আমিনা বেগম।

আমিনা

 সিরাজ-জননী আমিনার চরিত্র তাঁহার সহােদরা ঘসিটীর চরিত্রের ন্যায় ঘটনা-সমাবেশে সমুজ্জ্বল না হইলেও কমনীয় সদ্‌গুণাবলীতে সমুদ্ভাসিত। বাঙ্গালার নবাব আলিবর্দ্দি খাঁর কন্যাত্রয়ের মধ্যে ঘসিটী ও আমিনা বেগম রাজনৈতিক আলােচনায় যােগদান করিতেন; বৃদ্ধ আলিবর্দ্দীও অনেক সময়ে তাঁহাদিগের অভিমত লইয়া রাজকার্য্য পরিচালনা করিতেন। সিরাজচরিত্র বুঝিতে হইলে প্রথমে আমিনা-চরিত্র বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। জননীর নিকট হইতে সন্তান চরিত্র গঠন করিয়া থাকে। জননীর প্রত্যেক কার্য্য দেখিবার সুবিধা সন্তান যতদূর পাইয়া থাকে, অপরের পক্ষে ততদূর সম্ভবপর নয়। পিতামাতার দোষ-গুণ সন্তানে প্রায়ই বর্ত্তিয়া থাকে। বংশাপরম্পরায় দোষগুণাবলীও উত্তরাধিকারসূত্রে সন্তান অর্জ্জন করিয়া থাকে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে থাকিয়া সন্তান শিক্ষাগুণে চরিত্র গঠনের সম্যক্ সহায়তা লাভ করিতে পারে। তাই আমরা হতভাগ্য বাঙ্গালার, নবাব সিরাজের জননী-চরিত্র বিশ্লেষণ করিতে প্রয়াসী হইয়াছি।

 বাঙ্গালার নবাব আলিবর্দ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজি অহম্মদের তিন পুত্র নওয়াজিস্, সৈয়দ অহম্মদ ও জৈনুদ্দীন অহম্মদের সহিত যথাক্রমে আলিবর্দ্দীর তিন কন্যা[১] ঘসিটী বা মেহেরুন্নিসা, ময়মানা[২] ও আমিনা বেগমের বিবাহ হয়।[৩] নবাব নওয়াজিসকে ঢাকার, সৈয়দ অহম্মদকে প্রথমে উড়িষ্যার, পরে হুগলীর, অবশেষে পূর্ণিয়ার এবং জৈনুদ্দীনকে পাটনা বা আজিমাবাদের শাসনভার প্রদান করিয়াছিলেন। নওয়াজিসের কোন সন্তানাদি ছিল না, সৈয়দ অহম্মদের এক পুত্র—সওকজঙ্গ এবং জৈনুদ্দীনের তিন পুত্র সিরাজুদ্দৌলা (মিরজা মহম্মদ), ফজ্‌ল্‌ কুলি খাঁ (ইক্রামুদ্দৌলা) ও মিরজা-মেহ্‌দি।

 আলিবর্দ্দী খাঁ আজিমাবাদের শাসনকার্য্যে নিযুক্ত হইবার অব্যবহিত পূর্ব্বে তাঁহার কনিষ্ঠা কন্যা আমিনার একটী পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এই পুত্রের জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই আলিবর্দ্দীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় বলিয়া, তিনি দৌহিত্রকে দত্তক পুত্র রূপে গ্রহণ করেন এবং আপনার নামানুসারে তাহাকে ‘মিরজা মহম্মদ’ এই নামে অভিহিত করেন। এই মিরজা মহম্মদই ইতিহাস-বিখ্যাত সিরাজুদ্দৌলা।

 ১৭৫৫ খৃঃ অব্দে ডিসেম্বর মাসে নওয়াজিস মহম্মদের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তাঁহার বিপুল সম্পত্তির কোন উত্তরাধিকারী না থাকায় সমস্ত সম্পত্তি তাঁহার স্ত্রী ঘসিটী বেগম ও দেওয়ান রাজবল্লভের করতলগত হয়। আলিবর্দ্দী খাঁ মৃত্যুকালে (১৭৫২ খৃঃ) অন্য দৌহিত্রের উত্তরাধিকারিত্বের দাবী উপেক্ষা করিয়া, সিরাজকে প্রকাশ্যভাবে তাঁহার উত্তরাধিকারী বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া যান। আলিবর্দ্দীর মৃত্যুর পরে সিরাজ রাজবল্লভকে ধরিয়া আনিয়া তাহার নিকট হইতে তাহার প্রভুর সমস্ত ধন-সম্পত্তি কোথায় আছে, তাহার একটা সন্তোষজনক হিসাব চাহেন; কিন্তু নওয়াজিসের নিতান্ত বিশ্বস্ত ভৃত্য রাজবল্লভ সিরাজের নিকট ধন-রত্নের কথা সযত্নে গােপন রাখেন। তাঁহার ভয়, ইহা প্রকাশ করিলে পাছে তাঁহার প্রভুর পরিবারবর্গের কোন অনিষ্ট হয়। রাজবল্লভের এই আচরণে সিরাজ ক্রুদ্ধ হইয়া তাঁহাকে নজরবন্দী করিয়া রাখেন; পরে বেগম আমিনার কথায় মুক্তি দান করেন।

