পাখীর কথা/তৃতীয় ভাগ/মালবিকাগ্নিমিত্র ও অভিজ্ঞানশকুন্তল
মালবিকাগ্নিমিত্র ও অভিজ্ঞানশকুন্তল
মালবিকাগ্নিমিত্রের প্রথম অঙ্কে দেখিতে পাই যে, রাজা অগ্নিমিত্র মালবিকার চিত্র দেখিয়া তাহার দর্শনলাভ করিবার জন্য বয়স্যের সহিত পরামর্শ করিয়া একটা উপায় স্থির করিলেন। রাজসভায় গণদাস ও হরদত্ত নামক দুইজন নাট্যবিদ্যা-বিশারদ ছিলেন। গণদাসের শিষ্যা মালবিকা। হরদত্তেরও শিষ্য ছিল। আদেশ হইল যে, রাজা ও রাণীর সমক্ষে শিষ্যদিগের নর্ত্তননৈপুণ্য দেখিয়া শিক্ষকদিগের বাহাদুরির পরিচয় লওয়া হইবে। নেপথ্যে মৃদঙ্গধ্বনি শ্রুত হইল। রাজা অস্থির হইয়া উঠিলেন; মৃদঙ্গবাদ্য শুনিবার জন্যই যেন তিনি সভায় যাইতেছেন, এই প্রকার ভাণ করিলেন; কিন্তু সুচতুরা রাণী বুঝিতে পারিলেন আসল ব্যাপারটা কি,—রাজা অন্য নায়িকা দর্শন করিতে ইচ্ছুক। স্বগত বলিলেন—আর্য্যপুত্রের কি অশিষ্ট ব্যবহার! এদিকে মৃদঙ্গের শব্দ শুনিয়া পরিব্রাজিকা বলিলেন,—
জীমূতস্তনিতবিশঙ্কিভির্ময়ূরৈ-
রুদ্গ্রীবৈরনুরসিতস্য পুষ্করস্য।
নির্হ্রাদিন্যুপচিতমধ্যস্বরোত্থা
মায়ূরী মদয়তি মার্জ্জনা মনাংসি॥
কি মধুর সঙ্গীত! ঐ শব্দ শুনিয়া মেঘগর্জ্জনভ্রমে ময়ূরগণ আনন্দে উদ্গ্রীব হইয়া শব্দ করাতে মৃদঙ্গধ্বনির সহিত উহা মিশ্রিত হইতেছে; সুতরাং মধ্যম স্বরজাত মূর্চ্ছনা উত্থিত হইয়া হৃদয়কে উল্লসিত করিতেছে।
দ্বিতীয় অঙ্কে গণদাস-শিষ্যা মালবিকা ছলিত নামক একখানি নাটকের অভিনয়ে নর্ত্তকীর ভূমিকায় আসরে অবতীর্ণা হইলেন। মুগ্ধ রাজা তাহার নাচের ভঙ্গী দেখিয়া তদ্গতচিত্ত হইয়া নর্ত্তকীর দেহের চারুতা সম্বন্ধে এইরূপ স্বগতোক্তি করিলেন,—
বামং সন্ধিস্তিমিতবলয়ং ন্যস্য হস্তং নিতম্বে
কৃত্বা শ্যামাবিটপসদৃশং স্রস্তমুক্তং দ্বিতীয়ম্।
পাদাঙ্গুষ্ঠালুলিতকুসুমে কুট্টিমে পাতিতাক্ষং
নৃত্যাদস্যাঃ স্থিতমতিতরাং কান্তমৃজ্বায়তার্দ্ধম্॥
পরিব্রাজিকা বলিলেন—যাহা দেখিলাম, সমস্তই অনিন্দনীয়। গণদাস উৎকৃষ্ট নর্ত্তক বলিয়া পরিগণিত হইলেন। বিদূষক ব্রাহ্মণ-হিসাবে কিছু দক্ষিণা চাহিলেন; বলিলেন—“আমি শুষ্ক মেঘগর্জ্জিত অন্তরীক্ষে জলপানের ইচ্ছা করিয়া চাতকবৃত্তি অবলম্বন করিয়াছি।” আচার্য্য গণদাসের সহিত মালবিকা প্রস্থান করিল। হরদত্ত অভিনয় প্রদর্শন করিতে চাহিল। রাজা ইতস্ততঃ করিতেছেন, এমন সময়ে নেপথ্যে শোনা গেল—“মহারাজের জয় হউক। মধ্যাহ্নকাল সমুপস্থিত,
পত্রচ্ছায়াসু হংসা মুকুলিতনয়না দীর্ঘিকাপদ্মিনীনাং
সৌধান্যত্যর্থতাপাদ্বলভিপরিচয়দ্বেষিপারাবতানি।
বিন্দুক্ষেপান্ পিপাসুঃ পরিসরতি শিখী ভ্রান্তিমদ্বারিযন্ত্রং
