পুহুপাবতী অষ্টম পুত্তলিকা

বলিল মহারাজ তুমি সিংহাসনােপবেশনের যে মানস করিয়াছ তাহা পরিত্যাগ কর। রাজা বলিলেন কিজন্য ত্যাগ করিব। পুত্তলী বলিল। এক দিবস রাজা বিক্রমাদিত্য সভায় উপবিষ্ট আছেন এমত সময়ে এক সূত্রধর আসিয়া রাজাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত পূর্ব্বক কহিল মহারাজ আমি আপনাকে দর্শন করিতে আসিয়াছি, এবং আপনার জন্য এক ভেট আনিয়াছি। রাজা বলিলেন কি আনিয়াছ লইয়া আইস। এই কথায় সুত্রধর এক কাষ্ঠময় অশ্ব আনিয়া রাজার সম্মুখে স্থাপন করিল। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন এই কাষ্ঠময় অশ্বের কি গুণ। সুত্রধর কহিল এই অশ্ব কিছু আহার ও পান করেনা, অথচ সমুদ্রীয় অশ্বের ন্যায় যেখানে ইচ্ছা সেখানে লইয়া যাইতে পারে। যখন সূত্রধর রাজাকে এই কথা বলিতেছে তখন অশ্ব আস্ফালন ও নৃত্যারম্ভ করিল। রাজা তাহা দেখিয়া মনে মনে তুষ্ট হইলেন, এবং সুত্রধরকে বলিলেন ইহাকে প্রাঙ্গণে লইয়া গিয়া ইহার গুণ প্রদর্শন করাও। সুত্রধর এই কথায় অশ্বারােহণ করিয়া তাহার পৃষ্ঠে কশাঘাত করিল, তাহাতে কাষ্ঠময় অশ্ব এমত বেগে দৌড়িল যে ধূলি ব্যতিরেকে আর কিছু দৃষ্টি গােচর হইলনা। রাজা অশ্বের এই গুণ দর্শন করিয়া মন্ত্রীকে আজ্ঞা করিলেন সুত্রধরকে এক লক্ষ মুদ্রা প্রদান কর। মন্ত্রী কহিলেন মহারাজ ইহা কাষ্ঠময় ঘােটক, ইহার জন্য এক লক্ষ মুদ্রা দেওয়া অনুচিত। রাজা আজ্ঞা করিলেন তবে দুই লক্ষ মুদ্রা দাও। মন্ত্রী মনে মনে ভাবিলেন ইহার পরে আর কোন কথা কহিলে আরাে অধিক অর্থ দিতে আজ্ঞা করিবেন, তাহা উচিত নহে। অতএব আর কোন উত্তর না করিয়া তৎক্ষণাৎ সুত্রধরকে দুই লক্ষ মুদ্রা দিলেন। সুত্রধর ঐ মুদ্রা পাইয়া স্বস্থানে গমন করিল। কিন্তু গমন কালে রাজাকে এই কথা বলিয়া গেল “মহারাজ অদৃষ্টের লিখন কখন খণ্ডন হয় না, তথাপি যৎকালে আপনি এই অশ্বে আরােহণ করিবেন তখন পদাঘাত বা কশাঘাত করিবেন না,,।

