রাজমালা (ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্তী)/চতুর্থ পরিচ্ছেদ/১২
(১২)
শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও সতর রতন
রত্নমাণিক্যের সময় কুমিল্লার প্রসিদ্ধ সতর রতন মন্দির নির্ম্মিত হইতে থাকে, ইহা কৈলাস সিংহ মহাশয়ের পুস্তক পাঠে অবগত হওয়া যায়। বিজয়মাণিক্যের শাসনকালের প্রসিদ্ধ কীর্ত্তি হইতেছে জগন্নাথ বিগ্রহ স্থাপন। এ সম্বন্ধে কালীপ্রসন্ন সেন মহাশয় রাজমালার দ্বিতীয় লহরে লিখিয়াছেন—মহারাজ বিজয়মাণিক্য, উদয়পুরে জগন্নাথবিগ্রহ স্থাপনোপলক্ষে ব্রাহ্মণদিগকে ভূমি দান করিয়াছিলেন। সেই দানের তাম্রফলকে উৎকীর্ণ হইয়াছেঃ—
রাজরাজশিরোরাত্ননিঘৃষ্টচরণাম্বুজঃ।
শ্রীশ্রীবিজয়মাণিক্যো রাজা রাজভীরাজতে॥
মহারাজ বিজয়মাণিক্যের রাজত্ব ১৫২৮ খৃষ্টাব্দে আরম্ভ হয়, সুতরাং বিগ্রহ স্থাপনের কাল অতি প্রাচীন। অমরমাণিক্যের রাজত্বের শেষ ভাগে রাজ্যহারা হইবার পূর্ব্বে জগন্নাথ বলরামের নেত্র অশ্রুকণায় পূর্ণ হইয়াছিল এরূপ উল্লেখ রাজমালায় পাওয়া যায়।[১] তাহার পর নানা ভাগ্যবিপর্য্যয়ের ঝড় উদয়পুরের উপর দিয়া বহিয়া গিয়াছে। উদয়পুরের জগন্নাথ মন্দির ভারতীয় স্থপতি শিল্পের একটি বিশিষ্ট নিদর্শন। কালের কুটিল প্রবাহে সেই মন্দির বিগ্রহহীন হইয়া পড়ে। কৃষ্ণমাণিক্যের সময় উদয়পুর হইতে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামের বিগ্রহ কুমিল্লায় আনা হয়, কি জন্য আনা হইয়াছিল রাজমালায় তাহার উল্লেখ নাই। স্থানীয় জগন্নাথ বাড়ীর অন্যতম পাণ্ডা শ্রীযুক্ত মুরলীধর ত্রিপাঠীর মুখে শুনিয়াছি, সতর রতন নির্ম্মাণ অবসানে উদয়পুর হইতে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামের বিগ্রহ নৌকাযোগে আনা হয়। যে ঘাটে নৌক। লাগে তাহা জগন্নাথ ঘাট এবং তন্নিকটস্থ গ্রাম জগন্নাথপুর নামে অদ্যাপি পরিচিত। কিন্তু সতর রতন মন্দিরে জগন্নাথ বাস করিতে অসম্মত হন, স্বপ্নযোগে জানান হয়, মন্দির শ্মশানের উপর নির্ম্মিত তাই উহা বাসের অযোগ্য। তৎপর ঐ সতর রতনের সংলগ্ন ভূমিতে নূতন আবাস রচিত হয় সেইখানেই জগন্নাথ আজ পর্য্যন্ত বর্ত্তমান আছেন। উড়িষ্যার এই পবিত্র ব্রাহ্মণ পরিবারের উপর কৃষ্ণমাণিক্যের রাজত্বে বিগ্রহ স্থাপন অবধি জগন্নাথের পূজার ভার অর্পিত হইয়াছে। এখন ইঁহারা বহু পরিবারে বিভক্ত, তাই পালাক্রমে ভগবানের সেবার ভার পাইয়া থাকেন।
- ↑ অমরমাণিক্যের রাজত্বকালে প্রস্তরনির্ম্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উল্লেখ পূর্ব্বে পাইয়াছি তাহাতে শ্রীশ্রীজগন্নাথ প্রতিষ্ঠিত হন।