মহাভারত (রাজশেখর বসু)/বনপর্ব/দ্রৌপদীহরণ- ও জয়দ্রথবিমোক্ষণ-পর্বাধ্যায়

॥ দ্রৌপদীহরণ ও জয়দ্রথবিমোক্ষণ-পর্বাধ্যায়॥

৫১। দুর্বাসার পারণ

 পাণ্ডবগণ যখন কাম্যকবনে বাস করছিলেন তখন একদিন তপস্বী দুর্বাসা দশ হাজার শিষ্য নিয়ে দুর্যোধনের কাছে এলেন এবং তাঁর বিনীত অনুরোধে কয়েক দিনের জন্য আতিথ্য গ্রহণ করলেন। দুর্বাসা কোনও দিন বলতেন, আমি ক্ষুধিত হয়েছি, শীঘ্র অন্ন দাও; এই ব’লেই স্নান করতে গিয়ে অতি বিলম্বে ফিরতেন। কোনও দিন বলতেন, আজ ক্ষুধা নেই, খাব না; তার পর সহসা এসে বলতেন, এখনই খাওয়াও। কোনও দিন মধ্যরাত্রে উঠে অন্নপাক করতে বলতেন কিন্তু খেতেন না, ভর্ৎসনা করতেন। পরিশেষে দুর্যোধনের অবিশ্রাম পরিচর্যায় তুষ্ট হয়ে দুর্বাসা বললেন, তোমার অভীষ্ট বর চাও। দুর্যোধন পূর্বেই কর্ণ দুঃশাসন প্রভৃতির সঙ্গে মন্ত্রণা ক’রে রেখেছিলেন। তিনি দুর্বাসাকে বললেন, ভগবান, আপনি সশিষ্যে আমাদের জ্যেষ্ঠ ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠিরের আতিথ্য গ্রহণ করুন। যদি আমার উপর আপনার অনুগ্রহ থাকে, তবে যখন সকলের আহারের পর নিজে আহার করে দ্রৌপদী বিশ্রাম করবেন সেই সময়ে আপনি যাবেন। দুর্বাসা সম্মত হলেন।

 অনন্তর একদিন পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদীর ভোজনের পর অযুত শিষ্য নিয়ে দুর্বাসা কাম্যকবনে উপস্থিত হলেন। যুধিষ্ঠির যথাবিধি পূজা করে তাঁকে বললেন, ভগবান, আপনি আহ্ণিক ক’রে শীঘ্র আসুন। সশিষ্য দুর্বাসা স্নান করতে গেলেন। অন্নের আয়োজন কি হবে এই ভেবে দ্রৌপদী আকুল হলেন এবং নিরুপায় হয়ে মনে মনে কৃষ্ণের স্তব ক’রে বললেন, হে দুঃখনাশন, তুমি এই অগতিদের গতি হও, দ্যূতসভায় দুঃশাসনের হাত থেকে যেমন আমাকে উদ্ধার করেছিলে সেইরূপ আজ এই সংকট থেকে আমাকে ত্রাণ কর।

 দেবদেব জগৎপতি কৃষ্ণ তখনই পার্শ্বস্থিতা রুক্মিণীকে ছেড়ে দ্রৌপদীর কাছে উপস্থিত হলেন। দুর্বাসার আগমনের কথা শুনে তিনি বললেন, কৃষ্ণা, আমি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, শীঘ্র আমাকে খাওয়াও তার পর অন্য কাজ করো। দ্রৌপদী লজ্জিত হয়ে বললেন, যে পর্যন্ত আমি না খাই সে পর্যন্তই সূর্যদত্ত থালীত অন্ন থাকে। আমি খেয়েছি, সেজন্য এখন আর অন্ন নেই। ভগবান কমললোচন বললেন, কৃষ্ণা, এখন পরিহাসের সময় নয়, আমি ক্ষুধাতুর, তোমার স্থালী এনে আমাকে দেখাও। দ্রৌপদী স্থালী আনলে কৃষ্ণ দেখলেন তার কানায় একটু শাকান্ন লেগে আছে, তিনি তাই খেয়ে বললেন, বিশ্বাত্মা যজ্ঞভোজী দেব তৃপ্তিলাভ করুন, তুষ্ট হ’ন। তার পর তিনি সহদেবকে[] বললেন, ভোজনের জন্য মুনিদের শীঘ্র ডেকে আন।

