মহাভারত (রাজশেখর বসু)/আদিপর্ব/স্বয়ংবরপর্বাধ্যায়

॥স্বয়ংবরপর্বাধ্যায়॥

৩২। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর—অর্জুনের লক্ষ্যভেদ

 পাণ্ডবগণ তাঁদের মাতাকে নিয়ে ব্রহ্মচারীর বেশে স্বয়ংবর দেখবার জন্য যাত্রা করলেন। পাঞ্চালযাত্রী বহু ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাঁদের পথে আলাপ হ’ল। ব্রাহ্মণরা বললেন, তোমরা দেবতুল্য রূপবান, হয়তো দ্রুপদকন্যা কৃষ্ণা তোমাদের একজনকে বরণ করবেন। দ্রুপদের অধিকৃত দক্ষিণ পাঞ্চালে এসে পাণ্ডবরা ভার্গব নামক এক কুম্ভকারের অতিথি হলেন এবং ব্রাহ্মণের ন্যায় ভিক্ষাবৃত্তি দ্বারা জীবিকানির্বাহ করতে লাগলেন।

 দ্রুপদের ইচ্ছা ছিল যে অর্জুনকেই কন্যাদান করবেন। অর্জুনকে যাতে পাওয়া যায় সেই উদ্দেশ্যে তিনি এমন এক ধনু নির্মাণ করালেন যা নোয়ানো দুঃসাধ্য। তা ছাড়া তিনি শূন্যে একটি যন্ত্র স্থাপিত করে তার উপরে লক্ষ্য বস্তুটি রাখলেন। দ্রুপদ ঘোষণা করলেন, যিনি এই ধনুতে গুণ পরাতে পারবেন এবং যন্ত্র অতিক্রম ক’রে শর দ্বারা লক্ষ্য ভেদ করবেন তিনি আমার কন্যাকে পাবেন। এই ঘোষণা শুনে কর্ণের সঙ্গে দুর্যোধনাদি এবং বহু দেশ থেকে রাজা ও ব্রাহ্মণরা স্বয়ংবর-সভায় এলেন। দ্রুপদ তাঁদের সেবার উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দিলেন। নগরের পূর্বোত্তর দিকে সমতলভূমিতে বিশাল সভা নির্মিত হ’ল, তার চতুর্দিক বাসভবন, প্রাচীর, পরিখা, বার ও তোরণে শোভিত। বিচিত্র চন্দ্রাতপে আবৃত সভাস্থান চন্দনজল ও অগুরুধূপে সুবাসিত করা হ’ল। আগন্তুক রাজারা শিখরের ন্যায় উচ্চ শুভ্র প্রাসাদে পরস্পরের প্রতি ম্পর্ধা ক’রে সুখে বাস করতে লাগলেন।

 রাজারা অলংকার ও গন্ধদ্রব্যে ভূষিত হয়ে সভাস্থলে নির্দিষ্ট আসনে উপবিষ্ট হলেন। নগরবাসী ও গ্রামবাসীরা দ্রৌপদীকে দেখবার জন্য উৎসুক হয়ে মঞ্চের উপরে বসল, পাণ্ডবরা ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ব’সে পাঞ্চালরাজের ঐশ্বর্য দেখতে লাগলেন। অনেকদিন ধ’রে নৃত্য গীত ও ধনরত্নদান চলল। তার পর ষোড়শ দিনে দ্রৌপদী স্নান করে উত্তম বসন ও সর্বালংকারে ভূষিত হয়ে কাঞ্চনী মালা ধারণ ক’রে সভায় অবতীর্ণ হলেন। দ্রুপদের কুলপুরোহিত যথানিয়মে হোম ক’রে আহুতি দিলেন এবং স্বস্তিবাচন করিয়ে সমস্ত বাদ্য থামিয়ে দিলেন। সভা নিঃশব্দ হলে ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীকে সভার মধ্যদেশে নিয়ে এলেন এবং মেঘগম্ভীর উচ্চস্বরে বললেন, সমবেত ভূপতিগণ, আমার কথা শুনুন।—এই ধনু, এই বাণ, ওই লক্ষ্য। ওই যন্ত্রের ছিদ্র দিয়ে পাঁচটি বাণ চালিয়ে লক্ষ্য বিদ্ধ করতে হবে। উচ্চকুলজাত রূপবান ও বলবান যে ব্যক্তি এই দূরূহ কর্ম করতে পারবেন, আমার ভগিনী কৃষ্ণা তাঁর ভার্যা হবেন—এ কথা আমি সত্য বলছি।

