চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ/প্রথম খণ্ড/অষ্টম পরিচ্ছেদ

আট

 বহু চেষ্টার ফলে ব্রাহ্মণ একদিন অজয়ের ধারে এক গাছের তলায় তরুণ জয়দেবের সন্ধান পেলো। দেখে, গাছতলায় আপনার মনে বসে আছেন, চোখ বুঁজে। ব্রাহ্মণ ভাবে, হয়ত নেশায় বুঁদ হয়ে আছে।

 ব্রাহ্মণের ডাকে জয়দেবের চেতনা ফিরে এলো।

 ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করে, তুমিই কি জয়দেব গোস্বামী?

 জয়দেব ঘাড় নেড়ে জানান, হাঁ। মনে মনে ভাবেন, এ ব্যক্তি তাঁর নাম জানলো কি করে? কোন দিনই তো কোন লোক তাঁর সন্ধানে আসে না। এ ব্যক্তি কি প্রয়োজনে এসেছে তাঁর কাছে?

 ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করে, তোমার ঘর নেই?

 জয়দেব হেসে বলেন, আমার চেয়ে বড় ঘর কারুরই নেই!

 ব্রাহ্মণ উৎসাহে জিজ্ঞাসা করেন, কোথায়?

 জয়দেব বলেন, এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড হলো আমার ঘর!

 ব্রাহ্মণ বিরক্ত হয়ে বলে, সে ঘরের কথা বলছি না…বাস করবার জন্যে কোন বাড়ী-ঘর-দোর নেই?

 উদাসকণ্ঠে জয়দেব বলেন, আবার বাড়ী-ঘর-দোরের কি প্রয়োজন?

 ব্রাহ্মণ বুঝতে পারে, এ সম্পর্কে আর প্রশ্ন করা বৃথা। তাই অন্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে, কি করা হয় বাবাজীর?

 জয়দেব বলেন, অপেক্ষা করে আছি! সেই আমার কাজ!

 ব্রাহ্মণ বলে, কার অপেক্ষা করে আছ?

 জয়দেব বলেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আসবে বলে!

 ব্রাহ্মণ বলে, কে সে?

 জয়দেব বলেন, সে না এলে, কি করে বলবো, কে সে? তাকে দেখবো বলেই তো অপেক্ষা করে আছি!

 ব্রাহ্মণ ভাবে, এ উন্মাদের সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ নেই। হতাশ হয়ে ফিরে আসে ঘরে, পদ্মাবতীকে সব কথা জানায়।

 পদ্মাবতী নীরবে শোনে। বলে, বাবা, আমি যাব তাঁর কাছে!

 ব্রাহ্মণ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে কন্যার দিকে।

 পদ্মাবতী নতমুখে বলে, তিনিই আমার স্বামী!

 ব্রাহ্মণ সারারাত বিনিদ্র অবস্থায় ভাবে, একি বিশ্বনাথের খেয়াল! চাল নেই, চুলো নেই, গাছের তলায় যার আশ্রয়, কপর্দ্দকহীন, তার হাতে এই কন্যাকে কি করে তিনি সমর্পণ করবেন? এ বিসদৃশ মিলনের ফলে বিধাতার কি উদ্দেশ্যই বা সফল হবে? সমস্ত শুনে পদ্মাবতীই বা কি রকমে বলতে পারলো, ঐ উন্মাদই তার স্বামী?

 ব্রাহ্মণ দুশ্চিন্তার কোন কূল-কিনারা পায় না।