ঘোসেটি বেগম।

ঘসিটী

 সৌন্দর্য্যের ললামভূতা, কারুণ্যের প্রতিমূর্ত্তি, অলােকসামান্যা ইতিহাস-বিশ্রুতা ঘসিটী বেগম,[১] বাঙ্গালার নবাব আলিবর্দ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা। ইঁহার সহিত সিরাজের শোণিত-সম্বন্ধ চতুর্ব্বিধ। তিনি সিরাজের মাতৃস্বসা, পিতৃস্বসা, পিতৃব্যপত্নী এবং মাতুলানী। মুসলমান-সমাজের অনুমােদিত বিবাহ প্রথা অনুসারে যে কোনও ব্যক্তি এইরূপ সম্বন্ধে আবদ্ধ হইতে পারে। সিরাজের সহিত ঘসিটী বেগমের এইরূপ ঘনিষ্ট সম্বন্ধ ছিল বলিয়া কিংবা তাঁহার সহিত সিরাজের বিষয়ি-জনােচিত বিবাদ-বিসংবাদ ঘটিত বলিয়াই যে তাঁহার নাম ইতিহাসের পত্রে স্থান পাইয়াছে, তাহা নহে; ভারতে ইংরাজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকল্পে তাঁহার রাজনৈতিক কার্য্যকলাপই তাঁহাকে চিরস্মরণীয় করিয়া রাখিয়াছে।

 আলিবর্দ্দী খাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হাজি অহম্মদের প্রথম পুত্র নওয়াজিস মহম্মদের সহিত ঘসিটী বেগম পরিণীতা হ’ন। প্রথম জীবনে নওয়াজিস কিছু দুর্দ্দান্ত ও উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন বলিয়াই যে তিনি জনসাধারণের অপ্রিয় ছিলেন, এমন নহে। তাঁহার দানশীলতা ও পরদুঃখকাতরতার জন্য। প্রজাবর্গ তাঁহাকে আন্তরিক ভক্তি করিত। অপরিমেয় ধনরত্নের অধিকারী অপুত্রক নওয়াজিস সিংহাসনের প্রত্যাশা করিতেন না। সিরাজের মধ্যম ভ্রাতা ফজলকুলি খাঁকে তিনি পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই ফজল্‌কুলিই তাঁহার জীবনের একমাত্র অবলম্বন ছিল।

 সিরাজের পিতা জৈনুদ্দীন ১৭৪৭ খৃঃ অব্দে আফগানগণ কর্ত্তৃক নিহত হন। এই সময়ে আলিবর্দ্দীর জ্যেষ্ঠভ্রাতা হাজি অহম্মদেরও মৃত্যু হয়। ১৭৫২ খৃষ্টাব্দে আলিবর্দ্দী খাঁ, অন্য দুই ভ্রাতুষ্পত্রের দাবী উপেক্ষা করিয়া, দৌহিত্র সিরাজকেই রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী বলিয়া সর্ব্বসমক্ষে ঘোষণা করেন। ইহার পর হইতেই নওয়াজিসের মন্ত্রী হোসেনকুলি খাঁ সিরাজের প্রতিকূলতাচরণ করিতে আরম্ভ করিলেন। এই সময়ে ফজল্ কুলি খাঁর অকালমৃত্যুতে নওয়াজিস জীবন্মৃতবৎ অবসন্ন হইয়া পড়িলেন। রাজনৈতিক ব্যাপারে তাঁহার যোগদান করিবার অভিলাষ সে সময় আদৌ ছিল বলিয়া বোধ হয় না। ১৭৫৫ খৃঃ অব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হ’ন।[২]

 বহুল সদ্‌গুণে ভূষিত হইলেও, ঘসিটী-চরিত্রে দুর্ব্বলতা ছিল। স্ফুটনোন্মুখ কুসুমে কীটের ন্যায়, যৌবনোদ্গমে তাঁহার ও হৃদয়-কোরকে কীট প্রবেশ করিয়াছিল। বাল্যকালাবধি সংযম-শিক্ষার অভাবে ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় পড়িয়া, মদালসা ঘসিটী হোসেনকুলিকে আত্মবিক্রয় করিয়াছিল। পত্নীর কলঙ্কের কথা জানিতে পারিয়া, নওয়াজিস মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্ব্বেই হোসেনকুলি খাঁকে ধরাধাম হইতে অপারিত করিবার জন্য লোক নিযুক্ত করিয়াছিলেন।

