চণ্ডিকা-মঙ্গল/চতুর্থ অধ্যায়
চতুর্থ অধ্যায়।
দেবগণের স্তুতি।
ত্রিপদী।
দৈবাসুর পড়ে রণে, ইন্দ্র আদি দেবগণে,
চণ্ডিকার করে নানা স্তুতি।
অতি ভক্তি নম্র শিরে, লোটাইয়া ক্ষিতি পরে,
কর যোড়ে স্তবয়ে পার্ব্বতী॥
তুমি দেবী বট জয়া, তুমি দেবী মহামায়া,
তুমি জগতের আদ্যাশক্তি।
তুমি বিনা শক্তি নাই তুমি নিখিলের আই,
দেব ঋষি পূজে করি ভক্তি॥
ভক্তে নমস্কার করে, সুখে রাখ তা সবারে,
তুমি দেবী জগতের মাতা।
তোমার প্রভাব অতি, হরিহর প্রজাপতি,
কহিবারে নাহিক ক্ষমতা॥
তুমি পৃথিবী রক্ষিণী, ভয় হরা নারায়ণী,
ভক্তের তুমি হে জ্ঞানদাতা।
লক্ষ্মী সুজনের ঘরে, অলক্ষ্মী পাপীর পুরে,
বুদ্ধিরূপে ধীর দেহে স্থিতা॥
শত শ্রদ্ধা মা স্বরূপা, কুলীনের লজ্জা রূপা,
বহু শ্রমে রাখিয়াছ ক্ষিতি।
হীন বুদ্ধি কি কহিব, অতুল মহিমা তব,
সর্ব্ব গুণময়ী ভগবতী॥
কৃপা কর মূঢ় জানি, দয়া রূপে মা জননী,
কহিবারে শক্তি আছে কার।
তব বলবীর্য্য অতি, বিস্তর অসুর ঘাতি,
যুদ্ধেতে সুচরিত্র তোমার॥
পয়ার।
দেবাসুর জীব যত আছয়ে সংসার।
কহিতে না পারে তব চরিত্র অপার॥
জগত রক্ষার্থে তুমি ত্রিশূল ধারিণী।
নারায়ণ প্রকাশিতে না পারে আপনি॥
সর্ব্বভূতে প্রদত্ত যে করিছ স্বঅংশ।
পরব্রহ্ম হও তুমি নাহি তব ধ্বংস॥
স্বহা উচ্চারণে যজ্ঞে তৃপ্তি দেবগণ।
সেই স্বহা নাম দেবী করে’ছ ধারণ॥
স্বধা তোমার নাম করে উচ্চারণ।
তাতে অতিশয় তুষ্ট যত পিতৃগণ॥
মোক্ষ পদ হেতু তুমি মহিমা অপার।
জিতেন্দ্রিয় জনে তত্ত্ব না পার তোমার॥
মুখ্য পদ আকাঙ্ক্ষিত আছয়ে সমস্ত।
তবগুণে তা সবার দোষ হয় অস্ত॥
তুমি বৃদ্ধা ভগবতী প্রকৃতি প্রধান।
ঋক্যজুসাম তিন বেদের প্রমাণ॥
তুমি মেধা অখিলের তুমি শাস্ত্রাগার।
দুর্লঙ্ঘ্য সাগরে তুমি একা কর্ণধার॥
লক্ষ্মীরূপে বিষ্ণুরূপে তোমার যে বাস।
তুমি গৌরী, ললাটেতে চন্দ্রের প্রকাশ॥
ঈষৎ হাস্য মুখ তব অত্যন্ত নির্ম্মল।
সুবর্ণ সদৃশ বর্ণ করে ঝলমল॥
দেখিয়া দেবীর ক্রোধ ভ্রূকুটি বদন।
পূর্ণিমার চন্দ্র যেন উদিত গগণ॥
হ’য়ে ছিলা ক্রোধ তবু পূর্ণচন্দ্র মুখ।
দেখি তাহা অসুরের কেঁপেছিল বুক॥
প্রাণ ত্যজে মৈষাসুর দেখিয়া বদন।
কে বাঁচে দেখিয়া দেবীর ক্রোধের বরণ॥
প্রসিদ্ধ প্রসন্না দেবী ভূবন প্রকাশ।
তুমি যারে কর ক্রোধ সমূলে বিনাশ॥
সাক্ষাতে দেখিয়া জ্ঞান পেয়েছে সকল।