 তার পর ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীকে সভাস্থ রাজগণের পরিচয় দিলেন, যথা—দুর্যোধন প্রভৃতি ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ, কর্ণ, শকুনি, অশ্বত্থামা, ভোজরাজ, বিরাটরাজ, পৌণ্ড্রক বাস,ন্দেব, ভগদত্ত, কলিঙ্গরাজ, মদ্ররাজ শল্য, বলরাম, কৃষ্ণ, প্রদ্যুম্ন প্রভৃতি, সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ, শিশুপাল, জরাসন্ধ এবং আরও বহু রাজা।

 কুণ্ডলধারী যুবক রাজারা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক’রে বলতে লাগলেন, দ্রৌপদী আমারই হবেন। মত্ত গজেন্দ্র এবং ভস্মাবৃত অগ্নির ন্যায় পঞ্চ পাণ্ডবকে দেখে কৃষ্ণ চিনতে পারলেন এবং বলরামকে তাঁদের কথা বললেন। বলরামও তাঁদের দেখে আনন্দিত হলেন। অন্যান্য রাজা ও রাজপুত্রপৌত্রগণ দ্রৌপদীকে তদ্‌গতচিত্তে নিরীক্ষণ করছিলেন, তাঁরা পাণ্ডবদের দেখতে পেলেন না। যুধিষ্ঠির ও তাঁর ভ্রাতারা সকলেই দ্রৌপদীকে দেখে কন্দর্পবাণে আহত হলেন। অনন্তর রাজারা সদর্পে লক্ষ্যভেদ করতে অগ্রসর হলেন, কিন্তু তাঁরা ধনুতে গুণ পরাতেও পারলেন না, ধনুর আঘাতে তাঁরা ভূপতিত হলেন, তাঁদের কিরীট হার প্রভৃতি অলংকার ছড়িয়ে পড়ল।

 তখন কর্ণ সেই ধনু তুলে নিয়ে তাতে গুণ পরিয়ে শরসন্ধান করলেন। পাণ্ডবগণ এবং আর সকলে স্থির করলেন, কর্ণ নিশ্চয় সিদ্ধিলাভ করবেন। কিন্তু কর্ণকে দেখে দ্রৌপদী উচ্চস্বরে বললেন, আমি সূতজাতীয়কে বরণ করব না। কর্ণ সূর্যের দিকে চেয়ে সক্রোধে হাস্য ক’রে স্পন্দমান ধনু পরিত্যাগ করলেন।

 তার পর দমঘোষের পুত্র চেদিরাজ শিশুপাল ধনুতে গুণ পরাতে গেলেন, কিন্তু না পেরে হাঁটু গেড়ে ব’সে পড়লেন। মহাবীর জরাসন্ধেরও ওই অবস্থা হ’ল, তিনি উঠে নিজ রাজ্যে চ’লে গেলেন। মদ্ররাজ শল্যও অক্ষম হয়ে ভূপতিত হলেন। তখন ব্রাহ্মণদের মধ্য থেকে অর্জুন উঠে দাঁড়ালেন। কেউ তাঁকে বারণ করলেন, কেউ বললেন, শল্য প্রভৃতি মহাবীর অস্ত্রজ্ঞ ক্ষত্রিয়রা যা পারলেন না একজন দুর্বল ব্রাহ্মণ তা কি ক’রে পারবে। ব্রাহ্মণেরা বললেন, আমরা হাস্যাম্পদ হ’তে চাই না, রাজাদের বিদ্বেষের পাত্র হ’তেও চাই না। আর একজন বললেন, এই শ্রীমান যুবার গতি সিংহের তুল্য, বিক্রম নাগেন্দ্রের তুল্য, বোধ হচ্ছে এ কৃতকার্য হবে। ব্রাহ্মণের অসাধ্য কিছু নেই, তাঁরা কেবল জল বা বায়ু বা ফল আহার ক’রেও শক্তিমান।