 ঘসিটীর কলঙ্ক-কাহিনী সিরাজকে মর্ম্মাহত করিয়া তুলিয়াছিল। এই দুরপনেয় কলঙ্ক-কালিমা বিদূরিত করিবার জন্য, তিনি হোসেন কুলিকে হত্যা করাইলেন—সঙ্গে সঙ্গে তাঁহার ভ্রাতা হসনুদ্দীনও নিহত হইলেন। উপর্য্যুপরি এই সমস্ত হত্যাব্যাপারে অতিমাত্র শঙ্কিত হইয়া, সিরাজের পিতৃব্য সৈয়দ অহম্মদ পূর্ণিয়ায় পলায়ন করেন; কিন্তু পলায়ন করিয়া কে কবে নিয়তির হস্ত হইতে অব্যাহতি পাইয়াছে? পূর্ণিয়াতে পৌছিবার অত্যল্পকাল পরেই তাঁহার মৃত্যু হয়।[৩] ইতিপূর্ব্বে নওয়াজিসেরও মৃত্যু হইয়াছিল। সুতরাং বংশের মধ্যে সিরাজকে বাধা দিবার দুইজন মাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জীবিত রহিলেন। প্রথম— ঘসিটী বেগম। স্বামী ও প্রেমাস্পদ হোসেনকুলির মৃত্যুতে কক্ষচ্যুত গ্রহের ন্যায় তিনি ঘুরিতে লাগিলেন, অবশেষে ফজল্‌কুলি খাঁর শিশুপুত্র মুরাদদ্দৌলাকে পালিতপুত্ররূপে গ্রহণ করিয়া, হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা তাহারই উপর কেন্দ্রীভূত করিলেন ও তাহাকে তাঁহার স্বামীত্যক্ত বিপুল ধনরাশির উত্তরাধিকারী বলিয়া প্রচার করেন। মুরাদকে বাঙ্গালার মসনদে বসাইবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। দ্বিতীয়— সৈয়দ অহম্মদের পুত্র পূর্ণিয়ার শাসনকর্ত্তা সওকৎজঙ্গ। আলিবর্দদী খাঁ এই দুইজনকে স্ববশে আনিবার জন্য, তাঁহার বক্সী মীরজাফর আলি খাঁ ও দেওয়ান রায় দুর্ল্লভকে হস্তগত করিয়াছিলেন। রায়দুর্ল্লভকে তিনি উপঢৌকন দ্বারা এবং মীরজাফরকে কোরাণ সরিফ স্পর্শ করাইয়া শপথপূর্ব্বক সিরাজের পক্ষাবলম্বন করাইয়াছিলেন। ঘসিটির সহিত সিরাজের যাহাতে কোন সংঘর্ষ না ঘটে, তজ্জন্য আলিবর্দ্দী খাঁ বিশেষরূপ চেষ্টা করিয়াছিলেন। এই সময় ৮২ বৎসর বয়ঃক্রমকালে উদরীরােগে নবাবের মৃত্যু হয়।

 নবাবের মৃত্যুর অনতিকাল পূর্ব্ব হইতেই বাঙ্গালার শাসনভার সিরাজের হস্তে ন্যস্ত হইয়াছিল। নওয়াজিস মহম্মদের সহিত বহুদিবসের মনােমালিন্য ও শত্রুতার প্রতিশোধ গ্রহণার্থ, সিরাজ তাঁহার বিধবাপল্লী ঘসিটি বেগমের সহিত বিবাদ বাধাইবার সূত্র অনুসন্ধান করিতেছিলেন। তাঁহার যাবতীয় ধন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাই সিরাজের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। ছিদ্রান্বেষীর ছিদ্রের অভাবও হইল না। তিনি শীঘ্রই জানিতে পারিলেন যে, মীরনাজির গালি নামক একজন রাজকর্ম্মচারী বেগম সাহেবার বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রিয়পাত্র। তিনি মনে মনে স্থির করিলেন, এই নাজির আলিকে উপলক্ষ করিয়াই ঘসিটির সহিত বিবাদ ঘটাইতে হইবে। এক্ষণে এই নাজির আলির বিরুদ্ধে কোন গুরুতর অভিযােগ আনয়ন পূর্ব্বক তাহার শাস্তির নিমিত্ত বেগম-সাহেবার নিকট অনুরােধ করিয়া পাঠাইতে পারিলে হয় ত তিনি কৃতকার্য্য হইতে পারেন। এই নাজির আলির পক্ষে অশুভকর কোন প্রস্তাব উত্থাপিত করিলে, ঘসিটি কিছুতেই তাহাতে সম্মত হইবেন না, তখন সেই সূত্রে তিনি তাঁহার মনােগত বৈরিতা প্রকাশ্যভাবে চরিতার্থ করিবার সুযােগ ও অবসর পাইবেন। এইরূপ চিন্তা করিয়া তিনি ঘসিটি বেগমকে রলিয়া পাঠাইলেন যে, মীরনাজির আলি গােপনে তাঁহার বিলাসকক্ষে যাতায়াত করিয়া থাকে, এরূপ জনরব নগরময় রাষ্ট্র হইয়া পড়িয়াছে। ইহা অমূলক হইলেও বেগম-সাহেবার চরিত্র-মর্য্যাদায় হানিকর ও রাজবংশের পক্ষে ঘােরতর কলঙ্কের কথা; সুতরাং অবিলম্বে ঐ পাপিষ্ঠের ছিন্ন-মুণ্ড আমার নিকট প্রেরণ করিয়া এই জনরবের মূলােচ্ছেদ করা বিধেয়। বলা বাহুল্য ঘসিটি এ প্রস্তাবে কর্ণপাত করিলেন না। এখন হইতে সিরাজ ও ঘসিটি উভয়ের মধ্যে বিবাদনল প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল। বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দ্দী তখন জীবিত; তিনি এই বহ্নিশিখা নির্ব্বাপিত করিতে প্রাণপণে চেষ্টা করিয়াছিলেন; কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।

