বাঙ্গালার ইতিহাস (রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রথম ভাগ/তৃতীয় পরিচ্ছেদ
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
মৌর্য্যাধিকার ও শকাধিকার।
আর্য্যাধিকার কালে দ্রবিড়জাতীয় ভারতের আদিম অধিবাসিগণের রীতি নীতি—মগধে শূদ্ররাজগণের অভ্যুত্থান—মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সীমা—প্রচলিত মুদ্রা–মৌর্য্য সাম্রাজ্যের অধঃপতন—ইউচি ও উ-সুন জাতির বিবাদ—শক জাতি কর্ত্তৃক উত্তরাপথ অধিকার ও নূতন শকরাজ্য স্থাপন—সুঙ্গবংশীয় পুষ্যমিত্র কর্ত্তৃক মগধরাজ্য অধিকার—পঞ্চনদ প্রভৃতি দেশের শকগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা—সুঙ্গবংশীয় শেষ রাজা দেবভূমির হত্যা—দেবভূমির মন্ত্রী কাণ্ববংশীয় বাসুদেব কর্ত্তৃক মগধের সিংহাসন অধিকার—তৎকালে মগধরাজ্যের বিস্তৃতি—ভিন্ন ভিন্ন শকজাতির অধিকার—শকক্ষত্রপগণ—ইউচি জাতি কর্ত্তৃক উত্তরাপথ ও ক্ষুদ্র ক্ষুত্র শকরাজ্য অধিকার—কনিষ্কের সময়ে শক রাজ্যের বিস্তৃতি—বুদ্ধগয়ার মন্দির—বোধিসত্ত্বমূর্ত্তি—পুষ্কর্ণরাজ চন্দ্রবর্ম্মার দিগ্বিজয়।
মগধ ও বঙ্গ আর্য্যজাতি কর্ত্তৃক অধিকৃত হইলে, দ্রবিড়জাতীয় আদিম অধিবাসিগণ দেশত্যাগ করেন নাই। ভারতবর্ষের অবশিষ্টাংশের ন্যায় এই দুইটি প্রদেশও ক্রমশঃ বিজেতৃগণের ধর্ম্ম, রীতি-নীতি ও ভাষা অবলম্বন করিয়াছিল। দাক্ষিণাত্যবাসী দ্রবিড়গণ সম্পূর্ণরূপে আর্য্যভাষা গ্রহণ করেন নাই; কিন্তু তাঁহারা পুরাতন ধর্ম্মের পরিবর্ত্তে নূতন ধর্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন এবং আর্য্যগণের অনেক আচারব্যবহারের অনুকরণ করিয়াছিলেন। বঙ্গ ও মগধ, নবাগত বিজেতৃগণের শাসন অধিকদিন সহ্য করে নাই। খৃষ্টপূর্ব্ব প্রথম সহস্রাব্দে উত্তরাপথের পূর্ব্বসীমান্তস্থিত প্রদেশগুলি আর্য্যগণের করায়ত্ত হইয়াছিল; এই ঘটনার তিন বা চারি শতাব্দী পরে, সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত, মগধের শূদ্রজাতীয় রাজগণের অধীনতা স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিল। ভাষাতত্ত্ববিদ্ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ্গণ একবাক্যে স্বীকার করিয়া থাকেন যে, প্রাচীন ভারতের শূদ্রগণ অনার্য্যবংশসম্ভূত। উত্তরাপথে শূদ্রবংশজাত রাজবংশের প্রাধান্য স্থাপনের প্রকৃত অর্থ,—আর্য্যজাতীয় বিজেতৃগণের নির্বীর্য্যতা ও ক্ষত্রিয়বংশজাত আর্য্যরাজগণের অধঃপতন। আর্য্যরাজগণের অধঃপতনের পূর্ব্বে উত্তরাপথের পূর্ব্বাঞ্চলে আর্য্যধর্ম্মের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছিল, জৈনধর্ম্ম ও বৌদ্ধধর্ম্ম এই আন্দোলনের ফল। জৈনধর্ম্মগ্রন্থমালা পাঠ করিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, আর্য্যাবর্ত্তের পূর্ব্বাংশই এই নূতন ধর্ম্মমতের জন্মস্থান। জৈনধর্ম্মের চতুর্ব্বিংশতি তীর্থঙ্করের মধ্যে চতুর্দ্দশজন, মগধে ও বঙ্গে নির্ব্বাণ লাভ করিয়াছিলেন[১]। মগধদেশে উরুবিল্ব গ্রামের নিকটে শাক্যরাজপুত্র গৌতম সিদ্ধার্থ বৌদ্ধধর্ম্মের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। জৈন ও বৌদ্ধধর্ম্মের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিলে স্পষ্ট বোধ হয় যে, দীর্ঘকালব্যাপী বিবাদের পরে সনাতন আর্য্যধর্ম্মের বিরুদ্ধবাদী নূতন ধর্ম্মদ্বয় ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠালাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিল। চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর বর্দ্ধমান মহাবীরদেবের আবির্ভাবের পূর্ব্বে, মগধ ও বঙ্গ বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত ছিল। গৌতমবুদ্ধ ও মহাবীর বর্দ্ধমানে নির্ব্বাণপ্রাপ্তির অতি অল্পকাল পরে শিশুনাগবংশীয় মহানন্দের শূদ্রা পত্নীর গর্ভজাত পুত্র, ভারতের সমস্ত ক্ষত্রিয়কুল নির্ম্মূল করিয়া একচ্ছত্র সম্রাট্ হইয়াছিলেন। এই সময় হইতে গুপ্তরাজবংশের অধঃপতন পর্য্যন্ত, মগধরাজ উত্তরাপথে একচ্ছত্র সম্রাট্রূপে পূজিত হইতেন, এবং পাটলিপুত্রই সাম্রাজ্যের একমাত্র রাজধানী ছিল। মগধে শূদ্রবংশের অভ্যুত্থান ও আর্য্যাবর্ত্ত পুনর্ব্বার নিঃক্ষত্রিয়করণের প্রকৃত অর্থ বোধ হয় যে, এই সময়ে বিজিত অনার্য্যগণ অবসর পাইয়া পুনরায় মস্তকোত্তোলন করিয়াছিলেন এবং মহাপদ্মনন্দের সাহায্যে ক্ষত্রিয়রাজকুল নির্ম্মূল করিয়াছিলেন। মহাপদ্মনন্দের পূর্ব্বে ভারতবর্ষে কোন রাজা সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত অধিকার করিয়া “একরাট্” পদবী লাভ করিতে পারেন নাই[২]। এই সময়ে (অনুমান ৩২৭ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দে) মাসিডন্রাজ দিগ্বিজয়ী আলেকজন্দর বা সেকেন্দর, পঞ্চনদ অধিকার করিয়া বিপাশা-তীরে উপস্থিত হইয়াছিলেন। বিপাশাতীরে, শিবিরে, তিনি আর্য্যাবর্ত্তের পূর্ব্বপ্রান্তে অবস্থিত “প্রাসিই” এবং “গঙ্গরিডই” নামক দুইটি পরাক্রান্ত রাজ্যের অস্তিত্বের কথা অবগত হইয়াছিলেন[৩]। নন্দবংশ সিংহাসনচ্যুত হইলে, মৌর্য্যবংশের প্রথম নরপতি চন্দ্রগুপ্ত যখন, যবন বা গ্রীকগণ কর্ত্তৃক বিজিত পঞ্চনদ প্রদেশ পুনরধিকার করিয়া মাগধসাম্রাজ্যের আয়তন বর্দ্ধিত করিয়াছিলেন, তখন বোধ হয় দক্ষিণবঙ্গে ও দক্ষিণ কোশলে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল। চন্দ্রগুপ্তের সভায় অবস্থানকালে যবন রাজদূত মেগাস্থিনিস প্রাচ্যজগতের যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন, তাহা এখন আর পাওয়া যায় না; কিন্তু পরবর্ত্তী গ্রীক লেখকগণ, স্ব স্ব গ্রন্থে মেগাস্থিনিস-বিরচিত “ইণ্ডিকা” নামক গ্রন্থের যে সকল অংশ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, তাহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, চন্দ্রগুপ্তের রাজ্যকালে গঙ্গরিডই রাজ্য, অন্ধ্র রাজ্যের ন্যায় স্বাধীন ছিল। গঙ্গরিডই রাজ্যের সহিত কলিঙ্গী রাজ্য যুক্ত ছিল। গঙ্গানদী গঙ্গরিডই রাজ্যের পূর্ব্বসীমা ছিল[৪]। ইহা হইতে অনুমান হয় যে, মৌর্য্যসাম্রাজ্যের প্রারম্ভে রাঢ় ও কলিঙ্গ মগধরাজের অধীনে ছিল না। মৌর্য্যবংশীয় মাগধরাজগণ প্রবল পরাক্রান্ত হইয়া উঠিলে, রাঢ় ও বঙ্গ তাঁহাদিগের সাম্রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল বলিয়া অনুমান হয়। চন্দ্রগুপ্তের পুত্র বিন্দুসারের রাজ্যকালে দাক্ষিণাত্য, এবং বিন্দুসারের পুত্র অশোকের শাসনকালে কলিঙ্গদেশ মৌর্য্যসাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছিল[৫]। অশোকের অনুশাসনসমূহে রাঢ়, বঙ্গ, গৌড় বা বরেন্দ্রের কোন উল্লেখ নাই; কিন্তু ইহা নিশ্চয় যে, তাঁহার রাজ্যকালে মাগধসাম্রাজ্যের পূর্ব্বসীমান্তে কোন স্বাধীন রাজ্য ছিল না। তাঁহার দ্বিতীয়সংখ্যক অনুশাসনে দেখিতে পাওয়া যায় যে, তাঁহার রাজ্যকালে মৌর্য্যসাম্রাজ্যের দক্ষিণসীমান্তে চোল, পাণ্ড্য, সত্য, কেরল ও তাম্রপর্ণী এবং পশ্চিমসীমান্তে গ্রীকরাজ দ্বিতীয় বা তৃতীয় আন্তিওকের অধিকার ব্যতীত অপর কোন প্রত্যন্তে স্বাধীনরাজ্যের অস্তিত্ব ছিল না[৬]। উত্তরে তুষারমণ্ডিত হিমালয়ের উপত্যকাসমূহে এবং পূর্ব্বে লৌহিত্যের অপরপারে গিরিসঙ্কুল আটবিক প্রদেশের অধিবাসিগণকে, রাজাধিরাজ মহারাজ স্বতন্ত্র স্বাধীনরাজ্যবাসী বলিয়া স্বীকার করিতে বোধ হয় কুণ্ঠিত হইতেন। ধর্ম্মপ্রচারের উত্তেজনায় যখন বিস্তৃত মৌর্য্যসাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয়বন্ধন শিথিল হইয়া পড়িল, তখন হইতে সুদূর প্রত্যন্তস্থিত প্রদেশগুলি স্বাধীন হইবার সুযোগের প্রতীক্ষা করিতে ছিল। দেবতাদিগের প্রিয় প্রিয়দর্শী অশোকের দেহাবসানের অব্যবহিত পরে পশ্চিমে গান্ধার ও কপিশা, এবং দক্ষিণে অন্ধ্র ও কলিঙ্গদেশ স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করিয়াছিল। মৌর্য্যরাজবংশের অধিকারকালে ভারতবর্ষে রাজনামাঙ্কিত সুবর্ণ বা রজতমুদ্রার প্রচলন ছিল না; তৎকালে পুরাণ নামক চতুষ্কোণ রজতখণ্ডই মুদ্রারূপে ব্যবহৃত হইত। শ্রেষ্ঠী ও স্বার্থবাহগণ এই জাতীয় মুদ্রা প্রস্তুত করিত। মগধ ও বঙ্গের নানাস্থানে শত শত “পুরাণ” নামক প্রাচীন রজতমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে। ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে, জিলা ২৪ পরগণার অন্তর্গত জাক্রা গ্রামে এই জাতীয় ছয়টি মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল[৭]। বাঙ্গালা ১২৭৫ সালে দীনবন্ধু মিত্র নামক কোন ব্যক্তি মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত তমলুকনগরে একটি “পুরাণ” আবিষ্কার করিয়াছিলেন[৮]। মগধ ও তীরভুক্তির নানাস্থানে “পুরাণ” আবিষ্কৃত হইয়াছে। গত বৎসর পূর্ণিয়াজেলার একস্থানে প্রায় তিন সহস্র “পুরাণ” আবিষ্কৃত হইয়াছিল[৯]।
ভারতবর্ষে যে সময়ে “পুরাণ” ব্যবহৃত হইত, সেই সময়ে দুইজাতীয় তাম্রমুদ্রার ব্যবহার ছিল। প্রথম, বৃহৎ তাম্রখণ্ড হইতে কর্ত্তিত ক্ষুদ্র চতুষ্কোণ তাম্রমুদ্রা এবং দ্বিতীয়, “ছাঁচে ঢালা” (cast) চতুষ্কোণ বা গোলাকার মুদ্রা। ভূতত্ত্ববিভাগের ভূতপূর্ব্ব চিত্রকর মৃত নৃপেন্দ্রনাথ বসু ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত বেড়াচাপা গ্রামের নিকটে শেষোক্ত প্রকারের ছয়টি তাম্রমুদ্রা আবিষ্কার করিয়াছিলেন। তৎকর্ত্তৃক সংগৃহীত মুদ্রাগুলি এখন বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের চিত্রশালায় রক্ষিত আছে[১০]। দীনবন্ধু মিত্র তমলুকেও এই জাতীয় একটি মুদ্রা পাইয়াছিলেন[১১]। গত পাঁচ বৎসরে বাঙ্গালাদেশের নানাস্থানে এই জাতীয় মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে।
