তীর্থ-সলিল/কবির প্রেম
কবির প্রেম।
গোলাপ যাহা প্রণয় যদি হ’ত তাই,
আমি তা’রি হ’তাম পাতার মত;—
দোঁহার তনু বাড়িত একই সাথে,
গানের দিনে কিম্বা দুখের রাতে
ফুলের বনে কিম্বা মাঠের মাঝে ভাই,
হর্ষে বিভোর কিম্বা শোকে হত!
গোলাপ যাহা প্রণয় যদি হ’ত তাই,
আমি তা’রি হ’তাম পাতার মত!
‘কথা’ যাহা আমি গো যদি হ’তাম তাই,
প্রণয় যদি হ’ত ‘সুরে’র মত;—
মূর্চ্ছনা কি উচ্চগ্রামে, খাদে
দোঁহার সর্ব্ব মিশিত এক(ই) সাথে,
দুপুর বেলা মধুর বৃষ্টিপাতে ভাই,
হর্ষে বিভোর পাখী দু’টির মত;
‘কথা’ যাহা আমিও যদি হ’তাম তাই,
প্রণয় যদি হ’ত সুরের মত!
জীবন যাহা—তুমি গো যদি হ’তে তাই,
আমি হ’তাম মরণেরি মত!
রৌদ্র বৃষ্টি হ’ত একই সাথে,
চৈত্র মাসের নূতন পাতে পাতে,
চৈত্র মাসের সকল শাখে শাখে ভাই
ফুলে যখন ফলের গন্ধ যত।
জীবন যাহা—তুমি গো যদি হ’তে তাই,
আমি হ’তাম মরণেরি মত!
তুমি গো যদি দুখের হ’তে ক্রীতদাস,
আমি হ’তাম হরষেরি সাথী;—
ভাগ্য ল’য়ে চলিত শুধু খেলা,
কখনো হাসি, কখনো হেলাফেলা,
বালক সম—বালিকা সম পরিহাস,
অরুণ সাথে অশ্রুময়ী রাতি!
তুমি গো যদি দুখের হ’তে ক্রীতদাস,
আমি হ’তাম হরষেরি সাথী!
তুমি যদি ‘মধু’র প্রিয়া হ’তে রাণী,
আমি হ’তাম ‘মাধবে’রি রাজা;—
মুকুল, ফুল, রাখিয়া বাজি মেলা,
পাতার পাশা হ’ত মোদের খেলা,
নিশার মত হ’ত ঊষার হাসিখানি,
নিশি হ’ত অরুণ রাগে মাজা!
চৈত্রনিশির তুমি যদি হ’তে রাণী,
আমি হতাম বসন্তেরি রাজা!
তুমি যদি সুখের প্রিয়া হও রাণী,
আর আমি হই বেদনারি রাজা;—
মদনে মোরা করিব দোঁহে শীকার,
ছিঁড়িয়া পাখা ঘটাব তা’র বিকার,
মুখেতে তা’র লাগাম এক দিব টানি,—
শিখাব তা’রে নাচনেরি মজা!
তুমি যদি সুখের প্রিয়া হও রাণী,
আর আমি হই দুঃখব্যথার রাজা!
সুইন্বার্ণ্।