 এই ঘটনার পর হইতেই ঘসিটি বেগমের ধারণা হইল যে, পিতার মৃত্যুর পর সিরাজ মসনদে উপবিষ্ট হইয়া নিশ্চয়ই তাহার উপর অত্যাচার করিবে ও সমস্ত ধনসম্পত্তি বলপূর্ব্বক আত্মসাৎ করিবে। এই আশঙ্কাবশতঃ ঘসিটি বেগম রাজা রাজবল্লভ, মীর নাজির আলি ও কতিপয় বিশ্বস্ত অনুচর সমভিব্যাহারে মুর্শিদাবাদের সন্নিকটে মতিঝিল প্রাসাদে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন। পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে যে, ফজল্‌কুলি খাঁর শিশুপুত্র মুরাদুদ্দৌলাকে সিংহাসনে বসাইবার জন্য ঘসিটি বিশেষ চেষ্টা করেন। এই কারণেই হউক, অথবা স্বীয় সম্পত্তি সংরক্ষণের নিমিত্তই হউক, তিনি আট দশ হাজার সৈন্যও সংগ্রহ করিয়াছিলেন। এই সমস্ত উদ্যোগ-আয়ােজন বিষয়ে তাঁহার পরলােকগত স্বামীর বিশ্বস্ত দেওয়ান, ঢাকার রাজা রাজবল্লভ তাঁহার প্রধান সহায় ছিলেন।

 নওয়াজিসের মৃত্যুর পর, সিরাজ রাজা রাজবল্পতকে বন্দী করিয়া, তাঁহার প্রভুর ধনসম্পত্তি কোথায় লুক্কায়িত আছে, তাহার সন্ধান লইবার চেষ্টা করেন; কিন্তু রাজবল্লভ অবিচলিত ভাবে সমস্ত নির্য্যাতন সহ্য করিয়াও প্রভু-পত্নীর পক্ষে অনিষ্টকর একটী কথাও প্রকাশ করেন নাই। এইরূপে কিছুদিন নজরবন্দী থাকিবার পর, ঘসিটি তাঁহার পিতামাতাকে উপরোধ করিয়া, রাজবল্লভকে মুক্ত করিয়া দেন; কিন্তু রাজবল্লভের মনে সিরাজভীতি জাগিয়া রহিল। সিরাজ নবাব হইলে তাঁহাকে কখনও মার্জ্জনা করিবেন না, এই আশঙ্কায় রাজবল্লভ ঘসিটি বেগমের সহিত সম্মিলিত হইয়া, সিরাজের উচ্ছেদ সাধনের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন।

 নবাবের মৃত্যু আসন্ন ও তাঁহার নিজের পরিবারবর্গ ও বিষয়সম্পত্তি সংরক্ষণ সহজ নহে বুঝিতে পারিয়া, রাজবল্লভ সর্ব্ব প্রথমেই তৎসমুদয় কোন নিরাপদ স্থানে রাখিতে যত্নবান হইলেন। তদনুসারে তিনি ইংরাজদিগের কাশিমবাজারস্থ প্রধান কর্ম্মচারী ওয়াট্‌স্ সাহেবকে এই মর্ম্মে একখানি পত্র লিখিলেন যে, তাঁর পরিবারবর্গ ঢাকা হইতে জগন্নাথদেব দর্শন-মানসে পুরী যাইতেছেন, পথিমধ্যে কলিকাতায় কিছুদিন অপেক্ষা করিবেন। অতএব যখন তাঁহারা কলিকাতায় উপস্থিত হইবেন, তখন তাঁহাদের উপযুক্তরূপ অভ্যর্থনা বা সমাদরের যেন বিন্দুমাত্র ত্রুটি না ঘটে।

