মহাভারত (রাজশেখর বসু)
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত
মহাভারত
সারানুবাদ
রাজশেখর বসু
সৌতি বললেন, চরাচরগুরু হৃষীকেশ হরিকে নমস্কার ক’রে আমি ব্যাসপ্রোক্ত মহাভারতকথা আরম্ভ করছি। কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে ব’লে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরাও বলবেন।....ভগবান ব্যাস এই গ্রন্থে কুরুবংশের বিস্তার, গান্ধারীর ধর্মশীলতা, বিদুরের প্রজ্ঞা, কুন্তীর ধৈর্য, বাসুদেবের মাহাত্ম্য, পাণ্ডবগণের সত্যপরায়ণতা এবং ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণের দুর্বৃত্ততা বিবৃত করেছেন।....পূর্বকালে দেবতারা তুলাদণ্ডে ওজন ক’রে দেখেছিলেন যে উপনিষৎসহ চার বেদের তুলনায় একখানি এই গ্রন্থ মহত্ত্বে ও ভারবত্তায় অধিক, সেজন্যই এর নাম মহাভারত।
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত
মহাভারত
॥সারানুবাদ॥
রাজশেখর বসু
ভূমিকা, বিষয়সূচী, অষ্টাদশ পর্ব এবং গ্রন্থে
বহু উক্ত ব্যক্তি স্থান ও অস্ত্রাদির বিবরণ
সংবলিত পরিশিষ্ট
এম সি সরকার অ্যাণ্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ
১৪ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট, কলিকাতা ৭৩
প্রকাশক: সুপ্রিয় সরকার
এম সি সরকার অ্যাণ্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড
১৪ বঙ্কিম চাটুজ্যে স্ট্রীট, কলিকাতা ৭৩
প্রথম প্রকাশ: ১৩৬৭
মুদ্রক: রবীন দত্ত
ফ্রেণ্ডস গ্রাফিক
১১বি, বিডন রো, কলিকাতা-৬
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত
সারানুবাদ—রাজশেখর বসু
আর্যসমাজে যত কিছু, জনশ্রুতি ছড়াইয়া পড়িয়াছিল তাহাদিগকে তিনি (ব্যাস) এক করিলেন। জনশ্রুতি নহে, আর্যসমাজে প্রচলিত সমস্ত বিশ্বাস, তর্কবিতর্ক ও চারিত্রনীতিকেও তিনি এই সঙ্গে এক করিয়া একটি জাতির সমগ্রতার এক বিরাট মূর্তি এক জায়গায় খাড়া করিলেন। ইহার নাম দিলেন মহাভারত। ... ইহা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস।
মহাভারতের বর্ণিত ইতিহাস মানবসমাজের বিপ্লবের ইতিহাস।... হয়তো কোনও ক্ষুদ্র প্রাদেশিক ঘটনার স্মৃতিমাত্র অবলম্বন করিয়া মহাকবি আপনার চিত্তবৃত্তির সমাধিকালে মানবসমাজের মহাবিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন; এবং সেই স্বপ্নদৃষ্ট ধ্যানলব্ধ মহাবিপ্লবের,— ধর্মের সহিত অধর্মের মহাসমরের চিত্র ভবিষ্যৎ যুগের লোকশিক্ষার জন্য অঙ্কিত করিয়া গিয়াছেন।
ভূমিকা
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের মহাভারত প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের বৃহত্তম গ্রন্থ এবং জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের অন্যতম। প্রচুর আগ্রহ থাকলেও এই বিশাল গ্রন্থ বা তার অনুবাদ আগাগোড়া পড়া সাধারণ লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য। যাঁরা অনুসন্ধিৎসু তাঁদের দৃষ্টিতে সমগ্র মহাভারতই পুরাবৃত্ত ঐতিহ্য ও প্রাচীন সংস্কৃতির অমূল্য ভাণ্ডার, এর কোনও অংশই উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু সাধারণ পাঠক মহাভারতের আখ্যানভাগই প্রধানত পড়তে চান, আনুষঙ্গিক বহু সন্দর্ভ তাঁদের পক্ষে নীরস ও বাধাস্বরূপ।
এই পুস্তক ব্যাসকৃত মহাভারতের সারাংশের অনুবাদ। এতে মূল গ্রন্থের সমগ্র আখ্যান এবং প্রায় সমস্ত উপাখ্যান আছে, কেবল সাধারণ পাঠকের যা মনোরঞ্জন নয় সেই সকল অংশ সংক্ষেপে দেওয়া হয়েছে, যেমন বিস্তারিত বংশতালিকা, যুদ্ধবিবরণের বাহুল্য, রাজনীতি ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন বিষয়ক প্রসঙ্গ, দেবতাদের স্তুতি, এবং পুনরুক্ত বিষয়। স্থলবিশেষে নিতান্ত নীরস অংশ পরিত্যক্ত হয়েছে। এই সারানবাদের উদ্দেশ্য— মূল রচনার ধারা ও বৈশিষ্ট্য যথাসম্ভব বজায় রেখে সমগ্র মহাভারতকে উপন্যাসের ন্যায় সুখপাঠ্য করা।
মহাভারতকে সংহিতা অর্থাৎ সংগ্রহগ্রন্থ এবং পঞ্চম বেদ স্বরূপ ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। যেসকল খণ্ড খণ্ড আখ্যান ও ঐতিহ্য পুরাকালে প্রচলিত ছিল তাই সংগ্রহ ক’রে মহাভারত সংকলিত হয়েছে। এতে ভগবদ্গীতা প্রভৃতি যেসকল দার্শনিক সন্দর্ভ আছে তা অধ্যাত্মবিদ্যার্থীর অধ্যয়নের বিষয়। প্রত্নান্বেষীর কাছে মহাভারত অতি প্রাচীন সমাজ ও নীতি বিষয়ক তথ্যের অনন্ত ভাণ্ডার। ভূগোল জীবতত্ত্ব পরলোক প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রাচীন ধারণা কি ছিল তাও এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়। প্রচুর কাব্যরস থাকলেও মহাভারতকে মহাকাব্য বলা হয় না, ইতিহাস নামেই এই গ্রন্থ প্রসিদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন— ‘ইহা কোনও ব্যক্তিবিশেষের রচিত ইতিহাস নহে, ইহা একটি জাতির স্বরচিত স্বাভাবিক ইতিহাস।’
মহাভারতে সত্য ঘটনার বিবরণ কতটা আছে, কুরুপাণ্ডবযুদ্ধ মূলত কুরুপাঞ্চালযুদ্ধ কিনা, পাণ্ডু albino ছিলেন কিনা, কুন্তীর বহুদেবভজনা এবং একই কন্যার সহিত পঞ্চ পাণ্ডব ভ্রাতার বিবাহ কোনও বহুভর্তৃক (polyandrous) জাতির সূচনা করে কিনা, যুধিষ্ঠিরাদির পিতামহ কৃষ্ণদ্বৈপায়নই আদিম মহাভারতের রচয়িতা কিনা, ইত্যাদি আলোচনা এই ভূমিকার অধিকারবহির্ভূত। মহাভারতে আছে, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস এই গ্রন্থের রচয়িতা; তিনি তাঁর পৌত্রের প্রপৌত্র জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে উপস্থিত ছিলেন এবং নিজের শিষ্য বৈশম্পায়নকে মহাভারত পাঠের আদেশ দেন। শাস্ত্রবিশ্বাসী প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতগণের মতে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের কাল খ্রী-পূ ৩০০০ অব্দের কাছাকাছি, এবং তার কিছুকাল পরে মহাভারত রচিত হয়। ইওরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে আদিগ্রন্থের রচনাকাল খ্রী-পূ চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দের মধ্যে, খ্রীষ্টজন্মের পরেও তাতে অনেক অংশ যোজিত হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের কাল খ্রী-পূ ১৫৩০ বা ১৪৩০, তিলক ও অধিকাংশ আধুনিক পণ্ডিতগণের মতে প্রায় ১৪০০। ‘কৃষ্ণচরিত্র’ গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, ‘যুদ্ধের অনল্প পরেই আদিম মহাভারত প্রণীত হইয়াছিল বলিয়া যে প্রসিদ্ধি আছে তাহার উচ্ছেদ করিবার কোনও কারণ দেখা যায় না।’ বর্তমান মহাভারতের সমস্তটা এক কালে রচিত না হ’লেও এবং তাতে বহু লোকের হাত থাকলেও সমগ্র রচনাই এখন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের নামে চলে।
মহাভারতকথা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যাপারের বিচিত্র সংমিশ্রণ, পড়তে পড়তে মনে হয় আমরা এক অদ্ভুত স্বপ্নদৃষ্ট লোকে উপস্থিত হয়েছি। সেখানে দেবতা আর মানুষের মধ্যে অবাধে মেলামেশা চলে, ঋষিরা হাজার হাজার বৎসর তপস্যা করেন এবং মাঝে মাঝে অপ্সরার পাল্লায় প’ড়ে নাকাল হন; তাঁদের তুলনায় বাইবেলের মেথুসেলা অল্পায়ু শিশুমাত্র। যজ্ঞ করাই রাজাদের সব চেয়ে বড় কাজ। বিখ্যাত বীরগণ যেসকল অস্ত্র নিয়ে লড়েন তার কাছে আধুনিক অস্ত্র তুচ্ছ। লোকে কথায় কথায় শাপ দেয়, সে শাপ ইচ্ছা করলেও প্রত্যাহার করা যায় না। স্ত্রীপুরুষ অসংকোচে তাদের কামনা ব্যক্ত করে। পুত্রের এতই প্রয়োজন যে ক্ষেত্রজ পুত্র পেলেও লোকে কৃতার্থ হয়। কিছুই অসম্ভব গণ্য হয় না; গরুড় গজকচ্ছপ খান, এমন সরোবর আছে যাতে অবগাহন করলে পুরুষ স্ত্রী হয়ে যায়; মননুষ্যজন্মের জন্য নারীগর্ভ অনাবশ্যক, মাছের পেট, শরের ঝোপ বা কলসীতেও জরায়ুর কাজ হয়।
