চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ/দ্বিতীয় খণ্ড/প্রথম সর্গ

চিত্রে
জয়দেব
গীতগোবিন্দ
প্রথম সর্গ
সামোদ দামোদর

প্রথম সর্গ

সামোদ দামোদর

 ভূমিকায় শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দ-কাব্যের আলোচনায় এই কাব্যের সর্গ-বিভাগ সম্বন্ধে লিখেছি যে, কবি জয়দেব এই কাব্যখানিকে বারোটি সর্গে বিভক্ত করেছেন। প্রত্যেক সর্গের তিনি একটা স্বতন্ত্র নাম দিয়েছেন। এই নামকরণের ভিতর দিয়েও জয়দেবের অপরূপ ভাষা-শিল্পের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রত্যেক নামটি একটা অনুপ্রাস এবং শব্দ-ঝঙ্কার আর লালিত্যের দিক থেকে প্রত্যেকটি নাম অপরূপ।

 কিন্তু শুধু অনুপ্রাস আর শব্দ-লালিত্যের দিক থেকেই জয়দেব এই সব নামকরণ করেননি। প্রত্যেক সর্গের বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে নামের অপূর্ব্ব ভাব-সংযোগ রয়েছে। প্রথম সর্গের নাম সামোদ-দামোদর। কারণ, এই সর্গে কবি দেখাচ্ছেন, কৃষ্ণ-প্রেম-আকুলা শ্রীমতী ব্যাকুলা হয়ে সর্ব্বত্র কৃষ্ণকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। সেই সময় তাঁর এক প্রিয় সখী তাঁকে দেখিয়ে দিল যে, তাঁর দামোদর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ আজ অন্য নায়িকার সঙ্গে আমোদ করছেন। তাই কবি এই সর্গের নামকরণ করেছেন, সামোদ-দামোদর।

মেঘৈর্ম্মেদুরমম্বরং বনভুবঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈর্নক্তং
ভীরুরয়ং ত্বমেব তদিমং রাধে গৃহং প্রাপয়।
ইত্থং নন্দ-নিদেশতাশ্চলিতয়োঃ প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমং
রাধামাধবয়োর্জয়ন্তি যমুনাকূলে রহঃ কেলয়ঃ॥ ১ ॥

 

মেঘেতে মেদুর আকাশ,
তাল-তমালে শ্যামা বনভূমি,
নামে ঘন-রাত্রি,
ওগো রাধা,
প্রণয়-ভয়-ভীত শ্রীকৃষ্ণকে
তুমি সঙ্গে করে পৌঁছে দিয়ে এসো গৃহে।

নন্দের এই নিবেদনে
রাধা-মাধব আজ দুজনে
নিভৃতে হলো মিলিত
যমুনার কূলে পথ-তরু-মূলে
জয় হোক্‌
রাধা-মাধবের এই প্রেম-খেলা॥ ১ ॥

 শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দের এই প্রথম শ্লোক নিয়ে আজ পাঁচশো বছর ধরে কত না রসিকজন, কত না পণ্ডিত কত না বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন।

 কবি জয়দেব গীতগোবিন্দ কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের বাসন্তী রাস-লীলা বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে কোথা থেকে এলো এই বর্ষার চিত্র? কাব্যে আরম্ভেই কেন এই বর্ষার নিবিড় রাত্রির বর্ণনা? এবং তার মধ্যে কোথা থেকেই বা এলেন গোপ-রাজ নন্দ? নন্দই বা রাধাকে কেন আদেশ করছেন শ্রীকৃষ্ণকে গৃহে পৌঁছে দিতে?

 এই শ্লোক নিয়ে পূজ্যপাদ পূজারী গোস্বামী থেকে আরম্ভ করে বহু বৈষ্ণব আচার্য্য বহু ব্যাখ্যা করেছেন। তার ভেতর থেকে একটি ব্যাখ্যা মনে হয় সকল দিক থেকেই সমীচীন। তাই সেই ব্যাখ্যাই এখানে দেওয়া হলো।

 রাধাকৃষ্ণের প্রেম-লীলার কাব্য লিখতে বসে, পরম বৈষ্ণব জয়দেব স্বভাবতঃই রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম-লীলার গূঢ়-তত্ত্বের কথা ভেবেছিলেন। তিনি তাঁর কাব্যে যে অপরূপ প্রেম-লীলার বর্ণনা করবেন, সাধারণ মানুষ যেন মনে না করে যে, এই প্রেম সাধারণ মানুষের কাম-কেলি। রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম-লীলা অনন্ত প্রকৃতির সঙ্গে অনাদি পুরুষের নিত্য লীলা। তার বাইরের দিকটা হলো মানবীয়, তার ভেতরের দিকটা হলো আত্মিক। কাব্যের আরম্ভেই তাই বৈষ্ণব কবি সেই কথা পাঠক-পাঠিকাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান এবং সেইজন্যেই সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞ জয়দেব ব্রহ্মবৈবর্ত্ত-পুরাণে যেখানে রাধা-কৃষ্ণের এই অতিমানবীয়তার স্বরূপকে উদ্ঘাটিত করা হয়েছে, সেই কাহিনীকে অবলম্বন করেই এই শ্লোক রচনা করেছেন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত-পুরাণের ১৫ অধ্যায়ে রাধা-কৃষ্ণের আসল পরিচয় কি, তাঁদের আসল সম্পর্ক কি, তার কাহিনী বলা হয়েছে এবং গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোকের বর্ষা-বর্ণনা, নন্দ-নির্দ্দেশ, সমস্তই সেখানে দেখতে পাওয়া যায়।

 কাহিনীটি হলো এই,

 একদিন গোপরাজ নন্দ বালক কৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে ভাণ্ডীরবনে গরু চরাতে বেরিয়েছিলেন। বালক কৃষ্ণকে তিনি একদণ্ড কাছ-ছাড়া করতে পারতেন না। গোচারণ করতে করতে ক্লান্ত হ’য়ে নন্দ বালক শ্রীকৃষ্ণকে নিজের হাতে খাওয়ালেন এবং গাছের তলায় বিশ্রামের জন্যে শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করতে লাগলেন। সেই সময় চিরকিশোর শ্রীকৃষ্ণরূপী নারায়ণ নন্দকে তাঁর আসল বিভূতি দেখাবার সঙ্কল্প করলেন। তিনি বাইরে বালকরূপী হলেও, তিনি চিরকিশোর; তিনি মানবদেহ ধারণ করেছেন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এবং সেই বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্যেই তিনি বৃন্দাবনে প্রেম-লীলা করবেন, এই কথা তিনি নন্দকে বোঝাতে চাইলেন। সেইজন্যে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মায়া-প্রভাবে হঠাৎ আকাশে বর্ষার ঘন মেঘের উদয় করালেন, দেখতে দেখতে বনভূমি ঘোর অন্ধকার হ’য়ে গেল, আকাশে বিদ্যুৎ চমকিয়ে উঠলো, ঘন ঘন বজ্রের শব্দে অরণ্য চকিত হয়ে উঠলো। প্রবল ধারায় বৃষ্টি পড়তে সুরু হয়ে গেল। তখন নন্দরাজ ভীত হয়ে উঠলেন, একদিকে বর্ষা-সন্ত্রস্ত সমস্ত গাভী, আর একদিকে বালক শ্রীকৃষ্ণ। কোন্ দিক তিনি সামলাবেন? শ্রীকৃষ্ণ তখন মায়ার খেলাকে দৃঢ় করবার জন্যে বালকের মতন ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে নন্দের কণ্ঠ আঁকড়ে ধরলেন। নন্দ ভীত আর্ত্ত অসহায় হ’য়ে মনে মনে জগদম্বাকে ডাকতে লাগলেন।

 এমন সময় নন্দ দেখেন, সেইদিকে শ্রীমতী রাধা এগিয়ে আসছেন। হঠাৎ সেই নির্জ্জন বনে, সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার মধ্যে রাধার এই অকস্মাৎ আগমনে নন্দ উল্লসিত হয়ে উঠলেন। সেই সময় নন্দের মনে মহামুনি গর্গের কথা উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। একদা মহামুনি গর্গ বলেছিলেন, শ্রীমতী রাধা হলেন স্বয়ং নারায়ণী, লক্ষ্মীস্বরূপা এবং বালক শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং নারায়ণ।

 সেই কথা মনে উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নন্দ ক্রন্দন-পরায়ণ ভয়-ভীত শ্রীকৃষ্ণকে রাধার নিকটে দিয়ে বল্লেন, আমি বুঝতে পেরেছি দেবী, তুমি নারায়ণী…তাই তোমার হাতেই তোমার প্রিয়-ধনকে সমর্পণ করলাম…তুমি নির্ব্বিঘ্নে শ্রীকৃষ্ণকে গৃহে নিয়ে যাও।

বাগ্‌দেবতাচরিতচিত্রিত চিত্তসদ্মা
পদ্মাবতীচরণচারণচক্রবর্ত্তী।
শ্রীবাসুদেবরতিকেলিকথাসমেত
মেতং করোতি জয়দেবকবিঃ প্রবন্ধম্॥ ২ ॥

অন্তরে যার আঁকা আছে
বাগ-দেবতার চরিত-চিত্র,
পদ্মাবতীর চরণের যে চারণ-কবি,
সেই জয়দেব,
আজ চলেছে গাইতে
বাসুদেবের রতি-রঙ্গ-কথা॥ ২ ॥

যদি হরিস্মরণে সরসং মনো
যদি বিলাসকলাসু কুতূহলম্‌।
মধুরকোমলকান্তপদাবলীং
শৃণু তদা জয়দেবসরস্বতীম্॥ ৩ ॥

যদি হরি-স্মরণে
সরস হয়ে ওঠে মন,
জাগে কৌতূহল
প্রেম-মাধুরীর লীলা জানতে,
শোন তবে জয়দেবের এই গীত-ভারতী,
মধুর, কোমল, কান্ত যার পদাবলী॥ ৩ ॥

বাচঃ পল্লবয়ত্যুমাপতিধরঃ সন্দর্ভশুদ্ধিং গিরাং
জানীতে জয়দেব এব শরণঃ শ্লাঘ্যো দুরূহদ্রুতে।
শৃঙ্গারোত্তর সৎপ্রমেয়রচনৈরাচার্য্য গোবর্দ্ধন-
স্পর্দ্ধী কোঽপি ন বিশ্রুতঃ শ্রুতিধরো ধোয়ী কবিষ্মাপতিঃ॥ ৪ ॥

কবি উমাপতিধর ভাষাকে করেছেন পল্লবিত;
শরণ-কবির আছে মহাসম্পদ
অনায়াসে দ্রুত রচনা করে চলেন দুরূহ সব পদ;
আচার্য্য গোবর্দ্ধন স্বল্প কথার ফুলে
গাঁথেন প্রেমের মন্দারমালা, অনবদ্য;
ধোয়ী কবি জন্ম থেকেই শ্রুতিধর;
তাঁরা প্রত্যেকেই আলো করে আছেন
কাব্যের এক-একটা দিক,
কিন্তু সব দিক নিয়ে সম্পূর্ণ এই কাব্য
রচনা করলেন কবি জয়দেব॥ ৪ ॥


 কবি জয়দেব তাঁর সমসাময়িক কবিদের কথা এখানে উল্লেখ করছেন।

 জয়দেব ছিলেন তখনকার বঙ্গেশ্বর লক্ষ্মণ সেনের প্রধান সভাকবি। লক্ষ্মণ সেন অত্যন্ত বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তাঁর রাজসভায় তিনি দেশের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ কবিদের নিয়ে এসে সম্মানের স্থান দিয়েছিলেন। তাঁর সভায় পাঁচজন সভাকবি ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই সে-যুগের এক-একজন শ্রেষ্ঠ কবি। একটি শিলালিপিতে সেই পাঁচজন কবির নাম পাওয়া গিয়েছে, নবদ্বীপের রাজ দরবারের দ্বারে এই শ্লোকটি লেখা ছিল,

“গোবর্দ্ধনশ্চ শরণো জয়দেব উমাপতিঃ।
কবিরাজশ্চ রত্নানি পঞ্চৈতে লক্ষ্মণস্য চ॥”

“রাজা লক্ষ্মণ সেনের আছে এই পঞ্চরত্ন—গোবর্দ্ধন, শরণ, জয়দেব, উমাপতি ও কবিরাজ ধোয়ী।” এই পাঁচজন কবিরই কিছু কিছু রচনা আজও পর্য্যন্ত সৌভাগ্যবশতঃ পাওয়া যায়। তার মধ্যে, জয়দেবের গীতগোবিন্দ এবং ধোয়ী কবির পবনদূত বিশেষ বিখ্যাত।

