পল্লীবাস

পল্লীবাস কি সুখের জানে যেই জন,
কভু কি নগর বাসে ধায় তার মন?
চারি দিকে প্রকৃতির শোভা মনোহর,
হেরি ভাবে পূর্ণ হয় যাহার অন্তর,
কৃত্রিম নগর শোভা করি দরশন,
কখনো কি তৃপ্তি-লাভ করে তার মন?
গ্রামের বাহিরে কত নেত্র-তৃপ্তি-কর,
বিস্তৃত প্রান্তর হয় নয়ন-গোচর।

মাঝে মাঝে বড় বড় সরোবর আছে,
তা’দের পাহাড় শোভে বড় বড় গাছে।
নির্ম্মল সলিল রাশি করে তর তর,
মীনগণ খেলা করে তাহার ভিতর।
কোথাও নিকুঞ্জ বনে পবন বহিছে,
রাঙা রাঙা পাতা গুলি তাহাতে নড়িছে।
পাখিগণ মাঝে মাঝে করিতেছে গান,
যেন তা’রা পথিকেরে করিছে আহ্বান।
কোথাও রাখালগণ গো-পাল ছাড়িয়া,
বৃক্ষের তলায় সবে র’য়েছে বসিয়া।
কেহ গান করিতেছে কেহ বা নাচিছে,
বিশ্রাম করিছে কেহ কেহ বা খেলিছে।
গ্রাম্য-বাঁশি ল’য়ে কেহ করিতেছে গান,
শুনিয়া মোহিত হয় ভাবুকের প্রাণ।
সন্ধ্যাকালে লোহিতাদি বিবিধ বরণে,
চারি দিকে মেঘমালা শোভিছে গগনে।
খিলান ছাদের মত সুনীল আকাশ,
মিলিয়াছে ভূমিসনে ঘেরি চারি পাশ।
মন্দ মন্দ সমীরণ ভ্রমি উপবন,
করে বন-কুসুমের সুগন্ধ বহন।

গাইয়া সন্ধ্যার গান সুমধুর রবে,
কুলায়ের অভিমুখে ধায় পাখী সবে।
রজনীর আগমনে সুধাংশু প্রকাশে,
হাসয়ে প্রকৃতি-সতী মনের উল্লাসে।
প্রাতঃকালে মন্দ মন্দ অনিলের ভরে,
বৃক্ষ লতা তৃণ আদি দোল দোল করে।
তাহাদের অগ্রভাগে শিশির পড়িয়া,
অরুণ কিরণে তাহা রক্তিম হইয়া,
মুকুতার মত হয় দেখিতে সুন্দর,
তাহা দেখি মহানন্দে ভাসয়ে অন্তর।
আহা! এইরূপ কত শোভা মনোহর,
হে’রে হয় পল্লী-বাসে সুখ নিরন্তর।