 দুর্বাসা ও তাঁর শিষ্য মুনিগণ তখন স্নানের জন্য নদীতে নেমে অঘমর্ষণ[] মন্ত্র জপ করছিলেন। সহসা তাঁদের কণ্ঠ থেকে অন্নরসের সহিত উদ্‌গার উঠতে লাগল, তাঁরা তৃপ্ত হয়ে জল থেকে উঠে পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলেন। মুনিরা দুর্বাসাকে বললেন, ব্রহ্মর্ষি, আমরা যেন আকণ্ঠ ভোজন ক’রে তৃপ্ত হয়েছি, এখন আবার কি ক’রে ভোজন করব? দুর্বাসা বললেন, আমরা বৃথা অন্ন পাক করতে ব’লে রাজর্ষি যুধিষ্ঠিরের নিকটে মহা অপরাধ করেছি, পাণ্ডবগণ ক্রুদ্ধ দৃষ্টিপাতে আমাদের দগ্ধ না করেন। তাঁরা হরিচরণে আশ্রিত সেজন্য তাঁদের ভয় করি। শিষ্যগণ, তোমরা শীঘ্র পালাও।

 সহদেব নদীতীরে এসে দেখলেন কেউ নেই। তিনি এই সংবাদ দিলে পাণ্ডবগণ ভাবলেন, হয়তো মধ্যরাত্রে দুর্বাসা সহসা ফিরে এসে আমাদের ছলনা করবেন। তাঁদের চিন্তিত দেখে কৃষ্ণ বললেন, কোপনস্বভাব দুর্বাসার আগমনে বিপদ হবে এই আশঙ্কায় দ্রৌপদী আমাকে স্মরণ করেছিলেন তাই আমি এসেছি। কোনও ভয় নেই, আপনাদের তেজে ভীত হয়ে দুর্বাসা পালিয়েছেন। পঞ্চপাণ্ডব ও দ্রৌপদী বললেন, প্রভু গোবিন্দ, মহার্ণবে মজ্জমান লোকে যেমন ভেলা পেলে রক্ষা পায়, আমরা সেইরূপ তোমার কৃপায় দুস্তর বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছি। তার পর কৃষ্ণ পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় নিয়ে চ’লে গেলেন।

৫২। দ্রৌপদীহরণ

 একদিন পঞ্চপাণ্ডব মহর্ষি ধৌম্যের অনুমতি নিয়ে দ্রৌপদীকে আশ্রমে রেখে বিভিন্ন দিকে মৃগয়া করতে গেলেন। সেই সময়ে সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ কাম্যকবনে উপস্থিত হলেন। তিনি বিবাহকামনায় শাল্বরাজ্যে যাচ্ছিলেন, অনেক রাজা তাঁর সহযাত্রী ছিলেন। দ্রৌপদীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি তাঁর সঙ্গী রাজা কোটিকাস্যকে বললেন, এই অনবদ্যাঙ্গী কে? এঁকে পেলে আমার আর বিবাহের প্রয়োজন নেই। সৌম্য, তুমি জেনে এস ইনি কে, এঁর রক্ষক কে। এই বরারোহা সুন্দরী কি আমাকে ভজনা করবেন?

 শৃগাল যেমন ব্যাঘ্রবধূর কাছে যায় সেইরূপ কোটিকাস্য দ্রৌপদীর কাছে গিয়ে বললেন, সুন্দরী, কদম্বতরুর একটি শাখা নুইয়ে দীপ্তিমতী অগ্নিশিখার ন্যায় কে তুমি একাকিনী দাঁড়িয়ে আছ? তুমি কার কন্যা, কার পত্নী? এখানে কি করছ? আমি সুরথ রাজার পুত্র কোটিকাস্য। বার জন রথারোহী রাজপুত্র এবং বহু রথ হতী অশ্ব ও পদাতি যাঁর অনুগমন করছেন তিনি সৌবীররাজ জয়দ্রথ। আরও অনেক রাজা ও রাজপুত্র ওঁর সঙ্গে আছেন। দ্রৌপদী বললেন, এখানে আর কেউ নেই, অগত্যা আমিই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। আমি দ্রুপদরাজকন্যা কৃষ্ণা, ইন্দ্রপ্রস্থবাসী পঞ্চপাণ্ডব আমার স্বামী, তাঁরা এখন মৃগয়া করতে গেছেন। আপনারা যানবাহন থেকে নেমে আসুন, অতিথিপ্রিয় ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির আপনাদের দেখে প্রীত হবেন।