সর্ব্বৈরুস্রৈঃ সমগ্রস্ত্বমিব নৃপগুণৈর্দীপ্যতে সপ্তসপ্তিঃ॥
হংসগণ দীর্ঘিকাস্থিত পদ্মিনীর পত্রচ্ছায়ায় মুকুলিত নয়নে অবস্থান করিতেছে; রবিকর প্রখরতর হওয়াতে পারবতগণ আর পূর্ব্ববৎ সৌধবলভিতে বিচরণ করিতেছে না। ঘূর্ণ্যমান জলযন্ত্র হইতে উৎক্ষিপ্ত বারিকণা দেখিয়া পিপাসার্ত্ত ময়ূরেরা সেই দিকে ধাবিত হইতেছে। হে রাজন! আপনি যেমন সর্ব্বগুণে সম্পূর্ণ, সপ্তাশ্ব সূর্য্যদেবও সেইরূপ সমগ্র রশ্মিতে দীপ্যমান”।
ভোজন-বেলা উপস্থিত হইয়াছে; হরদত্তকে বিদায় করা হইল। দেবীর সহিত পরিব্রাজিকাও প্রস্থান করিলেন। বিদূষক রাজাকে বলিলেন—“আপনার কার্য্য-সাধনার্থ অবসর প্রতীক্ষা করিতে হইবে। জ্যোৎস্না যেমন মেঘরাজিতে অবরুদ্ধ হয়, মালবিকা এখন সেইরূপ হইয়াছেন; তাঁহার দর্শনলাভ এখন রাণী ধারিণীর অনুমতিসাপেক্ষ। শ্যেন পক্ষী যেমন প্রাণিবধস্থানের নিকটে আমিষলোভে বিচরণ করে, মালবিকারূপ আমিষলোভে লুব্ধ হইয়া আপনিও সেইরূপ করিতেছেন।”
তৃতীয় অঙ্কে রাজা ও বিদূষক একটি উদ্যানে প্রবেশ করিলেন। তখন সেই প্রমোদবন যেন বায়ুভরে ঈষৎ বিকম্পিত পল্লবরূপ অঙ্গুলিসঙ্কেতে উৎকণ্ঠিত রাজাকে ত্বরান্বিত করিতেছে। বায়ুস্পর্শ-সুখ অনুভব করিয়া তিনি বলিলেন—“নিশ্চয়ই বসন্তঋতু আবির্ভূত হইয়াছে। সখে! দেখ,
আমত্তানাং শ্রবণসুভগৈঃ কূজিতৈঃ কোকিলানাং
সানুক্রোশং মনসিজরুজঃ সহ্যতাং পৃচ্ছতেব।
উন্মত্ত কোকিলেরা শ্রবণসুখকর রব করাতে বোধ হইতেছে যেন বসন্ত সদয়ভাবে আমাকে জিজ্ঞাসা করিতেছে ইত্যাদি * * *”।
এমন সময়ে মালবিকা সেই উদ্যানে প্রবেশ করিল। রাজা বয়স্যকে বলিলেন,—এখন আমি জীবনধারণ করিতে সমর্থ হইব। সারস পক্ষীর উচ্চধ্বনি শ্রবণ করিয়া তরুরাজি-সমাবৃত নদী নিকটবর্ত্তী বুঝিয়া পথিকের হৃদয় যেমন আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠে, তোমার মুখে প্রিয়তমা সমীপগতা শুনিয়া আমার অবসন্ন চিত্তও সেইরূপ উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছে।
মালবিকার সখী বকুলাবলিকা আসিয়া উপস্থিত হইল। রাজা ও মালবিকার আলাপ পরিচয়ের মাঝখানে সহসা কুপিতা রাণী ইরাবতীর আবির্ভাব; একটা মহা গোলমালের মধ্যে তৃতীয় অঙ্কের যবনিকা পড়িয়া গেল।
চতুর্থ অঙ্কের প্রারম্ভে রাজা দুই একটি কথার পর বয়স্যকে মালবিকার সংবাদ জিজ্ঞাসা করিলেন। বিদূষক উত্তর দিলেন, ‘বিড়ালে ধরিলে কোকিলার যে অবস্থা হয়, মালবিকারও সেই অবস্থা।’ মালবিকা দেবীর পরিচারিকা কর্ত্তৃক বকুলাবলিকার সহিত ভূগর্ভস্থ কোষাগার মধ্যে অবরুদ্ধ হইয়াছে। রাণীর দাসী মালবিকা যে রাজার প্রণয়পাত্রী হইবে ইহাই রাণীর ক্রোধের কারণ। বিষণ্ণ রাজা বলিলেন,—হায়!