মরুদেশে মেষচারণের ভূমির অধিকার লইয়া, যাযাবর জাতিদ্বয়ের দ্বন্দ্বযুদ্ধের ফলে ইউচি জাতি যখন পরাজিত হইয়া নূতন আবাসের সন্ধানে পশ্চিমাভিমুখে যাত্রা করিল, তখন প্রাচীন প্রাচ্যজগতের ইতিহাসের একটি নূতন অধ্যায় আরম্ভ হইল। ইউচিগণ অগ্রসর হইলে তাহাদিগের সহিত উ-সুন নামক আর একটি শক জাতির বিবাদ হয়, ফলে উ-সুনগণ পরাজিত হইয়া তাহাদিগের মেষচারণ ভূমি পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিতে বাধ্য হয়। ইউচি-গণ কিয়ৎকাল উ-সুনদিগের আবাস-ভূমিতে বাস করিতে থাকে। উ-সুনগণ প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া ইউচিদিগকে পরাজিত করে এবং উহাদিগকে পলায়ন করিতে বাধ্য করে। ইউচিগণ পশ্চিমাভিমুখে অগ্রসর হইয়া ক্রমশঃ বক্ষু বা চক্ষু (Oxus) নদীতীরে উপস্থিত হইয়াছিল। বক্ষু নদীর উত্তর তীরে, শকদ্বীপে (Soghdiana) যে সকল শকজাতি বাস করিতেছিল, তাহারা নবাগত শকজাতি কর্ত্তৃক তাড়িত হইরা বাহ্লীক ও কপিশার যবন বা গ্রীকরাজ্য আক্রমণ করিয়াছিল[১২]। যবনগণ পরাজিত হইয়া, উত্তরাপথ আক্রমণ করিয়া, বহু নূতন রাজত্ব স্থাপন করিয়াছিলেন। তখন মৌর্য্য সাম্রাজ্যের শেষ দশা; শেষ মৌর্য্য নরপতি বৃহদ্রথ, তাঁহার শুঙ্গবংশীয় ব্রাহ্মণ জাতীয় সেনাপতি পুষ্যমিত্র কর্ত্তৃক নিহত হইয়াছিলেন।
অনুমান হয় যে, ১৮৫ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দে মৌর্য্যবংশের রাজ্য লোপ হইয়াছিল। পুষ্যমিত্র সিংহাসনে আরোহণ করিয়া কপিশা ও পঞ্চনদবাসী যবনদিগের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন। পুষ্যমিত্র, অগ্নিমিত্র ও শুঙ্গবংশীয় অন্যান্য রাজগণের সময়ে পাটলিপুত্রই সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। শুঙ্গবংশীয় শেষ রাজা দেবভূমি বা দেবভূতি অত্যন্ত দুশ্চরিত্র ছিলেন এবং সেই কারণে তাঁহাকে প্রচ্ছন্নভাবে হত্যা করা হইয়াছিল। দেবভূমির ব্রাহ্মণ মন্ত্রী, কাণ্ববংশীয় বাসুদেব, তাঁহার মৃত্যুর পরে পাটলিপুত্রের সিংহাসন অধিকার করিয়াছিলেন। কাণ্ববংশীয় রাজগণের সময়ে সাম্রাজ্য মগধের সীমা মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বলিয়াই বোধ হয়।
শুঙ্গ বা কাণ্ববংশীয় রাজগণের রাজত্বকালে ইন্দ্রাগ্নিমিত্র নামক জনৈক সামন্তরাজ বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ও বজ্রাসনের উপরে মহারাজ অশোক প্রিয়দর্শী যে মন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহার চতুষ্পার্শ্বে একটি পাষাণ নির্ম্মিত বেষ্টনী নির্ম্মাণ করাইয়া দিয়াছিলেন। বুদ্ধগয়ার বর্ত্তমান মন্দিরের চতুষ্পার্শ্বে যে পাষাণবেষ্টনীর ধ্বংসাবশেষ অদ্যাবধি বিদ্যমান আছে, তাহা খৃষ্টপূর্ব্ব দ্বিতীয় বা প্রথম শতাব্দীতে ব্রহ্মমিত্র ও তাঁহার পত্নী নাগদেবার আদেশে নির্ম্মিত হইয়াছিল[১৩]। শুঙ্গ বা কাণ্ববংশীয় রাজগণের কোন প্রাচীন খোদিতলিপি অদ্যাবধি মগধে, রাঢ়ে, গৌড়ে বা বঙ্গে আবিষ্কৃত হয় নাই। শুঙ্গবংশীয়গণের একখানি মাত্র খোদিতলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে[১৪], কিন্তু কাণ্ববংশীয়গণের কোন খোদিতলিপি ভারতের কোন স্থানে আবিষ্কৃত হয় নাই সুতরাং গৌড়, রাঢ় বা বঙ্গ তাঁহাদিগের রাজ্যভুক্ত ছিল কি না তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য।
শকগণ ধীরে ধীরে মধ্যএসিয়া হইতে অগ্রসর হইয়া, কপিশা, গান্ধার ও পঞ্চনদের (বর্ত্তমান আফগানিস্তান ও পাঞ্জাবের) যবন রাজগণের অধিকার লোপ করিয়া নূতন রাজ্যস্থাপন করিয়াছিলেন। ক্রমে উত্তরাপথের পশ্চিমাংশ শকরাজগণের অধিকারভুক্ত হইল।
মোগ বা মোঅ, অয়, স্পলহোর, স্পলগদম প্রভৃতি শকজাতীয় রাজগণ গান্ধার, কপিশা এবং পঞ্চনদে রাজত্ব করিতেন। ক্রমে শকগণের প্রথম সাম্রাজ্য বিনষ্ট হইলে ক্ষত্রপ উপাধিধারী প্রাদেশিক শাসনকর্ত্তৃগণ স্বাধীনতা লাভ করেন। লিঅক কুশুলক, পতিক, রঞ্জুবুল, শোডাস, মণিগুল, জিহোনিঅ, বেস্পসি বা বেএসি প্রভৃতি শকক্ষত্রপগণ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন নরপতি ছিলেন, কিন্তু ভারতের মোগল সাম্রাজ্যের শেষসময়ের স্বাধীন সুবাদারগণের ন্যায় তাঁহারাও কখনও রাজোপাধি গ্রহণ করেন নাই। ভারতের প্রথম শক-সাম্রাজ্যের শেষ দশায় ইউচিগণ বাহ্লীক পরিত্যাগ করিয়া ক্রমশঃ উত্তরাপথের দিকে অগ্রসর হইতে আরম্ভ করেন। অবশেষে ইউচি জাতির পাঁচটি প্রধান বিভাগ, কুষাণবংশ কর্ত্তৃক একত্র হয়। এই সময় হইতে ইউচিগণ অত্যন্ত প্রবল হইয়া উঠেন এবং একে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শকরাজ্যগুলি অধিকার করেন। কুষাণবংশীয় রাজা কুজুলকদফিসের সময়ে, কপিশা গান্ধার ও পঞ্চনদে শকক্ষত্রপগণের অধিকার শেষ হইয়াছিল বলিয়া অনুমান হয়। কুজুলকদফিস খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর প্রারম্ভে জীবিত ছিলেন। তাঁহার পরে বিমকদফিস বারাণসী পর্য্যন্ত অধিকার বিস্তার করিয়াছিলেন। শকাব্দের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম কাণিষ্কের সময়ে কুষাণসাম্রাজ্য, পূর্ব্বে প্রাচীন চীনসাম্রাজ্যের পশ্চিম সীমা হইতে পশ্চিমে পারদ সাম্রাজ্যের