পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/দ্বিপক্ষ পতঙ্গ/কাঁটালে-মাছি

কাঁটালে-মাছি

 আষাঢ় মাসে কাঁটাল ভাঙ্গিলে ভন্ ভন্ শব্দ করিয়া যে, বড় বড় নীল রঙের মাছি আসিয়া জমা হয়, তাহা বোধ হয়, তোমরা দেখিয়াছ। কাঁটাল যদি পচা হয়, তাহা হইলে
চিত্র ৬১—কাঁটালে-মাছি।
আর রক্ষা থাকে না। এই রকম মাছি তখন ঝাঁকে ঝাঁকে আসিয়া পচা কাঁটাল প্রায় ঢাকিয়া ফেলে। আমরা এই মাছিদেরই কাঁটালে-মাছি বলিতেছি। ইংরাজিতে ইহাদিগকে (Blue Bottles) বলে।

 কাঁটালে-মাছির জীবনের ইতিহাস সাধারণ মাছিদের তুলনায় কিছু স্বতন্ত্র। সাধারণ মাছিরা প্রথমে ডিম পাড়ে। তার পরে সেই ডিম ফুটিয়া বাচ্চা বাহির হয়। কিন্তু কাঁটালে-মাছিরা ডিম পাড়ে না; একবারে ছোট ছোট শুঁয়ো-পোকার আকারের বাচ্চা প্রসব করে। পতঙ্গমাত্রেই ডিম প্রসব করে, কিন্তু ইহারা পতঙ্গ হইয়াও ডিম পাড়ে না,—ইহা খুব অদ্ভুত নয় কি? এই অদ্ভুত ব্যাপার সম্বন্ধে পণ্ডিতেরা যাহা বলেন তাহাও আশ্চর্য্যজনক। তাঁহারা বলেন, এই মাছিদের ডিম পেটের ভিতরে ফুটিয়া যায়। তার পরে পেটে থাকিয়া বাচ্চারা যখন একটু বড় হয়, তখন মাছিরা সেই বাচ্চা প্রসব করে। অর্থাৎ পেটের ভিতরেই ডিম ফুটাইয়া হাঁসেরা যদি প্রতিদিনই এক একটা ছানা প্রসব করিত, তাহা হইলে ব্যাপারটা যেমন অদ্ভুত হইত, কাঁটালে-মাছির বাচ্চা প্রসব করা কতকটা সেই রকমই আশ্চর্য্য ব্যাপার। এই মাছিরা এক-একবারে পাঁচ-ছয় শত বাচ্চা প্রসব করে, কিন্তু সাধারণ মাছিরা দেড়-শত বা দুই-শতের বেশি ডিম পাড়ে না।

 কেবল কাঁটালে-মাছিই যে এই রকমে বাচ্চা প্রসব করে, তাহা নয়। সাধারণ মাছিদের চেয়ে বড় একটু লম্বা আকারের কয়েক জাতি মাছিকেও বাচ্চা প্রসব করিতে দেখা যায়। কসাইখানার মাংসের উপরে বা পায়খানার ময়লায় যে বড় মাছিরা ভন্ ভন্ করিয়া উড়িয়া বেড়ায়, তাহাদের মধ্যেও অনেকে একবারে গোটা গোটা বাচ্চা প্রসব করে।