত জননী॥
হংস রথে আরোহণ তুমি সে ব্রহ্মানী
দৈত্য বিনাশিতে তুমি সে খড়্গ ধারিণী॥
চন্দ্র ত্রিশূল আর ভুজঙ্গ ধারিণী।
মাহেশ্বরী রূপে মহা বৃষভ বাহিনী॥
শক্তি হস্তে মহাদেবী দৈত্য বিনাশিনী।
কুমারী স্বরূপে দেবী পর্ব্বত নন্দিনী॥
দন্তে ধরিয়াছ ক্ষিতি বরাহ রূপিণী।
ত্রিভুবন রক্ষিয়াছ শিবের ঘরিণী॥
নৃসিংহ রূপে হিরণ্যকশিপু নাশিনী।
ত্রৈলোক্যের যত ইতি ত্রাণ কারিণী॥
বজ্র হস্তা তুমি দেবী সহস্র লোচনী।
বৃত্র প্রাণ হরা দেবী নম সনাতনী॥
শিবদ্যুতি রূপে দৈত্য বধিয়া আপনি।

ভয়ঙ্করা সে রূপেতে কম্পিতা ধরণী॥
করাল বদনা মুণ্ডমালা বিভূষিতা।
চামুণ্ডা তোমার নাম পর্ব্বত দুহিতা॥
লক্ষ্মী অদ্ধা লজ্জা পুষ্টি তুমি সে আপনি।
মহামায়া মহাবিদ্যা পতিত পাবনী॥
মেধা স্বরস্বতী তুমি জগত জননী।
নিয়ত প্রসিদ্ধ তুমি নম নারায়ণী॥
শান্ত মুখী তুমি দেবী বর প্রদায়িনী।
সর্ব্বভূতে তুমি স্থিতি নম কাত্যায়নী॥
অতি উগ্রা করাল বদনী সনাতনী
শূল হস্তা ভদ্রকালী আরক্ত লোচনী।
তুমি যারে তুষ্ট তার ব্যাধি হয় নাশ
রুষ্ট হ’লে পূর্ণ তার নহে অভিলাষ
যেই জন লয় তব চরণ আশ্রয়।
কভু নাহি করে সেই আপদেতে ভয়॥
উগ্র বিষ নাগ হ’তে রক্ষহ জননী।
সকল বিপদ হ’তে পতিত পাবনী॥
আর রক্ষা কর যথা আছে শত্রু ভয়।
রক্ষা কর দাবানল যথাতে দহয়॥
সমুদ্রের মধ্যে রক্ষা কর ভগবতী।
সকল বিপদে ত্রাণ কর এই ক্ষিতি॥
দেবী বলে শুন ওহে যত দেবগণ।
বর লও যার ইচ্ছা মত যেই জন॥
দেবগণে বলে মহা দেবী মহামায়।

সর্ব্ব বাধা নষ্ট হবে তোমার কৃপায়॥
এই বর পাদ পদ্মে চাহি মা জননী।
আমাদের শত্রু সংহারিবে নারায়ণী॥
দেবী বলে নন্দ ঘরে যশোদা উদরে।
লভিব জনম দুষ্ট দৈত্য মারিবারে॥
ধরিয়াছি মহাযুদ্ধে রূপ ভয়ঙ্কর।
ক্রমে ক্রমে বধিয়াছি যতেক অসুর॥
শত নেত্রে দৃষ্টি করিয়াছি মুনিগণ।
যত প্রাণিগণ আছে করি নিরীক্ষণ॥
ত্রৈলোক্য হিতের হেতু বধিনু দানব।
ভবানী বলিয়া স্তব করয়ে মানব॥
অবনীতে যত হবে দুষ্টের প্রকাশ।
অবতার হ’য়া দুষ্ট করিব বিনাশ॥