 এই শ্লোকে জয়দেব তাঁর সতীর্থ আর চারজন কবির কথা উল্লেখ করে বলছেন, যে, তাঁরা প্রত্যেকেই কাব্যের এক একটা দিককেই প্রধানতঃ অবলম্বন করে কাব্য লিখেছেন। উমাপতিধরের বিশেষত্ব হলো, শুধু শব্দের মিষ্টতার দিকে, অনুপ্রাস ও অন্যান্য অলঙ্কারের সাহায্যে তিনি সর্ব্বদাই চেষ্টা করেন শ্রুতিমনোহর বাক্য রচনা করতে কিন্তু তাতে করে কাব্যের অন্য গুণগুলো তাঁর কবিতায় কম থাকে। শরণ কবির বিশেষত্ব হলো, তিনি দুরূহ বিষয় নিয়ে অতি দ্রুত লিখতে পারেন। কিন্তু তাতে তো কাব্যের পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না। তেমনি আচার্য্য গোবর্দ্ধনের গুণ হলো, তিনি শৃঙ্গার অর্থাৎ প্রেমরস নিয়ে কাব্য লেখেন এবং কি করে পরিমিত কথায় প্রেম-রসকে দূষিত না করে কাব্য লেখা যায়, তা তিনি জানেন। কিন্তু তার ফলে তাঁর রচনায় শব্দের ঝঙ্কার আর লালিত্য তেমন ফুটে ওঠে না। ধোয়ী কবির গুণ হলো, তিনি শ্রুতিধর অর্থাৎ যা একবার কাণে শুনবেন, তৎক্ষণাৎ তা লিখতে পারেন। কিন্তু তাতে মৌলিকতা থাকে না। সেইজন্যে জয়দেব বলছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সেই সব খণ্ড খণ্ড বৈশিষ্ট্য তাঁর এই কাব্য-রচনায় তিনি একত্রিত করেছেন, যার ফলে এই কাব্য সকল দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ও শুদ্ধ হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর এই কাব্য যেমন শৃঙ্গার-রস-প্রধান, তিনি তেমনি চেষ্টা করেছেন পরিমিত কথার ভেতর দিয়ে বিশুদ্ধ প্রেমরসকে পরিবেশন করতে এবং তার জন্যে শব্দের মাধুর্য্য বা লালিত্য কোথাও হানি হতে দেননি, বা নিজের মৌলিকতাকেও ক্ষুণ্ণ করেন নি। কবি জয়দেবের এই উক্তি যে নিছক কবি-দম্ভ নয়, তার সাক্ষী গীতগোবিন্দের প্রত্যেকটি শ্লোক। এমন মধুর শব্দ-ঝঙ্কার, অল্প কথার মধ্যে এমন ব্যঞ্জনা, জগতের সাহিত্যে দুর্লভ।

কেশবধৃত মীনশরীর জয় জগদীশ হরে (মৎস্য-অবতার)

গীতম্॥

প্রলয়-পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদম্ ।❃।
বিহিত-বহিত্র-চরিত্রমখেদম্ ॥❃।❃।❃।
কেশব ধৃত-মীনশরীর জয় জগদীশ হরে ॥ ৫ ॥

প্রলয়ের কালে
সাগরের জলে
ভেসে গিয়েছিল যবে ধরণী,
তরণীর মত,
হে কেশব, হে জগদীশ, হে হরি,
রক্ষা করেছিলে বেদকে,
মীনরূপ ধরে তুমি
তোমারই হউক জয়॥ ৫ ॥

 অতঃপর জয়দেব সঙ্গীতে ভগবানের দশ-অবতার-রূপের বর্ণনা করছেন। একদা মহাপ্রলয়ে সাগরের জলে পৃথিবীর যা কিছু সম্পদ তা ভেসে অতলে চলে গিয়েছিল। সেই প্রলয়ের জলে বেদও ভেসে চলেছিল। তখন ভগবান সাগরে মৎস্যমূর্ত্তি ধারণ করে সেই নিমজ্জবান বেদকে নিজের পিঠে রক্ষা করেন। তার ফলে প্রলয়-অন্তে মানুষ আবার বেদ-ধর্ম্মের সন্ধান পায়। পূজ্যপাদ পূজারী গোস্বামী বলেন, জয়দেব এই দশ-অবতারের বর্ণনার মধ্যে দিয়ে দশটী বিভিন্ন রসের আধার-স্বরূপ শ্রীহরিকে বর্ণনা করছেন, কারণ তিনি হলেন সর্ব্ব-রসের আধার। মৎস্যরূপের মধ্যে রয়েছে বীভৎস রস। গোস্বামী ঠাকুর বলেন, এক একটী রূপ হলো এক একটী রসের প্রতীক।

ক্ষিতিরতিবিপুলতরে তিষ্ঠতি তব পৃষ্ঠে ।❃।
ধরণি-ধারণ-কিণচক্র-গরিষ্ঠে ॥❃।❃।
কেশব ধৃত-কূর্ম্মশরীর জয় জগদীশ হরে ॥ ৬ ॥

অতি বিপুল তোমার পৃষ্ঠে
কূর্ম্মরূপে
তুমি একদা ধারণ করেছিলে ধরণীকে।
তাই ধরণীর ভারে কঠিন ব্রণ-চিহ্নে
অঙ্কিত হয়ে যায় তোমার পৃষ্ঠদেশ,
কূর্ম্ম-মূর্ত্তিধারী হে কেশব,
হে জগদীশ, হে শ্রীহরি,
তোমারই হউক জয়॥ ৬ ॥


 ভগবান কূর্ম্মমূর্ত্তি ধরে পৃথিবীকে নিজের পিঠে বহন করেন, যাতে পৃথিবী প্রলয়ের জলে নিমজ্জিত না হয়ে যায়। পূজারী গোস্বামীর ব্যাখ্যায় কূর্ম্মমূর্ত্তি হলো অদ্ভুত রসের প্রতীক।

বসতি দশনশিখরে ধরণী তব লগ্না । ❃ ।
শশিনি কলঙ্ককলেব নিমগ্না ॥ ❃
কেশব ধৃত-শূকররূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ৭ ॥

তোমার দশন-শিখরে
ধরণী যেদিন লগ্না হয়েছিল
চাঁদের কলঙ্কচিহ্ন সম,
সেদিন তোমার ছিল বরাহ মূর্ত্তি,
হে কেশব, হে জগদীশ, হে শ্রীহরি,
তোমারই হউক জয়॥ ৭ ॥


 সৃষ্টির আদিম কালে আর একবার সমস্ত বিশ্ব প্রলয়ের জলে ভেসে যায়। মেদিনী দেবী ভীতা হয়ে রসাতলে পালান। তখন ভগবান বরাহমূর্ত্তি ধারণ ক’রে রসাতল থেকে মেদিনীকে নিজের দন্তের ওপর ধারণ ক’রে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। বরাহমূর্ত্তি হলো ভয়ানক রসের প্রতীক।

তব কর-কমলবরে নখমদ্ভুত-শৃঙ্গম্ ।❃।
দলিত-হিরণ্যকশিপু-তনুভৃঙ্গম্ ॥❃।❃।❃।
কেশব ধৃত-নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ৮ ॥

তোমার করকমলের নখ-শৃঙ্গে
যেদিন হিরণ্যকশিপুর দেহভৃঙ্গকে
করেছিলে বিদীর্ণ,
সেদিন হে কেশব, হে জগদীশ, হে শ্রীহরি,
তোমার ছিল নরহরি-রূপ,
তোমারই হউক জয়॥ ৮ ॥