পূর্ব্বসীমা পর্য্যন্ত, এবং উত্তরে সাইবিরিয়া হইতে দক্ষিণে নর্ম্মদাতীর পর্য্যন্ত বিস্তৃত ছিল। কাণিষ্কের সময়ে মগধ ও বঙ্গ স্বতন্ত্র ছিল, কি কুষাণসাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য, কিন্তু হুবিষ্ক ও বাসুদেবের সময়ে সম্ভবতঃ মগধ কুষাণবংশীয় সম্রাটগণের অধীনতা স্বীকার করিয়াছিল। বুদ্ধগয়ার মন্দির সংস্কারকালে, মন্দিরের পশ্চাৎস্থিত বোধিদ্রুমমূলের বজ্রাসনতলে কনিংহাম হুবিষ্কের একটি সুবর্ণ মুদ্রার ছাঁচ পাইয়াছিলেন[১৫]। বজ্রাসন স্থাপনকালে (বোধ হয় হুবিষ্কের রাজত্বকালে), উহার নিম্নে হুবিষ্কের একটি সুবর্ণমুদ্রা রাখা হইয়াছিল কিন্তু তাহা পরবর্ত্তিকালে অপহৃত হওয়ায়, মুদ্রার প্রতিলিপিটিমাত্র বজ্রাসননিম্নে ছিল। এতদ্ব্যতীত বুদ্ধগয়ায় মহাবোধিবৃক্ষের তলে, এক্ষণে বজ্রাসনের যে আচ্ছদন আছে, তাহার স্থানে স্থানে কুষাণ অক্ষরে খোদিতদিপি আছে[১৬]। এই সকল প্রমাণ দেখিয়া বোধ হয় যে, মহাবোধিবিহার কুষাণ রাজবংশের অধিকার কালে পুনর্নির্ম্মিত হইয়াছিল। প্রবাদ আছে যে, প্রথম কাণিষ্ক পাটলিপুত্র আক্রমণ করিয়া, বুদ্ধঘোষ নামক জনৈক মহাস্থবিরকে মগধ হইতে গান্ধারে লইয়া গিয়াছিলেন[১৭]। বুদ্ধগয়ার মন্দির যে কুষাণ রাজত্বকালে নির্ম্মিত হইয়াছিল, সে সম্বন্ধে একটি নূতন প্রমাণ আবিষ্কৃত হইয়াছে। ১৩২০ বঙ্গাব্দে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যক্ষ ডাঃ স্পুনার (Dr. D. B. Spooner) পাটলিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ খননকালে একটি মৃন্ময় মুদ্রা (Terracotta plaque) আবিষ্কার করিয়াছিলেন। এই মুদ্রায় মহাবোধিবিহারের প্রতিকৃতি আছে এবং কতকগুলি খরোষ্ঠী অক্ষর আছে[১৮]। খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে ভারতে থরোষ্ঠী লিপির ব্যবহার লোপ হইয়াছিল, অতএব অনুমান হয় যে, কুষাণরাজবংশের অধিকারকালে মহাবোধি মন্দির নির্ম্মিত হইয়াছিল। বুদ্ধগয়ায় বজ্রাসনের আচ্ছাদনের প্রস্তরখণ্ড ব্যতীত মথুরায় নির্ম্মিত রক্তবর্ণ প্রস্তরের একটি বোধিসত্ত্বমূর্ত্তির এক অংশ আবিষ্কৃত হইয়াছিল, ইহা এক্ষণে কলিকাতার সরকারী চিত্রশালায় আছে[১৯]। রাজগৃহের ধ্বংসাবশেষ মধ্যে খননকালে মৃত ডাক্তার ব্লক একটি রক্তবর্ণ প্রস্তরনির্ম্মিত খোদিতলিপিযুক্ত মূর্ত্তির পাদপীঠ আবিষ্কার করিয়াছিলেন[২০]। এই খোদিতলিপির অক্ষর কুষাণ রাজ্যকালের খোদিতলিপিসমূহের অক্ষরের অনুরূপ। ডাক্তার স্পুনার পাটলিপুত্র খননকালে একাধিক মথুরার রক্তপ্রস্তরনির্ম্মিত মূর্ত্তির খণ্ড আবিষ্কার করিয়াছেন[২১]। মগধ ও বঙ্গের নানা স্থানে কুষাণ বংশীয় রাজগণের মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছে। ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার তমলুকে প্রথম কাণিষ্কের একটি তাম্রমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল[২২]। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দে বগুড়া জেলায় প্রথম বাসুদেবের একটি সুবর্ণ মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল[২৩]। ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে মুরশিদাবাদ জেলায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় বাসুদেবের একটি কদাকার সুবর্ণ মুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল; ইহা এসিয়াটিক সোসাইটিতে প্রেরিত হইয়াছিল[২৪] কিন্তু এখন আর ইহা দেখিতে পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় বা তৃতীয় বাসুদেবের বহু সুবর্ণমুদ্রা কলিকাতার সরকারী চিত্রশালায় রক্ষিত আছে[২৫] কিন্তু ইহার মধ্যে কোন্টি মুরশিদাবাদ জেলায় আবিষ্কৃত, তাহা নির্ণয় করা অসম্ভব।
বুদ্ধগয়ার মন্দিরের প্রাঙ্গণ ও প্রথমতল বহুকালাবধি বালুকায় আচ্ছাদিত ছিল। ১৮৮০ হইতে ১৮৯২ খৃষ্টাব্দ পর্য্যন্ত শ্রীযুক্ত জে, ডি, এম্ বেগলার মহাবোধিমন্দির খনন ও সংস্কার কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন। এই সময়ে রক্তবর্ণ প্রস্তরনির্ম্মিত একটি বোধিসত্ত্ব-মূর্ত্তি আবিষ্কৃত হইয়াছিল[২৬]; এই মূর্ত্তিটি মগধের শকাধিকারের অপর নিদর্শন। ইহা মথুরার রক্তবর্ণ প্রস্তরনির্ম্মিত এবং সম্ভবতঃ এই মূর্ত্তি মথুরায় নির্ম্মিত হইয়া প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবোধিতে আনীত হইয়াছিল। কাণিষ্কের ৩য় রাজ্যাঙ্কে বারাণসীতে প্রতিষ্ঠিত বোধিসত্ত্বমূর্ত্তি[২৭], এবং শ্রাবস্তীর ধ্বংসাবশেষ মধ্যে আবিষ্কৃত বোধিসত্ত্ব মূর্ত্তিদ্বয়[২৮], প্রতিষ্ঠার জন্য মথুরা হইতে বারাণসী ও শ্রাবস্তীতে নীত হইয়াছিল। এই মূর্ত্তির পাদপীঠে একটি খোদিতলিপি আছে, আবিষ্কারের পরে এই খোদিতলিপির অধিকাংশ ক্ষয় হইয়া গিয়াছে। কনিংহাম তাঁহার মহাবোধিগ্রন্থে এই খোদিতলিপির যে চিত্র প্রকাশ করিয়াছেন[২৯], পাঠোদ্ধারে তাহাই এখন একমাত্র অবলম্বন। এই খোদিতলিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, কোন অব্দের ৬৪ সম্বৎসরে মহারাজ তুকমলের রাজ্যে এই বোধিসত্ত্বমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল[৩০]। এই অব্দ শকাব্দ কি গুপ্তাব্দ, তাহা স্থির হয় নাই। অক্ষরতত্ত্ববিদ্ ডাক্তার বুলারের মতে ইহা গুপ্তাব্দ[৩১], এই মত অনেকেই সমর্থন করিয়াছেন[৩২] কিন্তু ডাক্তার লুডার্সের মতে ইহা শকাব্দ[৩৩], ডাক্তার ফ্লিট্ তাঁহার সমর্থক কিন্তু এই খোদিতলিপির অক্ষরসমূহ সম্রাট্ সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ-প্রশস্তির অক্ষরের অনুরূপ, সুতরাং ইহা কোন মতেই খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর খোদিতলিপি হইতে পারে না।
খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগে বিস্তৃত কুষাণসাম্রাজ্য বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত হইয়া গিয়াছিল। এই সময়ে বঙ্গে বা মগধে কোন্ জাতীয় কোন্ বংশের অধিকার ছিল তাহা অদ্যাপি জানিতে পারা যায় নাই। মগধে গুপ্তরাজবংশ তখনও সম্রাট্ পদবীলাভ করেন লাই, শকরাজগণ তখনও উত্তরাপথের নানাস্থান অধিকার করিয়া আছেন। এই সময়ে রাজপুতানার মরুপ্রদেশের পুষ্করণানগরের অধিপতি চন্দ্রবর্ম্মা সপ্তসিন্ধুর মুখ ও বাহ্লীক দেশ হইতে বঙ্গদেশ পর্য্যন্ত সমস্ত আর্য্যাবর্ত্ত জয় করিয়াছিলেন। বঙ্গদেশে বাঁকুড়া জেলায়, শুশুনিয়া পর্ব্বতগাত্রে চন্দ্রবর্ম্মার যে শিলালিপি আছে, তাহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, তাঁহার পিতার নাম সিংহবর্ম্মা এবং তিনি চক্রস্বামী বা বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন[৩৪]। পুরাতন দিল্লীর ধ্বংসাবশেষ মধ্যে কুতুবমিনারের নিকটে মসজিদ্ কুতুব-উল-ইসলামের অঙ্গণে একটি বৃহৎ লৌহস্তম্ভ আছে। ইহার গাত্রে যে প্রাচীন খোদিতলিপি আছে, তাহা হইতে জানিতে পারা যায় যে, চন্দ্র নামে জনৈক রাজা বিষ্ণুপাদগিরিতে বিষ্ণুর ধ্বজ স্থাপন করিয়াছিলেন এবং বঙ্গে সিন্ধুর সপ্ত মুখের পারে ও বাহ্লীক দেশে যুদ্ধে জয়লাভ করিয়াছিলেন[৩৫]। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মালবদেশে, প্রাচীন দশপুরের (বর্ত্তমান মন্দশোর) ধ্বংসাবশেষ মধ্যে একখানি শিলালিপি আবিষ্কার করিয়াছেন। তাহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, চন্দ্রবর্ম্মার ভ্রাতার নাম নরবর্ম্মা এবং তিনি ৪৬১ বিক্রমাব্দে (৪০৪-৫ খৃষ্টাব্দে) জীবিত ছিলেন[৩৬]। এই সকল প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া, শাস্ত্রীমহাশয় নির্ণয় করিয়াছেন যে, শুশুনিয়া পর্ব্বতলিপির চন্দ্রবর্ম্মা ও দিল্লীর লৌহস্তম্ভলিপির চন্দ্র একই ব্যক্তি; এবং দশপুর বা মন্দশোরের শিলালিপির নরবর্ম্মা তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। চন্দ্রবর্ম্মা সমুদ্রগুপ্তের দিগ্বিজয় যাত্রার অব্যবহিত পূর্ব্বে, বঙ্গদেশ হইতে বাহ্লীকদেশ পর্য্যন্ত সমগ্র আর্য্যাবর্ত্ত জয় করিয়াছিলেন। এলাহাবাদের দুর্গমধ্যে, অশোকের শিলাস্তম্ভে সমুদ্রগুপ্তের যে প্রশস্তি উৎকীর্ণ আছে, তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায় যে, সমুদ্রগুপ্ত চন্দ্রবর্ম্মা নামক জনৈক আর্য্যাবর্ত্তরাজকে বিনষ্ট করিয়াছিলেন[৩৭]। সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তির ও শুশুনিয়া শিলালিপির চন্দ্রবর্ম্মা এবং দিল্লী স্তম্ভলিপির চন্দ্র যে অভিন্ন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই[৩৮]।
পরিশিষ্ট (খ)
(১) হাথিগুম্ফার শিলালিপি
কলিঙ্গাধিপতি চেতবংশোদ্ভব রাজা খারবেলের একখানি দীর্ঘ শিলালিপি, পুরীজেলায় ভুবনেশ্বর গ্রামের নিকটে উদয়গিরি পর্ব্বতে হাথিগুম্ফা নামক একটি গুহার উপরে উৎকীর্ণ আছে। বহুকাল পূর্ব্বে গুজরাট দেশীয় পণ্ডিত শ্রীযুক্ত ভগবানলাল ইন্দ্রদী এই শিলালিপির পাঠোদ্ধার করিয়াছিলেন কিন্তু তাঁহার উদ্ধৃত পাঠে নানা সন্দেহ উপস্থিত হওয়ায়, স্বর্গগত ইতিহাসবেত্তা ভিন্সেণ্ট এ, স্মিথ সুহৃদপ্রবর কাশীপ্রসাদ জায়সবালকে উক্ত শিলালিপির নূতন পাঠ উদ্ধার করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। শ্রীযুক্ত কাশীপ্রসাদ জায়সবাল দুই তিন বৎসর যাবৎ চেষ্টা করিয়া এই শিলালিপির বহু আংশিক সংস্কার করিয়াছেন এবং বহু নূতন ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কার করিয়াছেন। তিনি তিনবার এই কঠিন শিলালিপির উদ্ধৃত পাঠ মুদ্রিত করিয়াছেন। তাঁহার সর্ব্বশেষের পাঠ অধিকতর শুদ্ধ বলিয়া গৃহীত হইল। শ্রীযুক্ত কাশীপ্রসাদ জায়সবাল দুই তিন বার দীর্ঘকাল উদয়গিরিতে অবস্থান করিয়া এই শিলালিপির যে সমস্ত অংশ কালবশে ক্ষীণ হইয়াছে এবং যাহা ছাপায় দেখিতে পাওয়া যায় না, তাহারও পাঠোদ্ধার করিয়াছেন। এই শ্রমসাধ্য কর্ম্মের জন্য বন্ধুবর শ্রীযুক্ত কাশীপ্রসাদ ভারতবাসী এবং ইতিহাসপ্রিয় ব্যক্তিমাত্রেরই ধন্যবাদার্হ।