 রাজা রাজবল্লভের বাসস্থান ঢাকা নগরীতে। সেখানে তিনি একজন গণ্যমান্য প্রতিপত্তিশালী লোক ছিলেন। ব্যবসায় সুত্রে ঢাকার সহিত ইংরাজদের সংস্রব ছিল। রাজবল্লভের তুষ্টিসাধন করিতে পারিলে, তাঁহাদের ব্যবসার বিশেষ সুবিধা হইতে পারে। অধিকন্তু সিরাজ তাঁহাদের শত্রু, সেই সিরাজ যাহাতে মসনদ না পান, সে জন্য ঘসিটি বেগম চেষ্টা করিতেছেন, সেই চেষ্টা ফলবতী হইবার ও কতকটা সম্ভাবনা এবং রাজবল্লভ ঐ সিটিরই দেওয়ান। সতরাং ইংরাজগণ অবিলম্বে রাজবল্লভের প্রস্তাবে সম্মত হইলেন এবং তাঁহার পরিবারবর্গ কলিকাতায় পৌঁছিলে সমাদরে তাঁহাদিগকে আশ্রয় দিয়া রক্ষা করিতে লাগিলেন।

 সিরাজের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সওকৎজঙ্গ, বহুদিন হইতে বাঙ্গালার মসনদ প্রাপ্তির আশা হৃদয়ে পােষণ করিতেছিলেন। যে দিন আলিবর্দ্দী খাঁ সিরাজকে আপন উত্তরাধিকারী বলিয়া নির্দ্দেশ করেন, সেই দিন হইতেই ইঁহার অন্তঃকরণ ঈর্ষাবিষে জর্জ্জরিত হইতেছিল। স্বার্থের হিসাবে ইনিও ঘসিটি বেগমের প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু উভয়েরই অভীষ্টলাভের পথে সিরাজ একমাত্র অন্তরায়। সেইজন্য সমান-বিপদগ্রস্ত বলিয়াই সিরাজের বিরুদ্ধে মিলিত হন। বৃদ্ধ নবাবের মৃত্যুর পর মুহূর্ত্তেই সিরাজ বাঙ্গালার নবাব হইলেন বলিয়া রাজ্যমধ্যে ঘােষণা দেওয়া হইল এবং পরদিনই তিনি মতিঝিল আক্রমণ করিয়া এরূপ কৌশলে অবরােধ করিলেন যে, বাহির হইতে প্রাসাদ-মধ্যে প্রবেশের আর কোনরূপ সম্ভাবনামাত্র রহিল না। প্রাসাদের বেষ্টন-পরিখার উপর যে ঘাসের আস্তরণ বিস্তৃত ছিল, তাহাতে অগ্নিসংযােগ পূর্ব্বক চতুর্দ্দিকে গােলন্দাজ সৈন্য সংস্থাপিত করিলেন। পূর্ণিয়ার নবাবের নিকট হইতে যে সৈন্যসাহায্য অসিবার কথা ছিল, তাহাও এ সময়ে আসিয়া পৌঁছাইতে না পারায়, ঘসিটি কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন এবং এই আকস্মিক দুর্গ অবরােধ সংবাদ তিনি সওকৎজঙ্গকে দিবার অবকাশ পাইলেন না।

 এই কারণে দুর্গস্থিত সৈন্যগণ এক প্রকায় হতাশ হইয়া পড়িল এবং তৃতীয় দিবসের রাত্রিযোগে সকলেই দুর্গ পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল। এই অবস্থায় আলিবর্দ্দী-বেগম তাঁহার কন্যাকে সিরাজের শরণাপন্ন হইতে সম্মত করাইবার জন্য সেই দুর্গপ্রাসাদে প্রবেশ করিলেন এৱং সিরাজের হস্তে তাঁহার ধনসম্পত্তিও অক্ষুন্ন থাকিবে ইত্যাদি অশ্বাসবাক্যে তাঁহাকে নিশ্চিন্ত করিতে লাগিলেন। ঘসিটি বেগম বলিলেন যে, যদি তাঁহার বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী নাজির আলিকে অক্ষত দেহে নিরাপদে বাঙ্গালা পরিত্যাগ করিয়া যাইতে দেওয়া হয়, তাহা হইলে তিনি সমস্ত প্রস্তাবেই সম্মত হইয়া আত্মসমর্পণ করিবার জন্য প্রস্তুত। নবার তাহাতেই সস্মত হইলেন এবং তাঁহাকে রক্ষি-সমভিব্যাহারে রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশে পৌঁছাইয়া দিতে আদেশ করিলেন। নাজির আলি আত্মপ্রাণ রক্ষার্থ সমস্ত মায়া কাটাইয়া বাঙ্গালা পরিত্যাগ করিয়া গেলেন। জনশ্রুতি যে, তিনি মােগলরাজধানী দিল্লীতে গিয়া লােকজন সংগ্রহ করিয়াছিলেন।

