বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ/স্ত্রীশিক্ষা-বিস্তারে বিদ্যাসাগর
স্ত্রীশিক্ষা-বিস্তারে বিদ্যাসাগর
এক সময়ে স্ত্রীশিক্ষার কথা শুনিলে আমাদের রক্ষণশীল দেশবাসী ভীত হইয়া পড়িত। ছেলেদের মত মেয়েদেরও যে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন ইহা তাহারা ভুলিয়া গিয়াছিল। রামমোহন রায় প্রথম মনে করাইয়া দিলেন স্ত্রীলোক বুদ্ধিহীনা নহে। তিনি লিখিলেন,—
বিদ্যাসাগর কর্ম্মী। তিনি যাহা ভাল বলিয়া বুঝিতেন তাহ। কার্য্যে পরিণত না করিয়া ছাড়িতেন না। তিনি জানিতেন, শাস্ত্রের নির্দ্দেশ ভিন্ন দেশবাসী এক পাও অগ্রসর হইবে না। “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ।” পুত্রের মত কন্যাকেও যত্নের সহিত পালন করিতে এবং শিক্ষা দিতে হইবে। শাস্ত্রবচনকে মূলমন্ত্র করিয়া বিদ্যাসাগর স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনে ব্রতী হইলেন।
১৮৫০ খৃষ্টাব্দের পূর্বে ভারতবর্ষীয় নারীদিগের মধ্যে শিক্ষা-বিস্তার সরকার নিজের কর্তব্যের অন্তর্গত বিষয় বলিয়া মনে করিতেন না। ইতিপূর্ব্বেই কিন্তু রাজা রাধাকান্ত দেব প্রমুখ কয়েকজন সন্ত্রান্ত মহোদয় এবং খৃষ্টান মিশনারীগণ স্ত্রীশিক্ষার কিছু সূচনা করিয়া রাখিয়াছিলেন। ১৮৪৯ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় ভারত-হিতৈষী ড্রিঙ্কওয়াটার বীটন কর্ত্তৃক একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি তখন হইতেই যথেষ্ট সাফল্য লাভ করিয়াছিল। পূর্ব্বে ইহার নাম ছিল—হিন্দু বালিকাবিদ্যালয়। পরে ‘বীটন নারী বিদ্যালয়’—এই নূতন নামকরণ হয়। গোড়া হইতেই বিদ্যাসাগরকে সহকর্ম্মী এবং উৎসাহী বন্ধু রূপে পাইবার সৌভাগ্য বীটন সাহেবের ঘটিয়াছিল। শিক্ষা-পরিষদের সভাপতিরূপে বীটন বিদ্যাসাগরের সহিত প্রথম পরিচিত হন। ঈশ্বরচন্দ্রকে একজন অক্লান্তকর্ম্মী গুণী ব্যক্তি বলিয়াই তাঁহার ধারণা জন্মিয়াছিল, তাই তিনি বিদ্যাসাগরকেই বিদ্যালয়ের অবৈতনিক সম্পাদক-রূপে কাজ করিবার জন্য ধরিলেন (ডিসেম্বর, ১৮৫০)। আচারবদ্ধ দেশবাসীকে সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য বিদ্যাসাগর বিদ্যালয়ের বালিকাদের গাড়ীর দুইপাশে “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ” মনুসংহিতার এই শ্লোকাংশ খোদিত করিয়া দিবার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।
কিছুদিন পরেই বীটন পরলোকগত হন (১২ আগষ্ট, ১৮৫১)। পরবর্তী অক্টোবর মাস হইতে লর্ড ড্যালহাউসি বিদ্যালয়-পরিচালনার সমস্ত খরচ বহন করিতে লাগিলেন। লাট সাহেবের বিদায়গ্রহণের (মার্চ, ১৮৫৬) পর হইতে ইহা সরকারী ব্যয়ে পরিচালিত সরকারী বিদ্যালয়ে পরিণত হইল, এবং বঙ্গের ছোটলাট ইহাকে সিসিল বীডনের তত্ত্বাবধানে স্থাপিত করিলেন। ১৮৫৬, ১২ই আগষ্ট তারিখের পত্রে বীডন সাহেব বাংলা-সরকার সমীপে এক ব্যবস্থা পেশ করিলেন। এই বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি যাহাতে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুদের নজরে বিশেষ করিয়া পড়ে, এবং তাহারা যাহাতে এই বালিকা-বিদ্যালয়ে কন্যাদের পড়াইতে প্ররোচিত হন, এইরূপ ব্যবস্থার প্রস্তাব সেই পত্রে ছিল। একটি কমিটি করিবার প্রস্তাবও পত্রে ছিল। কমিটির সদস্যরূপে রাজা কালীকৃষ্ণ দেব বাহাদুর, রায় হরচন্দ্র ঘোষ বাহাদুর, রমাপ্রসাদ রায় এবং কাশীপ্রসাদ ঘোষ প্রভৃতির নাম উল্লিখিত হয়। বিদ্যাসাগরকে সম্পাদক করিয়া তাঁহার উপর স্কুলের তত্ত্বাবধানের ভার দিবার জন্য বীডন ব্যগ্র হইলেন। তিনি ছোটলাটকে লিখিলেন:— “কমিটির সম্পাদক-নিয়োগে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মাকেই উপযুক্ত ব্যক্তি বলিয়া মনে করিতে পারেন। তাঁহার সামাজিক সম্মান ও স্কুলের সম্পাদক হিসাবে পূর্ব্ব পরিশ্রম তাঁহার যোগ্যতা প্রমাণ করে।”[২]
বাংলা-সরকার সম্মত হইলৈন। বীডন সাহেব কমিটির সভাপতি, ও বিদ্যাসাগর সম্পাদক নির্ব্বাচিত হইলেন।[৩]
ড্রিঙ্কওয়াটার বীটনের মত বিদ্যাসাগরও স্ত্রীশিক্ষার অত্যন্ত পক্ষপাতী ছিলেন; তিনিও মনে করিতেন স্ত্রীশিক্ষা ভিন্ন দেশের উন্নতি নাই। কিন্তু তাঁহার উৎসাহ ও কর্ম্মিষ্ঠতা শুধু বীটন স্কুলের কাজের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল না।
১৮৫৪ খৃষ্টাব্দের বিখ্যাতত্রে ও অন্যত্র বিলাতের কর্ত্তৃপক্ষেরা স্ত্রীশিক্ষা সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। ভারতবর্ষে স্ত্রীশক্ষার বিস্তার এক সমস্যা। সেই সমস্যা-সমাধানের উপায় বহুল পরিমাণে বালিকা-বিদ্যালয় স্থাপন। ১৮৫৭ খৃষ্টাব্দের গোড়ার দিকে বাংলা দেশে হ্যালিডে সাহেব সেই কাজে হাত দিলেন। তিনি বিদ্যাসাগরকে ডাকাইয়া, তাঁহার সহিত এ-সম্বন্ধে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করিলেন। কাজ কেমন কঠিন সে কথা তাঁহাদের অজ্ঞাত ছিল না। সাধারণ বালিকা বিদ্যালয়ে নিজেদের মেয়ে পাঠাইতে সম্ভ্রান্ত হিন্দুদের মনে কতটা যে অনিচ্ছা আছে, তাহা তাঁহারা ভালরূপেই বুঝিতেন। যাহা হউক, বিদ্যাসাগরের দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, উৎসাহ ও উদ্যমের সহিত কাজে লাগিলে এরূপ সৎকার্য্যে জনগণের সহানুভূতি আকর্ষণ করা খুব কঠিন হইবে না।
বিদ্যাসাগর অল্পদিনের মধ্যেই জানাইলেন, বর্দ্ধমান জেলার জৌগ্রামে তিনি একটি বালিকা বিদ্যালয় খুলিতে পারিয়াছেন (৩০ মে, ১৮৫৭)।[৪] ডিরেক্টর প্রতিষ্ঠানটির জন্য সরকারের কাছে ৩২৲ টাকা মাসিক সাহায্যের অনুমোদন করিয়া পত্র লিখিলেন।
দক্ষিণবঙ্গের স্কুলসমূহের ইন্স্পেক্টার প্র্যাট সাহেবের নিকট হইতে সাহায্যের জন্য তিনখানি আবেদন-পত্র আসিয়াছিল। ডিরেক্টর সেগুলি পূর্বেই সরকারের দপ্তরে পেশ করিয়াছিলেন। হুগলী জেলার হরিপাল থানার অন্তর্গত দোয়ারহাটা ও বৈদ্যবাটী থানার অন্তত গোপালনগর, এবং বর্দ্ধমানের নারোগ্রামে তিনটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সেই তিনখানি আবেদনপত্রে ছিল। ছোটলাট সকল দরখাস্তই মঞ্জুর করিলেন; প্রত্যেক স্থলেই পল্লীবাসীরা বিদ্যালয়-বাটী নির্ম্মাণ করিয়া দিবার ভার লইল। সাহায্য মঞ্জুর করিবার সময় ছোটলাট জানিতে চাহিলেন, বিভাগীয় ইন্স্পেক্টারদের নিকট হইতে ডিরেক্টর আর কোনো আবেদন পাইয়াছেন কি না, তাহা হইলে তাঁহাদের প্রার্থনাও তিনি পূর্ণ করিবেন।