মহাভারত (রাজশেখর বসু)/স্ত্রীপর্ব/শ্রাদ্ধপর্বাধ্যায়
॥ শ্রাদ্ধপর্বাধ্যায়॥
৫। মৃতসৎকার—কর্ণের জন্মরহস্যপ্রকাশ
যুধিষ্ঠিরের আদেশে ধৌম্য বিদুর সঞ্জয় ইন্দ্রসেন প্রভৃতি চন্দন অগুরুকাষ্ঠ ঘৃত তৈল গন্ধদ্রব্য ক্ষৌমবসন কাষ্ঠ ভগ্নরথ ও বিবিধ অস্ত্র সংগ্রহ ক’রে সযত্নে বহু চিতা নির্মাণ করলেন এবং প্রজ্বলিত অগ্নিতে নিহত আত্মীয়বৃন্দ ও অন্যান্য শতসহস্র বীরগণের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করলেন। তার পর ধৃতরাষ্ট্রকে অগ্রবর্তী করে যুধিষ্ঠিরাদি গঙ্গার তীরে গেলেন এবং ভূষণ উত্তরীয় ও উষ্ণীষ খুলে ফেলে বীরপত্নীগণের সহিত তর্পণ করলেন।
সহসা শোকাকুল হয়ে কুন্তী তাঁর পুত্রগণকে বললেন, অর্জুন যাঁকে বধ করেছেন, তোমরা যাঁকে সূতপুত্র এবং রাধার গভর্জাত মনে করতে, সেই মহাধনুর্ধর বীরলক্ষণান্বিত কর্ণের উদ্দেশেও তোমরা তর্পণ কর। তিনি তোমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, সূর্যের ঔরসে আমার গর্ভে কবচকুণ্ডলধারী হয়ে জন্মেছিলেন।
কর্ণের এই জন্মরহস্য শুনে পাণ্ডবগণ শোকাতুর হলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, মাতা, যাঁর বাহুর প্রতাপে আমরা তাপিত হতাম, বস্ত্রাবৃত অগ্নির ন্যায় কেন আপনি তাঁকে গোপন করেছিলেন? কর্ণের মৃত্যুতে আমরা সকলেই শোকার্ত হয়েছি। অভিমন্যু, দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র, এবং পাঞ্চাল ও কৌরবগণের বিনাশে যত দুঃখ পেয়েছি তার শতগুণ দুঃখ কর্ণের জন্য আমরা এখন ভোগ করছি। আমরা যদি তাঁর সঙ্গে মিলিত হতাম তবে স্বর্গের কোনও বস্তু আমাদের অপ্রাপ্য হ’ত না, এই কুরুকুলনাশক ঘোর যুদ্ধও হ’ত না।
এইরূপ বিলাপ ক’রে যুধিষ্ঠির কর্ণ পত্নীগণের সহিত মিলিত হয়ে কর্ণের উদ্দেশে তর্পণ করলেন।