সৌভাগ্যের বিষয়, অতিপ্রাচীন ইতিহাস ও রূপকথার সংযোগে উৎপন্ন এই পরিবেশে আমরা যে নরনারীর সাক্ষাৎ পাই তাদের দোষগুণ সংখদুঃখ আমাদেরই সমান। মহাভারতের যা মুখ্য অংশ, কুরুপাণ্ডবীয় আখ্যান, তার মনোহারিতা অপ্রাকৃত ব্যাপারের চাপে নষ্ট হয় নি। স্বাভাবিক মানবচরিত্রের ঘাতপ্রতিঘাত, নাটকীয় ঘটনাসংস্থান, সরলতা ও চক্রান্ত, করুণা ও নিষ্ঠুরতা, ক্ষমা ও প্রতিহিংসা, মহত্ত্ব ও নীচতা, নিষ্কাম কর্ম ও ভোগের আকাঙ্ক্ষা, সবই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। আজকাল যাকে ‘মনস্তত্ত্ব’ বলা হয়, অর্থাৎ গল্পবর্ণিত নরনারীর আচরণের আকস্মিকতা এবং জটিল প্রণয়ব্যাপার, তারও অভাব নেই। অতিপ্রাচীন ব্যাস ঋষি যেকোনও অর্বাচীন গল্পকারকে এই বিদ্যায় পরাস্ত করতে পারেন।
জীবন্ত মানুষের চরিত্রে যত জটিলতা আর অসংগতি দেখা যায় গল্পবর্ণিত চরিত্রে ততটা দেখালে চলে না। নিপুণ রচয়িতা যখন বিরুদ্ধ গুণাবলীর সমাবেশ করেন তখন তাঁকে সাবধান হতে হয় যেন পাঠকের কাছে তা নিতান্ত অসম্ভব না ঠেকে। বাস্তব মানবচরিত্র যত বিপরীতধর্মী, কল্পিত মানবচরিত্র ততটা হ’তে পারে না, বেশী টানাটানি করলে রসভঙ্গ হয়, কারণ, পাঠকসাধারণের প্রত্যয়ের একটা সীমা আছে। প্রাচীন কথাকারগণ এ বিষয়ে অবহিত ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। মহাকাব্যের লেখকরা বরং অতিরিক্ত সরলতার দিকে গেছেন, তাঁদের অধিকাংশ নায়কনায়িকা ছাঁচে ঢালা পালিশ করা প্রাণী, তাদের চরিত্রে কোথাও খোঁচ বা আঁচড় নেই। রঘুবংশের দিলীপ রঘু অজ প্রভৃতি একই আদর্শে কল্পিত। মহাভারত অতি প্রাচীন গ্রন্থ, কিন্তু এতে বহু চরিত্রের যে বৈচিত্র্য দেখা যায় পরবর্তী ভারতীয় সাহিত্যে তা দুর্লভ। অবশ্য এ কথা বলা যায় না যে মহাভারতে গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন আছে। মহাভারত সংহিতা গ্রন্থ, এতে বহু রচয়িতার হাত আছে এবং একই ঘটনার বিভিন্ন কিংবদন্তী গ্রথিত হয়েছে। মূল আখ্যান সম্ভবত একজনেরই রচনা, কিন্তু পরে বহু লেখক তাতে যোগ করেছেন। এমন আশা করা যায় না যে তাঁরা প্রত্যেকে সতর্ক হয়ে একটি পূর্বনির্ধারিত বিরাট পরিকল্পনার বিভিন্ন অংশ গড়বেন, মূল প্ল্যান থেকে কোথাও বিচ্যুত হবেন না। মহাভারত তাজমহল নয়, বারোয়ারী উপন্যাসও নয়।
সকল দেশেই কুম্ভীলক বা plagiarist আছেন যাঁরা পরের রচনা চুরি করে নিজের নামে চালান। কিন্তু ভারতবর্ষে কুম্ভীলকের বিপরীতই বেশী দেখা যায়। এঁরা কবিযশঃপ্রার্থী নন, বিখ্যাত প্রাচীন গ্রন্থের মধ্যে নিজের রচনা গুঁজে দিয়েই কৃতার্থ হন। এইপ্রকার বহু রচয়িতা ব্যাসের সহিত একাত্মা হবার ইচ্ছায় মহাভারতসমূদ্রে তাঁদের ভাল মন্দ অর্থ প্রক্ষেপ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র যাকে মহাভারতের বিভিন্ন স্তর বলেছেন তা এইরূপে উৎপন্ন হয়েছে। কেউ কেউ কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব পাকা করবার জন্য স্থানে অস্থানে তাঁকে দিয়ে অনর্থক অলৌকিক লীলা দেখিয়েছেন, কিংবা কুটিল বা বালকোচিত অপকর্ম করিয়েছেন। কেউ সুবিধা পেলেই মহাদেবের মহিমা কীর্তন করে তাঁকে কৃষ্ণের উপরে স্থান দিয়েছেন; কেউ বা গো-ব্রাহ্মণের মাহাত্মা, ব্রত-উপবাসাদির ফল বা স্ত্রীজাতির কুৎসা প্রচার করেছেন, কেউ বা আষাঢ়ে গল্প জুড়ে দিয়েছেন। বঙ্কিমচন্দ্র উত্ত্যক্ত হয়ে ‘কৃষ্ণচরিত্র’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘এ ছাই ভগ্ন মাথামুণ্ডের সমালোচনা বিড়ম্বনা মাত্র। তবে এ হতভাগ্য দেশের লোকের বিশ্বাস যে যাহা কিছু পুঁথির ভিতর পাওয়া যায় তাহাই ঋষিবাক্য, অভ্রান্ত, শিরোধার্য। কাজেই এ বিড়ম্বনা আমাকে স্বীকার করিতে হইয়াছে।’
বঙ্কিমচন্দ্র কৃষ্ণচরিত্রের জন্য তথ্য খুঁজছিলেন তাই তাঁকে বিড়ম্বনা স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু যিনি কথাগ্রন্থ হিসাবেই মহাভারত পড়বেন তাঁর ধৈর্যচ্যুতি হবার কারণ নেই। তিনি প্রথমেই মেনে নেবেন যে এই গ্রন্থে বহু লোকের হাত আছে, তার ফলে উত্তম মধ্যম ও অধম রচনা মিশে গেছে, এবং সবই একসঙ্গে পড়তে হবে। কিন্তু জঞ্জাল যতই থাকুক, মহাভারতের মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে কোনও বাধা হয় না। সহৃদয় পাঠক এই জগদ্বিখ্যাত প্রাচীন গ্রন্থের আখ্যানভাগ সমস্তই সাগ্রহে পড়তে পারবেন। তিনি এর শ্রেষ্ঠ প্রসঙ্গসমূহ মগ্ধচিত্তে উপভোগ করবেন এবং কুরচিত বা উৎকট যা পাবেন তা সকৌতুকে উপেক্ষা করবেন।
মহাভারতে যে ঘটনাগত অসংগতি দেখা যায় তার কারণ—বিভিন্ন কিংবদন্তীর যোজনা। চরিত্রগত অসংগতির একটি কারণ—বহু রচয়িতার হস্তক্ষেপ, অন্য কারণ—প্রাচীন ও আধুনিক আদর্শের পার্থক্য। সেকালের আদর্শ এবং ন্যায়-অন্যায়ের বিচারপদ্ধতি সকল ক্ষেত্রে একালের সমান বা আমাদের বোধগম্য হতে পারে না। মহামতি দ্রোণাচার্য একলব্যকে তার আঙুল কেটে দক্ষিণা দিতে বললেন, অর্জুনও তাতে খুশী। জতুগৃহ থেকে পালাবার সময় পাণ্ডবরা বিনা দ্বিধায় এক নিষাদী ও তার পাঁচ পুত্রকে পুড়ে মরতে দিলেন। দুঃশাসন যখন চুল ধরে দ্রৌপদীকে দ্যূতসভায় টেনে নিয়ে এল তখন দ্রৌপদী আকুল হয়ে বললেন, “ভীষ্ম দ্রোণ বিদুর আর রাজা ধৃতরাষ্ট্রের কি প্রাণ নেই; কুরুবৃদ্ধগণ এই দারুণ অধর্মাচার কি দেখতে পাচ্ছেন না?” দ্রৌপদী বহুবার প্রশ্ন করলেন, ‘আমি ধর্মানুসারে বিজিত হয়েছি কিনা আপনারা বলুন।’ ভীষ্ম বললেন, ধর্মের তত্ত্ব অতি সূক্ষ্ম, আমি তোমার প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিতে পারছি না। বীরশ্রেষ্ঠ শিভালরস কর্ণ অম্লানবদনে দুঃশাসনকে বললেন, ‘পাণ্ডবদের আর দ্রৌপদীর বস্হরণ কর।’ মহাপ্রাজ্ঞ ভীম্ম আর মহাতেজস্বী দ্রোণ চুপ ক’রে বসে ধর্মের সূক্ষ্ম তত্ত্ব ভাবতে লাগলেন। ভীষ্ম-দ্রোণ দুর্যোধনাদির অন্নদাস এবং কৌরবদের হিতসাধনের জন্য প্রাতিজ্ঞাবদ্ধ, কিন্তু দুর্যোধনের উৎকট দুষ্কর্ম সইতেও কি তাঁরা বাধ্য ছিলেন? তাঁদের কি স্বতন্ত্র হয়ে কিংবা যুদ্ধে কোনও পক্ষে যোগ না দিয়ে থাকবার উপায় ছিল না? এ প্রশ্নের আমরা বিশদ উত্তর পাই না। যুদ্ধারম্ভের পূর্বক্ষণে যখন যুধিষ্ঠির ভীষ্মের পদস্পর্শ ক’রে আশীর্বাদ ভিক্ষা করলেন তখন ভীম্ম এই ব’লে আত্মগ্লানি জানালেন—‘কৌরবগণ অর্থ দিয়ে আমাকে বেঁধে রেখেছে, তাই ক্লীবের ন্যায় তোমাকে বলছি, আমি পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করতে পারি না।’ দ্রোণ ও কৃপও অনুরূপ বাক্য বলেছেন। এঁদের মর্যাদাবুদ্ধি বা code of honour আমাদের পক্ষে বোঝা কঠিন। এঁরা পাণ্ডবদের প্রতি পক্ষপাত গোপন করেন না, অথচ যুদ্ধকালে পাণ্ডবদের বহু নিকট আত্মীয় ও বন্ধুকে অসংকোচে বধ করেছেন।
ভাগ্যক্রমে মহাভারতে চরিত্রগত অসংগতি খুব বেশী নেই। অধিকাংশ স্থলে মহাভারতায় নরনারী স্বাভাবিক রূপেই চিত্রিত হয়েছে, তাদের আচরণ আমাদের অবোধ্য নয়। যেটুকু জটিলতা পাওয়া যায় তাতে আমাদের আগ্রহ ও কৌতৃহল বেড়ে ওঠে, আমরা যেন জীবন্ত মানুষকে চোখের সামনে দেখতে পাই। মূল আখ্যানের ব্যাস শান্তনু ভীষ্ম ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী বিদুর দ্রোণ অশ্বত্থামা পঞ্চপাণ্ডব দ্রৌপদী দুর্যোধন কর্ণ শকুনি কৃষ্ণ সত্যভামা বলরাম শিশুপাল শল্য অম্বা-শিখণ্ডী প্রভৃতি, এবং উপাখ্যানবর্ণিত কচ দেবযানী শর্মিষ্ঠা বিদুলা নল দময়ন্তী ঋষ্যশৃঙ্গ সাবিত্রী প্রভৃতি, প্রত্যেকেরই বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে কেবল কয়েকজনের সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা করছি।—