এই শিলালিপি অনুসারে রাজা খারবেল চেতরাজবংশোদ্ভব এবং কলিঙ্গদেশের অধিপতি ছিলেন। তাঁহার মহারাজ মহামেঘবাহন উপাধি ছিল। তিনি পঞ্চদশবর্ষ বয়ঃক্রমকালে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হইয়াছিলেন এবং চতুর্ব্বিংশতিবর্ষ বয়সে সিংহাসন-লাভ করিয়াছিলেন। তাঁহার রাজ্যের প্রথম বর্ষে রাজা খারবেল ঝটিকায় বিনষ্ট নগর, প্রাকার ও গো-পুর সংস্কার করিয়াছিলেন এবং পঞ্চত্রিংশশত সহস্ৰ মুদ্রা ব্যয় করিয়া প্রকৃতিবর্গের মনোরঞ্জন করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষে তিনি রাজা শাতকর্ণিকে গ্রাহ্য না করিয়া পশ্চিমদেশে হয়, গজ, নর, রথ এই চারিটি বাহুযুক্ত সেনা প্রেরণ করিয়াছিলেন। তাহারা কন্থবেণা নদীপার হইয়া মুসিকনগর অবরোধ করিয়াছিল। তৃতীয় বর্ষে নৃত্যগীত, নাটকাভিনয় ও বাদ্য প্রভৃতি নানা উপায়ে তিনি নগরীর (কলিঙ্গ নগরের) মনোরঞ্জন করিয়াছিলেন। চতুর্থ বর্ষে তিনি ভোজকগণকে বশীভূত করিয়াছিলেন (এই স্থানে শিলালিপির অনেকগুলি কথা পড়িতে পারা যায় নাই)। পঞ্চমবর্ষে তিনি তনসুলিয়ের পথ হইতে নন্দরাজ কর্ত্তৃক ত্রিশতবর্ষ পূর্ব্বে উদ্ঘাটিত প্রণালী (কলিঙ্গ) নগর অবধি খনন করাইয়াছিলেন। সপ্তম বর্ষের বিবরণ অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। অষ্টম বর্ষে তিনি বহু সেনা লইয়া গোরথগিরি নামক পর্ব্বত (জয় করিয়া) রাজগৃহে পীড়া উপস্থিত করিয়াছিলেন (জয় করিয়াছিলেন অথবা লুণ্ঠন করিয়াছিলেন) এই সকল কারণে রাজা (মগধরাজ) অবরুদ্ধ সেনা পরিত্যাগ করিয়া মথুরায় গমন করিয়াছিলেন। নবম বর্ষের বিবরণ অস্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। দশম বর্ষে তিনি ভারতবর্ষ জয় করিতে যাত্রা করিয়াছিলেন। একাদশ বর্ষে তিনি তিক্ত কাষ্ঠনির্ম্মিত কেতুভদ্রের মূর্ত্তি রথযাত্রায় বাহির করিয়াছিলেন (শ্রীযুক্ত কাশীপ্রসাদ জায়সবালের মতানুসারে কেতুভদ্র ভারতযুদ্ধের একজন সেনাপতি এবং মহাভারতে ইঁহার উল্লেখ আছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র মজুমদার এই মত গ্রহণ করেন নাই।—Indian Antiquary, Vol. XLVIII, 1919, pp. 189-191.)। এই কেতুভদ্র ত্রয়োদশশত বর্ষ (শিলালিপির সময় হইতে) জীবিত ছিলেন। তাঁহার দ্বাদশ রাজ্যাঙ্কে রাজা খারবেল উত্তরাপথের রাজাদিগের মনে ত্রাস জন্মাইয়া এবং মগধবাসীদিগের মনে বিপুল ভয় জন্মাইয়া বহসতিমিত (বৃহস্পতিমিত্র) নামক মগধরাজকে তাঁহার পাদবন্দনা করিতে বাধ্য করিয়াছিলেন। ত্রয়োদশ পংক্তি হইতে সপ্তদশ পংক্তি পর্য্যন্ত এই শিলালিপি ক্ষয়ের জন্য স্পষ্ট পড়া যায় না। শ্রীযুক্ত জায়সবাল বহু পরিশ্রম করিয়া এই অংশের নানাস্থানের পাঠোদ্ধার করিয়াছেন। চতুর্দ্দশ পংক্তিতে পাণ্ড্য রাজার নাম আছে। ষোড়শ পংক্তিতে মৌর্য্যকাল এবং ১৬৪ বৎসরের উল্লেখ আছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমুখ অনেকে এই মৌর্য্যকাল অর্থাৎ মৌর্য্যাব্দের ১৬৪ বৎসরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান (Journal of the Royal Asiatic Society, 1919, pp. 395-99., Indian Antiquary, Vol. XLVII, 1918, pp. 223-24; Vol. XLVIII, 1919, pp. 187-91.)।
রাজা খারবেল যখন গোরথগিরি জয় করিয়া রাজগৃহ বেষ্টন করিয়াছিলেন, তখন বঙ্গদেশের অবস্থা কি ছিল তাহা বলিতে পারা যায় না। গোরধগিরি বা গোরথগিরির বর্ত্তমান নাম বরাবর পাহাড়, ইহা গয়া জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত। খারবেল বাঙ্গালাদেশ দিয়া মগধে গিয়াছিলেন কি না তাহা বলিতে পারা যায় না। ইহার পরে দশম বর্ষে তিনি যখন ভারতবর্ষ জয় করিতে যাত্রা করিয়াছিলেন এবং দ্বাদশ রাজ্যাঙ্কে যখন তিনি মগধরাজকে পরাজিত ও বশীভূত করিয়াছিলেন তখন তিনি গৌড় ও বঙ্গদেশ জয় করিয়াছিলেন কি না তাহাও বলিতে পারা যায় না। এই সকল কারণে খারবেলের শিলালিপির প্রমাণ গ্রন্থমধ্যে উল্লিখিত হইল না। বাঙ্গালাদেশের ইতিহাসের সহিত এই শিলালিপির সাক্ষাৎ সম্পর্ক না থাকিলেও মগধের ইতিহাসে ইহার স্থান অতি উচ্চ এবং এই সময়ে গৌড় ও মগধের স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক বিবরণ রচনা প্রমাণাভাবে অসম্ভব। সম্ভবতঃ এই সময়ে গৌড়দেশ মগধরাজ্যভুক্ত ছিল এবং মগধরাজের অধঃপতনের সহিত গৌড়রাজ্য কলিঙ্গরাজের পদানত হইয়াছিল। খারবেলের শিলালিপির বিবরণ Journal of the Bihar and Orissa Research Society, December 1918 হইতে সঙ্কলিত হইল।
পুরাণে মহাপদ্মনন্দ কর্ত্তৃক ক্ষত্রিয় বিনাশ ও তাঁহার একরাট্ বা একচ্ছত্র পদবীর উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়:—
“মহানন্দিসুতশ্চাপি শূদ্রায়াং কলিকাংশজঃ,
উৎপৎস্যতে মহাপদ্মঃ সর্ব্বক্ষত্রান্তকো নৃপঃ।
ততঃ প্রভৃতি রাজানোভবিষ্যাঃ শূদ্রযোনয়ঃ,
একরাট্ স মহাপদ্ম একচ্ছত্রো ভবিষ্যতি॥”
—মৎস্য, বায়ু ও ভবিষ্য পুরাণ।
(F. E. Parglter's The Purana Text of the Dynasties of the Kali Age, P. 25.)