 কোটিকাস্যের কথা শনে জয়দ্রথ বললেন, আমি সত্য বলছি, এই নারীকে দেখে মনে হচ্ছে অন্য নারীরা বানরী। এই ব’লে তিনি ছ জন সহচরের সঙ্গে আশ্রমে প্রবেশ ক’রে দ্রৌপদীকে কুশলপ্রশ্ন করলেন। দ্রৌপদী পাদ্য ও আসন দিয়ে বললেন, নৃপকুমার, আপনাদের প্রাতরাশের জন্য আমি পঞ্চাশটি মৃগ দিচ্ছি, যুধিষ্ঠির এলে আরও বহু প্রকার মৃগ শরভ শশ ঋক্ষ শম্বর গবয় বরাহ মহিষ প্রভৃতি দেবেন। জয়দ্রথ বললেন, তুমি আমাকে প্রাতরাশ দিতে ইচ্ছা করছ তা ভাল। এখন আমার রথে ওঠ, রাজ্যচ্যুত শ্রীহীন দীন পাণ্ডবদের জন্য তোমার অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তুমি আমার ভার্যা হও, সিন্ধুসৌবীররাজ্য ভোগ কর।

 ক্রোধে আরম্ভমুখে ভ্রূকুটি ক’রে দ্রৌপদী বললেন, মূঢ়, যশস্বী মহারথ পাণ্ডবদের নিন্দা করতে তোমার লজ্জা হয় না? কুক্কুরতুল্য লোকেই এমন কথা বলে। তুমি নিদ্রিত সিংহ আর তীক্ষ্ণবিষ সর্পকে পদাঘাত করতে ইচ্ছা করেছ। জয়দ্রথ বললেন, কৃষ্ণা, পাণ্ডবরা কেমন তা আমি জানি, তুমি আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না, এখন সত্বর এই হস্তীতে বা এই রথে ওঠ; অথবা দীনবাক্যে আমার অনুগ্রহ ভিক্ষা কর। দ্রৌপদী বললেন, আমি অবলা নই, সৌবীররাজের কাছে দীনবাক্য বলব না। গ্রীষ্মকালে শুষ্ক তৃণরাশির মধ্যে অগ্নির ন্যায় অর্জুন তোমার সৈন্যমধ্যে প্রবেশ করবেন, অন্ধক ও বৃষ্ণি বংশীয় বীরগণের সঙ্গে জনার্দন আমার অনুসরণ করবেন। তুমি যখন অর্জুনের বাণবর্ষণ, ভীমের গদাঘাত এবং নকুল-সহদেবের ক্রোধ দেখবে তখন নিজ বুদ্ধির নিন্দা করবে।

 জয়দ্রথ ধরতে এলে দ্রৌপদী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন এবং পুরোহিত ধৌম্যকে ডাকতে লাগলেন। জয়দ্রথ ভূমি থেকে উঠে দ্রৌপদীকে সবলে রথে তুললেন। ধৌম্য এসে বললেন, জয়দ্রথ, তুমি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন কর, মহাবল পাণ্ডবদের পরাজিত না ক’রে তুমি এঁকে নিয়ে যেতে পার না। এই নীচ কর্মের ফল তোমাকে নিশ্চয়ই ভোগ করতে হবে। এই ব’লে ধৌম্য পদাতি সৈন্যের সঙ্গে মিশে দ্রৌপদীর পশ্চাতে চললেন।