 সুত্রধরের গমনের পর রাজভূতেরা অশ্বকে অশ্বশালায় বন্ধন করিয়া রাখিল। কয়েক দিবস পরে রাজা ঐ অশ্বকে আনয়ন করিতে আজ্ঞা করিলেন। অশ্ব আনীত হইলে রাজা সভাসদগণকে বলিলেন তােমরা এই অশ্বে আরােহণ কর। সভাসদ গণ পরস্পর মুখাবলােকন করিতে লাগিল, এবং অশ্বের অস্থিরতা দেখিয়া কেহই আরােহণ করিতে সাহস পাইল না। রাজা তাহাতে কুপিত হইয়া কহিলেন। তােমরা কেহ অশ্বারােহণ করিতে পারিলে না, অশ্ব। সজ্জিত করিয়া আন, আমি আপনি আরােহণ করিতেছি। ইহা বলিবামাত্র তাহারা তৎক্ষণাৎ অশ্ব সুসজ্জিত করিয়া আনিল। রাজা অশ্বে আরােহণ করিয়া চালাইবার বিস্তর চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কোন প্রকারে আত্মবশে রাখিতে পারিলেন না। তখন, সূত্রধরের কথা বিস্মৃত হইয়া কশাঘাত করিলেন, তাহাতে তুরঙ্গ তড়িতের ন্যায় এমত বেগে দৌড়িল যে একবারে রাজাকে সমুদ্র-পারে এক নিবিড় অরণ্য মধ্যে লইয়া গিয়া এক বৃক্ষের উপর নিক্ষেপ করিয়া চলিয়াগেল। রাজা বৃক্ষ হইতে ভূমিতে পড়িয়া তৎক্ষণাৎ অজ্ঞানাভিভূত হইলেন। কিয়ৎকাল পরে চেতনা হইলে তিনি খেদ করিতে করিতে কহিলেন, হায় কোন নির্জন নিৰ্বান্ধব অরণ্যে আসিয়া পড়িলাম, দেশ নগর রাজধানী বন্ধু বান্ধব পরিবার বর্গ কোথায় থাকিল, দেখি ইহার পরেই বা কি ঘটে।

 এই চিন্তা করিতে করিতে রাজা তথা হইতে গাত্রোথান করিয়া অরণ্যের এমত নিবিড়তর প্রদেশে প্রবিষ্ট হইলেন যে তথা হইতে পুনৰ্বার নির্গত হওয়া দুর্ঘট হইল। কিন্তু অনেক ক্লেশে দশ দিবসে সাত ক্রোশ মাত্র পথ ভ্রমণ করিয়া পুনর্ব্বার আর এক বনে পড়িলেন। ঐ অরণ্যও বিবিধ বন্য বৃক্ষাদিতে এমত আচ্ছন্ন ও তিমিরময় যে সম্মুখের দ্রব্যও নয়নােচর হয় না। ঐ বন শূকর গণ্ডার ব্যাট্রাদি নানা জাতীয় হিংস্র জন্তুতে পরিপূর্ণ। এই সকল পশ্বদির ভয়ানক গর্জনে রাজার শরীরে রােমাঞ্চ জন্মিল, এবং শশাণিত শুষ্ক হইতে লাগিল। তিনি কখন পূর্ব্ব, কখন পশ্চিম, কখন উত্তর, কখন বা দক্ষিণাভিমুখে গমন করিতে লাগিলেন, কিন্তু কোন দিকে পথ পাইলেন না। এইরূপে মহাশঙ্কায় পঞ্চদশ দিবস ভ্রমণ করিতে করিতে এক স্থানে গিয়া দেখিলেন তথায় এক অট্টালিকা ও তদ্বহিভাগে এক উচ্চ মহীরুহ এবং তাহার দুই পাশ্বে দুই কূপ আছে, বৃক্ষোপরি এক বানরী বসিয়া আছে, সে কখন বৃক্ষ হইতে অবরোহণ, কখন বৃক্ষ শাখায় আরােহণ করিতেছে। রাজা এই কৌতুক দর্শন করণানন্তর, নিকটবর্তী আর এক বৃক্ষে আরােহণ করিয়া দেখিলেন পূর্বোক্ত অট্টালিকার মধ্যে এক মণিময় পর্য্যঙ্ক এবং সুখভােগের আর আর তাবৎ দ্রব্য রহিয়াছে। ইহা দেখিয়া মনে মনে ভাবিলেন এইক্ষণে আপনাকে প্রকাশ করা পরামর্শ সিদ্ধ নহে, এইখানে কি হয় তাহা প্রথমতঃ দেখা যাউক, তাহার পরে যাহা কর্ত্তব্য করিব। ইহা স্থির করিয়া রাজা বৃক্ষোপরে থাকিলেন।