মধুরস্বরা পরভৃতা ভ্রমরী চ বিবুদ্ধচূতসঙ্গিন্যৌ।
কোটরমকালবৃষ্ট্যা প্রবলপুরোবাতয়া গমিতে॥
মধুরকণ্ঠী কোকিলা ও ভ্রমরী উভয়ে যেমন বিকসিত সহকারকুসুমের সংসর্গে থাকে, উহারা উভয়েও সেইরূপ একত্র বাস করিত। এখন প্রবল পুরোবাতের সঙ্গে অকালবৃষ্টি তাহাদিগকে কোটরগত করাইল।
কিন্তু সুচতুর বয়স্য কৌশল করিয়া স-সখী মালবিকার উদ্ধার-সাধন করিয়া তাহাদিগকে সমুদ্রগৃহে রাখিয়া আসিয়া রাজাকে তথায় লইয়া আসিলেন। তাঁহাদিগের বিশ্রম্ভালাপের ব্যবস্থা করিয়া দিয়া বিদূষক দ্বাররক্ষক হইয়া রহিলেন। সহসা সখী নিপুণিকাকে সঙ্গে লইয়া রাণী ইরাবতী সেখানে উপস্থিত হইলেন। কিছুই গোপন রহিল না। বয়স্য আক্ষেপ করিয়া বলিলেন—“হায়! কি অনর্থ উপস্থিত! বন্ধনভ্রষ্ট গৃহপালিত কপোত বিড়ালীর দৃষ্টিপথে পতিত হইল।” কিন্তু একটা তুচ্ছ ঘটনায় রাজা আসন্ন বিপদ্ হইতে মুক্তিলাভ করিলেন। রাজকুমারী বসুলক্ষ্মী একটা বানরের ভয়ে অত্যন্ত ভীতা হইয়াছেন, এই সংবাদ পাইয়া রাণী অনুনয় করিয়া বলিলেন—কুমারীকে সান্ত্বনা দিবার জন্য আর্য্যপুত্র ত্বরান্বিত হউন।
পঞ্চম অঙ্কে বৈতালিক বিদিশাধিপতি অগ্নিমিত্রের যশোগান করিতেছে—
পরভৃতকলব্যাহারেষু ত্বমাত্তরতির্মধুং
নয়সি বিদিশাতীরোদ্যানেষ্বনঙ্গ ইবাঙ্গবান্।
যেমন রতি-সহচর মন্মথ পরভৃত কলকূজনে বসন্তের আবির্ভাব প্রকাশ করিয়া থাকেন—অঙ্গবান্ অনঙ্গের মত আপনিও সেইরূপ বিদিশাতীরস্থ উদ্যানে শোভা বিস্তার করিতেছেন।
এদিকে দৈবক্রমে যে মালবিকার চরণস্পর্শে অশোক তরু প্রস্ফুটিতপুষ্পভারনম্র হইয়া পড়িয়াছে, তাহাকে আর বন্দিনী করিয়া রাখা চলে না; রাণী তাহাকে বধূবেশে সজ্জিত করিয়াছেন; এবং পরিব্রাজিকা ও পরিজন সমভিব্যাহারে তাহাকে লইয়া রাজসমীপে উপস্থিত হইয়াছেন। রাজা মালবিকাকে দেখিয়া আপনাআপনি বলিতেছেন—
অহং রথাঙ্গনামেব প্রিয়া সহচরীব মে।
অননুজ্ঞাতসম্পর্কা ধারিণী রজনী নৌ॥
আমি চক্রবাক এবং প্রিয় মালবিকা সহচরী চক্রবাকী; দেবী ধারিণী যেন রাত্রি স্বরূপিণী—যাহার অনুজ্ঞা ব্যতীত আমাদের উভয়ের মিলন হইতে পারে না।
অতঃপর মহাকবি সুকৌশলে রাজার নিকটে মালবিকার বংশপরিচয় করাইলেন;—কেমন করিয়া মালব-রাজকুমারী মালবিকা দস্যু কর্ত্তৃক অপহৃত হইয়া, অবশেষে বিদিশারাজ-ভবনে আশ্রয়লাভ করিয়াছিলেন, তাহারই বর্ণনাপ্রসঙ্গে আমরা জানিতে পারি যে, তদ্দেশীয় দস্যুরা পৃষ্ঠদেশে ময়ূরপুচ্ছ আভরণরূপে ব্যবহার করিত।
তূণীরপট্টপরিণদ্ধভুজান্তরাল-
- মাপার্ষ্ণিলম্বিশিখিপিচ্ছকলাপধারি।
ইহার পর রাত্রিস্বরূপিণী রাণী ধারিণী, চক্রবাকমিথুনরূপ মালবিকাগ্নিমিত্রের মিলনের অনুজ্ঞা প্রদান করিলেন। ইরাবতীর কোপ প্রশমিত হইল।