 পরদুঃখকাতরা, দয়া ও মমতার নির্ঝরিণী আমিনা, পুত্র সিরাজুদ্দৌলাকে সতত দয়া-ধর্ম্ম আচরণ করিতে উপদেশ দিতেন। আমিনার কার্য্যাবলীতে নিষ্ঠুরতার লেশমাত্র ছিল না। পরের দুঃখে তাঁহার হৃদয় গলিয়া যাইত। তাই অবরুদ্ধ বেগম-জনসন্ (Mrs. William Watts) আমিনার অনুগ্রহে অন্তঃপুর হইতে রক্ষা পাইয়াছিলেন। অবরোধাবস্থানে জনসনের কষ্ট দেখিয়া তিনি এতদূর ব্যথিত হইয়াছিলেন যে, ক্ষণকালের জন্য তিনি আপনার স্বার্থ পর্য্যন্ত ভুলিয়া গিয়াছিলেন। তাঁহার কষ্ট করুণহৃদয়া আমিনার পক্ষে অসহ্য হওয়ায়, তিনি পুত্রের ভবিষ্যতের দিকে একবারও চাহিয়া দেখেন নাই। বেগম-জনসন্‌কে অবরুদ্ধ করিয়া রাখিতে পারিলে, ইংরাজ যে সহজেই তাঁহাদের সহিত সন্ধির প্রস্তাব করিতে বাধ্য হইবে, তাহা জানিয়াও বেগমের দুঃখে ব্যথিত-হৃদয়া আমিনা, গোপনে তাঁহাকে মুক্তি দান করিয়াছিলেন।

 আমরা আমিনার পরদুঃখকাতরতার আরও একটী দৃষ্টান্তের উল্লেখ করিতেছি।

 যে সময় বৃটিশ-বন্দীরা নবাব সিরাজুদ্দৌলার দ্বারা প্রপীড়িত হইতেছিল, সেই সময় নবাবের মাতামহী ও আমিনা বেগম, বন্দীদিগের মুক্তির জন্য সিরাজকে অনেক করিয়া বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন যে, দণ্ড যেরূপ রাজধর্ম্ম, আর্ত্তের প্রতি ক্ষমাও সেইরূপ রাজার অবশ্যকর্ত্তব্য। কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় সিরাজ এই অমৃতময় উপদেশ কার্য্যে পরিণত করিবেন কি না ভাবিতেছিলেন; কেন না তাঁহার বন্ধুদিগের মধ্যে অনেকেই তাঁহাকে বলিতেছিলেন—“হলওয়েলের ন্যায় সাহসী পুরুষকে কখন মুক্তিদান করা উচিত নয়, বরং তাহাকে কলিকাতায় আলিনগরের শাসনকর্ত্তা মাণিকচাঁদের নিকট পাঠান হউক। তথায় মাণিকচাঁদ যেরূপ করিয়া হউক, উহার নিকট হইতে গুপ্তধনের সন্ধান বাহির করিয়া লইতে পারিবে। আর একান্ত যদি তাহা বাহির করিয়া লইতে না পারে, তবে মাণিকচাঁদ নিশ্চয়ই তাহার নিকট হইতে খেসারৎ আদায় করিয়া লইতে পারিবে।” আমিনা পুত্রকে কর্ত্তব্যনিষ্ঠ হইতে বারংবার কাতরকণ্ঠে উপরোধ করিতে লাগিলেন— রাজার কর্ত্তব্য কি তাহা নানাপ্রকারে বুঝাইতে লাগিলেন। বলিলেন— “প্রজার ধন ও মান রক্ষা রাজার একান্ত কর্ত্তব্য। হলওয়েল তাহার আশ্রিত প্রজা, তাহার ধনে সিরাজের কিছুমাত্র অধিকার নাই।” সিরাজের হৃদয়ে মাতার উপদেশ অঙ্কিত হইয়া গেল—বুঝিলেন জননীর বাক্য শিরোধার্য্য। তিনি তখনই বন্ধুদিগকে বলিলেন—“তোমরা যাহা বলিতেছ, তাহা সত্য; কিন্তু বেচারা যাহা গোপন করিয়াছে, তাহা গোপনেই থাকুক। তাহার দুর্দশার একশেষ হইয়াছে—এখন তাহার মুক্তি পাওয়া আবশ্যক।”[৪]

