চণ্ডিকা-মঙ্গল/দশম অধ্যায়

দশম অধ্যায়।

শুম্ভ বধ।

নিশুম্ভ পড়িল যদি দৈত্যের ঈশ্বর।
বহু সৈন্য ক্ষয় হ’ল সমর ভিতর॥
দেখি ক্রোধ যুক্ত হয়া মহা বলবান।
কহিতে লাগিল কিছু চণ্ডিকার স্থান॥
ওহে দুষ্টা দুর্গা শুন বচন আমার।
প্রতিফল দিব তোর যত অহঙ্কার॥
সাহায্য লইয়া তুমি যত শক্তিগণ।
নির্লজ্জ হইয়া মম সঙ্গে কর রণ॥
দেবী বলে শুন ওহে শুম্ভ দুরাচার
একা আমি দ্বিতীয় যে নাহিক আমার॥
দেখ দুষ্ট এই সব আমার বিভূতি।
একা আমি সমরেতে হইলাম স্থিতি॥
যত শক্তিগণ ছিল সমর ভিতরে।
দেবীর বদন দিয়া প্রবেশে উদরে॥
শক্তিগণ যদি দেহে করিল প্রয়াণ।
রহিল অম্বিকা দেবী একা রণ স্থান॥
অসুরের প্রতি তবে কহিল অম্বিকা।
বিভূতি হরিয়া আমি হইলাম একা॥

মম সৈন্য যত ছিল ওহে শুম্ভ বীর।
সব চলি গেল বুঝ হইয়া সুস্থির॥
দেবী বাক্যে দুই জনে হয় মহারণ।
অন্তরীক্ষে থাকি যুদ্ধ দেখে দেবগণ॥
অস্ত্রাঘাতে শর বৃষ্টি হয় সমশর।
বাধে দুই জনে যুদ্ধ অতি ভয়ঙ্কর॥
মহা অস্ত্রগণ যাহা ক্ষেপে মহামায়।
শুম্ভ রাজা সেই সব কাটিল হেলায়॥
তীক্ষ্ণ অস্ত্র দেবী যত করিল প্রকাশ।
হুঙ্কারে অসুর পতি করিল বিনাশ॥
তবে দৈত্য রাজ করে শর বরিষণ।
শরজালে দেবীকে করিল আচ্ছাদন॥
অতি ক্রোধে ভগবতী হ’য়া কম্পবান।
দৈত্য রাজ ধনু কাটে করিয়া সন্ধান॥
ধনু কাটা গেল তার শক্তি ল’য়া করে।
ক্রোধ হ’য়া হানে তাহা দেবীর উপরে॥
দেবী ছাড়িলেন চক্র অতুল প্রচণ্ড।
অসুরের শক্তি কাটি করে খণ্ড খণ্ড॥
শক্তি কাটা গেল দৈত্য হইল কুপিত।
তীক্ষ্ণধার খড়্গ হাতে লইল ত্বরিত॥
শত চন্দ্র সূর্য্য দেখা যায় খড়্গ ধারে।
বেগে ধায় দৈত্য রাজ দেবী মারিবারে॥
সন্ধান করিবা খড়্গ ছাড়ে দৈত্যেশ্বর।

পার্ব্বতী কাটিল তাহা হানি তীক্ষ্ণ শর।
রবির কিরণ সম ল’য়া তীক্ষ্ণ বাণ।
অসুর উদ্দেশে দেবী করিল সন্ধান॥
সত্বর কাটিল দৈত্য রাজার সারথি।
ঘোড়া সহ রথ কাটি করিল বিরথী॥
বিরথী হইয়া দৈত্য কাঁপে থর থর।
দেবীকে মারিতে হস্তে লইল মুদ্গর॥
মারিল মুদ্গর দৈত্য অতি ভয়ঙ্কর।
মুদ্গর কাটিল দেবী ত্যজি তীক্ষ্ণশর॥
দেবীকে মারিতে যায় মুষ্টির প্রহার।
দেবী মুষ্টি মারিলেক হৃদরে তাহার॥
অতি ব্যথা হ’ল মুষ্টি বক্ষেতে পড়িয়া।
অস্থির হইল দৈত্য তাড়না পাইয়া॥
মুর্চ্ছিত হইয়া রাজা পড়ে ভূমিতল।
পুনর্ব্বার উঠি যুদ্ধ করে মহাবল॥
দেবী ধরি লম্ফ দিয়া উঠিল আকাশে।
তথায় করিল যুদ্ধ অতুল সাহসে॥
দাঁড়াইতে স্থান নাই শূন্যে করি স্থিতি।
অসুর সহিত যুদ্ধ করে ভগবতী॥
পরস্পর বাহু যুদ্ধ ঘন ঘন হয়।
দেখি দেব ঋষিগণ হুইল বিস্ময়॥
দুই জনে বহুকাল বাহুযুদ্ধ করে।
ভ্রমাইয়া দেবী তারে ফেলে ক্ষিতিপরে॥
আকাশ হইতে যবে হ’ল ভূমিগত।

চণ্ডীকে মারিতে দৈত্য হইল উদ্যত॥
মুষ্টি হানি বেগে ধায় চণ্ডীর উদ্দেশে।
আসে দৈত্য দেখি চণ্ডী অট্ট অট্ট হাসে॥
অগ্নি যুক্ত শূল দেবী ছাড়িল তৎকালে।
বক্ষ বিদারিয়া দুষ্ট পড়ে ক্ষিতিতলে॥
শূলাঘাতে শুম্ভ রাজা হইল সংহার।
দেখি সৈন্যগণ সবে করে হাহাকার॥
শুম্ভ যবে পড়িলেক ভূমির উপরে।
সমুদ্র পর্ব্বত সহ বসুমতী নড়ে॥
দেবতার অরি দুষ্ট হইল বিনাশ।
এ মহী মণ্ডল করে আনন্দ প্রকাশ॥
জগৎ সুস্থির হ’ল শান্ত হ’ল জল।
মেঘ সব দূরীভূত গগন নির্ম্মল॥
দেবগণ তুষ্ট দেখি শত্রুর নিধন।
অবনী মণ্ডলে তুষ্ট শুনি প্রাণিগণ॥
পূণ্যের হইল বৃদ্ধি বহে সুবাতাস।
গগণে সূর্য্যের দীপ্তি হইল প্রকাশ॥
অগ্নি তেজ বৃদ্ধি হ’ল চৌদিক উজ্জ্বল।
অধীন ভৈৱর কহে চণ্ডিকা মঙ্গল॥