ইহাই মালবিকাগ্নিমিত্রের গল্পাংশ। পাঠক অবশ্যই লক্ষ্য করিয়াছেন, নায়ক-নায়িকাবর্ণনা প্রসঙ্গে কেমন সহজে ময়ূর, চাতক, কোকিল, সারস, গৃহকপোত, রথাঙ্গ প্রভৃতি পাখীগুলি আসিয়া পড়িয়াছে। ইহাদিগের মধ্যে অনেকগুলিকেই আমরা উর্ব্বশীপুরুরবার সম্পর্কে পাইয়াছি। আবার নবীন পরিবেষ্টনীর মধ্যে শকুন্তলার উপাখ্যানে উহাদিগের দর্শনলাভ করিবার আশা আছে। অতএব অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকখানির কিঞ্চিৎ আলোচনা করিয়া, আমরা আধুনিক বৈজ্ঞানিক রীতি অনুসারে বিহঙ্গগুলির সম্যক্ পরিচয়লাভের চেষ্টা করিব।
অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের প্রথম অঙ্কে দ্রুত পলায়মান মৃগের অনুসরণে তপোবন-সান্নিধ্যে সমাগত রাজা দুষ্মন্ত ঋষিগণ কর্ত্তৃক সহসা আশ্রমমৃগের হননে বাধা পাইয়া, কুলপতির আশ্রমদর্শনের অভিলাষে প্রবেশ করিতেছেন, এমন সময়ে সারথিকে বলিলেন—“সূত! কেহ না বলিলেও, এটি যে তপোবন, তাহা বেশ বুঝা যাইতেছে।” সারথি জিজ্ঞাসা করিল—“কিরূপ?” রাজা বলিলেন—“তুমি কি দেখিতে পাইতেছ না? এখানে—
নীবারাঃ শুকগর্ভকোটরমুখভ্রষ্টাস্তরূণামধঃ
প্রস্নিগ্ধাঃ ক্বচিদিঙ্গুদীফলভিদঃ সূচ্যন্ত এবোপলাঃ।
বিশ্বাসোপগমাদভিন্নগতয়ঃ শব্দং সহন্তে মৃগা-
স্তোয়াধারপথাশ্চ বল্কলশিখানিষ্যন্দরেখাঙ্কিতাঃ॥
—যে বৃক্ষকোটরের মধ্যে শুকপক্ষী নীড় রচনা করিয়াছে, তাহার মুখ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া নীবার শস্যগুলি তরুমূলে পতিত রহিয়াছে; যে সকল উপল সাহায্যে ইঙ্গুদীফল ভগ্ন করা হয়, তাহাতে সংলগ্ন ফলনির্য্যাস তপোবনের সূচনা করিয়া দিতেছে। বিশ্বাস উপগম হেতু নিশ্চল হইয়া মৃগগণ রথশব্দ সহ্য করিতেছে; আশ্রমবৃক্ষের বল্কলশিখা হইতে জলক্ষরণে রেখাঙ্কিত তোয়াধারপথগুলিও তপোবনের সূচনা করিতেছে”।
নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রারম্ভে মৃগয়াশীল রাজার সহচর বিদূষক মৃগয়ার কঠোরতায় অতিশয় ক্লান্ত ও অবসন্ন হইয়া বিরক্তভাবে আপনা-আপনি বলিতেছে—“হা অদৃষ্ট! এই রাজার বয়স্য হয়ে আমি মারা গেলাম। একে ঐ মৃগ, ঐ বরাহ, ঐ শার্দ্দূল এই ভাবে দৌড়াদৌড়িতে হায়রান; খাদ্য পানীয় জোটে না, গায়ের ব্যথায় রাত্রে ঘুম হয় না; তাতে আবার প্রভাত হতে না হতেই শকুনিলুব্ধকগণের অরণ্যময় ভীষণ চীৎকারে জেগে উঠি।”
তৃতীয় অঙ্কে প্রিয়ংবদা ও অনসূয়া, সখী শকুন্তলার মনোভাব রাজা দুষ্মন্তের নিকট জ্ঞাপনার্থ উপায় উদ্ভাবন করিতেছেন। প্রিয়ংবদা শকুন্তলাকে প্রণয়পত্র লিখিতে অনুরোধ করিয়া বলিলেন যে, তিনি ঐ পত্রকে পুষ্পে ঢাকিয়া দেবতাপ্রসাদচ্ছলে রাজার হাতে দিবেন। প্রত্যুত্তরে শকুন্তলা বলিলেন যে, তিনি কি লিখিবেন, তাহা স্থির করিয়াছেন; লেখার উপকরণ পাইলে লিখিতে