 উন্মার্গগামী পুত্রকে সৎপথে ফিরাইবার জন্য—তাহার সুপ্ত জ্ঞান উদ্বুদ্ধ করিবার জন্য, আমিনা সিরাজকে বহু উপদেশ দিয়াছিলেন, কিন্তু ঊষর ক্ষেত্রে বীজ বপনের ন্যায় তাহা সুফল প্রসব করে নাই।

 সিরাজ যখন ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধের আয়োজন করিতেছিলেন, সেই সময় আমিনা তাঁহাকে ঐ যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত করিবার জন্য বিশেষ উপদেশ দিয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন—“তুমি নবাব, তোমার মর্য্যাদা কত, তাহা কি তুমি জান? তুমি এত বড় হইয়া কি না সামান্য বণিক্‌দিগের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতেছ? এ তোমার রাজসম্মানের পক্ষে, তোমার নিজের পক্ষে, বড়ই নিন্দার বিষয়—পদ-মর্য্যাদা রক্ষা করিতে হইলে, তাহাদিগের সহিত যুদ্ধ করা কখনও উচিত নয়;” কিন্তু সিরাজ তখন যশোলাভের জন্য লালায়িত—ইংরাজদিগকে দমন করিয়া আপনার প্রতিপত্তি অক্ষুন্ন রাখিবার জন্য ব্যাকুল, সুতরাং তাঁহার কর্ণে মাতার উপদেশ-বাক্য প্রবেশ করিল না। নির্ব্বোধের মত জননীর বাক্য অবহেলা করিয়া যুদ্ধের আয়োজন করিতে লাগিলেন।[৫] এই যুদ্ধের ফল ইতিহাস পাঠকের অবিদিত নহে।

 আমিনার হৃদয় দয়ার প্রস্রবণ। নিয়তই সেই হৃদয় বিগলিত করিয়া করুণারস ক্ষরিত হইত। তাঁহার দয়াশীলতার দু’একটী দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করিয়া, তাঁহার হৃদয় কি উপাদানে গঠিত ছিল, তাহার আভাষ দিতে পূর্ব্বেই চেষ্টা করিয়াছি; কিন্তু নানাবিধ সদ্‌গুণে ভূষিতা হইলেও, আমিনার চরিত্র একেবারে নিষ্কলঙ্ক ছিল, এ কথা বলা যায় না।

 সিরাজের জ্যেষ্ঠতাত নওয়াজিস মহম্মদ ঢাকার শাসনকর্ত্তার পদ লাভ করিয়াছিলেন। তিনি বরাবরই তাঁহার প্রিয়পাত্র হোসেনকুলি খাঁকে বিশ্বাস করিতেন ও আন্তরিক ভাল বাসিতেন। কালক্রমে হোসেন কুলি খাঁ নওয়াজিসের গৃহে সর্ব্বময় কর্ত্তা হইয়া, আলিবর্দ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা নওয়াজিস-পত্নী ঘসিটী বেগমের প্রণয়পাত্র হইয়া, প্রভুর ভালবাসার অপূর্ব্ব প্রতিশোধ দিয়াছিলেন! অল্পদিন পরে সিরাজমাতা আমিনা বেগমের সহিতও তাঁহার অবৈধ প্রণয়-কথা প্রকাশ হইয়া পড়ে। ঐতিহাসিকেরা একবাক্যে স্পষ্টভাবেই তাঁহার চরিত্রে কলঙ্কারোপ করিয়াছেন। আর ঐশ্বর্য্যের মধ্যে লালিত পালিত হইয়া—ভোগবিলাসের কোমল অঙ্কে শয়ন করিয়া, উদ্দাম বাসনা-স্রোতের অনুকূলে চলিলে সংযম শিক্ষার অবসর থাকে কি? বৃদ্ধা মহিষী এ সকল দেখিয়াও দেখিতেন না। পরে সিরাজ হোসেন কুলিকে হত্যা করাইয়া দুরপনেয় কলঙ্ক-কালিমা মোচন করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন।

 মুতাক্ষরীণকার গোলাম হোসেন, আলিবর্দ্দী খাঁর কন্যাদ্বয় ও সিরাজ-চরিত্র সম্বন্ধে লিখিয়াছেন যে, নবাবের শ্রীবৃদ্ধিকালে তাঁহার পরিবারবর্গ যেরূপ লাম্পট্য, কদাচার প্রভৃতির বশীভূত হইয়াছিলেন, তৎসমুদয় ভদ্র ভাষায় প্রকাশ করা মার্জ্জিতরুচির পরিচায়ক নহে। তাঁহাদের এই সমস্ত দুষ্কৃতিভার তাঁহার অকলঙ্ককুলে কালিমা ঢালিয়া দিয়াছে। তাঁহার কন্যারা ও প্রিয়তম সিরাজ যেরূপ ঘৃণার্হ কদাচার করিতেন, তাহা সকলের পক্ষেই সমান অযশঙ্কর।