 সিরাজ ও ঘসিটি বেগমের মধ্যে যে মনােমালিন্য ঘটিয়াছিল, মীরনাজির আলি খাঁর বাঙ্গালাত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে তাহা বিদূরিত হইল। বেগমপক্ষীয় সেনাপতিগণ নবাবের বশ্যতা স্বীকার করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন। পর দিবস নবাব ঐ দুর্গ-প্রাসাদ দখল করিয়া, বেগমকে তাঁহার নিজের অন্তঃপুরে পাঠাইয়া দিলেন এবং মতিঝিলে বেগমের যে অপর্যাপ্ত অর্থরাশি ছিল, তৎসমুদয় সংগ্রহ পূর্ব্বক রাজকোষভুক্ত করিলেন। শুনা যায়, ঐ অর্থের পরিমাণ প্রায় ত্রিশ কোটী রৌপ্যমুদ্রা।

 মীরনাজির আলির বাঙ্গালা পরিত্যাগের সঙ্গে সঙ্গেই শান্তি সংস্থাপিত হইল বটে, কিন্তু এই নিস্তব্ধতা একটা আসন্ন ঝটিকার ভীষণ সূচনামাত্র। সিরাজ ঘসিটির ধনসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিলে বেগম-সাহেবা ইংরাজের শরণাগত হইলেন। ইংরাজেরা বহু পূর্ব্ব হইতেই সিরাজের প্রতি বিরূপ ছিলেন এবং প্রতিকূলতাচরণের সুযােগ অন্বেষণ করিতেছিলেন। তাঁহারা সানন্দে এ সুযােগের সদ্ব্যবহার করিতে মনস্থ করিলেন ও বেগমকে কলিকাতায় আশ্রয় দিয়া, তাঁহার ধনরত্নাদি রক্ষণাবেক্ষণ করিতে লাগিলেন। রাজবল্লভকে হস্তগত করিবার জন্য তাঁহাকেও আশ্রয় দিলেন এবং শুনিতে পাওয়া যায় যে, পূর্ণিয়ার নবাবের সঙ্গেও না কি তাঁহাদের একটা বন্দোবস্ত হইয়াছিল। পক্ষান্তরে ইংরাজগণ আলিবর্দ্দীর রাজত্বকালে অনেক গর্হিত কার্য্য করিয়া, সিরাজের বিরাগভাজন হইয়াছিলেন। তাঁহারা বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে, সিরাজ নবাব হইলে তাঁহাদিগকে বিশেষ অসুবিধা ভােগ করিতে হইবে। এই জন্য ইংরাজেরা তাঁহার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন। এই ষড়যন্ত্রের কথা সিরাজের কর্ণগােচর হইয়াছিল বলিয়াই ইংরাজের বিরুদ্ধে তাঁহার সৈন্য়চালনা, কলিকাতা- আক্রমণ, কলিকাতার দুর্গে সিরাজ-হস্তে ইংরাজগণের নির্যাতন ভােগ, ইত্যাদি কাণ্ড সংঘটিত হয়।

 সিরাজ নবাব হইয়াই পাটনার রাজা রামনারায়ণের সহিত কর্ম্মনাশা নদী সম্বন্ধে আবশ্যক কথাবার্ত্তাদি কহিবার জন্য সহরের তিন মাইল দূরে শিবির সন্নিবেশ করিলেন এবং তাঁহার সহিত মিলিত হইবার জন্য যাত্রার আয়ােজন করিতে লাগিলেন। এমন সময় তিনি শুনিলেন যে, পাঠানেরা তাঁহার অধিকারে লুটপাট আরম্ভ করিয়াছে, সুতরাং তাঁহার আর পাটনা যাওয়া হইল না—তিনি সেই সমস্ত সৈন্য লইয়াই পাঠানগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান করিলেন। সেই সময় তিনি শুনিলেন, ইংরাজেরা ঘসিটি বেগমকে আশ্রয় দিয়া, নবাবের কোপ হইতে আত্মরক্ষার নিমিত্ত কলিকাতার চতুর্দ্দিকে পরিখা খনন করিতেছেন। এই সংবাদ শ্রবণে অতিমাত্র ক্রুদ্ধ হইয়া, সিরাজ ইংরাজগণকে বলিয়া পাঠাইলেন যে, যদি তাঁহারা পরিখা-খননকার্য্য স্থগিত না রাখেন, তাহা হইলে তিনি স্বয়ং কলিকাতায় উপস্থিত হইয়া তাঁহাদিগকে তাঁহার আদেশ পালনে বাধ্য করাইবেন।