৫৩। জয়দ্রথের নিগ্রহ ও মুক্তি

 পাণ্ডবগণ মৃগয়া শেষ করে বিভিন্ন দিক থেকে এসে একত্র মিলিত হলেন। বনমধ্যে পশুপক্ষীর রব শুনে যধিষ্ঠির বললেন, আমার মন ব্যাকুল হচ্ছে, আর মৃগবধের প্রয়োজন নেই। এই ব’লে তিনি ভ্রাতাদের সঙ্গে রথারোহণে দ্রুতবেগে আশ্রমের দিকে চললেন। দ্রৌপদীর প্রিয়া ধাত্রীকন্যা ভূমিতে পড়ে কাঁদছে দেখে যুধিষ্ঠিরের সারথি ইন্দ্রসেন রথ থেকে লাফিয়ে নেমে জিজ্ঞাসা করলে, তুমি মলিনমুখে কাঁদছ কেন? দেবী দ্রৌপদীর কোনও বিপদ হয় নি তো? বালিকা তার সুন্দর মুখে মুছে বললে, জয়দ্রথ তাঁকে সবলে হরণ করে নিয়ে গেছেন, তোমরা শীঘ্র তাঁর অনুসরণ কর। পুষ্পমালা যেমন শ্মশানে পড়ে, বিপ্রগণ অসতর্ক থাকলে কুকুর যেমন যজ্ঞের সোমরস চাটে, সেইরূপ ভয়বিহ্বলা দ্রৌপদীকে হয়তো কোনও অযোগ্য পুরুষ ভোগ করবে।

 যধিষ্ঠির বললেন, তুমি স’রে যাও, এমন কুৎসিত কথা বলো না। এই ব’লে তিনি ভ্রাতাদের সঙ্গে দ্রুতবেগে দ্রৌপদীর অনুসরণে যাত্রা করলেন। কিছুদূর গিয়ে তাঁরা দেখলেন, সৈন্যদের অশ্বখুরের ধূলি উড়ছে, ধৌম্য উচ্চস্বরে ভীমকে ডাকছেন। পাণ্ডবগণ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন এবং জয়দ্রথের রথে দ্রৌপদীকে দেখে ক্রোধে প্রজ্বলিত হলেন। পাণ্ডবদের ধ্বজাগ্র দেখেই দুরাত্মা জয়দ্রথের ভয় হ’ল, তিনি তাঁর সহায় রাজ়াদের বললেন, আপনারা আক্রমণ করুন। তখন দুই পক্ষে ঘোর যুদ্ধ হ’তে লাগল, পাণ্ডবগণের প্রত্যেকেই শত্রুপক্ষের বহু যোদ্ধাকে বধ করলেন। কোটিকাস্য ভীমের গদাঘাতে নিহত হলেন। স্বপক্ষের বীরগণকে বিনাশিত দেখে জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে রথ থেকে নামিয়ে দিয়ে প্রাণরক্ষার জন্য বনমধ্যে পলায়ন করলেন। যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীকে নিজের রথে উঠিয়ে নিলেন। ভীম বললেন, দ্রৌপদী নকুল-সহদেব আর ধৌম্যকে নিয়ে আপনি আশ্রমে ফিরে যান। মূঢ় সিন্ধুরাজ যদি ইন্দ্রের সঙ্গে পাতালেও গিয়ে থাকে তথাপি সে জীবিত অবস্থায় আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে না।

 যুধিষ্ঠির বললেন, মহাবাহু, জয়দ্রথ[] দুরাত্মা হ’লেও দুঃশলা ও গান্ধারীকে স্মরণ ক’রে তাকে বধ করা উচিত নয়। দ্রৌপদী কুপিত হ’য়ে বললেন, যদি আমার প্রিয়কার্য কর্তব্য মনে কর তবে সেই পুরুষাধম পাপী কুলাঙ্গারকে বধ করতেই হবে। যে শত্রু ভার্যা বা রাজ্য হরণ করে তাকে কখনও মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। তখন ভীম আর অর্জুন জয়দ্রথের সন্ধানে গেলেন। যুধিষ্ঠির আশ্রমে প্রবেশ ক’রে দেখলেন, সমস্ত বিশৃঙ্খল হ’য়ে আছে এবং মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি বিপ্রগণ সেখানে সমবেত হয়েছেন।