 পূর্ব্বে উক্ত হইয়াছে আমিনা সিরাজকে ইংরাজদিগের সহিত যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতে নিষেধ করিয়াছিলেন; কিন্তু ইহা যে কেবল সিরাজের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য, তাহা বোধ হয় না—ইহার মূলেও একটু স্বার্থ নিহিত ছিল বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। বেগমদিগের ইংরাজের প্রতি সহানুভূতি দেখাইবার একটা বিশেষ কারণও ছিল। তাঁহারা ব্যবসা-বাণিজ্য দ্বারা অর্থোপার্জ্জন করিতেন। বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত রাখিতে হইলে, ইংরাজ-বণিক্‌দিগের সহিত সদ্ভাব রক্ষা একান্ত প্রয়োজন; কারণ ইংরাজদিগের মত অধিক মূল্য দিয়া দ্রব্যাদি ক্রয় করিবার সামর্থ্য তখনকার দিনে আর কাহারও ছিল না। নবাব-পুত্রীরা যে ব্যবসা-বাণিজ্য করিতেন, তাহা প্রতিপাদন করিবার জন্য নিম্নলিখিত ঘটনাটীর উল্লেখ করিলে যথেষ্ট হইবে।

 উমিচাঁদ নবাবের অতিশয় প্রিয়পাত্র ছিলেন। এক সময়ে তাঁহার কিছু আফিম ও সোরা আমিনা বেগমের আফিমের সহিত তাঁহার নৌকায় আসিতেছিল। নৌকাখানি সে সময় জলাঙ্গী নামক স্থানে অবস্থিতি করিতেছিল এবং ঐ সমস্ত দ্রব্যের বরাবর হুগলী পৌঁছিবার কথা ছিল। ধূর্ত্ত উমিচাঁদ নিজের দ্রব্যাদি বিলম্বে পৌঁছিলে তাহা আর বিক্রীত হইবে না ভাবিয়া, আমিনা বেগমের নৌকা হইতে জিনিসগুলি লইয়া, নিজের নৌকা করিয়া সত্বর চালান দিবার জন্য নবাবের অনুমতি প্রার্থনা করেন। নবাবও উমিচাঁদকে এই অনুমতি দিয়াছিলেন।

 আমিনা বেগম এই সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইয়া উমিচাঁদের এইরূপ আচরণে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। বাস্তবিক ক্রুদ্ধ হইবারই কথা, কারণ উমিচাঁদের দ্রব্যাদি অগ্রে বিক্রীত হইয়া গেলে, তাঁহার জিনিষগুলির বিক্রয়ের আর কোন আশা থাকিবে না—অপর পক্ষে সোরাগুলি কোন কারণে ভিজিয়া গেলেও সমূহ ক্ষতি হইবে। বেগম এই বিষয়টীতে প্রকারান্তরে তাঁহার পিতার দৃষ্টি আকর্ষণ করান, কিন্তু তাহাতে কোন ফলোদয় হয় নাই।[৬]

 ১৭৪৫ খৃঃ অব্দে মহা সমারোহে সিরাজের পরিণয়োৎসব সম্পাদিত হয়। বৃদ্ধ নবাব প্রিয়তম দৌহিত্রের বিবাহ স্মরণীয় করিবার জন্য কোন উৎসব-অনুষ্ঠানেরই ত্রুটি করেন নাই। বহুদিন পরে সিরাজের পিতা জৈনুদ্দীন মুর্শিদাবাদে পদার্পণ করেন।

 মহারাষ্ট্রীয়েরা এই সময় উপর্য্যুপরি বঙ্গভূমি আক্রমণ করিয়া বাঙ্গালার নবাবকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল। ভাস্কর পণ্ডিতের নৃশংস হত্যা তাহাদিগের ক্রোধানলে ইন্ধন সংযোেগ করাইয়া দিল। এই হত্যার প্রতিশােধ গ্রহণার্থ রঘুজী ভোঁসলে বিপুল বাহিনী লইয়া বাঙ্গালা আক্রমণ করেন।

 রঘুজীর সহিত যুদ্ধ-বিগ্রহকালে নবাব আলিবর্দ্দী, সমসের, সর্দ্দার খাঁ প্রভৃতি আফগান সেনাপতিদিগকে মহারাষ্ট্রীয়দিগের সহিত যড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকিতে দেখিয়া, তাহাদিগকে কর্ম্মচ্যুত করেন। আফগান সামন্তবর্গ মুস্তাফার পরাজয়ের পর হইতেই এক প্রকার বিদ্রোহিভাব ধারণ করিয়াছিল, তাহার উপর আবার এইরূপ অপমানিত হইয়া প্রতিশােধ গ্রহণের সুযােগ অনুসন্ধান করিতে লাগিল।

 “যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী”—ভাবনার অনুকূল সিদ্ধিলাভ হইয়া থাকে। পরবর্ত্তী ঘটনাবলী হইতে পাঠকগণ দেখিবেন, আফগানদিগের সিদ্ধিলাভ কি প্রকারে হইয়াছিল।