 ধনুর কাছে গিয়ে অর্জুন কিছুক্ষণ পর্বতের ন্যায় অচল হয়ে রইলেন, তার পর ধনু প্রদক্ষিণ ক’রে বরদাতা মহাদেবকে প্রণাম এবং কৃষ্ণকে স্মরণ ক’রে ধনু তুলে নিলেন। তার পর তাতে অনায়াসে গুণ পরিয়ে পাঁচটি শর সন্ধান ক’রে যন্ত্রের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যভেদ করলেন। লক্ষ্য বিদ্ধ হয়ে ভূপতিত হ’ল। অন্তরীক্ষে ও সভামধ্যে তুমুল কোলাহল উঠল, দেবতারা অর্জুনের মস্তকে পুষ্পবৃষ্টি করলেন, সহস্র সহস্র ব্রাহ্মণ তাঁদের উত্তরীয় নাড়তে লাগলেন, রাজারা লজ্জিত হয়ে হায় হায় বলতে লাগলেন, বাদ্যকারগণ তূর্যধ্বনি করলে, সূতমাগধগণ স্তুতিপাঠ করতে লাগল। দ্রুপদ অতিশয় আনন্দিত হলেন। সভায় কোলাহল বাড়তে লাগল, নকুল-সহদেবকে সঙ্গে নিয়ে যুধিষ্ঠির তাঁদের বাসভবনে চ’লে গেলেন।

বিদ্ধন্তু লক্ষ্যং প্রসমীক্ষ্য কৃষ্ণা
পার্থঞ্চ শক্রপ্রতিমং নিরীক্ষ্য।
স্বভ্যস্তরূপাপি নবের নিত্যং
বিনাপি হাসং হসতীব কন্যা॥
মদাদৃতেঽপি স্থলতীব ভাবৈ-
র্বাচা বিনা ব্যাহরতীব দৃষ্ট্যা।

—লক্ষ্য বিদ্ধ হয়েছে দেখে এবং ইন্দুতুল্য পার্থকে নিরীক্ষণ ক’রে কুমারী কৃষ্ণা হাস্য না ক’রেও যেন হাসতে লাগলেন। বহুবার দৃষ্ট হ’লেও তাঁর রূপ দর্শকদের কাছে নূতন বোধ হ’ল। বিনা মত্ততায় তিনি যেন ভাবাবেশে স্খলিত হ’তে লাগলেন, বিনা বাক্যে যেন দৃষ্টি দ্বারাই বলতে লাগলেন।

 দ্রৌপদী স্মিতমুখে নিঃশঙ্কচিত্তে সেই সভাস্থিত নৃপতি ও ব্রাহ্মণগণের সমক্ষে অর্জুনের বক্ষে শুক্ল বরমাল্য লম্বিত করলেন। তার পর দ্বিজগণের প্রশংসাবাক্য শুনতে শুনতে অর্জুন দ্রৌপদীকে নিয়ে সভা থেকে নির্গত হলেন।

৩৩। কর্ণ-শল্য ও ভীমার্জুনের যুদ্ধ—কুন্তী-সকাশে দ্রৌপদী

 রাজারা ক্রুদ্ধ হয়ে বলতে লাগলেন, আমাদের তৃণের ন্যায় অগ্রাহ্য ক’রে পাঞ্চালরাজ একটা ব্রাহ্মণকে কন্যাদান করতে চান, আমরা দুরাত্মা দ্রুপদ আর তার পুত্রকে বধ করব। আমাদের আহ্বান ক’রে এনে উত্তম অন্ন খাইয়ে পরিশেষে অপমান করা হয়েছে। স্বয়ংবর ক্ষত্রিয়ের জন্য, তাতে ব্রাহ্মণের অধিকার নেই। যদি এই কন্যা আমাদের কাকেও বরণ না করে তবে তাকে আগুনে ফেলে আমরা চ’লে যাব। লোভের বশে যে আমাদের অপ্রিয় কাজ করেছে সেই ব্রাহ্মণকে আমরা বধ করতে পারি না, দ্রুপদকেই বধ করব।

 রাজারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছেন দেখে দ্রুপদ শান্তির কামনায় ব্রাহ্মণদের শরণাপন্ন হলেন। ভীম একটা গাছ উপড়ে নিয়ে অর্জুনের পাশে দাঁড়ালেন, অর্জুনও ধনুর্বাণ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে রইলেন। ব্রাহ্মণেরা তাঁদের মৃগচর্ম আর করঙ্ক নেড়ে বললেন, ভয় পেয়ো না, আমরা যুদ্ধ করব। অর্জুন সহাস্যে বললেন, আপনারা দর্শক হয়ে এক পাশে থাকুন, আমি শত শত শরে এই ক্রুদ্ধ রাজাদের নিবৃত্ত করব। অনন্তর রাজারা এবং দুর্যোধনাদি ব্রাহ্মণদের দিকে ধাবিত হলেন, কর্ণ অর্জুনকে এবং শল্য ভীমকে আক্রমণ করলেন। অর্জুনের আশ্চর্য শরক্ষেপণ দেখে কর্ণ বললেন, বিপ্রশ্রেষ্ঠ, তুমি কি মূর্তিমান ধনুর্বেদ, না রাম, না বিষ্ণু? অর্জুন বললেন, আমি একজন ব্রাহ্মণ, গুরুর কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছি। এই ব’লে অজুর্ন কর্ণের ধনু ছেদন করলেন। কর্ণ অন্য ধনু নিলেন, তাও ছিন্ন হ’ল। নিজের সকল অস্ত্র বিফল হওয়ায় কর্ণ ভাবলেন, ব্রহ্মতেজ অজেয়, তখন তিনি বাইরে চ’লে গেলেন। শল্য আর ভীম বহুক্ষণ মুষ্টি আর জানু দিয়ে পরস্পরকে আঘাত করতে লাগলেন, অবশেষে ভীম শল্যকে তুলে ভূমিতে নিক্ষেপ করলেন। ব্রাহ্মণরা হেসে উঠলেন। রাজারা বললেন, এই দুই যোদ্ধা ব্রাহ্মণ বিশেষ প্রশংসার পাত্র, আমাদের যুদ্ধ থেকে বিরত হওয়াই উচিত। এঁদের পরিচয় পেলে পরে আবার সানন্দে যুদ্ধ করব। কৃষ্ণ সকলকে অনুনয় ক’রে বললেন, এঁরা ধর্মানুসারেই দ্রৌপদীকে লাভ করেছেন। তখন রাজারা নিবৃত্ত হয়ে চ’লে গেলেন।

 ভীম ও অর্জুন তাঁদের বাসস্থান কুম্ভকারের কর্মশালায় এসে আনন্দিতমনে কুন্তীকে জানালেন যে, তাঁরা ভিক্ষা এনেছেন। কুটীরের ভিতর থেকেই কুন্তী বললেন, তোমরা সকলে মিলে ভোগ কর। তার পর দ্রৌপদীকে দেখে বললেন, আমি অন্যায় কথা বলে ফেলেছি। তিনি দ্রৌপদীর হাত ধরে যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে বললেন, পুত্র, তোমার দুই ভ্রাতা দ্রুপদ রাজার এই কন্যাকে আমার কাছে এনেছে, আমি প্রমাদবশে বলেছি—সকলে মিলে ভোগ কর। যাতে এঁর পাপ না হয় তার উপায় বল। যুধিষ্ঠির একটু চিন্তা ক’রে বললেন, অর্জুন, তুমি যাজ্ঞসেনীকে[] জয় করেছ, তুমিই এঁকে যথাবিধি বিবাহ কর। অর্জুন বললেন, মহারাজ, আমাকে অধর্মভাগী করবেন না, আগে আপনার, তার পর ভীমের, তার পর আমার, তার পর নকুল-সহদেবের বিবাহ হবে। দ্রৌপদী সকলকেই দেখছিলেন, পাণ্ডবরাও পরস্পরের দিকে চেয়ে দ্রৌপদীর প্রতি আসক্ত হলেন। যুধিষ্ঠির ভ্রাতাদের মনোভাব বুঝলেন, তিনি ব্যাসের কথা স্মরণ করে এবং দ্রাতাদের মধ্যে পাছে ভেদ হয় সেই ভয়ে বললেন, ইনি আমাদের সকলেরই ভার্যা হবেন।