 এই ঘটনার কিছুদিন পূর্ব্বে সিরাজ সওকৎজঙ্গকে তাঁহার অধীনতা স্বীকার করিবার জন্য পূর্ণিয়ায় এক শিরােপা প্রেরণ করেন। সওকৎজঙ্গ সে শিরােপা ফেরৎ দিয়া বলিয়া পাঠান যে, আলিবর্দ্দী খাঁ মৃত্যুকালে বলিয়া গিয়াছেন, পূর্ণিয়া স্বাধীন রাজ্য; উহা সিরাজের অধীন নহে। ইহাতে সিরাজ সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়াছিলেন; তৎপরে তিনি যখন শুনিলেন যে, সওকৎজঙ্গ ঘসিটি বেগমকে পনের হাজার সৈন্য সাহায্য করিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন এবং তাঁহার উচ্ছেদ সাধনার্থ ইংরাজের সহিত ষড়যন্ত্র করিতেছেন, তখন তাঁহার ক্রোধের পরিসীমা রহিল না। তিনি সওকৎজঙ্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করিলেন; কিন্তু রাজমহলের পার্ব্বত্যপ্রদেশে পৌঁছিবার পর তাঁহার সেনাপতিগণ আর অগ্রসর হইল না। সকলেই সমস্বরে বলিল, সম্মুখে বর্ষাকাল—শীঘ্রই পথঘাট দুর্গম হইয়া উঠিবে, তখন প্রত্যাবর্ত্তন করা অতীব দুরূহ হইয়া পড়িবে। অগত্যা সিরাজ কৌশলক্রমে সওকৎজঙ্গকে নিকটে আনাইয়া হত্যা করিবার অভিপ্রায়ে তাঁহাকে বলিয়া পাঠাইলেন—“তুমি আমার নিকটে আসিয়া আমার প্রভুত্ব স্বীকার কর।” সওকৎ সিরাজের দুরভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া প্রত্যুত্তরে জানাইলেন—“আমি তােমার প্রভুত্ব স্বীকার করিলাম, কিন্তু বর্ষাকাল উপস্থিত হওয়াতে তােমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিলাম না।”

 রাজমহলে অবস্থান কালে সিরাজ শুনিলেন যে, ইংরাজেরা তাঁহাকে হত্যা করিয়া অপর কোন ব্যক্তিকে সিংহাসন দিবার চেষ্টা করিতেছেন এবং ঘসিটি ও সওকৎজঙ্গ সেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। কেহ কেহ বলেন যে, সিরাজ দূতমুখে ইহা জানিতে পারিয়াছিলেন। আবার অনেকে বলিয়া থাকেন যে, বেলি নামক কাশিমবাজারস্থ একজন ইংরাজ কর্ম্মচারী এই সংবাদ প্রচার করেন। এই দুইটির মধ্যে কোন্‌টী সত্য, তাহার বিচার নিষ্প্রয়ােজন। তবে একথা নিঃসন্দেহ যে, ইংরাজের মাথার উপর দিয়া যে ঝটিকা প্রবাহিত হইয়াছিল, রাজমহলেই তাহায় মেঘ দেখা দিয়াছিল।

 ইহার পর ইংরাজের সহিত সিরাজের যে সকল যুদ্ধ হয়, মুর্শিদাবাদে যে যুগান্তরকারী নাটকের অভিনয় হয়, কলিকাতার দুর্গে ইংরাজেরা সিরাজের হস্তে যে সকল নিগ্রহ ভােগ করেন, তৎসমুদয়ের সহিত প্রত্যক্ষ্যভাবে ঘসিটি বেগমের কোন সম্বন্ধ নাই; কিন্তু পরােক্ষভাবে ঐগুলির সহিত বেগমের সম্বন্ধ আছে; কাজেই এস্থলে সে সকল ঘটনার কিছু কিছু উল্লেখ করা নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিক হইবে না।

 ঘসিটি বেগমের পরলােকগত স্বামীর দেওয়ান রাজল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে আশ্রয় দেওয়াই ইংরাজের সহিত সিরাজের সঙ্ঘর্ষের প্রধান কারণ বলিয়া অনেকে নির্দ্দেশ করেন; ইহা যে নিতান্ত অমূলক তাহা নহে; কারণ এই ঘটনার পরে ভারতীয় ইংরাজ কর্ম্মচারীদিগের সহিত বিলাতের ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর বাের্ড অব ডাইরেক্টারদিগের যে সকল পত্র-ব্যবহার হইয়াছিল, ঐ সকল পত্রের উত্তর- প্রত্যুত্তরে ইংরাজের মুখেই তাহা ব্যক্ত হইয়াছে।