[৫] স্ত্রীশিক্ষা সম্বন্ধে বাংলা-সরকারের ভাব বিদ্যাসাগরের কাছে ভাল বলিয়াই মনে হইল। তিনি পূর্ব্বেই বালকদের জন্য মডেল বাংলা বিদ্যালয়গুলি কার্য্যকর ও সুশৃঙ্খল করিয়া তুলিয়াছিলেন। এইবার বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি ফিরাইলেন। মডেল বাংলা বিদ্যালয়-সম্পর্কে তিনি যে প্রণালী অবলম্বন করিয়াছিলেন, বর্ত্তমান ক্ষেত্রেও তাহাই করিলেন। তিনি ধরিয়া লইলেন, সরকার তাঁহার মতলব সাধারণভাবে সমর্থন করিয়াছেন। এই ধারণার বশে তিনি নিজ এলাকাভুক্ত জেলাসমূহে অনেকগুলি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিলেন। এই-সব বিদ্যালয়-স্থাপনার সংবাদ তিনি যথাসময়ে ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্ষ্ট্রাকশনের কাছে পাঠাইয়া মাসিক সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। ডিরেক্টরও পূর্ব্বেকার আদেশ অনুযায়ী অন্যান্য আবেদনপত্রের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের পত্রগুলিও ছোটলাটের বিবেচনার্থ পাঠাইলেন।
নভেম্বর, ১৮৫৭ হইতে মে, ১৮৫৮-এই কয় মাসের মধ্যে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন; তন্মধ্যে হুগলী জেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০টি, বর্দ্ধমান জেলায় ১১টি, মেদিনীপুরে তিনটি, ও নদীয়ায় একটি। বিদ্যালয়গুলির জন্য মাসে ৮৪৫৲ টাকা খরচ হইত; ছাত্রীসংখ্যা ছিল প্রায় ১,৩০০।[৬]
১৮৫৮, ১৩ই এপ্রিল বাংলার ছোটলাট ভারত-সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠাইলেন,—পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার বিভিন্ন স্থানে যে-সকল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিবার প্রস্তাব হইয়াছে, তন্মধ্যে ২৬টি বিদ্যালয়ের সম্পর্কে ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্ষ্ট্রাকশনের নিকট হইতে সাহায্যের জন্য দরখাস্ত আসিয়াছে। সরকারী সাহায্যদান সম্বন্ধীয় নিয়মাবলী আর একটু ঢিলা না হইলে তিনি দরখাস্ত মঞ্জুর করিতে পারেন না। তিনি দেখাইলেন, ১৮৫৬, ১লা অক্টোবর তারিখের পত্রে বিলাতের কর্ত্তৃপক্ষ আশা দিয়া বলিয়াছেন যে, বালিকা-বিদ্যালয়গুলির ছাত্রীদের নিকট হইতে মাহিনা লওয়া হইবে না। কিন্তু তৎসত্ত্বেও ছোটলাট মনে করেন, আরও কিছু করা দরকার। তাই তিনি প্রস্তাব করিলেন, যখনই বালিকা বিদ্যালয়ের জন্য নিখরচায় উপযুক্ত গৃহ এবং অন্তত কুড়িটি ছাত্রী ভর্তি হইবে এমন একটা আশা পাওয়া যাইবে, তখনই স্কুল-পরিচালনার সমস্ত খরচ সরকার সরবরাহ করিবেন।
১৮৫৮, ৭ই মে তারিখের পত্রে ভারত সরকার বালিকাবিদ্যালয় সম্পর্কে সরকারী সাহায্যের নিয়মাবলীর ব্যতিক্রম করিতে অস্বীকৃত হইলেন; বলিলেন, উপযুক্ত পরিমাণে স্বেচ্ছাদত্ত সাহায্য না পাওয়া এরূপ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হওয়াই ভাল।
ভারত-সরকারের এইরূপ আদেশ বিদ্যাসাগরের কাজে একান্ত বাধা জন্মাইল। সরকারের অনুমোদন পাওয়া যাইবেই, এই মনে করিয়া বিদ্যাসাগর অনেকগুলি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন। অবশ্য কথা ছিল, স্থানীয় অধিবাসীরাই উপযুক্ত বিদ্যালয়-গৃহ নির্ম্মান, করিয়া দিবে, আর সরকার অন্যসব খরচ যোগাইবেন। পণ্ডিত এখন বুঝিলেন, তাঁহার সমস্ত পরিশ্রম ব্যর্থ হইয়াছে, এত কষ্টের স্কুলগুলি অবিলম্বে উঠাইয়া দিতে হইবে। আর এক সমস্যা—শিক্ষকদের বেতন। প্রতিষ্ঠাবধি স্কুল হইতে তাঁহারা মাহিনা পান নাই। ১৮৫৮, ৩০এ জুন পর্যন্ত ধরিলে তাঁহাদের সকলের মোট পাওনা হয়— ৩৪৩৯৵৫।