 সিরাজের বিবাহােৎসবে মুর্শিদাবাদে অবস্থানকালে, নওয়াজিস ও সৈয়দের ধন-রত্নের প্রতি জৈনুদ্দীনের লােলুপ-দৃষ্টি পড়ে। তিনি পাটনায় প্রত্যাগত হইয়া ভ্রাতৃদ্বয়কে অপর্য্যাপ্ত ধনশালী দেখিয়া, পাছে তাহারা নবাবের মৃত্যুর পরে অর্থবলে সৈন্য সংগ্রহ করিয়া, সিংহাসন অধিকার করিয়া বসে, এই আশঙ্কায় এক নূতন উপায় উদ্ভাবন করিলেন। সমসের খাঁ, সর্দ্দার খাঁ প্রভৃতি সদলে পদচ্যুত হইবার পরে দ্বারভাঙ্গায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। জৈনুদ্দীন ইঁহাদিগের সাহায্যে বলবৃদ্ধি ও ভবিষ্যতে রাজ্যলাভের সুবিধা হইবার সম্ভাবনা দেখিয়া, নবাবের নিকট আবেদন করেন যে, সমসের, সর্দ্দার প্রভৃতি যেরূপ দুর্দ্দান্ত, তাহাতে তাহাদিগকে রাজ্য হইতে বহিস্কৃত করিয়া দেওয়া সহজসাধ্য নহে। নবাব আদেশ দিলে তিন সহস্র সৈন্যসহ তাহাদিগকে বেহারের সৈন্যদলে অন্তর্নিবিষ্ট করা যায়। কিন্তু আজিমাবাদের রাজকোষ হইতে এত অতিরিক্ত লােকের ব্যয়ভার বহন করা সুকঠিন; অতএব বাঙ্গালা হইতে এই টাকার সাহায্য করা হউক। নবাব প্রথমতঃ এই প্রস্তাবে বিস্ময়াপন্ন হইয়া উঠেন, পরে অনেক বিবেচনার পর পাছে জৈনুদ্দীন দুঃখিত হ’ন এবং দেশের বর্ত্তমান অবস্থায় পুনরায় যদি কোনরূপ বিদ্রোহের সূচনা হয়, এই ভয়ে তাঁহার প্রস্তাব অনুমােদন করেন। জৈনুদ্দীন আফগান সামন্তদিগের নিকট এই প্রস্তাব উত্থাপিত করিয়া পাঠাইলে, তাহারা সানন্দে তাহাতে স্বীকৃত হইল। এইরূপে উভয় পক্ষের কথাবার্ত্তা স্থিরীকৃত হইলে, আফগানগণ গঙ্গার পরপারে পাটনার সম্মুখে আসিয়া জানাইলেন যে, তাঁহারা আবদুল করীম প্রভৃতির আকস্মিক হত্যার কথা স্মরণ করিয়া নবাব দরবারে আসিতে ভীত হইয়াছেন। জৈনুদ্দীন এই সংবাদ পাইবামাত্র পাত্র-মিত্রসহ আফগানদিগের বিশ্বস্ততা প্রতিপাদন ও তাহাদিগকে আপ্যায়িত করিবার মানসে তাহাদিগের নিকট উপস্থিত হইলেন। পরে আফগানগণের সহিত সমস্ত কথা স্থির হইয়া গেলে, নির্দ্ধারিত দিবসে আফগানেরা পাটনায় আসিয়া পৌছিলেন। দরবারের পূর্ব্বদিবসে সমসের ও সর্দ্দার খাঁ পাটনার প্রাসাদে উপস্থিত হইয়া জৈনুদ্দীনের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া গেলেন। পরদিন দরবার। জৈনুদ্দীন দরবারগৃহে উপবিষ্ট হইয়া আফগানদিগের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। এই সময়ে জৈনুদ্দীন তাহাদিগের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শনের জন্য যেমন স্বহস্তে তাম্বুল বিতরণ করিতে যাইবেন, এমন সময়ে একজন আফগান তাঁহাকে ছুরিকাঘাত করিল। জৈনুদ্দীন তৎক্ষণাৎ অসি-গ্রহণের চেষ্টা করিলেন, কিন্তু উহা নিষ্কাশিত করিবার পূর্ব্বেই তাঁহার মস্তক স্কন্ধচ্যুত হইয়া পড়িল। দরবার-গৃহ ও প্রাসাদের চতুর্দ্দিক এক্ষণে আফগানদল-বেষ্টিত; পাটনার নবাব-সৈন্য তাহাদিগকে বাধা দিতে পারিল না। সকলে আপন আপন প্রাণ রক্ষার্থ পলায়ন করিতে বাধ্য হইল। মুতাক্ষরীণকার গােলাম হােসেনের ভ্রাতা সৈয়দ আলি অন্তঃপুর মধ্যে পলায়ন করেন। এই সময়ে জৈনুদ্দীনের পত্নী আমিনা বেগম অন্তঃপুরের দ্বার রুদ্ধ করিবার অনুমতি প্রদান করায়, তাঁহার আদেশে তৎক্ষণাৎ দ্বার রুদ্ধ হইল। আমিনা সৈয়দ আলিকে নিজের উপায় দেখিতে বলিলেন। বিদ্রোহিগণ ধনরত্ন কোথায় লুক্কায়িত আছে জানিতে না পারিয়া, কোষাধ্যক্ষ হাজি অহম্মদকে নিষ্ঠুররূপে পীড়ন করিয়া হত্যা করে।[৭] পাটনার নবাবী-সম্পত্তি বিদ্রোহীদিগের হস্তগত হইল। আমিনা ও অন্যান্য বেগমকে বলপূর্ব্বক উন্মুক্ত গো-যানে আরােহণ করাইয়া সমসের খাঁর শিবিরে প্রেরণ করা হইল। পাটনায় হুলস্থূল পড়িয়া গেল।