 বেলা দুই প্রহরের সময় এক তপস্বী আসিয়া পূর্বোক্ত বৃক্ষের বাম পাশ্বস্থ কূপ হইতে ৰারি উত্তোলন করিল। তখন বানরী বৃক্ষ হইতে অবতীর্ণ হইলে যােগী এক গণ্ডুষ জল তাহার গাত্রে নিক্ষেপ করিল, তাহাতে সেই বানরী পরম সুন্দরী যুবতী হইল। যােগী তাহাকে অট্টালিকাতে লইয়া গিয়া তাহার সঙ্গে বিলাস করিতে লাগিল। তৃতীয় প্রহরের সময়ে তপস্বী দক্ষিণ পাশ্বস্থ কূপ হইতে জল উত্তোলন করিয়া এক গণ্ডুষ জল ঐ নারীর শরীরে প্রেক্ষণ করিল, তাহাতে সেই নারী বানরী হইয়া বৃক্ষোপরে উঠিল, যােগীও যােগ সাধন জন্য গিরি গহ্বরে প্রবিষ্ট হইল।

 এতাবৎ অবলােকন করিয়া রাজা গুপ্ত স্থান হইতে বহির্গত হইয়া বাম পাশ্বস্থ কূপ হইতে বারি উত্তোলন পূর্ব্বক বানরীর অঙ্গে নিক্ষেপ করিলেন। তাহাতে বানরী এমত সৰ্বাঙ্গসুন্দরী যােড়শী হইল যে ইন্দ্রের অপ্সরাও ততুল্য নহে। কিন্তু সে রাজাকে দেখিয়া লজ্জাম্বিতা ও অপােবদনা হইল। রাজা তাহার অলোকিক রূপ দর্শনে বিচলিত চিত্ত হইয়া তাহাকে আপনার নিকটে বসাইলেন। কামিনী সহাস্য আস্তে রাজাকে কহিল আমি তপস্বিনী, আমার প্রতি কুদৃষ্টি করিওনা, কেননা আমি অভিসম্পাত করিলে তুমি ভস্মরাশি হইবে। রাজা কহিলেন আমার নাম বীর বিক্রমাদিত্য, এবং তাল বেতাল আমার আজ্ঞাকারী, অতএব আমি কাহাকে শঙ্কা করি না, তােমার শাপে আমার কিছু হইবেক না। বিক্রমাদিত্যের নাম শ্রবণ মাত্র নারী তাহার পাদ বন্দন পূর্ব্বক কহিল মহারাজ তুমি নরের ঈশ্বর, আমার উপদেশ শুন, শীঘ্র এ স্থান হইতে প্রস্থান কর, নতুবা যােগী আসিয়া দেখিলে তাহার কোপানলে উভয়ে ভস্ম হইব। রাজা কহিলেন তাহাকে কি ভয়, আমি তাহার সম্মুখবর্তী হইয়া সংগ্রামে প্রস্তুত আছি, কিন্তু স্ত্রীহত্যা হইলে পরকালে নরক ভােগ হইবে ইহাই চিন্তার বিষয়। অনন্তর রাজা নারীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন।

 নারী কহিল আমি কামদেবের কন্যা, আমার নাম পুহুপাবতী, আমি যখন দ্বাদশ-বৎসর-বয়স্কা তখন পিতার কোন আজ্ঞা উল্লঙ্ন করিয়া ছিলাম, তজ্জন্য পিতা মাতা উভয়ে কুপিত হইয়া আমাকে এই যােগির হস্তে অৰ্পণ করিয়াছিলেন, তদবধি সন্ন্যাসী আমাকে আনিয়া বানরী করিয়া রাখিয়াছে। আমি এই অবস্থাতে কয়েক বৎসর এই অরণ্যে বাস করিতেছি। অদৃষ্টে যাহা লেখা আছে তাহা কেহই খণ্ডন করিতে পারিবে না ইহা ভাবিয়া আমি নিশ্চিন্ত আছি। রাজা বলিলেন আমি তােমাকে লইয়া যাইতে বাসনা করি। কামিনী উত্তর করিল সে আমার পরম সৌভাগ্য, কিন্তু তুমি সমুদ্র-পারে বাস কর, অতএব কি প্রকারে আমাকে লইয়া যাইবে। রাজা কহিলেন সেজন্য চিন্তা কি, আমি তােমাকে অনায়াসে লইয়া যাইব, তুমি কিছু জানিতে পারিবে না।