 এই শ্লোকে জয়দেব ভগবানের নৃসিংহ-অবতারের কথা উল্লেখ করছেন। ভক্ত বালক প্রহ্লাদের মর্য্যাদা রক্ষার জন্যে তিনি অর্দ্ধেক মানুষ আর অর্দ্ধেক সিংহের মূর্ত্তিতে ভয়ঙ্কর দানব হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন। কারণ, হিরণ্যকশিপুর বর ছিল যে কোন মানুষের হাতে সে মরবে না। তাই ভগবানকে সেই অর্দ্ধ-মানব অর্দ্ধ-পশুর রূপ গ্রহণ করতে হয়। এইরূপে ভক্তের মান রক্ষা করেছিলেন বলে, পূজারী গোস্বামীর মতে এই মূর্ত্তি হলো বৎসল রসের প্রতীক।

ছলয়সি বিক্রমণে বলিমদ্ভুতবামন ।❃।
পদনখ-নীর-জনিত-জন-পাবন ॥❃।❃
কেশব ধৃত-বামনরূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ৯ ॥

বামনরূপ ধরে
যখন তুমি দৈত্যরাজ বলিকে করেছিলে ছলনা,
সেই সময় তোমার চরণ-নখে-আহত
আকাশ-গঙ্গার পবিত্র জলে
সমস্ত ধরণী হয়েছিল সুপবিত্র,
হে কেশব, হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারি হউক জয়॥ ৯ ॥


 এই শ্লোকে জয়দেব বামন-অবতারের কথা উল্লেখ করছেন। বলিরাজ দৈত্যের ছিল প্রবল দম্ভ, তার চেয়ে বড় দাতা আর ত্রিভুবনে নেই। সাত্ত্বিকতার দম্ভও দম্ভ। তাই সেই দম্ভ দূর করবার জন্য ভগবান ক্ষুদ্র বামনের মূর্ত্তিতে বলির কাছে এসে মাত্র ত্রি-পাদ ভূমি প্রার্থনা করেন। বলি সেই সামান্য প্রার্থনা শুনে অবজ্ঞায় হেসে ওঠে এবং তৎক্ষণাৎ তা দেবার জন্যে প্রতিশ্রুতি দেয়। তখন ভগবান বামন মূর্ত্তি পরিত্যাগ করে, দুই বিশাল বিরাট পদক্ষেপে স্বর্গ আর মর্ত্তকে পরিব্যাপ্ত করে ফেল্লেন। তৃতীয় পদ স্থানাভাবে বলির মাথার ওপর স্থাপন করেন। সেই বিশাল পদের চাপে বলি পাতালে নিমজ্জিত হয়ে যায়। বামনরূপ হলো সখ্য রসের প্রতীক।

ক্ষত্রিয়-রুধিরময়ে জগদপগতপাপম্ ।৹।
স্নপয়সি পয়সি শমিত-ভবতাপম্ ॥ ❃ ॥
কেশব ধৃত-ভৃগুপতিরূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ১০

অত্যাচারী ক্ষত্রিয়ের রক্তে
পৃথিবীকে স্নান করিয়ে,
তুমি দূর করেছ তার পাপ-তাপ,
পরশুরাম-মূর্ত্তিধারী
হে কেশব, হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারি হউক জয়॥ ১০ ॥


 এই শ্লোকে জয়দেব পরশুরাম-অবতারের কাহিনী উল্লেখ করেছেন। মাতার অপমানে পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করবার প্রতিজ্ঞা করেন এবং সেই প্রতিজ্ঞার দরুণ তিনি একুশবার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রিয় করেন। ক্ষত্রিয়রা যখন নিজেদের বাহুবলের দম্ভে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেদের কর্ত্তব্য ভুলে গিয়েছিল, সেই সময় পরশুরাম উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্যেই বাহুবলেই ক্ষত্রিয়দের উচ্ছেদ করেন। কিন্তু এই হিংসার অভ্যাস ক্রমশঃ তাঁকেও পেয়ে বসে। সেইজন্য আদর্শ ক্ষত্রিয়রূপে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে অবশেষে তিনি পরাভূত হন। পরশুরাম হলেন রৌদ্র রসের প্রতীক।

বিতরসি দিক্ষু রণে দিক্‌পতি-কমনীয়ম্ ।
দশমুখ-মৌলিবলিং রমণীয়ম্ ॥❃॥❃॥
কেশব ধৃত-রামশরীর জয় জগদীশ হরে ॥ ১১

দশদিকে আছে দশ দিকপতি,
তুমি সেই দশ দিকপতির আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে
দশানন রাবণের দশটী মাথা
যুদ্ধে দশদিকে করেছিল অর্পণ,
রামরূপধারী হে কেশব,
হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারই হউক জয়॥ ১১ ॥


 জয়দেব রাম-অবতারের কথা উল্লেখ করছেন। রাম-অবতারে তিনি রাক্ষসরাজ দশাননকে বধ করে পৃথিবী থেকে দৈত্যপীড়ন দূর করেন। রামচন্দ্র করুণ রসের প্রতীক।

কেশবধৃত কূর্ম্মশরীর জয় জগদীশ হরে (কূর্ম্ম-অবতার)

বহসি বপুষি বিশদে বসনং জলদাভম্ ।
হলহতি-ভীতি-মিলিত-যমুনাভম্ ॥❃।❃।
কেশব ধৃত-হলধররূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ১২

তোমার শুভ্রদেহের
মেঘ-নীল বসনের ছায়ায়
ভয়-নীলা হয়ে ওঠে যমুনা,
ভীতা সে তোমার হলকর্ষণে…
হে হলধররূপধারী কেশব,
হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারি হউক জয়॥ ১২ ॥


 জয়দেব হলধারী বলরাম মূর্ত্তির কথা উল্লেখ করছেন। শ্রীরামচন্দ্র নবদূর্ব্বাদলশ্যাম, শ্রীকৃষ্ণ শ্যামবর্ণ, বলরাম হলেন শুভ্রতনু। তাঁর আয়ুধ হলো, হল। কৃষকের দেবতা তিনি। বলরাম খুব হাস্যরসিক ছিলেন তাই পূজারী গোস্বামীর মতে বলরাম মূর্ত্তি হলো হাস্যরসের প্রতীক।

নিন্দসি যজ্ঞবিধেরহহ শ্রুতিজাতম্ ।❃।
সদয়হৃদয়-দর্শিত-পশুঘাতম্ ॥❃।❃।
কেশব ধৃত-বুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে ॥ ১৩

দেবতার যজ্ঞে অবাধ পশুবধ দেখে
করুণায় উদ্বেল হয়ে ওঠে তোমার চিত্ত,
তাই সেই যজ্ঞবিধিকে নিন্দা করে
বুদ্ধ-মূর্ত্তিতে তুমিই হলে প্রকট।
হে কেশব, হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারি হউক জয়॥ ১৩ ॥