 এই বিপদের সংবাদে আলিবর্দ্দী বিহ্বল ও কাতর হইয়া পড়িলেন। নবাবের চিরসহচর ভাগ্যলক্ষ্মী এবারও তাঁহার প্রতি বিমুখ হ’ন নাই— তিনি আফগান সর্দ্দারদিগকে সমরক্ষেত্রে নিপাতিত করিয়া, আমিনা বেগম প্রভৃতির উদ্ধার সাধন করেন।

 পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরিণাম কি হইয়াছিল, তাহা সকলেই অবগত আছেন—সে সকল কথার পুনরুল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়ােজন।

 মীরণের উপদেশানুসারে নির্ম্মম নিষ্ঠুর মহম্মদীবেগ সিরাজকে কারাগারে হত্যা করে। ইংরাজেরা প্রথমে শুনিয়াছিলেন যে, সিরাজের মুর্শিদাবাদ আগমনে সৈন্যগণের মধ্যে বিদ্রোহ উপস্থিত হইবার উপক্রম হওয়ায়, মীরণ তাঁহাকে হত্যা করেন। পরে তাঁহারা সিরাজের এইরূপ নিষ্ঠুর হত্যাব্যাপারের সমস্ত গূঢ় রহস্য জানিতে পারিয়াছিলেন।[৮] উল্লাসে-অধীর মীরণের আজ্ঞায় যখন সিরাজের খণ্ড-বিখণ্ডিত দেহ হস্তিপৃষ্ঠে করিয়া মুর্শিদাবাদের পথে পথে প্রদর্শিত হইতেছিল, তখন সিরাজের শত দোষ ভুলিয়া, লাঞ্ছিত অবিমৃষ্যকারী সিরাজের জন্য ব্যথিত হইয়া অশ্রু ফেলে নাই কে? আলিবর্দ্দীর প্রিয় দৌহিত্র—বাঙ্গালার শেষ হতভাগ্য নবাবের শােচনীয় পরিণাম অবলােকন করিয়া, ধন-জনযৌবন-গর্ব্বে-গর্ব্বিত সিরাজের দোষের তুলনায়, শাস্তির নিষ্ঠুরতা ও কঠোরতা দর্শনে স্তম্ভিত ও বিস্মিত হয় নাই কে?

 এইরূপ করিয়াও মীরণের আশা পূর্ণ হইল না। সিরাজ-জননীকে হতভাগ্যের অরুন্তুদ পরিণাম দেখাইবার জন্য যখন সিরাজদেহবাহি-হস্তী আমিনা বেগমের দ্বারদেশে উপনীত হইল, সেই সময় যে হৃদয়বিদারক দৃশ্য সংঘটিত হইয়াছিল, তাহা লেখনীতে ব্যক্ত করা যায় না। পুরমহিলারা অন্তঃপুর মধ্যে আবদ্ধ থাকায়, সিরাজ-জননী এই বিপ্লবের কিছুই অবগত ছিলেন না, কিন্তু এক্ষণে লােকমুখে সমস্ত ঘটনা জানিতে পারিয়া, দ্রুতপদে রাজপথে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পরে হস্তিপৃষ্ঠ হইতে মৃতদেহ নামাইয়া, বার বার মুখ চুম্বনপূর্ব্বক নিজবক্ষে করাঘাত করিতে লাগিলেন। যে সম্ভ্রান্ত কুল-মহিলা—দোর্দ্দণ্ডপ্রতাপ সিরাজজননীর চরণ কখন রাজবর্ত্ম স্পর্শ করিতে পারে নাই, সেই সিরাজ-জননী আমিনা আজ উন্মাদিনীর ন্যায় হস্তীর পশ্চাতে পশ্চাতে ছুটিতে লাগিলেন। কি হৃদয়-বিদারক দৃশ্য! পরে জনৈক সম্ভ্রান্ত মুসলমান নিজ প্রাসাদের উপর হইতে এই শােচনীয় দৃশ্য দেখিয়া, লােক পাঠাইয়া বলপূর্ব্বক আমিনাকে বাটীতে আনয়ন করাইলেন।