 আমিনা-চরিত্র বিবৃতি কালে ঘসিটির শোচনীয় পরিণামের কথা আমরা উল্লেখ করিয়াছি, এক্ষণে হলওয়েল সাহেব ১৭৬০ খৃঃ অব্দে কলিকাতা হইতে মুরাদাবাদে ওয়ারেণ হেষ্টিংশ সাহেবকে ঘসিটির পরিণামের যে অমানুষিক চিত্র অঙ্কিত করিয়া পত্র বিখিয়াছিলেন, নিম্নে আমরা তাহার মর্ম্মানুবাদ করিয়া দিলাম।

 পলাশীর যুদ্ধের পর ঘসিটি ও আমিনা বন্দিনী হইয়া ঢাকায় প্রেরিত হন। মীরজাফর আলিবর্দ্দীর বংশের উচ্ছেদসাধনার্থ ঢাকার শাসনকর্ত্তা জেসারৎ খাঁকে তাঁহাদিগের বিনাশের জন্য লিখিয়া পাঠাইলেন। এই পত্র পাইয়া জেসারৎ খআঁ কিংকর্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেন। যাঁহাদের অন্নে লালিত-পালিত হইয়াছেন—যাঁহাদের কৃপায় উন্নতির চরমসীমায় উপনীত হইয়াছেন, তাঁহাদিগকে হত্যা করিতে হইবে—সেই দয়াল আলিবর্দ্দীর পরিবারবর্গের আবাল্য ঋণের প্রতিশােধ এইরূপে লইতে হইবে, ভাবিয়া শিহরিয়া উঠিলেন। স্থির করিলেন, নৃশংস মীরজাফরের অন্ন গ্রহণ না করিয়া, প্যাগম্বরের নাম লইয়া ফকিরী গ্রহণ করিব, তাহাও স্বীকার, কিন্তু অন্নদাতা, জীবনদাতা, মানসন্ত্রম-প্রতিষ্ঠাতা আলিবর্দ্দীর কন্যাগণের প্রাণনাশ করিতে পারিব না। তাই মীরজাফরের পত্রের উত্তরে তিনি আপনার অসম্মতি জানাইলেন। তখন অনন্যোপায় হইয়া মীরজাফর একজন বিশ্বস্ত জমাদারকে সহরের দুই মাইল দূরে মধ্যরাত্রে কোন নির্জ্জন স্থানে নদীবক্ষে বেগমদিগকে নিমজ্জিত করিতে আদেশ করিলেন এবং তিনি জেসারৎ খাঁকে তাহার হস্তে বেগমদিগকে সমর্পণ করিবার জন্য এক পরােয়ানা পাঠাইলেন। জমাদার কর্ত্তৃক বেগমেরা নির্দিষ্ট স্থানে নীত হইলে, উভয়ের পদদ্বয়ে গুরুভার বাঁধিয়া দিয়া জলে নিমজ্জিত করা হইল। উপায়ান্তর না দেখিয়া বেগমেরা যখন প্রাণরক্ষার্থ নৌকার পার্শ্ব ধরিয়া কোনক্রমে আত্মরক্ষার চেষ্টা করিতে লাগিলেন, তখন নির্ম্মম জমাদার তাঁহাদের মস্তকের উপর লগুড়াঘাত করিতে লাগিল; কিন্তু শােণিতাপ্লুতা হইয়াও যখন তাঁহারা শেষ অবলম্বন কাষ্ঠখণ্ডের আশা ত্যাগ করিলেন না, তখন তাঁহাদের হাত কাটিয়া দিয়া তাঁহাদিগকে ডুবাইয়া দেওয়া হইল।

  1. ইঁহার প্রকৃত নাম ‘মেহেরুন্নিসা’। সয়ের মুতাক্ষরীণের ২য় খণ্ড (১০৯ পৃঃ) এই নামটীর উল্লেখ আছে। ইঁহার আরও কয়টী নাম আছে। ইনি সাধারণে ‘ঘসিটি (পারস্য ‘গহ্‌স্‌সিটী’) বেগম’, ‘ঘসিটী বিবি’, ও ‘ছোটী বেগম’ নামে পরিচিত। মতিঝিলে বাস করিতেন বলিয়া লোকে ইঁহাকে ‘মতিঝিলের বেগম’ও বলিত। ফরাসী ও ইংরাজদিগের বিবরণাদিতে ‘ঘসিটা’ ও ‘ঘসেটা’ নাম দেখিতে পাওয়া যায়। পর্ত্তগীজ ওলন্দাজদিগের বিবরণদিতে ইঁহার নাম আদৌ উল্লিখিত হয় নাই; ইহাদের গ্রন্থে ইনি ‘নওয়াজিব বা নওয়ারিষ (?) বিধবা’ বলিয়া প্রথিতা।
  2. মুতাক্ষরীণমতে (২য় খণ্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা) নওয়াজিসের ১৭৫৫ খৃষ্টাব্দের ১৭ই ডিসেম্বর মৃত্যু হয়। ফরাসীদিগের মতে তাঁহাকে বিষাক্ত দ্রব্য খাওয়াইয়া মারিয়া ফেলা হয়। “Nawajis Muhammed Khan * * * had died eight months before from taking a little soup which Aliverdi Khan gave him to ensure kingdom to this prince.” Translation of a letter to M. Demontorcin dated 1st August—Chandernagore, 1756. হিল সাহেব কর্ত্তৃক Nationale Bibliothequeএর পুঁথির অনুবাদ। (Indian Records Series Bengal-i-174-75.)
  3. মুতাক্ষরীণমতে (Cambray's Edition—iii—150) ১৭৫৬ খৃষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারী ইঁহার মৃত্যু হইয়াছিল।