এই সম্পর্কে ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্ষ্ট্রাক্শনকে লেখা ঈশ্বরচন্দ্রের ২৪এ জুন তারিখের পত্রখানি পড়িলে ব্যাপারটা পরিস্কাররূপে বুঝা যাইবে। পত্রখানির মর্ম্ম দেওয়া গেল:—
ডিরেক্টর বাংল-সরকারের কাছে বিদ্যাসাগরের কথা জানাইয়া বলিলেন,—
ছোটলাট ডিরেক্টরের অনুরোধ-পত্র সমর্থন করিয়া এবং “সংস্কৃত কলেজের অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও কৃতী অধ্যক্ষের আড়ম্বরহীন উৎসাহের” কথা উল্লেখ করিয়া ভারত-সরকারকে ব্যাপারটা পুনরায় বিবেচনা করিতে অনুরোধ করিলেন। (২২ জুলাই, ১৮৫৮)।[৯]
কোনো আদেশ দিবার পূর্ব্বে, ভারকার জানিতে চাহিলেন, “পণ্ডিত কেন ও কিরূপ অবস্থায় টাকা মঞ্জুর হইবে ধরিয়া লইয়া, বালিকাবিদ্যালয় স্থাপনে এত ভারী রকমের খরচ করিতে উৎসাহশীল হইলেন। আর যে-উৎসাহ পাইয়া পণ্ডিত বলিতেছেন, তিনি এই-সব কাজ করিয়াছেন, তাহার জন্য দায়ী কে? বাংলা-সরকারের ১৮৫৮, ১৩ই এপ্রিল লিখিত পত্রের পূর্ব্বেই প্রায় অর্ধেক বালিকা-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, ইহা বাংলা-সরকারের জানা ছিল কি না? থাকিলে, সে কথা উল্লেখ করা হয় নাই কেন?”
ভারত সরকারের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যাসাগর ডিরেক্টর অফ পাব্লিক ইন্ষ্ট্রাকশনকে লিখিলেন:—
ডিরেক্টর বিদ্যাসাগরের পত্রখানি বাংলা-সরকারের কাছে পাঠাইয়া দিলেন। মন্তব্য করিলেন:—
ছোটলাট ভারত সরকারের কাছে সমস্ত কথা পরিষ্কারভাবে খুলিয়া বলিলেন। তিনি দেখাইয়া দিলেন, “ব্যাপারটি আগাগোড়া এক স্কুলের উপর প্রতিষ্ঠিত। ছোটলাট হইতে আরম্ভ করিয়া পণ্ডিত পর্য্যন্ত সকলেই একটি ভ্রান্ত ধারণার বশে কাজ করছেন। সকল অবস্থা পর্য্যালোচনা করিয়া ব্যাপারটিকে যেন একটু অনুগ্রহের চক্ষে দেখা হয়, এইটুকু তিনি আশা করেন।” (২৭ নভেম্বর,১৮৫৮)[১১]
সরকার পণ্ডিতের উপর সুবিচার করেন নাই এবং সরকারের কাজে যে আর্থিক দায়িত্ব তিনি নিজে লইয়াছিলেন, সে দায়িত্ব তাঁহার ঘাড়েই পড়িয়াছিল, সরকার তাহা পরিশোধ করিতে অস্বীকৃত হন,—এই গল্প বিদ্যাসাগরের জীবনী-লেখকগণই রচিয়াছেন। ভারত-সরকারের ১৮৫৮, ২২শে ডিসেম্বর তারিখের পত্রে এ-সম্বন্ধে শেষ আদেশ প্রদত্ত হয়। বালিকা-বিদ্যালয় স্থাপন করিতে বিদ্যাসাগর যে ব্যয় করিয়াছিলেন, সেই টাকা যে সমস্তই পরিশোধ করা হইয়াছিল, এই পত্রই তাহার নিশ্চিত প্রমাণ। ভারত সরকার লিখিতেছেন,—
কিন্তু বিলাতের কর্ত্তৃপক্ষ সিপাই-বিদ্রোহের জন্য আর্থিক অনটনবশতঃ বালিকা-বিদ্যালয়গুলিতে কোন স্থায়ী সাহায্য করিতে অস্বীকার করিলেন;—তবে আশা দিলেন, বিষয়টা ভবিষ্যতে বিবেচিত হইবে।