হরিয়াছ বীর মৈষাসুর বীর্য্য বল॥
ভগবতী যার প্রতি সদায় প্রসন্ন।
জন্মিয়াছে পৃথিবীতে তারে বলি ধন্য॥
ধনী মধ্যে গণ্য সেই মান্য অতিশয়।
কোন মতে তার বংশ নাহি হয় ক্ষয়॥
যাঁর প্রতি দয়া তুমি কর মহামায়।
ধার্ম্মিক পণ্ডিত বলি তারে কহা যায়॥
তুমি সুপ্রসন্ন যারে সেই ধায় স্বর্গে।
ত্রিলোকের ফল দেবী তব হ’তে ভোগে॥
বিষম সঙ্কট পথে থাকিয়া যে প্রাণী।
পরিত্রাণ পায় তারা স্মরি নারায়ণী॥
স্থির চিত্তে যেই জনে স্তবয়ে পার্ব্বতী।
তারে দেবী প্রদান করয়ে শুভ ইতি॥
তুমি বিনা হৃষ্ট চিত্ত আছে কোন জন।
দরিদ্রের দুঃখ দেবী করিতে হরণ॥
দুষ্ট বধে হইল সৃষ্টির উপকার।
তব হস্তে মরি দুষ্ট হইল উদ্ধার॥
দেবী কোপদৃষ্টে কেবা না হয় নিধন।
নিধন হইলে স্বর্গ পায় সেই জন॥
সংগ্রামেতে মৃত্যু হ’লে স্বর্গপুরে যায়।
সে কারণে অস্ত্র ধরি বধে মহামায়॥
শূল হস্তে আমা সবে রক্ষহ ঈশ্বরী।
পতিত পাবনী রক্ষ হ’য়া খড়্গধারী॥
ঘণ্টার শব্দেতে রক্ষা কর দেবী জয়া।
ধনুর টঙ্কারে রক্ষা কর মহামায়া॥
পূর্ব্ব পশ্চিম রক্ষঃ হ’য়া অনুকুল।
দক্ষিণ উত্তর রক্ষ ভ্রমাইয়া শূল॥
যথা শান্তরূপে তুমি কর চলাচল।
সুখে বঞ্চে সেই দেশবাসী যে সকল॥
আমাদের অভিলাষ সেইরূপ ধরি।
ত্রিভূবন রক্ষা কর জগত ঈশ্বরী॥
খড়্গ শূল গদা আদি মুষল মুগ্দর।
দেখি রিপুগণ ভয়ে কাঁপে থর থর॥
সেই সব অস্ত্র ল’য়া জগত জননী।
আমা সবে রক্ষিতেছ দেবী নারায়ণী॥
মুনি বলে শুন ওহে সুরথ রাজন।
এইরূপ স্তুতি করে যত দেবগণ॥
লইয়া কুসুম পুষ্প ধুপ দীপ সনে।
অর্চ্চিলা জগদীশ্বরী যত দেবগণে॥
কহিল দেবের প্রতি দেবী ভগবতী।
তোমাদের স্তবে আমি তুষ্ট হই অতি॥
যেই ইচ্ছা বর চাহ আমার নিকটে।
বরপ্রদা হব আমি কহি অকপটে॥
দেবগণে বলে বর পেয়েছি প্রচুর।
ত্রাণ যবে করিয়াছ বধিয়া অসুর॥
আর যদি বর দিবে ওহে মহেশ্বরী।
স্মরণেতে দুষ্ট হ’তে লইবে উদ্ধারি॥
যেই ভক্ত ডাকে তোমা বিনয় বচনে
দারা পুত্ত্রে বাড়াইয়া রাখ ধন জনে।॥
আত্ম হিত সংসারের হিতের কারণ।
দেবগণ ভক্তি ভাবে করে নিবেদন॥
তথাস্তু বলিয়া দেবী হ’ল অন্তর্দ্ধান।
মুনি বলে শুনহ সুরথ জ্ঞানবান॥
জগতের করিবারে যত হিত কর্ম্ম।
দেবগণ অঙ্গ হ’তে হইলেন জন্ম॥
শুম্ভ আদি দৈত্যগণ করিয়ে নিধন।
উপকার পায় যত দেব নরগণ॥
বিস্তারিয়া কহিলাম শুনহ সকল।
অভৈরব দাসে কহে চণ্ডিকা মঙ্গল॥