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস বিচিত্রবীর্যের বৈপিত্র ভ্রাতা, তাঁকে আমরা শান্তনু থেকে আরম্ভ ক’রে জনমেজয় পর্যন্ত সাতপুরুষের সমকালবর্তী রূপে দেখতে পাই। ইনি মহাজ্ঞানী সিদ্ধপুরুষ, কিন্তু সুপুরুষ মোটেই নন। শাশুড়ী সত্যবতীর অনুরোধে অম্বিকা ও অম্বালিকা অত্যন্ত বিতৃষ্ণায় ব্যাসের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন; অম্বিকা চোখ বুজে ভীষ্মাদিকে ভেবেছিলেন, অম্বালিকা ভয়ে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। ব্যাস ধৃতরাষ্ট্র-পাণ্ডু-বিদুরের জন্মদাতা, কিন্তু প্রাচীন রীতি অনুসারে অপরের ক্ষেত্রে উৎপাদিত এই সন্তানদের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। উদাসীন হ’লেও তিনি কুরুপাণ্ডবের হিতকামী, deus ex machinaর ন্যায় মাঝে মাঝে আবির্ভূত হয়ে সংকটমোচন এবং সমস্যার সমাধান করেন।
ভীষ্মচরিত্রের মহত্ত্ব আমাদের অভিভূত করে। তিনি দ্যূতসভায় দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন নি—এ আমরা ভুলতে পারি না; কিন্তু অনুমান করতে পারি যে তৎকালে তাঁর নিশ্চেষ্টতা, যুদ্ধে দুর্যোধনের পক্ষে যোগদান, এবং পরিশেষে পাণ্ডবদের হিতার্থে মৃত্যুবরণ—এই সমস্তের কারণ তাঁর প্রাচীন আদর্শ অনুযায়ী কর্তব্যবদ্ধি। তিনি তাঁর কামুক পিতার জন্য কুরুরাজ্যের উত্তরাধিকার ত্যাগ করলেন, চিরকুমারব্রত নিয়ে দুই অপদার্থ বৈমাত্র ভ্রাতা চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্যের অভিভাবক হলেন, এবং আজীবন নিষ্কামভাবে ভ্রাতার বংশধরদের সেবা করলেন। তাঁর পিতৃভক্তিতে আমরা চমৎকৃত হই, কিন্তু আমাদের খেদ থাকে যে অনুপযুক্ত কারণে তিনি এই অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ভীষ্ম তাঁর ভ্রাতার জন্য ক্ষত্রিয় রীতি অনুসারে কাশীরাজের তিন কন্যাকে স্বয়ংবরসভা থেকে হরণ করেছিলেন, কিন্তু জ্যেষ্ঠা অম্বা শাল্বরাজের অনুরাগিণী জেনে তাঁকে সসম্মানে শাল্বের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। অভাগিনী অম্বা সেখানে প্রত্যাখ্যাত হয়ে সংকল্প করলেন যে ভীষ্মের বধসাধন করবেন। অম্বার এই ভীষণ আক্রোশের উপযুক্ত কারণ আমরা খুঁজে পাই না। উদ্যোগপর্বে আছে, পরশুরাম ভীষ্মকে বলেছিলেন, ‘তুমি এঁকে গ্রহণ ক’রে বংশরক্ষা কর।’ ভীষ্ম সম্মত হন নি। অম্বার মনে কি ভীষ্মের প্রতি প্রচ্ছন্ন অনুরাগ জন্মেছিল? ভীষ্ম-অম্বার প্রণয় কল্পনা ক’রে বাংলায় একাধিক নাটক রচিত হয়েছে।
দ্রোণ দ্রুপদের বাল্যসখা, কিন্তু পরে অপমানিত হওয়ায় দ্রুপদের উপর তাঁর ক্রোধ হয়েছিল। কুরু-পাণ্ডব রাজকুমারদের সাহায্যে দ্রুপদকে পরাস্ত ক’রে দ্রোণ পাঞ্চালরাজ্যের কতক অংশ কেড়ে নিয়েছিলেন। তার পরে দ্রুপদের উপর তাঁর আর ক্রোধ ছিল না, কিন্তু দ্রুপদ প্রতিশোধের জন্য উদ্যোগী হলেন। উদার স্বভাব দ্রোণ তা জেনেও দুপদপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন ও শিখণ্ডীকে অস্ত্রশিক্ষা দিয়েছিলেন। কুরুক্ষেত্রযদ্ধে দ্রোণের হস্তেই দ্রুপদের মৃত্যু হ’ল, ধৃষ্টদ্যুম্নও পিতৃহন্তার শিরশ্ছেদ করলেন। কৌরবপক্ষে থাকলেও দ্রোণ অর্জুনের প্রতি তাঁর পক্ষপাত গোপন করেন নি, এজন্য তাঁকে দুর্যোধনের বহু কটূ বাক্য শুনতে হয়েছে।
ধৃতরাষ্ট্র অব্যবস্থিতচিত্ত, তাঁর নীচতা আছে উদারতাও আছে, দূর্যোধন তাঁকে সম্মোহিত ক’রে রেখেছিলেন। দ্যূতসভায় বিদূর ধৃতরাষ্ট্রকে বলেছেন, ‘মহারাজ, দুর্যোধনের জয়ে আপনার খুব আনন্দ হচ্ছে, কিন্তু এ থেকেই যদ্ধ আর লোকক্ষয় হবে। ধনের প্রতি আপনার আকর্ষণ আছে এবং তার জন্য আপনি মন্ত্রণা করেছেন তা আমি জানি।’ এই অস্থিরমতি হতভাগ্য অন্ধ বৃদ্ধের ধর্মবুদ্ধি মাঝে মাঝে জেগে ওঠে, তখন তিনি দুর্যোধনকে ধমক দেন। সংকটে পড়লে তিনি বিদুরের কাছে মন্ত্রণা চান, কিন্তু স্বার্থত্যাগ করতে হবে শুনলেই চ’টে ওঠেন। ধৃতরাষ্ট্রের আন্তরিক ইচ্ছা যুদ্ধ না হয় এবং দুর্যোধন যা অন্যায় উপায়ে দখল করেছেন তা বজায় থাকে। কৃষ্ণ যখন পাণ্ডবদূত হয়ে হস্তিনাপুরে আসেন তখন ধৃতরাষ্ট্র তাঁকে ঘুষ দিয়ে বশে আনবার ইচ্ছা করেছিলেন। দারুণ শোক পেয়ে শেষ দশায় তাঁর স্বভাব পরিবর্তিত হ’ল, যধিষ্ঠিরকে তিনি পুত্রতুল্য জ্ঞান করলেন। আশ্রমবাসিকপর্বে বনগমনের পূর্বে প্রজাদের নিকট বিদায় নেবার সময় ধৃতরাষ্ট্র যা বলেছেন তা সদাশয়তার পরিচায়ক।
গান্ধারী মনস্বিনী, তিনি পত্রের দুর্বৃত্ততা ও স্বামীর দুর্বলতা দেখে শঙ্কিত হন, ভর্ৎসনাও করেন, কিন্তু প্রতিকার করতে পারেন না। শতপুত্রের মৃত্যুর পর কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠিরের উপর তাঁর অতি স্বাভাবিক বিদ্বেষ হয়েছিল, কিন্তু তা দীর্ঘকাল রইল না। পরিশেষে তিনিও পাণ্ডবগণকে পুত্রতুল্য জ্ঞান করলেন।
কুন্তী দৃঢ়চরিত্রা তেজস্বিনী বীরনারী, দ্রৌপদীর যোগ্য শাশুড়ী। তিনি যখনই মনে করেছেন যে পুত্রেরা নিরুদ্যম হয়ে আছে তখনই অনতিতীক্ষ্ণ বাক্যে তাঁদের উৎসাহিত করেছেন। উদ্যোগপর্বে কুন্তী যুধিষ্ঠিরকে বলেছেন, “পুত্র, তুমি মন্দমতি, শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণের ন্যায় কেবল শাস্ত্র আলোচনা ক’রে তোমার বুদ্ধি বিকৃত হয়েছে, তুমি কেবল ধর্মেরই চিন্তা করেছ।”
যুধিষ্ঠির অর্জুনের তুল্য কীর্তিমান নন, কিন্তু তিনিই মহাভারতের নায়ক ও কেন্দ্রস্থ পুরুষ। তাঁকে নির্বোধ বললে অবিচার হবে, কিন্তু দ্যূতপ্রিয়তা উদারতা ও ধর্মভীরুতার জন্য সময়ে সময়ে তিনি কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সাধারণত তাঁর ক্রোধ অল্প সেজন্য প্রতিশোধের প্রবৃত্তি তীক্ষ্ণ নয়; কিন্তু কদাচিৎ তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, যেমন কর্ণপর্বে অর্জুনের উপর। তিনি বিশেষ যুদ্ধপটু নন, সেজন্য তাঁর ভ্রাতারা তাঁকে একটু আড়ালে রাখেন, তথাপি মাঝে মাঝে তিনি বীরত্ব দেখিয়েছেন। দ্রোণবধের উদ্দেশ্যে কৃষ্ণের প্ররোচনায় নিতান্ত অনিচ্ছায় তিনি মিথ্যা বলেছেন, কিন্তু সাধারণত পাপপুণ্যের সূক্ষ্ম বিচার না করে তিনি কোনও কর্ম করেন না, এজন্য দ্রৌপদী আর ভীমের কাছে তাঁকে বহু ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। যুধিষ্ঠিরের অহংবুদ্ধি বড় বেশী, তার ফলে কেবলই নিজেকে পাপী মনে করে মনস্তাপ ভোগ করেন। বার বার তাঁর মুখে বৈরাগ্যের কথা শুনে ব্যাসদেবও বিরক্ত হয়ে তাঁকে ভর্ৎসনা করেছেন। যুধিষ্ঠির ভালমানুষ হ’লেও দৃঢ়চিত্ত, যা সংকল্প করেন তা থেকে টলেন না। অবস্থাবিশেষে তিনি realist ও হ’তে পারেন। কপট উপায়ে দ্রোণবধের জন্য অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে তিরস্কার করেছিলেন, কিন্তু যুধিষ্ঠির বিশেষ অনুতপ্ত হন নি। অশ্বত্থামা যখন নারায়ণাস্ত্রে পাণ্ডবসৈন্য বধ করছিলেন তখন অর্জুনকে নিশ্চেষ্ট দেখে যুধিষ্ঠির দ্রোণের অন্যায় কার্যাবলীর উল্লেখ ক’রে ব্যঙ্গ ক’রে বললেন, ‘আমাদের সেই পরম সুহৃৎ নিহত হয়েছেন, অতএব আমরাও সবান্ধবে প্রাণত্যাগ করব।’ ভীম নাভির নিম্নে গদাপ্রহার ক’রে দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ করলেন দেখে বলরাম অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ভর্ৎসনা ক’রে চ’লে গেলেন। তখন যুধিষ্ঠির বিষণ্ণ হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, 'ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা আমাদের উপর বহু অত্যাচার করেছে, সেই দারুণ দুঃখ ভীমের হৃদয়ে রয়েছে, এই চিন্তা ক’রে আমি ভীমের আচরণ উপেক্ষা করলাম।’ যুধিষ্ঠিরের মহত্ত্ব সব চেয়ে প্রকাশ পেয়েছে শেষ পর্বে। তিনি স্বর্গে এলে ইন্দ্র তাঁকে ছলক্রমে নরকদর্শন করতে পাঠালেন। যুধিষ্ঠির মনে করলেন তাঁর ভ্রাতারা ও দ্রৌপদী সেখানেই যন্ত্রণাভোগ করছেন। তখন তিনি স্বর্গের প্রলোভন ও দেবতাদের অনুরোধ পরম অবজ্ঞায় উপেক্ষা ক’রে বললেন, ‘আমি ফিরে যাব না, এখানেই থাকব।’