 মীরজাফর, আমিনা ও ঘসিটী বেগমকে বন্দী করিয়া মুর্শিদাবাদ হইতে জাহাঙ্গীর নগর (ঢাকায়) প্রেরণ করেন। বন্দিনী অবস্থায় তাঁহাদিগকে অশেষ যন্ত্রণা ভােগ করিতে হইয়াছিল। অসচ্চরিত্র নীচমনা মীরণ, আমিনা ও ঘসিটী বেগমদ্বয়ের উপর সন্দেহ উপস্থিত হওয়ায় এবং তাহারা জীবিত থাকিলে ভবিষ্যতে তাহার বিপদ হইবার সম্ভাবনা মনে করিয়া, জাহাঙ্গীর নগরের শাসনকর্ত্তা জেসারৎ খাঁকে তাঁহাদের বিনাশের জন্য বারংবার লিখিয়া পাঠান, কিন্তু সদাশয় জেসারৎ খাঁ এই নৃশংস ব্যাপারে অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে, মীরণ তাঁহার একজন বন্ধুর উপর এই অমানুষিক কার্য্য সমাধা করিবার ভার অর্পণ করেন এবং তাহাকে বলিয়া দিলেন যে, মুর্শিদাবাদে লইয়া যাইবার ছলে তাহাদিগকে একখানা নৌকায় চড়াইয়া কোন নির্জ্জন স্থানে নৌকাখানি ডুবাইয়া দিবে। যখন তাঁহারা সেই নির্জ্জন স্থানে আসিয়া পৌঁছিলেন, তখন তাঁহাদিগের আসন্ন পরিণামের কথা জানান হইল এবং তাঁহাদিগকে হস্তমুখাদি ধৌত করিয়া পবিত্র হইয়া বস্ত্রাদি পরিধান করিতে আদেশ করা হইল। ঘসিটী এই নিদারুণ বাণী শুনিয়া অশ্রু সংবরণ করিতে পারিলেন না; কিন্তু আমিনা তাঁহার দিকে ফিরিয়া তাঁহাকে শান্ত করিতে চেষ্টা করিলেন। পরে উভয়ে বস্ত্রাদি পরিধান পূর্ব্বক, করবলার মৃত্তিকা কপােলদেশে লেপন করিয়া, নিজেদের পাপের জন্য ভগবানের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। অতঃপর মীরণ-প্রেরিত দূতকে তাহার প্রভুর কথামত কার্য্য করিতে বলিলেন। তাহাকে সে কার্য্য করিতে ইতস্ততঃ করিতে দেখিয়া, আমিনা গম্ভীরস্বরে বলিতে লাগিলেন—“হে সর্ব্বশক্তিমান্ ঈশ্বর! আমরা উভয়েই পাপী ও দোষী, কিন্তু আমরা মীরণের নিকট কোন অপরাধেই অপরাধী নহি; বরং আমরা তাহার মঙ্গলের নিমিত্ত সতত প্রয়াস পাইয়াছি, কিন্তু তাহার নিকট হইতে এই নিষ্ঠুর দণ্ডাজ্ঞা ব্যতীত আর কিছুই পাইলাম না। সেই জন্য, আমরা আশা করি, আমাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণার্থ পাপিষ্ঠের পাপ-মস্তক চূর্ণ করিবার জন্য আপনার বজ্র প্রেরণ করিবেন।”[৯]

 ইহার পর দুই ভগিনী রেকাত নমাজ পাঠ করিয়া, কুক্ষিতলে কোরাণ সরিফ ধারণ পূর্ব্বক নদীবক্ষে ঝম্প প্রদান করিয়া সর্ব্ব যন্ত্রণা হইতে বিমুক্ত হইলেন।[১০] প্রবাদ আছে, সেই রাত্রিতেই না কি বজ্রাঘাতে মীরণ মৃত্যুমুখে পতিত হইয়াছিল।