 একসময় ভারতবর্ষে ঠিক হিন্দু-মুসলমানের মতন, হিন্দু আর বৌদ্ধদের ছিল তুমুল ঝগড়া। বুদ্ধদেব বৈদিক যজ্ঞের বিরুদ্ধে অহিংসা ধর্ম্ম প্রচার করেন। তাই ব্রাহ্মণেরা তাঁর ওপর কুপিত হন। কিন্তু সেই ব্রাহ্মণ্য যুগে জয়দেব বুদ্ধদেবকে ভগবানের অবতাররূপে বন্দনা করেছেন। বুদ্ধদেব হলেন শান্তরসের প্রতীক।

ম্লেচ্ছ-নিবহ-নিধনে কলয়সি করবালম্ ।
ধূমকেতুমিব কিমপি করালম্ ॥ ❃ ॥ ❃ ॥
কেশব ধৃত-কল্কিশরীর জয় জগদীশ হরে ॥ ১৪

ম্লেচ্ছতে ভরে গিয়েছে ধরণী,
সেই ম্লেচ্ছদের নিধনের জন্যে
আজ তুমি ধূমকেতুর মতন
এসেছ করাল তরবারি নিষ্কাষিত করে,
কল্কিরূপধারী হে কেশব,
হে জগদীশ, হে হরি,
তোমারি হউক জয়॥ ১৪ ॥


 দশ-অবতার বর্ণনার শেষ শ্লোকে জয়দেব অনাগত কল্কি-অবতারের উল্লেখ করছেন। পুরাণে ভবিষ্যৎবাণী করা আছে, কলিযুগে যখন পৃথিবী অনাচারী ম্লেচ্ছদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, তখন পৃথিবীকে পুনরায় পাপমুক্ত করবার জন্যে ভগবান নিষ্কাষিত তরবারি হাতে কল্কিরূপে দেখা দেবেন। কল্কিমূর্ত্তি হলো বীররসের প্রতীক।

শ্রীজয়দেবকবেরিদমুদিতমুদারম্ ।❃।❃।
শৃণু সুখদং শুভদং ভবসারম্ ॥❃।❃।❃॥
কেশব ধৃত-দশবিধরূপ জয় জগদীশ হরে ॥ ১৫

হে কেশব, হে জগদীশ, হে হরি,
এই দশরূপে তোমাকে বন্দনা করি।
তোমার বন্দনায় এনে দেয় সুখ,
এনে দেয় শুভ,
এনে দেয় অসার সংসারে যা সার-বস্তু
তাই বন্দনা করি তোমায়॥ ১৫ ॥

বেদানুদ্ধরতে জগন্তি বহতে ভূগোলমুদ্বিভ্রতে।
দৈত্যং দারয়তে বলিং ছলয়তে ক্ষতক্ষয়ং কুর্ব্বতে॥
পৌলস্ত্যং জয়তে হলং কলয়তে কারুণ্যমাতন্বতে।
ম্লেচ্ছান্ মূর্চ্ছয়তে দশাকৃতিকৃতে
কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ॥ ১৬

বেদকে তুমি করেছ উদ্ধার,
বহন করেছ পৃথিবীর ভার,
অঙ্গুলীতে ধারণ করেছ মেদিনী,
দৈত্যের অত্যাচার থেকে করেছ তাকে মুক্ত,
চূর্ণ করেছ ছলে বলির দর্প,
মুক্ত করেছ ধরণীকে ক্ষত্রিয়ের অনাচার থেকে,
জয় করেছ দুর্জয় দশাননকে,
শ্যামল করেছ মেদিনীকে হল কর্ষণ করে,
মুক্ত অন্তরে বিলিয়েছ করুণা,
তুমিই আবার আসবে ম্লেচ্ছনিধনকল্পে,
দশমূর্ত্তিধারী হে কৃষ্ণ তোমাকে প্রণাম॥ ১৬ ॥


 পূর্ব্ববর্ত্তী এক একটি শ্লোকে এক এক অবতারের বর্ণনা করে উপসংহারে এক সঙ্গে জয়দেব সেই দশাবতারধারী কৃষ্ণকে প্রণাম করছেন। এক এক বিভিন্ন রসের প্রতীক, তাই শ্রীকৃষ্ণ হলেন দশাবতারে সমগ্র রসের পরিপূর্ণ আধার!

গীতম্‌
গুর্জ্জরীরাগেণ নিঃসারতালেন চ গীয়তে
শ্রিতকমলাকুচমণ্ডল ধৃতকুণ্ডল কলিতললিতবনমাল
জয় জয় দেব হরে॥ ১৭ ॥

গান
কমলার কুচমণ্ডলে যাঁর আশ্রয়, কুণ্ডলধারী,
সুমধুর বনফুলের মালায় শোভিত কণ্ঠদেশ,
হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ১৭ ॥

 

দিনমণিমণ্ডলমণ্ডন ভবখণ্ডন মুনিজনমানসহংস ॥১৮॥
কালিয়বিষধরগঞ্জন জনরঞ্জন যদুকুলনলিনদিনেশ ॥১৯॥

সবিতা মণ্ডলের তুমিই হলে শোভা,
তুমিই হলে ভববন্ধনের মুক্তির উপায়,
মুনিগণের অন্তর সরোবরে তুমিই করছো বিরাজ
পরমহংসের মত,
হে হরি তোমারই হোক্ জয়॥ ১৮ ॥

বিষধর কালিয়নাগকে তুমিই করেছ দমন,
পৃথিবীর হৃদয়রঞ্জন
তুমিই হলে যদুকুলের সূর্য্যস্বরূপ,
হে দেব, হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ১৯ ॥

মধুমুরনরকবিনাশন গরুড়াসন সুরকুলকেলিনিদান ॥ ২০ ॥
অমলকমলদললোচন ভবমোচন ত্রিভুবনভবননিধান ॥ ২১ ॥

মধু আর মুর আর নরকাসুর,
তাদের করেছ তুমি বিনাশ,
গরুড়াসন তুমিই হলে দেবতাদের আশ্রয়,
হে দেব, হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ২০


অমল কমলের মত তোমার দুটি নয়ন,
তুমিই মোচন কর ভব-বেদন,
ত্রিভুবনের তুমিই হলে আশ্রয়ভবন,
হে দেব, হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ২১

কেশবধৃত শূকররূপ জয় জগদীশ হরে (বরাহ-অবতার)

জনকসুতাকৃতভূষণ জিতদূষণ সমরশমিতদশকণ্ঠ ॥২২॥
অভিনবজলধরসুন্দর ধৃতমন্দর শ্রীমুখচন্দ্রচকোর ॥২৩॥

 

জনকের দুহিতা তোমার শ্রীঅঙ্গে
নিজে পরিয়ে দিয়েছেন ভূষণ,
সেই তুমি অত্যাচারী রাক্ষস দূষণকে
করেছ নিধন,
দশাননকে করেছ সংহার সংগ্রামে
হে দেব, হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ২২ ॥