পারেন। প্রিয়ংবদা বলিলেন—“এই শুকোদর সুকুমার নলিনীপত্রে আপনার নখ দ্বারা লিখিয়া ফেল।” পত্র লেখা হইল, কিন্তু প্রেরণের প্রয়োজন হইল না। বৃক্ষান্তরালে প্রচ্ছন্ন রাজা অতঃপর আত্মগোপন অনাবশ্যকবোধে দেখা দিলেন। শকুন্তল-দুষ্মন্তের পরস্পর প্রণয়লাপের আনুকূল্যার্থ সখীদ্বয় ছল করিয়া তথা হইতে প্রস্থান করিল। কিন্তু বিশ্রম্ভালাপের সুযোগ স্থায়ী হইল না। সহসা নেপথ্যধ্বনি শ্রত হইল—“চক্কবাকবহুএ আমন্তেহি সহঅরং। উবট্ঠিদা রঅণী।” চক্রবাকবধূ! আপনার সহচরকে আমন্ত্রণ কর, রাত্রি উপস্থিত।
চতুর্থ অঙ্কে কুলপতি কণ্ব শকুন্তলার অনুরূপ বরলাভে প্রসন্ন হইয়া তাহাকে পতিগৃহে প্রেরণ করিতেছেন, এমন সময়ে শিষ্য শার্ঙ্গরব মুনিকে বলিলেন—ভগবন্! শকুন্তলার এই বনবাস-বন্ধু তরুসকল তাহার গমনে অনুমোদন করিতেছে, কারণ, পরভৃতকূজনছলে উহারা প্রত্যুত্তর দিতেছে—
অনুমতগমনা শকুন্তলা
তরুভিরিয়ং বনবাসবন্ধুভিঃ।
পরভৃতবিরুতং কলং যথা
প্রতিবচনীকৃতমেভিরীদৃশম্॥
সখী প্রিয়ম্বদা বলিলেন—শকুন্তলাই যে কেবল আসন্ন বিরহে ব্যাকুল হইয়াছেন, তাহা নহে; সমস্ত তপোবনব্যাপী বিরহ পরিলক্ষিত হইতেছে, যেহেতু
উগ্গলিঅদব্ভকবলা মিআ পরিচ্চত্তণচ্চণা মোরা।
ওসরিঅপণ্ডুপত্তা মুঅন্তি অস্সূ বিঅ লদাও।—
—মৃগগণ মুখের গ্রাস ফেলিয়া দিতেছে, ময়ূরেরা নৃত্য পরিত্যাগ করিয়াছে; লতা-সকল স্বকীয় পাণ্ডুপত্র ত্যাগচ্ছলে যেন অশ্রুমোচন করিতেছে।—কিয়ৎকাল পরে শকুন্তলা অনসূয়াকে বলিলেন—“সখি! দেখ নলিনীপত্রান্তরালে অন্তর্হিত সহচরকে দেখিতে না পাইয়া আতুরা চক্রবাকী যেন এই বলিয়া ক্রন্দন করিতেছে, ‘দুষ্করমহং করোমি—এতক্ষণ যে আমার প্রিয়-বিরহে অতিবাহিত হইল, ইহা কি কঠোর! অনসূয়া উত্তর দিলেন—এরকম মনে ক’রো না, সই! যেহেতু
এসা বি পিএণ বিণা গমেই রঅণিং বিসাঅদীহঅরং।
গরুঅং পি বিরহদুকখং আসাবন্ধো সহাবেদি॥
—এও প্রিয়বিরহে বিষাদ-দীর্ঘতরা রজনী আশায় অতিবাহিত করিতে সমর্থ হয়।
নাটকের পঞ্চম অঙ্কে শকুন্তলাকে লইয়া গৌতমী ও শার্ঙ্গরব রাজসভায় উপস্থিত হইয়াছেন। শকুন্তলার পরিচয় পাইয়াও রাজা দুষ্মন্ত তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না। শকুন্তলা অগত্যা সমভিব্যাহারী গুরুজনের অনুরোধে লজ্জা পরিত্যাগ করিয়া রাজার স্মৃতি জাগাইয়া তুলিবার জন্য যে সকল পুরাতন কাহিনীর উত্থাপন করিলেন, রাজা তাহাতে বিদ্রূপ করিয়া বলিলেন—“হে গৌতমি! তপোবনে লালিত হইয়াছেন বলিয়া যে ইনি ছলনা জানেন না, তাহা না হইতেও পারে; কারণ, মানুষেতর জীবের স্ত্রীজাতির মধ্যে যখন অশিক্ষিতপটুত্ব দেখা যায়, তখন বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্না নারীর মধ্যে যে তাহা প্রকটিত হইবে, তাহাতে আশ্চর্য্য কি?