 আমিনা জীবন-মরণের সন্ধিস্থলে আসিয়া, ভগবানের উদ্দেশে যে সকল কথা বলিয়াছেন, তাহা হইতে স্পষ্ট বুঝা যায়, অনুতাপানলে তখন তাঁহার হৃদয় পবিত্র হইয়াছে—স্বর্ণের যেটুকু মলিনত্ব, যেটুকু মলামাটি ছিল, তাহা দূর হইয়াছে—পাপের কালিমা ঘুচিয়া গিয়াছে—ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা আসিয়াছে—জীবনের প্রতি মায়া নাই, মমতা নাই—ঘসিটির মত নারীজনোচিত দুর্ব্বলতার তিনি বশবর্ত্তিনী হ’ন নাই—তাঁহার নয়ন বহিয়া অশ্রুও প্রবাহিত হয় নাই। শোভন আল্লার ন্যায়-বিচারে যাহার সম্পূর্ণ বিশ্বাস, তাহার আবার মরণ ভয়? মরণ ত সুখের—মরণই অক্ষয় অনন্ত অমৃতের সন্ধান করিয়া দেয়—মরণই শাশ্বত সুখের পন্থা দেখাইয়া দেয়—ভক্তিমতী অনুতাপানলে শুদ্ধান্তঃকরণা আমিনা সেই আনন্দ পাইবার জন্য লালায়িত—তাই আজ তাঁহার নিকট মরণ কত সুখের—সেই সুখ-আশায় আজ তাঁহার হৃদয় আনন্দোৎফুল্ল। পাপীর মরণের বড় ভয়—মরণের পর সে কোন্ অজ্ঞাতদেশে কোন্ বিরাট্ মহিমময় পুরুষের সম্মুখে দণ্ডায়মান হইয়া, আপনার দুষ্কৃত কার্যের ফলভােগ করিবে ভাবিয়া অস্থির হয়—আমিনার সে ভয় আজ নাই, তাই বলিতেছিলাম আমিনার মুখে মরণ ভীতির চিহ্ণ নাই—বাক্যে বা কার্য্যেও তাহাই প্রকাশ পাইতেছে—তাহার হৃদয়ােত্থিত প্রার্থনায় তাহাই সূচিত হইতেছে। তাই মীরণ-প্রেরিত দূত কি করিয়া অসহায়া দুর্ব্বলা বেগমদিগকে নিমজ্জিত করিবে ভাবিয়াই স্থির করিতে পারিতেছে না—তখন তাহার নিকট প্রাণ ভিক্ষা চাহিলে—অর্থের প্রলােভন দেখাইলে—সে যে মিথ্যা কথা বলিতে পারিত না, তাহা বোধ হয় না; কিন্তু বেগমেরা তাহা করেন নাই—আমিনার মহত্ত্বও এইখানে— আর তাই ভক্তের ভগবান্ নিরপরাধ রমণীদের শান্তির জন্য তাহাদের প্রদত্ত অভিসম্পাত দ্বারা মীরণের মৃত্যু সংঘটিত করিয়াছিলেন।

  1. অর্ম্মে (Indostan-ii-34) আলিবর্দ্দীর কেবল এক কন্যার উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু মুতাক্ষরীণকার (i-304) ও মিল সাহেব (Mill's History of British India iii.—161) তাঁহার তিন কন্যার কথা লিখিয়াছেন।
  2. Bibliotheque Nationale এর ২১০ সংখ্যক পুঁথিতে ও হস্তলিখিত পারস্য ইতিহাস “তারিখ-ই-বঙ্গালা”য় ময়মনা নামের উল্লেখ আছে। ময়মনা নামটী প্রায় ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায় না।
  3. Braidley Birt তাঁহার “Romance of an Eastern Capital” পুস্তকের ২১৪ পৃষ্ঠায় ভ্রমক্রমে সৈয়দ অহম্মদকে আমিনার স্বামী বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।
  4. “It may be. If he has anything left, let him keep it. His sufferings have been great. He shall have his liberty”—A letter from J. Z. Holwell Esq. to W. Davis Esq. from on board the ‘Syren’ sloop, 28th February 1757. S. C. Hill—Indian Records Series: Bengal.
  5. Translation of a letter from M. Le Conte to M. Courtin at Dacca, dated Chundernagore, 19th June, 1756” - Indian Records Series: Bengal.-1—20.
  6. “Letter from Dr. Forth to Mr. Drake at Fulta dated Chinsurah 16th December, 1756”-Indian Records Series: Bengal—ii-63-64,
  7. অর্ম্মে (ii—41) লিখিয়াছেন—জৈনুদ্দীনের স্ত্রী আমিনা বেগম, স্বীয় শ্বশুরের দুর্গতি দেখিতে না পারিয়া, বিষ-প্রদানে তাঁহার যন্ত্রণা মােচন করেন।
  8. Scrafton's “Reflections”-P. 94.
  9. Eliott-viii-429.
  10. রিয়াজ-উস-সলাতিন—শ্রীরামপ্রাণ গুপ্ত। পৃঃ ৩৬৪।
     হলওয়েল কিন্তু এই মত পোষণ করেন না। তাঁহার মতে—“মির্জ্জাফর ১৭৬০ খৃষ্টাব্দের জুন মাসে ঘসিটি ও আমিনা বেগম প্রভৃতি সম্রান্ত মহিলাবর্গকে ঢাকার রাজ-কারাগারে হত্যা করাইয়াছিলেন।” (Long's Selections from the Records of the Govt. of India vol. I) কিন্তু তিনি এই মত সমর্থনার্থ কোন প্রমাণাদির উল্লেখ করেন নাই।