নতুন মেঘের মতন সুন্দর শ্যামল
কোমল তোমার দেহ,
অথচ সেই দেহে বহন করেছ মন্দর
পর্ব্বতের ভার,
তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন স্বয়ং লক্ষ্মী
হে দেব, হে হরি, তোমারি হোক্ জয়॥ ২৩ ॥

তব চরণে প্রণতা বয়মিতি ভাবয় কুরু কুশলং প্রণতেষু॥ ২৪ ॥
শ্রীজয়দেবকবেরিদং কুরুতে মুদং মঙ্গলমুজ্জ্বলগীতিঃ॥ ২৫ ॥

 

হে দেব, তোমার চরণ নিয়েছি শরণ,
শরণাগতের কুশল জানি তুমি
করবে বিধান॥ ২৪ ॥


তোমারি প্রসাদে কবি জয়দেবের এই গান
উজ্জ্বল রসপ্রধান
যেন করে জগতের আনন্দ বিধান॥ ২৫ ॥

পদ্মাপয়োধরতটীপরিরম্ভলগ্ন-
কাশ্মীরমুদ্রিতমুরো মধুসূদনস্য।
ব্যক্তানুরাগমিব খেলদনঙ্গখেদ-
স্বেদাম্বুপূরমনুপূরয়তু প্রিয়ং বঃ॥ ২৬ ॥

পদ্মাকে আলিঙ্গনে বাঁধতে গিয়ে,
যাঁর বক্ষে এসে লেগেছে
পদ্মার স্তনতটের কুঙ্কুম,
সেই কুঙ্কুম আবার গলে ঝরে পড়ছে
ঘর্ম্মের সঙ্গে,
মদনসন্তাপের ঘর্ম্মের সঙ্গে,
সেই রক্তরাঙা গলিত কুঙ্কুমের ধারা
যাঁর অন্তরের সংগোপন অনুরাগেরই ধারা,
সেই মধুসূদন তোমাদের সকলের
করুন আনন্দবর্দ্ধন॥ ২৬ ॥

বসন্তে বাসন্তীকুসুমসুকুমারৈরবয়বৈ-
র্ভ্রমন্তীং কান্তারে বহুবিহিতকৃষ্ণানুসরণাম্।
অমন্দং কন্দর্প-জ্বরজনিতচিন্তাকুলতয়া
বলদ্বাধাং রাধাং সরসমিদমুচে সহচরী॥ ২৭ ॥

একদা এক বসন্ত দিনে,
কুসুমসুকুমারতনু শ্রীমতী রাধা,
মদনের বেদনায় কাতরা হয়ে
বৃন্দাবনের নিভৃত কুঞ্জপথে পথে
ইতিউতি যখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণকে,
তখন এক প্রিয় সহচরী
প্রেমজ্বরে জর্জ্জরিত শ্রীমতীকে ডেকে বলে
মধুর বচনে,—॥ ২৭ ॥

গীতম্

বসন্তরাগযতিতালাভ্যং গীয়তে

ললিতলবঙ্গলতাপরিশীলনকোমলমলয়সমীরে।
মধুকরনিকরকরম্বিতকোকিলকূজিতকুঞ্জকুটীরে॥
বিহরতি হরিরিহ সরসবসন্তে।
নৃত্যতি যুবজনেন সমং সখি বিরহিজনস্য দুরন্তে॥ ২৮ ॥

 

সখি গো,
কোমল মলয় সমীরে দুলে দুলে উঠছে
ললিত লবঙ্গ-লতা,
কুঞ্জকুটীরে কুটীরে উঠছে ঐ শোন
অলির গুঞ্জন আর কোকিলের কূজন,
বিরহী মনের ব্যথা দ্বিগুণ করে
বইছে সরস বসন্তপবন,
হায় সখি,
এমন মধুর বসন্ত দিনে
তোমার শ্রীহরি নৃত্যবিহার করছে
অপর তরুণীদের সঙ্গে॥ ২৮ ॥

উন্মদমদনমনোরথপথিকবধূজনজনিতবিলাপে।
অলিকুলসঙ্কুলকুসুমসমূহনিরাকুলবকুলকলাপে॥ ২৯ ॥

ওগো সখি,
এমন বসন্তদিনে,
ঐ শোন দিকে দিকে উঠছে বিরহের
রোদন-ধ্বনি,
প্রিয় যাদের গিয়েছে দূরদেশে প্রবাসে,
কাঁদছে সেই বিরহাকুল পথিকবধূরা,
সেই সঙ্গে সুর মিলিয়ে গুঞ্জন করছে অলিকুল
প্রস্ফুটিত বকুলের বনে বনে॥ ২৯ ॥

মৃগমদসৌরভরভসবশংবদনবদলমালতমালে।
যুবজনহৃদয়বিদারণমনসিজনখরুচিকিংশুকজালে॥ ৩০ ॥

ওগো সখি,
এমন বসন্তদিনে,
তমালের ডালে ডালে ফুটে উঠেছে
তমালের কুঁড়ি,
তার সুবাস আচ্ছন্ন করে ফেলেছে
মৃগমদের সৌরভকে,
বনে বনে ফুটে উঠেছে রক্তরাঙা পলাশের ফুল,
সে ফুল যেন
বিরহকাতর যুবজনের বুকে
হৃদয়-বিদারণ মদনের অকরুণ নখক্ষত॥ ৩০ ॥

মদনমহীপতিকনকদণ্ডরুচিকেশরকুসুমবিকাশে।
মিলিতশিলীমুখপাটলিপটলকৃতস্মরতূণবিলাসে॥ ৩১ ॥

 

ওগো সখি,
এমন বসন্তদিনে ঐ দেখ বনে বনে
পরিপূর্ণ বিকশিত হয়ে উঠেছে কেশর কুসুম,
যেন মদন রাজার স্বর্ণছত্রদণ্ড,—
ঐ দেখ থরে থরে ফুটে ওঠা পাটলিফুলে
এসে বসেছে কালো ভ্রমরের দল,
যেন কামদেবের বাণ-ভরা পুষ্প-ধনু॥ ৩১ ॥

বিগলিতলজ্জিতজগদবলোকনতরুণকরুণকৃতহাসে।
বিরহিনিকৃন্তনকুন্তমুখাকৃতিকেতকিদন্তুরিতাশে॥ ৩২ ॥

ওগো সখি,
এমন বসন্তদিনে,
মানুষ লজ্জাকে ভুলে গিয়েছে দেখে
হেসে উঠছে বাতাবী তরু।
ফুটন্ত ফুলের হাসিতে,
বিরহীদের মনকে বিদীর্ণ করবার
জন্য বর্শাফলকের মত
ফুটে উঠেছে কেতকী কুসুম।
মনে হচ্ছে যেন চারিদিক দন্তবিকাশ করে
হেসে উঠছে এই বাসন্তী নির্লজ্জতায়॥ ৩২ ॥