স্ত্রীণামশিক্ষিতপটুত্ত্বমমানুষীষু
সংদৃশ্যতে কিমুত যাঃ প্রতিবোধবত্যঃ।
প্রাগন্তরিক্ষগমনাৎ স্বমপত্যজাত-
মন্যৈর্দ্বিজৈঃ পরভৃতাঃ খলু পোষয়ন্তি॥
—এই নিমিত্তই আকাশমার্গে উড়িয়া যাইবার পূর্ব্বে পরভৃতা স্বীয় অপত্যগুলি অন্য পক্ষীর দ্বারা পোষণের ব্যবস্থা করিয়া থাকে”।
নাটকের ষষ্ঠ অঙ্কের সূচনায় রাজপুরুষেরা ধীবরের নিকটে রাজনামাঙ্কিত অঙ্গুরীয়ক দেখিয়া তাহার প্রতি ভয় প্রদর্শন করিয়া বলিল—“অরে চোর! তোর দণ্ডবিধানার্থ রাজ-আজ্ঞা বহন করিয়া আমাদের স্বামী আসিতেছেন। এখন তুই গৃধ্র-বলিই হইবি অথবা কুক্কুরের মুখে যাইবি।” এদিকে চূতমুকুল অবলোকন করিয়া পরভৃতিকা ও মধুকরিকা পরিচারিকাদ্বয় বসন্তের আগমনে উৎফুল্ল হইয়াছে। মধুকরিকা জিজ্ঞাসা করিল—“লো পরভৃতিকে! তুই আপনাআপনি কি গুন্গুন্ করিতেছিস্?” সে উত্তর করিল—“চূতমুকুল দেখিয়া পরভৃতিকা উন্মত্তাই হইয়া থাকে।” উভয়ের কথোপকথনের মাঝখানে সহসা কঞ্চুকী আসিয়া তাহাদিগকে তিরস্কার করিয়া বলিল—“রাজা বসন্তোৎসব করিতে নিষেধ করিয়াছেন। বাসন্তিক তরুগুলি এবং সেই তরুগুলিকে আশ্রয় করিয়া যে পাখীগুলি থাকে, তাহারা পর্য্যন্ত রাজার আজ্ঞা পালন করিতেছে, আর তোরা দুইজন ইহার কিছুই জানিস্ না?—
চূতানাং চিরনির্গতাপি কলিকা বধ্নাতি ন স্বং রজঃ
সন্নদ্ধং যদপি স্থিতং কুরুবকং তৎ কোরকাবস্থয়া।
কণ্ঠেষু স্খলিতং গতেঽপি শিশিরে পুংস্কোকিলানাং রুতং
শঙ্কে সংহরতি স্মরোঽপি চকিতস্তূণার্দ্ধকৃষ্টং শরম্॥
—চূতকুলিকা বহুদিন নির্গত হইয়াছে, কিন্তু পরাগ জন্মে নাই; কুরুবক-পুষ্প বৃন্ত হইতে বহির্গত হইয়াও কোরকাবস্থাতেই আছে; শিশির ঋতু চলিয়া গেলেও পুংস্কোকিলের কণ্ঠস্বর কণ্ঠমধ্যেই বিলীন হইয়া রহিয়াছে * * * *”।
অঙ্গুরীয়ক দর্শনে রাজা দুষ্মন্তের পূর্ব্বস্মৃতি জাগিয়া উঠিল। তিনি শকুন্তলার প্রতি আপনার অন্যায় ব্যবহারের জন্য অনুতাপ করিতে লাগিলেন। দিন দিন তিনি এত উন্মনা হইতেছেন দেখিয়া, তাঁহার চিত্তবিনোদনের জন্য বয়স্য নানা উপায় অবলম্বন করিতে লাগিল।
রাজার স্বহস্ত-লিখিত শকুন্তলার প্রতিকৃতির বিষয় তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিয়া বয়স্য রাজাকে মাধবীমণ্ডপে যাইবার নিমিত্ত অনুরোধ করিয়া বলিলেন যে, এখনই চতুরিকা তথায় প্রতিকৃতিটি লইয়া আসিবে। এমন সময়ে চিত্রপট হস্তে চতুরিকা রাজসমীপে উপস্থিত হইলে, তিনি ব্যগ্রভাবে চেটীর হস্ত হইতে ছবিখানি লইয়া, বয়স্যকে ছবির ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা বুঝাইয়া দিতে লাগিলেন—সৈকতলীন-হংসমিথুনা স্রোতোবহা মালিনী নদী এইখানে অঙ্কিত হওয়া উচিত * * *। রাণী বসুমতী আসিতেছেন, ইহা চতুরিকার মুখে শুনিয়া বিদূষক বলিল—আমি মেঘপ্রতিচ্ছন্দ প্রাসাদের এমন জায়গায় এই চিত্রপট লুকাইয়া রাখিব, যেখানে পারাবত ব্যতীত[১] আর কেহই জানিতে পারিবে না। কিন্তু