১৮৫৮, নভেম্বর মাসে বিদ্যাসাগর সরকারী চাকরি হইতে অবসর গ্রহণ করিয়াছিলেন। শোনা যায়, বালিকা-বিদ্যালয় সম্পর্কীয় ব্যাপারে ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্ষ্ট্রাকশনের সহিত মতান্তরই না-কি তাঁহার পদত্যাগের অন্যতম কারণ। মাসিক ৫০০৲ টাকা আয় হ্রাস, সরকারের সাহায্যদানে অসম্মতি—এ-সব কিছুতেই তৎপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিদ্যাসাগরকে নিরাশ করিতে পারিল না। বালিকা-বিদ্যালয়গুলির পরিচালনের জন্য তিনি এক নারীশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ভাণ্ডার খুলিলেন। ইহাতে পাইকপাড়ার রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ রায় প্রমুখ বহু সম্ভ্রান্ত দেশীয় ভদ্রলোক এবং উচ্চতন সরকারী কর্ম্মচারীরা নিয়মিত চাঁদা দিতেন। স্ত্রীশিক্ষার বিস্তারে তাঁহার প্রচেষ্টা যে দেশবাসীর আনুকুল্য লাভ করিয়াছে তাহা স্যর বার্টল ফ্রিয়ারকে লিখিত তাঁহার একখানি পত্রে প্রকাশ:—
ছোটলাট বীডন সাহেবও মাসিক ৫৫৲ টাকা সাহায্য করিয়া পণ্ডিতকে উৎসাহিত করিয়াছিলেন।
আগেই বলিয়াছি, ১৮৫৬ আগষ্ট মাসে বিদ্যাসাগর বীটন-স্কুল-কমিটির সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। ১৮৬৪, জানুয়ারি মাসে তিনি উক্ত কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তাহাকে নানা কাজে ব্যাপৃত থাকিতে হইত, কাজেই সময় তাঁহার বেশী ছিল না, তবুও বীটন বিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করিতেন। ১৮৬২, ১৫ই ডিসেম্বর বিদ্যাসাগর বাংলা-সরকারকে বীটন বিদ্যালয়-সম্পর্কে একটি রিপোর্ট পাঠান। তাঁহার সম্পাদক থাকিবার কালে বিদ্যালয়ের অবস্থা কেমন ছিল, তাহার আভাস এই রিপোর্টে পাওয়া যায়:—
মিস মেরী কার্পেণ্টারের নাম এদেশে মানবহিতৈষী কর্মী ও ভারত-বন্ধু বলিয়া সুপরিজ্ঞাত। ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের শেষাশেষি তিনি কলিকাতায় আসেন। ভারতবর্ষে নারী-শিক্ষার প্রচার ছিল তাঁর প্রাণের ইচ্ছা। বিদ্যাসাগর যে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তার কার্য্যে একজন বড় কর্ম্মী, একথা সুবিদিত। মিস কার্পেণ্টার কলিকাতা পৌঁছিয়াই পণ্ডিতের সহিত পরিচিত হইবার জন্য ব্যগ্র হইয়া উঠিলেন। ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্স্ট্রাকশন অ্যাটকিনসন্ সাহেব বে-সরকারী পত্রে বিদ্যাসাগরকে জানাইলেন,—
ডিরেক্টর বীটন বিদ্যালয়ে মিস কার্পেণ্টারের সহিত পণ্ডিতের পরিচয় করাইয়া দিলেন। প্রথম আলাপেই উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব স্থাপিত হইল। তিনি বিদ্যাসাগরের সহিত কলিকাতার নিকটবর্ত্তী বালিকা বিদ্যালয়গুলি পরিদর্শন করিলেন। ১৮৬৬ ডিসেম্বর মাসে ডিরেক্টর অ্যাটকিনসন্, স্কুলইন্স্পেক্টার উড্রো এবং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রের সহিত মিস কার্পেণ্টার উত্তরপাড়া বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। ফিরিবার মুখে বিদ্যাসাগরের বগী গাড়ি উল্টাইয়া যায়। তিনি পড়িয়া গিয়া যকৃতে গুরুতর আঘাত পান। এই দুর্ঘটনার ফলে তাঁহার স্বাস্থ্য একেবারে ভাঙিয়া যায়। যে সাঙ্ঘাতিক ব্যাধি শেষে ১৮৯১, জুলাই মাসে তাঁহাকে মৃত্যুপথে লইয়া যায়, এই দারুণ আঘাতই তাহার মূল কারণ। কিন্তু বিদ্যাসাগর এই স্বাস্থ্যহানির দিকে মোটেই নজর দিলেন না,—প্রকৃত দেশহিতৈষীর ন্যায় দেশহিতের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করিতে লাগিলেন।