 এইরূপ কথোপকথন করিতে করিতে অতি আনন্দে রজনী প্রভাত হইল। প্রত্যুষে রাজা দক্ষিণ কূপ হইতে জল উত্তোলন করিয়া তাহার গাত্রে প্রেক্ষণ করিলেন। তাহাতে সে পুনরায় বানরী হইয়া বৃক্ষারােহণ করিল। রাজা লুক্কায়িত ভাবে থাকিলেন। তৎপরেই তপস্বী উপস্থিত হইয়া পূর্ব প্রকরণানুসারে তাহাকে নরদেহ প্রাপ্ত করাইয়া তাহার সঙ্গে বিলাস ভবনে উল্লাস করিল। পরে যােগীর গমনকালে নারী কহিল মহাশয় আমার এক প্রার্থনা আছে, আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া আমাকে আপনার অনুগ্রহের চিত্ন স্বরূপ কিছু দেউন। তপস্বী এই বাক্যে সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে এক পদ্ম পুষ্প প্রদান পূর্ব্বক কহিল এই পুষ্প হইতে প্রতিদিন এক এক মাণিক্য পাইবে, এবং এ পুষ্প কখন শুষ্ক হইবে ক না। অতএব ইহা যত্নপূর্ব্বক রাখিও। পুহুপাবতী অত্যন্ত আনন্দিত হইয়া ঐ পদ্ম আপন বক্ষঃস্থলে রাখিল। তদনন্তর সন্ন্যাসী তাহাকে বানরী অবস্থায় রাখিয়া প্রস্থান করিলে, রাজা তাহাকে কূপােদক দ্বারা পুনর্ব্বার মনুষ্যাকার ধারণ করাইলেন। পরে সে রাজাকে ঐ পদ্ম পুষ্প দেখাইয়া কহিল ইহা অতি অদ্ভুত সামগ্রী, ইহা হইতে প্রতিদিন এক এক মাণিক্য উৎপত্তি হয়। রাজা কহিলেন ইহা আশ্চর্য্য নহে, সৰ্বশক্তিমান, পরমেশ্বরের ইচ্ছায় কি না হইতে পারে। এই প্রকার কথােপকথন ও অন্যালাপে সে রজনীও সুখে যাপন হইল। ভাতে ঐ পুষ্প হইতে এক মাণিক্য নির্গত হইল। তাহা উভয়ে দেখিলেন, পরে রাজা কহিলেন এখানে বাস করা আর উচিত নহে, তুমি আমার সঙ্গে আইস, আমি তােমাকে আপন দেশে লইয়া যাইতেছি। পুহুপাবতী কহিল মহারাজ আমি শুনিয়াছি তুমি অত্যন্ত দাতা, তাহাতে আমার এই আশঙ্কা হইতেছে পাছে তুমি আমাকে লইয়া গিয়া অন্য কোন ব্যক্তিকে দান কর। অতএব তুমি অগ্রে অঙ্গীকার কর, আমাকে কাহাকে দান করিবে না, আমি দাসী। হইয়া যাবজ্জীবন তােমার চরণ সেবা করিতে পাইব। রাজা বলিলেন তাহা কি কখন হইতে পারে, আপন নারী কে কাহাকে দিয়া থাকে, তাহা লােক ও ধর্ম্ম বিরুদ্ধ। তাহাকে এই প্রকার প্রবােধ দিয়া রাজা তাল বেতালকে স্মরণ করিলেন। তাল বেতাল উপস্থিত হইলে, আজ্ঞা করিলেন আমাকে স্বদেশে লইয়া চল। ইহা বলিয়া রাজা কামিনীকে লইয়া সিংহাসনে উপবিষ্ট হইলেন। তাল বেতাল সিংহাসন সমেত তাহাদিগকে স্কন্ধে লইয়া বায়ুবেগে রাজধানীতে প্রস্থান করিল। অনন্তর তপস্বী আসিয়া প্রাণধিক প্রিয়াকে না দেখিয়া খেদ সাগরে মগ্ন হইল।

