তীর্থ-সলিল/বৌদ্ধের তপস্যা
বৌদ্ধের তপস্যা।
শশক-বর্ষ আসেনি তখনো ব্যাঘ্র-বর্ষ যায়,
ধর্ম্ম-চক্র ধরিতে হৃদয় ব্যাকুল হইল হায়;
তাই সে একদা তুষার সীমায় হইনু উপস্থিত,
সঙ্গী বিহীন নির্জ্জন গিরি, শঙ্কা বিহীন চিত।
পবনে গগনে যুক্তি করিয়া বৃষ্টি করিল শিলা,
চন্দ্র তপন হইল বন্দী, কেবলি মেঘের লীলা;
লোহার নিগড়ে নয় গ্রহ বাঁধা পড়িলেন একে একে,
দুনো উজ্জল ‘দুক্’ তারা শুধু দেখা যায় থেকে থেকে।
নয় রাতি নয় দিনমান ধরি’ বরফ-ফুল্কি ঝরে,
সরিষার মত কোনোটি পঙ্গপালের আকার ধরে!
বরফের গুঁড়া জমাট বাঁধিল বড় বড় চুড়া ব্যেপে,
নীচে বনভূমি মুরছিয়া পড়ে গুরুভার বুকে চেপে;
শিলা কঙ্কাল পুরিল তুষারে, ঘুচিল কালিমা রেখা;
ললাটের বলি চিহ্ণ মুছিল, ফুটিল জ্যোতির্লেখা!
ঊর্ম্মিল জল স্থির হ’ল নদী থামিল মধ্য পথে,
স্থল কিবা জল হ’ল সমতল, চিনিব সে কোন্ মতে?
কিবা পশু পাখী কিবা সে মানব খাদ্য না পায় কেহ,
বিফলে চকোর বরফ খুঁটিল, মূষিক খুঁড়িল গেহ;
গবয়, চমরী, ছাগ, কস্তূরী খুলিতে না পারে মুখ,
হেন দুর্য্যোগে মিললাপা! তুমি কতই পেয়েছ দুখ!
একা গুহাতলে বন্দী ছিলাম বরফের কারাগারে,
ভিক্ষুজনের জীর্ণ বসন হঠায়েছে বাত্যারে;
স্খলিত-দন্ত শীত-শার্দ্দূল পলায়ে গিয়াছে দূরে,
তপের তাপেতে গলেছে তুষার অযুত ধারার ঝুরে!
দুরন্ত ঝড় হয়েছে শান্ত ঘন ধারা বরিষণে,
প্রণত পঞ্চভূতের শীর্ষ বুদ্ধের শ্রীচরণে।
বহ্ণির কুলে জন্ম আমার, ব্যাঘ্র সে জ্ঞাতি মম,
বসতি আমার তুষারাস্তৃত গিরি-চূড়া দুর্গম;
সিংহের কুলে জনমি’ শুনেছি সঙ্ঘের মহাবাণী,
যে পথে গেছেন অর্হত সবে আমিও সে পথ জানি;
মহাযান পথে যাত্রী আমরা মরণে ও মোরা ধন্য,
ওগো উপাসক! তথাগতে জান, চিত্ত কর না অন্য;
দুখ মাঝে সুখে ছিল মিললাপা না ছিল হৃদয়ে শোক,
ওগো উপাসক! তোমা সবাকার চির-কল্যাণ হোক্।