একদল দেশীয় শিক্ষয়িত্রী গড়িয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে আপাততঃ বীটন বিদ্যালয়েই একটি নর্ম্মাল স্কুল স্থাপিত করিবার জন্য মিস কার্পেণ্টার আন্দোলন উপস্থিত করিলেন। কেশবচন্দ্র সেন, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, এম. এম. ঘোষ প্রমুখ এদেশীয় জনকয়েক গণ্যমান্য লোক এই আন্দোলনের সপক্ষে ছিলেন। মিস কার্পেণ্টারের সহিত তাঁহার প্রস্তাবের ঔচিত্য বিবেচনা করিয়া দেখিবার জন্য তাঁহাদের চেষ্টায় ব্রাহ্মসমাজে একটি সভার আয়োজন হয় (১ ডিসেম্বর, ১৮৬৬)। বিদ্যাসাগরও ইহাতে আহূত হইয়াছিলেন। এই সভায় যে কমিটি গঠিত হয়, বিদ্যাসাগর তাহার একজন সভ্য নির্ব্বাচিত হন। স্থির হয়, কমিটি প্রস্তাবিত নর্ম্মাল স্কুল স্থাপন বিষয়ে সরকারের নিকট আবেদন করিবেন। সভার কার্য্যাবলী সম্বন্ধে অসন্তুষ্ট হইয়া বিদ্যাসাগর কমিটিভুক্ত, থাকিতে অস্বীকার করেন; তিনি লিখিয়া পাঠান:—
১৮৬৭, ১লা সেপ্টেম্বর একখানি দীর্ঘপত্রে বাংলার ছোটলাট স্যর উইলিয়ম গ্রে এ-বিষয়ে বিদ্যাসাগরের মতামত জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন। এ-প্রস্তাবে পণ্ডিত সম্মত হইতে পারিলেন না। তিনি উত্তরে ছোটলাটকে লিখিলেন,—
“সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভারত-গভর্ন্মেটের পত্রখানিতে এক প্রশস্ততর পন্থা নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে। জনসাধারণের মনোভাব বুঝিবার সর্ব্বোৎকৃষ্ট উপায়—সাহায্যদান-প্রণালীর প্রবর্ত্তন। দেশের লোক মিস্ কার্পেণ্টারের প্রস্তাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী কাজ করিতে ইচ্ছুক হইলে সরকার তাহাদের সাহায্যার্থ যথেষ্ট বৃত্তির বন্দোবস্ত করিবেন। যতদুর বুঝিতেছি, হিন্দু-সমাজের অধিকাংশ লোকই এরূপ সাহায্যের সুবিধা গ্রহণ করিবে না; তবুও যাহারা ইহারা সফলতায় অতিবিশ্বাসী, সত্যই যদি তাদের আন্তরিক আগ্রহ ও অনুরাগ থাকে, তাহা হইলে, আশা করা যায়, তাহারাই অগ্রবর্ত্তী হইয়া সরকারী অর্থসাহায্যে এ-সম্বন্ধে ফলাফল পরীক্ষা করিয়া দেখিবে।
“আমি স্পষ্ট স্বীকার করিতেছি, তাহাদের উপর আমার আস্থা নাই। কিন্তু ভারত সরকার যে বিধি প্রচার করিয়াছেন তদনুসারে তাহাদের অভিযোগ করিবার কিছুই থাকবে না।
“মেয়েদের শিক্ষার স্ত্রী-শিক্ষয়িত্রীর আবশকতা যে কতটা অভিপ্রেত এবং প্রয়োজনীয় তাহা আমি বিশেষ জানি,— একথা আপনাকে বলা বাহুল্য। আমার দেশবাসীর সামাজিক কুসংস্কার যদি অলঙ্ঘনীয় বাধারূপে না দাঁড়াইত, তাহা হইলে আমিই সকলের আগে এ প্রস্তাব অনুমোদন করিতাম এবং ইহাকে কার্য্যকর করিবার জন্য আন্তরিক সহযোগিতা করিতে কুণ্ঠিত হইতাম না। কিন্তু যখন দেখিতেছি, সাফল্যের কোনোই নিশ্চয়তা নাই, এবং এ-কার্য্যে হস্তক্ষেপ করিলে সরকার অনর্থক অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়িবেন, তখন কোনমতেই আমি এ ব্যাপারে পোষকতা করিতে পারি না।