 এমন সময় কৃষ্ণ ও বলরাম সেখানে এলেন এবং যুধিষ্ঠির ও পিতৃষ্বসা কুন্তীর পাদবন্দনা ক’রে বললেন, আমি কৃষ্ণ, আমি বলরাম। কুশলপ্রশ্নের পর যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা এখানে গোপনে বাস করছি, বাসুদেব, তোমরা জানলে কি ক’রে? কৃষ্ণ সহাস্যে বললেন, মহারাজ, অগ্নি গুপ্ত থাকলেও প্রকাশ পায়, পাণ্ডব ভিন্ন অন্য কার এত বিক্রম? ভাগ্যক্রমে আপনারা জতুগৃহ থেকে মুক্তি পেয়েছেন, ধৃতরাষ্ট্রের পাপী পুত্রদের অভীষ্ট সিদ্ধ হয় নি। আপনাদের সমৃদ্ধিলাভ হ’ক, আপনারা গোপনে থাকবেন। এই ব’লে কৃষ্ণ-বলরাম তাঁদের শিবিরে প্রস্থান করলেন।


 ভীমার্জুন যখন দ্রৌপদীকে নিজেদের আবাসে নিয়ে আসছিলেন তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁদের পিছনে ছিলেন। কুম্ভকারের গৃহের চতুর্দিকে নিজের অনুচরদের রেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রচ্ছন্ন হয়ে রইলেন। সন্ধ্যাকালে কুন্তী ভিক্ষান্ন পাক ক’রে দ্রৌপদীকে বললেন, ভদ্রে, তুমি আগে দেবতা ব্রাহ্মণ আর আগন্তুকদের অন্ন দাও, তার পর যা থাকবে তার অর্ধ ভাগ ভীমকে দাও। অবশিষ্ট অংশ যুধিষ্ঠিরাদি চার ভ্রাতার, তোমার আর আমার জন্য ভাগ কর। দ্রৌপদী হষ্টচিত্তে কুন্তীর আজ্ঞা পালন করলেন। পাণ্ডবদের ভোজনের পর সহদেব ভূমিতে কুশশয্যা পাতলেন, তার উপরে নিজ নিজ মৃগচর্ম বিছিয়ে পঞ্চ ভ্রাতা শুয়ে পড়লেন। কুন্তী তাঁদের মাথার দিকে এবং দ্রৌপদী পায়ের দিকে শুলেন। কুশশয্যায় এইরূপে পায়ের বালিশের মতন শুয়েও দ্রৌপদীর মনে দুঃখ বা পাণ্ডবদের প্রতি অবজ্ঞার ভাব হ’ল না। পাণ্ডবরা শুয়ে শুয়ে অস্ত্র রথ হস্তী প্রভৃতি সেনাবিষয়ক আলোচনা করতে লাগলেন। অন্তরাল থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন সমস্তই শুনলেন এবং ভগিনীকে দেখলেন। তিনি রাত্রিকালেই দ্রুপদকে সকল বৃত্তান্ত জানাবার জন্য সত্বর চ’লে গেলেন।

 বিষণ্ণ দ্রুপদ পুত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, কৃষ্ণা কোথায় গেল? কোনও হীনজাতি তাকে নিয়ে যায় নি তো? আমার মস্তকে কর্দমাক্ত চরণ কে রাখলে? পুষ্পমালা কি শ্মশানে পড়েছে? অর্জুনই কি লক্ষ্যভেদ করেছেন?

  1. দ্রুপদের এক নাম যজ্ঞসেন।