মাধবিকাপরিমলললিতে নবমালিকয়াতিসুগন্ধৌ।
মুনিমনসামপি মোহনকারিণি তরুণাকারণবন্ধৌ॥ ৩৩ ॥

ওগো সখি,
আজিকার এই বসন্তদিন
মাধবীর পরিমলে হয়েছে ললিত,
মালতীর অতিগন্ধে হয়েছে সুরভিত,
এখন বসন্তদিনে মুনিদেরও মনে জাগে বিভ্রম,
তরুণেরা শুধু নেচে ওঠে অহেতুক আনন্দে…
সখি, বসন্ত হলো তরুণমনের মিতা॥ ৩৩ ॥

কেশবধৃত নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে (নৃসিংহ-অবতার)

স্ফুরদতিমুক্তলতাপরিরম্ভণপুলকিতমুকুলিতচূতে।
বৃন্দাবনবিপিনে পরিসরপরিগতযমুনাজলপূতে॥ ৩৪ ॥

ওগো সখি,
আজি এ বসন্তদিনে
পুলকে মুকুলিত হয়ে উঠেছে সহকার তরু
মাধবী-লতার আলিঙ্গনে,
যমুনার জলপূত বৃন্দাবনের বনে বনে
ওগো সখি, জেগে উঠেছে আজ ঋতুরাজ॥ ৩৪ ॥

শ্রীজয়দেবভণিতমিদমুদয়তি হরিচরণস্মৃতিসারম্।
সরসবসন্তসময়বনবর্ণনমনুগতমদনবিকারম্॥ ৩৫ ॥

সরস-নব-বসন্তে, এই যে মদন-বিকার
বর্ণনা করে জয়দেব কবি,
স্মৃতি তার থাক্ জেগে
শ্যামের চরণ স্মরণের সনে
মানুষের মনে মনে॥ ৩৫ ॥

দরবিদলিতমল্লীবল্লিচঞ্চৎপরাগ-
প্রকটিতপটবাসৈর্বাসয়ন্ কাননানি।
ইহ হি দহতি চেতঃ কেতকীগন্ধবন্ধুঃ
প্রসরদসমবাণপ্রাণবদ্‌গন্ধবাহঃ॥ ৩৬ ॥

আজ বনে বনে এসেছে
মদনের প্রাণ-সখা বসন্ত-বাতাস
কেতকীর গন্ধে বিভোর,
মল্লীলতার বুক থেকে আহরণ করে পুষ্পপরাগ,
রেণু রেণু ক’রে দিকে বিদিকে
দেয় ছড়িয়ে তার সুগন্ধ,
সে-গন্ধের আগুনে দগ্ধ হয়ে যায় বিরহীর মন॥ ৩৬ ॥

অদ্যোৎসঙ্গবসদ্ভুজঙ্গকবলক্লেশাদিবেশাচলং
প্রালেয়প্লবনেচ্ছয়ানুসরতি শ্রীখণ্ডশৈলানিলঃ।
কিঞ্চ স্নিগ্ধরসালমৌলিমুকুলান্যালোক্য হর্ষোদয়া-
দুন্মীলন্তি কুহুঃ কুহুরিতি কলোত্তালাঃ পিকানাংগিরঃ॥ ৩৭ ॥

বসন্ত এসে দেখে
চন্দনতরুকোটরে জেগে উঠেছে বিষধর সাপ,
বিষনিঃশ্বাসে জর্জ্জরিত হয়ে ওঠে তার স্নিগ্ধ তনু,
তাই শীত-স্নানের জন্যে দ্রুত এগিয়ে চলে
উত্তরে হিমালয়ের দিকে।
সহকারতরুশিরে জেগে ওঠে মুকুলের শিখা,
তাই দেখে আনন্দে উন্মাদ কুহুরবে জেগে ওঠে
পিককুল॥ ৩৭ ॥

 বসন্তের এই বর্ণনার দ্বারা কবি সাধারণ নৈসর্গিক ক্রিয়াকে অপরূপ কাব্যরূপ দিয়েছেন। বসন্ত বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে এসে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে যায়, সেই ব্যাপারকে কবি ব্যাখ্যা করছেন, বসন্ত যেন সর্প-বিষে জর্জ্জরিত হয়ে দেহকে স্নিগ্ধ করবার জন্যে হিমালয়ের দিকে যাত্রা করছে।

উন্মীলন্মধুগন্ধলুব্ধমধুপব্যাধূতচূতাঙ্কুর-
ক্রীড়ৎকোকিলকাকলীকলকলৈরুদ্গীর্ণকর্ণজ্বরাঃ।
নীয়ন্তে পথিকৈঃ কথং কথমপি ধ্যানাবধানক্ষণ-
প্রাপ্তপ্রাণসমাসমাগমরসোল্লাসৈরমী বাসরাঃ॥ ৩৮ ॥

মধুগন্ধে মাতাল ভ্রমরার দল
বারে বারে ব্যাকুল করে তুলছে নবীন আম্র-
মুকুলের মঞ্জরীকে,
কোকিলের কলকাকলি কানে বর্ষণ
করছে বিষ,
তার মধ্যে কেমন করে স্থির থাকে বিরহী
পথিকজনের মন?
একমাত্র সান্ত্বনা,
একদিন আবার মিলিত হবে প্রিয়ার সঙ্গে,
সেই ধ্যানের ক্ষণিক উল্লাসে সে সহ্য করে এই
বসন্ত জ্বালা॥ ৩৮ ॥

অনেকনারীপরিরম্ভসংভ্রমস্ফুরন্মনোহারিবিলাসলালসম্।
মুরারিমারাদুপদর্শয়ন্ত্যসৌ সখীসমক্ষং পুনরাহ রাধিকাম্॥ ৩৯ ॥

এ হেন বসন্ত দিনে,
ব্যাকুলা শ্রীমতীকে সঙ্গে নিয়ে
সখী দেখে, অদূরে কুঞ্জভবনে
ব্রজ বধূগণের আলিঙ্গনে
মুরারি মনোহারি প্রেমলীলায় রত,—
শ্রীমতীকে সেই দৃশ্য দেখিয়ে
সখী বলে॥ ৩৯ ॥

গীতম্।

রামকিরীরাগযতিতালাভ্যাং গীয়তে


চন্দনচর্চ্চিতনীলকলেবরপীতবসনবনমালী।
কেলিচলন্মণিকুণ্ডলমণ্ডিতগণ্ডযুগস্মিতশালী॥
হরিরিহ মুগ্ধবধূনিকরে বিলাসিনি বিলসতি কেলিপরে॥ ৪০ ॥