ভীমকে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, ‘রক্তপ রাক্ষস।’ যুধিষ্ঠিরের মুখে অশ্বত্থামার মিথ্যা মৃত্যুসংবাদ শুনে দ্রোণ যখন অবসন্ন হয়েছেন তখন ভীম নির্মম ভাষায় দ্রোণকে তিরস্কার করলেন। ভীম কর্তৃক দুঃশাসনের রক্তপানের বিবরণ ভীষণ ও বীভৎস। তথাপি সাধারণ লোকে এই স্থূলবুদ্ধি হঠকারী প্রতিহিংসাপরারণ নির্দয় লোকটিকে স্নেহ করে। ভীম তাঁর বৈমাত্র ভ্রাতা হনুমানের মত আরাধ্য হ’তে না পারলেও জনপ্রিয় হয়েছেন, কারণ তিনি উৎকট অপরাধের উৎকট শাস্তি দিতে পারেন। সেকালের যাত্রার ভীম, যিনি ‘দাদা আর গদা’ ভিন্ন কিছুই জানতেন না, যখন অয়েলক্লথের গদা নিয়ে আসরে নামতেন তখন আবালবৃদ্ধবনিতা উৎফুল্ল হ’ত। ভীম চমৎকার কুযুক্তি দিতে পারেন। বনবাসে তের মাস যেতে না যেতে অধীর হয়ে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ‘কৃষক যেমন অল্প পরিমাণ বীজের পরিবর্তে বহু শস্য পায়, বুদ্ধিমান সেইরূপ অল্প ধর্ম বিসর্জন দিয়ে বৃহৎ ধর্ম লাভ করেন। ... সোমলতার প্রতিনিধি যেমন পূতিকা, সেইরূপ বৎসরের প্রতিনিধি মাস। আপনি তের মাসকেই তের বৎসর গণ্য করুন। যদি এইরূপ গণনা অন্যায় মনে করেন তবে একটা সাধুস্বভাব ষণ্ডকে প্রচুর আহার দিয়ে তৃপ্ত করুন, তাতেই পাপমুক্ত হবেন। ভীম মাংসলোভী পেটুক ছিলেন এবং তাঁর গোঁফদাড়ির অভাব ছিল; কর্ণ তাঁকে ঔদরিক আর তূবরক (মাকুন্দ) ব’লে খেপাতেন। শান্তিপর্বে যুধিষ্ঠির বলেছেন, ‘ভীম, অজ্ঞ লোকে উদরের জন্যই প্রাণিহিংসা করে, অতএব সেই উদরকে জয় কর, অল্পাহারে জঠরাগ্নি প্রশমিত কর।’ ধৃতরাষ্ট্রাদির অপরাধ ভীম কখনই ভুলতে পারেন নি, যুধিষ্ঠিরের আশ্রিত পুত্রহীন জ্যেষ্ঠতাতকে কিঞ্চিৎ অর্থ দিতেও তিনি আপত্তি করেছেন। তাঁর গঞ্জনা সইতে না পেরেই ধৃতরাষ্ট্র বনে যেতে বাধ্য হলেন।
অর্জুন সর্বগুণান্বিত এবং মহাভারতের বীরগণের মধ্যে অগ্রগণ্য। তিনি কৃষ্ণের সখা ও মন্ত্রশিষ্য, প্রদ্যুম্ন ও সাত্যকির অস্ত্রশিক্ষক, নানা বিদ্যায় বিশারদ এবং অতিশয় রূপবান। মহাকাব্যের নায়কোচিত সমস্ত লক্ষণ তাঁর আছে, এই কারণে এবং অত্যধিক প্রশস্তির ফলে তিনি কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছেন। অর্জুন ধীরপ্রকৃতি, কিন্তু মাঝে মাঝে অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কর্ণপর্বে যুধিষ্ঠির তাঁকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, ‘তোমার গাণ্ডীব ধনু অন্যকে দাও।’ তাতে অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে কাটতে গেলেন, অবশেষে কৃষ্ণ তাঁকে শান্ত করলেন। কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের পূর্বক্ষণে কৃষ্ণ অর্জুনকে যে গীতার উপদেশ শুনিয়েছিলেন তা পেয়ে জগতের লোক ধন্য হয়েছে। অর্জুনের ‘ক্ষুদ্র হৃদয়দৌর্বল্য’ দূর হয়েছিল, কিন্তু কোনও স্থায়ী উপকার হয়েছিল কিনা সন্দেহ। আশ্বমেধিকপর্বে অর্জুন কৃষ্ণের কাছে স্বীকার করেছেন যে বুদ্ধির দোষে তিনি পূর্বের উপদেশ ভুলে গেছেন।
নকুল-সহদেবের চরিত্রে অসামান্যতা বেশী কিছু পাওয়া যায় না। উদ্যোগপর্বে কৃষ্ণ যখন পাণ্ডবদূত হয়ে হস্তিনাপুরে যাচ্ছিলেন তখন নকুল তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা কালোচিত মনে কর তাই করবে।’ কিন্তু সহদেব বললেন, ‘যাতে যুদ্ধ হয় তুমি তাই করবে, কৌরবরা শান্তি চাইলেও তুমি যুদ্ধ ঘটাবে।’ মহাপ্রস্থানিকপর্বে যুধিষ্ঠির বলেছেন, ‘সহদেব মনে করতেন তাঁর চেয়ে বিজ্ঞ কেউ নেই। নকুল মনে করতেন তাঁর চেয়ে রূপবান কেউ নেই।’
মহাভারতে সকল পাণ্ডবেরই দ্রৌপদী ভিন্ন অন্য পত্নীর উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু ভীমের পত্নী হিড়িম্বা এবং অর্জুনের পত্নী উলূপী চিত্রাঙ্গদা ও সুভদ্রা ছাড়া আর সকলের স্থান আখ্যানমধ্যে নগণ্য।
দ্রৌপদী সীতা-সাবিত্রীর শ্রেণীতে স্থান পান নি, তিনি নিত্যস্মরণীয়া পঞ্চকন্যার একজন। দ্রৌপদী সর্ব বিষয়ে অসামান্যা, প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে অন্য কোনও নারী তাঁর তুল্য জীবত রূপে চিত্রিত হন নি। তিনি অতি রূপবতী, কিন্তু শ্যামাঙ্গী সেজন্য তাঁর নাম কৃষ্ণা। বার বৎসর বনবাস প্রায় শেষ হয়ে এলে সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ তাঁকে হরণ করতে আসেন। তখন বয়সের হিসাবে দ্রৌপদী যৌবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন, তিনি পঞ্চ বীর পুত্রের জননী, তারা দ্বারকায় অস্ত্রশিক্ষা করছে। তথাপি জয়দ্রথ তাঁকে দেখে বলছেন, ‘এঁকে পেলে আমার আর বিবাহের প্রয়োজন নেই, এই নারীকে দেখে মনে হচ্ছে অন্য নারীরা বানরী।’ দ্রৌপদী যখন বিরাটভবনে সৈরিন্ধ্রী রূপে এলেন তখন রাজমহিষী সুদেষ্ণা তাঁকে দেখে বললেন, ‘তোমার করতল পদতল ও ওষ্ঠ রক্তবর্ণ, তুমি হংসগদ্গদভাষিণী, সুকেশী, সুস্তনী,···কাশ্মীরী তুরঙ্গমীর ন্যায় সদর্শনা। ···রাজা যদি তোমার উপর লুব্ধ না হন তবে তোমাকে মাথায় ক’রে রাখব। এই রাজভবনে যেসকল নারী আছে তারা একদৃষ্টিতে তোমাকে দেখছে, পুরুষেরা মোহিত হবে না কেন?···সুন্দরী, তোমার অলৌকিক রূপ দেখে বিরাট রাজা আমাকে ত্যাগ ক’রে সর্বান্তঃকরণে তোমাতেই আসক্ত হবেন।’ এই আশঙ্কাতেই সুদেষ্ণা দ্রৌপদীকে কীচকের কবলে ফেলতে সম্মত হয়েছিলেন। দ্রৌপদী অবলা নন, জয়দ্রথ ও কীচককে ধাক্কা দিয়ে ভূমিশায়ী করেছিলেন। তিনি অসহিষ্ণু তেজস্বিনী স্পষ্টবাদিনী, তীক্ষ্ণ বাক্যে নিষ্ক্রিয় পুরুষদের উত্তেজিত করতে পারেন। তাঁর বাগ্মিতার পরিচয় অনেক স্থানে পাওয়া যায়। বনপর্ব ৫-পরিচ্ছেদে, উদ্যোগপর্ব ১০-পরিচ্ছেদে, এবং শান্তিপর্ব ২-পরিচ্ছেদে দ্রৌপদীর খেদ ও ভর্ৎসনার যে নাটকীয় বিবরণ আছে তা সর্ব সাহিত্যে দুর্লভ। বহু কষ্ট ভোগ ক’রে তাঁর মন তিক্ত হয়ে গেছে, মঙ্গলময় বিধাতায় তাঁর আস্থা নেই। বনপর্ব ৭-পরিচ্ছেদে তিনি যুধিষ্ঠিরকে বলেছেন, ‘মহারাজ, বিধাতা প্রাণিগণকে মাতাপিতার দৃষ্টিতে দেখেন না, তিনি রুষ্ট ইতরজনের ন্যায় ব্যবহার করেন।’ দ্রৌপদী মাঝে মাঝে তাঁর পঞ্চ স্বামীকে বাক্যবাণে পীড়িত করেন, স্বামীরা তা নির্বিবাদে সয়ে যান। তাঁরা দ্রৌপদীকে সম্মান ও সমাদর করেন। বিরাটপর্বে যুধিষ্ঠির বলেছেন, ‘আমাদের এই ভার্যা প্রাণাপেক্ষা প্রিয়া, মাতার ন্যায় পালনীয়া, জ্যেষ্ঠা ভগিনীর ন্যায় রক্ষণীয়া।’ দ্রৌপদী পাঁচ স্বামীকেই ভালবাসেন, কিন্তু তাঁর ভালবাসার কিছু প্রকারভেদ দেখা যায়। যুধিষ্ঠির তাঁকে অনেক জ্বালিয়েছেন, তথাপি দ্রৌপদী তাঁর জ্যেষ্ঠ স্বামীকে ভক্তি করেন, অনুকম্পা ও কিঞ্চিৎ অবজ্ঞাও করেন, ভালমানুষ অবুঝ একগুঁয়ে গুরুজনকে লোকে যেমন ক’রে থাকে। বিপদের সময় দ্রৌপদী ভীমের উপরেই বেশী ভরসা রাখেন এবং শক্ত কাজের জন্য তাঁকেই ফরমাশ করেন, তাতে ভীম কৃতার্থ হয়ে যান। নকুল-সহদেবকে তিনি দেবরের ন্যায় স্নেহ করেন। অর্জুন তাঁর প্রথম অনুরাগের পাত্র, পরেও বোধ হয় অর্জুনের উপরেই তাঁর প্রকৃত প্রেম ছিল। মহাপ্রস্থানিকপর্বে যুধিষ্ঠির বলেছেন, ‘ধনঞ্জয়ের উপর এঁর বিশেষ পক্ষপাত ছিল।’ বিদেশে অর্জুন কিছুকাল উলূপী ও চিত্রাঙ্গদার সঙ্গে কাটিয়েছিলেন, দ্রৌপদী তা গ্রাহ্য করেন নি। কিন্তু অর্জুন যখন রূপবতী সুভদ্রাকে ঘরে আনলেন তখন দ্রৌপদী অতি দুঃখে বললেন, ‘কৌন্তেয়, তুমি সুভদ্রার কাছেই যাও, পুনর্বার বন্ধন করলে পূর্বের বন্ধন শিথিল হয়ে যায়।’ দ্রৌপদীর একটি বৈশিষ্ট্য—কৃষ্ণের সহিত তাঁর স্নিগ্ধ সম্বন্ধ। তিনি কৃষ্ণের সখী এবং সুভদ্রার ন্যায় স্নেহভাগিনী, সকল সংকটে কৃষ্ণই তাঁর শরণ্য ও স্মরণীয়।