ছাত্রী-সংখ্যা কমিয়া যাওয়াতে এবং অন্যান্য নানা কারণে ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দের মধ্যভাগে বীটন-স্কুল-কমিটির মনে বিশ্বাস জন্মিল যে, বিদ্যালয়ের এ অবস্থায় এক বিশেষ অনুসন্ধানের প্রয়োজন। এই কারণে জুলাই মাসে কমিটির এক বিশেষ অধিবেশন হইল। অধিবেশনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কুমার হরেন্দ্রকৃষ্ণ দেব ও প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারীকে লইয়া এক সাব-কমিটি গঠিত হয়। অনুসন্ধানের ফল সাব-কমিটি একটি রিপোর্টে দাখিল করিলেন (২৪ সেপ্টেম্বর)। রিপোর্ট-পাঠে বীটন-স্কুল- কমিটি সিদ্ধান্ত করিলেন, যতদিন মিস্ পিগট্ অধ্যক্ষ থাকিবেন, ততদিন বিদ্যালয়ের উন্নতির আশা নাই। কমিটি এবিষয়ে বাংলা-সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে বাধ্য হইলেন।
বাংলা-সরকার মিস্ পিগট্কে প্রধান শিক্ষয়িত্রীর পদ হইতে সত্ত্বর অপসারিত করিবার প্রস্তাবে সম্মত হইলেন। কিন্তু বীটন-স্কুল-কমিটিকে লিখিলেন:—
বীটন-স্কুল-কমিটি এই সর্ত্তে বিদ্যালয় পরিচালনা করিতে অস্বীকৃত হইলেন।[১৬]
ব্যয়সংক্ষেপ করা হইবে, কার্যকারিতাও বাড়িবে, এইরূপ প্রয়োজন- সাধনার্থ সরকার প্রস্তাবিত নর্ম্মাল স্কুল ও বীটন স্কুল একই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগ করিয়া দিলেন। মাসিক তিন শত টাকা বেতনে তিন বৎসরের জন্য মিসেস্ ব্রিট্শে নামে এক মহিলা বীটন ও নর্ম্মাল স্কুলের সুপারিন্টেণ্ডেণ্ট নিযুক্ত হইলেন। বীটন স্কুল-কমিটি ভাঙিয়া গেল। ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্স্ট্রাক্শন্ কমিটির সদস্যদের— বিশেষভাবে কমিটির সুদক্ষ সম্পাদক বিদ্যাসাগরকে—তাঁহাদের অতীত সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ দিলেন।
বিদ্যাসাগর এই নূতন ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ আশা পোষণ করিতেন না সত্য, কিন্তু চাহিবামাত্র কর্ত্তৃপক্ষকে সাহায্য করিতে ত্রুটি করিতেন না। ১৮৬৯, ২রা মার্চ্চ স্কুল-ইনস্পেক্টার উড্রো সাহেব ডিরেক্টরকে লিখিতেছেন,—বিদ্যাসাগরের কথাই ফলিল। তিন বৎসর যাইতে-না-যাইতেই পরবর্ত্তী ছোটলাট স্যর জর্জ ক্যাম্পবেল বীটন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট নর্ম্মাল স্কুলটি তুলিয়া দিবার আদেশ দিলেন। এইরূপ অনুষ্ঠানকে সফল করিতে গেলে দেশের রীতি ও সংস্কার অনুসারে যে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত করিতে হইবে, এবিষয়ে তাঁহার নিশ্চিত ধারণা হইয়াছিল।[১৭] ডিরেক্টরের নিকট নিম্নলিখিত আদেশ-পত্র প্রেরিত হইল:—
উপরের লেখা হইতে বুঝা যাইবে, বাংলা দেশে স্ত্রীশিক্ষার বিস্তারে বিদ্যাসাগরের কি উৎসাহ ও আগ্রহই না ছিল। ১৮৯১, জুলাই মাসে তাঁহার মৃত্যু হইলে, এক হিন্দু মহিলা-সঙ্ঘ বিদ্যাসাগরের স্মৃতিরক্ষার এইরূপ ব্যবস্থা করেন:—
পরিশিষ্ট
বিদ্যাসাগর-প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়[১৯]
গ্রাম | প্রতিষ্ঠার তারিখ | মাসিক খরচ | |
হুগলীঃ— | পোটবা | ২৪ নভেম্বর, ১৮৫৭ | ২৯৲ |
দাসপুর | ২৬ নভেম্বর” | ২০৲ | |
বঁইচি | ১ ডিসেম্বর | ৩২৲ | |
দিগশুই | ৭ ডিসেম্বর” | ৩২৲ | |
তালাণ্ডু | ৭ ডিসেম্বর” | ২০৲ | |
হাতিনা | ১৫ ডিসেম্বর” | ২০৲ | |