 জয়দ্রথ এক ক্রোশ মাত্র দূরে আছেন শুনে ভীমার্জুন বেগে রথ চালালেন। অর্জুনের শরাঘাতে জয়দ্রথের অশ্বসকল বিনষ্ট হ’ল, তিনি পালাবার চেষ্টা করলেন। অর্জুন তাঁকে বললেন, রাজপুত্র, তুমি এই বিক্রম নিয়ে নারীহরণ করতে গিয়েছিলে! নিবৃত্ত হও, অনুচরদের শত্রুর হাতে ফেলে পালাচ্ছ কেন? জয়দ্রথ থামলেন না, ভীম ‘দাঁড়াও দাঁড়াও’ ব’লে তাঁর পিছনে ছুটলেন। দয়ালু অর্জুন বললেন, ওকে বধ করবেন না।

 বেগে গিয়ে ভীম জয়দ্রথের কেশ ধরলেন এবং তাঁকে ভূমিতে ফেলে নিষ্পিষ্ট করলেন। তার পর মস্তকে পদাঘাত করে তাঁর দুই জানু নিজের জানু দিয়ে চেপে প্রহার করতে লাগলেন। জয়দ্রথ মূর্ছিত হলেন। তাঁকে বধ করতে যুধিষ্ঠির বারণ করেছেন এই কথা অর্জুন মনে করিয়ে দিলে ভীম বললেন, এই পাপী কৃষ্ণাকে কষ্ট দিয়েছে, এ বাঁচবার যোগ্য নয়। কিন্তু আমি কি করব, যুধিষ্ঠির হচ্ছেন দয়ালু আর তুমি মূর্খতার জন্য সর্বদাই আমাকে বাধা দাও। এই ব’লে ভীম তাঁর অর্ধচন্দ্র বাণে জয়দ্রথের মাথা মাঝে মাঝে মুড়িয়ে পাঁচচুলো ক’রে দিলেন। তার পর তিনি জয়দ্রথকে বললেন, মূঢ়, যদি বাঁচতে চাও তবে সর্বত্র এই কথা বলবে যে তুমি আমাদের দাস। এই প্রতিজ্ঞা করলে তোমাকে প্রাণদান করব। জয়দ্রথ বললেন, তাই হবে। তখন ভীম ধূলিধূসরিত অচেতনপ্রায় জয়দ্রথকে বেঁধে রথে উঠিয়ে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে এলেন। যুধিষ্ঠির একটু হেসে বললেন, এঁকে ছেড়ে দাও। ভীম বললেন, আপনি দ্রৌপদীকে বলুন, এই পাপাত্মা এখন পাণ্ডবদের দাস। যুধিষ্ঠিরের দিকে চেয়ে দ্রৌপদী ভীমকে বললেন, তুমি এর মাথায় পাঁচ জটা করেছ, এ রাজার দাস হয়েছে, এখন একে মুক্তি দাও। বিহ্বল জয়দ্রথ মুক্তি পেয়ে যুধিষ্ঠির ও উপস্থিত মুনিগণকে বন্দনা করলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, পরুষাধম, তুমি দাসত্ব থেকে মুক্ত হ’লে, আর এমন দুষ্কার্য ক’রো না।

 লজ্জিত দুঃখিত জয়দ্রথ গঙ্গাদ্বারে গিয়ে উমাপতি বিরূপাক্ষের শরণাপন্ন হ’য়ে কঠোর তপস্যা করলেন। মহাদেব বর দিতে এলে জয়দ্রথ বললেন, আমি যেন পঞ্চপাণ্ডবকে যুদ্ধে জয় করতে পারি। মহাদেব বললেন, তা হবে না; অর্জুন ভিন্ন অপর পাণ্ডবগণকে সৈন্যসমেত কেবল এক দিনের জন্য তুমি জয় করতে পারবে। এই ব’লে তিনি অন্তর্হিত হলেন।

  1. পাঠান্তরে ভীমসেনকে।
  2. পাপনাশন। ঋগ্‌বেদীয় সূক্তবিশেষ।
  3. ইনি ধৃতরাষ্ট্রের কন্যা দুঃশলার স্বামী।