দুর্যোধন মহাভারতের প্রতিনায়ক এবং পূর্ণ পাপী। তাঁর তুল্য রাজ্যলোভী বা প্রভুত্বলোভী ধর্মজ্ঞানহীন দুর্মুখ ক্রূর দুরাত্মা এখনও দেখা যায়, এই কারণে তাঁর চরিত্র আমাদের সুপরিচিত মনে হয়। তিনি আজীবন পাণ্ডবদের অনিষ্ট করেছেন, নিজেও ঈর্ষা ও বিদ্বেষে দগ্ধ হয়েছেন, তাঁর দুই মন্ত্রণাদাতা কর্ণ ও শকুনি তাতে ইন্ধন যুগিয়েছেন। দুর্যোধন নিয়তিবাদী। সভাপর্বে তিনি বিদুরকে বলেছেন, ‘যিনি গর্ভস্থ শিশুকে শাসন করেন তিনিই আমার শাসক; তাঁর প্রেরণায় আমি জলস্রোতের ন্যায় চালিত হচ্ছি।’ উদ্যোগপর্বে কণ্ব মুনি তাঁকে সদুপদেশ দিলে দুর্যোধন ঊরুতে চাপড় মেরে বললেন, ‘মহর্ষি, ঈশ্বর আমাকে যেমন সৃষ্টি করেছেন এবং ভবিষ্যতে আমার যা হবে আমি সেই ভাবেই চলছি, কেন প্রলাপ বকছেন?’ কিন্তু শয়তানকেও তার ন্যায্য পাওনা দিতে হয়। দুর্যোধনের অন্ধকারময় চরিত্রে আমরা একবার একটু স্নিগ্ধ আলোক দেখতে পাই।—দ্রোণবধের দিন প্রাতঃকালে সাত্যকিকে দেখে তিনি বলেছেন, ‘সখা, ক্রোধ লোভ ক্ষত্রিয়াচার ও পৌরুষকে ধিক—আমরা পরস্পরের প্রতি শরসন্ধান করছি! বাল্যকালে আমরা পরস্পরের প্রাণ অপেক্ষা প্রিয় ছিলাম, এখন এই রণস্থলে সে সমস্তই জীর্ণ হয়ে গেছে। সাত্যকি, আমাদের সেই বাল্যকালের খেলা কোথায় গেল, এই যুদ্ধই বা কেন হ’ল? যে ধনের লোভে আমরা যুদ্ধ করছি তা নিয়ে আমরা কি করব?’ আশ্রমবাসিকপর্বে প্রজাদের নিকট বিদায় নেবার সময় ধৃতরাষ্ট্র তাঁর মৃত পুত্রের সপক্ষে বলেছেন, ‘মন্দবুদ্ধি দুর্যোধন আপনাদের কাছে কোনও অপরাধ করে নি।’ প্রজাদের যিনি মুখপাত্র তিনিও স্বীকার করলেন, ‘রাজা দুর্যোধন আমাদের প্রতি কোনও দুর্ব্যবহার করেন নি।’ যুধিষ্ঠির স্বর্গে গিয়ে দুর্যোধনকে দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। নারদ তাঁকে প্রবোধ দিয়ে বললেন, ‘ইনি ক্ষত্রধর্মানুসারে যুদ্ধে নিজ দেহ উৎসর্গ ক’রে বীরলোক লাভ করেছেন, মহাভয় উপস্থিত হ’লেও ইনি কখনও ভীত হন নি।’ আসল কথা, দুর্যোধন লৌকিক ফরমূলা অনুসারে স্বর্গে গেছেন। যুদ্ধে মরলে স্বর্গ, অশ্বমেধে স্বর্গ, গঙ্গাস্নানে স্বর্গ; আজীবন কে কি করেছে তা ধর্তব্য নয়।
বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছেন, ‘কর্ণচরিত্র অতি মহৎ ও মনোহর।’ তিনি কর্ণের গুণাগুণের জমাখরচ ক’ষে সদ্গুণাবলীর মোটা রকম উদ্বৃত্ত পেয়েছিলেন কিনা জানি না। আমরা কর্ণচরিত্রে নীচতা ও মহত্ত্ব দুইই দেখতে পাই (নীচতাই বেশী), কিন্তু তার সমন্বয় করতে পারি না। বোধ হয় বহু রচয়িতার হাতে পড়ে কর্ণচরিত্রের এই বিপর্যয় হয়েছে। কর্ণপর্ব ১৮-পরিচ্ছেদে অর্জুনকে কৃষ্ণ বলেছেন, ‘জতুগৃহদাহ, দ্যূতক্রীড়া, এবং দুর্যোধন তোমাদের উপর যত উৎপীড়ন করেছেন সে সমস্তেরই মূল দুরাত্মা কর্ণ।’ কৃষ্ণ অত্যুক্তি করেন নি।
মহাভারতে সব চেয়ে রহস্যময় পুরুষ কৃষ্ণ। বহু হস্তক্ষেপের ফলে তাঁর চরিত্রেই বেশী অসংগতি ঘটেছে। মূল মহাভারতের রচয়িতা কৃষ্ণকে ঈশ্বর বললেও সম্ভবত তাঁর আচরণে অতিপ্রাকৃত ব্যাপার বেশী দেখান নি। সাধারণত তাঁর আচরণ গীতাধর্মব্যাখ্যাতারই যোগ্য, তিনি বীতরাগভয়ক্রোধ স্থিতপ্রজ্ঞ লোকহিতে রত। কিন্তু মাঝে মাঝে তাঁর যে বিকার দেখা যায় তা ধর্মসংস্থাপক পুরুষোত্তমের পক্ষে নিতান্ত অশোভন, যেমন ঘটোৎকচবধের পর তাঁর উদ্দাম নৃত্য এবং দ্রোণবধের উদ্দেশ্যে যুধিষ্ঠিরকে মিথ্যাভাষণের উপদেশ। বঙ্কিমচন্দ্র যা কিছউ অপ্রিয় পেয়েছেন সবই প্রক্ষেপ ব’লে উড়িয়ে দিয়ে কৃষ্ণকে আদর্শনরধর্মী ঈশ্বর ব’লে মেনেছেন। শান্তিপর্বে যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নের উত্তরে ভীষ্ম বলেছেন, ‘এই মহাত্মা কেশব সেই পরম পুরুষের অষ্টমাংশ।’ মৃত্যুর পূর্বে তিনি কৃষ্ণকে বলেছেন, ‘তুমি সনাতন পরমাত্মা।’ অর্জুন কৃষ্ণকে ঈশ্বর জ্ঞান করলেও সব সময়ে তা মনে রাখতেন না। কৃষ্ণের বিশ্বরূপদর্শনে অভিভূত হয়ে অর্জুন বলেছেন, ‘তোমার মহিমা না জেনে প্রমাদবশে বা প্রণয়বশে তোমাকে কৃষ্ণ যাদব ও সখা ব’লে সম্বোধন করেছি, বিহার ভোজন ও শয়ন কালে উপহাস করেছি, সে সমস্ত ক্ষমা কর।’ স্বামী প্রভবানন্দ ও ক্রিস্টফার ইশারউড তাঁদের গীতার মুখবন্ধে লিখেছেন, ‘Arjuna knows this—yet, by a merciful ignorance, he sometimes forgets. Indeed, it is Krishna who makes him forget, since no ordinary man could bear the strain of constant companionship with God.’ মহাভারতপাঠে বোঝা যায় কৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব বহুবিদিত ছিল না। কৃষ্ণপুত্র শাম্ব দুর্যোধনের জামাতা; দুর্যোধন তাঁর বৈবাহিককে ঈশ্বর মনে করতেন না। উদ্যোগপর্বে তিনি যখন পাণ্ডবদূত কৃষ্ণকে বন্দী করবার মতলব করছিলেন তখন কৃষ্ণ সভাস্থ সকলকে তাঁর বিশ্বরূপ দেখালেন, কিন্তু তাতেও দুর্যোধনের বিশ্বাস হ’ল না। যুদ্ধের পূর্বে শকুনিপুত্র উলূককে তাঁর প্রতিনিধিরূপে পাণ্ডবশিবিরে পাঠাবার সময় দুর্যোধন তাঁকে শিখিয়ে দিলেন—‘তুমি কৃষ্ণকে বলবে,···ইন্দ্রজাল মায়া কুহক বা বিভীষিকা দেখলে অস্ত্রধারী বীর ভয় পায় না, সিংহনাদ করে। আমরাও বহুপ্রকার মায়া দেখাতে পারি, কিন্তু তেমন উপায়ে কার্যসিদ্ধি করতে চাই না। কৃষ্ণ, তুমি অকস্মাৎ যশস্বী হয়ে উঠেছ, কিন্তু আমরা জানি পংশ্চিহ্ণধারী নপুংসক অনেক আছে। তুমি কংসের ভৃত্য ছিলে সেজন্য আমার তুল্য কোনও রাজা তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করেন নি।’ সর্বত্র ঈশ্বররূপে স্বীকৃত না হ’লেও কৃষ্ণ বহু সমাজে অশেষ শ্রদ্ধা ও প্রীতির আধার ছিলেন এবং রূপ শৌর্য বিদ্যা ও প্রজ্ঞার জন্য পুরুষশ্রেষ্ঠ গণ্য হ’তেন। তিনি রাজা নন, যাদব অভিজাততন্ত্রের একজন প্রধান মাত্র, কিন্তু প্রতিপত্তিতে সর্বত্র শীর্ষস্থানীয়। তথাপি কৃষ্ণদ্বেষীর অভাব ছিল না। সভাপর্ব ৩-পরিচ্ছেদে উক্ত বঙ্গ-পুণ্ড্র-কিরাতের রাজা পৌণ্ড্রক কৃষ্ণের অনুকরণে শঙ্খ চক্র গদা ধারণ করতেন এবং প্রচার করতেন যে তিনিই আসল বাসুদেব ও পুরুষোত্তম।
অল্প বা অধিক যাই হ’ক, মহাভারতের ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে তা সর্বস্বীকৃত। আখ্যানমধ্যে বহু বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায় যার সত্যতায় সন্দেহের কারণ নেই। দ্রৌপদীর বহুপতিত্বের দোষ ঢাকবার জন্য গ্রন্থকারকে বিশেষ চেষ্টা করতে হয়েছে। তিনি যদি শুধু গল্পই লিখতেন তবে এই লোকাচারবিরুদ্ধে বিষয়ের অবতারণা করতেন না। তাঁকে সুপ্রতিষ্ঠিত জনশ্রুতি বা ইতিহাস মানতে হয়েছে তাই তিনি এই ঘটনাটি বাদ দিতে পারেন নি। আখ্যানের মধ্যে দ্রোণপত্নী কৃপীর উল্লেখ অতি অল্প, তথাপি প্রসঙ্গক্রমে তাঁকে অল্পকেশী বলা হয়েছে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন কৃষ্ণবর্ণ ছিলেন, তাঁর রূপ বেশ ও গন্ধ কুৎসিত ছিল, ভীম মাকুন্দ ছিলেন, মাহিষ্মতী পুরীর নারীরা স্বৈরিণী ছিল, মদ্র ও বাহীক দেশের স্ত্রীপরুষ অত্যন্ত কদাচারী ছিল, যাদবগণ মাতাল ছিলেন, হিমালয়ের উত্তরে বালুকার্ণব ছিল, লৌহিত্য (ব্রহ্মপুত্র নদ) এত বিশাল ছিল যে তাকে সাগর বলা হ’ত, দ্বারকাপুরী সাগরকবলিত হয়েছিল—ইত্যাদি তুচ্ছ ও অতুচ্ছ অনেক বিষয় গ্রন্থমধ্যে বিকীর্ণ হয়ে আছে যা সত্য বলে মানতে বাধা হয় না।