হয়েরা | ১৫ডিসেম্বর” | ২০৲ | |
নপাড়া | ৩০ জানুয়ারি, ১৮৫৮ | ১৬৲ | |
উদয়রাজপুর | ২ মার্চ্চ | ২৫৲ | |
রামজীবনপুর | ১৬ মার্চ্চ” | ২৫৲ | |
আকাবপুর | ২৮ মার্চ্চ” | ২৫৲ | |
শিয়াখালা | ১ এপ্রিল | ২০৲ | |
মাহেশ | ১ এপ্রিল” | ২৫৲ | |
বীরসিংহ | ১ এপ্রিল” | ২০৲ | |
গোয়ালসারা | ৪ এপ্রিল” | ২৫৲ | |
দণ্ডীপুর | ৫ এপ্রিল” | ২৫৲ | |
দেপুর | ১ মে | ২৫৲ | |
রাউজাপুর | ১ মে” | ২৫৲ | |
মলয়পুর | ১২ মে” | ২৫৲ | |
বিষ্ণুদাসপুর | ১৫ মে” | ২০৲ | |
বৰ্দ্ধমানঃ— | রানাপাড়া | ১ ডিসেম্বর, ১৮৫৭ | ২০৲ |
জামুই | ২৫ জানুয়ারি, ১৮৫৮ | ৩০৲ | |
শ্রীকৃষ্ণপুর | ২৬ জানুয়ারি” | ২৫৲ | |
রাজারামপুর | ২৬ জানুয়ারি” | ২৫৲ | |
জোৎ-শ্রীরামপুর | ২৭ জানুয়ারি” | ২৫৲ | |
দাঁইহাট | ১ মার্চ্চ | ২০৲ | |
কাশীপুর | ১ মার্চ্চ” | ২১৲ | |
সানুই | ১৫ এপ্রিল | ২৫৲ | |
রসুলপুর | ২৬ এপ্রিল” | ৩১৲ | |
বন্তীর | ২৭ এপ্রিল” | ২০৲ | |
বেলগাছি | ১ মে | ২০৲ | |
মেদিনীপুরঃ— | ভাঙ্গাবন্ধ | ১ জানুয়ারি, ১৮৫৮ | ৩০৲ |
বদনগঞ্জ | ১০ মে | ৩১৲ | |
শান্তিপুর | ১৫ মে” | ২০৲ | |
নদীয়াঃ— | নদীয়া | ১ মে | ২৮৲ |
৮৪৫৲ |
- ↑ সহমরণ বিষয়ে প্রবর্ত্তক নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সংবাদ, (রাজা রামমোহন রায়-প্রণীত গ্রন্থাবলী, পৃঃ ২০৫)
- ↑ Education Con. 4 Sept. 1856, No. 166.
- ↑ Bengal Government to Vidyasagar, dated 30 Augt. 1856.Education Cons. 4 Sept. 1856,'’ Nos. 168 & 170.
- ↑ Vidyasagar to D. P. I., dated 30 May, 1857.- Education Con. 22 Oct. 1857, No. 72.
- ↑ Govt. of Bengal to the Offg. D. P. I., dated 21 Octr. —Education Con, 22 Oct. 1857, No. 74.
- ↑ Education Con. 5 Aug. 1858, No. 16.
- ↑ Education Con. 5 August 1858, No 15.
- ↑ Education Con. 5 August, 1858, No. 14.
- ↑ Ibid., No 17.
- ↑ Education Con. 2 Decr. 1858, No. 4.
- ↑ Education Con. 2 Decr. 1858, No. 6.
- ↑ Education Con. Jany. 1859, No. 9.
- ↑ Education Con. Decr. 1862, Nos. A. 59-62.
- ↑ Letter from Ishwarchandra Sharma to Baboos Keshub Chunder Sen, M. M. Ghose and Dwijendra Nath Tagore, dated 3 Decr. 1866.—See Mitra's Vidyasagar, pp. 191-92.
- ↑ Education Con. March, 1868, No. A 9.
- ↑ lbid. July 1868, Nos. A 68-70.
- ↑ মিস্ কার্পেণ্টারের অর্থে, কিন্তু তাঁহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, বাবু কেশবচন্দ্র সেন এক প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্যালয় স্থাপন করেন।...মিস্ কার্পেণ্টার ইহার পরিচালনে তাঁহার দেওয়া টাকা ব্যয় করিতে দিতে অস্বীকার করিয়াছেন, এবং তাঁহারই বিশেষ আপত্তিতে বাবু কেশবচন্দ্র সেন এই স্কুল উঠাইয়া দিতে উদ্যত হইয়াছেন।”—D. P. Ι. to Bengal Govt. dated 27 Decr. 1871. Ed. Con. Jany. 1872, Nos. A 30-36.
- ↑ Education Con. April 1872, Nos. A 54-58.
- ↑ Education Con. দুষ্পাঠ্য 24 June 1858, Nos. 167 A & B, H-I-K-L; Ed. Con. 2 Decr. 1858, No.5.