পরিশিষ্ট

 An address to the Proprietors of East India stock; setting forth the unavoidable necessity and real motives for the Revolution in Bengal, in 1760.[১] By John Zephaniah Holwell, Esq.

(Pages 45-47)

To Mr. Warren Hastings

Calcutta, June 13, 1760.

Sir,

 By express yesterday from Dacca we have advice, that the Suba has taken off Allyverdee and Shaw Amet Khan's Begums.—He sent a Jemmaut-daar and 100 horse, with orders to Jesseraut Khan to carry this bloody scheme into execution, with separate orders to the Jemmaut-daar, in case Jesseraut Khan refused obedience: he refused acting any part in the tragedy, and left it to the other; who carried them out by night about two miles above the city in a boat, tied weights to their legs, and threw them over-board; they struggled for some time, and held by the gunwall of the boat, but by strokes on their heads with Latties, and cutting off their hands, they sunk.— These are the acts of the Tyger we are supporting and fighting for.

I am,
Your obedient humble servant,
J. Z. H.

oTthe Hon. John Zeph. Holwell,

Esquire,

Maraud-Baag, June 21, 1760.

Sir,

 The relation transmitted to me in your letter of the 13th, of the murder of the two Begums, filled me with horror and astonishment; but how were those sensations increased, when upon enquiry I was told, that not only the two wretched sufferers above-mentioned, but the whole family, to the number of nine persons, had undergone the same fate. I will not mention their names, till I have undoubted proofs of the truth of my intelligence, which I with (tho' I cannot expect it) I may find not so bad at last as it has been represented to me.—How this circumstance escaped my knowledge, I know not. It was not indeed an event to be learned from enquiry, and possibly the infamy of the fact might have made my friends, who were in the secret, neglect to speak to me upon a subject which, from our particular connections with the Nabob, and his intire dependence on our power, could not but reflect dishonour upon the English name. I have hitherto been generally an advocate for the Nabob whose extortions and oppressions I imputed to the necessity of the times, and want of economy in his revenues;—but, if this charge against him be true, no argument can excuse or palliate so atrocious and complicated a villany, nor (forgive me, Sir, if I add) our supporting such a tyrant.

I have the honor to be,
Sir,
Your most obedient,
most faithful servant,
Warren Hastings.


 The advices sent from Dacca touching these murders, wore despatched immediately after the first rumour of the deed; and from thence, as usual, imperfect: subsequent advices brought tho true state of that execution, as follows:

 Gosseta Begum, widow of Shaw Amet Jung;

 Emna Begum, mother to the Nabob Surajud Dowla, and widow to Geynde Amet Khan;

 Morad Dowla, the son of Parsha Kooly Khan, adopted by the Shaw Amet Jung;

 Lutfen Nessa Begam, widow Surajud Dowla;

 Her infant daughters by Nabob Surajud Dowla.

 These unhappy sufferers perished all in one night at Dacca, in the manner before recited, with about twenty of their women, of inferior note.—It was said Alleverdy Khan's Begum by some means escaped this massacre of her whole family.

 A conceived though groundless jealousy of Morad Dowla's making his escape from his confinement in Dacca, was the cause of this infernal carnage. * * * * *


 পূর্ণিয়ার নবাবের সহিত আমিনা বেগমের ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে হলওয়েল সাহেব তাহার Revolutions in Bengal পুস্তকের ১২৩ পৃষ্ঠায় এইরূপ লিখিয়াছেন:—

 “Shee was a figure, and so farre I knowe made an intrigue soe speak withe the Nabob of Poornyeah. It was thro her skeel that the Poornyeah Nabob made over the Royalle Estate to Survas diallah."

  1. London; Printed for T. Becket and P. A. de Hondt, in the strand. MDCCLXIV. মাননীয় শ্রীযুক্ত নীলাম্বর পাল মহাশয় তাহার পুস্তকাগার হইতে আমাকে এই দুষ্প্রাপ্য প্রন্থখানি পড়িতে দিয়াছিলেন; তজ্জন্য তাহার নিকট কৃতজ্ঞ রহিলাম।