বেচারা মাধব্য কার্য্যকালে বিপন্ন হইয়া পড়িল। কোনও অদৃশ্য প্রাণী কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া সহসা সে আর্ত্তনাদ করিতে লাগিল। কি বিপদ্ ঘটিল, তাহা জানিবার নিমিত্ত কঞ্চুকীর উপর ভার পড়িল, সে দেখিয়া আসিয়া রাজসমীপে কাঁপিতে কাঁপিতে জানাইল—যে মেঘপ্রতিচ্ছন্দ প্রাসাদশিখরে গৃহনীলকণ্ঠ অনেকবার বিশ্রাম করিয়া আরোহণ করিতে সমর্থ হয়, তথা হইতে কোনও অপ্রকাশিত মূর্ত্তি আপনার বয়স্যকে পীড়ন করিতে করিতে কোথায় লইয়া গিয়াছে—
তস্যাগ্রভাগাদ্গৃহনীলকণ্ঠৈ-
রনেকবিশ্রামবিলঙ্ঘ্যশৃঙ্গাৎ।
সখা প্রকাশেতরমূর্ত্তিনা তে
কেনাপি সত্ত্বেন নিগৃহ্য নীতঃ॥[২]
রাজা ভয় নাই বলিয়া সহসা গাত্রোত্থানপূর্ব্বক ধনুর্ব্বাণহস্তে বয়স্যকে অদৃশ্য শত্রুর হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য বলিলেন—শত্রু যেই হউক, আমার শস্ত্র তাহাকে সংহার করিয়া মাধব্যকে রক্ষা করিবে, হংস যেমন জলমিশ্রিত দুগ্ধ হইতে সলিলাংশ পরিত্যাগ করিয়া দুগ্ধকে গ্রহণ করে।
যো হনিষ্যতি বধ্যং ত্বাং রক্ষ্যং রক্ষতি চ দ্বিজম্।
হংসো হি ক্ষীরমাদত্তে তন্মিশ্রা বর্জ্জয়ত্যপঃ॥
তৎক্ষণাৎ মাধব্যকে ছাড়িয়া দিয়া মাতলি রাজসমক্ষে উপস্থিত হইলেন এবং দেবরাজের সন্দেশ জ্ঞাপন করিয়া রাজা দুষ্মন্তকে সুরলোকে লইয়া গেলেন।
নাটকের সপ্তম অঙ্কে, দেবরাজ ইন্দ্রের আজ্ঞা পালন করিয়া রাজা মাতলির সহিত রথাধিরূঢ় হইয়া আকাশপথে প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছেন; রথচক্রের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া রাজা বলিলেন—আমরা মেঘমণ্ডলে অবতরণ করিয়াছি। ঐ দেখ—
অয়মরবিবরেভ্যশ্চাতকৈর্নিষ্পতদ্ভি-
র্হরিভিরচিরভাসাং তেজসা চানুলিপ্তৈঃ।
গতমুপরি ঘনানাং বারিগর্ভোদরাণাং
পিশুনয়তি রথস্তে শীকরক্লিন্ননেমিঃ॥
—রথচক্রের বিবর হইতে নিষ্পতনশীল চাতককুল এবং বিদ্যুৎপ্রভামণ্ডিত রথাশ্বগণ সহজেই সূচনা করিয়া দিতেছে যে, আমাদের রথ বারিগর্ভ মেঘের উপর দিয়া আগমন করিতেছে এবং তন্নিমিত্ত ইহার চক্রপ্রান্ত শীকরসংসিক্ত হইয়াছে।
অধঃ-প্রত্যাবর্ত্তনকালে বিভিন্ন প্রদেশ নিরীক্ষণ করিতে করিতে রাজা মাতলিকে মারীচাশ্রমের কথা জিজ্ঞাসা করিলেন। উহা দেখাইয়া মাতলি বলিতে লাগিলেন—“ঐ দেখুন, মহর্ষি কশ্যপ সূর্য্যবিম্বের দিকে চাহিয়া স্থাণুর ন্যায় অবস্থান করিতেছেন। তাঁহার মূর্ত্তি বল্মীকাগ্রে নিমগ্ন রহিয়াছে; বক্ষঃস্থলে সর্পত্বক্ বিজড়িত; কণ্ঠদেশ জীর্ণ লতাপ্রতান-বলয়ের দ্বারা অত্যন্ত পীড়িত হইতেছে; স্কন্ধলগ্ন জটামণ্ডলীর মধ্যে শকুন্ত-নীড় রচিত হইয়াছে।—
বল্মীকাগ্রনিমগ্নমূর্ত্তিরুরসা সংদষ্টসপত্বচা
কণ্ঠে জীর্ণলতাপ্রতানবলয়েনাত্যর্থসংপীড়িতঃ।
অংসব্যাপিশকুন্তনীড়নিচিতং বিভ্রজ্জটামণ্ডলঃ
যত্র স্থাণুরিবাচলো মুনিরসাবভ্যর্কবিম্বং স্থিতঃ॥