পুরাণে মৌর্য্য শুঙ্গ এবং কাণ্বায়ন বা শুঙ্গভৃত্য রাজাগণের তালিকা দেখিতে পাওয়া যায়। অন্ধ্ররাজবংশের পরে আভীর, গর্দভিল্ল, শক, যবন, তুষার, মুরুণ্ড ও হূণবংশীয় রাজগণেরও উল্লেখ আছে—Dynasties of the Kali Age, pp. 45-47.।
বাঙ্গালা ১৩১৪ সালে প্রকাশিত “বাঙ্গালার পুরাবৃত্ত” নামক গ্রন্থে গ্রন্থকার শ্রীযুক্ত পরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলিয়াছেন,—“অনুমান ৬০০ খৃষ্টপূর্ব্বাব্দের নিকটবর্ত্তী কোন সময়ে যৌধেয় জাতি ভারতবর্ষের পূর্ব্বাংশ অধিকার করে (পৃঃ ১২৫); কিন্তু যৌধেয় জাতি কর্ত্তৃক আর্য্যাবর্ত্তের পূর্ব্বাংশ বিজয়ের কোন বিজ্ঞান সম্মত প্রমাণ আবিষ্কৃত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না। সম্প্রতি শ্রীযুক্ত সতীশচন্দ্র মিত্র প্রণীত যশোহর খুলনার ইতিহাসে যৌধেয়গণ কর্ত্তৃক উত্তরাপথের পূর্ব্বাঞ্চল বিজয়ের কথা উল্লিখিত হইয়াছে (পৃঃ ১৬৯)।
১৯১৩ খৃষ্টাব্দের জানুয়ারী মাসে বোম্বাইয়ের পারসীজাতীয় বণিক্ স্যর রতন তাতার ব্যয়ে প্রত্নতত্ত্ববিভাগের পূর্ব্বচক্রের অধ্যক্ষ ডাক্তার স্পুনার (Dr. D. B. Spooner) পাটলিপুত্র খনন আরম্ভ করেন। পাটনা ও বাঁকিপুরের মধ্যস্থিত কুমারাহার গ্রামে তিনি একটি স্তম্ভ ও বহু স্তম্ভের খণ্ড আবিষ্কার করিয়া স্থির করিয়াছেন যে, এই স্থানে চন্দ্রগুপ্ত বা অপর কোন মৌর্য্যরাজা শতস্তম্ভবিশিষ্ট একটি সভাগৃহ নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন এবং এই গৃহ পারস্যদেশের পার্সিপোলিস্ নগরের হখামানীষীয় রাজগণ কর্ত্তৃক নির্ম্মিত সভাগৃহের অনুকরণে নির্ম্মিত হইয়াছিল (Annual Report of the Archaeological Survey of India, Eastern Circle, for 1912-13. pp. 59-61.)। পাটলিপুত্রের খননে কোনও উল্লেখযোগ্য শিলালিপি আবিষ্কৃত হয় নাই। পরবৎসর কুষাণবংশীয় রাজগণের ৫২টি তাম্রমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়াছিল (Ibid-1913-14, p. 71.)। প্রথম বৎসরের খননে নিম্নলিখিত প্রাচীন মুদ্রাগুলি আবিষ্কৃত হইয়াছিল:–
১। কৌশাম্বী নগরীর প্রাচীন মুদ্রা।
২। মিত্রবংশের (শুঙ্গবংশ) মুদ্রা, ইহার মধ্যে ইন্দ্রমিত্রের দুইটি মুদ্রা আছে।
৩। কাণিষ্কের দুইটি তাম্রমুদ্রা, ইহার একদিকে রাজার মূর্ত্তি ও অপরদিকে পবনদেবতার মূর্ত্তি আছে।
পাটলিপুত্রে আবিষ্কৃত গুপ্তবংশজ রাজাগণের মুদ্রা যথাস্থানে উল্লিখিত হইবে[৩৯]।
মন্দশোরের নবাবিষ্কৃত শিলালিপি এবং শুশুনিয়ার পর্ব্বতলিপি হইতে চন্দ্রবর্ম্মা ও সিংহবর্ম্মার পূর্ব্বপুরুষগণের নাম পাওয়া গিয়াছে। মন্দশোরে আবিষ্কৃত বন্ধুবর্ম্মার শিলালিপি এবং গঙ্গধরে আবিষ্কৃত বিশ্ববর্ম্মার শিলালিপি হইতে পুষ্করণা ও মালবের প্রাচীন রাজবংশের নিম্নলিখিত বংশপত্রিকা সঙ্কলিত হইয়াছে।
জয়বর্ম্মা | |||||||||||||||||||||||||
সিংহবর্ম্মা | |||||||||||||||||||||||||
চন্দ্রবর্ম্মা | নরবর্ম্মা (বিক্রমাব্দ ৪৬১ = ৪০৪-৫ খৃঃ অব্দ) | ||||||||||||||||||||||||
বিশ্ববর্ম্মা (বিক্রমাব্দ ৪৮০ = ৪২৩-২৪ খৃঃ অব্দ) | |||||||||||||||||||||||||
বন্ধুবর্ম্মা (বিক্রমাব্দ ৪৯৩ = ৪৩৬-৩৭ খৃঃ অব্দ) এবং বিক্রমাব্দ ৫২৯ = ৪৭২ খৃঃ অব্দ | |||||||||||||||||||||||||
সম্প্রতি অধ্যাপক শ্রীযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক, মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের মতের প্রতিবাদ করিয়া একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করিয়াছেন। ইহার প্রত্ত্যুত্তর অদ্যাবধি প্রকাশ হয় নাই (Indian Antiquary, vol. XLVIII, 1919, pp. 98-101)।
- ↑ চতুর্ব্বিংশতি জৈন তীর্থঙ্করের মধ্যে দুইজন মিথিলায় ও দুইজন মগধে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ঊনবিংশতিতম তীর্থঙ্কর মল্লিনাথ ও একবিংশতিতম তীর্থঙ্কর নিমিনাথ মিথিলায়, বিংশতিতম তীর্থঙ্কর মুনি সুব্রতনাথ রাজগৃহে, ও চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর মহাবীর বর্দ্ধমান বৈশালী নগরে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। চতুর্ব্বিংশতি জনের মধ্যে দ্বাদশ জন (অজিতনাথ, সস্তব, অভিনন্দন, সুমতিনাথ, পদ্মপ্রভ, সুপার্শ্ব, পুষ্পদন্ত, শীতলনাথ, অংশুনাথ, বিমলনাথ, নিমিনাথ, ও পার্শ্বনাথ) সমেত শিখরে, অর্থাৎ পার্শ্বনাথ পর্ব্বতে নির্ব্বাণলাভ করিয়াছিলেন। দ্বিতীয় তীর্থঙ্কর বাসুপূজ্য চম্পানগরে ও চতুর্ব্বিংশতিতম তীর্থঙ্কর বর্দ্ধমান মহাবীর অপাপপুরীতে নির্ব্বাণলাভ করিয়াছিলেন। এই নগরদ্বয় অঙ্গ ও মগধদেশে অবস্থিত।
- ↑ অধ্যাপক রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, Fundamental Unity of India নামক গ্রন্থে, প্রাচীনকালে, আর্য্যাবর্ত্তে রাষ্ট্রীয় ঐক্যের অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন; কিন্তু সম্প্রতি শ্রীযুত রমাপ্রসাদ চন্দ, সমগ্র আর্য্যাবর্ত্তে মহাপদ্ম নন্দের রাজ্যকালের পূর্ব্বে রাষ্ট্রীয় ঐক্য নিতান্ত অসম্ভব ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন—সবুজ পত্র ১ম বর্ষ, পৃঃ ৪০৩।
- ↑ McCrindle’s Ancient India, its Invasion by Alexander the Great.