পীত বসনে ঢাকা আজ বনমালীর নীল কলেবর,
নীল কলেবরে শোভা পাচ্ছে শ্বেতচন্দন,
লীলার মাতনে দুই কানে দুলছে মণিময় কুণ্ডল,
সেই মণির আভা এসে পড়েছে হাস্য-উজ্জ্বল
কপোলে,
প্রেমমুগ্ধ বিলাসিনীদের নিয়ে আজ প্রেমবিলাসে
রত বনমালী॥ ৪০ ॥

পীনপয়োধরভারভারেণ হরিং পরিরভ্য সরাগম্।
গোপবধূরনুগায়তি কাচিদুদঞ্চিতপঞ্চমরাগম্॥ ৪১ ॥

পীনপয়োধরভারে মন্থর এক গোপ বধূ
আবেগে আলিঙ্গনে বেঁধে বনমালীকে
কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে পঞ্চমে তুলেছে তান॥ ৪১ ॥

কাপি বিলাসবিলোলবিলোচনখেলনজনিতমনোজম্।
ধ্যায়তি মুগ্ধবধূরধিকং মধুসূদনবদনসরোজম্॥ ৪২ ॥

কোন মুগ্ধ গোপবধূ
অনিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
শ্রীকৃষ্ণের মুখকমলের দিকে,
তাঁর নয়নের প্রেমঘন দিঠিতে
নব-অনুরাগে জেগে উঠছে গোপরমণীর
অন্তর শতদল॥ ৪২ ॥

কাপি কপোলতলে মিলিতা লপিতুং কিমপি শ্রুতিমুলে।
চারু চুচুম্ব নিতম্ববতী দয়িতং পুলকৈরনুকূলে॥ ৪৩ ॥

নিতম্বভারে কোন গোপরমণী
ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে শ্রীকৃষ্ণের কাছে,
কাণে কাণে কথা বলার ছলে
কপোলে রাখে কপোল,
কৌতুকে চেয়ে দেখে পুলকিত হয়ে উঠেছে মাধব,
অনুকূল লগ্ন বুঝে
চুম্বনে চিহ্নিত করে নীলগণ্ড॥ ৪৩ ॥

 

কেলিকলাকুতুকেন চ কাচিদমুং যমুনাজলকূলে।
মঞ্জুলবঞ্জুলকুঞ্জগতং বিচকর্ষ করেণ দুকূলে॥ ৪৪ ॥

কেলিকৌতুকে কোন কামিনী
মৃদু চরণে চলে এগিয়ে,
যমুনার তীরে বেণুকুঞ্জবনে
দেখে লুকিয়ে রয়েছে মাধব,
প্রেমলালসে তাঁর উত্তরীয়প্রান্ত করে আকর্ষণ॥ ৪৪ ॥

কেশবধৃত বামনরূপ জয় জগদীশ হরে (বামন-অবতার)

করতলতালতরলবলয়াবলিতকলিতকলস্বনবংশে।
রাসরসে সহনৃত্যপরা হরিণা যুবতিঃ প্রশশংসে॥ ৪৫ ॥

শ্লিষ্যতি কামপি চুম্বতি কামপি কামপি রময়তি রামাম্।
পশ্যতি সস্মিতচারু পরামপরামনুগচ্ছতি বামাম্‌॥ ৪৬ ॥

 

কোথাও বা মুরলীর সুরে
করতালি দিয়ে নাচে গোপাঙ্গনা
করতালির সাথে সাথে বেজে ওঠে হাতের বলয়,
রাসরসে হরি উন্মুখর প্রশংসায়
নাচতে সুরু করেন সুন্দরীর সঙ্গে॥ ৪৫ ॥

রাস-রসে আজ হরি,
কোন নারীকে করেন আলিঙ্গন,
কাউকে বা চুম্বনে করেন তৃপ্ত,
কারুর সঙ্গে বা রত রমণে,
কাউকে বা দূর থেকে কটাক্ষদানে
করছেন মানভঞ্জনের চেষ্টা॥ ৪৬ ॥

শ্রীজয়দেবভণিতমিদমদ্ভুতকেশবকেলিরহস্যম্।
বৃন্দাবনবিপিনে ললিতং বিতনোতু শুভানিযশস্যম্॥ ৪৭ ॥

বিশ্বেষামনুরঞ্জনেন জনয়ন্নানন্দমিন্দীবর-
শ্রেণীশ্যামলকোমলৈরুপনয়ন্নঙ্গৈরনঙ্গোৎসবম্।
স্বছন্দং ব্রজসুন্দরীভিরভিতঃ প্রত্যঙ্গমালিঙ্গতঃ
শৃঙ্গারঃ সখি মূর্ত্তিমানিব মধৌ মুগ্ধোহরিঃ ক্রীড়তি॥ ৪৮ ॥

বৃন্দাবনের বিপিনে
কেশবের এই প্রেমলীলা
বর্ণনা করে কবি শ্রীজয়দেব।
সেই সঙ্গে করে প্রার্থনা
যেন এই প্রেম-লীলা শ্রবণে
বর্দ্ধিত হয় আপনাদেরই কল্যাণ॥ ৪৭ ॥

সখি।
প্রেমরঙে কেশব আজ
বিশ্বকে তুলেছে রঙীণ করে,
বিশ্বে আজ আনন্দ উঠছে উথলে;
শ্যামের শ্যামল কোমলরূপে
আলোকিত হয়ে উঠেছে ধরা,
মুগ্ধা গোপবধূরা ঘন ঘন আলিঙ্গনে
স্বচ্ছন্দে আজ সমর্পণ করছে নিজেদের,
আনন্দিত মাধব আমার
বিরাজ করছেন যেন মূর্ত্তিমান
শৃঙ্গার-রস॥ ৪৮ ॥

রাসোল্লাসভরেণ বিভ্রমভৃতামাভীরবামভ্রুবাম্
অভ্যর্ণে পরিরভ্য নির্ভরমুরঃ প্রেমান্ধয়া রাধয়া।
সাধু তদ্বদন‍ং সুধাময়মিতি ব্যাহৃত্য গীতস্তুতি-
র্ব্যাজাদুদ্ভটচুম্বিতঃ স্মিতমনোহারী হরিঃ পাতু বঃ॥ ৪৯ ॥

 

রাসোল্লাসে বিহ্বলা গোপীদের সামনেই
প্রেমান্ধ শ্রীমতী বাহুপাশে বদ্ধ করেন মাধবকে;
শ্রীমতীর মুখের দিকে চেয়ে
স্তুতি-ছলে বলেন মাধব,
সুধার ভাণ্ডার ঐ তব শ্রীমুখ,—
অধরে তুলে নেন সে সুধার ভার,—

তখন পরিতৃপ্ত মাধবের মুখে ফুটে ওঠে যে মধুর হাসি,
সেই হাসির আলোয় দূর হোক্ সব অকল্যাণের ভার॥ ৪৯ ॥