অতঃপর নাটকমধ্যে আর কোনও বাস্তব পক্ষীর উল্লেখ আমরা পাই না। কেবলমাত্র একটি মৃত্তিকাময়ূরের কথা আছে যাহার প্রলোভনে শকুন্তলাতনয় সিংহ-শিশুর উৎপীড়নক্রীড়া হইতে বিরত হইল। বর্ণচিত্রিত মৃন্ময়ূরটিকে তাপসীর উটজ হইতে আনা হইল।—তাপসী কহিলেন—সর্ব্বদমন! শকুন্তলাবণ্য দর্শন কর। শব্দসাদৃশ্যে বালক বলিয়া উঠিল—মা কোথায়? তাপসী উত্তর দিলেন—আমি এই মৃত্তিকা ময়ূরের সৌন্দর্য্যের কথা বলিতেছি। বালক বলিল—এই ময়ূরটি আমার পছন্দ হয়। অতঃপর উহা গ্রহণ করিতে আগ্রহ প্রকাশ করিল।
এখন বোধ হয়, পাঠক বুঝিতে পারিবেন, অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকে যে বিশ্বপ্রকৃতির চিত্র নায়কনায়িকার background রূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহার মধ্যে আমাদের পূর্ব্বপরিচিত অনেকগুলি পাখীর সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কেমন নিপুণভাবে প্রদর্শিত হইয়াছে। তপোবনের বৃক্ষকোটরে শুকপক্ষীর গৃহস্থালীর যে আভাস এখানে পাওয়া যায়, তাহা সর্ব্বাংশে সত্য কি না, দেখিতে হইবে। কোটরমধ্যে নীবারধান্য আনয়নের আবশ্যকতা কি এবং আহারান্তে তাহার হেয়াংশ বর্জ্জন করা শুকের অভ্যাস কি না? তাহার উদর সুকুমার পদ্মপত্রকে স্মরণ করাইয়া দেয় কি না, তাহাও বিচার্য্য। কোকিলরব অথবা পরভৃত-বিরুত, কোথাও বা কণ্ঠমধ্যে বিলীন পুংস্কোকিলস্বর, কোকিলবধূর অশিক্ষিতপটুত্ব—অন্তরীক্ষগমনের পূর্ব্বে অপর পক্ষী কর্ত্তৃক আপন সন্তান প্রতিপালনের নিপুণ ব্যবস্থা প্রভৃতি পরভৃৎরহস্যের জটিল কথাগুলি বিশেষভাবে বৈজ্ঞানিক আলোচনার বিষয়। বিক্রমোর্ব্বশী ও মালবিকাগ্নিমিত্রের রথাঙ্গ এখানে চক্রবাকবধূ অথবা চক্রবাকীরূপে দেখা দিয়াছে—“এষাপি প্রিয়েণ বিনা গময়তি রজনীং বিষাদদীর্ঘতরাম্”। চাতকের সঙ্গে মেঘের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ নাটকেও আছে। এখানে নূতন পরিবেষ্টনের মধ্যে ময়ূরগণ “পরিত্যক্তনর্ত্তনঃ”। যে পারাবতকে আমরা মেঘদূতে গৃহবলভিতে আশ্রয় লইতে দেখিয়াছি, সেই পারাবত গৃহনীলকণ্ঠের সহিত প্রাসাদশিখরাগ্রভাগে বিরাজ করিতেছে। স্রোতোবহা মালিনী-তটে সৈকতলীন হংসমিথুনের ছবি আমাদিগকে মুগ্ধ করে; নাটকবর্ণিত হংসের নীরমিশ্রিত দুগ্ধপানভঙ্গী স্বতন্ত্রভাবে বিচার-সাপেক্ষ। এই সমস্ত ছোট বড় সুন্দর পাখী মহাকবি-রচিত তিনখানি নাটকের মধ্যেই তাহাদের রূপে, মাধুর্য্যে ও লীলাভঙ্গীতে মানবাবাস, রাজপ্রাসাদ অথবা তপোবন-চিত্রকে রমণীয় করিয়া তুলিয়াছে। কেবল যে হিংস্র ও অসুন্দর পাখীর চৌর্য্যবৃত্তির কথা বিক্রমোর্ব্বশীতে পাওয়া যায় এবং যাহার নামোল্লেখ করিয়া নগররক্ষক শকুন্তলা-নাটকে ধীবরকে ভয় দেখাইতেছে,—সেই গৃধ্রের কথাও বিহঙ্গতত্ত্বহিসাবে বাদ দেওয়া চলিবে না। এইবার আমরা একে একে কবিবর্ণিত পাখীগুলি সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ গবেষণায় প্রবৃত্ত হইব।