মহাভারত পড়লে প্রাচীন সমাজ ও জীবনযাত্রার একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়াদি সকলেই প্রচুর মাংসাহার করতেন, ভদ্রসমাজেও সুরাপান চলত। গোমাংসভোজন ও গোমেধ যজ্ঞের বহু উল্লেখ পাওয়া যায়, কিন্তু গ্রন্থরচনাকালে তা গর্হিত গণ্য হ’ত। অস্পৃশ্যতা কম ছিল, দাসদাসীরাও অন্ন পরিবেশন করত! অনুশাসনপর্বে ভীষ্ম বলেছেন, ৩০ বা ২১ বৎসরের বর ১০ বা ৭ বৎসরের কন্যাকে বিবাহ করবে; কিন্তু পরে আবার বলেছেন, বয়স্থা কন্যাকে বিবাহ করাই বিজ্ঞলোকের উচিত। মহাভারতে সর্বত্র যুবতীবিবাহই দেখা যায়। রাজাদের অনেক পত্নী এবং দাসী বা উপপত্নী থাকত, যাঁর এক ভার্যা তিনি মহাসুকৃতিশালী গণ্য হতেন। বর্ণসংকরত্বের ভয় ছিল, কিন্তু অনুশাসনপর্বে ভীষ্ম বহুপ্রকার বর্ণসংকরের উল্লেখ ক’রে বলেছেন, তাদের সংখ্যার ইয়ত্তা নেই। অনেক বিধবা সহমৃতা হতেন, আবার অনেকে পুত্রপৌত্রাদির সঙ্গে থাকতেন, যেমন সত্যবতী কুন্তী উত্তরা সুভদ্রা। নারীর মর্যাদার অভাব ছিল না, কিন্তু সময়ে সময়ে তাঁদেরও দানবিক্রয় এবং জুয়াখেলায় পণ রাখা হ’ত। ভূমি ধনরত্ন বস্ত্র যানবাহন প্রভৃতির সঙ্গে রূপবতী দাসীও দান করার প্রথা ছিল। উৎসবে শোভাবৃদ্ধির জন্য বেশ্যার দল নিযুক্ত হ’ত। ব্রাহ্মণরা প্রচুর সম্মান পেতেন; তাঁরা সভায় তুমুল তর্ক করতেন ব’লে লোকে উপহাসও করত। দেবপ্রতিমার পূজা প্রচলিত ছিল। রাজাকে দেবতুল্য জ্ঞান করা হ’ত, কিন্তু অনুশাসনপর্বে ১৩-পরিচ্ছেদে ভীষ্ম বলেছেন, যিনি প্রজারক্ষার আশ্বাস দিয়ে রক্ষা করেন না সেই রাজাকে ক্ষিপ্ত কুক্কুরের ন্যায় বিনষ্ট করা উচিত।’ অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান অতি বীভৎস ছিল। পুরাকালে নরবলি চলত, মহাভারতের কালে তা নিন্দিত হ’লেও লোপ পায় নি, জরাসন্ধ তার আয়োজন করেছিলেন।
যুদ্ধের বর্ণনা অতিরঞ্জিত হ’লেও আমরা তৎকালীন যুদ্ধরীতির কিছু কিছু আন্দাজ করতে পারি। ভীষ্মপর্ব ১-পরিচ্ছেদে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের যে নিয়মবন্ধন বিবৃত হয়েছে তা আধুনিক সার্বজাতিক নিয়ম অপেক্ষা নিকৃষ্ট নয়। নিরস্ত্র বা বাহনচ্যুত শত্রুকে মারা অন্যায় গণ্য হ’ত। নিয়মলঙ্ঘন করলে যোদ্ধা নিন্দাভাজন হতেন। স্বপক্ষ ও বিপক্ষের আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল। সূর্যাস্তের পর অবহার বা যুদ্ধবিরাম ঘোষিত হ’ত, কিন্তু সময়ে সময়ে রাত্রিকালেও যুদ্ধ চলত। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে যুদ্ধ হত, কিন্তু সৌপ্তিকপর্বে অশ্বত্থামা তার ব্যতিক্রম করেছেন। যদ্ধভূমির নিকট বেশ্যাশিবির থাকত। বিখ্যাত যোদ্ধাদের রথে চার ঘোড়া জোতা হ’ত। ধ্বজদণ্ড রথের ভিতর থেকে উঠত, রথী আহত হ’লে ধ্বজদণ্ড ধ’রে নিজেকে সামলাতেন। অর্জুন ও কর্ণের রথ শব্দহীন ব’লে বর্ণিত হয়েছে। দ্বৈরথ যাদ্ধের পূর্বে বাগ্যুদ্ধ হ’ত, বিপক্ষের তেজ কমাবার জন্য দুই বীর পরস্পরকে গালি দিতেন এবং নিজের গর্ব করতেন। বিখ্যাত রথীদের চতুর্দিকে রক্ষী যোদ্ধারা থাকতেন, পিছনে একাধিক শকটে রাশি রাশি শর ও অন্যান্য ক্ষেপণীয় অস্ত্র থাকত। বোধ হয় পদাতি সৈন্য ধনুর্বাণ নিয়ে যুদ্ধ করত না, তাদের বর্মও থাকত না; এই কারণেই রথারোহী বর্মধারী যোদ্ধা একাই বহু সৈন্য শরাঘাতে বধ করতে পারতেন।
আদিপর্ব ১-পরিচ্ছেদে মহাভারতকথক সৌতি বলেছেন, ‘কয়েকজন কবি এই ইতিহাস পূর্বে ব’লে গেছেন, এখন অপর কবিরা বলছেন, আবার ভবিষ্যতে অন্য কবিরা বলবেন।’ এই শেষোক্ত কবিরা মহাভারতের ত্রুটি শোধনের চেষ্টা করেছেন। মহাভারতের দুষ্মন্ত ইচ্ছা ক’রে শকুন্তলার অপমান করেছেন, কিন্তু কালিদাসের দুষ্মন্ত শাপের বশে না জেনে করেছেন। মহাভারতের কচ দেবযানীকে প্রত্যভিশাপ দিয়েছেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কচ পরম ক্ষমাশীল। কাশীরাম দাসের গ্রন্থে এবং বাংলা নাটকে কর্ণচরিত্র সংশোধিত হয়েছে।
মহাভারতের আখ্যান ও উপাখ্যানগুলি দু-তিন হাজার বৎসর ধ’রে এদেশের জনসাধারণকে মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব শিখিয়েছে এবং কাব্যনাটকাদির উপাদান যুগিয়েছে। মহাভারতের বহু শ্লোক প্রবাদরূপে সুপ্রচলিত হয়েছে। মহাভারতীয় নরনারীর চরিত্রে কোথায় কি অসংগতি বা ত্রুটি আছে লোকে তা গ্রাহ্য করে নি, যা কিছু মহৎ তাই আদর্শরূপে পেয়ে ধন্য হয়েছে। সেকাল আর একালের লোকাচারে অনেক প্রভেদ, তথাপি মহাভারতে কৃষ্ণ ভীষ্ম ও ঋষিগণ কর্তৃক ধর্মের যে মূল আদর্শ কথিত হয়েছে তা সর্বকালেই গ্রহণীয়।
দুঃখময় সংসারে মিলনান্ত আখ্যানই লোকপ্রিয় হবার কথা, কিন্তু এদেশের প্রাচীনতম এবং সর্বাধিকপ্রচলিত চিরায়ত-সাহিত্য বা ক্লাসিক রামায়ণ-মহাভারত বিয়োগান্ত হ’ল কেন? এই দুই গ্রন্থের স্পষ্ট উদ্দেশ্য—বিচিত্র ঘটনার বর্ণনা দ্বারা লোকের মনোরঞ্জন এবং কথাচ্ছলে ধর্মশিক্ষা; কিন্তু অন্য উদ্দেশ্যও আছে। মানুষ চিরজীবী নয়, সেজন্য বাস্তব বা কাল্পনিক সকল জীবনবৃত্তান্তই বিয়োগান্ত। রামায়ণ রাম-রাবণ প্রভৃতির এবং মহাভারত ভরতবংশীয়গণের জীবনবৃত্তান্ত। এই দুই গ্রন্থের রচয়িতারা নির্লিপ্ত সাক্ষীর ন্যায় অনাসক্তভাবে সুখদুঃখ মিলনবিরহ প্রভৃতি জীবনদ্বন্দ্বের বর্ণনা করেছেন। তাঁদের পরোক্ষ উদ্দেশ্য পাঠকের মনেও অনাসক্তি সঞ্চার করা। তাঁরা শ্মশানবৈরাগ্য প্রচার করেন নি, বিষয়ভোগও ছাড়তে বলেন নি, শুধু এই অলঙ্ঘনীয় জাগতিক নিয়ম শান্তচিত্তে মেনে নিতে বলেছেন—
সর্বে ক্ষয়ান্তা নিচয়াঃ পতনান্তাঃ সমুচ্ছ্বয়াঃ।
সংযোগা বিপ্রয়োগান্তা মরণান্তং চ জীবিতম্॥ (স্ত্রীপর্ব)
—সকল সঞ্চয়ই পরিশেষে ক্ষয় পায়, উন্নতির অন্তে পতন হয়, মিলনের অন্তে বিচ্ছেদ হয়, জীবনের অন্তে মরণ হয়।
বিষয়সূচী পৃষ্ঠা আদিপর্ব
- অনুক্রমণিকা- ও পর্বসংগ্রহ-পর্বাধ্যায়
১। শৌনকের আশ্রমে সৌতি ১ - পৌষ্যপর্বাধ্যায়
২। জনমেজয়ের শাপ—আরুণি, উপমন্যু ও বেদ ৩ ৩। উতঙ্ক, পৌষ্য ও তক্ষক ৫ - পৌলোমপর্বাধ্যায়
৪। ভৃগু ও পুলোমা—চ্যবন—অগ্নির শাপমোচন ৯ ৫। রুরু-প্রমদ্বরা—ডুণ্ডুভ ১০ - আস্তীকপর্বাধ্যায়
৬। জরৎকারু মুনি—কদ্রু ও বিনতা—সমুদ্রমন্থন ১৩ ৭। কদ্রু-বিনতার পণ—গরুড়—গজকচ্ছপ—অমৃতহরণ ১৫ ৮। আস্তীকের জন্ম—পরীক্ষিতের মৃত্যুবিবরণ ১৮ ৯। জনমেজয়ের সর্পসত্র ২২ - আদিবংশাবতরণপর্বাধ্যায়
১০। উপরিচর বসু—পরাশর-সত্যবতী—কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ২৪ ১১। কচ ও দেবযানী ২৬ ১২। দেবযানী, শর্মিষ্ঠা ও যযাতি ২৮ ১৩। যযাতির জরা ৩২ ১৪। দুষ্মন্ত-শকুন্তলা ৩৪ ১৫। মহাভিষ—অষ্ট বসু—প্রতীপ—শান্তনু-গঙ্গা ৩৮ ১৬। দেবব্রত ভীষ্ম—সত্যবতী ৪০ ১৭। চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য—কাশীরাজের তিন কন্যা ৪২ ১৮। দীর্ঘতমা—ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্ম—অণীমাণ্ডব্য ৪৪ ১৯। গান্ধারী, কুন্তী ও মাদ্রী—কর্ণ—দুর্যোধনাদির জন্ম ৪৬ ২০। যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম—পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু ৪৯ ২১। হস্তিনাপুরে পঞ্চপাণ্ডব—ভীমের নাগলোকদর্শন ৫১ ২২। কৃপ—দ্রোণ—অশ্বত্থামা—একলব্য—অর্জুনের পটুতা ৫৩ ২৩। অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শন ৫৭ ২৪। দ্রুপদের পরাজয়—দ্রোণের প্রতিশোধ ৬০ ২৫। ধৃতরাষ্ট্রের ঈর্ষা ৬১ - জতুগৃহপর্বাধ্যায়
২৬। বারণাবত—জতুগৃহদাহ ৬২ - হিড়িম্ববধপর্বাধ্যায়
২৭। হিড়িম্ব ও হিড়িম্বা—ঘটোৎকচের জন্ম ৬৬ - বকবধপর্বাধ্যায়
২৮। একচক্রা—বক রাক্ষস ৬৯ - চৈত্ররথপর্বাধ্যায়
২৯। ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর জন্মবৃত্তান্ত—গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ ৭১ ৩০। তপতী ও সংবরণ ৭৪ ৩১। বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, শক্ত্রি ও কল্মাষপাদ—ঔর্ব—ধৌম্য ৭৫ - স্বয়ংবরপর্বাধ্যায়
৩২। দ্রৌপদীর স্বয়ংবর—অর্জুনের লক্ষ্যভেদ ৭৯ ৩৩। কর্ণ-শল্য ও ভীমার্জুনের যুদ্ধ—কুন্তী-সকাশে দ্রৌপদী ৮২ - বৈবাহিকপর্বাধ্যায়
৩৪। দ্রুপদ-যুধিষ্ঠিরের বিতর্ক ৮৪ ৩৫। ব্যাসের বিধান—দ্রৌপদীর বিবাহ ৮৬ - বিদুরাগমনপর্বাধ্যায়
৩৬। হস্তিনাপুরে বিতর্ক ৮৮ - রাজ্যলাভপর্বাধ্যায়
৩৭। খাণ্ডবপ্রস্থ—সুন্দ-উপসুন্দ ও তিলোত্তমা ৯০ - অর্জুনবনবাসপর্বাধ্যায়
৩৮। অর্জুনের বনবাস—উলূপী, চিত্রাঙ্গদা ও বর্গা—বভ্রুবাহন ৯২ - সুভদ্রাহরণপর্বাধ্যায়
