দয়া

এই যে দরিদ্রগণ অক্ষম গমনে,
কত দুঃখ-ভোগ করে নিষ্প্রভ নয়নে।
ঘরে ঘরে ভিক্ষা করে পেটের লাগিয়া,
হর তাহাদের দুঃখ, শীঘ্র করি গিয়া।
শ্রমেতে অক্ষম বৃদ্ধ দেখ চ’লে যায়,
ঐ যে মনুষ্য, যার আয়ুঃশেষ প্রায়,
জর জর হইয়াছে চিন্তায়, পীড়ায়,
আরাম প্রদান কর, ত্বরা করি তায়।
যার বক্ষ হ’তে হায়! দুরন্ত শমন,
জীবন-সম্বল তার ক’রেছে হরণ;
যে রমণী নিরাশ্রয় পতির মরণে;
যে বালক চিরদুঃখী জনক বিহনে;

এইরূপ যত কেহ আছে নিরাশ্রয়;
তাহাদের প্রতি দয়া উপযুক্ত হয়।
দেখ দেখি ক্রীতদাস শ্রম করে কত,
তবে কেন তারে কষ্ট দাও অবিরত,
শৃঙ্খল র’য়েছে, হায়! উহার শরীরে,
চিন্তাও স্বাধীন নহে মানস মন্দিরে,
জীবনের সুখ আশা সকলি ত্যজেছে,
মৃত্যু বিনা গতি নাই নিশ্চয় জেনেছে;
এ সব দেখিয়া কেন না কাঁদিছে প্রাণ,
ক্রীতদাসে মুক্ত কর হ’য়ে দয়াবান্।
দীন হীন জনে তুমি যখন দেখিবে,
তখনি তাহার প্রতি দয়া প্রকাশিবে,
যেমন স্নেহের পাত্র প্রতিবেশিগণ,
ভাই ভগ্নী পুত্ত্র আদি যেমন আপন,
মনুষ্য মাত্রেই হয় তেমন তোমার,
অতএব আত্মপর ভেবো না হে আর।
অভেদে দয়ার চক্ষে হেরিবে সকলে,
দয়ার সমান ধর্ম্ম আছে কি ভূতলে?