মধ্যমাবতী নবম পুত্তলিকা

কহিল হে ভােজরাজ আমি রাজা বিক্রমাদিত্যের দাতৃত্ব গুণের কিঞ্চৎ প্রসঙ্গ করিতেছি শ্রবণ কর। এক দিন রাজা দেশীয় তাবৎ লােক এবং নানা দেশীয় রাজাকে নিমন্ত্রণ করিয়া মহাসমারােহে যজ্ঞারম্ভ করিয়াছিলেন। ভাট ও ভিক্ষকগণ সেই সংবাদ শুনিয়া দেশ দেশান্তর হইতে আসিয়াছিল। দূরদেশীয় নৃপতিগণ অনেক অনেক লােক সমভিব্যাহারে আগত হইয়া ছিলেন। সভা সম্পত্তির কথা কি কহিব, দেবতাগণও ঐ সভায় অধিষ্ঠিত হইয়া ছিলেন।

 রাজা যজ্ঞ করিতেছেন এমত সময়ে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ উপস্থিত হইলেন। রাজা মন্ত্রপাঠ করিতেছিলেন এজন্য ব্রাহ্মণকে দূর হইতেই দেখিয়া মনে মনে প্রণাম করিলেন। ব্রাহ্মণ আগম-বিদ্যাতে পারদর্শী ছিলেন, রাজার মানসিক প্রণাম জানিতে পারিয়া হস্ত প্রসারণ পূর্ব্বক আশীৰ্বাদ করিলেন। পরে মন্ত্রপাঠের বিরতি হইলে রাজা, আগম-সিদ্ধ ব্রাহ্মণ-বৃদ্ধকে কহিলেন মহাশয় বড় কুকর্ম্ম করিয়াছেন, প্রণাম না করিতে করিতে আশীৰ্বাদ করিলেন, বুঝি আপনি জানেন না, প্রণামের অগ্রে আশীর্ব্বাদ করিলে সে আশীৰ্বাদ অতিসম্পাতের তুল্য হয়। ব্রাহ্মণ কহিলেন মহারাজ আপনি মনে মনে প্রণাম করিয়া ছিলেন এইজন্য আমি আশীর্ব্বাদ করিয়াছি। রাজা এই বাক্য শুনিয়া তখনি ব্রাহ্মণকে এক লক্ষ মুদ্রা দিতে আজ্ঞা করিলেন। ব্রাহ্মণ বলিলেন মহা রাজ লক্ষ মুদ্রাতে আমার নিৰ্বাহ হইবেক না, আমার যাহাতে কর্ম্ম সম্পন্ন হয় তাহা বিবেচনা করিয়া দান করুন। এই কথায় ভূপতি তৎক্ষণাৎ তাহাকে পঞ্চ লক্ষ মুদ্রা দিয়া বিদায় করিলেন। পরে, আর আর যে সকল ব্রাহ্মণ আসিয়া ছিলেন তাহাদিগকেও অনেক অর্থ দান করিলেন।

 মধ্যমাবতী কহিল হে ভােজরাজ এই জন্য আমি তােমাকে সিংহাসনে উপবেশন করিতে নিষেধ করি। শৃগাল কখন সিংহের এবং কপােত কখন রাজহংসের প্রতিযােগী হইতে পারেনা, বানরের কণ্ঠে মুক্তার হার কখন শােভা পায়না, এবং গতের উত্তম সজ্জা কখন শােভাকর হয়না। অতএব আমার পরামর্শ শুন, সিংহাসনারােহণ করিও না, তাহা হইলে যমের সহিত সাক্ষাৎ করিতে হইবে। এই সকল বাক্যে রাজা মৌন হইয়া থাকিলেন। তাহাতে দিবসেরও অবসান হইল। রাত্রে রাজা সভাসদ গণকে আদেশ করিলেন কল্য অবশ্যই সিংহাসনােপবেশন করিব, কিন্তু পরদিন আরােহণ মানসে পদ প্রসারণ করিলে,