৩৯। রৈবতক—সুভদ্রাহরণ—অভিমন্যু—দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র ৯৫ - খাণ্ডবদাহপর্বাধ্যায়
৪০। অগ্নির অগ্নিমান্দ্য—খণ্ডবদাহ—ময় দানব ৯৭
সভাপর্ব
- সভাক্রিয়াপর্বাধ্যায়
১। ময় দানবের সভানির্মাণ ১০০ ২। যুধিষ্ঠির-সকাশে নারদ ১০২ - মন্ত্রপর্বাধ্যায়
৩। কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠিরাদির মন্ত্রণা ১০৪ ৪। জরাসন্ধের পূর্ববৃত্তান্ত ১০৬ - জরাসন্ধপর্বাধ্যায়
৫। জরাসন্ধবধ ১০৮ - দিগ্বিজয়পর্বাধ্যায়
৬। পাণ্ডবগণের দিগ্বিজয় ১১১ - রাজসূয়িকপর্বাধ্যায়
৭। রাজসূয় যজ্ঞের আরম্ভ ১১৩ - অর্ঘ্যাভিহরণপর্বাধ্যায়
৮। কৃষ্ণকে অর্ঘ্যপ্রদান ১১৫ ৯। শিশুপালের কৃষ্ণনিন্দা ১১৬ - শিশুপালবধপর্বাধ্যায়
১০। যজ্ঞসভায় বাগ্যুদ্ধ ১১৮ ১১। শিশুপালবধ—রাজসূয় যজ্ঞের সমাপ্তি ১২১ - দ্যূতপর্বাধ্যায়
১২। দুর্যোধনের দুঃখ—শকুনির মন্ত্রণা ১২২ ১৩। ধৃতরাষ্ট্র-শকুনি-দুর্যোধন-সংবাদ ১২৪ ১৪। যুধিষ্ঠিরাদির দ্যূতসভায় আগমন ১২৭ ১৫। দ্যূতক্রীড়া ১২৮ ১৬। দ্রৌপদীর নিগ্রহ—ভীমের শপথ—ধৃতরাষ্ট্রের বরদান ১৩১ - অনুদ্যূতপর্বাধ্যায়
১৭। পুনর্বার দ্যূতক্রীড়া ১৩৬ ১৮। পাণ্ডবগণের বনযাত্রা ১৩৮
বনপর্ব
- আরণ্যকপর্বাধ্যায়
১। যুধিষ্ঠির ও অনুগামী বিপ্রগণ—সূর্যদত্ত তাম্রস্থালী ১৪১ ২। ধৃতরাষ্ট্রের অস্থির মতি ১৪৩ ৩। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে ব্যাস ও মৈত্রেয় ১৪৫ - কির্মীরবধপর্বাধ্যায়
৪। কির্মীরবধের বৃত্তান্ত ১৪৮ - অর্জুনাভিগমনপর্বাধ্যায়
৫। কৃষ্ণের আগমন—দ্রৌপদীর ক্ষোভ ১৪৯ ৬। শাল্ববধের বৃত্তান্ত—দ্বৈতবন ১৫১ ৭। দ্রৌপদী-যুধিষ্ঠিরের বাদানুবাদ ১৫৪ ৮। ভীম-যুধিষ্ঠিরের বাদানুবাদ—ব্যাসের উপদেশ ১৫৬ ৯। অর্জুনের দিব্যাস্ত্রসংগ্রহে গমন ১৫৮ - কৈরাতপর্বাধ্যায়
১০। কিরাতবেশী মহাদেব—অর্জুনের দিব্যাস্ত্রলাভ ১৫৯ - ইন্দ্রলোকাভিগমনপর্বাধ্যায়
১১। ইন্দ্রলোকে অর্জুন—উর্বশীর অভিসার ১৬১ - নলোপাখ্যানপর্বাধ্যায়
১২। ভীমের অধৈর্য—মহর্ষি বৃহদশ্ব ১৬৩ ১৩। নিষধরাজ নল—দময়ন্তীর স্বয়ংবর ১৬৪ ১৪। কলির আক্রমণ—নল-পুষ্করের দ্যূতক্রীড়া ১৬৭ ১৫। নল-দময়ন্তীর বিচ্ছেদ—দময়ন্তীর পর্যটন ১৬৮ ১৬। কর্কোটক নাগ—নলের রূপান্তর ১৭২ ১৭। পিত্রালয়ে দময়ন্তী—নল-ঋতুপর্ণের বিদর্ভযাত্রা ১৭৩ ১৮। নল-দমযন্ত্রীর পুনর্মিলন ১৭৭ ১৯। নলের রাজ্যোদ্ধার ১৭৯ - তীর্থযাত্রাপর্বাধ্যায়
২০। যুধিষ্ঠিরাদির তীর্থযাত্রা ১৮০ ২১। ইম্বল-বাতাপি—অগস্ত্য ও লোপামুদ্রা—ভৃগুতীর্থ ১৮২ ২২। দধীচ—বৃত্রবধ—সমুদ্রশোষণ ১৮৪ ২৩। সগর রাজা—ভগীরথের গঙ্গানয়ন ১৮৬ ২৪। ঋষ্যশৃঙ্গের উপাখ্যান ১৮৭ ২৫। পরশুরামের ইতিহাস ১৯০ ২৬। প্রভাস—চ্যবন ও সুকন্যা—অশ্বিনীকুমারদ্বয় ১৯২ ২৭। মান্ধাতা, সোমক ও জন্তুর ইতিহাস ১৯৫ ২৮। উশীনর, কপোত ও শ্যেন ১৯৭ ২৯। উদ্দালক, শ্বেতকেতু, কহোড়, অষ্টাবক্র ও বন্দী ১৯৮ ৩০। ভরদ্বাজ, যবক্রীত, রৈভ্য, অর্বাবসু ও পরাবসু ১৯৯ ৩১। নরকাসুর—বরাহরূপী বিষ্ণু—বদরিকাশ্রম ২০২ ৩২। সহস্রদল পদ্ম—ভীম-হনুমান-সংবাদ ২০৩ ৩৩। ভীমের পদ্মসংগ্রহ ২০৬ - জটাসুরবধপর্বাধ্যায়
৩৪। জটাসুরবধ ২০৭ - যক্ষযুদ্ধপর্বাধ্যায়
৩৫। ভীমের সহিত যক্ষ-রাক্ষসাদির যুদ্ধ ২০৮ - নিবাতকবচযুদ্ধপর্বাধ্যায়
৩৬। অর্জনের প্রত্যাবর্তন—নিবাতকবচ ও হিরণ্যপুরের বৃত্তান্ত ২১১ - আজগরপর্বাধ্যায়
৩৭। অজগর, ভীম ও যুধিষ্ঠির ২১৩ - মার্কণ্ডেয় সমাস্যাপর্বাধ্যায়
৩৮। কৃষ্ণ ও মার্কণ্ডেয়র আগমন অরিষ্টনেমা ও অত্রি ২১৫ ৩৯। বৈবস্বত মন, ও মৎস্য—বালকরূপী নারায়ণ ২১৭ ৪০। পরীক্ষিৎ ও মণ্ডূকরাজকন্যা—শল, দল ও বামদেব ২১৯ ৪১। দীর্ঘায়ু, বক ঋষি—শিবি ও সুহোত্র—যযাতির দান ২২১ ৪২। অষ্টক, প্রতর্দন, বসুমনা ও শিবি—ইন্দ্রদ্যুম্ন ২২৩ ৪৩। ধুন্ধুমার ২২৫ ৪৪। কৌশিক, পতিব্রতা ও ধর্মব্যাধ ২২৭ ৪৫। দেবসেনা ও কার্তিকেয় ২২৯ - দ্রৌপদীসত্যভামাসংবাদপর্বাধায়
৪৬। দ্রৌপদী-সত্যভামা-সংবাদ ২৩২ - ঘোষযাত্রাপর্বাধ্যায়
৪৭। দুর্যোধনের ঘোষযাত্রা ও গন্ধর্বহস্তে নিগ্রহ ২৩৪ ৪৮। দুর্যোধনের প্রায়োপবেশন ২৩৭ ৪৯। দুর্যোধনের বৈষ্ণব যজ্ঞ ২৩৯ - মৃগস্বপ্নোদ্ভব- ও ব্রীহিদ্রৌণিক-পর্বাধ্যায়
৫০। যুধিষ্ঠিরের স্বপ্ন—মুদ্গলের সিদ্ধিলাভ ২৪০ - দ্রৌপদীহরণ- ও জয়দ্রথবিমোক্ষণ-পর্বাধ্যায়
৫১। দুর্বাসার পারণ ২৪২ ৫২। দ্রৌপদীহরণ ২৪৩ ৫৩। জয়দ্রথের নিগ্রহ ও মুক্তি ২৪৫ - রামোপাখ্যানপর্বাধ্যায়
৫৪। রামের উপাখ্যান ২৪৭ - পতিব্রতামাহাত্ম্যপর্বাধ্যায়
৫৫। সাবিত্রী-সত্যবান ২৫২ - কুণ্ডলাহরণপর্বাধ্যায়
৫৬। কর্ণের কবচ-কুণ্ডল দান ২৫৯ - আরণেয়পর্বাধ্যায়
৫৭। যক্ষ-যুধিষ্ঠিরের প্রশ্নোত্তর ২৬১ ৫৮। ত্রয়োদশ বৎসরের আরম্ভ ২৬৫
বিরাটপর্ব
- পাণ্ডবপ্রবেশপর্বাধ্যায়
১। অজ্ঞাতবাসের মন্ত্রণা ২৬৭ ২। ধৌম্যের উপদেশ—অজ্ঞাতবাসের উপক্রম ২৬৮ ৩। বিরাটভবনে যুধিষ্ঠিরাদির আগমন ২৭০ - সময়পালনপর্বাধ্যায়
৪। মল্লগণের সহিত ভীমের যুদ্ধ ২৭৩ - কীচকবধপর্বাধ্যায়
৫। কীচক, সদেষ্ণা ও দ্রৌপদী ২৭৪ ৬। কীচকের পদাঘাত ২৭৬ ৭। ভীমের নিকট দ্রৌপদীর বিলাপ ২৭৮ ৮। কীচকবধ ২৭৯ ৯। উপকীচকবধ—দ্রৌপদী ও বৃহন্নলা ২৮১ - গোহরণপর্বাধ্যায়
১০। দুর্যোধনাদির মন্ত্রণা ২৮৩ ১১। দক্ষিণগোগ্রহ—সুশর্মার পরাজয় ২৮৪ ১২। উত্তরগোগ্রহ—উত্তর ও বৃহন্নলা ২৮৬ ১৩। দ্রোণ-দুর্যোধনাদির বিতর্ক—ভীষ্মের উপদেশ ২৮৯ ১৪। কৌরবগণের পরাজয় ২৯২ ১৫। অর্জুন ও উত্তরের প্রত্যাবর্তন—বিরাটের পুত্রগর্ব ২৯৫ - বৈবাহিকপর্বাধ্যায়
১৬। পাণ্ডবগণের আত্মপ্রকাশ—উত্তরা-অভিমন্যুর বিবাহ ২৯৮
উদ্যোগপর্ব
- সেনোদ্যোগপর্বাধ্যায়
১। রাজ্যোদ্ধারের মন্ত্রণা ৩০১ ২। কৃষ্ণ-সকাশে দুর্যোধন ও অর্জুন—বলরাম ও দুর্যোধন ৩০৪ ৩। শল্য, দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠির ৩০৫ ৪। ত্রিশিরা, বৃত্র, ইন্দ্র, নহুষ ও অগস্ত্য ৩০৭ ৫। সেনাসংগ্রহ ৩১১ - সঞ্জয়যানপর্যাধ্যায়
৬। দ্রুপদ-পূরোহিতের দৌত্য ৩১২ ৭। সঞ্জয়ের দৌত্য ৩১৩ - প্রজাগর- ও সনৎসুজাত-পর্বাধ্যায়
৮। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে বিদুর—বিরোচন ও সুধন্বা ৩১৮ - যানসন্ধিপর্বাধ্যায়
৯। কৌরবসভায় বাদানুবাদ ৩২০ - ভগবদ্যানপর্বাধ্যায়
১০। কৃষ্ণ, যধিষ্ঠিরাদি ও দ্রৌপদীর অভিমত ৩২৫ ১১। কৃষ্ণের হস্তিনাপুর গমন ৩২৯ ১২। কুন্তী, দুর্যোধন ও বিদুরের গৃহে কৃষ্ণ ৩৩২ ১৩। কৌরবসভায় কৃষ্ণে অভিভাষণ ৩৩৪ ১৪। রাজা দম্ভোদ্ভব—সুমুখ ও গরুড় ৩৩৬ ১৫। বিশ্বামিত্র, গালব, যযাতি ও মাধ্বী ৩৩৯ ১৬। দুর্যোধনের দুরাগ্রহ ৩৪২ ১৭। গান্ধারীর উপদেশ—কৃষ্ণের সভাত্যাগ ৩৪৫ ১৮। কৃষ্ণ ও কুন্তী—বিদুলার উপাখ্যান ৩৪৭ ১৯। কৃষ্ণ-কর্ণ-সংবাদ ৩৪৯ ২০। কর্ণ-কুন্তী-সংবাদ ৩৫১ ২১। কৃষ্ণের প্রত্যাবর্তন ৩৫৩ - সৈন্যনির্যাণপর্বাধ্যায়
২২। পাণ্ডবযুদ্ধসজ্জা ৩৫৪ ২৩। বলরাম ও রুক্মী ৩৫৬ ২৪। কৌরবযুদ্ধসজ্জা ৩৫৭ - উলূকদূতাগমনপর্বাধ্যায়
২৫। উলূকের দৌত্য ৩৫৯ - রথ্যতিরথসংখ্যানপর্বাধ্যায়
২৬। রথী-মহারথ-অতিরথ-গণনা—ভীষ্ম-কর্ণের বিবাদ ৩৬২ - অম্বোপাখ্যানপর্বাধ্যায়
২৭। অম্বা-শিখণ্ডীর ইতিহাস ৩৬৪ ২৮। যুদ্ধযাত্রা ৩৬৯
ভীষ্মপর্ব
- জম্বুখণ্ডবিনির্মাণ- ও ভূমি-পর্বাধ্যায়
১। যুদ্ধের নিয়মবন্ধন ৩৭১ ২। ব্যাস ও ধৃতরাষ্ট্র ৩৭২ ৩। সঞ্জয়ের জীববৃত্তান্ত ও ভৃবৃত্তান্ত কথন ৩৭৩ - ভগবদ্গীতাপর্বাধ্যায়
৪। কুরপাণ্ডবের ব্যূহরচনা ৩৭৪ ৫। ভগবদ্গীতা ৩৭৬ - ভীষ্মবধপর্বাধ্যায়
৬। যুধিষ্ঠিরের শিষ্টাচার—কর্ণ—যুযুৎসু ৩৮২ ৭। কুরুক্ষেত্রযুদ্ধারম্ভ—বিরাটপুত্র উত্তর ও শ্বেতের মৃত্যু ৩৮৫ ৮। ভীমার্জুনের কৌরবসেনাদলন ৩৮৬ ৯। কৃষ্ণের ক্রোধ ৩৮৮ ১০। ঘটোৎকচের জয় ৩৯১ ১১। সাত্যকিপুত্রগণের মৃত্যু ৩৯২ ১২। ভীমের জয় ৩৯৩ ১৩। বিরাটপত্র শঙ্খের মৃত্যু—ইরাবান ও নকুল-সহদেবের জয় ৩৯৪ ১৪। ইরাবানের মৃত্যু—ঘটোৎকচের মায়া ৩৯৬ ১৫। ভীষ্মের পরাক্রম ৩৯৮ ১৬। ভীষ্ম-সকাশে যধিষ্ঠিরাদি ৪০১ ১৭। ভীষ্মের পতন ৪০৩ ১৮। শরশয্যায় ভীষ্ম ৪০৬