 রাজা আপন রাজধানীতে উপনীত হইয়া সিংহাসন হইতে অবরােহণ করিয়া ঐ নারীর হস্ত ধারণ পূর্ব্বক অন্তঃপুরে গমন করিলেন। কিন্তু গমন কালে দেখিলেন পথিমধ্যে এক পরম সুন্দর বালক ক্রীড়া করিতেছে। ঐ বালক ঐ কন্যার কোমল হস্তে কমল দর্শন করিয়া রােদন করিতে করিতে বলিল আমি ঐ পুষ্প লইব। রাজা বালকের ক্রন্দনে তাহার হস্ত হইতে পদ্ম লইয়া রােরুদ্যমান বালককে দিলেন। বালক পুষ্প পাইয়া সহাস্য বদনে গৃহে গমন করিল। রাজাও নারী লইয়া অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন।

 প্রাতঃকালে ঐ পদ্ম হইতে এক মাণিক্য নির্গত হইল। বালকের পিতা এক সামান্য বণিক ছিল, ঐ মাণিক্য দেখিয়া তাহা তুলিয়া রাখিল, এবং পদ্মপুষ্প সংগােপন করিয়া অতিশয় যত্ন পূর্ব্বক রাখিল। হইতে প্রতিদিন এক এক মাণিক্য নির্গত হইতে লাগিল। কতক গুলিন মাণিক্য একত্র হইলে, বণিক এক দিবস ঐ সকল মাণিক্য লইয়া রাজার নিকট বিক্রয় করিতে পথি মধ্যে নগরপাল তাহাকে ধৃত করিয়া, তুমি অতিক্ষুদ্র বণিক এ সকল মাণিক্য কোথায় পাইলে ইহা বলিয়া অনেক প্রহার করিল। তাহার পরমাণিক্য গুলি লইয়া রাজার সম্মুখে দিল। রাজাপদ্ম গেল। তাবৎ বৃত্তান্ত অবগত হইয়া বণিককে আনিতে আজ্ঞা করিলেন। নগরপাল বণিককে রাজ-সাক্ষাৎকারে আনয়ন করিলে, রাজা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। তুমি সত্য করিয়া বল এই সকল রত্ন কোথায় পাইয়াছ, তাহা হইলে তােমাকে আরাে ধন দিব, কিন্তু মিথ্যা কহিলে নিৰ্বাসন করিয়া দিব। বণিক কহিল হে দীনপালক এক দিবস আমার পুত্র দ্বারে খেলা করিতেছিল, তাহাকে কোন ব্যক্তি এক পদ্ম পুষ্প দিয়াছিলেন। বালক আমার নিকট ঐ পুষ্প আনয়ন করিলে আমি তাহা আপনার নিকট রাখিলাম। রাত্রি প্রভাত হইলে ঐ পদ্ম হইতে এক মাণিক্য নির্গত হইল। এই রূপ প্রতিদিন এক এক মাণিক্য নির্গত হইয়া থাকে। অদ্যাপি ঐ পদ্ম পুষ্প আমার গৃহে আছে। রাজা বলিলেন তুমি যথার্থ কহিয়াছ, অতএব এ সকল মাণিক্য তুমি লইয়া যাও। কিন্তু নগরপাল তােমার প্রতি অতি কুব্যবহার করিয়াছে, তজ্জন্য দণ্ড স্বরূপ তােমাকে লক্ষ মুদ্রা প্রদান করিবেক। ইহা কহিয়া নগরপালের নিকট হইতে এক লক্ষ মুদ্রা লইয়া বণিককে দিলেন।

 পুত্তলিকা এই আখ্যায়িকা সমাপন করিয়া বলিল মহারাজ, বিক্রমাদিত্যের এইরূপ ধর্ম্ম ও এইরূপ কর্ম্ম ছিল, তুমি অতি মূখ যে এমত ধর্ম্মশীল ও সৰ্বগুণ বিশিষ্ট রাজাকে হীন জ্ঞান করিয়া আপনাকে প্রধান রূপে গণ্য করিয়া থাক। ভােজরাজ পুত্তলীর এই সকল বাক্য শুনিয়া সে দিবসও মনােহুঃখে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিলেন, তাহাতে সিংহাসনােপবেশনের কাল অতীত হইল। পরদিবস সিংহাসন সমীপে উপস্থিত হইয়া পুত্তলিকা গণকে জিজ্ঞাসা করিলেন কেমন তােমর অদা কি বল, তােমাদের কথা শুনিয়া আমি বড়ই আলাদিত হইতেছি। তখন