- ↑ McCrindle’s Megasthenes, pp. 33-34.
- ↑ V. A. Smith’s Early History of India (3rd Edition), p. 148.
- ↑ “এবমপি প্রচংতেসু যথা চোডা পাংডা সতিয়পূতো কেরলপূতো আ তাংব পংনি অংতিয়াকো যোন রাজা যেবাপি তস আংতিয়াকস সমীপং”—২য় শিলাশাসন—Epigraphia Indica, vol. II. p. 449.
- ↑ Proceedings, Asiatic Society of Bengal, 1879. P. 245.
- ↑ Ibid, 1882, p. 112.
- ↑ Annual Report of the Indian Museum, Archaeological Section. 1913-14.
- ↑ A Descriptive List of Sculptures and Coins in the Museum of the Bangiya Sahitya Parisad, p. 40; Nos. 179-184.
- ↑ Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, 1882, p. 112.
- ↑ শকাধিকারকালের বিস্তৃত বিবরণ আমার “শকাধিকার কাল ও কণিষ্ক” নামক প্রবন্ধে প্রদত্ত হইয়াছে—বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা, দ্বাদশবর্ষ, অতিরিক্ত সংখ্যা। এই প্রবন্ধের ইংরাজী অনুবাদ দেখিয়া ভিন্সেণ্ট স্মিথ, টমাস প্রভৃতি প্রত্নতত্ত্ববিদ্গণ এই মত গ্রহণ করিয়াছেন—The Scythian Period of Indian History, Indian Antiquary, 1908, pp. 25-75; V. A. Smith, Early History of India, 3rd Edition, p. 215, App. J, p. 251, Note; p. 255, Note 1; p. 269; F. W. Thomas, The date of Kaniska, Journal of the Royal Asiatic Society, 1913, p. 627.
- ↑ মহাবোধি মন্দিরের চতুষ্পার্শ্বে যে পাষাণ নির্ম্মিত বেষ্টনীর ধ্বংসাবশেষ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহার কাল-নির্ণয় সম্বন্ধে পণ্ডিতগণের মধ্যে মতভেদ আছে। পূর্ব্বে কনিংহাম্ এই বেষ্টনীর স্তম্ভ ও সূচীর খোদিতলিপি দেখিয়া ইহা অশোক-নির্ম্মিত স্থির করিয়াছিলেন। বেষ্টনীর বহু স্তম্ভ ও সূচী বুদ্ধগয়ার মহান্তগণের গৃহ নির্ম্মাণকালে ব্যবহৃত হইয়াছিল। ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে মহান্ত কৃষ্ণদয়ালগিরি গবর্ণমেণ্টের অনুরোধ অনুসারে সমস্ত স্তম্ভগুলি যথাস্থানে পুনঃ স্থাপন করিয়াছিলেন। এই স্তম্ভগুলির একটিতে রাজা ব্রহ্মমিত্র ও তাঁহার পত্নী নাগদেবার নাম আছে। এই প্রমাণের বলে মৃত ডাঃ ব্লক্ (Dr. Th. Bloch) স্থির করেন ষে, পাষাণবেষ্টনী অশোক-নির্ম্মিত নহে, ইহা শুঙ্গ বা কাণ্ব বংশীয় রাজগণের রাজত্বকালে নির্ম্মিত হইয়াছিল। মহাবোধিমন্দিরের পাষাণবেষ্টনীর দুই একটি সূচীতে খৃষ্টপূর্ব্ব দ্বিতীয় বা প্রথম শতাব্দীর অক্ষরও দেখা গিয়াছে।
- ↑ মধ্যপ্রদেশে বরহুত গ্রামে যে প্রাচীন স্তূপের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হইয়াছে; তাহার তোরণের একটি স্তম্ভের খোদিতলিপিতে শুঙ্গবংশের উল্লেখ আছে। Luders's List of Brahmi Inscriptions, Epigraphia Indica, Vol. X, p. 65 no. 687.
- ↑ Cunnigham’s Mahabodhi, p. 2o, pl. X. 11.
- ↑ Ibid, p. 58, pl. XXII. 11.
- ↑ V. A. Smith, Early History of India, 3rd Edition, p. 2б0.
- ↑ Annual Report of the Archaeological Survey, Eastern Circle. 1913-14, р. 71.
- ↑ ইহার চিত্র বা বিবরণ অদ্যাপি প্রকাশিত হয় নাই। বুদ্ধগয়ার ধ্বংসাবশেষ খননকালে মৃত জে, বেগলার (J. D. M. Beglar) তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলেন; তাঁহার মৃত্যুর পরে তৎকর্ত্তৃক সংগৃহীত মূর্ত্তিগুলি কলিকাতা চিত্রশালার জন্য ক্রীত হইয়াছিল; এই মূর্ত্তির অংশ সেই সময়ে পাওয়া গিয়াছিল। (কলিকাতা চিত্রশালার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংখ্যা ৬২৮২)।
- ↑ Annual Report of the Archaeological Survey of India 1905-6, p. 10б.
- ↑ Annual Report of the Archaeological Survey, Eastern Circle, 1912-13. p. 60.
- ↑ Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, 1882, p. 113.
- ↑ শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ রচিত গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৪।
- ↑ Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, 1890, p. 162.
- ↑ V. A. Smith, Catalogue of Coins in the Indian Museum, Calcutta, Vol. I. pp. 87-88.
- ↑ Cunningham’s Mahabodhi, pp. 7 and 21; pl. XXV.
- ↑ Epigraphia Indica, Vol. VIII, p. 175.
- ↑ Ibid, p. 180; Annual Report of the Archaeological Survey of India, 1908-9, p. 135.
- ↑ Mahabodhi, pl. XXV.
- ↑ Epigraphia Indica, Vol. X, App. p. 97, no 940
- ↑ Buhler’s Indian palaeography (English Trans.), p. 46, note 10.
- ↑ Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1898. pt, I. p. 282, note 1; Indian Antiquary, 1908, p. 39.
- ↑ Ibid, Vol. XXXIII, p. 40.
- ↑ প্রবাসী, ১৩২০, পৃঃ ৪৯৭
- ↑ Fleet's Corpus Inscriptionum indicarum, Vol. III, p. 141.
- ↑ Indian Antiquary, 1913, pp. 217-19.
- ↑ Fleet's Corpus Inscriptionum Indicarum, Vol. III, p. 7.
- ↑ পূর্ব্বে স্মিথ, ভোগেল প্রভৃতি প্রত্নতত্ত্ববিদ্গণ অনুমান করিতেন যে, দিল্লীর লৌহপ্তম্ভলিপির চন্দ্র, সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। কিন্তু মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রবন্ধ প্রকাশিত হইলে শ্রীযুক্ত ভিন্সেণ্ট স্মিথ তাঁহার মত গ্রহণ করিয়াছেন—Early History of India, 3rd Edition, p. 290. Note 1.
- ↑ Annual Report of the Archaeological Survey of India, Eastern circle, 1912-13, p. 61.