দ্রোণপর্ব
- দ্রোণাভিষেকপর্বাধ্যায়
১। ভীষ্ম-সকাশে কর্ণ ৪১০ ২। দ্রোণের অভিষেক ও দুর্যোধনকে বরদান ৪১১ ৩। অর্জুনের জয় ৪১৩ - সংশপ্তকবধপর্বাধ্যায়
৪। সংশপ্তকগণের শপথ ৪১৪ ৫। সংশপ্তকগণের যুদ্ধ—ভগদত্তবধ ৪১৬ - অভিমন্যুবধপর্বাধ্যায়
৬। অভিমন্যুবধ ৪২০ ৭। যধিষ্ঠির-সকাশে ব্যাস—মৃত্যুর উপাখ্যান ৪২৪ ৮। সুবর্ণষ্ঠীবীর উপাখ্যান ৪২৬ - প্রতিজ্ঞাপর্বাধ্যায়
৯। অর্জুনের প্রতিজ্ঞা ৪২৮ ১০। জয়দ্রথের ভয়—সুভদ্রার বিলাপ ৪৩১ ১১। অর্জুনের স্বপ্ন ৪৩৩ - জয়দ্রথবধপর্বাধ্যায়
১২। জয়দ্রথের অভিমুখে কৃষ্ণার্জন ৪৩৫ ১৩। কর্ণের হস্তে ভীমের পরাজয়—ভূরিশ্রবা-বধ ৪৩৯ ১৪। জয়দ্রথবধ ৪৪৩ ১৫। দুর্যোধনের ক্ষোভ ৪৪৪ - ঘটোৎকচবধপর্বাধ্যায়
১৬। সোমদত্ত-বাহ্লীক-বধ—কৃপ-কর্ণ-অশ্বত্থামার কলহ ৪৪৬ ১৭। কৃষ্ণার্জুন ও ঘটোৎকচ ৪৪৮ ১৮। ঘটোৎকচবধ ৪৫০ - দ্রোণবধপর্বাধ্যায়
১৯। দুপদ-বিরাট-বধ—দুর্যোধনের বাল্যস্মৃতি ৪৫৩ ২০। দ্রোণের ব্রহ্মলোকে প্রয়াণ ৪৫৪ - নারায়ণাস্ত্রমোক্ষপর্বাধ্যায়
২১। অশ্বত্থামার সংকল্প—ধৃষ্টদ্যুম্ন-সাত্যকির কলহ ৪৫৭ ২২। অশ্বত্থামার নারায়ণাস্ত্রমোচন ৪৬০ ২৩। মহাদেবের মাহাত্ম্য ৪৬২
কর্ণপর্ব
১। কর্ণের সেনাপতিত্বে অভিষেক ৪৬৪ ২। অশ্বত্থামার পরাজয় ৪৬৫ ৩। দণ্ডধার-দণ্ড-বধ—রণভূমির ভীষণতা ৪৬৭ ৪। পাণ্ড্যরাজবধ—দুঃশাসনের পরাজয় ৪৬৮ ৫। কর্ণের হস্তে নকুলের পরাজয়—যুযুৎসু প্রভৃতির যুদ্ধ ৪৬৯ ৬। পাণ্ডবগণের জয় ৪৭১ ৭। কর্ণ-দুর্যোধন-শল্য-সংবাদ ৪৭২ ৮। ত্রিপুরসংহার ও পরশুরামের কথা ৪৭৪ ৯। কর্ণ-শল্যের যুদ্ধযাত্রা ৪৭৮ ১০। কর্ণ-শল্যের কলহ ৪৭৯ ১১। কাক ও হংসের উপাখ্যান ৪৮২ ১২। কর্ণের শাপবৃত্তান্ত ৪৮৪ ১৩। কর্ণের সহিত যুধিষ্ঠির ও ভীমের যুদ্ধ ৪৮৫ ১৪। অশ্বত্থামা ও কর্ণের সহিত যুধিষ্ঠির ও ভীমের যুদ্ধ ৪৮৮ ১৫। যুধিষ্ঠিরের কটুবাক্য ৪৯০ ১৬। অর্জুনের ক্রোধ—কৃষ্ণের উপদেশ ৪৯৩ ১৭। অর্জুনের সতারক্ষা—যুধিষ্ঠিরের অনুতাপ ৪৯৬ ১৮। অর্জুন-কর্ণের অভিযান ৪৯৮ ১৯। দুঃশাসনবধ—ভীমের প্রতিজ্ঞাপালন ৫০০ ২০। কর্ণবধ ৫০২ ২১। দুর্যোধনের বিষাদ—যুধিষ্ঠিরের হর্ষ ৫০৭
শল্যপর্ব
- শল্যবধপর্বাধ্যায়
১। কৃপ-দুর্যোধন-সংবাদ ৫০৯ ২। শল্যের সেনাপতিত্বে অভিষেক ৫১০ ৩। শল্যবধ ৫১১ ৪। শাল্ববধ ৫১৪ ৫। উলুক-শকুনি-বধ ৫১৫ - হ্রদপ্রবেশপর্বাধ্যায়
৬। দুর্যোধনের হ্রদপ্রবেশ ৫১৬ ৭। যুধিষ্ঠিরের তর্জন ৫১৮ - গদাযুদ্ধপর্বাধ্যায়
৮। গদাযুদ্ধের উপক্রম ৫২০ ৯। বলরামের তীর্থভ্রমণ—চন্দ্রের যক্ষ্মা—একত দ্বিত ত্রিত ৫২৩ ১০। অসিতদেবল ও জৈগীষব্য—সারস্বত ৫২৪ ১১। বৃদ্ধকন্যা সুভ্রূ—কুরুক্ষেত্র ও সমন্তপঞ্চক ৫২৬ ১২। দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ ৫২৮ ১৩। বলরামের ক্রোধ—যুধিষ্ঠিরাদির ক্ষোভ ৫৩০ ১৪। দুর্যোধনের ভর্ৎসনা ৫৩১ ১৫। ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী-সকাশে কৃষ্ণ ৫৩৩ ১৬। অশ্বত্থামার অভিষেক ৫৩৪
সৌপ্তিকপর্ব
- সৌপ্তিকপর্বাধ্যায়
১। অশ্বত্থামার সংকল্প ৫৩৬ ২। মহাদেবের আবির্ভাব ৫৩৮ ৩। ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীপুত্র প্রভৃতির হত্যা ৫৩৯ ৪। দুর্যোধনের মৃত্যু ৫৪০ - ঐষীকপর্বাধ্যায়
৫। দ্রৌপদীর প্রায়োপবেশন ৫৪১ ৬। ব্রহ্মশির অস্ত্র ৫৪২ ৭। মহাদেবের মাহাত্ম্য ৫৪৫
স্ত্রীপর্ব
- জলপ্রাদানিকপর্বাধ্যায়
১। বিদুরের সান্ত্বনাদান ৫৪৬ ২। ভীমের লৌহমূর্তি ৫৪৭ ৩। গান্ধারীর ক্রোধ ৫৪৮ - স্ত্রীবিলাপপর্বাধ্যায়
৪। গান্ধারীর কুরুক্ষেত্র দর্শন—কৃষ্ণকে অভিশাপ ৫৫০ - শ্রাদ্ধপর্বাধ্যায়
৫। মৃতসৎকার—কর্ণের জন্মরহস্য প্রকাশ ৫৫১
শান্তিপর্ব
- রাজধর্মানুশাসনপর্বাধ্যায়
১। যুধিষ্ঠির-সকাশে নারদাদি ৫৫৩ ২। যুধিষ্ঠিরের মনস্তাপ ৫৫৪ ৩। চার্বাকবধ—যুধিষ্ঠিরের অভিষেক ৫৫৬ ৪। ভীষ্ম-সকাশে কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠিরাদি ৫৫৮ ৫। রাজধর্ম ৫৬০ ৬। বেণ ও পৃথু রাজার কথা ৫৬২ ৭। বর্ণাশ্রমধর্ম—চরনিয়োগ—শুল্ক ৫৬৩ ৮। রাজার মিত্র—দণ্ডবিধি—রাজকর—যুদ্ধনীতি ৫৬৫ ৯। পিতা মাতা ও গুরু—ব্যবহার—রাজকোষ ৫৬৬ - আপদ্ধর্মপর্বাধ্যায়
১০। আপদগ্রস্ত রাজা—তিন মৎস্যের উপাখান ৫৬৭ ১১। মার্জার-মূষিক সংবাদ ৫৬৯ ১২। বিশ্বামিত্র-চণ্ডাল-সংবাদ ৫৭১ ১৩। খড়্গের উৎপত্তি ৫৭৩ ১৪। কৃতঘ্ন গৌতমের উপাখ্যান ৫৭৩ - মোক্ষধর্মপর্বাধ্যায়
১৫। আত্মজ্ঞান—ব্রাহ্মণ-সেনজিৎ-সংবাদ ৫৭৬ ১৬। অজগরব্রত—কামনাত্যাগ ৫৭৮ ১৭। সৃষ্টিতত্ত্ব—সদাচার ৫৭৯ ১৮। বরাহরূপী বিষ্ণু—যজ্ঞে অহিংসা—প্রাণদণ্ডের নিন্দা ৫৮০ ১৯। বিষয়তৃষ্ণা—বিষ্ণুর মাহাত্ম্য—জ্বরের উৎপত্তি ৫৮২ ২০। দক্ষযজ্ঞ ৫৮৫ ২১। আসক্তিত্যাগ—শুক্রের ইতিহাস ৫৮৭ ২২। সুলভা জনক-সংবাদ ৫৮৮ ২৩। ব্যাসপত্র শুক—নারদের উপদেশ ৫৯০ ২৪। উঞ্ছব্রতধারীর উপাখ্যান ৫৯৪
অনুশাসনপর্ব
১। গৌতমী, ব্যাধ, সর্প, মৃত্যু ও কাল ৫৯৬ ২। সন্দর্শন-ওঘবতীর অতিথি-সৎকার ৫৯৯ ৩। কৃতজ্ঞ শুক—দৈব ও পুরুষকার—ভঙ্গস্বনের স্ত্রীভাব ৬০০ ৪। হরপার্বতীর নিকট কৃষ্ণের বরলাভ ৬০৩ ৫। অষ্টাবক্রের পরীক্ষা ৬০৪ ৬। ব্রহ্মহত্যাতুল্য পাপ—গঙ্গা-মাহাত্ম্য—মতঙ্গ ৬০৬ ৭ দিবোদাসের পুত্র প্রতর্দন—বীর্তহব্যের ব্রাহ্মণত্বলাভ ৬০৮ ৮। ব্রাহ্মণসেবা—সৎপাত্র ও অসৎপাত্র ৬০৯ ৯। স্ত্রীজাতির কুৎসা—বিপুলের গুরুপত্নীরক্ষা ৬১০ ১০। বিবাহভেদ—দুহিতার অধিকার—বর্ণসংকর—পুত্রভেদ ৬১৩ ১১। চ্যবন ও নহুষ ৬১৪ ১২। চ্যবন ও কুশিক ৬১৫ ১৩। দানধর্ম—অপালক রাজা—কপিলা—লক্ষ্মী ও গোময় ৬১৭ ১৪। দানের অপাত্র—বশিষ্ঠাদির লোভসংবরণ ৬১৯ ১৫। ছত্র ও পাদুকা—পুষ্প ধূপ ও দীপ ৬২১ ১৬। সদাচার—ভ্রাতার কর্তব্য ৬২২ ১৭। মানসতীর্থ—বৃহস্পতির উপদেশ ৬২৩ ১৮। মাংসাহার ৬২৪ ১৯। ব্রাহ্মণ-রাক্ষস-সংবাদ ৬২৫ ২০। ত্রিবিধ প্রমাণ—ভীষ্মোপদেশের সমাপ্তি ৬২৬ ২১। ভীষ্মের স্বর্গারোহণ ৬২৭
আশ্বমেধিকপর্ব
- আশ্বমেধিকপর্বাধ্যায়
১। যুধিষ্ঠিরের পুনর্বার মনস্তাপ ৬৩০ ২। মরুত্ত ও সংবর্ত ৬৩১ ৩। কামগীতা ৬৩৪ - অনুগীতাপর্বাধ্যায়
৪। অনুগীতা ৬৩৫ ৫। কৃষ্ণের দ্বারকাযাত্রা—মরুবাসী উতঙ্ক ৬৩৮ ৬। উতঙ্কের পূর্ববত্তান্ত ৬৪০ ৭। কৃষ্ণের দ্বারকায় আগমন ৬৪২ ৮। পরীক্ষিতের জন্ম ৬৪৩ ৯। যজ্ঞাশ্বের সহিত অর্জুনের যাত্রা ৬৪৫ ১০। অর্জুনের নানা দেশে যুদ্ধ—বভ্রুবাহন উলূপী ও চিত্রাঙ্গদা ৬৪৬ ১১। অশ্বমেধ যজ্ঞ ৬৪৯ ১২। শক্তুদাতা ব্রাহ্মণ—নকুলরূপী ধর্ম ৬৫২
আশ্রমবাসিকপর্ব
- আশ্রমবাসপর্বাধ্যায়
১। যুধিষ্ঠিরের উদারতা ৬৫৫ ২। ভীমের আক্রোশ—ধৃতরাষ্ট্রের সংকল্প ৬৫৬ ৩। ধৃতরাষ্ট্রের প্রজাসম্ভাষণ ৬৫৭ ৪। ধৃতরাষ্ট্র প্রভৃতির বনযাত্রা ৬৫৯ ৫। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে নারদাদি ৬৬১ ৬। ধৃতরাষ্ট্র-সকাশে যুধিষ্ঠিরাদি ৬৬২ ৭। বিদুরের তিরোধান ৬৬৩ - পুত্রদর্শনপর্বাধ্যায়
৮। মৃত যোদ্ধাগণের সমাগম ৬৬৫ ৯। জনমেজয়ের যজ্ঞে পরীক্ষিৎ—পাণ্ডবগণের প্রস্থান ৬৬৭ - নারদাগমনপর্বাধ্যায়
১০। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তীর মৃত্যু ৬৬৮
মৌষলপর্ব
১। শাম্বের মুষল প্রসব—দ্বারকায় দুর্লক্ষণ ৬৭১ ২। যাদবগণের বিনাশ ৬৭২ ৩। বলরাম ও কৃষ্ণের দেহত্যাগ ৬৭৩ ৪। অর্জুনের দ্বারকায় গমন ও প্রত্যাবর্তন ৬৭৪
মহাপ্রস্থানিকপর্ব
১। মহাপ্রস্থানের পথে যুধিষ্ঠিরাদি ৬৭৮ ২। দ্রৌপদী সহদেব নকুল অর্জন ও ভীমের মৃত্যু ৬৭৯ ৩। যুধিষ্ঠিরের সশরীরে স্বর্গযাত্রা ৬৮০
স্বর্গারোহণপর্বাধ্যায়১। যুধিষ্ঠিরের নরকদর্শন ৬৮২ ২। কুরুপাণ্ডবদের স্বর্গলাভ ৬৮৪ ৩। মহাভারত-মাহাত্ম্য ৬৮৫
পরিশিষ্টমহাভারতে বহু উক্ত ব্যক্তি, স্থান ও অস্ত্রাদি ৬৮৭
এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।